১৯. লর্ড ভল্ডেমর্টের চাকর
চিৎকার করে উঠল হারমিওন। লাফিয়ে উঠল ব্ল্যাক। যেন একটা বড় ধরনের বৈদ্যুতিক শক খেয়েছে, এমনভাবে লাফিয়ে উঠল হ্যারি।
এটা আমি হোমপিং উইলোর নিচে পেয়েছি, জামাটা একদিকে ছুঁড়ে দিয়ে বললেন স্নেইপ, জাদুর কাঠিটা লুপিনের বুকের দিকে ধরা রয়েছে। এটা খুবই প্রয়োজনীয়, পটার, তোমাকে ধন্যবাদ।
একটু হাঁপাচ্ছেন স্নেইপ, কিন্তু তার চেহারায় বিজয়ীর ভাব। তোমরা নিশ্চয়ই ভাবছ এখানে আমি কী করে এলাম? বললেন তিনি, চোখ চকচক করছে। এইমাত্র আমি তোমার অফিসে গিয়েছিলাম লুপিন। আজ রাতে পোশনটা খেতে ভুলে গিয়েছিলে, আমি এক পাত্র সঙ্গে নিয়ে এসেছি। এবং খুবই সৌভাগ্য মানে আমার জন্য সৌভাগ্য। তোমার ডেস্কের উপরে একটা ম্যাপ পড়েছিল। এক নজর ওটা দেখেই আমার আর কিছু জানার প্রয়োজন পড়ল না। এই পথ ধরেই তোমাকে ছুটতে দেখলাম, দৃষ্টির বাইরে চলে গেলে তুমি।
সেভেরাস– লুপিন বলতে শুরু করেছিলেন, ওকে থামিয়ে দিলেন স্নেইপ।
আমি কতবার হেডমাস্টারকে বলেছি যে তুমি তোমার পুরনো বন্ধু ব্ল্যাককে প্রাসাদের ভেতরে আসতে সাহায্য করছ, এবং এই যে তার প্রমাণ। আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি যে এই পুরনো জায়গাটায়ই আবার ব্যবহার করার সাহস তোমার হবে
সেভেরাস, তুমি একটা ভুল করছ, বলল লুপিন, গলার স্বরে জরুরি ভাব। তুমি সব কিছু এখনও শোননি–আমি ব্যাখ্যা করতে পারি–সাইরিয়াস এখানে হ্যারিকে হত্যা করতে আসেনি–
আজ রাতে আরও দুজন আজকাবানে যাবে, বললেন স্নেইপ, উন্মাদের মতো ওর দৃষ্টি। ব্যাপারটা ডাম্বলডোর কিভাবে গ্রহণ করেন দেখার ইচ্ছা রইল আমার
উনি বরাবরই বিশ্বাস করতেন যে তুমি মোটেই বিপদজনক নও, বুঝতে পারছ লুপিন একটা পোষ্য ওয়েরউলফ
বোকা কোথাকার, বললেন লুপিন নরম স্বরে। স্কুলের সময়কার কোন রাগ একজন নির্দোষ মানুষকে আজকাবানে পাঠানোর জন্য কী যথেষ্ট?
ব্যাং! সরু, সাপের মতো রশি স্নেইপের জাদুর কাঠির মাথা থেকে বেরিয়ে লুপিনের মুখ, কব্জি এবং গোড়ালির চারদিকে পেচিয়ে ধরল; ভারসাম্য হারিয়ে মেঝেতে পড়ে গেলেন লুপিন, নড়তে পারছেন না। ক্ষিপ্ত গর্জনে স্নেইপের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়তে যাচ্ছিল ব্ল্যাক, কিন্তু ওর দুই চোখের মাঝখানে জাদুর কাঠিটা তাক করে স্নেইপ বললেন
শুধু একটা অজুহাত দাও, ফিসফিস করে বললেন স্নেইপ। আমাকে একটা সুযোগ শুধু দাও, প্রতিজ্ঞা করছি আমি এটা করব।
পাথরের মতো নিথর দাঁড়িয়ে বলল ব্ল্যাক। দুটি মুখের মধ্যে কোনটিতে বেশি ঘৃণা বলা মুশকিল।
হ্যারি দাঁড়িয়ে রয়েছে, যেন অবশ হয়ে গেছে শরীর, বুঝতে পারছে না কি করবে কাকে বিশ্বাস করবে। চোখ ঘুরিয়ে রন এবং হারমিওনের দিকে তাকাল। রনকে ওর মতোই বিভ্রান্ত দেখাচ্ছে, তখনও স্ক্যাবার্সকে পকেটে ধরে রাখার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সে। হারমিওন, প্রফেসর স্নেইপের দিকে একটা অনিশ্চিত পদক্ষেপ বাড়িয়ে বলল, শ্বাসরুদ্ধ স্বরে, প্রফেসর স্নেইপ–যদি আমরা ওর কথা শুনি তাহলে তো কোন ক্ষতি নেই, তাই না?
মিস গ্রেঞ্জার, তুমি তো এমনিতেই স্কুল থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়ে যাবে, থুথু ফেললেন স্নেইপ। তুমি, পটার এবং উইজলি নিষিদ্ধ জায়গায় চলে এসেছো, একজন সাজাপ্রাপ্ত খুনি এবং একটা ওয়েরউলফের সঙ্গে। জীবনে একবারের জন্য অন্তত, মুখটা বন্ধ রাখ।
কিন্তু যদি–যদি কোন ভুল হয়ে যায়।
মুখ বন্ধ কর, হতচ্ছাড়া মেয়ে! চিৎকার করে উঠলেন স্নেইপ, হঠাৎ তাকে দিশেহারা মনে হলো। যেটা বোঝ না সেটা নিয়ে কথা বলো না! ব্ল্যাক-এর মুখের তাক করা জাদুর কাঠির মাথা থেকে কয়েকটি স্কুলিঙ্গ বেরিয়ে এল। চুপ করে গেল হারমিওন।
প্রতিশোধ সব সময়ই মধুর হয়, ব্ল্যাক-এর দিকে তাকিয়ে বললেন স্নেইপ। কতবার যে আমি আশা করেছি আমিই হয়তো তোমাকে ধরতে পারব
তামাশাটা আবার তোমার সঙ্গেই হচ্ছে সেভেরাস, পাল্টা জবাব দিল ব্ল্যাক। যতক্ষণ পর্যন্ত ওই ছেলেটি ওর ইঁদুরটাকে প্রাসাদের দিকে নিয়ে যায়– রন-এর দিকে মাথা কঁকাল সে,–আমি শান্তভাবে সঙ্গে সঙ্গে যাব
প্রাসাদ পর্যন্ত? মধুর স্বরে বললেন স্নেইপ। আমার মনে হয় না অতদূর পর্যন্ত আমাদের যেতে হবে। এটুকু শুধু করা দরকার, উইলোর ভেতর থেকে বেরিয়ে ডিমেন্টারদের ডাকতে হবে, ব্ল্যাক বলতেই হচ্ছে ওরা তোমাকে দেখলে খুশিই হবে
ব্ল্যাক-এর মুখ থেকে সব রক্ত সরে গেল।
তোমাকে আমার কথা শুনতেই হবে, কঁকিয়ে উঠল সে। ওই ইঁদুরটা–ওই ইঁদুরটাকে দেখ
কিন্তু স্নেইপ-এর চোখে তখন উন্মাদের দৃষ্টি। এরকম হ্যারি আগে কখনও দেখেনি। সকল যুক্তির বাইরে যেন চলে গেছে।
চলে এসো সবাই, বললেন স্নেইপ। আঙুল দিয়ে তুড়ি বাজালেন, লুপিনকে বেধে রাখা রশিগুলোর প্রান্ত তার হাতে চলে এল। ওয়েরউলফটাকে আমি টেনে নিয়ে যাচ্ছি। সম্ভবত ডিমেন্টাররাও ওকে দেখলে খুশি হবে
কি করছে নিজেই কিছু বুঝে ওঠার আগে হ্যারি তিন পদক্ষেপে কক্ষটা পেরিয়ে দরজা বন্ধ করে দাঁড়াল।
সামনে থেকে সরে দাঁড়াও পটার, এরই মধ্যে তুমি অনেক ঝামেলায় পড়েছে, দাঁত খিঁচিয়ে বললেন স্নেইপ। যদি আমি তোমাকে বাঁচানোর জন্যে এখানে না আসতাম।
প্রফেসর লুপিন এ বছর আমাকে অন্তত একশবার হত্যা করতে পারতেন, বলল হ্যারি। বহুবার আমি তার সঙ্গে একাকী ছিলাম, ডিমেন্টার বিরোধী ক্লাসও করেছি। যদি তিনি ব্ল্যাককে সাহায্যই করবেন তাহলে তখন আমাকে মেরে ফেললেন না কেন?
একটা ওয়েরউলফ-এর মাথা কিভাবে কাজ করে আমাকে সেটা ব্যাখ্যা করতে বলো না, ধারালো স্বরে বললেন স্নেইপ। সামনে থেকে সরে দাঁড়াও।
আপনার জন্য দুঃখ হয়! চিৎকার করে উঠল হ্যারি। শুধুমাত্র স্কুলে আপনাকে বোকা বানানো হয়েছিল বলে আপনি ওদের কথাটাও শুনবেন
চুপ করো! আমাকে এইভাবে কথা বলবে না! রাগে কাঁপছেন স্নেইপ, আরো বেশি উন্মাদ মনে হচ্ছে তাকে। যেমন বাপ তেমনি ব্যাটা, পটার! এইমাত্র আমি তোমার জীবন বাঁচালাম, হাঁটু গেড়ে আমাকে তার জন্য তোমার ধন্যবাদ জানানো উচিত! মনে হয় তোমাকে ওরা মেরে ফেললেই ঠিক হতো! তোমার বাবার মতোই মারা যেতে তুমি, ব্ল্যাককে অবিশ্বাস করে ভুল করছ কি না ভেবে-এখন আমার পথ থেকে সরে দাঁড়াও না হয়তো আমি তোমাকে বাধ্য করব! সরে দাঁড়াও পটার!
মুহূর্তের মধ্যে মনস্থির করে ফেলল হ্যারি। স্নেইপ সামনে পদক্ষেপ দেয়ার আগেই নিজের জাদুর কাঠিটা উপরে তুলল সে।
এক্সপেলিয়ার্মাস! চিৎকার করল–কিন্তু ওই একমাত্র ব্যক্তি নয় যে চিৎকারটা করল। একটা বিস্ফোরণ হলো, দরজার কজা পর্যন্ত নড়ে গেল! মাটি থেকে উপরে উঠে গেলেন স্নেইপ সজোরে গিয়ে দেয়ালে আছড়ে পড়লেন, তারপরে গড়িয়ে পড়লেন মেঝেতে, চুলের নিচ থেকে রক্তের একটা ক্ষীণ ধারা বেরিয়ে এসেছে।
ঘুরে দেখল হ্যারি। ঠিক ওই মুহূর্তে রন এবং হারমিওন একইভাবে স্নেইপকে নিরস্ত্র করার চেষ্টা করেছিল। স্নেইপ-এর জাদুর কাঠিটা উপরের দিকে উড়ে গিয়ে বিছানার পাশে কশ্যাংকস-এর পাশে পড়ল।
তোমাদের ওটা করা উচিত হয়নি, বলল ব্ল্যাক, হ্যারির দিকে তাকিয়ে। ওকে আমার হাতে ছেড়ে দেয়া উচিত ছিল।
ব্ল্যাক-এর চোখের দিকে তাকাল না হ্যারি। এখন পর্যন্ত ও নিশ্চিত নয় কাজটা ঠিক হয়েছে কি না।
আমরা একজন শিক্ষককে আক্রমণ করেছি আমরা শিক্ষককে আক্রমণ করেছি ফুঁপিয়ে উঠল হারমিওন, প্রাণহীন স্নেইপ-এর দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে। ওহ্ আমরা যে কত মুশকিলে পড়ব–
লুপিন চেষ্টা করছেন বাধন ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে। ঝুঁকে বাঁধন খুলে দিল ব্লাক। সোজা হয়ে দাঁড়ালেন লুপিন, হাত ঘষছে যেখানে বাধা ছিল।
ধন্যবাদ হ্যারি, বললেন তিনি।
আমি এখনও বলছি না যে আপনাদের আমরা বিশ্বাস করি, পাল্টা বলল হ্যারি।
তাহলে এখন কিছু প্রমাণ দেয়ার সময় এসেছে, বলল ব্ল্যাক। এই যে আমার হাতে পিটারকে দাও। এখনই।
বুকের কাছে সজোরে স্ক্যাবার্সকে ধরে থাকল রন।
কি পেয়েছো, দুর্বল স্বরে বলল ও। তুমি কি আজকাবান থেকে পালিয়ে এসেছো শুধুমাত্র স্ক্যাবাসকে মারার জন্য? মানে আমি বলতে চাইছি …মুখ তুলে হ্যারি আর হারমিওনের কাছে যেন সমর্থন চাইল। বেশ, পেট্টিগ্রু না হয় ইঁদুরে রূপান্তরিত হতে পারে–লক্ষ লক্ষ ইঁদুর রয়েছে–আজকাবানের ভেতরে আটক থেকে ও কীভাবে জানবে কোন ইঁদুরটাই পেট্টিগ্রু?
বুঝতে পারছ সাইরিয়াস, এটা কিন্তু একটি যুক্তিসঙ্গত প্রশ্ন, বললেন লুপিন, ঘুরে দাঁড়িয়ে ব্ল্যাককে প্রশ্ন করলেন, তুমি কীভাবে বুঝতে পারলে ও কোথায় রয়েছে?
থাবার মতো দেখতে ওর একটা হাত পোশাকের ভেতরে ঢুকালো ব্ল্যাক, বের করে নিয়ে এলো কুচকানো একটা কাগজের টুকরা, ওটাকে সমান করল, এবার মেলে ধরল সবাই যেন দেখতে পায়।
গত গ্রীষ্মে ডেইলি প্রফেট-এ প্রকাশিত রনদের পারিবারিক ছবি ওটা, এবং রন-এর কাঁধের উপর ওই যে স্ক্যাবার্স।
কিন্তু তুমি এটা পেলে কীভাবে? প্রশ্ন করলেন লুপিন, যেন বজ্রাহত হয়েছে।
ফাজ, বলল ব্ল্যাক। গত বছর যখন আজকাবান পরিদর্শনে এসেছিল তখন আমাকে ওটা দিয়েছিল। এবং এই যে পিটার, প্রথম পাতায় ছেলেটার কাঁধের উপরে দেখেই আমি চিনতে পেরেছি … কতবার না দেখেছি ওকে রূপান্তরিত হতে? এবং ক্যাপশনে লেখা ছিল ছেলেটা হোগার্টস-এ ফিরে যাচ্ছে। যেখানে হ্যারি রয়েছে …।
হে ঈশ্বর, আস্তে আস্তে বললেন লুপিন, ছবিতে স্ক্যাবার্সকে দেখে। ওর সামনের পা।
ওর সামনে পা কী? একগুয়ের মতো প্রশ্ন করল রন।
সামনের পায়ে ওর একটা আঙুল নেই, বলল ব্ল্যাক।
নিশ্চয়, লুপিন নিঃশ্বাস ছাড়লেন, খুব সহজ … অসাধারণ ও নিজেই ওটা কেটে ফেলেছিল?
রূপান্তরিত হওয়ার ঠিক আগে, বলল ব্ল্যাক। ওকে যখন আমি বাগে পেয়েছিলাম, ও চিষ্কার করে রাস্তার সমস্ত লোককে জানাবার চেষ্টা করেছে যে আমি লিলি এবং জেমস-এর সঙ্গে বেঈমানি করেছি। এবং ওকে ধার আগেই, জাদুর কাঠিটা দিয়ে নিজের পেছনের রাস্তাটাকে দুভাগ করে ফেলেছিল ও, বিশ ফিটের মধ্যে যারা ছিল তাদের সকলকে মেরে ফেলেছিল। এরপর অন্যান্য ইঁদুরের সঙ্গে স্যুয়েরেজের পাইপের মধ্য দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল।
রন, তোমরা কী কখনই শুনতে পাওনি? বললেন লুপিন। পিটারের যে অংশটা পাওয়া গিয়েছিল সেটা হচ্ছে ওর আঙুল।
দেখ, এমনও তো হতে পারে যে অন্য কোন ইঁদুরের সঙ্গে স্ক্যাবার্স মারামারি করেছিল অথবা ওইরকম কিছু! আমাদের পরিবারে ও তো অনেক দিন ধরে রয়েছে, তাই না
বার বছর, ঠিক তাই, বললেন লুপিন। তোমার কী কখনই মনে হয়নি এতদিন ধরে ও বেঁচে রয়েছে কেন?
আমরা–আমরা ওর ভালো যত্ন নিয়েছি! বলল রন।
যদিও এই মুহূর্তে ওকে খুব ভালো দেখাচ্ছে না, তাই না? বললেন লুপিন। মনে হয় যখন থেকে ও শুনেছে যে সাইরিয়াস পালিয়ে গেছে তখন থেকেই ওর ওজন কমতে শুরু করেছে …
ওই পাগলা বিড়ালটার ভয়ে! বলল রন, কুকশ্যাংকস-এর দিকে মাথা কঁকিয়ে, বিছানায় বসে ওটা তখনও আস্তে আস্তে শব্দ করছে।
হ্যারি ভাবল, এটা ঠিক না কশ্যাংকসকে দেখার আগে থেকেই স্ক্যাবাসকে অসুস্থ লাগছিল যখন রনরা মিসর থেকে ফিরে এসেছে যখন থেকে ব্ল্যাক কারাগার ভেঙে পালিয়েছে …
এই বিড়ালটা পাগল না, কর্কশ গলায় বলল ব্ল্যাক। হাড় জিরজিরে হাত বাড়িয়ে কুকশ্যাংকস-এর পশমী মাথাটায় চাপড় দিল। আমি যত বিড়াল দেখেছি এর চেয়ে বুদ্ধিমান আর একটিও নেই। ও মুহূর্তের মধ্যেই পিটারকে চিনতে পেরেছিল। এবং ও যখন আমাকে দেখল তখন বুঝতে পেরেছিল আমিও কোন কুকুর নই। তখন থেকেই ও আমাকে বিশ্বাস করতো। অবশেষে ওকে বোঝাতে পেরেছিলাম আমি কি চাইছি, তারপর থেকে আমাকে সাহায্য করছে ও।
কী বলতে চাইছো তুমি? এক নিঃশ্বাসে বলল হারমিওন।
ও আমার কাছে পিটারকে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছে, কিন্তু পারেনি … আমার জন্য গ্রিফিন্ডর টাওয়ারে ঢোকার পাসওয়ার্ড চুরি করেছে আমার যদুর মনে পড়ছে একটা ছেলের বিছানার পাশের টেবিল থেকে ওগুলো চুরি করেছিল সে
যা শুনছে তাতে হ্যারির মনে হচ্ছে ওর মাথা আর কুলাচ্ছে না। অবিশ্বাস্য কিন্তু তারপরও
কিন্তু যা কিছু ঘটছিল পিটার সেটা বুঝে ফেলেছিল, সে কারণে পালিয়েও গিয়েছিল এই বিড়ালটা-একে তোমরা কুকশ্যাংকস ডাকো?–আমাকে বলল কাপড়ের উপর রক্তের দাগ রেখে পালিয়েছে পিটার মনে হয় ও নিজেই নিজেকে কামড়ে রক্ত বের করেছে …কিন্তু, নিজের মিথ্যা মৃত্যু সম্পর্কে খেলাটা একবারই কাজে লেগেছিল।
কথাগুলো যেন হ্যারির দৃষ্টি খুলে দিল।
ও নিজের মৃত্যু সম্পর্কে মিথ্যা ধারণা দিল কেন? ক্ষিপ্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল ও। কারণ ও জানত তুমি যেমন আমার বাবা-মাকে হত্যা করেছে তেমনি ওকেও হত্যা করবে!
না, বললেন লুপিন। হ্যারি
এখন তুমি ওকে শেষ করার জন্য এসেছে!
হ্যাঁ, এসেছি, বলল ব্ল্যাক, স্ক্যাবার্স-এর দিকে ঘাতকের দৃষ্টিতে তাকাল।
তাহলে আমার তো উচিত ছিল স্নেইপকে তোমাকে শেষ করতে দেয়া! চিৎকার করল হ্যারি।
হ্যারি, দ্রুত বললেন লুপিন, তুমি বুঝতে পারছ না? সবসময় তুমি ভেবে এসেছে যে সাইরিয়াসই তোমার বাবা-মার সঙ্গে বেঈমানি করেছে, এবং পিটার ওকে খুঁজে বের করেছে। কিন্তু বুঝতে পারছ না আসল ঘটনাটা উল্টো? পিটারই তোমার বাবা-মার সঙ্গে বেঈমানি করেছে–সাইরিয়াস ওকে খুঁজে ধরবার চেষ্টা করেছে।
এটা সত্যি নয়! হ্যারি জোরে চিৎকার করে উঠল। ওই তো ছিল ওদের গোপন–রক্ষক! এই কথা ও বলেছে আপনি আসার আগে, ও নিজেই বলেছে ওই আমার বাবা-মাকে মেরেছে!
ব্ল্যাক-এর দিকে নির্দেশ করছে হ্যারি, মাথা নাড়ছে ব্ল্যাক, ওর গভীর চোখ দুটো হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
হ্যারি আমি ওদের মেরে ফেলেছি বলা যায়, অনুতপ্ত স্বরে বলল সে। শেষের দিকে আমিই লিলি এবং জেমসকে বুঝিয়েছিলাম যেন আমার বদলে পিটারকে ব্যবহার করে ওদের গোপন–রক্ষক হিসেবে আমারই দোষ, আমি জানি … যে রাতে ওরা মারা গেল, আমি পিটার-এর নিরাপত্তার ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে গিয়ে দেখলাম ওর লুকনোর জায়গায় সে নেই। এবং সেখানে ধ্বস্তাধ্বস্তি হওয়ার ওর কোন লক্ষণও ছিল না। আমার কাছে ব্যাপারটা যেন খুব সহজ মনে হলো না। আমি ভয় পেয়েছিলাম। বেরিয়েই সোজা তোমাদের বাড়ির দিকে রওনা হলাম এবং যখন তোমাদের বিধ্বস্ত বাড়ি এবং তাদের মৃতদেহগুলো দেখলাম তখন বুঝতে পারলাম পিটার কি সর্বনাশ করেছে এবং আমি কি করলাম।
গলার স্বর কান্নায় বুজে এলো ব্ল্যাক-এর। ঘুরে দাঁড়াল সে।
যথেষ্ট হয়েছে, বললেন লুপিন, ওর গলার স্বরে দৃঢ় একটা ভাব, যেটা কখনই আগে শোনেনি হ্যারি। একটা নিশ্চিত উপায় আছে প্রমাণ করার, আসলে কি হয়েছিল। রন, আমাকে ওই ইঁদুরটা দাও।
যদি আমি দিই তাহলে ওকে নিয়ে করবে? আড়ষ্ট রন জিজ্ঞাসা করল।
ওকে স্বমূর্তি ধারণ করতে বাধ্য করব, বললেন লুপিন। যদি সে সত্যি ইঁদুর হয়, তাহলে এতে ওর কোন ক্ষতি হবে না।
ইতস্তত করছে রন, অবশেষে স্ক্যাবার্সকে বাড়িয়ে ধরল, লুপিন নিলেন ওটাকে। অবিরাম চি চি করছে ইঁদুরটা, ছটফট করছে, এদিক ওদিক ঘুরছে, ওর ক্ষুদে চোখ দুটো যেন বেরিয়ে আসতে চাইছে কোটর থেকে।
সাইরিয়াস, তুমি তৈরি? বললেন লুপিন।
এরই মধ্যে বিছানার উপর থেকে স্নেইপ-এর জাদুর কাঠিটা হাতে নিয়েছে ব্ল্যাক। লুপিন এবং ছটফট করা ইঁদুরটার কাছে চলে এল সে, হঠাৎ মনে হলো ওর ভেজা চোখ দুটো যেন মুখের উপর জ্বলছে।
এক সঙ্গে? শান্ত স্বর ব্ল্যাক-এর।
আমার তাই মনে হচ্ছে, বললেন লুপিন, এক হাতে স্ক্যাবাসকে শক্ত ধরে অন্য হাতে জাদুর কাঠিটা তুললেন। তিন বলার সঙ্গে সঙ্গে। এক–দুই–তিন!
দুটো জাদুদণ্ড থেকেই নিলাভ সাদা আলোর ঝলক বেরিয়ে এলো; মুহূর্তের জন্যে শূন্যে স্থির হয়ে গেল স্ক্যাবার্স, তারপর ওর ছোট্ট দেহটা পাগলের মতো এদিক ওদিক করতে লাগল–চিৎকার করে উঠল রন–মেঝেতে সজোরে পড়ল ইঁদুরটা। আরেকটা চোখ ধাঁধানো আলোর ঝলকানি এবং তারপর
যেন বাড়তে থাকা কোন গাছের ফাস্ট ফরোয়ার্ড করা ছবি। মাটি থেকে একটা মাথা উপরের দিকে উঠছে; হাত পা বেরিয়ে আসছে; পরমুহূর্তে, স্ক্যাবার্স যেখানে ছিল সেখানে একটি মানুষ দাঁড়িয়ে রয়েছে দেখা গেল। বিছানার উপর থেকে দাঁত মুখ বের করে খিঁচিয়ে উঠল ক্রুকশ্যাংকস।
ছোটখাটো একটা মানুষ, হ্যারি এবং হারমিওন থেকে খুব বেশি লম্বায় না। পাতলা বিবর্ণ চুলগুলো অগোছালো, মধ্যখানে একটা বড় টাক। যেন একটা মোটাসোটা মানুষ খুব অল্প সময়ে শুকিয়ে গেছে এমন দেখতে মনে হলো। গায়ের চামড়া নোংরা, প্রায় স্ক্যাবার্স-এর লোমের মতো, ওর সঁচালো নাকটা যেন এখনও ইঁদুরের মতো, চোখ দুটো ক্ষুদে জলভরা। হ্যারি খেয়াল করল ওর দৃষ্টিটা একবার দরজার দিকে গিয়েই আবার ফিরে এল।
এই যে, হ্যালো, পিটার, স্নিগ্ধ স্বরে বললেন লুপিন, যেন ওর আশেপাশে ইঁদুরের মধ্যে থেকে স্কুলের পুরনো বন্ধু প্রায়ই এমন করে বেরিয়ে আসে। অনেক দিন, দেখা হয় না।
সা–সাইরিয়াস … রে–রেমাস … এমনকি পেট্টিগ্রুর গলার স্বরও কেমন চি চি করছে। আবার ওর চোখের দৃষ্টি দরজার দিকে চলে গেল। আমার বন্ধুরা আমার পুরনো বন্ধুরা।
ব্ল্যাক-এর জাদুর কাঠিটা ধরা হাতটা উপরে উঠল, কিন্তু লুপিন ওর কব্জিটা ধরে ফেলল, দৃষ্টি দিয়ে ওকে সাবধান করল, আবার ফিরল পেট্টিগ্রুর দিকে, ওর গলার স্বর এমন যেন কিছুই হয়নি।
আমাদের মধ্যে কথা হচ্ছিল পিটার, যে রাতে লিলি এবং জেমস মারা গেল তখনকার কথা। মনে হয় তুমি যখন ইঁদুর হিসেবে ছটফট করছিলে তখন আলোচনার সূক্ষ্ম পয়েন্টগুলো শুনতে পাওনি–
রেমাস, হাঁপাচ্ছে পেট্টিগ্রু, হ্যারি দেখতে পাচ্ছে ওর পাণ্ডুর মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম ফুটে উঠেছে, তুমি ওকে বিশ্বাস কর না, তাই না ও আমাকে মেরে ফেলবার চেষ্টা করেছিল।
সে রকমই আমরা শুনেছিলাম, বললেন লুপিন, গলার স্বর একেবারে শীতল। তবে দুএকটা বিষয় তোমার সঙ্গে পরিষ্কার করে নেয়া যাক পিটার, যদি তুমি
ও আবার আমাকে মেরে ফেলবার জন্য এসেছে! ব্ল্যাক-এর দিকে আঙুল তুলে তীক্ষ্ণ চিৎকারে বলল পেট্টিগ্রু। হ্যারি লক্ষ্য করল হাতের মধ্যমাটা ব্যবহার করেছে সে কারণ ওর কোন তর্জনি নেই। ও লিলি এবং জেমসকে হত্যা করেছে, এখন আমাকে মারবার জন্য এসেছে আমাকে তোমার সাহায্য করতে হবে রেমাস
যেন তলাহীন চোখে তাকিয়ে রয়েছে ব্ল্যাক, ওর মুখটাকে মনে হচ্ছে কঙ্কালের।
কয়েকটা বিষয়ে পরিষ্কার করে নেয়ার আগে কেউই তোমাকে হত্যা করতে পারবে না, বললেন লুপিন।
পরিষ্কার করে নেয়া? ভীত স্বর পেট্টিগ্রুর, চারদিকে তাকাচ্ছে দিশেহারা, তক্তা দিয়ে আটকানো জানালাগুলোর দিকে একবার, আবার একমাত্র দরজাটার দিকে। আমি জানি ও আমাকে মারবার জন্যই এসেছে। আমি জানতাম ও আবার ফিরে আসবে! এরই জন্য বার বছর ধরে ও অপেক্ষা করছিল!
তুমি জানতে যে সাইরিয়াস আজকাবান ভেঙে বেরিয়ে আসবে? বললেন লুপিন জ কুঁচকে। যখন এর আগে কেউই এটা করতে পারেনি?
ওর এমন অশুভ শক্তি রয়েছে যা আমরা স্বপ্নেও ভাবতে পারি না! তীব্র স্বরে চিৎকার করে উঠল পেটি। তা না হলে কী করে বেরিয়ে এল সে? আমার মনে হয় ওই যে, যার নাম নেয়া যায় না সে তাকে কয়েকটা চাল শিখিয়ে দিয়েছে!
হাসতে শুরু করল ব্ল্যাক, ভয়াবহ উল্লাসহীন হাসি, পুরো ঘরটা ভরে গেল।
ভন্ডেমর্ট, আমাকে চাল শেখাবে? বলল সে।
কুঁকড়ে গেল পেট্টিগ্রু, যেন চাবুক মেরেছে ওকে ব্ল্যাক।
কী, পুরনো প্রভুর নাম শুনে ভয় পেলে? বলল ব্ল্যাক। আমি তোমাকে দোষ দিই না, পিটার। তোমাকে নিয়ে ওর ভাগ্যটা খুব শুভ না, তাই না?
বুঝতে পারছি না। তুমি কি বলতে চাচ্ছ সাইরিয়াস–বিড় বিড় করল পেট্টিগ্রু, জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে ও। ওর পুরো মুখটা এখন ঘামে চকচক করছে।
বার বছর ধরে তুমি আমার কাছ থেকে লুকিয়েছিলে, না? বলল ব্ল্যাক। তুমি আসলে ভন্ডেমর্ট-এর পুরনো সমর্থকদের কাছ থেকে লুকিয়ে ছিলে। আজকাবানে আমি অনেক কিছুই শুনতে পেয়েছি … ওরা সবাই ভাবে তুমি মরে গিয়েছে, তা না হলে ওদের কাছে তোমাকে জবাব দিতে হতো ঘুমের মধ্যে ওরা নানারকম চিৎকার করত, আমি শুনেছি। এমন সব কথা যা শুনলে মনে হয়, একজন বেঈমান ওদের সঙ্গে বেঈমানি করেছে। পটারদের বাড়িতে ভল্ডেমর্ট গিয়েছিল তোমার কাছ থেকে খবর পেয়ে এবং ওখানেই ভন্ডেমর্ট তার সর্বনাশের মুখোমুখি হয়েছিল। এবং ভন্ডেমর্ট-এর সব সমর্থকরাই নিশ্চয়ই আজকাবানে আটক নেই, তাই না? বাইরে অনেকে মুক্ত, কালক্ষেপণ করছে, ভান করছে যেন ওদের ভুল ওরা বুঝতে পেরেছে … পিটার, একবার যদি ওরা টের পায় যে তুমি বেঁচে রয়েছে
বুঝতে পারছি নাঃ… তুমি কি বলছ আবার বলল পেট্টিগ্রু, ভয়ে গলার স্বর সপ্তমে উঠেছে। জামার হাতা দিয়ে মুখটা মুছে নিয়ে লুপিনকে বলল, তুমি নিশ্চয়ই এটা বিশ্বাস কর না-এই পাগলামি, রেমাস
আমাকে স্বীকার করতেই হবে, পিটার, আমার বুঝতে খুবই কষ্ট হচ্ছে যে, কেন একজন নির্দোষ মানুষ বার বছর ইঁদুর হয়ে কাটাবে, সোজাসাপ্টা বললেন লুপিন।
নির্দোষ, কিন্তু ভীতসন্ত্রস্ত! বলল পেট্টিগ্রু। যদি ভন্ডেমর্ট-এর সমর্থকরা আমার পেছনে লেগে থাকে, তাহলে তার কারণ হচ্ছে আমি ওদের সর্বশ্রেষ্ঠ লোকটাকে আজকাবানে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম–গুপ্তচর সাইরিয়াস ব্ল্যাক!
বিকৃত হয়ে গেল ব্ল্যাক-এর চেহারাটা।
তোমার কতবড় সাহস, গর্জন করে উঠল সে, যেন ভাল্লুকের আকৃতির কুকুরটা। আমি, ভন্ডেমর্ট-এর গুপ্তচর? আমি কখনও আমার চেয়ে শক্তিশালী লোকের চারপাশে ঘুরঘুর করেছি? কিন্তু তুমি, পিটার–কেন প্রথম থেকে আমি বুঝতে পারিনি যে শুরু থেকে তুমি ছিলে গুপ্তচর। সবসময় তুমি চাইতে তোমার চেয়ে বড় এবং শক্তিশালীদের বন্ধুত্ব, যারা তোমাকে রক্ষা করতে পারে, তাই না? এবং সেটা ছিলাম আমরা আমি এবং রেমাস এবং জেমস।
আবার মুখ মুছল পেট্টিগ্রু; যেন দম ফুরিয়ে আসছে ওর।
আমি, গুপ্তচর নিশ্চয় তুমি পাগল হয়ে গেছ কখনই না বুঝতেই পারছি না এ ধরনের কথা কেন তুমি বলছ–।
লিলি এবং জেমস আমার কথায় তোমাকে তাদের গোপন রক্ষক বানিয়েছিল, ফিসফিসিয়ে বলল ব্ল্যাক, এমন ভয়ঙ্করভাবে যে পেট্টিগ্রু পিছিয়ে গেল এক পা। আমি ভেবেছিলাম এটা একটা নির্ভুল পরিকল্পনা হবে একটা থোকা … ভল্ডেমর্ট নিশ্চয়ই আমার পেছনে লাগবে, কিন্তু কখনই স্বপ্নেও ভাববে না যে পটাররা তোমার মতো একজন দুর্বল, মেধাহীনকে ব্যবহার করবে নিশ্চয়ই সেটা ছিল তোমার জীবনের পরম মুহূর্ত, যখন তুমি ভল্ডেমর্টকে বলেছিলে যে ওর হাতে তুমি পটারদের তুলে দিতে পার।
আবোলতাবোল বিড়বিড় করছে পেটি; হ্যারির কানে গেল পাগলামি এবং সুদূরপ্রসারী, কিন্তু ওর নজর গেল বিবর্ণ হয়ে যাওয়া পেটির মুখের উপর, এবং যেভাবে সে ঘন ঘন বন্ধ জানালা ও দরজাটার দিকে তাকাচ্ছে।
প্রফেসর লুপিন? ভয়ে ভয়ে হারমিওন। আমি কী কিছু বলতে পারি?
নিশ্চয় হারমিওন, সদয়ে লুপিন বললেন।
আচ্ছা বেশ–স্ক্যাবার্স–আমি বলতে চাইছি-এই লোকটা–তিন বছর ধরে হ্যারির হোস্টেল রুমে ঘুমাচ্ছে। যদি সে ইউ নো হু-এর জন্যে কাজ করে, তাহলে আগে কেন সে হ্যারির ক্ষতি করতে চায়নি?
এই যে! বলল পেট্টিগ্রু, হারমিওনকে দেখিয়ে। ধন্যবাদ! দেখেছো রেমাস? হ্যারির একটা চুলেরও আমি ক্ষতি করিনি! কেন করবো?
আমি বলছি কেন, বলল ব্ল্যাক। কারণ, তুমি কখনই কারো জন্য কিছু করনি, যতক্ষণ পর্যন্ত না ওখানে তোমার নিজের লাভ দেখেছে। বার বছর ধরে লুকিয়ে রয়েছে ভন্ডেমর্ট, ওরা বলে সে অর্ধমৃত। তুমি নিশ্চয় একজন ক্ষমতাহীন জাদুকরের জন্য অ্যালবাস ডাম্বলডোর-এর একেবারে নাকের ডগায় কাউকে খুন করবে না, তাই না? তার কাছে আবার ফিরে যেতে হলে তুমি নিশ্চিত হয়েই যাবে যে, সেই মাঠের সবচেয়ে বড় খেলোয়াড়, তাই না? তা না হলে একটা জাদুকর পরিবারে তুমি বসবাস করবে কেন? খবর পাওয়ার জন্যে, তাই না পিটার? যদি, তোমার পুরনো প্রভু আবার তার ক্ষমতা ফিরে পান, এবং তার সঙ্গে যোগ দেয়া নিরাপদ হয়
কয়েকবার মুখ খুলে আবার বন্ধ করে ফেলল পেট্টিগ্রু। যেন কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে সে।
ইয়ে–মানে, মিস্টার ব্ল্যাক–সাইরিয়াস? ভয়ে ভয়ে হারমিওন।
বিনয়ের সম্বোধনে লাফিয়ে উঠল ব্ল্যাক, সে তো ভুলেই গিয়েছিল তাকে কেউ ওইভাবে বলতে পারে।
যদি আপনি কিছু মনে না করেন–আপনি কিভাবে আজকাবান থেকে বেরিয়ে এলেন, যদি না কালো জাদু ব্যবহার করে থাকেন?
ধন্যবাদ! যেন দম ফেলল পেটি, পাগলের মতো ওর দিকে মাথা ঝাঁকাল। ঠিক! একেবারে এটাই আমি
দৃষ্টি দিয়ে ওকে থামিয়ে দিলেন লুপিন, হারমিওনের প্রতি একটু অসন্তুষ্ট হলো ব্ল্যাক, কিন্তু ওর প্রশ্নের জন্য নয়। জবাবটা কি দেবে সেটা ভাবছে।
আমি নিজেও জানি না কিভাবে আমি পালিয়েছি, ধীরে ধীরে বলল সে। আমার মনে হয় আমি যে ওখানে থাকার সময় নিজের মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলিনি তার একটাই কারণ, যে আমি নির্দোষ। যদিও এটা কোন সুখপ্রদ চিন্তা নয়, ডিমেন্টারা আমার ভেতর থেকে শক্তি শুষে নিতে পারেনি কিন্তু এর ফলে আমি মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পেরেছিলাম এবং আমি কে সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিলাম আমার শক্তি অক্ষুণ্ণ রাখার ব্যাপারে সাহায্য করেছে সুতরাং, সময় যখন এল আমি আমার কারাকক্ষের ভেতরেই নিজেকে রূপান্তরিত করতে পারলাম কুকুর হয়ে গেলাম। ডিমেন্টাররা চোখে দেখতে পায় না, জান তো
ঢোক গিলল সে। মানুষের আবেগটাকে অনুভব করে ওরা ওদের কাছে পৌঁছায় ওরা, বলতে পারো আমার বোধশক্তি ক্রমেই মানুষের চেয়ে আরো কমে গিয়েছিল… আরও কমে গিয়েছিল, আরও কম জটিল, যখন আমি কুকুর হয়ে গেলাম নিশ্চয় ওরা ভেবেছিল অন্য সকলের মতো আমিও আমার মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলেছি, সে কারণেই আমার রূপান্তর ওদেরকে ভাবায়নি। কিন্তু আমি খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম, খুবই দুর্বল, জাদুর কাঠি ছাড়া আমার কাছ থেকে ওদেরকে দূরে তাড়িয়ে দেব এটা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।
ঠিক ওই সময়ই আমি পত্রিকার ছবিতে পিটারকে দেখতে পেলাম বুঝতে পারলাম হোগার্টস-এ হ্যারির সঙ্গে রয়েছে পিটার যদি কোন ইঙ্গিত পায় যে ভন্ডেমর্ট আবার শক্তি সঞ্চয় করছে তাহলে ওর হয়ে কাজ করার জন্য একেবারে সঠিক জায়গায়
মাথা ঝাঁকিয়ে চলেছে পেট্টিগ্রু, শব্দহীন বাক্য বেরোচ্ছে মুখ দিয়ে, কিন্তু ব্ল্যাক এর দিকে তাকিয়ে রয়েছে যেন ওকে জাদু করা হয়েছে।
প্রস্তুত ওর প্রভু সম্পর্কে নিশ্চিত হলে আঘাত করার জন্য পটারদের সবার শেষ জনকে ওর হাতে তুলে দেয়ার জন্য। ও যদি হ্যারিকে লর্ড ভন্ডেমর্ট এর হাতে তুলে দিতে পারে তাহলে কে বলবে যে সে ওর সঙ্গে বেঈমানি করেছে? ওকে আবার সাদরে ওদের দলে নেয়া হবে।
তাহলে দেখতে পাচ্ছ, আমাকেই কিছু করতে হতো। কারণ, একমাত্র আমিই জানি পিটার জীবিত রয়েছে …
হ্যারির মনে পড়ল মিস্টার উইজলি মিসেস উইজলিকে যা বলেছিলেন, গার্ডগুলো শুনতে পেতো ঘুমের মধ্যে ও বলছে সব সময় একটা কথা ও হোগার্টস-এ রয়েছে।
আমার মাথায় যেন কেউ আগুন ধরিয়ে দিল, এবং ডিমেন্টাররাও ওটা ধ্বংস করতে পারেনি ভাবতে ভালো লাগে না কিন্তু আমি যেন আচ্ছন্ন হয়ে গেলাম ওই এক চিন্তায় কিন্তু ওটাই আবার আমাকে শক্তি যুগিয়েছিল, আমান মন পরিষ্কার রেখেছিল। এক রাতে আমরা জন্য খাবার দেয়ার জন্য দরজা খুলল, কুকুর হিসেবে ওদের পাশ দিয়ে আমি বেরিয়ে গেলাম ওদের পক্ষে জন্তুর আবেগ অনুভব করা খুবই কঠিন সে কারণে বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছিল ডিমেন্টাররা, আমি যে বেরিয়ে যাচ্ছি বুঝতে পারেনি শুকিয়ে আমি একেবারে ক্ষীণ, খুবই ক্ষীণ। গারদের শিকের মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে আসার মতো কুকুর হিসেবেই সাঁতরে মূল ভূমিতে ফিরে এলাম উত্তর দিকে যাত্রা করতে করতে কুকুর হিসেবে হোগার্টস এর মাঠে চলে এলাম কুইডিচ দেখতে এলাম তুমি তোমার বাবার মতোই উড়তে পার হ্যারি
হ্যারির দিকে চোখ তুলে তাকাল ব্ল্যাক, চোখ ফিরিয়ে নিল না হ্যারি।
আমাকে বিশ্বাস করো, কঁকিয়ে উঠল ব্ল্যাক। আমাকে বিশ্বাস করো। আমি কখনই জেমস এবং লিলির সঙ্গে বেঈমানি করিনি। ওদের সঙ্গে বেঈমানি করার আগে আমি মরে যেতাম।
অবশেষে, ওকে বিশ্বাস করতে শুরু করল হ্যারি। আবেগে ঝুঁজে এসেছে ওর গলা, মাথা নাড়ল সে সমর্থনে।
না!
ওর হাঁটুর উপর ঝাঁড়িয়ে পড়ল পেট্টিগ্রু, যেন হ্যারির মাথা নাড়াটা ওর জন্য মৃত্যুদণ্ড। হুড়মুড়িয়ে হাঁটুর উপর ভেঙে পড়ল সে, করজোড়ে যেন প্রার্থনা করছে।
সাইরিয়াস–আমি আমি পিটার তোমার বন্ধু তুমি নিশ্চয়ই আমাকে
কষে একটা লাথি মারল ব্ল্যাক, গুটিয়ে গেল পেট্টিগ্রু।
আমার কাপড়ে এমনিই অনেক ময়লা লেগে আছে, ওটা ধরে ময়লা আর বাড়িও না, বলল ব্ল্যাক।
রেমাস! চি চি করে পেট্টিগ্রু, এবার লুপিন-এর দিকে ফিরে, ওর সামনে অনুনয় বিনয় করছে। তুমি নিশ্চয়ই এসব বিশ্বাস করো না সাইরিয়াস কি তোমাকে বলেনি যে ওরা পরিকল্পনাটা পরিবর্তন করেছিল?
না, যদি সে আমাকে চর ভেবে থাকে তবে নিশ্চয়ই বলেনি পিটার, বললেন লুপিন। আমার ধারণা সেই কারণেই তুমি আমাকে বলনি সাইরিয়াস, তাই না? পেট্টিগ্রুর মাথার উপর দিয়ে তাকিয়ে প্রশ্নটা করল লুপিন।
আমাকে মাফ করো রেমাস, বলল ব্ল্যাক।
না তার প্রয়োজন নেই, প্যাডফুট, বললেন লুপিন, এখন নিজের হাতা গোটাচ্ছেন তিনি। এবং তুমি নিশ্চয়ই এখন আমাকে ক্ষমা করবে, কারণ আমি বিশ্বাস করেছিলাম তুমিই চর?
নিশ্চয়ই, বলল ব্ল্যাক, এবং তার রোগা মুখটায় একটা হাসি ফুটে উঠল। এখন সেও তার হাতা গোটাচ্ছে। দুজনেই মিলেই কী এটাকে শেষ করব?
হু, আমার তাই ইচ্ছা, গম্ভীর ভাবে বললেন লুপিন।
না, তোমরা তোমরা মারবে না ঘন ঘন শ্বাস ফেলছে পেট্টিগ্রু। রন এর পেছনে গিয়ে লুকলো সে।
রন আমি কী ভালো বন্ধু ছিলাম না ভালো পোষ্য? তুমি নিশ্চয়ই ওদেরকে আমায় মেরে ফেলতে দেবে না, রন তুমি তুমি নিশ্চয়ই আমার পক্ষে, তাই না?
কিন্তু রন ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে প্রবল বিতৃষ্ণার দৃষ্টিতে।
আমার বিছানায় আমি তোকে ঘুমোতে দিয়েছি!বলল রন।
তোমার খুব দয়া দয়ালু প্রভু … রন-এর দিকে হামাগুড়ি দিয়ে এগোলো পেট্টিগ্রু, ওরা আমাকে মেরে ফেলুক তুমি নিশ্চয়ই সেটা হতে দেবে না আমি তো তোমারই ইঁদুর ছিলাম ভালো পোষা
পিটার, তুমি যদি মানুষের চেয়ে ভালো ইঁদুর হয়ে থাক তাহলে গর্ব করার মতো কিছু নেই, কর্কশ কন্ঠে বলল ব্ল্যাক। রন, তখনও ব্যথায় কাতরাচ্ছে, ভাঙা পাটা পেট্টিগ্রুর নাগালের বাইরে নিয়ে এলো অনেক কষ্টে। আবার হাঁটু ভেঙে পড়ল পেট্টিগ্রু, দুলতে দুলতে সামনে গেল এবং হারমিওন-এর পোশাকের কোণাটা ধরে ফেলল।
মিষ্টি মেয়ে বুদ্ধিমতি তুমি–তুমি নিশ্চয়ই এটা হতে দেবে না। আমাকে সাহায্য কর
ওর মুঠো থেকে কাপড়টা টেনে নিল হারমিওন এবং দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়াল, তখনও ওকে দেখাচ্ছে ভীতসন্ত্রস্ত।
হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল পেট্টিগ্রু, কাঁপছে কোন নিয়ন্ত্রণ নেই, এবার হ্যারির দিকে মাথাটা ঘোরালো সে।
হ্যারি হ্যারি … তুমি একেবারে তোমার বাবার মতো দেখতে একেবারে তারই মতো
কোন সাহসে তুমি হ্যারির সঙ্গে কথা বলছ? গর্জন করে উঠল ব্ল্যাক। কোন সাহসে তুমি ওর সামনে দাঁড়াও? কোন সাহসে ওর সামনে জেমস-এর কথা বলছ?
হ্যারি, ফিসফিস করে বলল পেট্টিগ্রু, ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে। দুহাত বাড়ানো, হ্যারি, জেমস থাকলে এভাবে আমাকে মারতে দিত না জেমস বুঝত ব্যাপার ও আমাকে ক্ষমা করত
ব্ল্যাক এবং লুপিন দুজনেই সামনে এগিয়ে এলো, পেট্টিগ্রুর কাঁধ ধরে ছুঁড়ে ফেলে দিল ওকে মেঝেতে। ওখানে বসে ও, ভয়ে কাঁপছে থর থর করে, নিষ্পলক তাকিয়ে রয়েছে ওদের দিকে।
তুমি ভন্ডেমর্ট-এর কাছে লিলি আর জেমসকে বেঁচে দিয়েছিলে, বলল ব্ল্যাক, কাঁপছে সেও, তবে রাগে। এটা অস্বীকার করতে পার?
কেঁদে ফেলল পেট্টিগ্রু। বীভৎস্য একটা দৃশ্য, একটা বেটপভাবে বেড়ে ওঠা বড়সড় টেকো শিশু মেঝেতে পড়ে রয়েছে ভীতসন্ত্রস্ত।
সাইরিয়াস, সাইরিয়াস, আমার আর কী করার ছিল? দি ডার্ক লর্ড তোমার কোন ধারণাই নেই ওর এমন অস্ত্র রয়েছে যে ভাবতেও পার না আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, আমি কখনই রেমাস, জেমস এবং তোমার মতো সাহসী ছিলাম না। আমি কখনই এটা করতে চাইনি … কিন্তু সেই যার নাম নেয়া যায় না আমাকে বাধ্য করেছে–
মিথ্যে কথা বলো না! চিৎকার করে উঠল ব্ল্যাক। জেমস এবং লিলির মৃত্যুর এক বছর আগে থেকে তুমি ওকে তথ্য পাচার করে আসছিলে! তুমি ওর চর ছিলে!
সে–আমার সমস্ত ভাবনা, সবকিছু দখল করে ফেলছিল! হাঁপিয়ে উঠল পেডি। ওকে অগ্রাহ্য করে কী লাভ হতো?
এ পর্যন্ত যত জাদুকর-এর জন্ম হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে শয়তান যে, তাকে অগ্রাহ্য করে কী হতো? বলল ব্ল্যাক, চোখেমুখে ওর আগুন জ্বলছে। শুধু নিরপরাধ মানুষের জীবন, পিটার!
তুমি বুঝতে পারছ না! মিনমিনে গলায় বলল পেট্টিগ্রু। ও আমাকে মেরে ফেলবে!
তাহলে তোমার মরে যাওয়াই উচিত ছিল! ব্ল্যাক গর্জন করে উঠল। বন্ধুদের সঙ্গে বেঈমানি করার চেয়ে মরে যাওয়াই উচিত ছিল, আমরা যেমন তোমার বেলায় করতাম!
পাশাপাশি কাঁধে কাঁধ ঠেকিয়ে দাঁড়াল ব্ল্যাক এবং লুপিন, জাদুর কাঠি তোলা।
তোমার বোঝা উচিত ছিল, শান্ত স্বরে বললেন লুপিন। যদি ব্ল্যাক তোমাকে মারে, তাহলে আমরা মারব। গুড বাই, পিটার।
দুহাতে মুখ ঢাকল হারমিওন, দেয়ালের দিকে ফিরে দাঁড়াল।
না! চিৎকার করল হ্যারি। দৌড়ে সামনে এলো, পেট্টিগ্রুর সামনে দাঁড়াল জাদুর কাঠির দুটোর মুখোমুখি। তোমরা ওকে মারতে পার না, এক নিশ্বাসে বলল সে। তোমরা পার না।
ব্ল্যাক এবং লুপিন দুজনেই হতবাক।
হ্যারি, নরকের এই কীটটার জন্যই আজ তোমার বাবা-মা বেঁচে নেই, বলল ব্ল্যাক। এই নোংরা জীবটা তোমাকেও মারতে চেয়েছিল এবং তাতে তার হৃদয় একটু কাঁপেনি। ওর কথা শুনেছো। তোমাদের পুরো পরিবারের চেয়ে ওর কাছে ওর নোংরা গায়ের চামড়াটার মূল্য বেশি ছিল।
আমি জানি, হাঁপাতে হাঁপাতে বলল হ্যারি। ওকে আমরা প্রাসাদে নিয়ে যাব। ডিমেন্টারদের হাতে তুলে দেব। আজকাবানে যেতে হবে ওকে… এখন মেরে ফেল না।
হ্যারি! রুদ্ধ স্বরে বলল পেট্টিগ্রু, জড়িয়ে ধরল হ্যারির হাঁটু। তোমাকে তোমাকে ধন্যবাদ-এটা আমার প্রাপ্যের চেয়ে বেশি–ধন্যবাদ।
আমার কাছ থেকে দূরে সর, থুথু ফেলল হ্যারি, ঘৃণায় বিরক্তিতে ছুঁড়ে ফেলে দিল ওর হাত। তোমার জন্য আমি এটা করছি না। আমি শুধু চাই না তোমার মতো একটা নরকের কীটের জন্যে আমার বাবার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধু খুনি হবে।
কেউই নড়ল না। পেট্টিগ্রু ছাড়া কেউ কোন শব্দও করল না, বুকটা আঁকড়ে ধরে আছে, ঘন ঘন শ্বাস ফেলছে। ব্ল্যাক এবং লুপিন পরস্পরের দিকে তাকাল। তারপর, এক সাথে নামিয়ে আনল ওদের জাদুর কাঠি।
একমাত্র তোমারই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রয়েছে হ্যারি, বলল ব্ল্যাক। কিন্তু একবার ভাব ভাব ও কি করেছে।
ওকে আজকাবানে যেতে হবে, পুনরাবৃত্তি করল হ্যারি। কেউ যদি ওই জায়গায় যাওয়ার জন্য উপযুক্ত হয় তাহলে সেই
ওর পেছনে দাঁড়িয়ে তখনও ঘন ঘন শ্বাস ফেলছে পেট্টিগ্রু।
ঠিক আছে, বললেন লুপিন। এক পাশে সরে দাঁড়াও হ্যারি।
দ্বিধা করছে হ্যারি।
আমি ওকে বেধে রাখছি, বললেন লুপিন। শুধু এই
সামনে থেকে সরে দাঁড়াল হ্যারি। এবার লুপিন-এর জাদুর কাঠি মাথা থেকে সরু রশি বেরিয়ে এলো, পরমুহূর্তে মেঝেতে পড়ে শরীর মোচড়াতে দেখা গেল পেট্টিগ্রুকে, হাত–পা বাধা মুখে কাপড়।
পিটার, তুমি যদি নিজেকে রূপান্তরিত করার চেষ্টা কর, হুমকি দিয়ে বলল ব্ল্যাক, ওর নিজের জাদুর কাঠি পেট্টিগ্রুর দিকে তাক করা, আমরা তোমাকে খুন করবো। ঠিক আছে হ্যারি?
মেঝেতে পড়া মানুষটাকে দেখে সম্মতিতে মাথা নাড়ল সে, যেন পেটি দেখতে পায়।
ঠিক আছে, বললেন লুপিন। রন, মাদাম পমফ্রের মতো ভালো করে ভাঙা হাড় সারাতে পারি না আমি, সে কারণে হাসপাতালে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তোমার পা ব্যান্ডেজ করে রাখাটাই সবচেয়ে ভালো হবে।
রন-এর দিকে দ্রুত এগিয়ে গেলেন তিনি ঝুঁকলেন, রন-এর পায়ে জাদুদণ্ড ছুঁয়ে বিড়বিড় করে বললেন, ফেরুলা। ব্যান্ডেজে মোড়া হয়ে গেল রন-এর পা, প্রিন্ট-এর সঙ্গে শক্ত করে বাধা। ওকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করলেন লুপিন, আলতো করে পায়ের উপরে ভর রাখল সে, কিন্তু ব্যথায় কাতরে উঠল না।
এটাই ভালো হয়েছে, বলল সে। ধন্যবাদ।
প্রফেসর স্নেইপ-এর কী হবে? বলল হারমিওন ছোট্ট করে।
ওর বিশেষ কোন ক্ষতি হয়নি, বললেন লুপিন, ঝুঁকে স্নেইপ-এর নাড়ি দেখলেন। তুমি একটু বেশি উৎসাহী ছিলে এখনও ঠাণ্ডা মেরে রয়েছে। প্রাসাদে না যাওয়া পর্যন্ত ওকে না জাগানোটাই সম্ভবত ভালো। এভাবেই ওকে নিয়ে যেতে পারি।
মবিলিকরপাস, বিড়বিড় করে বললেন লুপিন। যেন অদৃশ্য সুতায় বাধা ছিল স্নেইপ-এর কবজি, ঘাড় এবং হাঁটু, সোজা দাঁড়িয়ে গেলেন তিনি, অবশ্য মাথাটা ঝুলে আছে। মাটির কয়েক ইঞ্চি উপরে ঝুলে আছেন, আহত পা–টা ঝুলছে। অদৃশ্য হওয়ার জামাটা তুলে নিলেন লুপিন, নিজের পকেটে ঢুকিয়ে রাখলেন।
এবং আমাদের দুজনকে এটার সঙ্গে চেইন দিয়ে বেধে রাখা দরকার, বলল ব্ল্যাক পা দিয়ে পেটিকে গুঁতো মেরে। কোন ঝুঁকি নেয়া চলবে না।
আমি করছি, বললেন লুপিন। এবং আমাকেও বলল রন।
বাতাসের মধ্যে থেকে জাদু করে হাতকড়া বের করে আনল ব্ল্যাক; সোজা হয়ে দাঁড় করানো হলো পেডিগ্রুকে, বা হাত লুপিন-এর ডান হাতের সঙ্গে হাতকড়ায় বাধা, ডান হাত রন-এর বা হাতের সঙ্গে। পাথরের মতো ভাবলেশহীন রন-এর মুখ। স্ক্যাবার্স-এর সত্যিকারের পরিচয় পাওয়ার পর ব্যক্তিগতভাবে অপমানিত বোধ করছে সে। বিছানা থেকে লাফিয়ে নামল কুকশ্যাংকস, ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথ দেখাল, ওটার বোতল–ব্রাশ লেজটা উপরের দিকে তোলা।