১৯. দ্য হাংগেরিয়ান হর্নটেল
সিরিয়স জানিয়েছে ২২ নভেম্বর গভীর রাতে গ্রিফিন্ডর টাওয়ারে আসবে। তারপর ওর সঙ্গে মুখোমুখি আলাপ আলোচনা করবে। সেই ভাবনা গত পনের দিন ওর মনকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। চ্যাম্পিয়ন হবার আকস্মিক মানসিক ধকলটা একটু একটু করে কমে আসছে। অজাচিত ভয়ও কমছে। তবে ওর মন যে তোলপাড় করে চলছে, মানসিকভাবে এতটা দুর্বল সে কখনো হয়নি। ক্লিারিনের বিরুদ্ধে কিডিচ ম্যাচের আগের দূর্বলতার চেয়েও আরও যেন বেশি মানসিক দুর্বলতা। সকল সময়ই কি এ রকম ঝড়–ঝঞ্ঝা ওকে বয়ে বেড়াতে হবে এবং এভাবেই কি ওর জীবন শেষ হয়ে যাবে?
শত শত শত্রু–মিত্রদের সামনে অজানা–শক্ত জাদুপ্রদর্শন করার ব্যাপারে সিরিয়স কতটা সাহায্যে করতে পারবে ও জানে না। কিন্তু এই মুহূর্তে ওর এক বন্ধু সামনে এসে দাঁড়ালে হ্যারি সব রকমের দুর্বলতা, অসহায়তা কাটিয়ে উঠতে পারে। সিরিয়সের সঙ্গে ওর একান্তে আলাপ–আলোচনা। সেই সময় দলছুট কেউ ঘরে থাকলে অসুবিধে হবার সম্ভাবনা… হারমিওনের সঙ্গে কথা বলে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
ইতিমধ্যে ডেইলি ফেটে রিটার প্রতিবেদন ওকে নিদারুণ এক অস্বস্তিতে ফেলেছে রিটা আগামী টুর্নামেন্ট সম্বন্ধে বলতে গেলে বিশেষ কিছুই লেখেনি। যা লিখেছে, সবই হ্যারিপটার আর ওর বৈচিত্র্যময় জীবন সম্বন্ধে। সেডরিক বা দূরের দুই বিদেশী স্কুল সম্বন্ধেও বিশেষ কিছু লেখেনি। প্রায় দিন দশেক আগে ডেইলি প্রফেটের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। তার কথা মনে হলেই হ্যারির পেটের মধ্যে শুধু জ্বলন নয়… অপমানেরও জ্বালা। রিটার যা মনে এসেছে তাই লিখেছে প্রতিবেদনে।
আমার মনে হয় বাবা-মার কাছ থেকে আমি শক্তি পেয়েছি, আমি জানি তারা যদি বেঁচে থাকতেন আজকের হ্যারিপটারকে দেখে তাদের গর্বে বুক ফুলে উঠত… হ্যাঁ, মাঝে মাঝে রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে তাদের জন্য আমি কাঁদি, এ কথা স্বীকার করতে আমি লজ্জা পাই না… আমি জানি টুর্নামেন্টের সময় কোন কিছু আমাকে আঘাত করতে পারবে না। কারণ তারা যেখানেই থাকুন না কেন আমাকে রক্ষা করবেন।
এখানেই শেষ নয় বিটা স্কীটার আরও খানিকটা এগিয়ে গিয়ে লিখেছে, অনেকের কাছে হ্যারি সম্পর্কে সে কথাবার্তা বলেছে।
হ্যারি শেষ পর্যন্ত হোগার্টে ভালোবাসা পেয়েছে। ওর ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু কলিন ক্রিভ বলেছে, হ্যারিকে কখনো দেখা যায় না যে ও মাগল বংশে জন্মগ্রহণকারী অতি সুশ্রী হারমিওন গ্রোর ছাড়া একা চলাফেরা করছে। মাগল বংশের রূপসী মেয়েটি হ্যারির মতই হোগার্টের অন্যতম সেরা ছাত্রী।
ডেইলি প্রফেট প্রতিবেদন ছাপার পর স্লিদারিন হাউজের ছেলে–মেয়েরা ওর জীবন এক রকম আরও অতিষ্ঠ করে তুলেছে। ওকে দেখলেই নানা মন্তব্য করে
–পটার তোমার একটা রুমাল চাই? যদি তুমি চেহারা বদলের পরীক্ষায় কেঁদে ফেল?
–কবে থেকে তুমি স্কুলের সেরা ছাত্র হলে? এই স্কুল কী তুমি আর লংবটম করেছ?
–হে, হ্যারি!
–হাঁ, ঠিক আছে, হ্যারি চেঁচিয়ে ওঠে, যখন ও একা একা করিডলরে ঘোরাফেরা করে। আমি আমার মৃত মায়ের জন্য কাঁদি, হ্যাঁ আমি আরও কিছু করতে চাই।
–না তুমি তোমার পালক হাত থেকে ফেলে দিয়েছ।
–চো বলল, হ্যারির গাল লাল হয়ে গেল!
–ঠিক বলেছ, দুঃখিত চো, হ্যারি মাটি থেকে কলমটা তুলতে তুলতে বলল।
–মঙ্গলবারের জন্য আমার শুভ কামনা রইল, চো বলল আমি হলফ করে বলতে পারি তুমি ভাল করবে।
কথাটা শুনে হ্যারির নিজেকে অসম্ভব বোকা মনে হয়।
হারমিওন আসে হ্যারির অস্বস্তি ও তীক্ততা শেয়ার করতে। কিন্তু ও চুপ করে রইল নিরব দাঁড়িয়ে থাকা ছেলে–মেয়েদের দেখে। হ্যারি হারমিওনের অবস্থাটা নিয়ন্ত্রণে রাখার কুশলতা দেখে আশ্চর্য হয়ে যায়।
–দারুণ সুন্দর? হ্যারি? প্যানসি পারকিনসন জোরে জোরে বলল। রিটার প্রতিবেদন প্রকাশিত হবার পর ওর এই প্রথম হারমিওনের সঙ্গে দেখা। একটা ডোরাকাটা কাঠ বিড়ালের কি বিশ্লেষণ করছে ও।
–ওদের দিকে তাকিও না, ওরা মূর্খ… অবজ্ঞা কর; হারমিওন উঁচু করে অকম্পিত স্বরে বলল। উপেক্ষা কর হ্যারি।
কিন্তু হ্যারি কিছুই উপেক্ষা করতে পারছেনা। স্নেইপের সেই ক্লাস শেষে আটক থাকার পর রনের সঙ্গে আর একটা কথাও ওর হয়নি।
হারমিওন চায় না ওরা কথা বন্ধ করে থাকুক। দুজনেরই ওপর ও রেগে আছে। কথা না বলার কী আছে?
হ্যারি বলে, আমার কোনও দোষ নেই, রন ইচ্ছে করে আমার সঙ্গে কথা বলে না, দেখলেই মুখ ফিরিয়ে নেয়। হ্যারি ওর সঙ্গে কথা বলবে যদি রন মেনে নেয় গবলেট অব ফায়ারে ও নাম দেয়নি। মিথ্যুক বলার জন্য ক্ষমা চায়, দুঃখ প্রকাশ করে।
–আমি ওর সঙ্গে ঝগড়া করিনি? হ্যারি একয়ের মত বলল। এটা ওর সমস্যা।
–তুমি ওকে মিস করছো? হারমিওন অধৈর্য হয়ে বলে, কিন্তু আমি জানি ও তোমাকে মিস করছে।
–না তোমার ভুল ধারণা।
***
টুর্নামেন্টের প্রথম কাজের আগে ঠিক হল থার্ড–ইয়ার ও তার উর্ধ্বের ছেলে মেয়েরা হগসমেড গ্রামে যাবার অনুমতি পাবে।
হারমিওন বলল–ভালই হল, অন্তত কয়েক ঘণ্টার জন্য তুমি ক্যাসল থেকে মুক্তি পাবে। একঘেয়েমী থেকে বাঁচবে। অবশ্য সে রকম ও কিছু চাইছে না।
–রন যাবে না? হ্যারি প্রশ্ন করল–তুমি ওর সঙ্গে যেতে চাও না?
হারমিওনের কথাটা শুনে গাল লাল হয়ে যায়। বলল–না তা নয়। ভাবছিলাম ওর সঙ্গে থ্রি ক্রম স্টিকসে দেখা তো হবে।
–না, হ্যারি–সোজাসুজি বলল।
–ওহ হ্যারি তুমি বোকার মতো কথা বলছ।
–আমি যাব, কি আমি রনের সঙ্গে কথা বলবো না, আমি। শ্য হবার আলখেল্লা পরে ঘুরে বেড়াব।
–ঠিক আছে তাই পরবে–তাহলে…। হারমিওন তিক্তভাবে বলল–তুমি আলখেল্লা পরলে তোমার সঙ্গে কথা বলবো কি করে? আমি কি করে বুঝব কার দিকে তাকাচ্ছি?
হ্যারি যা ভাবে তাই করে। গটগট করে ডরমেটরিতে গিয়ে আলখেল্পটা পরে নিচে এলো। তারপর দুজনে হগসসেডে চলল।
হ্যারির অদৃশ্য হয়ে হারমিওনের সঙ্গে চলার দারন মজা লাগল। মন হালকা হয়ে গেল–যেন ও হাওয়াতে ভাসছে। ও দেখল দলে দলে ছেলেমেয়েরা হৈ হৈ করতে করতে গ্রামের দিকে চলেছে। সকলেই সেডরিক ডিগরির ব্যাজ পরেছে। ওরা সেডরিককে সাপোর্ট করছে। তবে সুখের কথা ওদের কারও মুখে হ্যারি আর ওই স্টুপিড রিটার প্রতিবেদনের কথা নেই।
হারমিওন যেতে যেতে রাগতঃ স্বরে বলল–লোকেরা সব আমার দিকে তাকাচ্ছে। হানিডিউকস থেকে আইসক্রিম খেয়ে বেরিয়ে এসে দুজনে রাস্তায় দাঁড়াল–ওরা মনে করছে আমি পাগল। নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলছি।
–তাহলে বেশি মুখ খুলবে না….।
–প্লিজ তুমি আলখেল্লাটা খুলে ফেল। এখানে মনে হয় কেউ তোমাকে আজে বাজে কথা বলে মেজাজ খারাপ করে দেবে না।
–হ্যাঁ যা বলেছ, পেছনে তাকিয়ে দেখ।
রিটা স্কীটার আর ওর ফটোগ্রাফার বন্ধু তখন প্ৰি ক্ৰমস্টিক পাব থেকে বেরিয়েছে। ওরা ফিস ফিস করে কথা বলছে। ওরা হারমিওনের দিকে না–তাকিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। হ্যারি অদৃশ্য… রিটা ওর কুমিরের চামড়ার ব্যাগ দোলাতে দোলাতে চলেছে… ধাক্কা লেগে যেতে পারে তাই ও হানিডিউকের দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়াল।
ওরা চলে গেলে হ্যারি বলল–ও মনে হয়, এই গ্রামে থাকে, বাজি ধরছি ও আমাদের প্রথম টাস্ক দেখতে আসবে। বলার সাথে সাথে ওর পেটের ভেতরটা অজানা ভয়ে গুড় গুড় করে উঠল। ওর অবস্থাটা হারমিওনকে ও জানালো না। প্রথম কাজের ব্যাপারে হ্যারি, হারমিওনের সঙ্গে কোন কথাই বলেনি। ওর একটা ধারণা জন্মেছে হারমিওন টুর্নামেন্ট সম্বন্ধে কিছু আলোচনা করতে চায় না।
হারমিওন বলল–বাঁচা গেছে, ও গেছে। তারপর হাইস্ট্রিটের দিকে তাকিয়ে বলল–থ্রি ক্রমস্টিকে গিয়ে বাটার বিয়র খেলে হয় না? বেশ ঠাণ্ডা লাগছে, তাই না? যাকগে তোমার রনের সঙ্গে কথা বলতে হবে না। হ্যারি চুপ করে থাকা যেন ওর সহ্য হচ্ছে না। মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।
থ্রি ব্রুমস্টিকে তিলধারণের স্থান নেই। বেশির ভাগই হোগার্টের ছাত্র–ছাত্রীরা দখল করে বসে আছে। বিকেলে ছুটি উপভোগ করছে। তাছাড়া রয়েছে আরও অনেক জাদুকর (যারা পথে–ঘাটে জাদু দেখায়)। হ্যারি এই প্রথম তাদের দেখল।
হ্যারির মনে হল হগসমেড এমনি একটি ভিলেজ যাকে ব্রিটেনের অল–উইজার্ড ভিলেজ বলা যায়। ডান–ডাইনি,স্বর্গরাজ্য বলা যায়। ওরা গ্রামে গ্রামে… ম্যাজিক দেখিয়ে বেড়ায়। তবে ওরা উইজার্ডদের মতো নিজেদের জাদুকর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি।
অদৃশ্য হয়ে ভিড়ের মধ্যে ঘুরে বেড়ান কষ্টকর। লোকেরা ওকে ধাক্কা দিয়ে চলে যাচ্ছে। ওকে তো কেউ দেখতে পাচ্ছে না। আবার হোঁচট খেয়ে কারও গায়ের ওপর পড়লে আর সাংঘাতিক ব্যাপার। হ্যারি নিজেকে ও অন্যদের বাঁচিয়ে কোণের দিকে একটা খালি টেবিলে বসল। হারমিওন ড্রিঙ্কস আনতে গেল। হ্যারির অনেক আগেই রনের ওপর চোখ পড়েছে। ও ফ্রেড, জর্জ আর লী জোর্ডানের সঙ্গে বসে গুলতানি করছে। ওর ইচ্ছে হল রনের কাছে গিয়ে ওর মাথায় একটা চাঁটি মেরে আবার নিজের সিটে এসে বসে। কিন্তু অনেক কষ্টে ইচ্ছে টাকে চেপে রাখল।
কিছুক্ষণ পরে হত্যারমিন ড্রিঙ্কস নিয়ে ফিরে এল। হ্যারিকে একটা বাটার বিয়র দিল। স্বাভাবিকভাবে ক্লোকের ভেতরে।
হারমিওন বিড়বিড় করে বলল–আমি সত্যি মহামূর্খ… বোকার মতো বসে আছি, করার কিছু নেই।… ও হাঁ, তাই তো SPEw র কথা তো মনে ছিলো না! গ্রামের লোকদের সাথে এ বিষয়ে কথা বললে হয়।
কথাটা বলে ও ব্যাগ থেকে একটা নোটবুক বার করল। সেই নোট বুকে ও SPEw সভ্যদের নাম ঠিকানা লিখে রাখে। হ্যারি দেখল লিস্টের সর্বপ্রথমে রন আর ওর নাম লেখা আছে। শট লিস্ট! ওর মনে পড়ে গেল অনেক দিন আগে ওরা তিনজনে বসে লিস্ট তৈরি করেছিল। নিজেদের সেক্রেটারি আর ট্রেজারার করেছিল।
–হতে পারে, তুমি জান আমি সদস্য সংখ্যা বাড়াতে চাই। দেখা থাক চেষ্টা করে ভিলেজের বাসিন্দাদের সদস্য করা যায় কি না। হারমিওন এপার–ওধার তাকাতে তাকাতে চিন্তামগ্ন হয়ে বলল।–যত পারা যায়।
–ঠিক ঠিক ঠিক বলছে, হ্যারি আলখেল্লার মধ্যে মুখ ঢুকিয়ে বিয়ারে চুমুক দিল।…, হারমিওন কবে তোমার মাথা থেকে এলফদের ভূত নামবে বলত?
হারমিওন তৎক্ষণাৎ জবাব দিল–যখন ওদের ভাল পারিশ্রমিক দেবে, ওরা ভাল ব্যবহার পাবে। ভাবছি ওদের জন্য কিছু করতেই হবে … জানিনা তোমাদের স্কুল কিচেন সম্বন্ধে কিছু অভিজ্ঞতা আছে কিনা।
–আমার কোনও ধারণা নেই। তুমি বরং ফ্রেড–জর্জকে জিজ্ঞেস কর, হ্যারি বলল।
হারমিওন আবার চিন্তা সাগরে ডুব মারল। হ্যারি পাবের লোকজন দেখতে দেখতে বাটার বিয়ার খেতে লাগল। সকলেই হাসি–খুশি চনমনে। কাছের একটা টেবিলে বসে এরনি ম্যাকমিলন, হান্না অ্যাবট চকোলেট ফ্রগকার্ড খেলে চলেছে। দুজনেরই বুকে সাপোর্ট সেড্রিক ডিগরি আটকান রয়েছে। দরজার দিকে দেখল চো ওর একগাদা র্যাভেন ক্ল হাউজের বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরর ভাবে আড্ডা দিচ্ছে।
ওর অবশ্য সেডরিক ব্যাজ নেই, নেই দেখে হ্যারি খুশি হল।
সকলেই আনন্দ করছে, হৈ হৈ করছে, আড্ডা দিচ্ছে বন্ধুদের সঙ্গে। তার মধ্যে একজন চুপ চাপ বসে থাকলে কার কি আসে যায়! ও কল্পনা করল ওর নাম যদি গবলেট অব ফায়ারে না–আসত তাহলে হয়ত তখনকার আবহাওয়া অন্যরকম হত। তাহলে লুকোবার জন্য অদৃশ্য হবার আলখেল্লা পড়তে হত না।… রন দূরে না বসে ওর সঙ্গে বসতো। তাহলে মনের আনন্দে আগামী মঙ্গলবার টুর্নামেন্টে কোন স্কুল জিতবে তা নিয়ে তর্কের ঝড় তুলতে পারত।
হ্যারির মনে হল বাকি তিনজনের অবস্থা কি রকম? যতবারই ও সেডরিককে দেখে ওকে একটু নার্ভাস দেখাচ্ছে, একগাদা বন্ধুদের নিয়ে উত্তেজিত হয়ে গল্প করছে।… সকলে যত খুশি পড়াশুনো করছে, কাজ করছে, হোমওয়ার্ক করছে… আর ও? পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।… উঃ গবলেট অব ফায়ারে নাম না এলে কত ভাল ছিলো। হয়ত বাকি তিনজন স্কুল চ্যাম্পিয়নের জন্য সে মারাত্মক কাজ সামনে আসছে তাতে চিন্তিত নয়। হ্যারি ডেলাকৌরকে করিডোরে মাঝে মাঝে দেখেছে। ঠিক যেমন প্রথম দেখেছিল তেমনই রয়েছে উগ্র আর অনমনীয়। লাইব্রেরিতে বসে পড়াশুনা করে।
হ্যারি সিরিয়সের কথা ভাবল। এখন ওর বুকের মধ্যে যে জমাট চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল তবে খানিকটা কমলো। আর মাত্র বার ঘন্টা পর রাত্রে ওর সঙ্গে কথা হবে। কমনরুমে আসবেন… আলোচনা হবে আর কিছুই নয়।
হঠাৎ ওর চিন্তায় ছেদ পড়ল। হারমিওন বলল–ওই দেখ হ্যাগ্রিড এসেছেন। হ্যাগ্রিড পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে মাথার বড় চুলগুলো খোঁপা করে রাখেন নি… পিঠের ওপর খুলে রেখেছেন। হ্যাগ্রিডকে দেখল মুডির সঙ্গে ফিসফিস করে কথা বলছেন। হাতে বিরাট এক পাত্র তাতে মদ ভরা। মুডি কোমরে বাঁধা ফ্লাস্ক থেকে পান করছেন। রেস্টুরেন্টের মালিক সুন্দরী ম্যাডাম রসমেরা জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে মুডিকে দেখছেন। টেবিল থেকে শূন্য গ্লাস, প্লেট ইত্যাদি সরাছেন। কিন্তু মুডি কোনো অর্ডার দিচ্ছে না। মুডি তার দোকান থেকে কিছু না কিনে বাড়ি থেকে আনা পানীয় খাচ্ছেন ম্যাডাম রসমেরা মুখ ফুটে কিছু না বললেও মনে মনে অপমানিত বোধ করছেন। মুডি কখনও বাইরের কিছু খান না। গত ডিসেম্বর মাসে ডার্কআর্টের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের পাঠ্যক্রম পড়াতে পড়াতে বলেছিলেন, আমি নিজের খাবার নিজে বানাতে পছন্দ করি… না হলে ডার্ক জাদুকররা কাপে খাবারে বিষ মিশিয়ে দিতে পারে। সকলের সাবধানতা দরকার।
একটু পর হ্যাগ্রিড আর মুডি ঘর থেকে বেরিয়ে যাবেন মনে হল হ্যারির। হ্যারি হ্যাগ্রিডকে হাত নাড়ল, তারপরই বুঝতে পারলো হ্যাগ্রিড ওকে দেখতে পাবেন কেমন করে? ও তো অদৃশ্য হয়ে রয়েছে। মুডি কিন্তু লক্ষ্য করলেন। বেরিয়ে যেতে যেতে থেমে গেলেন। তার ম্যাজিকেল চোখের কাছে সবকিছুই তুচ্ছ। উনি পরিষ্কার হ্যারিকে দেখতে পেয়েছেন… হ্যাগ্রিডের পিঠে হাত দিয়ে কিছু একটা বললেন। তারপর ওরা দুজনেই হারমিওনের টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালেন।
হ্যাগ্রিড খুব উঁচুগলায় হারমিওনকে বললেন, ভাল আছ তো, হারমিওন।
হারমিওন হেসে জবাব দিল, হ্যালো।
মুডি ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে টেবিলের কাছে এলেন। হ্যারি ভাবল মুডির নজর হারমিওনের SPEW লিস্টের দিকে। কিন্তু ভুল ভেঙ্গে গেল মুডির কথায়
সুন্দর আলখেল্লা পরেছ পটার।
হ্যারি হকচকিয়ে মুডির দিকে তাকাল। মুডির নাকের অনেকাংশ যে নেই সেটা কাছ থেকে বুঝতে পারে হ্যারি। মুডি হাসছেন হ্যারির দিকে তাকিয়ে।
–আপনি…আপনি আপনার চোখ দিয়ে দেখতে পাচ্ছেন?
–হাঁ হাঁ নিশ্চয়ই। আমার চোখ দৃশ্য, অদৃশ্য সব কিছুই দেখতে পায়… অদৃশ্য হবার আলখেল্লা পরেও কিছু হবে না। সব সময় কিন্তু ওটা কাজে লাগে না, মুডি ধীরে ধীরে বললেন।
হ্যারি জানে হ্যাগ্রিড দেখতে পান না। মুডি নিশ্চয়ই হ্যাগ্রিডকে ব্যাপারটা বলেছেন।
হ্যাগ্রিড যেন হারমিওনের নোট বুক দেখছেন এমন ভাবে টেবিলের দিকে ঝুঁকে পড়ে গলা নামিয়ে বললেন,–আজ মাঝরাতে আমার কেবিনে এসে দেখা করো।… এই অদৃশ্য হবার আলখেল্লাটা অবশ্যই পরে আসবে।
হ্যাগ্রিড তারপর সোজা হয়ে জোরে জোরে বললেন, তোমার সঙ্গে দেখা হয়ে খুব ভাল লাগল হারমিওন। কথাটা বলে হ্যাগ্রিড মৃদু হেসে মুডির সঙ্গে রেস্টুরেন্ট ছেড়ে চলে গেলেন।
হ্যারি আশ্চর্য হয়ে বলল–কে জানে গভীর রাতে আমাকে ওর কেবিনে দেখা করতে বললেন কেন।
–তাই বললেন? হারমিওন একটু আশ্চর্য হয়ে বলল।–কে জানে কেন… কি বলবেন? তুমি যাবে কি যাবে না সেটা তোমার ব্যাপার; ও যেন একটু নার্ভাস.. দাঁত চেপে বলল–তাহলে তো তুমি সিরিয়সের সঙ্গে ঠিক সময় কমনরুমে গিয়ে কথা বলতে পারবে না।
এ কথা সত্যি… মধ্যরাতে হ্যাগ্রিডের কেবিনে যাওয়া মানে সিরিয়সের সঙ্গে যথাসময়ে দেখা না হওয়া। হারমিওন বলল,–যেতে পারবে না, হেডউইগকে পাঠিয়ে জানিয়ে দাও।
হ্যারি ভাবছে ভিন্ন কথা মত অন্য। ও চায় ত্যাগ্রিডের কেবিনে গিয়ে কি বলতে চাইছেন শুনেই টাওয়ারে ফিরে আসা, যাতে সিরিয়সের সঙ্গে কথা হয়। নিশ্চয়ই কোনও দরকারি কথা গোপনে বলতে চান। দরকার না হলে কখনই গভীর রাতে নিষিদ্ধ বনের সীমানায় আসতে বলতেন না।
***
রাত্রি সাড়ে এগারটার সময় হ্যারি অদৃশ্য হবার আলখেল্লাটা পরে নিয়ে কমনরুমের ভেতর দিয়ে পা–টিপে–টিপে একতলায় নামল। খুব ভোরে কাজ আছে ভান করে সন্ধ্যায় শুয়ে পড়েছিল। কমনরুমে তখন দু একজন বসেছিল। ক্রিভেরা দুই ভাই সাপোর্ট সেডরিক ব্যাজ অনেকগুলো জোগাড় করে সেখানে সাপোর্ট হ্যারি পটার লিখেছে। হ্যারি পটার স্টিংকস-এর স্থানেও তা-ই করেছে। এই নিয়ে ওরা হাসাহাসি করছে। হ্যারি প্রোট্রেট হোলের মধ্য দিয়ে নিচে নেমে হারমিওনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। পরিকল্পনা অনুসারে গভীর রাতের একটু আগে নিষিদ্ধ বাগানের সীমানায় হ্যাগ্রিডের কেবিনের দিকে চলল। যাবার আগে মোটা লেডিকে ধন্যবাদ জানাতে ভুলে গেলো।
মাঠটা বেশ অন্ধকার। হ্যাগ্রিডের কেবিনে আলো জ্বলছে… সেই দিকে ওদের দৃষ্টি। বক্সব্যাটনের ক্যারেজেও আলো জ্বলছে। হ্যারি হ্যাগ্রিডের দরজায় নক করার সময় ক্যারেজ থেকে মাদাম ম্যাক্সিমের কথা শুনতে পেল।
এসে গেছ হ্যারি? হ্যাগ্রিড ফিসফিস করে দরজাটা খুলে বাইরে তাকিয়ে বললেন।
হ্যারি কেবিনের মধ্যে ঢুকে পড়ে বলল–ঠিক সময়ে এসেছি। হ্যারি ওর অদৃশ্য হবার আলখেল্লাটা খুলে ফেলল।–কেন আসতে বললেন?
হ্যাগ্রিড বললেন–তোমাকে একটা জিনিস দেখাতে ডেকেছি।
হ্যাগ্রিডের দারুণ উত্তেজনা। মাথার তেল চুকচুকে চুল মোটা চিরুনী দিয়ে আঁচড়েছেন। এত জট মাথায় যে চিরুনীর কিছু অংশ ভেঙে গিয়ে চুলে আটকে রয়েছে। কোটের বোতামের হোলে মস্ত বড় একটা ফুল গুঁজেছেন।
–কি দেখাবেন বলছিলেন? হ্যারি ভাবল হ্যাগ্রিড নিশ্চয়ই তার ক্রিউট ডিম দিয়েছে দেখাতে ডেকেছেন, নয়ত একটা তিন মুওয়ালা কুকুর কারও কাছ থেকে কিনেছেন সেটাকে দেখাতে চাইছেন।
-এস আমার সঙ্গে। আবার আলখেল্লাটা পরে নাও, হ্যাগ্রিড বললেন। আমরা ফ্যাংগকে সঙ্গে নেবো না, ও পছন্দ করবে না।
–শুনুন হ্যাগ্রিড, আমি কিন্তু বেশিক্ষণ থাকতে পারবো না। একটার আগে আমায় ক্যাসেলে ফিরে যেতে হবে।
কিন্তু কথাটা যেন হ্যাগ্রিডের কানে পৌঁছল না। কেবিনের দরজাটা খুলে হ্যারিকে নিয়ে বাইরে এলেন… অন্ধকার ভেদ করে চললেন। হ্যারি হ্যাগ্রিডের সঙ্গে যেতে যেতে আশ্চর্য হয়ে গেল বক্সবেটনের ক্যারেজের দিকে হ্যাগ্রিডকে চলতে দেখে।
–হ্যাগ্রিড, এখানে কেন…?
–শুন, গুন, হ্যাগ্রিড চুপ থাকতে বললেন, তারপর ক্যারেজের দরজায় তিনবার তার সোনার হ্যান্ডেলওয়ালা জাদুদণ্ড দিয়ে টোকা দিলেন।
দরজা খুলে দাঁড়ালেন মাদাম ম্যাক্সিম। তার বিরাট দেহে একটা সিল্কের শাল জড়ান। হ্যাগ্রিডকে দেখে হাসলেন–আহ্ হ্যাগ্রিড আপনি ঠিক সময়ে এসেছেন।
হ্যাগ্রিড মাথা নত করলেন।… মাদামের একটা হাত সোনার সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামবার জন্য ধরলেন।
–হ্যারিকে নিয়ে ওরা ঘোড়ার আস্তাবলের দিকে চললেন। ওখানে দেখল মাদামের বিরাট ডানাওয়ালা ঘোড়াটা দাঁড়িয়ে রয়েছে। হ্যারি ঠিক বুঝতে পারছে না হ্যাগ্রিড কি চান, কোথায় তাকে নিয়ে চলেছেন। উনি কী মাদামকে দেখাতে ডেকেছেন? হ্যারি তো রোজই একবার দুবার ওকে দেখে। তাছাড়া যে কোনও সময় তো দেখা করতে পারে। এমন কিছু বড় মাপের মানুষ নয় মাদাম ম্যাক্সিম!
হ্যারি দু জনের কথাবার্তা তেমন ভাল করে বুঝতে পারে না।
ওদের সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে হ্যারি অসম্ভব বিরক্ত হলো। বারবার ঘড়িতে সময় দেখতে লাগল। হ্যাগ্রিডের কোনও কিছু দেখানোর উদ্দেশ্য রয়েছে মনে হয়। শেষ পর্যন্ত সিরিয়স দেরি দেখে চলে যাবেন না তো বেশি দেরি করলে হ্যারি আর ওদের সঙ্গে যাবে না। সোজা ক্যাসেলে ফিরে যাবে। হ্যাগ্রিড ওর বান্ধবীর সঙ্গে গভীর রাতের চাঁদের আলো উপভোগ করুক। হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা চলে এসেছে ক্যাসেল আর লেক দৃষ্টির বাইরে চলে গেছে। হ্যারি শুনতে পেল, আগে কিছু মানুষ চেঁচামেচি করছে… তারপরই হাজারটা কামান দাগার মতো কর্ণভেদী শব্দ!…গর্জন!
হ্যাগ্রিড মাদাম ম্যাক্সিমকে গাছের কাছে নিয়ে গেলেন, তারপর আর এলেন না। হ্যারি তাড়াতাড়ি ওদের পাশে দাঁড়াল… হঠাৎ ক্ষণকালের জন্য ওর মনে হল ও যেন আনন্দ উৎসব উপলক্ষে উন্মুক্ত জায়গায় বনফায়ার দেখছে। লোকেরা ওদেরকে ঘিরে নাচানাচি করছে।… তারপরই বিস্ময়ে হাঁ হয়ে গেল। ড্রাগনস!
ও দেখলো চারটে বিরাট আকারের ড্রাগন, ভয়ঙ্কর তাদের চেহারা, ওরা ডিমে তা দিচ্ছে আর মাঝে মাঝে গর্জন করছে। ওদের ঘিরে রাখা হয়েছে কাঠের তক্তার খাঁচা করে। ওরা গর্জন করছে, ফোঁস ফোঁস করার সময় নাক দিয়ে আগুন ছিটকে বেরোচ্ছে শুধু তাই নয়, ওদের বিরাট হাঁ করা মুখ দিয়ে হলহল করে আগুন অন্ধকার আকাশের দিকে উঠছে। মাটি থেকে দৈর্ঘে প্রায় পঞ্চাশ ফিট হবে। একটা ড্রাগন… গায়ের রং রূপালি–নীল… মাথায় ফুচলো শিং… জাদুকরদের দিকে তাকিয়ে তীব্র গর্জন করছে। এমনি সবুজ রং এর মসৃণ দেহের ড্রাগন বিরাট হ্যাঁ করে পা দিয়ে মাটি আঁচড়াছে। লাল রং-এর ড্রাগন–ওর দাঁতগুলো চকচকে তীক্ষ্ণ সোনার তৈরি স্পাইকের মতো। মুখ দিয়ে ব্যাঙের ছাতার মতো আকাশে–বাতাসে আগুনের মেঘ ছড়াচ্ছে।… আর একটি কাল রং-এর… অনেকটা টিকটিকির মতো… ওদের খুব কাছেই বসে রয়েছে।
হ্যারি দেখল কম করে তিরিশটা জাদুকর… এক একটা ড্রাগনকে সাত আটজন জাদুকর ওদের বশে রাখবার চেষ্টা করছে। ওদের গলায় চামড়ার বকলস আর মোটা লোহার শেকল পায়ে বাধা। হ্যারি কাল রং-এর ড্রাগনের চোখের দিকে তাকাল। ওর চোখ দুটো লম্বালম্বি নয়–ওপর ও নিচে আর চোখের তারা দুটো বেড়ালের মতো। চোখ দুটো ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছে। ভয়ে অথবা রাগে। ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হ্যারির দারুণ অস্বস্তি লাগল।
হ্যাগ্রিড এগিয়ে এসো না, শিকল ধরে থাকা একজন জাদুকর বলল। ড্রাগনটা এত জোরে টান মারছে, যেকোনও সময় শিকল ছিঁড়ে যেতে পারে।–ওরা মুখ থেকে কম করে বিশ ফিট পর্যন্ত আগুনে ছোটাতে পারে। আমি হর্নটেলদের চল্লিশ ফিট পর্যন্ত দেখেছি, জাদুকরটি বলল।
হ্যাগ্রিড ড্রাগনগুলোর দিকে মোহিত হয়ে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বলল সত্যি বড় সুন্দর।
আর এক জাদুকর বলল–তেমন ভাল নয় তিন গোনার পর হঠাৎ স্টানিং স্পেল হচ্ছে। হ্যারি আরও দেখল প্রতিটি জাদুকর তাদের জাদুদণ্ড বার করল।
ওরা সকলে সমবেত কণ্ঠে বলল, স্টুপিফাই… স্টার্নিং স্পেল বন্ধ হয়ে আকাশের রকেটের মতো উড়ে গিয়ে ছোট ছোট তারার বৃষ্টি শুরু হল।… দেখতে দেখতে সব ড্রাগন শান্ত হয়ে বসে রইল।
–কাছে গিয়ে ওদের দেখবেন? হ্যাগ্রিড মাদাম ম্যাক্সিমকে জিজ্ঞেস করল। ওরা ফেন্স পর্যন্ত গেলেন। পেছনে পেছনে হ্যারিও গেল। যে জাদুকর হ্যাগ্রিডকে কাছে আসতে মানা করেছিল… হ্যারি তাকে চিনতে পারলো–চার্লি উইসলি!
–ভাল আছেন হ্যাগ্রিড? চার্লি হাঁফাতে হাঁফাতে বলল। তারপর কথা বলার জন্য এগিয়ে এল। ওরা এখন শান্ত; ওদের আমি ঘুমোবার ওষুধ দিয়েছি। ওদের অবশ্য গভীর রাতে ঘুম ভাঙলে ভাল… সবকিছু শান্ত থাকে… কিন্তু দেখলেন তো, একেবারেই অশান্ত ওরা শান্ত নয়, একেবারেই অশান্ত।
হ্যাগ্রিড বললেন–চার্লি তুমি এখানে কেন এসেছ? কাল ড্রাগনটার চোখ দুটো তখনও খোলা। হ্যারি দেখল ওর কাল চোখের ওপরে হলুদ লম্বা দাগ। তারই তলায় বেড়ালের মতো জ্বল জ্বলে চোখ।
চার্লি বলল-এটা হাংগেরিয়ান ড্রাগন।… তারপর তার নানা ব্যাখ্যা দিতে লাগল।
–আপনি মাদামকে সঙ্গে আনবেন জানতাম না হ্যাগ্রিড, চার্লি বলল। চ্যাম্পিয়নদের এটা আগে থেকে জানা ঠিক নয়।… হয়ত ছাত্র–ছাত্রীদের, প্রতিযোগীকে ফাঁস করে দিতে পারেন উনি।
হ্যাগ্রিড বললেন, দুঃখিত, আমি এতোটা ভেবে দেখিনি।… এখনও তার চোখ সবকটি ড্রাগনের দিকে।
চার্লি মাথা নাড়তে নাড়তে বলল–খুব রোমান্টিক ডেটিং করেছেন কিন্তু!
চারটে ড্রাগন…. হ্যাগ্রিড বললেন। প্রতি চ্যাম্পিয়নের জন্য একটা ড্রাগন; তাই? ওদের সঙ্গে লড়াই করতে হবে?
চার্লি বলল–টুর্নামেন্ট কমিটি যে হর্নটেল ডিম দিয়েছে, খুবই মারাত্মক। কেন জানি না এমন চাইছে। ওদের ল্যাজের দিক সবচেয়ে মারাত্মক।
চার্লি আঙ্গুল দিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ ড্রাগন দেখাল। হ্যারি দেখল ওদের ল্যাজের প্রতিটি ইঞ্চিতে একটা করে বর্শার মতো তীক্ষ্ণ ফলাকা। রং গুলো ব্রোঞ্জের মতো।
পাঁচজন চার্লির লোক কম্বলে করে গ্রানাইট–ধূসর রং-এর বিরাট বিরাট ডিম নিয়ে এসে ওদের পাশে খুব যত্ন করে রাখল। হ্যাগ্রিড এমন ভাবে তাকাল যেন ওগুলো পেলে খুব খুশি হয়।
–দেওয়া যাবে না হ্যাগ্রিড, সবগুলোতে গোনাগুনতি, চার্লি বলল … যাকগে হ্যারি কেমন আছে? (হ্যারি গাছের পেছনে অদৃশ্য আলখেল্লা পরে দাঁড়িয়ে ছিল)।
–খুব ভাল, হ্যাগ্রিড বলল। তখনও ওর চোখ ডিমের দিকে। চার্লি গম্ভীর হয়ে বলল–আশা করন এদের সঙ্গে লড়াই করবার পর যেন ওরা ভাল থাকে। তারপর মারাত্মক ড্রাগনদের দিকে তাকিয়ে বলল। আমি অবশ্য মামকে বলিনি হ্যারিকে প্রথম কাজে কি করতে হবে। মা তো খবর পাবার পর ভয়ে–ভাবনায় বাচ্চা বেড়ালের মতো কাঁপছেন। চার্লি ওর মায়ের গলার স্বর নকল করে বলল।
ওইটুকু ছেলেকে ওরা কি বলে টুর্নামেন্টে যোগ দিতে দিল। ওরা সবাই ভাল থাকুক। আশ্চর্য ওদের কী বয়সসীমা নেই।
ডেইলি প্রফেটে খবরটা পড়বার পর কেঁদেকেটে অস্থির এখনও ও ওর মা বাবার কথা ভাবে। ওকে রক্ষা কর প্রভু… আমি আগে জানলে!
ড্রাগন, হ্যাগ্রিড, মাদাম ম্যাক্সিমের সঙ্গ ছেড়ে হ্যারি পালাতে পারলে বাঁচে। মাথায় ঘুরছে সিরিয়সের সঙ্গে ঠিক সময়ে দেখা করার। ও কিছু না জানিয়ে ক্যাসেলে ফিরে চলল।… ও দৌড়তে লাগল। হাতে মাত্র পনের মিনিট সময় আছে কমনরুমে ফায়ার প্লেসের সামনে সিরিয়সের সঙ্গে মুলাকাত করার।….কিছুক্ষণ আগে হ্যাগ্রিডের সঙ্গে গিয়ে যা দেখে এসেছে… কাকে বলবে? ও প্রাণপণে দৌড়তে লাগল।
হঠাৎ একজনের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পেছন দিকে পড়ে গেল। চোখের চশমাটা সরে গেল। ও আলখেল্লা খুব শক্ত করে চেপে ধরল। খুব কাছ থেকে কে একজন বলে উঠল, আউচ, ওখানে কে?
হ্যারি দেখল আলখেল্লাটা ঠিক মতো আছে কিনা। যার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ও উল্টে পড়ে ছিল অন্ধকারে তাকে দেখতে চেষ্টা করল।… কারকারফ দাঁড়িয়ে আছেন।
কারকারফ আবার বললেন–কে ওখানে? অন্ধকারের মধ্যে যার সঙ্গে ধাক্কা লাগল তাকে খুঁজতে লাগলেন। হ্যারি কাঠের মতো দাঁড়িয়ে রইল। কারকারফ অনেকটা সময় খুঁজে যখন কাউকে দেখতে পেলেন না, ভাবলেন হয়ত কোনো জন্তুর সঙ্গে ধাক্কা লেগেছে। কোনও কুকুর–টুকুর হতে পারে। তারপর তিনি যেখানে ড্রাগনরা রয়েছে সে দিকে চলে গেলেন।
হ্যারি খুব সর্তকভাবে ধীরে ধীরে দাঁড়াল। আবার দৌড়তে লাগল–হোগার্টের দিকে। হোগার্ট এখন অন্ধকারাছন্ন।
কারকারফ কেন ওখানে যাচ্ছেন সে সম্বন্ধে ওর কোনও সন্দেহ রইল না। জাহাজ থেকে বেরিয়ে খুব সম্ভবত প্রথম কাজ সম্বন্ধে জানতে চলেছেন।…যাবার সময় হয়তো হ্যাগ্রিড–মাদাম ম্যাক্সিমের সঙ্গে অবশ্য দেখা হয়ে যেতে পারে। তাহলে ঘন অন্ধকারে দূর থেকে দেখতে পাওয়া হয়ত সম্ভব নয়।… একটি মাত্র পথ ওদের কথাবার্তার শব্দ। মাদাম ম্যাক্সিমের মতো জানতে চান চ্যাম্পিয়েনের জন্য কি কাজ লুকিয়ে আছে। তা হলে সকলেই জেনে যাবে, শুধু একজন জানবে না–সে হলো সেডরিক!
হ্যারি ক্যাসেলে পৌঁছল। ফ্রন্ট ডোরের সিঁড়ি দিয়ে উঠে মাৰ্বল পাথরের সিঁড়ি দিয়ে ওঠার জন্য হাঁফাতে লাগল। কিন্তু দাঁড়ালে চলবেনা। ফায়ার প্লেসে পৌঁছবার আর মাত্র পাঁচ মিনিট আছে।
ফ্যাট লেডির সামনে গিয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে বলল, ব্যালডারড্যাশ! প্রোট্রেট হোলে ও তখন নাক ডাকছে।
ঘুমের ঘরে ফ্যাট লেডি কিছু বলল হ্যারি ঠিক বুঝতে পারলো না। ও এক সেকেন্ড দেরি না করে ও ভেতরে ঢুকে গেল। কমনরুম শূন্য।
হ্যারি তাড়াতাড়ি অদৃশ্য হবার আলখেল্লা খুলে ফেলল। ফায়ার–প্লেসের সামনে আর্মচেয়ারটা টেনে নিয়ে বসল। ঘরটা আবছা অন্ধকার। আগুন জ্বলছে… তার থেকে যতটুকু আলো আসছে। কাছাকাছি একটা টেবিলে সেডারক ডিগরি ব্যাজ পড়ে। ক্রিভেরা খুব সম্ভব সেই পটার রিয়েলী স্টিংকস ব্যাজগুলো বদলাবার চেষ্টা করছিল। হ্যারি পেছন ফিরে আগুনে শিখার দিকে তাকাল। তারপরই লাফিয়ে উঠল।
আগুনের মধ্যে সিরিয়সের মাথা বসে আছে। বহুদিন পর হ্যারি মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠল। বলে উঠল, সিরিয়স… আপনি কেমন আছেন?
সিরিয়সকে অন্যরকম লাগছে। আগে দেখেছিল কৃশকায় আর বিমর্ষ মাথা ভর্তি লম্বা লম্বা চুল, কাল কুচকুচে। এখন চুল ঘোট ঘোট ছাঁটা। মুখটাও ফোলা ফোলা… বয়স অনেক কম মনে হচ্ছে। হ্যারির কাছে যে ফটোটা আছে অনেকটা তারই মতো। ফটোটা হ্যারির বাবা-মার বিয়ের সময় তোলা হয়েছিল।
–আমার কথা বাদ দাও, তুমি কেমন আছ বল? সিরিয়স সরাসরি জিজ্ঞেস করলেন।
–আমি… হ্যারি বলতে চাইল খুব ভাল–কিন্তু বলতে পারলো না।… বহুদিন চুপ করে থাকার বাঁধ ভাঙল। ও শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটুও না থেমে বলে গেল।… বলল, কেন কেউ বিশ্বাস করতে চাইছে না আমি টুর্নামেন্টে নাম দিই নি। রিটা স্কীটার কেন ওর সম্বন্ধে আজেবাজে মিথ্যে কথা লিখেছে ডেইলি ফেটে, কেন ও মন খুলে স্বাচ্ছন্দ্যে সহজভাবে করিডলর দিয়ে হেঁটে যেতে পারে না… এমন কি ওর প্রাণের বন্ধু রনও ওর কথা একটুও বিশ্বাস করতে চাইছে না। ওর সঙ্গে কথা বন্ধ। রন ওকে হিংসে করছে।… একটু আগে হ্যাগ্রিড আমাকে প্রথম কাজে কি করতে হবে তাও দেখিয়েছে–ড্রাগন, মারাত্মক ভয়াল ভয়াবহ ড্রাগনদের সঙ্গে লড়াই।…বলুন, সিরিয়স কোন অপরাধে আমি আজ দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হয়েছি?
সিরিয় উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে হ্যারির দিকে তাকালেন। এখনও ওর দৃষ্টি আগের মতো ঠিক আছে আজকাবান তা কেড়ে নিয়ে নিপ্রাণ দৃষ্টিতে পরিণত করতে পারেনি। ভৌতিক দৃষ্টি! হ্যারিকে কোনও রকম বাধা না দিয়ে মনপ্রাণ খুলে সব কথা বলে যেতে দিলেন।… কিন্তু বললেন, ড্রাগনদের আমরা কজা করতে পারি হ্যারি।… কিন্তু তা করতে হবে এক মিনিটের মধ্যে আমি এখানে বেশিক্ষণ থাকতে পিরবো না… আমি আগুন ব্যবহার করার জন্য জাদুকরী বাড়িতে লুকিয়ে ঢুকেছি, তবে তারা যে কোন মুহূর্তে চলে আসতে পারে। কয়েকটা বিষয় তোমায় সাবধান করে দিতে চাই।
কী বলুন, হ্যারি বলল। ওর মনটা হঠাৎ সামান্য দমে গেল। ড্রাগনদের আসাটা খুবই চিন্তার বিষয়?
সিরিয়স বললেন, কারকারফ একজন ডেথইটার এবং ভোল্ডেমর্টের অনুচর। তুমি জান ডেথইটার কাঁদের বলা হয়?
–হা–ও–কেন?
–ও ধরা পড়েছিল। আমার সঙ্গে আজকাৰানে… কিন্তু মুক্তি পেয়েছে।
–সেই কারণেই ডাম্বলডোর এই বছর একজন অররকে কে হোগার্টে এনেছেন… ও কি করছে না করছে লক্ষ্য করার জন্য। মুডি, কারকারফকে ধরেছিল। প্রথমেই ওকে আজকাবানে পাঠানো হয়েছিল।
কারকরফ কেমনভাবে ছাড়া পেল, হ্যারি খুব মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করল। ওর মস্তিস্ক অপেক্ষা করছে আরও একটা জঘন্য, অতিশয় বেদনাদায়ক খবর শোনার জন্য।–ওকে মুক্তি দিল কেন?
কেন আবার, ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটা রফা করেছিল, সিরিয়স ঘেন্নায় নাকসিঁটকে বললেন। ও বলল, ও অন্যায় করেছে… ওর বদলে অনেক লোক আজ কারাবন্দি হল… ওই শয়তান মোটেই জনপ্রিয় ছিল না, আমি তোমায় হলফ করে বলছি। ও মুক্তি পাবার পর… তোমায় শুধু বলছি ও ডাক আর্ট শেখায় কাঁদের জান? যারা যারা ওর স্কুল থেকে পাস করে চলে যায় তাদের। তাহলে কী হল? ডারমস্ট্রংগ চ্যাম্পিয়েনের ওপরও গাফিলচতি করবে না… কড়া নজরে রাখবে।
–ঠিক আছে, হ্যারি বলল–কিন্তু… তাহলে কী বলতে চান কারকারফ আমার নাম গবলেটে রেখেছিল? যদি রেখে থাকে তাহলে নিঃসন্দেহে বলতে হয় সে একজন দক্ষ অভিনেতা। আমার নাম আসাতে ও দারুণ রেগে গিয়েছে… আমি যাতে না আসতে পারি তার জন্য প্রচুর তর্কবির্তক করেছিল।
সিরিয়স বলল–ও যে একজন ভাল অভিনেতা তা আমরা জানি। মিনিস্ট্রিকে ও যে সৎলোক, কোনও দোষ করেনি, তা বেশ ভাল করেই বুঝিয়েছিল মুক্তি পাবার জন্য কি বল তাই না?… যাক সে কথা আমাদের ডেইলি ফেটের ওপর কড়া নজর রাখতে হবে… মনে রাখবে হ্যারি।
আপনি, আমি শুধু নয় সারা পৃথিবীর, হ্যারি তিক্ত কণ্ঠে বলল।
গত মাসে ওই স্কীটারের ডেইলি ফেটে লেখার পর হোগার্টে আসার সময় মুডিকে আক্রমন করা হয়েছিল।… হ্যাঁ, আমি খুব ভাল করেই জানি ও লিখেছে ওটা একটা সাজানো ব্যাপার, সিরিয়স তাড়াতাড়ি বললেন।…
হ্যারিকে থামিয়ে দিয়ে বললেন–ওকে আক্রমণ করার ব্যাপারটা সম্বন্ধে আমার সন্দেহ আছে। হয়ত কেউ ওকে হোগার্ট-এ আসতে বাধা দিয়েছিল। অনেকেই জানে মুডি থাকলে ওদের একটু অসুবিধে হয়।… বুঝলে মুডি মোটেই বোকা লোক নয়। সব জানেন। সব বোঝেন। সেই জন্যই তো মিনিস্ট্রির ও একজন সুদক্ষ অরর।
তো আপনার মত কী? হ্যারি বলল, তাহলে কারকারফ আমাকে খতম করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে? কিন্তু… কেন?
সিরিয়স ধীরে ধীরে বললেন–আমি ইদানীং অদ্ভুত অদ্ভুত সব কথা শুনছি, সিরিয়স গম্ভীর হয়ে বললেন–ইদানীং ডেথইটাররা খুব সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কিডিচ ওয়ার্ল্ড কাপ খেলার সময় তারা তাদের তাগিদ দেখিয়েছিল–কী ঠিক বলছি না? মাঝে মাঝে ডার্কমার্ক ব্যবহার করছে… তারপর… তুমি কী শুনেছ মিনিস্ট্রি অব ম্যাজিকের জাদুকরীকে পাওয়া যাচ্ছে না?
বার্থা জোরকিনস, হ্যারি বলল।
ঠিক, ঠিক বলেছ। ও আলবিনিয়াতে হারিয়ে গেছে… মানে উধাও… এবং এমন একটা গুজব আছে যে ভোল্ডেমর্টকে শেষ ওখানে দেখা গিয়েছিল।… মনে হয় জোরকিনস্ জানে ট্ৰিই–উইজার্ল্ড কাপ শুরু হচ্ছে… তাই মা?
তবে আমার মনে হয় না ও সোজা ভোল্টেমর্টের কাছে গেছে। সিরিয়স বিমর্ষ হয়ে বলল–শোন, আমি বার্থা জোরকিনসকে ভালভাবেই জানি। ও হোগার্টে যখন পড়তে আমি আর তোমার বাবা এখানে তার চার বা পাঁচ বছরের সিনিয়র ছিলাম। নাম্বার ওয়ান মূর্খ। মাথায় কিছু নেই অথচ দেখায় সব জানে। কিছু জানে না। ভোল্ডেমর্টের সঙ্গে টিকতে পারবে না হ্যারি। এত মুখ যে ওকে ফাঁদে ফেলা সহজ।
তো ভোল্ডেমর্ট টুর্নামেন্টের খবর রাখে? হ্যারি বলল। আপনার কি মনে হয় কারকারফ ওর নির্দেশে এখানে এসেছেন?
ঠিক জানি না; সিরিয়স বললেন, সত্যি আমি বলতে পারছি না। কারকারফ কখনই ভোল্টেমর্টের কাছে যাবে না। যদি না ও জানে বিপদে–আপদে ভোল্ডেমর্ট ওকে ছাতা দিয়ে ওর মাথা রক্ষা করবে। মানে ভোল্ডেমর্ট খুবই শক্তিশালী।… তবে সে তোমার নাম গবলেটে রেখেছে… একটা বিশেষ উদ্দেশ্যে রেখেছে। আমার কেমন যেন মনে হচ্ছে টুর্নামেন্ট চলার সময় তোমার ওপর আক্রমণ হবে, আর সেই আক্রমণ প্রচারিত হবে দুর্ঘটনা হিসেবে।
হ্যারি বলল–তাহলে খুব ভাল পরিকল্পনা বলতে হয়। ড্রাগন আমার কাছে ছেড়ে দিতে পারে। ওর চরেরা হয়ত সেখানে আছে।
ঠিক। তবে তুমি খুব সাবধানে ড্রাগনদের সঙ্গে লড়াই করবে। ড্রাগনরা খুবই শক্তিশালী। ওদের মন্ত্র দিয়ে আটকানো খুবই শক্ত। অন্তত দুজন জাদুকর দরকার একটা ড্রাগনকে কাবু করে রাখতে।
হ্যারি বলল–আমি জানি, দেখেও এসেছি।… বাইরে পদশব্দ শোনা যেতেই হ্যারি থেমে গেল। প্যাঁচানো সিঁড়ি দিয়ে কে যেন আসছে!
আপনি যান, হ্যারি সিরিয়সকে বলল–কে যেন ঘরের দিকে আসছে।
ফায়ার প্লেসে একট পপ শব্দ হল।
সিরিয়স চলে গেলেন। ভয় পাবার কিছু ছিল না। পদশব্দ রনের। রনের পরনে লাল পাজামা, ঘরে ঢুকে ও হ্যারিকে দেখে থমকে দাঁড়াল। ঘরটার চতুর্দিকে তন্ন তন্ন করে তাকাল।
কার সঙ্গে কথা বলছিলে? রন বলল।
হ্যারি একগুয়ের মতো বলল–তাতে তোমার কী?… এত রাতে তুমিই বা এখানে এসেছ কেন?
রন বলল–ডরমেটরিতে তোমার বেড়ে তোমায় দেখতে পেলাম না… তাই।
বুঝেছি গোয়েন্দাগিরি করতে এসেছে?
ভুল করছ। বেশ আমি চললাম আমার ঘরে।… তবে তুমি ভুল করছ।… যাকগে, তুমি তোমার আসন্ন সাক্ষাৎকারের জন্য প্রস্তুত থাকবে।
হ্যারি একটা পটার রিয়েলী স্টিংকস ব্যাজ টেবিল থেকে নিয়ে সেটা হাত দিয়ে দুমড়ে–মুচড়ে রনের দিকে ছুঁড়ে মারল। ওটা সোজা গিয়ে রনের কপালে লেগে ছিটকে পড়ল।
যাও এখান থেকে, হ্যারি বলল…. মঙ্গলবার তুমি ওটা পরবে। কপালে কাটা দাগও থাকতে পারে… তুমি তো তাই চাও… তাই না?
হ্যারি দারুণ রেগে আছে। রন কাছে এলে ওকে একটা ঘুষিও মারতে পারে। চাইল রন–ও যেন পাল্টা আক্রমণ করে। কোনো উত্তর না দিয়ে রন চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। হ্যারি দৌড়ে ঘরে চলে গিয়ে বিছানায় শুয়ে রাগে ফোঁস ফোঁস করতে লাগল। রনকে বিছানায় আসতে দেখল না।