মরুভূমির তীব্ৰ দাবদাহ। বাতাসের সঙ্গে আগুন ছুটছে এমন অবস্থা হামিদা বানু খেজুরগাছের নিচে বসে আছেন। খেজুরগাছ ছায়াদায়িনী বৃক্ষ না। রোদে হামিদা বানুর শরীর পুড়ে যাচ্ছে। তাঁর ইচ্ছা করছে হাম্মামখানার শীতল জলে শরীর ড়ুবিয়ে বসে থাকতে। যেখানে খাওয়ার পানি নেই, সেখানে হাম্মামে স্নানের চিন্তার বিলাসিতার অর্থ হয় না। হামিদা বানু নিজের ওপর বিরক্ত হচ্ছেন।
একটু দূরে হুমায়ূনের লোকজন বালি সরিয়ে মরুকূপের সন্ধান করছে। আজ দিনের মতো পানি আছে। রাতে পানি লাগবে। কোথায় পাওয়া যাবে পানি?
হুমায়ূন কিছুক্ষণ কুপের বালি সরানো দেখলেন। কুপের বালি এখন ভেজা ভেজা। এর অর্থ হয়তো পানি পাওয়া যাবে। স্ত্রীকে এই আনন্দসংবাদ দেওয়ার জন্য হুমায়ূন হামিদা বানুর কাছে গেলেন। তিনি কিছু বলার আগেই হামিদা বানু বললেন, একদিন আমার খুব বেদানা খেতে ইচ্ছা করছিল। আপনি বেদানার ব্যবস্থা করেছিলেন। আজ আমার দুটা ইচ্ছা। আপনি আমার ইচ্ছা পূরণ করুন।
হুমায়ূন চিন্তিত গলায় বললেন, কী কী ইচ্ছা?
হামিদা বানু বললেন, প্রথম ইচ্ছা আমি স্নান করব। কতদিন গায়ে পানি দিই না। শরীর থেকে বিষাক্ত দুৰ্গন্ধ আসছে। দ্বিতীয় ইচ্ছা, আজ একটা তরমুজ আমি একা হাম হাম করে খাব। এই দুটা ইচ্ছা পূরণ করতে না পারলে তৃতীয় ইচ্ছা অবশ্যই পূর্ণ করতে হবে।
তৃতীয় ইচ্ছাটা কী?
তৃতীয় ইচ্ছা হচ্ছে, আপনি আমার পাশে হাত ধরে বসে থাকবেন। রোদে দাঁড়িয়ে কূপের বালি তোলায় তদারকির কিছু নেই।
হুমায়ূন স্ত্রীর পাশে বসেছেন, তখনই খবর এল যোধপুরের রাজা মালদেব দূত পাঠিয়েছেন। দূত সঙ্গে উপহার নিয়ে এসেছেন। উপহারের মধ্যে আছে ত্রিশ মশক সুপেয় পানি, হুমায়ূনের পছন্দের ফল তরমুজ এবং হামিদা বানুর সেবার জন্য একজন বাঁদি যে সন্তানপ্রসবের জটিল বিষয়টিতেও অভিজ্ঞ।
হুমায়ূন চার মশক পানি হামিদা বানুর স্নানের জন্যে বরাদ্দ করলেন। তরমুজ আলাদা করা হলো। স্নান শেষে হামিদা বানুকে তরমুজ দেওয়া হবে।
মালদেবের দূত হুমায়ূনকে কুর্নিশ করে বললেন, রাজা মালদেব তাঁর রাজ্যে আপনাকে নিমন্ত্রণ করছেন। আপনি যতদিন ইচ্ছা মালদেবের আতিথ্য গ্ৰহণ করবেন। শের শাহ’র বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চাইলে আপনাকে সবরকম সামরিক সাহায্য দেওয়া হবে।
হুমায়ূনের আনন্দের সীমা রইল না। তিনি মালদেবের দূতকে জানালেন, আজ দিনের মধ্যেই তিনি রওনা হবেন।
দূত বলল, আপনার আগমনের সুসংবাদ আমি রাজা মালদেবকে জানাতে এক্ষুনি রওনা হব। আপনার স্ত্রী অসুস্থ। আপনি ধীরেসুস্থে আসুন।
হুমায়ূন দূতকে উপহার দিলেন রত্নবসানো একটি খঞ্জর।
হামিদা বানুর সেবার জন্যে যে বাঁদি পাঠানো হয়েছে তার নাম মিশা।
রুক্ষ কঠিন চেহারা। চোখে মায়ার লেশমাত্র নেই।
মালদেবের দূতের প্রস্থানের পরপরই মিশা হামিদা বানুকে বলল, আপনি আপনার স্বামীকে বলুন তিনি যেন কিছুতেই মালদেবের কাছে না যান। সেখানে শের শাহ্’র লোকজন বসে আছেন। আমাদের উচিত এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে অমরকোটের দিকে রওনা হওয়া। অমরকোটের রাজার বয়স অল্প এবং তিনি দয়ালু।
হামিদা বানু বললেন, তুমি মালদেবের পাঠানো বাঁদি। তুমি তাকে সাহায্য করবে। আমাদের সাহায্য করতে চোচ্ছ কেন?
মিশা বলল, আমি রাজপুত নারী। সম্রাট হুমায়ূন রাজপুত রানী কর্ণাবতীর জন্যে কী করেছিলেন সেই গল্প জানি। আমি একজন বীরের পক্ষ নেব নাকি কুচক্ৰী কাপুরুষ মালদেবের পক্ষ নেব?
হামিদা বানু বললেন, আমি স্নান করব। তরমুজ খাব। তারপর রওনা হব।
মিশা বলল, না। আমাদের হাতে সময় নেই।
হুমায়ূন অমরকোটে এসেছেন শুনে অমরকোটের রাজা নিজে তাঁকে অভ্যর্থনা করতে এগিয়ে এলেন। রাজকীয় পন্থায় কুর্নিশ করতে-করতে বললেন, আমার পিতা জীবিত থাকলে তিনি নিজে এসে আপনাকে নিয়ে যেতেন। তিনি গত বছর যুদ্ধে নিহত হয়েছেন।
হুমায়ূন বললেন, আপনি হোসেনের পুত্র? আপনার পিতার মৃত্যুসংবাদে আমি ব্যথিত হলাম।
আমি ব্যথিত হচ্ছি। আপনার দৈন্যদশা দেখে।
হুমায়ূন বললেন, আমাকে দেখে কেউ ব্যথিত হলে আমি নিতে পারি। কেউ করুণা দেখালে সেটা নিতে পারি না।
আপনাকে করুণা করার স্পর্ধা আমার নেই। আমি অতি বিনয়ের সঙ্গে বলছি। আপনার স্ত্রীর সন্তান না হওয়া পর্যন্ত আপনি আমরকোটে থাকবেন। আমার পক্ষে সম্ভব সব সুযোগ-সুবিধা আপনি পাবেন।
হুমায়ূন বললেন, আমার প্রতি আপনার এই বদান্যতার কারণ জানতে পারি?
রাজা বললেন, আমি যা করছি আমার বাবা বেঁচে থাকলে তা-ই করতেন। বাহাদুর শাহ’র বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সময় আমার বাবা আপনার সঙ্গে ছিলেন।
হুমায়ূন বললেন, আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। পরম করুণাময়ের করুণাধারা আপনার ওপর বর্ষিত হোক—এই শুভ কামনা।
অমরকোটের হাম্মামখানায় হামিদা বানু গলা পর্যন্ত পানিতে ডুবিয়ে বসে আছেন। মিশা তার গা ডালে দিচ্ছে। হাম্মামঘরেই কাটা তরমুজ রাখা আছে। হামিদা বানুর দৃষ্টি সেদিকে যতবার যাচ্ছে ততবারই তার চোখ ভিজে উঠছে। তার পেটের সন্তান খুব নড়াচড়া করছে। অকরুণ এই পৃথিবীতে আসার জন্যে সে ব্যস্ত হয়েছে। তার জন্যে কী অপেক্ষা করছে কে জানে!
১৫ অক্টোবর ১৫৪২ সালে এই অমরকোটেই হামিদা বানু একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। তার নাম রাখা হয় আকবর। পৃথিবীর ইতিহাসে এই আকবর তার স্থান করে নেন ‘আকবর দ্য গ্রেট’ হিসেবে। (আকবরের জন্মের তারিখ নিয়ে বিতর্ক আছে। আবুল ফজলের দেওয়া তারিখের সঙ্গে জওহর আবিতাবিচির তারিখের অমিল আছে। জওহর আকবরের জন্মের সময় উপস্থিত ছিলেন। তার দেওয়া তারিখ সঠিক হওয়ার কথা। বলা হয়ে থাকে জাদুটোনার হাত থেকে রক্ষার জন্যে আকবরের আসল জন্মক্ষণ গোপন রাখা হয়েছে। হুমায়ূন জাদুটোনায় প্রবল বিশ্বাসী ছিলেন।)
পুত্রসন্তানের জন্মসংবাদ হুমায়ূনকে দেন। জওহর আবতাবচি। হুমায়ূন আবতাবচিকে বলেন, তোমার কাছে আমি যে মৃগনাভিটি গচ্ছিত রেখেছি সেটা নিয়ে আসো, আর একটা ছুরি আনো।
জওহর আদেশ পালন করলেন। হুমায়ূন নিজের হাতে মৃগনাভি ভাগ করে তার সঙ্গী আমীরদের হাতে দিয়ে বললেন, আজ আমার চরম দুঃসময়। আমি পুত্রের জন্মের আনন্দ করব, আপনাদের সবাইকে উপহার দেব, সে সামর্থ্য আমার নেই। মৃগনাভির একটি করে টুকরা আপনাদের দিলাম। আপনারা প্রার্থনা করুন যেন আমার পুত্রের যশ মৃগনাভির সৌরভের মতো ছড়িয়ে পড়ে।
কান্দাহার দুর্গে মীর্জা হিন্দালকে গৃহবন্দি করা হয়েছে। কামরানের হঠাৎ ধারণা হয়েছে তার এই ভাই হুমায়ূনের প্রতি অনুগত। সুযোগ পেলেই সে হুমায়ূনের সঙ্গে যোগ দেবে। হিন্দালকে ভয় দেখানোর জন্যে কামরান চারজন সাধারণ প্ৰজাকে ধরে এনে ঘোষণা করলেন, এরা হুমায়ূনের প্রতি অনুরক্ত। শাস্তি হিসেবে এদের চোখ উৎপাটন করা হবে। চোখ উৎপাটনের এই কাজটা করব আমি নিজে।
তা-ই করা হলো। এই চারজনের বিকট চিৎকার যেন মীর্জা হিন্দাল শুনতে পারেন। সেই ব্যবস্থাও করা হলো।
চোখ উৎপাটিত চারজনকে রাখা হলো মীর্জা হিন্দালের আশপাশে।
কামরান মীর্জা আসকারিকে পাঠালেন হুমায়ূনকে ধরে আনার জন্যে।
জানুয়ারি মাসের শুরু।
শিশুপুত্র এবং সঙ্গীদের নিয়ে হুমায়ূন আবার পথে নেমেছেন। খবর পেয়েছেন জালাল খাঁ নিজে তার বাহিনী নিয়ে এগিয়ে আসছেন। পথে নামা ছাড়া উপায় কী? প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। শিশুপুত্রকে বুকে জড়িয়ে হামিদা বানু স্বামীর পাশে পাশে যাচ্ছেন। পশ্চিম দিক থেকে বাতাসের ঝাপ্টা আসছে। ঘোড়া সেদিকেই যাচ্ছে। হামিদা বানু বললেন, আমি জানতে চাই আমি কোথায় যাচ্ছি?
হুমায়ূন জবাব দিলেন না, কারণ তাঁর কাছে জবাব নেই। তিনি নিজেও জানেন না কোথায় যাচ্ছেন।
হামিদা বানু বললেন, আর কিছুক্ষণ এভাবে চললে আমার ছেলে শীতে জমে যাবে।
হুমায়ূন যাত্রাবিরতির আদেশ দিলেন। অমরকেটের রাজা উপহার হিসেবে ভেড়ার চামড়া জোড়া দিয়ে তৈরি একটি তাঁবু হামিদা বানুকে দিয়েছেন। প্রচণ্ড শীতেও এই তাঁবুর ভেতরটা উষ্ণ থাকে।
তাঁবু খাটানোর হয়েছে। শিশুপুত্রকে বুকে নিয়ে হামিদা বানু তাঁবুর ভেতর ঢুকেছেন। তাঁবুর সামনে আগুন করা হয়েছে। হুমায়ূন আগুনে হাত-পা গরম করার চেষ্টা করছেন। শীতে কাহিল অচেনা একটা পাখি আগুনের দিকে পায়ে পায়ে এগিয়ে আসছে। মানুষের ভয়ে সে এখন আর ভীত না। হুমায়ূন অনেকখানি সরে পাখিকে জায়গা করে দিলেন। তখনই খবর এল। হুমায়ূনের ভাই মীর্জা আসকারি বিশাল বাহিনী নিয়ে হুমায়ূনকে ধরে নিয়ে যেতে আসছেন।
হুমায়ূন হামিদা বানুকে সঙ্গে নিয়ে সঙ্গীদের নিয়ে পালিয়ে গেলেন। তাঁবুর ভেতর আছে শিশু আকবর এবং ধাই মিশা। তাঁবুর বাইরে অপেক্ষা করছে জওহর আবিতাবচি। হুমায়ূন জওহর আবিতাবচিকে দায়িত্ব দিয়ে গেলেন সে যেন নিজের হাতে শিশু আকবরকে মীর্জা আসকারির হাতে তুলে দেয় এবং শিশুর জীবন ভিক্ষা চায়।
মীর্জা আসকারি তাঁবুর সামনে উপস্থিত। তাঁবুর ভেতর থেকে শিশুর কান্নার আওয়াজ আসছে। তাঁবুর সামনে মাথা নিচু করে জওহর আবতাবচি দাঁড়িয়ে আছে। আসকারি বললেন, তাঁবুর ভেতরে কে?
জওহর বলল, মহান সম্রাট হুমায়ূনের পুত্র শাহজাদা আকবর।
হুমায়ূন কোথায়?
আমি জানি না জনাব।
কোনদিকে গেছেন এটা নিশ্চয়ই জানো?
হ্যাঁ জানি, কিন্তু আপনাকে বলব না।
শিশুকে নিয়ে আসো।
জনাব আমি নিজের প্রাণের বিনিময়ে এই শিশুর জীবন ভিক্ষা চাচ্ছি।
তোমাকে বলছি শিশুটিকে নিয়ে আসতে। হুকুম পালন করো।
জওহর শিশু আকবরকে কোলে করে নিয়ে এল।
আসকারি শিশুকে নিয়ে কান্দাহার চলে গেলেন।
কান্দাহার দুর্গে সুন্দর একটি নাটক অভিনীত হলো। আসকারি তাঁর স্ত্রীকে (ইনোলা বেগম) ডেকে পাঠিয়ে বললেন, এই শিশুটির নাম আকবর। তার বাবা-মা তাকে ফেলে পালিয়ে গেছেন। এই শিশুটির সব দায়িত্ব তোমাকে দিলাম। সে যেন বাবা-মা’র অভাব কোনোদিন বুঝতে না পারে।
ইনাহা বেগম পরম মমতায় শিশু আকবরকে কোলে তুলে নিলেন।
আচার্য হরিশংকর মেঝেতে উবু হয়ে বসে আছেন। তাঁর বা পায়ের মাংস খুলে খুলে পড়তে শুরু করেছে। তিনি ভীত চোখে একবার তাকাচ্ছেন পায়ের দিকে একবার তাকাচ্ছেন খাটে বসা আকিকা। বেগমের দিকে। আজ সে একা এসেছে। তার বান্ধবী অম্বা আসে নি। সে সব দিন আসে না।
আকিকা বেগম বলল, আপনার কুণ্ঠ হয়েছে?
না। বাত রোগ। খারাপ বাত রোগে এ রকম হয়।
বাত রোগ না, আপনার কুষ্ঠ হয়েছে। এর চিকিৎসা আমি জানি।
কী চিকিৎসা?
পা আগুনে পুড়ানো। বড় করে আগুন করুন। সেই আগুনে আপনার পা ঢুকিয়ে দিন।
চুপ।
আমাকে ধমকাবেন না। আমি হিন্দুস্থানের সম্রাট হুমায়ূনের মেয়ে। এখন বলুন আমার বাবা কোথায়?
আমি জানি না।
কেন জানেন না?
হরিশংকর ঘর থেকে বের হলেন। গঙ্গার তীরে কিছুক্ষণ বসে থাকবেন। ডান পা গঙ্গার পানিতে ড়ুবিয়ে রাখবেন। যে পবিত্র গঙ্গা স্পর্শ করে থাকে, তার কাছে প্রেতিযোনি আসতে পারে না।
হরিশংকর গঙ্গায় ডান পা ড়ুবিয়ে ঘাটে বসে আছেন। গঙ্গার পানি গরম, কিন্তু তার গায়ের ওপর দিয়ে হিমশীতল বাতাস বইছে। তিনি একমনে শব্দ করে রাম নাম আবৃত্তি করছেন। প্রেতিযোনি রাম নামে ভীত হয়।
আমার বাবা সম্রাট হুমায়ূন কোথায়?
হরিশংকর চমকে তাকালেন। তাঁর পেছনেই আকিকা বেগম। আকিকা বেগমের হাত ধরে আছে অম্বা। দু’জনের মুখই হাসি হাসি।
হুমায়ূন তুষারঝড়ে পড়েছেন। ঘোড়া চলতে পারছে না। চারটা ঘোড়াকে গোল করে দাঁড় করিয়ে হুমায়ূন তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন। ঘন হয়ে তুষার পড়ছে। এক হাত দূরের কিছুও দেখা যাচ্ছে না।
হঠাৎ হুমায়ূনকে চমকে দিয়ে হামিদা বানু শব্দ করে হেসে ফেললেন।
হুমায়ূন বললেন, হাসছ কেন?
আমার ছেলেটা তাঁবুর ভেতর গরমে আরাম করে আছে। এই ভেবে শান্তি লাগছে। শান্তির আনন্দেই হাসছি। এখন আমাকে একটা শের শোনান। শের শুনতে ইচ্ছা করছে।
তুমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছ?
শের না শুনলে পাগল হয়ে যাব।
কাছেই কোথায় যেন আগুন জ্বলছে। এটা কি চোখের কোনো ভুল? মানুষ মরীচিকা দেখতে অভ্যস্ত। মরুভূমিতে পানির অভাব হলে চোখের সামনে নকল পানি দেখা যায়। শীতে পর্যুদস্ত হয়েছেন বলেই কি নকল আগুন!
জাহাঁপনা!
কে?
আমি বৈরাম। জঙ্গলের ভেতর একটা ঘর পাওয়া গেছে। আমি আগুন জ্বলিয়েছি। আপনারা আসুন। খুব সাবধান। বরফ জমে সব পিচ্ছিল হয়ে আছে।
হুমায়ূন স্ত্রীর হাত ধরে এগুচ্ছেন। যত দ্রুত সম্ভব আগুনের পাশে দাঁড়াতে হবে। ঝড়ের গতি আরও বাড়ছে।
হুমায়ূন হতাশ গলায় বললেন, হামিদা বানু, আমি এই জীবন আর টানতে পারছি না। সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সব ছেড়েছুড়ে পবিত্র মক্কা শরীফে চলে যাব।
হামিদা বানু বললেন, পরাজিত মানুষের মতো কথা বলছেন?
আমি তো পরাজিত মানুষই। পারস্যের ভেতর দিয়ে আমি মক্কা চলে যাব। আমার সঙ্গে কাউকে যেতে হবে না। আমি একা যাব। বৈরাম খাঁ।
জাহাঁপনা, আমি আপনার কথা শুনছি।
পারস্য-সম্রাট কি তাঁর রাজ্যের ভেতর দিয়ে আমাকে মক্কা যেতে দেবেন?
অবশ্যই দেবেন। তবে এই চিন্তা। আপাতত বন্ধ রাখুন। আসুন আগুনের পাশে যাই।