১. ডিসেম্বর মাস

সুন্দরবনের গুপ্তধন

এক

ডিসেম্বর মাস। শীত পড়ার সঙ্গে-সঙ্গে কলকাতা সহরে আমোদ প্রমোদে বেশ সমারোহ শুরু হয়েছে সিনেমা, থিয়েটার, প্রাচ্য-নৃত্য, সার্কাস-তার উপর এগজিবিশন, কুস্তি। রাজা-মহারাজারা দল বেঁধে সহরে এসেছেন…লাট-বেলাটের আসা-যাওয়া-…ওদিকে বিলাতী ক্রিকেট-ওয়ালারা এসেছে ম্যাচ খেলতে। সহর একেবারে সরগরম।

হঠাৎ ২৭ তারিখের যত খবরের কাগজে বড়-বড় অক্ষরে এক অমানুষিক খুনের খবর ছেপে বেরুলো–

বিখ্যাত ধনী ব্যবসায়ী শ্ৰীধরচন্দ্র মাইতি, এম-এল-এ, সুন্দরবনে নৃশংস ভাবে খুন হইয়াছেন। হত্যাকারী কে–তাহার কোনো সন্ধান নাই!

চব্বিশ-পরগণা জেলার সুন্দরবনে হরিণা নদীর মোহনার কিছু দূরে একটা হেঁতাল ঝোপে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হইয়াছে! ঠিক কোন সময়ে শ্রীধর নিহত হইয়াছেন, তাহা জানা যায় নাই। গত শনিবার বেলা দ্বিপ্রহরে জল-পুলিশের ষ্টীমার যখন উক্ত নদীতে তীরের নিকট দিয়া যাইতেছিল, সেই সময় পাশের হেঁতাল ঝোঁপের মধ্যে ষ্টীমারের এক সারেঙ্গ শ্রীধর বাবুর দেহ দেখিতে পায়। সারেঙ্গ তখনি দারোগাবাবুকে সে কথা বলে। দারোগা-বাবু ষ্টীমার থামাইয়া কয়েকজন লোক লইয়া তীরে নামেন। দেহ শ্ৰধর মাইতির বলিয়া অনেকে সনাক্ত করেন। এধর বাবুর দেহ তখনও উত্তপ্ত ছিল। দেহের জখম দেখিয়া পুলিশের ধারণা শ্রীধর বাবু মানুষের হাতে খুন হইয়াছেন; এবং এ হত্যা কিছুক্ষণ পূৰ্বে সংঘটিত হইয়াছে। শ্রীধর বাবুর মৃতদেহের নিকটে পুলিশ হস্তাঙ্কিত একটি ম্যাপ এবং ত্রিশূল-অঙ্কিত একটি প্রাচীন স্বর্ণমুদ্রা পাইয়াছে। কি কারণে শ্রীধর বাবু একা সুন্দরবনের ঐ দুর্গম অঞ্চলে আসিয়াছিলেন, তাহা জানা যায় নাই। কে বা কাহারা কি নিমিত্ত এ হত্যা করিয়াছে, তাহা রহস্যাবৃত। শ্রীধর বাবুর দেহ ময়না তদন্তের জন্য কলিকাতায় আনা হইয়াছে। স্থানীয় পুলিশ সন্দেহবশে, ওখানকার ক’জন কারা ও বাদীকে গ্রেফতার করিয়াছে। পুলিশ জোর-তদন্ত করিতেছে।

শ্রীধর বাবুর মৃত্যুর সংবাদ কলকাতা সহরে ক’দিন একটু চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করলেও এক হপ্তার বেশী তা রইলো না। বড়দিনের রঙীন আবহাওয়ায় এ কাহিনী মানুষের মন থেকে অচিরে বিলুপ্ত হলো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *