২৫শে ডিসেম্বর। ভোর ৪টা।
চারদিকে অন্ধকার। সূর্য ওঠার এখন এক ঘন্টা দশ মিনিট দেরি। এয়ারপোর্টে পৌঁছতে লাগবে কুড়ি থেকে পঁচিশ মিনিট। বেন ওয়াটসন তার দল নিয়ে ছুটতে শুরু করল। তিরিশ কিলোমিটার—এমন কোনো দূরের পথ নয়। তারা ছোটার গতি আরো বাড়িয়ে দিল। কারো মুখেই ক্লান্তির কোন ছাপ নেই। কোন শব্দও উঠছে না।
বেন ওয়াটসনের মনে হল, জনাথন এদের ভালোই ট্রেনিং দিয়েছে। এয়ারপোর্টে পৌঁছে বেন ওয়াটসনের বিস্ময়ের সীমা রইল না। একটি পুরোপুরি পরিত্যক্ত জায়গা। একতলা একটি দালানে মজুরশ্রেণীর পাঁচ-ছ জন জড়াজড়ি হয়ে ঘুমুচ্ছে। এছাড়া ত্ৰিসীমানায় কেউ নেই। ঘরের দরজা-জানালা ভাঙা ভাঙা জানালায় হু-হু করে হাওয়া খেলছে।
লোকগুলি ঘুম ভেঙে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। বেন ওয়াটসন জিজ্ঞেস করল, কেউ ইংরেজি জান?
কোনো উত্তর নেই। ওরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে।
কেউ ইংরেজি জান না?
ওরা নিজেদের মধ্যে বিড়বিড় করল। এদের দেখে মনে হয় না কেউ ইংরেজি জানে।
কেউ জানে না?
স্যার, আমি জানি।
তুমি কে? আমি স্যার একজন কন্ট্রাক্টর। এই এয়ারপোর্ট ঠিক করার কন্ট্রাক্ট নিয়েছি।
ভালো করেছ। এখানে কোনো পাহারা থাকে না?
জ্বিনা স্যার, পাহারা থাকবে কেন?
তাও তো কথা। রানওয়ে ঠিক আছে?
আছে স্যার। মোটামুটি আছে। আপনারা কারা?
আমরা কারা তা দিয়ে তোমাদের দরকার নেই। তোমরা গরম পানির ব্যবস্থা করতে পারবে?
পারব স্যার। পানির ব্যবস্থা কর। আর শোন, তোমাদের কেউ এখান থেকে পালাবার চেষ্টা করবে না। যদি আমরা বুঝতে পারি তোমাদের কোনো মতলব আছে, তা হলে সঙ্গে-সঙ্গে গুলি করা হবে। আমরা মানুষ ভাল নই।
কতটুকু গরম পানি করব স্যার?
আমার কাছে কফি বিস আছে। সবাই মিলে কফি খাব, কাজেই বুঝতে পারছ কতটুকু পানি লাগবে।
জ্বি স্যার।
পানি গরম হবার পরপর তুমি তোমার লোকজন নিয়ে রানওয়ে পরীক্ষা করতে যাবে। একটা ডেকোটা প্লেন নামবে। ঠিকমতোনামতে পারে যাতে, সে-ব্যবস্থা করবে। তোমাদের কাছে কিছু মালমশলা নিশ্চয়ই আছে।
আছে স্যার। গুড, ভেরি গুড।
বেন ওয়াটসন কফির পেয়ালা হাতে বাইরে অপেক্ষা করতে লাগল। তার মুখ ভাবলেশহীন। এয়ারপোর্ট দখল করতে তাকে একটি গুলিও খরচ করতে হয় নি, এটা তাকে মোটও প্রভাবিত করে নি। তাকে দেখে মনে হয়, এরকম হবে তা সে জানত।
শীতের ভোরবেলায় গরম কফি চমৎকার লাগছে। বেন ঘড়ি দেখল। ফোর্টনকে। যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।