প্রথম অধ্যায়
‘বাংলার মুসলমানদের ইতিহাস’-এর প্রথম ভাগে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে বাংলায় তথা ভারত উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চলে মুসলমানদের প্রথম আগমণ থেকে শুরু করে তাদের সাড়ে পাঁচ শতাধিক বৎসরব্যাপী (১৩০২-১৭৫৭ খৃঃ) বাংলা শাসনের ইতিহাস। অতঃপর এ ভূখন্ডে ইংরেজ শাসনের সূত্রপাত থেকে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসহ আইন (Government of India Act. 1935) কার্যকর হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সময়কালের ইতিহাস।
এখন এ ইতিহাসের দ্বিতীয় ভাগে আলোচনা করতে চাই ১৯৩৫ সালের উপরিউক্ত আইনের প্রয়োগকাল থেকে ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগ পর্যন্ত সময়ের ইতিহাস।
ভারত বিভাগের কতিপয় ব্যক্তির নিকটে দুর্ভাগ্যজনক বিবেচিন হলেও এ ছিল এক অনিবার্য ও স্বাভাবিক বাস্তবতা। যে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ অমুসলিম অধিবাসীর উপর মুষ্টিমেয় মুসলমানের শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তা হাজার বারোশ’ বছর চলেছে, এ দীর্ঘ সময়ে মুসলমান অমুসলমান পাশাপাশি শান্তি ও সৌহার্দের সাথে একত্রে বসবাস করেছে, তারা বিংশ শতাব্দীর মাঝখানে এসে আর একত্রে থাকতে পারলোনা কেন? এর সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মদের অবশ্যই জানা দরকার। ইংরেজ শাসন কায়েম হওয়ার পর থেকে মুসলমানদের প্রতি হিন্দু ও ব্রিটিশের আচরণের ধারাবাহিক ইতিহাস, বিশেষ করে ব্রিটিশ ভারতে কংগ্রেসের আড়াই বছরের কুশাসন রিপেক্ষ দৃষ্টিবভংগীসহ আলোচনা করলে এ সত্যে উপনীত হওয়া যাবে যে, ভারত বিভাগ চিল এক অনিবার্য ও স্বাভাবিক বাস্তবতা।
পঁয়ত্রিশের ভারত শাসন আইন কার্যকর হওয়ার ফলে প্রদেশগুলিতে সীমিত স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। কংগ্রেস সাতটি হিন্দু সংখ্যাগুরু প্রদেশে অন্য দলের সহযোগিতা ব্যতীতই সরকার গঠন করতে সমর্থ হয় এবং ক্ষমতামর্দমত্ত হয়ে মুসলমানদের সাথে এমন অমানবিক আচরণ শুরু করে যার দরুন মুসলমাগণ এ উপমহাদেশে তাদের অস্তিত্বই বিপন্ন মনে করতে থাকে। হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে, দেশের সর্বত্র লোমহর্ষক সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ এবং মুসলমানদের জান-মাল ইজ্জৎ-আবরু লুণ্ঠিত হতে থাকে। পরিস্থিতি অবশেষে এমন একদিকে মোড় নেয় যেদিক থেকে প্রত্যাবর্তনের আর কোনই উপায় ছিলনা। ভারত দুটি পৃথক পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এ বিভক্তির পশ্চাতে ছিল ভারতীয় মুসলমানদের অদম্য ধর্মীয় বিশ্বাস ও আদর্শ, স্বতন্ত্র জাতীয়তার ধারণা, নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সভ্যতা-সংস্কৃতি এবং এসবসহ জাতীয় অস্তিত্ব বিলুপ্তির প্রবল আশংকা। এক পক্ষ চাইছিল অপর পক্ষকে গোলাম বানিয়ে রাখতে অন্যথায় তাদেরকে ভারতের বুক থেকে নির্মূল করতে। অপর পক্ষ চাইছিল আত্মমর্যাদা ও সকল অধিকারসহ বেঁচে থাকতে। ইতিহাসের নিরপেক্ষ আলেচনায় আশা করি এ সত্য প্রমাণিত হবে।
ভারত শাসন আইন, ১৯৩৫ (Govt. of India Act, 1935)
এ আইনটি ১৯৩৭ সালের পয়লা এপ্রিল থেকে কার্যকর করা হয়। ভারতীয় ফেডারেশন সম্পর্কিত আইনের দ্বিতীয় অংশটি কার্যকর হয়নি। কারণ নির্দিষ্ট সংখ্যক ভারতীয় দেশীয় রাজ্য ফেডারেশন মেনে নিতে পারেনি বলে তা কার্যকর হয়নি।
এই আইনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে, এ সর্বপ্রথম প্রদেশগুলোকে আইনানুগ পৃথক অস্তিত্ব দান করা। সিন্ধুকে বোম্বাই থেকে বিচ্ছিন্ন করে পৃথক প্রদেশের মর্যাদায় ভূষিত করা হয়। উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশকে এই সর্বপ্রথম পূর্ণ প্রাদেশিক মর্যাদা দান করা হয়। ভোটদাতার সম্পদের অনুপাত হ্রাস করতঃ ভোটার সংখ্যা বর্ধিত করা হয়।
আইন অনুযায়ী প্রত্যেক প্রদেশে একটি করে মন্ত্রী পরিষদ থাকবে এবং গভর্ণর তার সুপারিশ মেনে চলবেন। তবে তিনি কোন কোন ক্ষেত্রে ইচ্ছা করলে আপন বিবেক অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন। দ্বৈতশাসন বিলুপ্ত করা হয়। প্রদেশে ব্রিটিশ মডেলের একটি করে মন্ত্রীসভা থাকবে যার পরামর্শ অনুসারে গভর্ণর তাঁর কার্য সম্পাদন করবেন।
প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন
প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচন সম্পন্ন হয় ১৯৩৭ এর ফেব্রুয়ারী ও মার্চে। ১৯৩৬ সালের শেষভাগে মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী মেনিফেস্টো ঘোষণা করে। উভয় মেনিফেস্টোর সামাজিক পলিসি ছিল একই রকমের। রাজনৈতিক ইস্যুতেও কেউ একে অপর থেকে বেশী দূরে অবস্থান করছিল না। কিন্তু দটি বিষয়ে উভয়ের মধ্যে বিরাট মত পার্থক্য ছিল। একটি
এই যে, মুসলিম লীগ ওয়াদাবদ্ধ ছিল উর্দু ভাষা ও বর্ণমালার সংরক্ষণ এবং সমৃদ্ধি সাধন করতে। পক্ষান্তরে কংগ্রেস বদ্ধপরিকর ছিল হিন্দিকে ভারতের রাষ্ট্রভাষা করার জন্যে। দ্বিতীয়তঃ মুসলিম লীগ অটল ছিল পৃথক নির্বাচনের উপর। কিন্তু কংগ্রেস ছিল তার চরম বিরোধী। ১৯১৬ সালে কংগ্রেস পৃথক নির্বাচন মেনে নিয়ে মুসলিম লীগের সাথে এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে যা লাখনো চুক্তি নামে খ্যাত ছিল। অনেক কংগ্রেস নেতা লাখনো চুক্তির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন এবং এটাকে হিন্দু-মুসলিম মিলনের সেতুবন্ধন মনে করেন। কিন্তু পরবর্তীকালে কংগ্রেস এ চুক্তি অমান্য করে পৃথক নির্বাচনের বিরোধিতা শুরু করে। অবশ্যি কংগ্রেসের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও ভারত বিভাগ পর্যন্ত পৃথক নির্বাচন বলবৎ থাকে।
হিন্দু-মুসলিম মিলনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী কোন কথা মুসলিম লীগ মেনিফেস্টোতে ছিলনা। বরঞ্চ তাদে চিল সহযোগিতার সুস্পষ্ট আহবান। কংগ্রেস মুসলিম লীগের এ সহযোগিতার আহবান ঔদ্ধত্য সহকারে প্রত্যাখ্যান করে। কংগ্রেসের দাবী ছিল যে, সকল ভারতবাসী এক জাতি এবং ভারতবাসীর প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান কংগ্রেস। কিন্তু ১৯৩৭ সালের নির্বাচন তার এ দাবী মিথ্যা প্রমাণিত করে।
নির্বাচনের যে ফল প্রকাশিত হয় তাতে দেখা যায় সর্বমোট ১৭৭১টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস লাভ করে মাত্র ৭০৬ টি যা অর্ধেকেরও কম। মুসলিম আসনের অধিকাংশ লাভ করে স্যার ফজলে হোসেনের পাঞ্জাব ইউনিয়নিষ্ট পার্টি। মুসলিম লীগ তখন পর্যন্ত অসংগঠিত ছিল বলে ৪৮২ টি আসনের মধ্যে ১০২টি লাব করে। কিন্তু কংগ্রেস হিন্দুমুসলিম উভয়ের প্রতিনিধিত্বকারী দল হিসাবে কয়টি মুসলিম আসনে বিজয়ী হয়? ৫৮ টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয় মাত্র ২৬টি আসনে। পাঞ্জাবে সর্বমোট ১৭৫ আসনের মধ্যে ১৮ এবং বাংলায় ২৫০ এর মধ্যে ৬০ আসন লাভ করে।
(The Struggle for Pakistan.I.H. Qureshi). Return showing the seult in election in India, Nov.1937)
মোট সাড়ে তিন কোটি ভোটের মধ্যে কংগ্রেস প্রায় দেড় কোটি ভোট লাভ করে। অতএব ভারতের একমাত্র রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হওয়ার দাবি মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
ইউপিতে কংগ্রেস টিকেটে মাত্র একজন মুসলমান নির্বাচিত হন। তিনি বিশেষ বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনী এলাকা থেকে যুক্ত নির্বাচনে নির্বাচিত হন। কংগ্রেসের প্রাদেশিক সভাপতি –একজন মুসলমান নির্বাচনে পরাজিত হন। -(The Struggle for Pakistan.I.H. Qureshi)
দেশের এগারোটি প্রদেশের মধ্যে ছয়টিতে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করতে সমর্থ হয়। সে ছয়টি হলো –বোম্বাই, মাদ্রাজ, ইউ, পি,সি, পি, বিহার ও উড়িষ্যা। কিন্তু মুসলিম সংখ্যাগুরু প্রদেশগুলোতে বহু চেষ্টা করেও যথেষ্ট সংখ্যক মুসলমান প্রার্থী সংগ্রহ করতে পারেনি। উপরোক্ত ছয়টি প্রদেশের তিনটিতে বোম্বাই, সিপি (মধ্য প্রদেশ) প্র উড়িষ্যা –কংগ্রেস মনোনিত কোন মুসলমান প্রার্থী জয়লাভ করতে পারেননি।
নতুন প্রচলিত আইন অনুযায়ী প্রাদেশিক গভর্ণরগণ প্রাদেশিক আইনসভাগুলোর সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতৃবৃন্দকে ডেকে পাঠান এবং মন্ত্রীসভা সীমান্ত প্রদেশ এবং আসাম –এ পাঁচটি প্রদেশে মন্ত্রীসভা গঠিত হয় এবং পয়লা এপ্রিল থেকে স্বায়ত্তশাসিত ইউনিট হিসাবে কাজ শুরু করে। অবশিষ্ট ছয়টি প্রদেশে কংগ্রেস মন্ত্রীসভা গঠনে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে –যতোক্ষণ না গভর্ণরগণ সংবিধান অনুযায়ী তাদের বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ থেকে বিরত থাকার নিশ্চয়তা দান করেন। এধরনের নিশ্চয়তা দানে গভর্ণরগণ অসম্মতি জ্ঞাপন করেন। অতঃপর যেসব দল বা গুপের প্রতিনিধিগণ মন্ত্রীসভা গঠনে ইচ্ছুক তাঁদেরকে নিয়ে অন্তবর্তী মন্ত্রীসভা গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। মুসলমানদের নেতৃত্বে বোম্বাই, বিহার ও ইউপিতে অন্তবর্তীকালীন মন্ত্রীসভা গঠিত হয় এবং কতিপয় মুসলিম লীগ সদস্যকেও মন্ত্রীসভায় স্থান দেয়া হয়। কিন্তু এসবকে ‘মুসলিম লীগ মন্ত্রীসভা’ নাম দেয়া হয়নি।
রক্ষাকবচ প্রশ্নে অচলাবস্থা সৃষ্টি
ভারত শাসন আইন ১৯৩৫-এর অধীনে প্রদেশের গভর্ণরগণকে যে নির্দেশনামা প্রদান করা হয় তাতে তাঁদের প্রতি এক বিশেষ দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যে আইনে যে রক্ষাকবচের (Safeguard) নিশ্চয়তা দান করা হয়েছে তার প্রতি লক্ষ্য রাখাই গভর্ণরগণের বিশেষ দায়িত্ব।
বলা হয়েছেঃ
The instrumemts of Instructions issued to the Governors under the Government of India Act. 1935. Placed some special responsibilities on the provincial heads. These inclided the ‘Safeguarding of all the legitimate interests of minorities as requiring him to secure in general, thea those racial or religious communities for the members of which special representation is accorded in the legislature and thlose classes of the people committed to his charge who, whether in account of the smallness of their number, or their lack of educational or material advantages or from any other cause, cannot as yet fully rely for their welfare upon joint political action in the legislature, shall not suffer, or have reasonable cause to fear neglect or oppression.
উপরোক্ত আইনে সব ধরনের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সকল বৈধ স্বার্থ সংরক্ষণের নিশ্চয়তা দান করা হয়েছে। তাদের স্বার্থ যাতে সংরক্ষিত হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্যে প্রাদেশিক গভর্ণরগণকে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়।
জাতিগত ও ধর্মীয় এমন কতিপয় সম্প্রদায় আছে যাদের সদস্যদের জন্যে আইনসভায় বিশেষ প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করা হয়েছে, গভর্ণরের তত্ত্বাবধানে ও বৈষয়িক সুযোগ সুবিধা না থাকার কারণে অথবা অন্য কোন কারণে তাদের কল্যাণের জন্যে আইনসভায় গৃহীত যুক্ত রাজনৈতিক পদক্ষেপের উপর এখনো পুরোপুরি আস্থা পোষণ করতে পারেনা –এসব সম্প্রদায় ও শ্রেণী কোনরূপ দুর্গতি ভোগ করবে না অথবা অবহেলিত অথবা উৎপীড়িত হওয়ার কোন কারণ থাকবে না। এভাবে তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের দায়িত্ব গভর্ণরদের উপরে অর্পিত হয়।
ভারতের সংখ্যালঘু বলতে প্রধানতঃ মুসলমানদেরকেই বলা হয় এবং তারা তাদের সকল প্রকার স্বার্থ সংরক্ষণ তথা রক্ষাকবচের জন্যে দীর্ঘকাল যাবত সংগ্রাম করে আসছে।
এ উপমহাদেশ কয়েকটি জাতির আবাসভূমি ছিল এবং তাদের মধ্যে সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুও ছিল। এ বাস্তবতা কংগ্রেস স্বীকার করতোনা। সংগ্রেস দাবী করতো সকল ভারতবাসীর প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন মাত্র একটি এবং তা হলো কংগ্রেস। মিঃ গান্ধী News Chronicle এর প্রতিনিধির কাছে বলেন, এখানে একটি মাত্র দল আছে যে কল্যাণ করতে পারে এবং তা হলো কংগ্রেস। কংগ্রেস ব্যতীত অন্য কোন দল মেনে নেব না।
তিনি আরও বলেন, তোমরা যে নামেই ডাক, ভারতে একটি মাত্র দলই হতে পারে, এবং তা হচ্ছে কংগ্রেস –(Muslim Separatism in India, A. Hamid, p.217)
জওহরলাল নেহরুর মনোভাবও চিল অনুরূপ। তিনি বলেন, একটি অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যেও আবিষ্কার করা যাবে না যে ভারতে কোন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়েল অস্তিত্ব আছে। দেশে মাত্র দুটি দল আছে –কংগ্রেস এবং সরকার। আর যারা আছে তাদেরকে আমাদের কর্মপদ্ধতি মেনে নিয়ে আমাদের সাথে থাকতে হবে। যারা আমাদের সাথে নেই –তারা আমাদের বিরোধী।
পন্ডিত নেহরুর উপরোক্ত ফ্যাসিবাদী মানসিকতারই বহিঃপ্রকাশ।- Muslim Separatism in India, A. Hamid.
সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যে রক্ষাকবচের ব্যবস্থা ১৯৩৫ সালের আইনে রয়েছে এবং প্রাদেশিক গভর্ণরগণকে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে যাতে সংখ্যালঘুদের স্বার্ত ক্ষুণ্ণ না হয়। কিন্তু পন্ডিত জওহরলাল নেহরুর কথায় এ দেশে সংখ্যালঘু বলে কোন বস্তুর অস্তিত্বই যখন নেই, তখন কংগ্রেসের মতে গভর্ণরদের বিশেষ দায়িত্ব পালনের জন্যে বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগের প্রয়োজনও নেই। এর সুস্পষ্ট অর্থ হলো এই যে কংগ্রেস মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণে মোটেই রাজী নয়। এ কারণেই কংগ্রেস মন্ত্রীসভা গঠনে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে অচলাবস্থা সৃষ্টি করে রাখে।
অবশেষে ভাইসরয় লর্ড লিলিথগোর সাথে কংগ্রেসের একটা আপস নিষ্পত্তি হয়ে যায় যার ভিত্তিতে ৭ই জুলাই কংগ্রেস ওয়ার্কিং কংগ্রেসকে মন্ত্রীসভা গঠনের অনুমতি দান করার প্রস্তাব গ্রহণ করে।
ভাইসরয়ের পক্ষ থেকে গোপনে পূর্ণ নিশ্চয়তা লাভের পর কংগ্রেস সকল মান-অভিমান ত্যাগ করে ১৯৩৭ এর জুলাই মাসে সাতটি প্রদেশে মন্ত্রীসভা গঠন করে। ১৯৩৮ সালে আসামের প্রধানমন্ত্রী স্যার মুহাম্মদ সা’দুল্লাহ এস্তেফা দান করায় আসামে গোপীনাত বারদলই কর্তৃক কংগ্রেস কোয়ালিশন মন্ত্রীসভা গঠিত হয়। যে সকল প্রদেশে মুসলমানদের স্বার্থ পদদলিত হতে থাকে। এ বিষয়ে পরে আলোচনা করা যাবে।
নির্বাচনের ফলাফল
কংগ্রেস মন্ত্রীসভা গঠিত হওয়ার পর মুসলিম ভারতে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পূর্বে সাইত্রিশ সালের শুরু থেকেই যেসব প্রদেশে সরকার গঠিত হয় তাদের অবস্থা কি ছিল, তা একবার আলোচনা করা যাক।
বাংলা
নির্বাচনের পর বাংলার আইনসভার দলীয় অবস্থার চিল নিম্নরূপঃ
কংগ্রেস ৫৪
অকংগ্রেসী হিন্দু ৪২
স্বতন্ত্র মুসলমান ৪৩
মুসলিম লীগ ৪০
অন্যান্য মুসলমান ৩৮
ইউরোপিয়ান অ্যাংলো ইন্ডিয়ান ৩১
নির্দলীয় মুসলমান ২
মোট
>>>
২৫০
মুসলিম লীগ নন, এমন মুসলমানদের মধ্যে কৃষক প্রজা পার্টির সদস্য ছিল ৩৫। এ দলের নেতা ছিলেন মৌলভী এ কে ফজলুল হক (শেরে বাংলা)। এখানে কোয়ালিশন ব্যতীত মন্ত্রীসভা গঠনের অন্য কোন পথ ছিলনা। অতএব ১৯৩৭ সালের এপ্রিল মাসে, মুসলিম লীগ, কৃষক প্রজা পার্টি, তফসিলী সম্প্রদায় (Scheduled Castes) এবং স্বতন্ত্র অথবা অকংগ্রেসীয় বর্ণ হিন্দুদের নিয়ে কোয়ালিশন মন্ত্রীসভা গঠিত হয়, যার নেতা ছিলেন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক। তিনি দশ সদস্য বিশিষ্ট মন্ত্রীসভা গঠন করেন যার মধ্যে পাঁচজন মুসলমান এবং পাঁচজন হিন্দু ছিলেন।
উল্লেখ্য নির্বাচনের পর তেসরা ফেব্রুয়ারী মুন্সীগঞ্জে অনুষ্ঠিত জনসভায় জনাব ফজলুল হক তাঁর দলের কর্মসূচী ঘোষণা করেন। ১৫ই ফেব্রুয়ারী কৃষক প্রজা পার্টির কার্যনির্বাহী কমিটি উক্ত দলের নেতৃবৃন্দের সাথে মুসলিম লীগের নুতন সংবিধান কার্যকর করার উদ্দেশ্যে যে চুক্তি সম্পাদিত হয় তা অনুমোদন করে। ৬ই মার্চ জনাব ফজলুল হক মন্ত্রীসভা গঠনে সম্মত হন।কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর অনুরোধে হক সাহেব মুসলিম লীগে যোগদান করেন। অতঃপর তিনি বাংলার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপত গ্রহণ করেন।
ফজলুল হক কোয়ালিশন মন্ত্রীসভা নির্বিবাদে কাজ করতে পারেনি। কারণ কংগ্রেস পদে পদে এ মন্ত্রীসভার চরম বিরোদিতা করে। কিন্তু তার সুফল এই হয় যে, যে পরিমাণে বিরোধিতা হয় সেই পরিমাণে সংসদের ভেতরে ও বাইরে মুসলিম ঐক্য সংহত ও সুদৃঢ় হয়।
কোয়ালিশন মন্ত্রীসভা গঠিত হওয়ার পর কৃষক প্রজা পার্টি এবং মুসলিম লীগের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত হয়। ১৮৩৭ সালের সেপ্টেম্বরে লাখনোতে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগ অধিবেশনে তিনি যোগদান করে ঘোষণা করেন যে
, তাঁর দলের সদস্যগণ মুসলিম লীগে যোগদান করবেন। তাঁর মন্ত্রীসভায় খাজা নাজিমুদ্দীন ও হোসেন শহীদ সুহরাওয়ার্দী স্থান পেয়েছিলেন।
ফজলুল হক সাহেবের সাড়ে চার বছরের প্রধানমন্ত্রীত্ব তাঁর জীবনে এবং অবিভক্ত বাংলার মুসলিম রাজনৈতিক শক্তিতে এক নব জোয়ার এনে দেয়। তাঁর মন্ত্রীসভা জনগণের মধ্যে বিরাট আশার সঞ্চার এবং মুসলমানদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। তাদের এতদিনের হীনমন্যতা দূরীভূত হয় এবং হিন্দুদেরকে তারা সমকক্ষ মনে করে। সংসদে ফজলুল হক-সুহরাওয়ার্দীর ভাষন, প্রতিপক্ষের কথার দাঁতভাঙ্গা জবাব দান এবং তাঁদের প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব কংগ্রেস ও হিন্দু সহাসভা নেতৃবৃন্দের তুলনায় অধিকতর উচ্চমানের ছিল। তাঁদের প্রাণশক্তি ও প্রজ্ঞা, জ্ঞানবুদ্ধির প্রখরতা, অনর্গল বাগ্মিতা ও সাংগঠনিক যোগ্যতা এবং কঠোর পরিশ্রম ও ধীশক্তির দ্বারা তাঁরা সংসদে হিন্দু সদস্যদের উপর তাঁদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেন।
বাংলার মুসলমানদের মধ্যে যে নবজীবনের সঞ্চার হয় তা সংসদ ভবনের চার দেয়ালের মধ্যেই সীমিত ছিলনা। মানবীয় কর্মশীলতার সকল ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংগঠন, সাহিত্য, শিল্প, সাংবাদিকতা, খেলাধূলা প্রভৃতিতে তা দৃষ্টিগোচর হলো। মুসলিম লীগ একটি শক্তিশালী জীবন্ত সংগঠনে পরিণত হচ্ছিল এবং মুসলমানদের মধ্যে এক নতুন জীবন ও আস্থার সঞ্চার করছিল।
প্রায় এক শতাব্দী যাবত যে বাংলা সাহিত্যের উপর হিন্দু কবি সাহিত্যিক তাঁদের প্রাধান্য বিস্তার করে রেখেছিলেন, সাহিত্য গগনে কাজী নজরুল ইসলামের উদয়ের ফলে তার অবসান ঘটে। তিনি শুধু একাকী নন, কবি জসিম উদ্দীন, গোলাম মোস্তফা, বেনজীর আহমদ প্রমুখের কাব্যজগতে অমর অবদানও অনস্বীকার্য। সংগীত সম্রাট আব্বাসউদ্দীনের মনমাতানো সুরে গাওয়া ইসলামী, মুর্শেদী ভাটিয়ালী সংগীত মুসলমানদের মনে ইসলামী প্রেরণা সঞ্চার করে।
এ মুসলিম নবজাগরণে নতুন মুসলিম প্রেসের উত্থান বিরাট অবদান রেখেছে। সাংবাদিকতার জগতে কোলকাতা থেকে কতিপয় মাসিক ও সাপ্তাহিক প্রকাশিত হলেও নিয়মিত কোন দৈনিক পত্রিকা ছিলনা। ১৯৩৬ সালে মওলানা আকরাম খাঁ দৈনিক আজাদ প্রকাশিত করে মুসলমান জাতির বিরাট খেদমত আঞ্জাম দেন এবং ফজলুল হক কোয়ালিশন মন্ত্রীসভাবে সক্রিয় সমর্থন দান করেন। এ সমেয় আবদুল করিম গজনবী কর্তৃক প্রকাশিত দৈনিক স্টার অব ইন্ডিয়া এবং খাজা নূরুদ্দীন কর্তৃক প্রকাশিত দৈনিক মর্নিং নিউজ মুসলমানদের আশা আকাংখার প্রতিনিধিত্ব করে।
শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের প্রথম মন্ত্রীসভা –(১৯৩৭-১৯৪১) বাংলার সংসদীয় সরকারের ইতিহাসে এক স্বর্ণযুগ বলা যেতে পারে। এ সময়ে তিনি বিহার, উড়িষ্যা ও আসাম প্রদেশগুলোতে সফর করে মুসলিম লীগ সংগঠিত করেন এবং একে একটি শক্তিশালী সংগঠনে রূপান্তরিত করেন। তিনি ১৯৩৭ সালে লাখনোতে, ১৯৩৮ সালে করাচীতে এবং ১৯৩৯ সালে কটকে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগ সম্মেলনগুলোতে ভাষণ দান করেন। ১৯৪০ সালে কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর সভাপতিত্বে লাহোরে ২২, ২৩ ও ২৪ মার্চ মুসলিম লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তার ২৩শে মার্চের অধিবেশনে তিনি ঐতিহাসিক পাকিস্তান প্রস্তাব পেশ করেন।
ফজলুল হক এ সত্য উপলব্ধি করেছিলেন যে, মুসলিম জাতির উন্নতি অগ্রগতির চাকিকাঠি হচ্ছে শিক্ষা। এ কারণেই তিনি তাঁর কোয়ালিশন মন্ত্রীসভায় নিজে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি শিক্ষা ক্ষেত্রে মুসলমানদের উন্নতির জন্যে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কায়েম করেন। যথা লেডি ব্রাবোর্ন কলেজ (মহিলা কলেজ), কোলকাতা; ইডেন গার্লস কলেজ, ঢাকা; কৃষি কলেজ (তেজগাঁ, ঢাকা); ফজলুল হক মুসলিম হল, ঢাকা; ফজলুল হক কলেজ, চাখার, বরিশাল।
কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ব-ঔদ্ধত্য তিনি কিছুটা খর্ব করতে চেয়েছিলেন। এ চিল প্রকৃতপক্ষে হিন্দুদের এক সুরক্ষিত বিদ্যামন্দির। হিন্দু রেনেসাঁর এবং বাংলায় হিন্দুর বুদ্ধিবৃত্তিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার এক শক্তিশালী হাতিয়ার। এ ছিল এক বিরাট দুর্দমনীয় প্রতিষ্ঠান যা প্রবেশিকা এবং মাধ্যমিক পরীক্ষাগুলোও নিয়ন্ত্রণ করতো। অতএব উচ্চশিক্ষার উপর তার প্রভাব ছিল শিক্ষামন্ত্রী ও তাঁর বিভাগ অপেক্ষা অনেক বেশী। এ প্রভাব থেকে পরীক্ষার্থীদের রক্ষা করার জন্যে তিনি সেকেন্ডারী এডুকেশন বোর্ড গঠনের উদ্দেশ্যে আইন পরিষদে একটি বিল উত্থাপনের চেষ্টা করেন। ফলে গোটা হিন্দু সম্প্রদায় ভয়ানক ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে এবং পারস্পরিক সকল বিভেদ ভুলে গিয়ে উক্ত প্রস্তাবিত বিলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়। ১৯০৫ সালের বংগভংগের পর একন প্রচন্ড বিক্ষোভ আর দেখা যায়নি। ১৯৪০ সালে কোলকাতায় স্যার প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের মতো এক বিদ্বজ্জন ব্যক্তির সভাপতিত্বে এক প্রতিবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সমগ্র প্রদেশ থেকে প্রায় দশ হাজার প্রতিনিধি সম্মেলনে যোগদান করেন। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন বার্ধক্যজনিত পীড়ায় ভুগছিলেন। এতদসত্ত্বেও তিনি উক্ত সম্মেলনে তাঁর নাম ও মর্যাদা ব্যবহারের সুযোগ গ্রহণ করেন। সম্মেলনে তিনি যে বাণী পাঠান তার শেষাংশে বলেনঃ
আমার বার্ধক্য এবং স্বাস্থ্য আমাকে সম্মেলনে যোগদানে বাধা দিচ্ছে। কিন্তু যে বিপদ আমাদের প্রদেশের সাংস্কৃতিক অস্তিত্বের প্রতি হুকমি সৃষ্টি করেছে, তা আমাকে ভয়ানক বিচলিত করেছে। সে জন্যে আমি আমার রোগশয্যা থেকে সম্মেলনে একটি কথা না পাঠিয়ে পারলাম না।
হিন্দুদের চরম বিরোধিতার কারণে বাংলার প্রধানমন্ত্রী সেকেন্ডারী এডুকেশন বোর্ড গঠনের যে পরিকল্পনা করেছিলেন তা কার্যকর করা হয়নি।
তবে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শেরে বাংলা ফজলুল হক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণযে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তা এই যে, প্রদেশের সকল সরকারী শতকরা পঞ্চাশ ভাগ হিন্দু ও পঞ্চাশ ভাগ মুসলমান লাভ করবে। সরকারী চাকুরী ক্ষেত্রে হিন্দুদের চিরাপরিত একচেটিয়া অধিকার প্রতিষ্ঠার ফলে মুসলমানদের প্রতি যে চরম অবিচার করা হচ্ছিল, উপরোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণে মুসলমান শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে জীবন ক্ষেত্রে বিরাট আশা ও আনন্দের সঞ্চার হয়। মুসলমান জাতির জন্যে এ ছিল এক বিরাট খেদমত।
পাঞ্জাব
যে কয়টি প্রদেশে কংগ্রেস মন্ত্রীসভা গঠিত হতে পারেনি তার মধ্যে ছিল পাঞ্জাব, সিন্ধু ও আসাম। নির্বাচনের ফলে পাঞ্জাবের দলীয় অবস্থান ছিল নিম্নরূপঃ
কংগ্রেস ১৮
অকংগ্রেস হিন্দু ও শিখ ৩৬
মুসলিম লীগ ২
অন্যান্য মুসলিম ৪
ইউনিয়নিষ্ট ৮৮
নির্দলীয় ২৭
মোট
>>>১৭৫
পরে আটজন সদস্য ইউনিয়নিস্ট পার্টিতে যোগদান করার ফলে এ দলে মোট সদস্য সংখ্যা হয় ৯৬। খালসা ন্যাশনালিস্ট শিখ দলও স্যার সেকেন্দার হায়াতের প্রতি তাদের সমর্থন জ্ঞাপন করে এবং এ সুযোগে তিনি মন্ত্রীসভা গঠন করেন। ১৯৪২ সালে তাঁর মৃত্যুর পর মালিক খিজির হায়াত খান প্রধানমন্ত্রী হন এবং ১৯৪৫ সালে সকল প্রাদেশিক পরিষদ বিলুপ্ত হওয়া পর্যন্ত এ মন্ত্রীসভা বলবৎ থাকে।
সিন্ধু
সিন্ধু প্রদেশের দলীয় অবস্থান ছিল নিম্নরূপঃ
কংগ্রেস ৮
অকংগ্রেসী হিন্দু ১৪
মুসলিম স্বতন্ত্র ৯
অন্যান্য মুসলমান ৭
সিন্ধু ইউনাইটেড মুসলিম পার্টি ১৮
নির্দলীয় ৪
মোট
>>>
৬০
এখানে কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারায় গোঁজামিল দিয়ে মন্ত্রীসভঅ গঠন করতে হয়। ফলে কোনটাই স্থিতিশীল হতে পারেনি। ভাঙা-গড়ার ভেতর দিয়েই এখানে মন্ত্রীসভাগুলো চলতে থাকে। প্রথমে স্যার গোলাম হোসেন হেদায়েতুল্লাহ মন্ত্রীসভা গঠন করেন। পরে আল্লাহ বখশ ও মীর বন্দে আলী খানের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীত্বের পালাবদল হতে থাকে।
আসাম
দলীয় অবস্থান এখানে নিম্নরূপ
কংগ্রেস ৩২
অকংগ্রেসীয় হিন্দু ৯
মুসলিম স্বতন্ত্র ৩০
নির্দলীয় ৩৩
সর্বমোট
>>> ১০৮
এখানেও কোন স্থিতিশীল সরকার গঠিত হতে পারেনি। স্যার মুহাম্মদ সা’দুল্লাহ মন্ত্রীসভা গঠন করেন এবং ১৯৩৮ সালের সেপ্টেম্বর এস্তেফা দান করেন। অতঃপর গভর্ণরের আমন্ত্রণে কংগ্রেস নেতা গোপীনাথ বারদলই মন্ত্রীসভা গঠন করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সকল মন্ত্রীসভার সাথে গোপীনাথ মন্ত্রীসভাও পদত্যাগ করে। অতঃপর পুনরায় স্যার মুহাম্মদ সা’দুল্লাহ মন্ত্রীসভা গঠনের সুযোগ পান। কিন্তু ১৯৪১ সালের শেষভাগে তাঁর মন্ত্রীত্বের পতন ঘটে এবং গভর্নর ১৯৩৫ সালের ভারত সরকার আইনের ৯৩ ধারার বলে প্রদেশের শাসনভার নিজহস্তে গ্রহণ করেন।