ইম্ফলে এ সময়ে আনারসটা খুব সস্তা।
অভী দুপুরে বাড়িতে খেতে এসেছিল। খাওয়া হয়ে গিয়েছিল। খাওয়ার পর বারান্দায় বসে আনারস খাচ্ছিল, এমন সময় ফোনটা বাজলো। কুলো সিং ওর মণিপুরী বেয়ারা-কাম-কুল্-কাম লোকাল গার্জিয়ান ফোনটা ধরেই উত্তেজিত গলায় বলল, বড় মেমসাবকা ফোন।
ফোনটা ধরতেই কমিশনারের স্ত্রী বললেন, অভী বলছ?
-হ্যাঁ।
-শোন, তোমার দাদা বলছিলেন, তোমার নাকি কোহিমা ও ডিমাপুর যেতে হবে অফিসের কাজে পরশু দিন। পরশু দিন না গিয়ে তুমি আগামী কাল ভোরে বেরোতে পারবে? তোমার গাড়ির কন্ডিশান ভালো আছে তো?
–গাড়ি? আমার তো অফিসের জীপেই যাবার কথা।
–হ্যাঁ। তা তো জানি। কিন্তু একটা বিপদ হয়েছে। আমার দিদির মেয়ে বাবলি, তুমি তো দেখেছ আমাদের বাড়িতে; ওর পরের সোমবার দিল্লিতে জয়েনিং ডেট, এদিকে ইন্ডিয়ান এয়ার লাইন্স-এর পাইলটরা নাকি সব স্ট্রাইক করেছেন, এইমাত্র রেডিওতে শুনলাম। তাই তোমার দাদার সঙ্গে কথা বলে তোমাকে ফোন করছি। তুমি কি কাল বেরিয়ে ওকে পরশু কি তার পরের দিন ডিমাপুরে পৌঁছে দিতে পারবে?
অভী বলল, ডিমাপুর থেকে ট্রেনে কলকাতা যেতে তো অনেকদিন লাগবে বৌদি।
-না, না, ও পথে, চা-বাগানে নেমে যাবে। ওখানে আমার দাদা ম্যানেজার। কোম্পানির প্লেনে ওকে কলকাতা পৌঁছে দেবেন উনি। সেখান থেকে প্লেনে দিল্লি চলে যাবে ও। পারবে?
অভী ফোন ধরে কিছুক্ষণ চুপ করে রইল।
এ প্রশ্নের কোনো মানে হয় না। ও তাঁকে দাদাই বলুক, আর যাই বলুক, যিনি অফিসের বড় সাহেব, যিনি ওর কনফিডেনশিয়াল রিপোর্ট লেখেন, তার স্ত্রী যতই মিষ্টি করে জিজ্ঞেস করুন না কেন, এ প্রশ্নের একমাত্র উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ। সে ব্যক্তিগত অসুবিধা থাক আর না-ই থাক। অবশ্য ওর এখানে একার সংসারে অসুবিধা কিছুই নেই। অতএব গলায় উৎসাহ এনে ও বলল, হ্যাঁ, হা, পারবো না কেন? বেশি উৎসাহ যাতে প্রকাশ না পায় সে বিষয়েও সাবধান হল, কারণ তা না হলে উনি ভাবতে পারেন ওর বোনঝির ত্রাতা হতে ও অত্যন্ত উৎসুক।
–পারবে?
–হ্যাঁ।
–তাহলে ফোনটা একটু ধরো, তোমার দাদা কথা বলবেন।
ঘোষ সাহেব ভারী গলায় বললেন, চৌধুরী, তাহলে তুমি লাঞ্চের পর অফিসে এসে কাজকর্ম যা আছে গুছিয়ে নাও, আর টুর প্রোগ্রামটা আজই আমায় পাঠিয়ে দাও। অ্যাপ্রুভ করে দেবো। আর ইতিমধ্যে তোমার বৌদিকে বলৈছি, উনি চা বাগানে ট্রাঙ্ক কল বুক করে দিন। বাবলি অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসে জয়েন করছে, শুনেছ তো? ও বেচারির জয়েনিং দিল্লিতে। না গেলেই নয়।
অভী বলল, না না, আমার কোনোই অসুবিধা নেই। তাছাড়া যেতে তো হতোই। আমি গাড়িটাকে চেক-আপের জন্য গ্যারেজে দিয়েই অফিসে আসছি।
–আচ্ছা। বলে ঘোষ সাহেব ফোন রেখে দিলেন।