১. এক সেট গয়না

যেরকম টুনটুনি সেরকম ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ২০২০

উৎসর্গ

সাদাতউদ্দীন আহমেদ এমিল যে
আমার টুনটুনি এবং ছোটাচ্চু
বইয়ের ছবি এঁকে দেয় বলে আমি
এখনও এই বইগুলো লেখার উৎসাহ পাই!

ভূমিকা

যখন টুনটুনি এবং ছোটাচ্চুকে নিয়ে প্রথম লিখতে শুরু করেছিলাম তখন ভেবেছিলাম এগুলো হবে ছোটদের জন্য এক ধরনের ডিটেকটিভ গল্প। লিখতে লিখতে আবিষ্কার করেছি সেগুলো সবসময় পুরোপুরি ডিটেকটিভ গল্প থাকেনি। আমাদের দেশে ছেলেমেয়েদের যে বিষয়গুলো নিয়ে সমস্যা হয় কীভাবে কীভাবে সেগুলো গল্পের মাঝে চলে আসতে শুরু করেছে। এতে আমি যে খুব বেশি বিচলিত হয়েছি সেটা বলা যাবে না– কাউকে তো মাথার দিব্যি দিয়ে বলিনি গল্পগুলো সবসময়েই খাঁটি ডিটেকটিভ গল্প হবে এবং সেখানে কোনো উনিশ বিশ হবে না। একটুখানি উনিশ বিশ হলেই কী আর না হলেই কী?

কখনোই ভাবিনি যে আমি একই চরিত্র দিয়ে একাধিক বই লিখব। যেহেতু লেখা হয়েই গেছে এখন দেখতে হবে কতোদিন সেটা চালিয়ে যাওয়া যায়। আমার দিক থেকে বলতে পারি যতদিন পাঠকের আগ্রহ থাকবে আমি চেষ্টা করে যাব।

বাকিটুকু নির্ভর করবে টুনটুনি আর ছোটাচ্চুর ওপর–তারা সবাইকে নিয়ে বারবার আসতে রাজি হয় কী না সেটাই মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন!

মুহম্মদ জাফর ইকবাল
বনানী,
ঢাকা
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

১. এক সেট গয়না

দরজায় টুংটাং শব্দ শুনে টুনি দরজা খুলে দেখে দরজার সামনে ফারিহা দাঁড়িয়ে আছে। ফারিহা তার মাথার চুল ছোট করে কেটে ফেলেছে, সেজন্যে আজকে তাকে দেখতে অন্য রকম লাগছে। টুনি খুশি খুশি গলায় বলল, “ফারিহাপু, তোমাকে দেখতে আজকে কী সুইট লাগছে!”

ফারিহা তার ছোট ছোট চুলের ভেতর আঙুল ঢুকিয়ে হাসি মুখে বলল, “ভেবেছিলাম ন্যাড়া করে ফেলব। শেষ পর্যন্ত আর করলাম না।”

টুনি বলল, “কেন করলে না ফারিহাপু?”

“মনে হলো আমার মাথার চাঁদিটা ঢেউ ঢেউ। দেখতে কেমন লাগবে সেটা ভেবে আর ন্যাড়া করলাম না।

টুনি হি হি করে হেসে বলল, “মাথার চাঁদি কখনো ঢেউ ঢেউ হয় না ফারিহাপু।”

“হয়, হয়!” বলে ফারিহা ভেতরে ঢুকে একটা সোফায় বসে বলল, “শাহরিয়ার আছে?”

টুনি মাথা নাড়ল, বলল, “আছে। তুমি বসো ফারিহাপু, আমি ডেকে দিচ্ছি।

ফারিহা আবার তার চুলের ভেতর হাত ঢুকিয়ে বলল, “আমার চুল দেখে শাহরিয়ার কী বলবে মনে হয়?”

টুনি মুখ টিপে হাসল, বলল, “ছোটাচ্চু ভান করবে যে সে লক্ষই করেনি!”

ফারিহা মাথা নাড়ল, বলল, “আমারও তাই মনে হয়। দেখি, ডেকে আনো দেখি।”

ছোটাচ্চু এসে ফারিহাকে দেখে একটুখানি চমকে উঠল কিন্তু সত্যি সত্যি ভান করল যে সে ফারিহার ছেলেদের মতো করে কাটা চুলটা আলাদা করে লক্ষ করেনি। খানিকটা উদাস মুখ করে বসে রইল। তখন ফারিহা নিজেই জিজ্ঞেস করল, “আমার এই চুলের স্টাইলটা তোমার কেমন লাগছে শাহরিয়ার?”

ছোটাচ্চু বলল, “সত্যি করে বলব?”

“সত্যি করেই তো বলবে।”

“তোমাকে দেখতে একটা ছেলের মতো লাগছে। শুধু ছেলে না, কেমন যেন গুন্ডা গুন্ডা টাইপ।”

ফারিহা হি হি করে হেসে নিজের হাতে নিজে কিল দিয়ে বলল, “তুমি ঠিক বলেছো। শুধু যে দেখতে গুন্ডা গুন্ডা লাগছে তা না, নিজেকে কেমন জানি মনেও হচ্ছে গুন্ডা গুন্ডা।”

ছোটাচ্চু একটু ভয়ে ভয়ে ফারিহার দিকে তাকাল, বলল, “সত্যি?”

“হ্যাঁ সত্যি। মনে হচ্ছে কারো শার্টের কলার ধরে একটা ঝাঁকুনি দেই। কাউকে ঘুষি মারি। কাউকে গালাগাল করি।”

ছোটাচ্চু আরও ভয়ে ভয়ে বলল, “গালাগাল? ঘুষি?”

“হ্যাঁ।” বলে ফারিহাপু ছোটাচ্চুর হাত ধরে টান দিয়ে বলল, “চল।”

“কোথায়?”

“দেখি, মারামারি করার জন্য কাউকে পাওয়া যায় নাকি।”

ফারিহাপু সত্যি সত্যি মুখটা কেমন জানি ভয়ঙ্কর করে এক হাত দিয়ে অন্য হাতে আস্তে আস্তে ঘুষি মারতে লাগল ৷

ছোটাচ্চু উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “দাঁড়াও, শার্টটা একটু বদলে আসি।”

ফারিহা বলল, “ঠিক আছে, যাও।”

ছোটাচ্চু ঘর থেকে বের হতেই ফারিহাপু খিলখিল করে হাসতে লাগল। টুনির দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে বলল, “দেখেছো? দেখেছো? তোমার ছোটাচ্চু সত্যি সত্যি বিশ্বাস করেছে।”

টুনিও হাসল, বলল, “হ্যাঁ। আর তুমি বলেছো খুব জোর দিয়ে। ছোটাচ্চুকে যে যেটাই বলে সেটাই বিশ্বাস করে।”

ফারিহা মাথা নাড়ল, বলল, “সেইটা ঠিক।”

টুনি এবারে একটু ভয়ে ভয়ে বলল, “কিন্তু তুমি কি সত্যি সত্যি এখন কারো সাথে মারামারি করতে যাবে?”

ফারিহা মাথা চুলকে বলল, “বলে যখন ফেলেছি, তখন তো করতেই হবে। মারামারি না হোক একটু ঝগড়া-ঝাঁটি তো করা দরকার। কার সাথে করা যায়?”

টুনি বেশ খানিকটা দুশ্চিন্তা নিয়ে ফারিহার দিকে তাকিয়ে রইল। ফারিহাপু পারে না সেরকম কাজ মনে হয় দুনিয়াতে নাই।

গাড়ি চালাতে চালাতে হঠাৎ একসময় ফারিহা বলল, “টিশ ঢিশ ঢিশুম।”

ছোটাচ্চু ভুরু কুঁচকে বলল, “টিশ ঢিশ ঢিশুম মানে কী?”

“কোনো মানে নাই। “

“তাহলে?”

“তাহলে কী?”

“তাহলে এটা বলছো কেন?”

ফারিহা বলল, “কী আশ্চর্য, যে কথাটার মানে নাই সেই কথা বলা যাবে না?”

“আগে তো বলতে না। সেই জন্যে বলছি।

ফারিহাপু তখন হঠাৎ ব্রেক করে তার গাড়ি থামাল। ফারিহাপুর গাড়িতে উঠলে সবাইকে সিট বেল্ট লাগাতে হয়, তা না হলে নির্ঘাত ছোটাচ্চু সামনের ড্যাশ বোর্ডে একটা ধাক্কা খেত। ছোটাচ্চু একটু অবাক হয়ে বলল, “কী হলো, থামালে কেন? “

“চলো।”

“চলো? কোথায়?”

“চিনতে পারছো না কোথায়?”

জায়গাটা তখন ছোটাচ্চু চিনতে পারল। এইখানে তার আলটিমেট ডিটেকটিভ এজেন্সির অফিস ছিল।

ছোটাচ্চু মাথা বের করে তাকিয়ে দেখল, এখনও অফিসের সাইনবোর্ডটা আছে, তার মানে তার ডিটেকটিভ এজেন্সিটা উঠে যায় নাই। সরফরাজ কাফী তার অফিসটা দখল করে তাকে বের করে দিয়েছে কথাটা চিন্তা করলে আগে রাগে ছোটাচ্চুর মাথা গরম হয়ে যেত। আজকাল আর হয় না। ব্যাপারটা চিন্তা করলে তার কাছে এখন পুরো ব্যাপারটা খুবই হাস্যকর মনে হয়।

ছোটাচ্চু ভুরু কুঁচকে বলল, “এখানে থেমেছো কেন?”

“তোমার সরফরাজ কাফীকে একটু কচলে আসি।”

“কচলে আসবে? কচলে আসা আবার কী রকম কথা?” ছোটাচ্চু একটু অবাক হয়ে ফারিহার দিকে তাকাল। ফারিহা হঠাৎ করে এরকম অদ্ভুত ভাষায় কথা বলতে শুরু করেছে।

ফারিহাপু এক হাত দিয়ে অন্য হাতের তালুতে ঘুষি দিতে দিতে বলল, “সরফরাজ কাফী মানুষটা এত বড় একটা দুই নম্বুরি কাজ করেছে, তারপরেও তার সাথে একবারও কেউ কোনো কথা বলল না, একটু ডলে দিল না, এটা তো হতে পারে না।“

ছোটাচ্চু বলল, “তুমি কি এখন তার সাথে ঝগড়া করতে যাচ্ছ?” ফারিহাপু ফোঁস করে বলল, “আগে যাই। দেখি, ঝগড়া না মারামারি ঠিক কোনটা করা যায়।”

ছোটাচ্চু গম্ভীর হয়ে বলল, “দ্যাখো ফারিহা–”

ফারিহা হাত নেড়ে ছোটাচ্চুর কথা উড়িয়ে দিয়ে বলল, “তুমি আসো আমার সাথে। আমার ওপর বিশ্বাস রাখো।” কথা শেষ করে ফারিহা ছোটাচ্চুর হাত ধরে তাকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে ৷

আলটিমেট ডিটেকটিভ এজেন্সির দরজা খুলে অনেক দিন পর ছোটাচ্চু ফারিহাকে নিয়ে ভিতরে ঢুকল। আগে যেখানে রঞ্জনা বসত এখন সেখানে আরেকজন মেয়ে বসে আছে। মাথার চুলগুলো উঁচু করে বাঁধা, মুখে কড়া মেকআপ, ঠোঁটে কটকটে লাল রং। রঞ্জনা সব সময় শাড়ি পরে থাকত। এই মেয়েটা বিদঘুঁটে রঙের একটা সালোয়ার- কামিজ পরে আছে। মেয়েটির সামনে বসে একজন বয়স্কা মহিলা তার কথা বলছেন। ছোটাচ্চু এবং ফারিহাকে ঢুকতে দেখে দুজনেই তাদের দিকে ঘুরে তাকাল। মেকআপ করা মেয়েটি দাঁত বের করে হাসার ভঙ্গি করে বলল, “ওয়েলকাম টু দ্য আলটিমেট ডিটেকটিভ এজেন্সি। আপনাদের কীভাবে সাহায্য করতে পারি?”

ফারিহা বলল, “আমরা সরফরাজ কাফীর সাথে দেখা করতে এসেছি।”

মেয়েটি বলল, “কাফী স্যার তো নেই। উনি সবসময় এখানে আসেন না। আপনারা কী এপয়েন্টমেন্ট করে এসেছেন?”

ফারিহা মাথা নাড়ল, “না, এপয়েন্টমেন্ট করে আসি নাই।”

“আপনাদের কেসটা আমাকে বলতে পারেন, আমি দেখি কী করতে পারি।”

সামনে বসে থাকা মহিলা একটু অধৈর্য হয়ে বললেন, “আমার কেসটা আগে শেষ করে দেন।”

মেকআপ করা মেয়েটা মহিলার দিকে তাকিয়ে আবার দাঁত বের করে হাসার মতো একটা ভয়ঙ্কর ভঙ্গি করে বলল, “ম্যাডাম, সব কাস্টমার আমাদের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই সবাইকে আমাদের সমানভাবে দেখতে হবে।”

মহিলা বিরক্ত হয়ে বললেন, “সেটা দেখতে চান দেখেন, কিন্তু আমার কাজটা করে দিতে পারবেন কি না বলেন।”

“অবশ্যই পারব। দ্য আলটিমেট ডিটেকটিভ এজেন্সি পারে না এমন কোনো কাজ নেই। ঐ যে পিছনে তাকিয়ে দেখেন, আমাদের বড় বড় কেসগুলোর কথা আমরা বোর্ডে টানিয়ে রেখেছি। কিন্তু অ্যাকশান প্ল্যানটা কী হবে সেটা ঠিক করতে হবে। এডভান্স পেমেন্টের একটা ব্যাপার আছে-’

সামনে বসে থাকা মহিলা এবারে আরেকটু বিরক্ত হলেন। বললেন, “কী মুশকিল! ঘুরে-ফিরে আপনাদের শুধু একটা কথা! পেমেন্ট! পেমেন্ট! আরে বাবা, আমি কি না করেছি যে পেমেন্ট করব না?”

ছোটাচ্চুর লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই, এটি এখন আর তার ডিটেকটিভ এজেন্সি নয়, কিন্তু তবু সে কেমন যেন অপ্রস্তুত হয়ে গেল। হেঁটে হেঁটে তখন ঘরের অন্য মাথার বোর্ডে ঝোলানো আলটিমেট ডিটেকটিভ এজেন্সির বড় বড় কেসগুলো দেখতে গেল। তাকে বের করে দেওয়ার পর সরফরাজ কাফী কী কী কেস করেছে দেখার জন্য তার বেশ কৌতূহল হলো। তবে বোর্ডে ঝোলানো কেসগুলো দেখে ছোটাচ্চু বেশ অবাক হলো, এখানে নতুন একটি কেসও নেই। ছোটাচ্চু এখানে থাকার সময় যে কেসগুলো করেছে সেগুলোর কথাই লেখা। কী আশ্চর্য! সরফরাজ কাফী এতদিন তাহলে করেছে কী?

পাশে একটা শেলফ, সেখানে অনেকগুলো মগ, টি-শার্ট এবং চাবির রিং। সেগুলোর উপরে বড় বড় করে লেখা ‘দি আলটিমেট ডিকেটটিভ এজেন্সি’। তার এক সময়কার ডিটেকটিভ এজেন্সি কি এখন মগ আর টি-শার্ট বিক্রি করে চলছে? কী আজব!

ঠিক তখন ফারিহার গলা শুনে ছোটাচ্চু ঘুরে তাকাল। ফারিহা মেকআপ করা মেয়েটার সাথে কথা বলছে। সরফরাজ কাফী যেহেতু নেই, সে তার রাগ ঝাড়ার কোনো মানুষ পাচ্ছে না তাই এখন সে কী করবে বুঝতে পারছে না। ফারিহা কী বলছে শোনার জন্য ছোটাচ্চু কান খাড়া করল। শুনল ফারিহা জিজ্ঞেস করল, “আপনারা কি সব ধরনের কেস নেন?”

মেকআপ করা মেয়েটা বলল, “অবশ্যই! অবশ্যই নেই।”

“একজন মানুষ যদি আরেকজনের কোম্পানি দখল করে নেয় সেটার তদন্ত করতে পারবেন?”

এই মেয়েটি নিশ্চয়ই নতুন। সরফরাজ কাফী যে ছোটাচ্চুর দি আলটিমেট ডিটেকটিভ এজেন্সি দখল করে নিয়েছে সেটা নিশ্চয়ই জানে না। তাই খুব উৎসাহ নিয়ে বলল, “অবশ্যই তদন্ত করতে পারব। কোম্পানি দখল করে নেয়া তো ছেলে খেলা নয়। ঘাঘু ক্রিমিনালরা ছাড়া এটা পারে না। আপনি শুধু বলেন, আমরা আমাদের এজেন্টদের লাগিয়ে দেব, দুই সপ্তাহে তদন্ত করে সব বের করে আনবে। ক্রিমিনালদের সোসাইটিতে ঘুরে বেড়ানোর কথা নয়। ক্রিমিনালরা থাকবে জেলখানার ভিতরে–”

“গুড!” ফারিহা এবারে খুব উৎসাহ নিয়ে বলল, “একটা কাগজে লেখেন। কোম্পানিটার নাম হচ্ছে দি আলটিমেট ডিটেকটিভ এজেন্সি।”

ছোটাচ্চু দূর থেকে দেখল মেকআপ করা মেয়েটার চোয়াল কটাস করে ঝুলে পড়েছে। ফারিহা সেটা খেয়াল করল না, টেবিলে থাবা দিয়ে বলল, “কোম্পানিটার আসল মালিক ছিল শাহরিয়ার হাসান। ঐ যে দাঁড়িয়ে আছে।”

মেকআপ করা মেয়ে এবং সামনে বসে থাকা মহিলা দুইজনেই মাথা ঘুরিয়ে ছোটাচ্চুর দিকে তাকাল। ছোটাচ্চু আর কী করবে? দূর থেকে মুখটা একটু হাসি হাসি করে হাত নেড়ে দিল।

ফারিহা বলল, “আর যে ক্রিমিনালটা শাহরিয়ার হাসানের কোম্পানিটা দখল করেছে তার নাম হচ্ছে সরফরাজ কাফী।

মেকআপ করা মেয়েটার ঝুলে থাকা চোয়াল কটাস করে একবার বন্ধ হয়ে আবার খুলে গেল। তারপর খুলতে লাগল এবং বন্ধ হতে লাগল। ফারিহা সেটা খেয়াল করল বলে মনে হলো না। এক হাত দিয়ে অন্য হাতের তালুতে ঘুষি দিতে দিতে বলল, “ধরা যাবে তো সরফরাজ কাফীকে? জেলখানার ভাত খাওয়ানো যাবে তো? কমপক্ষে এক বেলা? কিছু এডভান্স কি করে যাব?”

মেকআপ করা মেয়েটি কী বলত কে জানে, কিন্তু ঘটনাটা আরও জমজমাট করার জন্য ঠিক তখন বাইরের দরজা খুলে গেল এবং সরফরাজ কাফী এসে ঢুকল। ছোটাচ্চু দেখল সরফরাজ কাফী ঠিক আগের মতোই আছে। আগের মতোই পরনে স্যুট এবং টাই। মাথার চুল মনে হয় আরও একটু পাতলা হয়েছে, আগের মতোই মাথার মাঝখানে সিঁথি করে চুল দুই ভাগে ভাগ করে চাঁদিটা ঢেকে রেখেছে। তার মুখে আগের মতোই একটা তেলতেলে ভাব।

সরফরাজ কাফীকে দেখে মেকআপ করা মেয়েটি প্রায় লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল। সরফরাজ কাফী ছোটাচ্চুকে তখনো দেখেনি, তার মুখের তেলতেলে হাসিটাকে পিছলে একটা হাসি বানিয়ে জিজ্ঞেস করল,

“গুড মর্নিং লিন্ডা। আমদের কি নূতন কোনো কেস এসেছে?”

মেকআপ করা মেয়েটা বলল, “না স্যার-মানে স্যার, ইয়ে বলছিলাম কী, মনে হয় একটা গোলমাল-মানে স্যার ইয়ে–যেটা বলছিলাম কিন্তু মানে ইয়ে–” কথাটার কোনো মাথামুণ্ডু নেই এবং কথাটা শেষও করতে পারল না, মাঝখানে থেমে গিয়ে লিন্ডা নামের মেকআপ করা মেয়েটা মাছের মতো খাবি খেতে লাগল। সরফরাজ কাফীর কিছু একটা সন্দেহ হলো। তখন মাথা ঘুরিয়ে তাকিয়ে ছোটাচ্চুকে প্রথমবার দেখতে পেল এবং সাথে সাথে তার মুখটা কেমন জানি শক্ত হয়ে গেল। তার চোখে প্রথমে বিস্ময়, তারপরে সন্দেহ এবং সবশেষে ভয় এসে ভর করল।

ছোটাচ্চু হাসি হাসি মুখে বলল, “অনেক দিন আপনার সাথে যোগাযোগ নেই। কেমন আছেন সরফরাজ সাহেব? আপনার কফি মগ, টি-শার্ট আর কী-রিং কেমন বিক্রি হচ্ছে?”

সরফরাজ কাফী কোনো উত্তর দিল না, চোখ বড় বড় করে ছোটাচ্চুর দিকে তাকিয়ে রইল। ফারিহা আগে কখনো সরফরাজ কাফীকে দেখেনি তাই প্রথমে চিনতে পারেনি। ছোটাচ্চুর কথা শুনে সে বুঝতে পারল এই সেই দুই নম্বুরি সরফরাজ কাফী। সে তড়াক করে লাফ দিয়ে বলল, “ও! আপনিই সেই মানুষ! অনেক দিন থেকে আমি আপনাকে খুঁজছি।”

ফারিহা এক হাতের তালুতে অন্য হাত দিয়ে ঘুষি দিতে দিতে সরফরাজ কাফীর দিকে এগিয়ে যায়। আর সরফরাজ কাফী প্রায় লাফিয়ে কয়েক পা পিছিয়ে যায়। আরেকটু হলে একটা চেয়ারের সাথে পা বেঁধে প্রায় পড়েই যাচ্ছিল, কোনোমতে নিজেকে সামলে নিল। ফারিহা একেবারে বিপজ্জনকভাবে খুব কাছাকাছি গিয়ে ফোঁস করে একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, “আমি শাহরিয়ারের কাছে আপনার দুই নম্বুরি কাজকর্মের কথা শুনেছি কিন্তু আপনাকে কখনো দেখি নাই। আপনি দেখতে কেমন হতে পারেন, সেইটা নিয়ে আমার মনের মাঝে একটা কল্পনা ছিল। আপনি জানেন, আপনার চেহারা আমার কল্পনার সাথে হুবহু মিলে গেছে। একেবারে হুবহু!”

সরফরাজ কাফী কিছু একটা বলতে চেষ্টা করল কিন্তু পরিষ্কারভাবে বলতে পারল না। গলা দিয়ে শুধু বিদঘুঁটে একটা আওয়াজ বের হলো। ফারিহা আরেকটু এগিয়ে যায়, সরফরাজ কাফী আরও অনেকটুকু পিছিয়ে যায়। ফারিহা হঠাৎ মুখটা কঠিন করে কেমন যেন হিসহিস শব্দ করে বলল, “অনেক দিন থেকে ভাবছি ব্যাপারটা আপনার সাথে হেস্ত নেস্ত করতে আসব। শাহরিয়ারকে সোজা মানুষ পেয়ে তার কোম্পানি দখল করে নিয়েছেন। সে ভালোমানুষ, কিছু বলে নাই। আমি ভালো মানুষ না– আমি-”

ফারিহা কী ধরনের মানুষ বলার সুযোগ পেল না। তার আগেই ছোটাচ্চু প্রায় লাফ দিয়ে এসে ফারিহার হাত ধরে তাকে টেনে সরিয়ে নেয়। রীতিমতো ধাক্কা দিয়ে তাকে দি আলটিমেট ডিটেকটিভ এজেন্সির অফিস থেকে বের করে নিতে নিতে বলল, “কী শুরু করেছো ফারিহা? তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? চলো, চলো বের হও এখান থেকে।”

ফারিহা হুঙ্কার দিয়ে বলল, “ভালো হবে না শাহরিয়ার! আমাকে ছেড়ে দাও। কোন মানুষকে কীভাবে সাইজ করতে হয় তুমি জানো না

“আমার জানতে হবে না। চলো, চলো। বের হও।” বলে ছোটাচ্চু ফারিহাকে দি আলটিমেট ডিটেকটিভ এজেন্সির অফিস থেকে রীতিমতো টেনে বের করে নিয়ে এলো।

.

গাড়িতে উঠে ফারিহা স্টিয়ারিং হুইলে দুই হাত রেখে ফোঁস ফোঁস শব্দ করতে লাগল। ছোটাচ্চু বলল, “তোমার নিশ্চয়ই মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এইভাবে কেউ কথা বলে?”

“আমি বলি।”

“বলা ঠিক না। ঝগড়া-ঝাঁটি, চেঁচামেচি করে দুনিয়ার কোনো কাজ হয় না।”

“হয়।

“কী হয়?”

“একধরনের আরাম হয়।”

“চুলকানি হলে সেটা খামচালেও আরাম হয়। তার মানে এই না যে আমি শরীরে চুলকানি বানাব খামচানোর জন্য–”

ফারিহা বলল, “ইশ্! তুমি যে কী বাজে কথা বলতে পারো!” তারপর গাড়ি স্টার্ট করে যেই রওনা দেবে ঠিক তখন দি আলটিমেট ডিটেকটিভ এজেন্সি থেকে বয়স্কা মহিলাটি বের হয়ে হাত নাড়াতে নাড়াতে চিৎকার করতে লাগলেন, “দাঁড়ান, দাঁড়ান। যাবেন না। যাবেন না। আগেই যাবেন না।”

ফারিহা তার গাড়ি থামাল। মহিলাটি সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে জানালা দিয়ে মাথা ঢুকিয়ে ছোটাচ্চুর দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনি সেই বিখ্যাত ডিটেকটিভ শাহরিয়ার সাহেব? এই ডিটেকটিভ এজেন্সির আসল মালিক?”

ছোটাচ্চু একটু অস্বস্তি নিয়ে বলল, “বিখ্যাত ডিটেকটিভ কি না জানি না। তবে হ্যাঁ, এই এজেন্সিটা আমি তৈরি করেছিলাম।“

“আমি আসলে আপনার কাছেই এসেছিলাম। এসে শুনি আপনি আর এখানে কাজ করেন না।”

ছোটাচ্চু মাথা নাড়ল, কিছুই বলল না। মহিলা বললেন, “আমার নাম রওশান আরা। আমার একটা কেস ছিল, খুবই সেনসিটিভ। যদি একটু দেখতেন।”

ছোটাচ্চু মাথা নেড়ে বলল, “আমি আসলে ডিটেকটিভ কাজ ছেড়ে দিয়েছি।”

“সে কী! আপনার মতো এত বড় ডিটেকটিভ যদি কাজ ছেড়ে দেন তাহলে কেমন করে হবে?”

“আমি মোটেও বড় ডিটেকটিভ না। কিন্তু সেটা বড় কথা না। ডিটেকটিভ এজেন্সির কাজ আর ভালো লাগে না।’

মহিলা অনুনয় করে বলল, “আমার কেসটা একটু করে দেন প্লিজ। আপনার জন্য খুবই সহজ হবে কাজটা। একেবারে পানি ভাত।”

ছোটাচ্চু একটু হেসে ফেলল। বলল, “কী রকম কেস?”

“আমার আলমারি থেকে আমার একটা গয়নার সেট চুরি গেছে। চাবি থাকে আমার কাছে, সেটা কেউ নিয়ে চুরি করেছে। বাসার কেউ নিশ্চয়ই নিয়েছে, কিন্তু কাকে সন্দেহ করব?”

“বাসায় কারা থাকে?”

“অনেকে থাকে। ফ্যামিলি মেম্বাররা আছে, কাজের মানুষজন আছে। কিছু আত্মীয়স্বজনও আছে।”

“কাউকে সন্দেহ করেন?”

“না। কাকে সন্দেহ করব? সবাই নিজের মানুষ। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে তাদের ভেতর থেকেই কেউ নিশ্চয়ই চুরি করেছে। খুবই দুঃখের ব্যাপার।”

ছোটাচ্চু মুখ সুচালো করে বললেন, “আপনি হান্ড্রেড পার্সেন্ট সিওর যে আপনার বাসায় যারা আছে তাদের ভেতর থেকেই কেউ একজন চুরি করেছে?”

“জি। হান্ড্রেড অ্যান্ড টেন পার্সেন্ট সিওর।”

“সবাইকে একসাথে পাওয়া যাবে?”

রওশান নামে মহিলা কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল, “জি, পাওয়া যাবে।”

ছোটাচ্চু হঠাৎ হেসে ফেলল। মিসেস রওশান অবাক হয়ে বললেন, “হাসছেন কেন?”

“একটা খুবই সোজা উপায় আছে। নাসিরুদ্দিন হোজ্জার একটা গল্পে এটা আছে। আপনি করবেন কী—”

ফারিহা বলল, “দাঁড়াও শাহরিয়ার। মিসেস রওশান জানালা দিয়ে মাথা ঢুকিয়ে কথা বলছেন। তুমি গাড়ির সিটে বসে কথা বলছো। এভাবে হয় না। কোথাও বসে কথা বলো।”

ছোটাচ্চু বলল, “কোনো দরকার নেই। নাসিরুদ্দিন হোজ্জার টেকনিকটা খুবই সোজা টেকনিক। আমি এক মিনিটে বলে দিতে পারব। আপনি প্রথমে একটা–”

মিসেস রওশান জোরে জোরে মাথা নাড়ালেন। বললেন, “না না না। আমি নিজে কিছুই করব না। আপনাকে কষ্ট করে আমার বাসায় একটু আসতে হবে। প্লিজ, আসতেই হবে। আসতেই হবে। আপনার টেলিফোন নম্বরটা আমাকে দেন। আমি বাসায় গিয়ে সবাইকে একত্র করে আপনাকে ফোন করব। ঘণ্টখানেক সময় দেন।”

কাজেই ছোটাচ্চুকে তার ফোন নম্বর দিতে হলো। মিসেস রওশান ছোটাচ্চুর নম্বরটা নেওয়ার পর শেষ পর্যন্ত গাড়ির জানালা থেকে তার মাথা বের করলেন। ফারিয়াও শেষ পর্যন্ত তার গাড়ি স্টার্ট করতে পারল।

.

ঘণ্টাখানেকের আগেই মিসেস রওশানের ফোন চলে এলো। ফোনে বাসার ঠিকানা দিয়ে দিয়েছেন। ফারিহার আপাতত কোনো কাজ নেই তাই সে ছোটাচ্চুকে সেই বাসায় নিয়ে গেল।

মিসেস রওশনের বাসাটা অনেক সুন্দর। বাসার দারোয়ান গেট খুলে মাথা ঝুঁকিয়ে তাদের দুজনকে লম্বা করে সালাম দিল। মিসেস রওশান নিশ্চয়ই গেটে আগে থেকে বলে রেখেছেন। ফারিহা গাড়ি ভেতরে ঢুকিয়ে বারান্দার সামনে থামাল। দুইজন গাড়ি থেকে নামতেই দেখল বারান্দায় মিসেস রওশান দাঁড়িয়ে তাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন, “আসেন, আসেন। বাড়ি খুঁজে পেতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো?”

ছোটাচ্চু মাথা নাড়ল, বলল, “না। অসুবিধা হয় নাই।”

“ভেতরে আসেন। ডাইনিং হলে সবাই অপেক্ষা করছে।”

ছোটাচ্চু জিজ্ঞেস করল “কতজন?”

“আমাকে নিয়ে সতেরোজন। “

“বেশ বড় ফ্যামিলি।”

“হ্যাঁ। বাচ্চাকাচ্চাও আছে কয়েকজন। ওদেরকে আর রাখিনি।”

“যারা সন্দেহের বাইরে তাদের রাখার দরকার নাই।”

“তবে মজা দেখার জন্য তারাও আছে।’

ছোটাচ্চু হাসল, বলল, “থাকার কথা।”

“আপনি কি কাজ শুরু করে দেবেন, নাকি আগে একটু চা-নাস্তা খেয়ে নেবেন?”

“কাজ শুরু করে দিই। আমার কয়েকটি জিনিস লাগবে।”

“কী লাগবে?”

“একটা ব্যাগ আর একটা বড় তোয়ালে– “

“আর কিছু?”

“আপনার চাবির গোছাটা। আর একটা টিস্যুর বাক্স। “ঠিক আছে, আমি নিয়ে আসি।”

“আমি সবার সাথে আগে একটু কথা বলব। তারপর আমি বসার ঘরে বসব। ডাইনিং রুম থেকে একজন একজন করে এখানে আসবে। আমি তাদেরকে কিছু একটা করতে বলব। তারা সেটা করে চলে যাবে। যখন সবাই শেষ হবে তখন আমি মনে হয় বলে দিতে পারব কে আপনার স্টিলের আলমারি খুলেছে।”

মিসেস রওশান একটা নিশ্বাস ফেলে বললেন, “আমার এখন একটু একটু ভয় লাগছে। “

ফারিহা জিজ্ঞেস করল, “কেন? ভয় কেন লাগছে?”

“এখানে সবাই বাসার মানুষ, নিজেদের মানুষ, আপন মানুষ। এখন যদি দেখি এদের ভিতরে একজন আমার গয়নার সেটটা চুরি করেছে তাহলে আমার কেমন লাগবে?”

ফারিহা মাথা নাড়ল, বলল, “সেটা অবশ্য ঠিকই বলেছেন।”

ছোটাচ্চু বলল, “এখনও চিন্তা করে দেখেন, আপনি কি সত্যিই জানতে চান?”

মিসেস রওশান মাথা নাড়লেন, “হ্যাঁ, আমি জানতে চাই।”

“ঠিক আছে। তাহলে শুরু করি।”

“চলেন।” মিসেস রওশান হাঁটতে হাঁটতে বললেন, “ডাইনিং রুমে সবাই অপেক্ষা করছে।”

ডাইনিং রুমে সবাই নিজেদের মাঝে কথা বলছিল। এক সেট গয়না চুরির আসামিকে ধরার জন্য সবাইকে একত্র করা হয়েছে সেটা নিয়ে কারও মাঝে কোনো দুশ্চিন্তা আছে বলে মনে হলো না। দেখে মনে হলো সবাই কোনো একটা ম্যাজিক শো দেখার জন্য অপেক্ষা করছে। ছোটাচ্চু আর ফারিহা ঘরের মাঝে ঢোকার সাথে সাথে সবাই আনন্দে হাততালি দিতে লাগল।

মিসেস রওশান যথেষ্ট বিরক্ত হলেন। বললেন, “কী হলো? একটা চোর ধরার জন্য সবাইকে একত্র করেছি। আর সবাই আনন্দে হাততালি দিচ্ছে? ব্যাপারটা কী?”

মাথায় টাক এবং মোটাসোটা একজন ভদ্রলোক বললেন, “ব্যাপারটা কী বুঝতে পারছো না? ব্যাপারটা হচ্ছে এইখানে তোমার চোর নাই।”

মিসেস রওশান হুঙ্কার দিলেন, “আছে শওকত। তা না হলে আমার গয়নার সেট গেল কই?”

শওকত নামের মোটাসোটা ভদ্রলোক যিনি মিসেস রওশানের স্বামী, চোখ নাচিয়ে বললেন, “তোমার আলমারির চাবি তোমার কাছে থাকে। তাই গয়নার সেট তুমি নিশ্চয়ই অন্য কোনোখানে রেখে ভুলে গেছো। এখন আমাদের দোষ দিচ্ছ।”

মিসেস রওশান গলা উঁচিয়ে বললেন, “আমি তোমার মতো হাবাগোবা না যে ভুলে যাব।”

শওকত সাহেব এবার অন্যদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “দেখলি? তোরা দেখলি? তোর আম্মু আমাকে হাবাগোবা বলে গালি দিল।”

কমবয়সী একটা মেয়ে বলল, “বাদ দাও আব্বু। আগে চোর ধরার প্রজেক্ট শেষ হোক। যখন দেখবে আমরা কেউ আম্মুর গয়না চুরি করি নাই তখন হাইকোর্টে মানহানির মামলা করে দিবে।”

মোটাসোটা ভদ্রলোক খুশি খুশি হয়ে বললেন, “হ্যাঁ, সেইটাই তোর আম্মুর জন্য উচিত শিক্ষা হবে। দশ কোটি টাকার মানহানি মামলা।”

পেছন থেকে বাসার কাজকর্মে সাহায্য করার একজন মহিলা চিকন গলায় বলল, “খালুজান, মামলায় টাকাটা কিন্তুক আপনারেই দিতে হবে।”

ডাইনিং রুমের সবাই হা হা করে হেসে উঠল। একজন বলল, “সত্যি কথা। একেবারে সত্যি কথা।”

মিসেস রওশান ধমক দিয়ে সবাইকে থামিয়ে দিলেন, বললেন, “অনেক হয়েছে। ঢং বন্ধ করো। তোমরা ভেবেছো কী? চোর ধরা পড়লে আমি কি ছেড়ে দিব? ছাড়ব না। যাই হোক, আমরা কাজ শুরু করি।”

মিসেস রওশান ছোটাচ্চুকে দেখিয়ে বললেন, “ইনি হচ্ছেন বিখ্যাত ডিটেকটিভ শাহরিয়ার হাসান। সাথে তার টিম মেম্বার ফারিহা। তাদেরকে আমি অনেক কষ্ট করে আমার এই কেসটা নিতে রাজি করিয়েছি।”

বিশ-পঁচিশ বছরের একটা ছেলে বলল, “আমি ডিটেকটিভ শাহরিয়ার হাসানের ওপর টেলিভিশনে একটা নিউজ দেখেছিলাম। অসাধারণ ডিটেকটিভ।”

মিসেস রওশানের মেয়ে বলল, “আমি জানতামই না আসলেই ডিটেকটিভ আছে। আমি ভেবেছিলাম খালি গল্প বইয়ে থাকে। “

শওকত সাহেব মাথা নেড়ে বললেন, “অসাধারণ, অসাধারণ!” ছোটাচ্চু বিব্রত ভঙ্গিতে বলল, “আসলে আমার নিজের কোনো ক্রেডিট নাই। আমার একটা খুব ভালো টিম ছিল। তাছাড়া এখন নানা ধরনের টেকনোলজি বের হয়েছে, আমাদের বিশেষ কিছু করতে হয় না। টেকনোলজি ব্যবহার করে সবকিছু করে ফেলা যায়।”

ছোটাচ্চু কথা শেষ করে তার হাতে টিস্যু দিয়ে ধরে রাখা একটা চাবি দেখিয়ে বললেন, “এই যে এটা হচ্ছে আলমারির চাবি। এইটা ব্যবহার করে আলমারি খোলা হয়েছিল। কাজেই যে চুরি করেছে তার সিগনেচার এখানে আছে। জিনেটিক সিগনেচার। আমি একটু আগে একটা বিশেষ কেমিক্যাল দিয়ে এটা লেপে দিয়েছি। অপরাধীর জিনেটিক কোডিং এখন এই চাবিতে সিল হয়ে গেছে।”

সবাই মুখ গম্ভীর করে ছোটাচ্চুর কথা শুনতে থাকে। ছোটাচ্চু কেশে একটু গলা পরিষ্কার করে বলল, “এখন আপনারা একজন একজন করে পাশের ঘরে যাবেন। সেখানে টেবিলের উপর চাবিটা রাখা থাকবে। আপনার চাবিটা মুঠো করে ধরে এক থেকে দশ পর্যন্ত গুনবেন। তারপর চাবিটা রেখে দিবেন। আপনার জিনেটিক কোডিং যদি চাবিতে থাকা জিনেটিক কোডিংয়ের সাথে মিলে যায় তাহলে একটা রেজনেটিং এফেক্ট হবে।”

একজন জিজ্ঞেস করল, “রেজনেটিং এফেক্ট মানে কী?”

“এটা একটা বৈজ্ঞানিক বিষয়। দুইটা জিনোমের ভিতর মিল থাকলে একটা আরেকটাকে এমপ্লিফাই করে অনেক বড় করে একটা সিগন্যাল দেয়। খালি চোখে আমরা দেখতে পাব না। কিন্তু যদি জিনো ক্রিজিং মিটারে দেওয়া হয় সেই মেশিনটা বলে দেবে।

মিসেস রওশানের মেয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী মেশিন?”

“জিনো ক্রিজিং মিটার। আমাদের দেশে ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টে নতুন একটা এনেছে। সেখানে আমার এক বন্ধু কাজ করে, সে চেক করে দিতে রাজি হয়েছে। প্রতি স্যাম্পলে একশো ডলারের মতো খরচ হয়, সে কম টাকায় করে দেবে।”

ছোটাচ্চু দেখল মিসেস রওশানের মেয়ে হাতের স্মার্ট ফোনে জিনো ক্রিজিং মিটার খুঁজতে শুরু করেছে। ব্যাপারটা বিপজ্জনক, কাজেই ছোটাচ্চু তাড়াতাড়ি বলল, “এটা খুবই নতুন টেকনোলজি, এখনও বেশি মানুষ এটা সম্পর্কে জানে না। তবে এটা চেক করার জন্য আলাদা করে সবার জিনেটিক স্যাম্পল দরকার হবে। যেমন সবার একটা করে চুল। কিংবা মুখের স্যালাইভা। কিংবা এক ফোঁটা রক্ত।”

মিসেস রওশানের স্বামী শওকত সাহেব নিজের টাক মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, “আমার এমনিতেই চুল নাই, যদি আরও চুল দিয়ে দেই–তাহলে থাকবে কী?”

ছোটাচ্চু হাসল। বলল, “একটা, মাত্র একটা চুল।”

“যার মাথায় চুল নাই তার কাছে প্রত্যেকটা চুল মূল্যবান।”

মিসেস রওশান ধমক দিয়ে বললেন, “অনেক হয়েছে। এখন চুপ করো।” তারপর ছোটাচ্চুর দিকে তাকিয়ে বললেন, “তাহলে শুরু করে দিই?”

“ঠিক আছে।” ছোটাচ্চু বলল, “ও আচ্ছা। আরেকটা কথা। এই স্যাম্পল নিতে হয় অন্ধকারে। আলো থাকলে সিগন্যাল নষ্ট করে দেয়। তার কারণ আলো হচ্ছে ফোটন। ফোটন হচ্ছে শক্তির কণা। যখন কণা–”

শওকত সাহেব বললেন, “আমি বিজ্ঞানের কিছু বুঝি না। বিজ্ঞানের কথা শুনলে মাথা ধরে যায়।”

ছোটাচ্চু বলল, “ঠিক আছে। তাহলে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি না। চাবিটা থাকবে একটা ব্যাগের ভিতরে। ব্যাগটা ঢেকে রাখব একটা বড় তোয়ালে দিয়ে যেন আলো ঢুকতে না পারে। আপনারা ব্যাগে হাত ঢুকিয়ে চাবিটা ধরে কিছুক্ষণ মুঠি করে রাখবেন। তারপর চাবিটা ভিতরে রেখে হাত বের করে আনবেন। ঠিক আছে?”

সবাই মাথা নাড়ল, বলল, “ঠিক আছে।”

তখন ছোটাচ্চু বাইরের ঘরে গিয়ে টেবিলের উপর একটা ব্যাগ রেখে একটা তোয়ালে দিয়ে ঢেকে দিল। সবার প্রথমে এল বাসায় কাজকর্মে সাহায্য করার মেয়েটি। তাকে এখন চা বানাতে হবে কাজেই তার একটু তাড়াহুড়া আছে।

ব্যাগের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে সে হাত দিয়ে চাবিটা খুঁজতে থাকে। চাবিটা না পেয়ে বলল, “কই? ভেতরে তো চাবি নাই।

ছোটাচ্চু বলল, “ও আচ্ছা। সরি। চাবিটা ভিতরে রাখতে ভুলে গেছি। আপনি হাতটা বের করেন, আমি চাবিটা রেখে দিই।”

কাজকর্মে সাহায্য করার মেয়েটি হাত বের করে আনল, ছোটাচ্চু একটা টিস্যু দিয়ে ধরে ভেতরে চাবিটা রাখল। মেয়েটি চাবিটা ধরে দশ পর্যন্ত গুনে তার হাত বের করে আনল।

ছোটাচ্চু বলল, “চমৎকার! আপনার কাজ শেষ। আপনি এখন যেতে পারেন।”

ফারিহা তখন মেয়েটির মাথা থেকে একটু চুল নিয়ে একটা কাগজে স্কচ টেপ দিয়ে লাগিয়ে পাশে তার নামটা লিখে রাখল। এরপর এলো মিসেস রওশানের মেয়ে। সেও ব্যাগে হাত ঢুকিয়ে চাবিটা খুঁজে পেল না। খানিকক্ষণ হাত দিয়ে খোঁজাখুঁজি করে বলল, “কোথায়? চাবিটা তো খুঁজে পাচ্ছি না।”

ঠিক আগের বারের মতো ছোটাচ্চু বলল, “তাই নাকি? চাবি নাই?”

“নাহ!”

“ও আচ্ছা, রাখতে ভুলে গেছি। হাতটা বের করো, আমি চাবিটা রাখছি ভিতরে।”

মেয়েটা হাত বের করল, ছোটাচ্চু টিস্যু দিয়ে ধরে চাবিটা ব্যাগে ভেতরে রাখল। এর পরে এলো পঁচিশ-ছাব্বিশ বছরের একজন ছেলে। সেও ব্যাগে হাত ঢুকিয়ে বলল, “কই? চাবি তো নেই ভেতরে।”

ছোটাচ্চু আবার আগের মতো বলল, “ও আচ্ছা! সরি। চাবিটা রাখতে ভুলে গেছি।”

এভাবে চলতে থাকে। ছোটাচ্চু ইচ্ছা করে কখনোই ভেতরে চাবিটা রাখে না। আর সবাই চাবিটা খুঁজতে থাকে। যখন খুঁজে পায় না তখন ছোটাচ্চু চাবিটা ভেতরে রাখে।

পরপর সাতজন শেষ হওয়ার পর মিসেস রওশানের স্বামী শওকত সাহেব এলেন। তিনি ব্যাগের ভেতরে হাত ঢোকালেন। ভেতরে কোনো চাবি নেই। কিন্তু তিনি কোনো কিছুই বললেন না। খানিকক্ষণ হাত মুঠি করে রেখে হাত বের করে আনলেন। ছোটাচ্চু যে ইচ্ছে করে ভেতরে কোনো চাবি রাখছে না সেটা তিনি জানেন না। কাজ শেষ করে যখন উঠে যাচ্ছিলেন ছোটাচ্চু তখন তাকে থামাল, নিচু গলায় জিজ্ঞেস করল, “চাবিটা মুঠি করে ধরে রেখে দশ পর্যন্ত গুনেছেন?”

“হ্যাঁ গুনেছি।“

“চমৎকার!”

ছোটাচ্চু ফারিহার দিকে তাকাল, ফারিহা ছোটাচ্চুর দিকে তাকাল। তারা কি হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারল না। বোঝাই যাচ্ছে মিসেস রওশানের স্বামী মিথ্যা কথা বলছেন, ব্যাগের ভেতর চাবি নাই, চাৰিটা ধরে রাখলেন কীভাবে? শওকত সাহেব চলে গেলে পরের জন চলে এসেছিল, ছোটাচ্চু তাকে একটু পরে আসতে বলে মিসেস রওশানকে ডেকে পাঠাল।

মিসেস রওশান এসে জিজ্ঞেস করলেন, “কী ব্যাপার?”

ছোটাচ্চু মাথা চুলকাল, বলল, “আমরা আপনার কেসটা ফিরিয়ে দিচ্ছি। এই কেসে কাজ করাটা ঠিক হবে না ৷

মিসেস রওশান ভুরু কুঁচকে বললেন, “কাজ করা ঠিক হবে না?”

“না।”

“কেন?”

ছোটাচ্চু ফারিহার দিকে তাকাল, ফারিহাও ছোটাচ্চুর দিকে তাকাল। কেউ কোনো কথা বলল না। মিসেস রওশান আবার জিজ্ঞেস করল, “কেন? কাজ করা ঠিক হবে না কেন? বের করতে পারবেন না? “

ছোটাচ্চু মাথা নাড়ল, বলল, “না। বের করতে পেরেছি কিন্তু আপনাকে বলতে পারব না।”

মিসেস রওশান চোখ বড় বড় করে বললেন, “বের করেছেন?”

ছোটাচ্চু চুপ করে রইল। মিসেস রওশান অবশ্যি চুপ করে থাকার মানুষ নয়, আরও জোরে চিৎকার করে উঠলেন, “বলেন, কে? কে আমার গয়না চুরি করেছে?”

ছোটাচ্চু তবু চুপ করে রইল। তখন হঠাৎ করে মিসেস রওশান কিছু একটা আন্দাজ করতে পারলেন। ভুরু কুঁচকে গলা নামিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “শওকত? নিশ্চয়ই শওকত। তাই না?”

ছোটাচ্চু চুপ করে রইল, অনেক কষ্ট করেও মুখের হাসিটা ঢেকে রাখতে পারল না।

মিসেস রওশান গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠলেন, “শওকত! শওকত কোথায়? কত বড় সাহস? আমার আলমারি খুলে আমার গয়নার সেট নিয়ে যাও–”

মিসেস রওশানের চিৎকার শুনে শওকত সাহেব এবং অন্য সবাই বসার ঘরে এসে ঢুকল। এত বড় একটা অপকর্ম করে হাতেনাতে ধরা পড়ার পরেও শওকত সাহেবের মুখে অপরাধের কোনো চিহ্ন নেই। বরং তার চোখ-মুখ আনন্দে ঝলমল করছে। ছোটাচ্চুর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “ইয়াংম্যান। কীভাবে বের করলে? ইউ আর এ জিনিয়াস ৷ তুমি করে বললাম, কিছু মনে করলে না তো?”

ছোটাচ্চু মাথা নাড়ল, বলল, “না, না। আপনি তুমি করে বলতে পারেন। কিন্তু–”

“তুমি বের করলে কেমন করে? তোমার যন্ত্রপাতি তো এখানে নেই। “ “যন্ত্রপাতির ব্যাপারটা আসলে বানানো। ওসব কিছুই না। ব্যাগের ভিতরে কোনো চাবি রাখিনি, কিন্তু আপনি বললেন চাবিটা হাত দিয়ে মুঠো করে ধরে রেখেছেন। তাই বুঝলাম-”

শওকত সাহেব আনন্দে হা হা করে হাসলেন। বললেন, “হাউ ক্লেভার!”

মিসেস রওশান রাগে তিড়বিড় করে জ্বলতে জ্বলতে বললেন, “হাউ ক্লেভার! তোমার লজ্জা করে না? বউয়ের গয়না চুরি করো–

শওকত সাহেবকে খুব লজ্জা পেতে দেখা গেল না। হাসি হাসি মুখে বললেন, “বাবা, তোমাকে এই গয়না কিনে দিয়েছে কে? খামাখা আলমারির ভিতর পড়ে থেকে ফাংগাস পড়ে যাচ্ছে।”

মিসেস রওশানের মেয়ে বলল, “আব্বু গয়না পাউরুটি না ৷ গয়নায় ফাংগাস পড়ে না।”

মিসেস রওশানের রাগ কমার কোনো লক্ষণ দেখা গেল না। হুঙ্কার দিয়ে বললেন; “তুমি পুরুষ মানুষ তোমার গয়নার দরকার পড়ল কেন? কী করেছো আমার গয়না?”

“দিয়ে দিয়েছি।”

“কাকে দিয়েছো?”

“ঐ যে আগুনে পুড়ে একটা ফ্যামিলির সবাই মরে গেল। শুধু একটা মেয়ে বেঁচে গেছে। তার বিয়ে–’

মিসেস রওশানের রাগ একটু কমে এলো। বললেন, “তাকে গয়না দিতে চাও সেটা আমাকে বললে না কেন? আমি কি না করতাম?”

“ছোটখাটো বিষয় নিয়ে তোমাকে ডিস্টার্ব করতে চাই নাই।” মিসেস রওশান নাক দিয়ে ফোঁস করে একটা নিশ্বাস ফেলে বললেন, “এর পরের বার থেকে আমাকে বলে-কয়ে দেখবে।

শওকত সাহেব মাথা নাড়লেন, বললেন, “ঠিক আছে।”

তাদের মেয়ে না-সূচক মাথা নাড়ল, বলল, “না আম্মু। আব্বু আসলে গয়না দুই চোখে দেখতে পারে না। পেলেই সেগুলো এদিক-সেদিক দিয়ে দেয়। আম্মু, তুমি যদি তোমার গয়না বাঁচাতে চাও তাহলে ব্যাংকের সেফ ডিপোজিট বক্সে নিয়ে রাখো।”

মিসেস রওশান মাথা নাড়লেন, বললেন, “হ্যাঁ, এখন থেকে সেইটাই করতে হবে।“

শওকত সাহেব লম্বা একটা নিশ্বাস ফেলে বললেন, “খামাখা গয়না বাঁচিয়ে কী লাভ? কোনো একদিন এলো কোনো চোর, এসে চুরি করে নিয়ে যাবে! এর থেকে একটা কাজে লাগুক–’

মিসেস রওশান বললেন, “থাক। আর লেকচার দিতে হবে না। “ উত্তেজনা আস্তে আস্তে কমে এসেছে। তখন ছোটাচ্চু বলল, “আমরা তাহলে এখন যাই?”

মিসেস রওশান বললেন, “একটু চা খেয়ে যান।”

“না, না, চা খেতে হবে না। এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে। আপনাদের সাথে পরিচয় হলো, আরেক দিন এসে চা খেয়ে যাব। “

বিদায় নিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় মিসেস রওশান ছোটাচ্চুকে একটা খাম ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন। ছোটাচ্চু অবশ্য কিছুতেই খামটা নিতে রাজি হলো না। শওকত সাহেব তখন ছোটাচ্চুর টেলিফোন নম্বরটা রেখে দিলেন, তার কোম্পানির কাজে নাকি সাহায্য করার জন্য ছোটাচ্চুকে ডাকবেন।

গাড়িটা ছেড়ে দেওয়ার পর ফারিহা বলল, “খামটা অনেক মোটা ছিল।”

“হ্যাঁ, অনেক মোটা। নোটগুলো কি পাঁচশো টাকার ছিল, নাকি হাজার টাকার?”

“মনে হলো সব হাজার টাকার নোট। “

ছোটাচ্চু জিভ দিয়ে চুকচুক শব্দ করে বলল, “ইশ! এতগুলো টাকা।”

“হ্যাঁ, এতগুলো টাকা!

ছোটাচ্চু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বলল, “আমার জিনো ক্রিজিং মিটারের গল্পটা কেমন হয়েছিল?”

“ভালো, অনেক ভালো। চাপাবাজিতে তুমি অনেক এক্সপার্ট। এখন নূতন একটা এজেন্সি খুলো, দ্যা আল্টিমেট চাপাবাজি এজেন্সি!”

ছোটাচ্চু তার সবগুলো দাঁত বের করে হাসল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *