একজন মায়াবতী
দরজার কড়া নড়ছে।
মনজুর লেপের ভেতর থেকে মাথা বের করে শব্দ শুনল–আবার লেপের ভেতর ঢুকে পড়ল। এর মধ্যেই মাথার পাশে রাখা ঘড়ি দেখে নিয়েছে–সাতটা দশ। মনজুর নিজেকে একজন বুদ্ধিমান লোক মনে করে। কোনো বুদ্ধিমান লোক পৌষ মাসে ভোর সাতটা দশে লোপের ভেতর থেকে বেরুতে পারে না।
যে কড়া নাড়ছে সে যদি বুদ্ধিমান হয় তাহলে আরো কয়েকবার কড়া নেড়ে চলে যাবে। পাঁঠা শ্রেণীর হলে যাবে না। বিপুল উৎসাহে কড়া নাড়তেই থাকবে। নাডুক, ইচ্ছে হলে দরজা ভেঙে ফেলুক। হু কেয়ারস? এখন লেপের ভেতর থেকে বের হওয়া যাবে না।
মনজুর গত রাতে তিনটা পৰ্যন্ত জেগে ছিল। ঘুমাতে গেছে তিনটা কুড়িতে। ঘুম ভালো হয় নি, কারণ ঘুমাতে গেছে ক্ষিধে নিয়ে। রাত জািগলেক্ষিধে পায়। শরীরের জন্যে বাড়তি কার্বোহাইড্রেটের প্রয়োজন হয়। সেই ব্যবস্থা ঘরে থাকে–দু তিন রকমের জেলী এবং পাউরুটি। কাল রাতে জেলী ছিল–পাউরুটি ছিল না। বিস্কিটের টিনে কিছু বিস্কিটের ওঁড়া পাওয়া গেল। এক চামচ মুখে দিয়ে মনে হলো সাবানের গুড়া খাচ্ছে। নাড়িভূঁড়ি উল্টে আসার জোগাড়। কতদিনকার বাসি কে জানে। পানি এবং চিনির কোটার শেষ দু চামচ চিনি খেয়ে পেট ভরিয়ে ঘুমাতে গেছে, চোখ প্ৰায় ধরে এসেছে এমন সময় বাথরুম পেয়ে গেল। ভারপেট পানি খেয়ে ঘুমাতে যাবার এই হলো সমস্যা। বাথরুম পাচ্ছে তবে সেই তাগিদ জোরালো নয়, উঠে যেতে ইচ্ছা করছে না। শীতের রাতে লেপের ভেতর একবার ঢুকে পড়লে বেরুতে ইচ্ছা করে না।
এখনো খটখট শব্দ, হচ্ছে।
গাধা নাকি? গাধা তো বটেই–অতি নিম্নমানের গাধা। গাধা সমাজের কলঙ্ক। মনজুর লেপের ভেতর থেকে মুখ বের করে উঁচু গলায় বলল, ‘ইউ স্টুপিড অ্যাস। ইউ হ্যাভ নো বিজনেস হিয়ার।’ এটি মনজুরের অতি প্রিয় গালি। সে শিখেছে বিন্দুবাসিনী স্কুলের হেড স্যারের কাছে। ক্লাস চলাকালীন সময়ে মনজুর কী কারণে জানি হেড স্যারের ঘরে ঢুকেছিল। তাকে দেখে স্যার হুঙ্কার দিলেন, ‘ইউ স্টুপিড অ্যাস, ইউ হ্যাভ নো বিজনেস হিয়ার।’ ইংরেজি গালি বাচ্চা ছেলে বুঝতে পারবে কিনা তার হয়তো সন্দেহ হলো। তিনি তৎক্ষণাৎ বাংলা তরজমাও করে দিলেন, ‘ওহে বোকা গাধা, এখানে তোমার কোনো কর্ম নাই।’
মনজুর হেড স্যারের ইংরেজি গালি সাধারণত মনে মনে দেয়। তবে এখন উঁচু গলায় দেয়া যেতে পারে। শোবার ঘর থেকে যাই বলা হােক, বাইরে থেকে কিছু শোনা যায় না। সে হয়তো তার স্যারের মতো গালির বাংলা তরজমাও করত। কিন্তু সে বুঝতে পারছে তাকে বিছানা ছাড়তেই হবে, তলপেটে চাপ পড়ছে, বাথরুমে না গেলেই নয়। কাল রাতে বাথরুম পেয়েছিল, সে বাথরুমে না গিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিল। যে দু গ্লাস পানি ঘুমাবার আগে খেয়েছিল তার পুরোটাই এখন একটি কিডনিতে জমা হয়েছে। সাধারণ নিয়মে দুটি কিডনিতে জমা হবার কথা–সে সাধারণ নিয়মের বাইরে–তাঁর একটি মাত্র কিডনি। ডান দিকের কিডনি সাত বছর আগে কেটে বাদ দেয়া হয়েছে। বাঁ দিকেরটাও সম্ভবত যাই-যাই করছে। মাঝে মাঝে তীব্র ব্যথা হয়। চোখে অন্ধকার দেখার মতো ব্যথা। মিলিটারি ডাক্তার ব্রিগেডিয়ার এস মালেক গত মাসে হাসি হাসি মুখে বললেন, outlook not so good. মিলিটারি ডাক্তাররা বোধহয় সাধারণ ডাক্তারদের চেয়ে বোকা হয়। বোকা না হলে এই জাতীয় কথা হাসিমুখে বলে কী করে?
একজন হাসিমুখে কিছু বললে অন্যজনকেও হাসিমুখে জবাব দিতে হয়। মনজুর হাসি মুখে বললেন, Outlook not so good বলতে কী মিন করছেন?
ডাক্তার সাহেবের হাসি আরো বিস্তৃত হলো। তিনি বললেন, কিডনি যেটা আছে মনে হচ্ছে সেটাও ফেলে দিতে হবে। সিমটম্স্ ভালো না।
মনজুরের বুক শুকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পানির তৃষ্ণা পেয়ে গেল। তবু মুখে হাসি ধরে রাখল। হাসাহাসি দিয়ে যে বাক্যবিন্যাস শুরু হয়েছে তাকে বন্ধ করার কোনো মানে হয় না!
যেটা আছে সেটাও ফেলে দিতে হবে? বলেন কী? হা–হা–হা-হা।
মিলিটারি ডাক্তার এই পর্যায়ে হকচাকিয়ে গেলেন। সরু গলায় বললেন, হাসছেন কেন? আপনার শরীর থেকে একটা প্ৰত্যঙ্গ ফেলে দিতে হচ্ছে এর মধ্যে হাসির কী Cicer What is so funny about it?
মনজুরের গা জ্বলে গেল। ব্যাটা বলে কী? আমি হাসছি তোর সঙ্গে তাল দিয়ে আর & Gift What is so funny about it?
এখনো কড়া নড়ছে।
খুব কম হলেও ঝাড়া কুড়ি মিনিট ধরে ধাক্কাধাব্ধি চলছে। দুটি সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে-এক, ভিখিরি, যে ঠিক করেছে ভিক্ষার বউনি এই বাড়ি থেকে শুরু করবে। কিছু না নিয়ে যাবেই না। দুই. তাঁর শ্বশুরবাড়ির কেউ। মীরা হয়তো তার কোনো খালাতো, চাচাতো কিংবা মামাতো ভাইকে পাঠিয়েছে। বলে দিয়েছে–‘দেখা না করে আসবি না।’ কাজ হচ্ছে সেইভাবেই। গাধাটা খুঁটি গেড়ে বসে গেছে। মনজুর বিছানা থেকে নামতে নামতে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে ভাবল–এটা কেমন করে সম্ভব যে আমার শ্বশুরবাড়ির প্রতিটি লোক গাধা ধরনের? শুধু যে স্বভাবের গাধা তাই না, চেহারাতেও গাধা। জহির নামে মীরার এক খালাতো ভাই আছে যার কান দুটি অস্বাভাবিক লম্বা। মুখও লম্বাটে। ঐ ব্যাটাই এসেছে নাকি?
কে?
জ্বি আমি।
আমিটা কে?
স্যার আমি কুদ্দুস।
কুদ্দুস মনজুরের অফিসের পিওন। সাত সকালে সে এখানে কেন? মনজুর কি তাকে আসতে বলেছিল? মনে পড়ল না। আজকাল কিছুই মনে থাকে না। কিডনির সঙ্গে কি স্মৃতিশক্তির কোনাে সম্পর্ক আছে? মনজুর দরজা খুলল।
ব্যাপার কী কুদ্দুস?
স্যার আমার ছােট বােনটা গত রাত্রে মারা গেছে।
মনজুর তাকিয়ে রইল।
ভোরবেলা কেউ মৃত্যুসংবাদ নিয়ে এলে তাকে কী বলতে হয়? সান্ত্বনার কথাগুলো কী? বলার নিয়মটাই বা কী? মনজুর খুবই অস্বস্তি বোধ করতে লাগল।
কুদ্দুস ভিতরে আস। ভেরি স্যাড নিউজ। ইয়ে কী যেন বলে … কাঁটার সময় মারা গেছে?
রাত আড়াইটার সময় স্যার।
মনজুরের নিজের উপরই রাগ লাগছে। কাঁটার সময় মারা গেছে সেই খবরে তার দরকার কী? আড়াইটার সময় সে কী করছিল? বিস্কিটের গুড়া খাচ্ছিল বলে মনে হয়।
কুদ্দুস মাথা নিচু করে বলল, কিছু টাকা দরকার ছিল স্যার। হাত একেবারে খালি।
মনজুর স্বস্তি বোধ করল। সান্ত্বনা দেবার চেয়ে টাকা দেয়া অনেক সহজ। সান্ত্বনা দেয়ার অসংখ্য পথ আছে, টাকা দেয়ার একটাই পথ। মানিব্যাগ বের করে হাতে দিয়ে G
কত টাকা দরকার?
স্যার আমি তো জানি না। লাশের খরচপাতি আছে। দেশে নিয়া গোর দেয়ার ইচ্ছা! ছিল; সেটা পারব না। সবই স্যার কপাল।
হাজার খানিক দিলে হয়?
দেন স্যার।
আস, ভিতরে এসে বস। নাম কী ছিল তোমার বোনের?
সাবিহা।
ও আচ্ছা, সাবিহা।
মনজুর আবার নিজের উপর বিরক্ত হলো। নাম কী’ প্রশ্নটা সে শুধু শুধু কেন করল? নাম দিয়ে তার দরকার কী? মূল কথা হচ্ছে বেচারি মারা গেছে। তার নাম সাবিহা হলেও যা ময়ূরাক্ষী হলেও তা। অবিশ্যি ময়ূরাক্ষী নাম হলে এক পলকের জন্য হলেও মনে হত-‘আহা, এত সুন্দর নামের একটা মেয়ে মারা গেল!’
তুমি এই চেয়ারটায় বস কুদ্দুস। জীবন-মৃত্যু হচ্ছে তোমার কী যেন বলে … উইল অব গড, মানে ইয়ে … দেখি টাকাটা নিয়ে আসি।
মানিব্যাগে আছে মাত্র একশ আশি টাকা। টেবিলের ডান দিকের ড্রয়ারে আছে নবাবুই টাকা–এতো দেখি বিরাট বেকায়দা হয়ে গেল। বাড়িওয়ালার কাছে চাইলে কি পাওয়া যাবে? সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। তাকে এই মাসের ভাড়াই দেওয়া হয় নি। মাসের পাঁচ তারিখের মধ্যে ভাড়া দেওয়ার কথা, আজ বার তারিখ।
কুদ্দুস।
জ্বি স্যার।
মানে একটা সমস্যা হয়ে গেল। ঘরে এত টাকা নেই। এখানে অল্প কিছু আছে। সরি, আমি ভেবেছিলাম… কুদ্দুস তুমি চা-টা কিছু খেয়েছ?
জ্বি না। স্যার।
বস, চা খেয়ে যাও। শুধু চা— একা থাকি। ঘরে নাশতার কোনাে ব্যবস্থা নেই। রেস্টুরেন্টে নাশতা খাই। বরং তুমি এক কাজ করা–চল আমার সঙ্গে চা-নাশতা খাও।
লাগবে না স্যার। আমি যাই।
মনটাকে প্রফুল্ল রাখার চেষ্টা কর। জীবন-মৃত্যুর উপর আমাদের কোনাে ইয়ে নেই। মানে গডস উইল।
আমি স্যার যাই। দেরি হয়ে গেছে।
আচ্ছা যাও।
কুদ্দুস চলে যাবার পর মনজুর চায়ের পানি চড়াল। পানি না চড়ালেও হত। চিনি শেষ হয়ে গেছে, চিনির কোটায় যা অবশিষ্ট ছিল তা কাল রাতে সে খেয়ে নিয়েছে। আর কোনো কোটায় চিনি আছে কি? সেদিন খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ একটা কোটা বের হলো, যার গায়ে লেখা ‘ইমার্জেন্সি চা পাতা’। মীরার কাণ্ড–সে চায়ের কোটার বাইরেও একটা ইমার্জেন্সি কোটা রেখেছে। এই কেটায় সে নিশ্চয় কখনো হাত দেয় না। সেরকম ইমার্জেন্সি চিনি লেখা কোনো কোটা কি আছে? চিনির কোটা পাওয়া গেল না, তবে একটা কোটা পাওয়া গেল। যার গায়ে লেখা–‘সমুদ্র। কোটার গায়ে ‘সমুদ্র’ লেখার মানে কী? মনজুর রাতে ক্ষিধে নিয়ে ঘুমিয়েছিল। সেই ক্ষিধে জানান দিচ্ছে। আরেক চামচ বিস্কিটের গুড়া কি খেয়ে নেবে? কুদ্দুসকে টাকা দিতে না পারার অস্বস্তি কিছুতেই যাচ্ছে না। কিছু সান্ত্বনার কথা তো তাকে অবশ্যই বলা উচিত ছিল। এইসব পরিস্থিতিতে কী বলতে হয় বা বলতে হয় না। তার উপর বই-টই থাকা উচিত ছিল। বিদেশে নিশ্চয়ই আছে–
“মৃত্যুশোকে কাতর মানুষকে সান্ত্বনা দেবার একশটি উপায়”
আধুনিক মানুষদের জন্যে এ জাতীয় বই খুবই প্রয়োজন। অপ্রয়োজনীয় বই-এ বাজার ভর্তি, প্রয়োজনীয় বই খুঁজলে পাওয়া যায় না। কথা বলার আর্টের উপরও একটা বই থাকা দরকার। কেউ কেউ এত সুন্দর করে কথা বলে, কেউ কথাই বলতে পারে না। যখন মজার কোনো গল্প বলে তখন ইচ্ছা করে একটা চড় বসিয়ে দিতে।
বর্তমানে সময়টা হলো কথা-নির্ভর। অথচ সেই কথাই লোকজন গুছিয়ে বলতে পারছে না। কথা বলার উপর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে একটা কোর্স থাকলে ভালো হত। ইনস্ট্রাকটারদের কোনো ডিগ্রি থাকতে হবে না, তবে কথা বলার ব্যাপারে তাদের হতে হবে এক একজন এক্সপার্ট। যেমন মীরা। মনজুরের ধারণা, মীরার মতো গুছিয়ে এবং সুন্দর করে কোনো মেয়ে কথা বলতে পারে না। প্রথম দিনে খানিকক্ষণ কথা বলার পর মীরা বলল, আপনার নামের প্রথম অক্ষর এবং শেষ অক্ষর দিয়ে আমার নাম–এটা কি আপনি লক্ষ করেছেন? মনজুর বিস্মিত হয়ে বলল, এখন লক্ষ করলাম। আগে করি নি।
মীরা হাসতে হাসতে বলল, নামের এই মিল কী প্ৰকাশ করে বলতে পারেন?
জ্বি না।
চিন্তা করে দেখুন তো বের করতে পারেন। কিনা। যদি বের করতে পারেন। তাহলে টেলিফোন করে জানাবেন। যদি বের করতে না পারেন তা হলে টেলিফোন করবেন না।
মনজুর তৃতীয় দিনে টেলিফোন করল। সে কে, তার কী নাম কিছুই বলতে হলো না। হ্যালো বলতেই মীরা বলল, ও আপনি? রহস্য উদ্ধার করে ফেলেছেন?? জানতাম আপনি পারবেন।
মনজুর কাঁচুমাচু গলায় বলল, জ্বি না, পারি নি।
পারেন নি তাহলে টেলিফোন করলেন যে?
আপনার কাছ থেকে জানার জন্যে। আচ্ছা, আপনাকে আরো সাতদিন সময় দিচ্ছি। সাতদিন পরেও যদি না পারেন তাহলে বলে দেব। রাখি, কেমন?
মনজুর অনেক কিছু ভাবল–নামের মিল কী বুঝাচ্ছে? চার অক্ষরের দুটি মিলে যাচ্ছে। প্রথমটি এবং শেষটি। তাতে কী হয়? আদৌ কি কিছু হয়?
সাতদিন পর মীরার সঙ্গে আবার কথা হলো। সে হাসতে হাসতে বলল, এখনো পারেন নি? এত সহজ আর আপনি পারছেন না।
আমার বুদ্ধিশুদ্ধি নিম্ন পর্যায়ের। আমার মেজ মামার ধারণা আমি গাধা-মানব।
তাই তো দেখছি।
মিলটা কী দয়া করে যদি বলেন…
মীরা হাসতে হাসতে বলল, ঠিক করে বলুন তো আপনার আগ্ৰহ কি মিল জানার জন্যে না আমার সঙ্গে কথা বলার জন্যে?
মনজুর গুছিয়ে কথা বলতে পারলেও তৎক্ষণাৎ তার মাথায় হঠাৎ করে কোনো জবাব এল না।
মীরা বলল, হ্যালো, কথা বলছেন না কেন? আপনি অ্যামবারাসড় বোধ করছেন?
জ্বি না।
মনে হচ্ছে আপনি অ্যামবারাসড়। সরি, আমি কাউকে অস্বস্তিতে ফেলতে চাই না। রাখি, কেমন? পরে আপনার সঙ্গে কথা হবে।
মনজুর দুধ চিনিবিহীন চা নিয়ে বিছানায় বসল। আশ্চৰ্য, টেলিফোনে কুঁ-কুঁ-পিঁড়িং জাতীয় শব্দ হচ্ছে! ব্যাপারটা কী? মনজুর অবাক হয়ে তাকাল। গত দুমাস ধরে টেলিফোন ডেড। বিলের টাকা জমা না দেয়ায় লাইন সম্ভবত কেটে দিয়েছে। টেলিফোন অফিসে একবার যাওয়া দরকার। যেতে ইচ্ছা করছে না। টেলিফোন ছাড়া তার খুব যে অসুবিধা হচ্ছে তাও না। বরং এক রকম আরামই অনুভব করছে।
টেলিফোনে আবার কুঁ-কুঁ শব্দ। আপনা। আপনি ঠিক হয়ে গেল নাকি! এ দেশে সবই সম্ভব। যে নিয়মিত বিল দিয়ে যায়। তার লাইন কাটা যায়। আর তার মতো ডিফল্টারদের কাটা লাইন আপনা। আপনি মেরামত হয়ে যায়।
মনজুর রিসিভার তুলে কোমল গলায় বলল, হ্যালো। হ্যালো।
ওপাশ থেকে আট ন বছর বয়সী বালকের গলা শোনা গোল
হ্যালো বড় চাচু?
আমি বড় চাচু না খোকা–তুমি কেমন আছ?
আমি ভালো, আপনি কে?
আমার নাম মনজুর।
মনজুর চাচু?
তাও বলতে পাের। তুমি স্কুলে যাও নি?
উঁহু।
কেন বল তো?
আমার জ্বর।
বল কী, একটু আগে তো বললে–তুমি ভালো!
ছেলেটা হকচাকিয়ে গেল। ভুল ধরিয়ে দিলে ছোটরা অসম্ভব লজ্জা পায়।
নাম কী তোমার খোকা?
ইমরুল।
ইমরুল? সর্বনাশ, তুমি যখন একটু বড় হবে সবাই তোমাকে কী বলে ক্ষ্যাপাবে জান? সবাই বলবে–ভিমরুল।
ভিমরুল কী?
ভিমরুল কী বলার আগেই টেলিফোন ঠাণ্ডা হয়ে গেল। একেবারেই ঠাণ্ডা। শোঁ-শোঁ–পি-পি কোনো আওয়াজ নেই। টেলিফোনটা ঠিক থাকলে মীরাকে টেলিফোন করে জিজ্ঞেস করা যেত।—কোঁটার গায়ে ‘সমুদ্র’ লেখা কেন? উত্তরে মীরা তার স্বভাব মতো বলতো–তুমি আন্দাজ কর তো কেন?
আমি পারছি না।
তবু চেষ্টা করা। তোমাকে সাতদিন সময় দিলাম।
আধুনিক জগতের সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে আছে–রেডিও, টেলিভিশন, টেলিফোন … অষ্টম আশ্চর্য (মনজুরের মতে) তার সঙ্গে মীরার বিয়ে। যাকে বলে হুলস্থূল বিবাহ। মীরার বাবা, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার মনসুর উদ্দিন এক হাজার লোককে দাওয়াত করেছিলেন। দাওয়াতি লোকজনদের মধ্যে তিনজন ছিলেন মন্ত্রী। ফ্ল্যাগ দেয়া গাড়ি করে এসেছিলেন। তারা কিছুই খেলেন না। তাদের মধ্যে মাত্র একজন মনজুরের সঙ্গে হ্যাঁন্ডশেক করে বললেন, হ্যালো ইয়াং ম্যান। বেষ্ট অব ইওর লাক।
বাসর হলো মীরার বড় ভাইয়ের বাসায়। বিছানার উপর বেলি ফুলের যে চাদর বিছানো তার দামই নাকি দুহাজার টাকা।
মীরা বাসর রাতে প্রথম যে কথাটি বলল, তা হচ্ছে–এই বিছানার বিশেষত্ব কী বল তো?
মনজুর কিছু বলতে পারল না।
কী–বলতে পারলে না? এটা হচ্ছে ওয়াটার বেড। বাংলায় জল-তোশক বলতে পার। এখানে ঘুমালে মনে হবে পানির মধ্যে ঘুমিয়ে আছে।
বল কী!
ভাইয়া আমেরিকা থেকে আনিয়েছে। সে খুবই শৌখিন। বেচারা নিজে অবশ্যি এই বিছানায় ঘুমাতে পারে না। ওর পিঠে ব্যথা। ডাক্তার নরম বিছানায় শোয়া নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন।
তাই নাকি?
হ্যাঁ। বেচারা ঘুমায় মেঝেতে পাটি পেতে। বাধ্য হয়ে ভাবিকেও তাই করতে হয়। একে বলে পোয়েটিক জাসটিস। আচ্ছা, তুমি এমন মুখ ভোঁতা করে বসে আছ কেন? কথা বল।
কী কথা বলব?
কী কথা বলবে সেটাও আমাকে বলে দিতে হবে? ইন্টারেটিং কোনো কথা বল। বুঝড়ের কথা বাকি জীবনে অসংখ্যবার মনে করা হবে–কাজেই কথাগুলি খুব সুন্দর হওয়া উচিত।
মনজুর খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, তোমাদের বাথরুমটা কোন দিকে?
মীরা হেসে ফেলে বলল, তোমার প্রথম কথা আমার কাছে যথেষ্ট ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে। দ্বিতীয় কথাটা কী?
ফুলের গন্ধে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। ফুলগুলোকে অন্য কোথাও রাখা যায় না?
না। আর কিছু বলবে?
ইন্টারেস্টিং আর কিছু তো মনে আসছে না। তুমি বল, আমি শুনি। বলতে বলতে মনজুর হাই তুলল।
মীরা বলল, তোমার ঘুম পাচ্ছে নাকি?
হ্যাঁ। গত দুই রাত এক ফোঁটা ঘুম হয় নি। আমার ছোট্ট বাসা আত্মীয়স্বজনে গিজগিজ করছে–শোব কী, দাঁড়ানোর জায়গা পর্যন্ত নেই।
খুব বেশি ঘুম গেলে ঘুমিয়ে পড়। বাসর রাতে যে বকবক করতেই হবে এমন কথা নেই।
মশারি ফেলবে না?
দরজা-জানালায় নেট লাগানাে–মশা আসবে না, তাছাড়া ঘরে ফুল থাকলে মশা আসে না। ফুলের গন্ধ মশারা সহ্য করতে পারে না।
তাই নাকি? জানতাম না তো!
ঘুম পেলে শুয়ে পড়।
মনজুর শুয়ে পড়ল। এক ঘুমে রাত কাবার। মনজুরের ধারণা, সবচে’ আরামের ঘুম সে ঘুমিয়েছে বাসর রাতে।
কাফে লবঙ্গ চা খেতে খেতে মনজুর আজ সারাদিনে কী কী করবে। ঠিক করে ফেলল। তার ভিজিটিং কার্ডের উল্টো পিঠে এক দুই করে লিখল,
(১) অফিস, সকাল দশটা।
(২) বড়মামার সঙ্গে কথাবার্তা এবং তার অফিসে দুপুরের খাওয়া।
(৩) খালাকে চিঠি লেখা এবং নিজ হাতে পোস্ট করা।
(৪) ইদরিসের সঙ্গে ঝগড়া।[ সন্ধ্যায়, তাকে তার বাসায় ধরতে হবে।]
(৫) মীরার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলা। [রাত দশটার পর।]
এই জাতীয় একটা লিস্ট মনজুর প্রতিদিন ভোরেই করে। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছেলিষ্ট অনুযায়ী কোনো কাজই শেষ পর্যন্ত করা হয় না। তবু লিস্টটা করলে মনে এক ধরনের শান্তি পাওয়া যায়।
লিষ্টের পাঁচ নম্বরে মীরার সঙ্গে কথা বলা। রাত দশটার পরে তাকে সব সময় পাওয়া যায় না। এগারটার পর হলে মোটামুটি নিশ্চিত যে পাওয়া যাবে। শীতের রাতে এগারটার পর টেলিফোন জোগাড় করাই এক সমস্যা। সব দোকানপাট বন্ধ। বাড়িওয়ালার বাসা থেকে করা যায়। তবে তার জন্যে বাড়ির ভাড়া ক্লিয়ার করা দরকার। আজ রাতে বাড়িভাড়া নিয়ে যদি যাওয়া যায় তাহলে উঠে আসার সময় হঠাৎ মনে পড়েছে এমন ভঙ্গিতে বলা যেতে পারে, ভাই সাহেব! টেলিফোনটা ঠিক আছে?
উনার টেলিফোন অবশ্যি বেশিরভাগ সময়ই খারাপ থাকে। নিজেই খারাপ করে রাখে। কিনা কে জানে!
তারচে’ এখন চলে গেলে কেমন হয়? মীরাকে ভোরবেলার দিকে সব সময় পাওয়া যায়। মনজুর ভিজিটিং কার্ড বের করে পাঁচ নম্বর আইটেমে টিক চিহ্ন দিল।
মীরা সহজ স্বরে বলল, তুমি এত ভোরে!
মনজুর বলল, ভোর কোথায়। আটটা চল্লিশ বাজে।
কোনো কাজে এসেছ?
ভাবলাম সেপারেশনের টার্মস এন্ড কন্ডিশনসগুলো নিয়ে তোমার সঙ্গে আলাপ করি। মীরা তীক্ষ্ণ গলায় বলল, টার্মস এন্ড কন্ডিশনস মানে? ঠাট্টা করছি নাকি? তোমার রূঢ় আমি কি কিছু চাচ্ছি? তােমার এমন কােনাে রাজত্ব নেই অর্ধেক আমাকে দিয়ে
তা ঠিক, তবু আইনের কিছু ব্যাপারস্যাপার আছে।
তার জন্যে তো গত মাসের সাতাশ তারিখে ভাইয়া সুপ্রিম কোর্টের লইয়ার এম. জামানকে ঘরে বসিয়ে রেখেছিলেন। তোমার আসার কথা ছিল, তুমি আস নি।
সেটা আমি এক্সপ্লেইন করেছি। হঠাৎ জরুরি কাজ পড়ে গেল।
কী তোমার অফিস আর কী তার জরুরি কাজ! একটা কথা পরিষ্কার করে বল তো–সেপারেশনে তোমার কি ইচ্ছা নেই?
আরে কী বলে! ইচ্ছা থাকবে না কেন? দুজন মিলেই তো ঠিক করলাম। চা খাওয়াতে পার?
মীরা চা আনতে উঠে গেল। তাকে আজ অপূর্ব দেখাচ্ছে। বিয়ের সময় এতটা সুন্দর ছিল না। আলাদা হবার পর থেকে সুন্দর হতে শুরু করেছে। খানিকটা রোগও হয়েছে। রোগার জন্যেই লম্বা লম্বা লাগছে নাকি? চেহারায় চাপা আনন্দের আভা। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে মীরা এখন সুখে আছে। সমস্ত চেহারায় মায়াবতী মায়াবতী ভাব। নীল শাড়ির জন্যেও হতে পারে। ধবধবে সাদা ব্লাউজের সঙ্গে নীল শাড়ি পরলে মেয়েদের মধ্যে একটা আকাশ আকাশ ভােব চলে আসে। শাড়িটা আকাশ, ব্লাউজ হলো পূর্ণিমার চাঁদ। উপমা নিখুঁত হলো না। রাতের আকাশ নীল হয় না। হয় ঘন কৃষ্ণবর্ণ।
নাও, চা নাও। চায়ের সঙ্গে আর কিছু দেব?
না।
নাশতা খেয়ে এসেছ?
হুঁ।
কোথায় খেলে? তোমার সেই কাফে লবঙ্গ?
হুঁ।
এক অক্ষরে জবাব দিচ্ছি কেন? আমরা আলাদা থাকাছি বলে কথা বলা যাবে না। তা তো না। কী কথা ছিল? সেপারেশনের পরে আমাদের যদি পথেঘাটে দেখা হয় তাহলে আমরা সিভিলাইজড় মানুষের মতো বিহেভ করব।
তা অবশ্যই করব।
এক ধরনের সাধারণ বন্ধুত্ব আমাদের মধ্যে থাকবে। তুমি চা খােচ্ছ না কেন? চিনি বেশি হয়েছে?
না। চিনি ঠিক আছে।
তোমাকে অসুস্থ অসুস্থ লাগছে। তোমার শরীরে অসুখ অসুখ গন্ধ।
মনজুর কিছু না বলে পকেট থেকে সিগারেট বের করল। সিগারেটের কড়া ধোঁয়ায় অসুখ অসুখ গন্ধটা যদি তাড়ানো যায়। মীরার ঘাণশক্তি কুকুরের চেয়েও প্রবল। যখন অসুখ অসুখ গন্ধ বলছে তখন বুঝতে হবে ঠিকই বলছে।
কথার জবাব দিচ্ছে না কেন? অসুখ নাকি?
আরে না। বিনা পেস্টে দাঁত মেজেছি–গন্ধ যা পাচ্ছি। আমার মনে হয় মুখ থেকে পাচ্ছ।
মুখের গন্ধ আমি চিনি। তোমার গা থেকে জুর জ্বর গন্ধ আসছে। সিগারেটও মনে হয় প্রচুর খাচ্ছ।
হেভি টেনশনে থাকি। সিগারেটের ধোয়ার উপর দিয়ে টেনশানটা পার করার চেষ্টা করি।
কীসের এত টেনশান?
আছে অনেক। আচ্ছা তোমাকে একটা জরুরি কথা জিজ্ঞেস করি, ধর একজন লোকের খুব নিকট কোনো আত্মীয় মারা গেছে। তাকে সান্তনা দিতে হবে। কী বলে সান্ত্বনা দিবে?
কে মারা গেছে?
কে মারা গেছে সেটা জরুরি না। কী কথা বললে সে সান্ত্বনা পাবে সেটা বল।
কোনাে কথাতেই সে সান্ত্বনা পাবে না। তুমি যদি তার গায়ে হাত দিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাক তাহলে খানিকটা সাত্ত্বিনা পেতে পারে।
মনজুর উঠে দাঁড়াল। মীরা সঙ্গে সঙ্গে উঠল না। বসে রইল; মনজুর বলল, আজ উঠি।
মীরা বলল, তুমি না। টার্মস এন্ড কন্ডিশনস নিয়ে আলাপ করতে এসেছিলে? এখন চলে যােচ্ছ যে?
আরেকদিন আলাপ করব। অফিসের সময় হয়ে গেল।
এ মাসের কুড়ি তারিখে কি তুমি আসতে পারবে? কুড়ি তারিখ বুধবার। সন্ধ্যা সাতটার পর। পারবে আসতে?
পারব।
তাহলে ঐ দিন জামান সাহেবকে আসতে বলব।
জামান সাহেবটা কে?
এর মধ্যে ভুলে গেলে? লইয়ার।
ও আচ্ছা আচ্ছা, অবশ্যই আসব। অফিসে গিয়েই ডায়েরিতে লিখে রাখব। এবার আর ভুল হবে না। তবে সেইফ গাইড থাকার জন্যে তুমি বুধবার সকালেই একটা টেলিফোন করে দিও। পারবে না? টেলিফোন নাম্বারা আছে না?
আছে।
মনজুর বসার ঘর থেকে বেরুবার সময় দরজার চৌকাঠে একটা ধাক্কা খেল। এটা খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার–এ বাড়ির বসার ঘর থেকে বেরুবার সময় প্রতিবার চৌকাঠে ধাক্কা খায়। এর কারণটা কী কে জানে? এই ঘর তাকে পছন্দ করে না–নাকি দরজা তাকে পছন্দ করে না?
এই জগতে জড় বস্তুর কি পছন্দ-অপছন্দ আছে?
রাস্তায় নেমে মনজুরের মনে হলো, আসল জিনিসটাই মীরাকে জিজ্ঞেস করা হয় নি। কৌটার গায়ে ‘সমুদ্র’ লেখা কেন? আবার কি ফিরে যাবে? না-থাক।
দিলকুশা এলাকায় মনজুরের অফিস। এগার তলার ছটি কামরা। ফ্লোর স্পেস আট হাজার স্কয়ার ফিট। অফিসের নাম থ্রি-পি কনস্ট্রাকশনস। কোম্পানির মালিক নুরুল আফসার মনজুরের স্কুলজীবনের বন্ধু। স্কুলে নুরুল আফসারের নাম ছিল–মিডা কাচামরিচ। ছেলেবেলাতেই লক্ষ করা গেছে। নুরুল আফসার চট করে রেগে যায়, তবে রেগে গেলেও অতি মিষ্টি ব্যবহার করে। মিডা কাচামরিচ নামকরণের এই হলো রহস্য।
ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর মনজুর ভর্তি হলো জগন্নাথ কলেজে। নুরুল আফসার চলে গেল। আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ক্রিয়েটিভ লিটারেচর পড়তে। সায়েন্স পড়তে তার নাকি আর ভালো লাগছে না। ক্রিয়েটিভ লিটারেচারের ক্লাসগুলি তার খুবই পছন্দ হলো। প্রথম সেমিস্টারে খুব খেটে খুটে সে একটা অ্যাসাইনমেন্টও জমা দিল। মুম্বইটা হচ্ছে ভিন্ন হাজার শব্দে সেই জোসেফ সেমিটিয়ারির একটি বর্ণনা দিত হবে।
অ্যাসাইনমেন্ট দেয়ার দিন পাঁচেক পর কোর্স কো-অর্ডিনেটর প্রফেসর ক্লার্ক ব্লেইস তাকে অফিসে ডেকে নিয়ে বললেন, তোমার রচনা খুব আগ্রহ নিয়ে পড়লাম। It is interesting.
তোমার পছন্দ হয়েছে?
ইন এ ওয়ে হয়েছে। তুমি নিখুঁত বৰ্ণনা দিয়েছ। মোট কাটি কবর আছে লিখেছি। কে কবে মারা গেছে তার উপর ভিত্তি করে শ্রেণীবিন্যাস করেছ। কবরখানা দৈর্ঘ্যে-প্রন্থে কত তা দিয়েছ–যাকে বলা যায় পারফেক্ট ফটোগ্রাফিক ডেসক্রিপশন।
থ্যাংক ইউ।
কিন্তু সমস্যা কি জান–এই রচনা প্রমাণ করেছে তোমার কোনো ক্রিয়েটিভিটি নেই। আমি তোমাকে উপদেশ দেব। অন্য কিছু পড়তে। যেমন ধর ইনজিনিয়ারিং।
তোমার ধারণা ইনজিনিয়ারদের ক্রিয়েটিভিটি প্রয়োজন নেই?
অবশ্যই আছে। তাদের যতটুকু ক্রিয়েটিভিটি প্রয়োজন তোমার তা আছে।
নুরুল আফসার ছবছর আমেরিকায় কাটিয়ে সিভিল ইনজিনিয়ারিং-এ ডিগ্রি, আমেরিকান স্ত্রী পলিন এবং দুই যমজ কন্যা পেত্রিসিয়া ও পেরিনিয়াকে নিয়ে দেশে ফিরল। চাকরির চেষ্টা করল বেশ কিছুদিন–লাভ হলো না। শেষ চেষ্টা হিসেবে খুলল কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। স্ত্রী এবং দুই কন্যার আদ্যক্ষর নিয়ে কোম্পানির নাম হলো Three P.
মনজুর জন্মলগ্ন থেকেই এই কোম্পানির সঙ্গে আছে। নুরুল আফসার শুরুতে বলেছিল, বেতন দিতে পারব না–পেটেভাতে থাকবি, রাজি থাকলে আয়। যদি কোম্পানি দাঁড়িয়ে যায় তুই তোর শেয়ার পাবি। আমি তোকে ঠকাব না। বিশ্বাস কর ঠকাব না।
কোম্পানি বড় হয়েছে। ফুলে-ফোঁপে একাকার। গত বছর দু কোটি টাকার ব্যবসা করেছে–এ বছর আরো করবে। অফিস শুরু হয়েছিল তিনজনকে নিয়ে, আজ সেখানে একশ এগারজন কর্মচারী। মনজুরের হাতে নির্দিষ্ট কোনো দায়িত্ব নেই। চিঠিপত্রের যোগাযোগের ব্যাপারটা সে দেখে। পি.আর.ও. বলা যেতে পারে। প্ৰতি মাসে তার একাউন্টে আট হাজার টাকা জমা হয়। তার চাকরির শর্ত কী, দায়িত্ব কী এই নিয়ে নুরুল আফসারের সঙ্গে তার কখনো কথা হয় না।
অফিসঘরের একেবারে শেষ প্রান্তে মনজুরের ঘর। কামরাটা ছোট। তবে মেঝেতে কার্পেট বিছানো। দেয়ালে পালতোলা নীেকার একটি পেইন্টিং আছে। ঘরের এক প্রান্তে ডিভানের মুতো আছে। ডিভানের পাশেই বুক শেলফে বেশ কিছু বাংলা বই যার বেশিরভাগই কবিতা। তার কোনো কাব্যগ্ৰীতি নেই। কবিতার বইগুলো মীরা কিনে দিয়েছে। ডিভানে শুয়ে শুয়ে আজকাল সে মাঝে মাঝে বইগুলোর পাতা উল্টায় এবং ক্ৰ কুঁচকে ভাবে–লোকজন কি সত্যি আগ্রহ করে কবিতা পড়ে? যদি পড়ে তাহলে কেন পড়ে?
মনজুরের ঘরে গত পনের দিন ধরে বসছে জাহানারা। জাহানারা টাইপিষ্ট হিসেবে তিন মাস আগে অ্যাপিয়েন্টমেন্ট পেয়েছে। বসার কোনো জায়গা নেই। একেক সময় একেক জায়গায় বসছে। বড় সাহেব নুরুল আফসারের পাশেই হার্ডবোর্ডের পার্টিশন দিয়ে নতুন ঘর তার জন্যে তৈরি হবার কথা। যতদিন হচ্ছে না, ততদিন জাহানারা মনজুরের ঘরে বসবে। এই ঠিক হয়েছে। ব্যবস্থাটা মনজুরের পছন্দ হয় নি। একটি অল্পবয়স্কা কুমারী মেয়ে ঘৱে থাকলে এক ধরনের অস্বস্তি লেগেই থাকে। সহজ হওয়া যায় না। ডিভানে গা এলিয়ে কবিতার বইয়ের পাতা উল্টানোও সম্ভব না। তারচেয়েও বড় কথা মেয়েটা সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারে না। মুখে কিছুই বলে না। তবে মনজুর লক্ষ করেছে সিগারেট ধরলেই জাহানারা অস্বস্তি বোধ করতে থাকে।
মনজুর ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল, কী খবর জাহানারা?
জ্বি স্যার, খবর ভালো।
মুখ এত গভীর কেন?
জাহানারা হাসল। সে এখনো দাঁড়িয়ে। বসতে না বলা পর্যন্ত সে বসবে না।
বস, দাঁড়িয়ে আছ কেন? তোমার ঘর আজ তৈরি হয়ে যাবার কথা না?
ঘর তৈরি হয়েছে স্যার।
তাহলে আর এখানে কেন, নতুন ঘরে যাও। গৃহপ্ৰবেশ হয়ে যাক।
আপনাকে বলে তারপর যাব, এই জন্যে বসে আছি।
ভেরি গুড়। বড় সাহেব কি এসেছেন নাকি?
জ্বি না। স্যার। উনি আজ আসবেন না। চিটাগাং যাবেন।
জাহানারা হ্যান্ডব্যাগ খুলে মুখবন্ধ খাম বের করল। নিচু গলায় বলল, স্যার আপনার টাকাটা। বলতে বলতে জাহানারার চোখমুখ লাল হয়ে গেল। মনজুর দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলল–মেয়েটা অতিরিক্ত রকমের লাজুক। এই ধরনের মেয়েদের কপালে দুঃখ আছে। এরা নিজেরা সমস্যা তৈরি করে এবং অন্যের তৈরি সমস্যায় জড়িয়ে পড়ে।
টাকা ফেরত দেয়ার ব্যাপারটি এত দ্রুত করার দরকার ছিল না। নিশ্চয়ই নানান ঝামেলা করে তাকে টাকা জোগাড় করতে হয়েছে। মনজুর বলল, তোমার এত ব্যস্ত হবার কিছুই নেই, তুমি আরো পরে দিও। আর পুরো টাকাটা একসঙ্গে দেবারও দরকার নেই। তুমি মাসে মাসে কিছু কিছু করে দিও।
জ্বি আচ্ছা স্যার।
আর শোন, মাঝে মাঝে আমাদের সবাইকেই টাকা পয়সা ধার করতে হয়। এত লজ্জা পাওয়ার তো এর মধ্যে কিছু নেই। আমাদের যে বড় সাহেব, তিনিও ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ধার নিয়েছেন।
জাহানারা হেসে ফেলল।
মনজুর বলল, তুমি একটা কাজ করতে পারবে?
অবশ্যই পারব। কী কাজ স্যার?
আমি এই মাসের বেতন তুলি নি। একটা চেক দিচ্ছি, ক্যাশিয়ার সাহেবকে বল ভাঙিয়ে দিতে।
জ্বি আচ্ছা স্যার।
আর বরুণ বাবুকে বল, আমাদের অফিসের একজন পিওন আছে–আব্দুল কুদ্দুস নাম, জেনারেল ফাইল দেখে তার ঠিকানা বের করতে। ও আজ সকালে কিছু টাকার জন্যে এসেছিল। দিতে পারি নি। ওর একটা বোন মারা গেছে।
জাহানারা চলে গেল।
মনজুরের টেবিলে কোনো ফাইল নেই। অর্থাৎ করার কিছুই নেই। মনজুর দুমাস ধরেই লক্ষ করছে, তার টেবিলে কোনো ফাইল আসছে না। বড় সাহেব কি তার টেবিলে ফাইল না পাঠানোর কোনো নির্দেশ দিয়েছেন? এমন না যে অফিসে কোনো কাজকর্ম নেই। বরং উল্টো। কাজকর্মের চাপ অনেক বেশি। শুধু তার টেবিলেই কিছু নেই। এটা নিয়ে বড় সাহেবের সঙ্গে কথা বলা দরকার, কিন্তু নিজ থেকে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। শরীরে এক ধরনের আলস্য এসে গেছে। আগ বাড়িয়ে কিছু করতে ইচ্ছা করে না। যা হবার হবে এরকম একটা ভাব চলে এসেছে এবং তা এসেছে খুব সম্ভব মীরার কারণে। মীরা চলে না গেলে হয়তোবা এ ধরনের আলস্য আসত না।
মনজুর মানিব্যাগ থেকে ভিজিটিং কার্ডটা বের করল। আজ দিনে করণীয় কাজের পাঁচটির মধ্যে দুটি করা হয়ে গেছে। অবশ্যি এর মধ্যে আরেকটি যুক্ত হয়েছে।—কুদ্দুসকে টাকা দেয়া। কাউকে দিয়ে টাকাটা পাঠাতে হবে; নাকি নিজেই চলে যাবে? কুদ্দুসের গায়ে হাত রেখে কিছুক্ষণ সন্তুনা দিয়ে চলে আসবে? সন্ধ্যার পর এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। আপাতত তিন নম্বর আইটেমটির ব্যবস্থা করা যাক। তিন নম্বর আইটেম হচ্ছে–খালাকে চিঠি লেখা এবং নিজ হাতে পোস্ট করা (যেহেতু আগের দুটি চিঠি পান নি)। মনজুর কাগজ-কলম নিয়ে বসল। একটা দীর্ঘ চিঠি লেখার পরিকল্পনা নিয়ে বসা। হবে অবশ্য উল্টোটা–ছোট্ট চিঠি লেখা হবে। কয়েক লাইন লেখার পরই মনে হবে–আর কিছু লেখার নেই। শ্রদ্ধেয়া খালা,
আমার সালাম জানবেন। আমি নিয়মিত আপনার চিঠি পাচ্ছি। মনে হয় আপনি আমার চিঠি পাচ্ছেন না।
আমি ভালোই আছি বলা চলে। তবে যে কিডনিটি এখনো অবশিষ্ট আছে তাতে বোধহয় কিছু সমস্যা হচ্ছে। এটা আমার মনগড়াও হতে পারে। যেহেতু একটিমাত্র কিডনি অবশিষ্ট সেহেতু কিছু হলেই মনে হয়। কিডনি বুঝি গেল। আপনি শুধু শুধু চিন্তা করবেন না। আপনার আবার অকারণ চিন্তা করার অভ্যাস।
খালুজানকে আমার সালাম দিবেন।
ইতি
আপনার মনজু
চিঠি ছোট হবে আগেই বোঝা গিয়েছিল, এতটা ছোট হবে তা বোঝা যায় নি। পুরো পাতাটা খালি খালি লাগছে। পুনশ্চ দিয়ে আরো কয়েকটা লাইন না। ঢুকালেই না। কী লেখা যায় সেটাই সমস্যা।
পুনশ্চ : ঢাকায় এবার অসম্ভব শীত পড়েছে। আপনাদের এদিকে শীত কেমন? নীতুি কেমন আছে? তার পরীক্ষা কেমন হচ্ছে?
নীতুিকে একটা আলাদা চিঠি দেয়া উচিত ছিল। বেচারা প্রতি সপ্তাহে একটা চিঠি দেয়–কখনো সেইসব চিঠির জবাব দেয়া হয় না। তাতে নীতুর উৎসাহে ভাটা পড়ে না। শিশুদের মধ্যে কিছু মজার ব্যাপার আছে। তারা প্রতিদান আশা করে কিছু করে না। কখনো না। বড়রাই সবসময় প্রতিদান চায়।
মনজুরের ঘরে টেলিফোন বাজছে। এই টেলিফোন সেটে কোনো গণ্ডগোল আছে। তীক্ষ্ণ শব্দ হয়। মাথা ধরে যায়।
হ্যালো।
মনজুর কেমন আছিস তুই?
মনজুর দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলল। বড় সাহেবেব গলা। একই সঙ্গে তার ছেলেবেলার বন্ধু এবং বস। টেলিফোনে নুরুল আফসারের গলা–ইমরুল নামের ঐ ছেলেটির গলার মতোই লাগছে। কেমন যেন অভিমান মেশা।
কী-রে কথা বলছিস না কেন? কেমন আছিস?
ভালো।
তোর বাসার টেলিফোন নষ্ট নাকি? কয়েকবার টেলিফোন করেছিলাম, ভোঁ-ভো শব্দ হয়।
টেলিফোনটা ডেড হয়ে আছে।
ঠিক করা। চারপাশে মৃত যন্ত্রপাতি নিয়ে বাস করার কোনাে মানে হয়? মানুষ মরে গেলে কিছু করা যায় না-যন্ত্রপাতি মরে গেলে তাদের বাঁচানো যায়।
এইকথা বলার জন্যেই টেলিফোন করেছিস–না আরো কিছু বলবি?
হ্যাঁ বলব। মীরা নাকি তোকে ছেড়ে চলে গেছে?
হুঁ।
ব্যাপারটা ঘটল কবে?
এই ধর দিন বিশেক।
আমি তো কিছুই জানতাম না। আজ জালাল সাহেব আমাকে বললেন–মীরার বড় ভাই। চিনতে পারছিস?
হ্যাঁ পারছি।
তাঁকে খুব খুশি দেখলাম। তাঁর সঙ্গে তোর কোনো গণ্ডগোল ছিল নাকি?
না।
এত চমৎকার একটা মেয়ে ধরে রাখতে পারলি না? তুই তো বিরাট গাধা।
মীরাও আমাকে ধরে রাখতে পারল না–তাকেও কি মহিলা গাধা বলা যায় না?
তোর সঙ্গে পরে কথা বলব। গাড়ি হর্ন দিচ্ছে।
নুরুল আফসার লাইন কেটে দিলেন।
মীরার সঙ্গে মনজুরের পরিচয় নুরুল আফসারের মাধ্যমে। মীরার বাবা মনসুরউদ্দিন, কুল অফসারের আপন ৰূপা। সে-ই মনসুরউদিনের কাছে মনজুর একটা চিঠি নিয়ে
ক্ষমতাবান মানুষরা সঙ্গে সঙ্গে সাক্ষাৎপ্রাথীকে সাক্ষাৎ দেন না। তিনি বলে পাঠালেন–অপেক্ষা করতে। সে ঘণ্টাখানিক বারান্দায় রাখা বেতের চেয়ারে বসে রইল। তারপর বিরক্ত হয়ে বাড়ির সামনের বাগানে হাঁটতে লাগল। মনসুরউদ্দিন সাহেব এই সময় বের হয়ে এলেন এবং কঠিন গলায় বললেন–এই যে ছেলে, তুমি কী মনে করে আমার ফ্লাওয়ার বেডের উপর হাঁটছ? কটা গাছ তুমি নষ্ট করেছ জান? ফ্লাওয়ার বেড কাকে বলে সেটা জান? তুমি কোথাকার মূর্খ?
মনজুর পুরোপুরি হতভম্ব হয়ে গেল। একী সমস্যা!
কথা বলছি না কেন? তুমি কোথাকার মূর্থ সেটা জানতে চাই।–Speak out loud.
মীরা হৈচৈ শুনে ঘর থেকে বের হয়ে হাসিমুখে মনজুরকে বলল, আপনি কাইন্ডলি আমার সঙ্গে আসুন তো। প্লিজ আসুন। প্লিজ।
মীরা তাকে বারান্দার এক কোণায় নিয়ে নিচু গলায় বলল, বাবার ব্যবহারে আমি খুবই দুঃখিত, খুবই লজ্জিত। বাবার মাথা পুরোপুরি ঠিক না। বাবাকে প্রথম দেখছেন বলে এ রকম মনে হচ্ছে। আপনাকে বাবা যেভাবে ধমক দিলেন ফুলের গাছগুলোকেও তিনি ঠিক সেইভাবে ধমক দেন। মাঝে মাঝে কিছু কিছু গাছকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। আশা করি বাবার মানসিকতা কিছুটা বুঝতে পারছেন। আপনি এখানে চুপ করে বসুন। আমি চা নিয়ে আসি। বাবা যদি কিছু বলেন–কোনো উত্তর দেবেন না। তবে আমার মনে হয় না। তিনি কিছু বলবেন। একবার রেগে যাবার পর ঘণ্টা দু’এক তিনি খুব ভালো থাকেন।
মীরার কথা দেখা গেল সত্যি। কিছুক্ষণ পরই মনসুর উদ্দিন বারান্দায় উঠে এলেন এবং কোমল গলায় মনজুরকে বললেন–আপনাকে তো চিনতে পারলাম না! আপনার পরিচয়? আপনাকে কি চা-নাশতা কিছু দেয়া হয়েছে?
কুদ্দুসের বাসা যাত্রাবাড়িতে।
হাফ বিল্ডিং। পাকা মেঝে, উপরে টিন। বাঁশের বেড়া দিয়ে বাড়ি ঘেরা। বেড়ার আড়াল থেকে কলাগাছের নধর পাতা উকি দিচ্ছে।
মনজুর খানিকটা বিস্ময় নিয়েই দাঁড়িয়ে আছে। এটা কুদ্দুসের বাড়ি তা ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না। বেশ শ্ৰীমন্ত চেহারা। বাড়ির ভেতর থেকে কোনো সাড়া শব্দ আসছে না। সব কেমন ঝিম মেরে আছে। তাই অবশ্যি থাকার কথা। মৃত্যুর প্রথম ধাক্কাটা কেটে গেলে সবাই বেশ দীর্ঘ সময়ের জন্যে চুপ করে যায়। আবার কান্নাকাটি শুরু হয় দিন দুএক পর।
মনজুর কড়া নাড়তেই বুড়ো মতো এক ভদ্রলোক বের হয়ে এলেন। এই প্রচণ্ড শীতেও তাঁর গায়ে পাতলা জামা। তবে গলায় মাফলার আছে। পায়ে মোজা। চোখে চশমা। শিক্ষক শিক্ষক চেহারা।
এটা কুদ্দুসের বাসা?
জ্বি।
কুদ্দুস আছে বাসায়?
না।
আমি কুদ্দুসের জন্যে কিছু টাকা নিয়ে এসেছিলাম।
আমার কাছে দিতে পারেন। আমি তার পিতা। কত টাকা?
আটশ’ টাকা। কবর দিতে মোট কত খরচ হয়েছে?
ভদ্রলোক হতভম্ব হয়ে বললেন, কীসের কবর?
মনজুর হকচাকিয়ে গেল।
সাবিহা নামের একটা মেয়ে মারা গেছে না। এই বাড়িতে?
সাবিহা আমার ছোট মেয়ের নাম। সে মারা গেছে দশ বছর আগে। আপনে কে?
আমি তেমন কেউ না। নাম বললে চিনবেন না।
টাকাটা আমার কাছে দিয়ে যান। আমি দিয়ে দিব।
কুদ্দুসকেই দিতে চাই। আমি অন্য একসময় আসব।
আমার কাছে দিতে না চাইলে অপেক্ষা করেন। কুদ্দুস। দশটার মধ্যে আসে। চা খান। চায়ের অভ্যাস আছে?
আরেক দিন এসে চা খেয়ে যাব।
মনজুর রাস্তায় নেমে এল। তাড়াতাড়ি কোনো একটা রিকশায় উঠে হুড তুলে দিতে হবে। এখন কুন্দুসের সঙ্গে দেখা না হওয়াই ভালো। জাঁকিয়ে শীত পড়েছে। অসম্ভব ঠাণ্ডা লাগছে। বুকে ঠাণ্ডা বসে না গেলে হয়।