তুমি বেলুন ফোলাবে? না, না, কখনও নয়! কখনও নয়!–বলে বিলু তেড়ে এল।
বেলুন-ধরা রোগা হাতখানা বিলুর নাগালের বাইরে সরিয়ে নিয়ে প্রীতম একটু ছেলেমানুষের হাসি হেসে বলল, পারব। দেখো, ঠিক পারব।
পারলেই কী? রোগা শরীরে যদি শেষে না সয়?
কিছু হবে না। লাবুর জন্মদিনে আমার তো কিছু করার সাধ্য নেই। এটুকু করতে দাও।
অনেকগুলো চোপসানো বেলুন দু’ হাতের আঁজলায় নিয়ে লাবু একটু থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিছানার পাশে। বিকেল হয়ে এসেছে, তবু কেউ বেলুনগুলো ফোলাচ্ছে না দেখে তার একটু দুশ্চিন্তা হয়েছিল বলে সে শেষ পর্যন্ত বাবাকে এসে ধরেছিল, বেলুনগুলো একটু ফুলিয়ে দেবে, বাবা? সবাইকে বলেছি, কেউ শুনছে না। কিন্তু বাবার যে বেলুন ফোলানোও বারণ তা সে বুঝতে পারেনি।
বিলু মেয়ের দিকে ফিরে কঠিন চোখে তাকিয়ে বলল, বেলুন ফোলানোর জন্য আর লোক ছিল? কে তোকে বাবার কাছে আসতে বলেছে?
লাবু ভয়ে কাঁটা হয়ে বলে, বিন্দুদিকে বলেছিলাম। দিল না তো! তুমিও দিচ্ছ না।
তাই বাবার কাছে আসতে হবে?
প্রীতম গম্ভীর স্বরে বলে, ওকে বকছ কেন? ও কী বোঝে?
বিলুও বোঝে না। ওর যখন রাগ হয় তখন ও কিছুই বুঝতে চায় না। না যুক্তি, না ভাল কথা। একনাগাড়ে তখন কেবল নিজের ঝাল ঝেড়ে যায়। লঘু অপরাধে লাবু প্রায়ই অত্যন্ত গুরু দণ্ড ভোগ করে। প্রীতমের সে বড় জ্বালা। তার চেয়ে লাবুর জন্ম না হলেও বুঝি ভাল ছিল!
বিলু প্রীতমের দিকে চকিতে ফিরে দাঁড়িয়ে বলল, খুব বোঝে। তুমি ওর হয়ে একদম কথা বলবে না। সারাদিন আমি ভোগ করছি, শাসন করার অধিকারও আমার হাতেই ছেড়ে দাও।
প্রীতম মৃদু স্বরে বলে, আজকের দিনটা যাক। আজ ওর জন্মদিন।
বিলু মেয়েকে নড়া ধরে সরিয়ে নিতে নিতে বলল, ছেড়ে দিয়ে দিয়েই তো এরকম বেয়াড়া হয়ে উঠেছে।
প্রীতম বালিশে শরীরের ভর ছেড়ে দিল। চোখ বুজল। শরীরে তেমন কোনও ক্লান্তি নেই, কিন্তু এই ছোট্ট ব্যাপারটায় মনটা চুমকে গেল।
বাঁ হাতে ধরা বেলুনটাকে বার বার আঙুলে নিষ্পেষিত করল সে। স্থিতিস্থাপক রবার তার শক্তিহীন আঙুলের ফাঁকে লুকোচুরি খেলল কিছুক্ষণ।
লাবুর আজ তিন বছর পূর্ণ হল। তখন ডিসেম্বরের শেষ। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই লাবু একটা কিন্ডারগার্টেনে পড়তে যাবে। বিন্দু ওকে পৌঁছে দেবে, আবার নিয়ে আসবে ছুটির পর। তারপর একদিন একা একাই স্কুলে যাবে লাবু। ফ্রক ছেড়ে শাড়ি ধরবে। তখন প্রীতম কোথায়?
আমি তখন কোথায়? এ কথা ভাবতে গিয়েই বোধহয় প্রীতমের বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যুর ওত পেতে থাকা জীবাণুরা কোলাহল করে ওঠে শরীর জুড়ে। তারা এই সব দুর্বল মুহূর্তগুলির জন্যই তো অপেক্ষা করে থাকে!
প্রীতম বিপদের গন্ধ পেয়ে টপ করে চোখ খোলে। বালিশ থেকে মাথা তুলে চারদিকে চায়। বলে, ভাল আছি। ভাল আছি। খুব ভাল আছি। কিছু হয়নি আমার।
বলতে বলতে হাতের বেলুনটা মুখে নিয়ে এক ফুয়ে টনটন করে ফুলিয়ে তোলে সে। তারপর ডাকে, লাবু! লাবু!
লাবু প্রথমে সাড়া দেয় না। আরও কয়েকবার ডাকে প্রীতম।
লাবু খুব মৃদু, ভিতু পায়ে পরদাটা সরিয়ে জড়োসড়ো হয়ে ঘরে ঢুকে চৌকাঠের কাছেই দাঁড়িয়ে চেয়ে থাকে।
বিছানায় ডিমসুতো রেখে গিয়েছিল লাবু। বেলুনের মুখটা বেঁধে ফেলতে পারল প্রীতম। একগাল হেসে বেলুনটা লাবুকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল, হয়নি?
লাবুও ছোট ছোট ইঁদুরের মতো দাঁত দেখিয়ে হাসল।
প্রীতম বলল, সব বেলুন নিয়ে এসো, ফুলিয়ে দিই।
মা জানলে?
জানুক। তুমি আনো তো!
অধৈর্যের গলায় বলে প্রীতম! এক্ষুনি কোনও কাজ নিয়ে তার ব্যস্ত হয়ে পড়াটা দরকার। শরীরের ক্ষিপ্ত জীবাণুরা আফ্রিকার নরখাদকের মতো মৃত্যুনাচ নাচছে।
লাবু চোখের পলকে পাশের ঘর থেকে আঁজলা করা বেলুন নিয়ে এসে প্রীতমের বিছানায় ছড়িয়ে দিয়ে বলে, মা বাইরে গেছে। খুব তাড়াতাড়ি করো, বাবা।
মেয়ের সঙ্গে একটু বোঝাপড়ার চোখাচোখি হয় প্রীতমের। দু’জনেই একটু হাসে।
একটা বুটিদার হলুদ বেলুন ফুলিয়ে দিয়ে প্রীতম বলে, তোমার মা কোথায় গেছে?
মিষ্টির দোকানে। অর্ডার দেওয়া ছিল, নিয়ে আসতে গেছে। তুমি দেরি কোরো না।
প্রীতম দেরি করে না। যথেষ্ট দম পাচ্ছে সে। বুকভরা অফুরন্ত বাতাস। মুহুর্মুহু ফুয়ে সে বেলুনগুলি ফুলিয়ে তুলছে। আপনমনে হাসছেও সে। এ যেন এক অদ্ভুত জীবনমরণের খেলা।
মা আসছে কি না বারান্দায় গিয়ে দেখি, বাবা?
দেখো। আসতে দেখলেই একটা টু দিয়ে।
আচ্ছা।–বলে লাবু ছুটে ঝুলবারান্দায় চলে যায়।
আজ তিন বছর পূর্ণ হয়ে গেল লাবুর। কেমন যেন বিশ্বাস হয় না। তিন-তিনটে বছর যেন মাত্র কয়েক মাস বলে মনে হয়।
ডিসেম্বরের শেষ দিকে এক বিকেলে জগুবাজারে বিলুকে নিয়ে দু’-চারটে জিনিস কিনতে বেরিয়েছিল প্রীতম। বিলুর তখন দশমাস চলছে। যে-কোনওদিনই বাচ্চা হতে পারে। নার্সিং হোম ঠিক করা ছিল। ঘন ঘন চেক-আপ চলছিল।
জগুবাজারে এক মনোহারি দোকানে কেনাকাটা করার সময় বিলু হঠাৎ তার কানে কানে বলল, বাড়ি চলো। আমার শরীর ভাল লাগছে না।
কীরকম লাগছে?
ভাল নয়। চিনচিনে ব্যথা।
প্রীতম এক সেকেন্ডও দেরি করেনি। ট্যাক্সি না পেয়ে টানা-রিকশায় বিলুকে তুলে সোজা চলে গেল ডাক্তার বোসের চেম্বারে। বোস তৈরিই ছিলেন। হেসে বললেন, দেরি আছে। তবু এখনই ভরতি করে দেওয়া ভাল। নইলে বেশি রাত হয়ে গেলে বিপদ হতে পারে।
বাড়ি ফিরে এসে তারা নার্সিং হোমে যাওয়ার জন্য গোছগাছ করতে বসল। কিন্তু নিরেট অনভিজ্ঞতার দরুন কী লাগবে না লাগবে তা না জেনে সুটকেস বোঝাই করছিল শাড়ি আর ব্লাউজ আর কসমেটিকসে! বিলু একটু পরেই হাঁফিয়ে গিয়ে শুয়ে পড়ল। প্রীতম তখন বেডিং বাঁধছে। পাশের ফ্ল্যাটের মাদ্রাজি পরিবারের এক বুড়ি এসে এখন সহজ বাংলায় বিলুকে বললেন, তুমি এখন কেবল হাঁটাচলা করতে থাকো, একটুও বসবে না। তারপর প্রীতমকে ধমকে বললেন, নার্সিং হোমে বিছানা আছে। তোমাকে বেডিং নিতে কে বলেছে? সুটকেসে পাউডার-ক্রিম-ফাউন্ডেশন দেখে বুড়ি হেসেই খুন। বললেন, নার্সিং হোমে যা লাগে তা হল প্রচুর পরিমাণে পরিষ্কার ন্যাকড়া। যত পারো ছেড়া কাপড় নাও। আর পরবার জন্য দামি শাড়ি কক্ষনও নেবে না, নার্সিং হোমের জমাদারনি, আয়া, ঝি-রা সব নিয়ে নেবে।
সন্ধে সাতটা নাগাদ বিলু নার্সিং হোমে ভর্তি হয়ে গেল। তখনও ব্যথা-ট্যথা ওঠেনি ভাল করে। একজন সিস্টার প্রীতমকে বললেন, আপনি বাড়ি চলে যান। এখও অনেক দেরি আছে।
মানুষের আত্মীয়স্বজন কাছে না থাকা যে কত মারাত্মক তা সেদিন হাড়ে-হাড়ে টের পেয়েছিল। প্রীতম। কেউ কাছে নেই, একটা সান্ত্বনার কথা বলার মতো লোক নেই, আগ বাড়িয়ে সাহায্য করার মতোও কেউ নেই, আছে শুধু পকেটভর্তি টাকা। কিন্তু টাকা দিয়ে কি সব কেনা যায়?
ডাক্তার বোস চিকিৎসক খারাপ নন। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে নামও আছে। কিন্তু লোকটা অসম্ভব টাকা চেনে। অফিসের এক কলিগই প্রীতমকে ডাক্তার বোসের কথা প্রথম বলেছিল। কিন্তু সেই সঙ্গে সে এও বলেছিল, দেখবেন, এ কিন্তু কথায় কথায় সিজারিয়ান করে। সিজারিয়ানে টাকা বেশি তো! আপনি সহজে সিজারিয়ানে রাজি হবেন না।
কিন্তু রাজি হতে হয়ওনি প্রীতমকে। নার্সিং হোমে মাদ্রাজিদের ফ্ল্যাটের ফোন নম্বর দেওয়া ছিল। সারা রাত জেগে দুশ্চিন্তা ভোগ করে যখন সকালের দিকে একটু ঘুমিয়েছে প্রীতম, তখনই তাকে জাগিয়ে সেই বুড়ি খবর দিয়ে গেলেন, অপারেশন করে বিলুর বাচ্চা বের করতে হবে। অবস্থা ভাল নয়। বিছানা ছেড়ে কোনও রকমে পোশাক পরে প্রায় মুক্তকচ্ছ হয়ে ছুটেছিল প্রীতম।
নার্সিং হোমে গিয়ে গাড়লের মতো দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করার ছিল না প্রীতমের। বিলুকে ও টি-তে নিয়ে গেছে। তার অবস্থা কীরকম তা কেউই বলতে পারছে না।
কতগুলো সময় আসে যখন মানুষের কিছুই করার থাকে না। তখন তাকে অসহায়ভাবে দর্শকের আসনে বসে থাকতে হয়। তার সামনে তখন যা করার তা করে যায় ভাগ্য বা নিয়তি। প্রীতম নার্সিং হোমের লাউঞ্জে বসে রইল স্থির হয়ে! শরীর স্থির, কিন্তু মনের মধ্যে এক ঘূর্ণিঝড়। বিশাল, ব্যাপ্ত প্রচণ্ড এক সর্বনাশের ভয়। তার ওপর সে একা, একদম একা। বোজানো চোখের পাতা ভিজিয়ে জল নেমে এল ফোঁটায় ফোঁটায়, বিলুর মৃত্যু সে সহ্য করতে পারবে না। বিড় বিড় করে সে বলল, ওকে বাঁচিয়ে দাও, বাঁচিয়ে দাও। কাকে বলল কে জানে! এমন সময় ডাক্তার বোস এসে কাঁধে হাত রাখলেন।
বিলু তখন হতচেতন। হাতে ছুঁচ, কবজি বাঁধা। আয়া ন্যাকড়ায় জড়ানো রক্তের দলা বাচ্চাটাকে এনে দেখাল। হতবুদ্ধি প্রীতম তখন কী দেখল, কীই-বা বুঝল, তা আজ আর মনে করতে পারে না। শুধু মনে আছে বিলুর হাতে বেঁধানো সেই স্যালাইনের চুঁচ, ফ্যাকাসে মুখ, মৃত্যুনীল চোখের দুটো পাতা। আর রক্তাভ একটা মাংসের পুঁটলির মতো সদ্যোজাত লাবু। কোনও ভালবাসা, টান, স্নেহ কিছুই বোধ করেনি সেদিন।
কিন্তু তারপর যত দিন গেছে, যত লাবুর চোখ-মুখ স্পষ্ট হয়েছে, যত পাকা হয়ে উঠেছে সে ক্রমে ক্রমে, তত তার দিকে ভেসে গেছে প্রীতম। কিন্তু সে কি তিন বছর? এই তো মোটে সেদিনের কথা!
নিজের কৃতিত্বে খুবই তৃপ্ত হল প্রীতম। মোট পনেরোটা বেলুন ফুলিয়েছে সে। তার মধ্যে অন্তত চারটে বিশাল লম্বা, আর চারটে বিশাল গোল। বিছানা উপচে ফোলানো বেলুনগুলো লাফিয়ে লাফিয়ে নেমে ঘরময় ছড়িয়ে পড়ছিল। গোটা দুই দুমদাম ফেটেও গেল।
ছুটে এসে লাবু অবাক।
ওমা, কত কটা ফুলিয়েছ, বাবা!
প্রীতম গর্বের হাসি হেসে বলে, আরও ফোলাব। তুমি বেলুনগুলো কুড়িয়ে আনো, তোড়া বেঁধে দিই। সিলিং থেকে ঝুলিয়ে দিলে সুন্দর দেখাবে।
কে ঝোলাবে? তুমি?
কে ঝোলাবে সেইটেই প্রশ্ন। প্রীতম একটু গম্ভীর হয়ে যায়। তাদের যে কেউ নেই। সে, বিলু আর লাবু। ব্যস, এইটুকুতেই তারা শেষ।
প্রীতম বলল, কেউ না ঝোলালে আমিই ঝুলিয়ে দেব।
পারবে?
পারব। চেষ্টা করলে পারা যায়।
মা বকবে না?
বকলে বকবে।
লাবু বেলুন কুড়িয়ে নেয়। খুব যত্নের সঙ্গে অতিকায় বেলুনের তোড়া বাঁধতে বসে যায় প্রীতম। হাত-পায়ের প্রবল আড়ষ্টতা, শরীরের দুর্বলতা, কোনওটাকেই গ্রাহ্য করে না। দাঁতে দাঁত চেপে সে মনে মনে বলে, ভাল আছি। ভাল আছি। কিছুই হয়নি আমার।
এবং পারেও প্রীতম। গোড়ায় গোড়ায় বেঁধে বেলুনের একটা সুন্দর তোড়া তৈরি করে ফেলে সে।
ভীষণ অবাক হয়ে যায় লাবু। স্তম্ভিত হয়ে বাবার হাতের এই শিল্পকর্ম দেখে সে। দেখতে দেখতে মুগ্ধ হয়ে সে বাবার খুব কাছে চলে আসে। এমনকী বাবার ঊরুর ওপর কনুইয়ের ভর রেখে মাথাটা পাঁজরে ঠেকিয়ে বসে লাবু। তারপর বলে, আরও বেলুন আনব, বাবা?
আগে চলো এটা ঝুলিয়ে দিই।
বিন্দুদিকে ডাকি? ডাকো। ওকে বাইরের ঘরে ফ্যানের নীচে একটা চেয়ার দিতে বলো।
ফ্যানের সঙ্গে বাঁধবে?
হ্যাঁ।
দৌড়ে গিয়ে লাবু বিন্দুকে ধরে আনে।
বিন্দু এমনিতে বেশি কথা বলে না। সারাদিনই সে চুপচাপ। কিন্তু এখন থাকতে না পেরে বলল, আপনি টাঙাবেন? একা বাথরুমে যেতে পারেন না আপনি, টাঙাতে গেলে পড়ে যাবেন যে।
পারব। তুমি চেয়ারটা একটু ধরে থেকো।
আমিও ধরব, বাবা।–লাবু বলল।
সবটাই প্রীতমের কাছে লড়াই। সাংঘাতিক এক লড়াই। কোটি কোটি জীবাণুর বিরুদ্ধে মরণপণ যুদ্ধ।
শোওয়ার ঘর থেকে বসার ঘরের দূরত্ব তার কাছে এখন কয়েক মাইল। বিন্দু বাইরের ঘরে ফ্যানের নীচে একটা কাঠের মজবুত চেয়ার পঁড় করিয়েছে। প্রীতম বিছানা থেকে নেমে তার শুকিয়ে আসা দুই থরোথরো পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াল। দাঁড়িয়েই মনে হয়, পারব না।
বিন্দু পরদা সরিয়ে দেখছিল। সেও বলল, পারবেন না।
প্রীতমের পা দুটো এই কথা শুনেই যেন লোহার শিকের মতো শক্ত হয়ে গেল। বাতাসে হাত বাড়িয়ে অভ্যাসবশে একটা অবলম্বন খুঁজল প্রীতম। পেল না।
একটু টলে গেল সে। তারপর আবার সোজা হল। লাবু আর বিন্দুকে অন্যমনস্ক রাখার জন্য সে খুব স্বাভাবিক গলায় জিজ্ঞেস করল, আজ কাদের নেমন্তন্ন করেছ, লাবু?
পাশের ফ্ল্যাটের ঊষারা সবাই। আর সেজোমামা, অরুণমামা, ছোটমামা আরও অনেক আছে, বাবা।
প্রীতম চার-পাঁচ পা এগিয়ে গেল। দরজার চৌকাঠ হাতের নাগালে পেয়ে ধরে ফেলল। বলল, কী কী খাওয়াবে?
মিষ্টি, মাংস, লুচি।
আচ্ছা।–বলে চৌকাঠ পেরিয়ে প্রীতম নিরালম্ব হয়ে আবার কয়েক কদম এগোয়।
পারবে, বাবা?
পারব। ভেবো না।
বিন্দু চেয়ারটা শক্ত করে ধরে। নিচু সিলিঙের আধুনিক ফ্ল্যাট বলে পাখাটাও খুব উঁচুতে নয়। প্রীতম একটু দম নিয়ে ওপরের দিকে চেয়ে স্ট্র্যাটেজিটা ঠিক করে নিল। তারপর হামাগুড়ি দিয়ে চেয়ারে উঠে পড়ল ধীরে ধীরে।
মাথাটা একটু ঘুরছে।
সে বলল, মাংসটা কি বাড়িতেই রান্না হবে?
লাবু বলে, না তো। অরুণমামা বাইরে থেকে মাংস আনবে।
ও। খুব ভাল। আর লুচি?
লুচিও বাইরে থেকে আনা হবে।—এ কথাটা বিন্দু বলল।
ঘরে কিছু হচ্ছে না?
বলতে বলতে প্রীতম চেয়ারের পিঠে ভর দিয়ে ধীরে ধীরে দাঁড়ায়। হাত বাড়িয়ে ফ্যানের বাটিটা ধরেও ফেলে সে।
পারবেন তো?—বিন্দু প্রবল উৎকণ্ঠায় জিজ্ঞেস করে।
খুব পারব। কাজটা মোটেই শক্ত নয়।
বাবা ঠিক পারবে, দেখো। না, বাবা?
হ্যাঁ মা। এবার তোড়াটা আমার হাতে দাও। লাবু তোড়াটা বিন্দুর হাতে দেয়। বিন্দু সেটা তুলে ধরে প্রীতমের নাগালে। বুদ্ধি করে প্রীতম তোড়ার গোড়ায় আলগা সুতো রেখেছে। যাতে বাঁধতে অসুবিধে না হয়।
পা দুটো আবার থরথরিয়ে ওঠে যে। হাঁটু ভেঙে ভেঙে আসছে না? মাথাটা বেভুল চক্কর মারছে।
তুমি কবে থেকে স্কুল যাবে, লাবু?
জানুয়ারি ফার্স্ট উইক।
সুলটা কেমন?
খুব ভাল, বাবা। ইংলিশ মিডিয়াম।
ও।
বলতে বলতে ফ্যানের একটা ব্লেডের সঙ্গে তোড়ার সুতো জড়িয়ে দিতে পারে প্রীতম।
স্কুলে যেতে তোমার ইচ্ছে করে?
হ্যাঁ-অ্যাঁ!
ভয় করে না। আমার তো ছেলেবেলায় স্কুলে যেতে খুব ভয় করত।
আমার করে না। স্কুলে কত খেলা, গল্প, হইচই।
তোমাদের স্কুল খুব ভাল। আমার স্কুলটা তো ভাল ছিল না।
কেন, বাবা?
আমরা পড়া না পারলে স্কুলে খুব মারত।
আমার স্কুলে মারধর নেই।
সেইজন্যই তো ভাল।
বলতে বলতে দ্বিতীয় সূতোটা জড়িয়ে দেয় প্রীতম। অবাধ্য পা দুটোর পথবানি সমানে চলছে। মাথাটা অদ্ভুতভাবে ঘুরছে তার। চোখে ধাঁধা লেগে যাচ্ছে বারবার।
তোমাকে স্কুলে খুব মরত, বাবা?
হ্যাঁ মারত। ৩বে আমার চেয়েও বেশি মার খেত তোমার সেজোমামা। ভীষণ দুষ্টু ছিল।
ছি ছি। সেজামামা কাঁদত না?
বেলুনের তোড়া খুবই সুন্দরভাবে সিলিং ফ্যানটাকে ঢেকে ফেলেছে! প্রীতম পারল। ধোঁয়াটে চোখে নিজের এই তাসম্ভব দুর্দান্ত কীর্তিটি দেখে একটা বিরাট শ্বাস ছাড়ল সে। আর সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত শরীরটা হঠাৎ কাচের পুতুলের মতো ভেঙে পড়ল তার।
কী হল তা বুঝতেও পারল না প্রীতম। টেব পেল চেয়ারটা টাল খেয়ে তাকে নিয়ে পড়ে যাচ্ছে। ঘরের চারটে দেয়াল চোখের ওপর পর পর ঘুরে গেল। তারপর দেখল ঘরের মেঝেটা একশো মাইল বেগে ছুটে আসছে তার দিকে।
আতঙ্কে চিৎকাপ করছে বিন্দু তার লাবু। নিরালম্ব দুই হাতে বাতাস আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করতে করতে পড়ে গেল প্রীতম। হাড্ডিসার শরীব কঠিন শানের ওপর পড়ে ঝনৎকার তুলল।
নীলাভ এক অন্ধকারের মধ্যে অনেকক্ষণ ড়ুব রইল সে। চেতনা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত নয়। সে টির পাচ্ছিল, বহু দূরে কারা যেন কথা বলছে। কেউ কি কাঁদল? কিন্তু সেসব তাকে স্পর্শ করছে না। এক অপরূপ লীলাভ অন্ধকারের মধ্যে অগাধ সাঁতার দেয় প্রীতম। ভারী ঠান্ডা, বড় মোলায়েম ভীণ সুদ এই তান্ধকার। কোনও শব্দ নেই। শুধু বিস্তার আছে। সীমাহীন অগাধ অফুরান আকাশের মতো।
আস্তে আস্তে অন্ধকার থেকে আলোয় চোখ মেলল সে। এত আলো যে চোখে ধাধা লেগে যায়। চালদিকটা প্রবলভাবে তার্থহীন। একটা ঘর, আসবাব, কয়েকটা মুখ। কানও মানে নেই এর। এরা কারা, এসব কী, এ জায়গাটা কোথায়?
কিছুক্ষণ এরকম পন্দের মধ্যে কাটাবার পর পরিপূর্ণ চেতনায় ফিরে এল প্রীতম।
লাবু বিছানার কাছেই ফোঁস ফোঁস করে কাঁদছে। বিন্দু চোখে জলের ঝাপটা দিচ্ছে। বিলু হাত বুলিয়ে দিচ্ছে বুকে। কিন্তু প্রীতম টের পায়, তার শরীরে জীবাণুদের কোলাহল থেমে গেছে। কাছেপিঠে ওত পেতে থাকা মৃত্যুভয়ের বাঘটার গায়ের গন্ধও পাচ্ছে না সে। ভাল হতেই তার সমস্ত মনপ্রাণ ছুটে গেল লাবুর দিকে।
বিলুর দিকে চেয়ে প্রীতম বলল, লাবুকে মারোনি তো? ওর কিন্তু কোনও দোষ নেই।
বিলু প্রীতমের চোখ থেকে অস্বস্তিতে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলে, একটা থাপ্পড় দিয়েছি। একটু বাইরে যেতে না যেতেই এসব কী কাণ্ড বাঁধালে তোমরা বলো তো? পাগল হয়ে গেছ নাকি সবাই?
প্রীতম মৃদু স্বরে বলে, লাবুর দোষ নেই। ওকে কেন মারলে?
তবে দোষটা কার? বেলুন বেলুন করে এতক্ষণ ও-ই সকলের মাথা গরম করে তুলেছিল।
ও আমাকে বেলুন ঝোলাতে বলেনি। আমি নিজে থেকেই যা কিছু করেছি।
কিন্তু কেন করতে গেলে? এসব বাহাদুরি কাকে দেখাচ্ছিলে?
লাবুর জন্মদিনে আমারও তো কিছু করতে ইচ্ছে হয়।
আমিই তো বেলুন সাজাতে পারতাম।
আমিও তো পেরেছি।
পেরেছ ঠিকই। কিন্তু পড়ে গিয়ে হাড়গোড ভেঙেছে কি না কিংবা আর কিছু হয়েছে কি না। বুঝতে এখন ডাক্তার ডাকতে হবে।
প্রীতম মাথা নেড়ে বলে, দরকার নেই।
তুমি চুপ করে থাকে। দরকার আছে কি না আমি বুঝব।
না, প্লিজ ডেকো না। আজকে আনন্দের দিনে ডাক্তার এলে সব মাটি হয়ে যাবে।
এখন তো আর কিছু করাব নেই। ডাক্তাবকে ফোন করে দিয়েছি। এক্ষুনি চলে আসবে।
আবার ফোন করো। আসতে বারণ করে দাও। আমার কিছুই হয়নি।
হয়নি কী করে বুঝব?
হঠাৎ প্রবল চেষ্টায় উঠে বসে প্রীতম, এই দেখো, উঠেছি। এই দেখো হাত, এই দেখে পা। বুকে হাত দাও। দেখো, হাট ঠিক ঠিক চলছে। দাও না হাত।
বিলু তবু সন্দিহান চোখে চায়। কিন্তু প্রীতমের মুখ-চোখে কোনও অস্বাভাবিকতা নেই। তবু সে বলে, তা হলে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে কেন?
ওটা পড়ার ইমপ্যাকটে। সকলেরই হয়। এখন যাও ডাক্তারকে আসতে বারণ করে দিয়ে এসো।
বলতে বলতে প্রীতম বিলুকে বিছানা থেকে প্রায় ঠেলে নামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
বিলু বলে, আচ্ছা, আচ্ছা, যাচ্ছি।
বিলু ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে প্রীতম মেয়ের দিকে চেয়ে একটু বুঝদারের হাসি হাসে। লাবুর কান্না থেমেছে। কিন্তু চোখভরা জল নিয়ে সে ফোঁপাচ্ছিল। বাবার দিকে চেয়ে সেই ফোঁপানি আর চোখের জল নিয়েই গাল ভরে হাসল।
প্রীতম জরুরি গলায় বলে, রঙিন কাগজ নেই? না থাকলে বিন্দু দোকান থেকে নিয়ে আসুক। দরজায় কাগজের শিকলি না টাঙালে কি ভাল লাগে?
লাবু হি-হি করে হাসতে থাকে আনন্দে। হাততালি দেয়।
অগত্যা দোকান থেকে রঙিন কাগজ নিয়ে আসে বিন্দু। কাঁচি আর আঠার শিশি নিয়ে বিছানায় শিকলি বানাতে বসে যায় প্রীতম। লাবু মাছির মতো লেগে আছে গায়ের সঙ্গে। বিলু দেখল, কিন্তু কিছু বলল না। শুধু খুব থমথমে দেখাচ্ছিল তাবে।
বিলু বুঝবে না, এ শুধু লাবুর নয়, প্রীতমেরও জন্মদিন। বিলু কেন, পৃথিবীর কেউই কোনওদিন বাইরে থেকে টের পাবে না, প্রীতমের ভিতরে এক ধুন্ধুমার কুরুক্ষেত্রে চলছে কৌরব আর পাণ্ডবের লড়াই। আজ সেই লড়াইতে অনেকখানি হারানো জমি দখল করে নিয়েছে প্রীতম। লাবুর সঙ্গে তাই আজ তারও জন্মদিন।
প্রীতমের শিকলি তৈরির অভ্যাস ছিল ছেলেবেলায়। সরস্বতী পূজোর প্যান্ডেল সে বড় কম সাজায়নি আবার সেই উত্তাপ ফিরে এল আজ। অল্প সময়ের মধ্যেই সে মস্ত মস্ত শিকলি বানিয়ে ফেলে। ঘরদোর সাজাতে সাজাতে এসে বিলুও মাঝে মাঝে অবাক হয়ে দেখছে। কিছু বলছে না, কিন্তু চোখের দৃষ্টিতে অবাক হওয়ার ভাবটা স্পষ্টই ফুটে উঠেছে। একবার মুখ ফুটে বলেই ফেলল,
আমি তো ভেবেছিলাম তোমার অসুখ বলে এবার লাবুর জন্মদিনটা নমো-নমো করে সারব।
প্রীতম একটু বিবর্ণ হয়ে বলে, আমার অসুখ! না, আমার তো অসুখ নেই। আমি ভাল আছি। শোনো বিলু, লাবুর জন্মদিনে কেবল দোকানের খাবার দিয়ে অতিথিদের বিদেয় করাটা কি ভাল?
তবে কী করব? আমার তো খাবার তৈরি করার সময় নেই।
বেশি নয়, অন্তত একটা কোনও আইটেমে এই ঘরের কীর হাতের ছোঁয়া থাকা ভাল।
বিলু একটা ক্লিষ্ট শ্বাস ফেলে বলে, এখন তো সময়ও নেই। তবু হুকুম করো, করব।
প্রীতম হেসে ফেলে। বলে, দুঃখের সঙ্গে নয়, আনন্দের সঙ্গে যদি করতে পারো তা হলে বলি।
বিলু ক্ষীণ একটু হাসল, ঠিক আছে। আনন্দের সঙ্গেই করব না হয়।
বলছিলাম কী, লুচির সঙ্গে একটু বেগুন ভেজে দাও। অতিথির সংখ্যা তো খুব বেশি নয়। পারবে না?
পারব।
ভারী তৃপ্ত হল প্রীতম। গভীর শ্বাস ছাড়ল একটা। মনে মনে বলল, আজ আমারও জন্মদিন! আমারও জন্মদিন! ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত শরীরে ঝিমুনি এল। বালিশে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল প্রীতম।
যখন আবার চোখ মেলল তখন বাইরের ঘরের দরজায় রঙিন শিকলি ঝুলছে, ঘরের এ-কোণ ও-কোণ জোড়া রঙিন কাগজের ফেস্টুন, বেলুনের তোড়া থেকে বহুরঙা আনন্দ ঝরে পড়ছে। বাইরের ঘর গম গম করছে অতিথিদের কলরোলে।
এসো সেজদা।–বলে বিছানায় উঠে বসল প্রীতম। দীপ ঘরে ঢুকে একটা চেয়ার টেনে বিছানার কাছে বসল।
কেমন আছিস, প্রীতম?
ফাইটিং। জোর লড়াই দিচ্ছি সেজদা।
তোকে একটু ব্রাইট দেখাচ্ছে।
ভিতরেও খুব ব্রাইটনেস ফিল করছি।
খুব ভাল। খুব ভাল। তোর কোনওদিন খারাপ কিছু ঘটতেই পারে না। তুই বড় ভাল যে।
প্রীতম লজ্জায় লাল হয়ে বলে, বহুকাল আসোনি, সেজদা। ব্যস্ত ছিলে?
ব্যস্ত? তা বলা যায়। আসলে একটা হুইমজিক্যাল লোকের খিদমত করতে হয় তো। মাঝখানে দুম করে আমেদাবাদ, বোম্বে আর হায়দ্রাবাদ ঘুরে আসতে হল বাসের সঙ্গে।
বেশ চাকরি তোমার, সেজদা। খুব টুর পাও!
দীপনাথ বিষণ্ণ হেসে মাথা নেড়ে বলল, টুর পাওয়াটা তখনই ভাল লাগে যখন দুশ্চিন্তা থাকে।
তোমার আবার দুশ্চিন্তা কী? বিয়ে করোনি, দায়দায়িত্ব নেই। ঝাড়া হাত-পা।
অনেক উঞ্ছবৃত্তি করতে হয় রে, প্রীতম। তুই বুঝবি না।
প্লেট হাতে বিলু খুব ব্যস্তভাবে রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে থমকে দাঁড়িয়ে বলল, ঘুম ভাঙল কখন?
এইমাত্র।—প্রীতম হাসিমুখে বলে, বেগুনভাজা কি করেছ, বিলু?
করিনি আবার! কতার হুকুম, না করে উপায় আছে? তোমাকে এবার কিছু খেতে দিই। অনেকক্ষণ খাওনি।
দাও।—খুব আগ্রহের সঙ্গে বলে প্রীতম, সব আইটেম দিয়ে।
বিলু চোখ কপালে তোলে, সব আইটেম মানে? তোমার জন্য স্টু করা আছে, পাউরুটি টোস্ট করে দিচ্ছি।
প্রীতম প্রবলভাবে মাথা নেড়ে বলে, না, না। আমি লাবুর জন্মদিনের নেমন্তন্ন খাব।
বিলু হাসে, তাই কি হয়? ওসব দোকানের জিনিস। তুমি রুগি মানুষ, সইবে কেন?
ফের বিবর্ণ হয়ে যায় প্রীতম, কে বলল আমি রুগি? তাহলে বেলুন টাঙাল কে? শিকলি বানাল কে?
ওঃ! তাই তো! আমার ভীষণ ভুল হয়ে গিয়েছিল।
যেভাবে লাবুকে মাঝে মাঝে ভোলায় ঠিক সেইভাবে প্রীতমকে ভুলিয়ে বিলু বলল, আচ্ছা, তাহলে অল্প করে দেব।
বলে বিলু চলে যায়।
বিলুর যাওয়ার দিকে চেয়ে থেকে দীপ মাথা নেড়ে বলে, বিলুকেও আজ একটু ব্রাইট দেখাচ্ছে।
শুধু তোমাকেই দেখাচ্ছে না, সেজদা।
গোটা দুনিয়াটারই ব্রাইটনেস কমে যাচ্ছে রে প্রীতম, আমি কোন ছাড়!
আমার কাছে পৃথিবীর ব্রাইটনেস একটুও কমছে না, বরং বাড়ছে। দিনে দিনে বাড়ছে। বেঁচে থাকাটাই যে কী ভীষণ আনন্দের তা লোকে বোঝে না কেন বলল তো!
দীপনাথ একটু চুপ করে বসে মিটিমিটি হাসে। তারপর আচমকা বলে, আজকাল যেন বিলুর সঙ্গে তোর একটু বেশি ভাবসাব হয়েছে রে, প্রীতম!
যাঃ, কী যে বলো! আমাদের ভাব আবার কবে ছিল না?
সে ছিল ঠান্ডা ভাব। এখন যেন সম্পর্কটা ফ্রিজ থেকে বের করে উনুনে চড়ানো হয়েছে। বেশ হাতে-গরম!
খুব হাসে প্রীতম। রান্নাঘরের দিকে মুখ ঘুরিয়ে উঁচু গলায় বলে, বিলু! বিলু! শুনে যাও সেজদা কী বলছে।