১৯. একটা দুঃস্বপ্ন

রাত তিনটায় ফয়সল সাহেব একটা দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে উঠলেন। তার ইদানীং কালের স্বপ্নগুলি অস্পষ্ট কিন্তু আজ রাতের স্বপ্ন অত্যন্ত স্পষ্ট। তিনি দেখলেন একটা প্রকাণ্ড নেকড়ের মতো জন্তু তাকে কামড়াচ্ছে। বা পায়ে কামড় দিয়ে একটুকরা মাংস সে ছিঁড়ে নিল। তিনি জেগে উঠলেন বা পায়ে তীব্র ব্যথা নিয়ে। জেগে উঠে ও তার মনে হল সত্যি সত্যি তার পা থেকে নেকড়েটা বোধ হয় ংস ছিঁড়ে নিয়েছে। মাঝে মাঝে স্বপ্ন ও সত্যের সীমারেখা অস্পষ্ট হয়ে যায়। তিনি ভয় পাওয়া

গলায় বীথিকে ডাকতে লাগলেন। বীথি এল প্ৰায় সঙ্গে সঙ্গেই। নরম স্বরে বলল, কী হয়েছে স্যার?

স্বপ্ন দেখেছি।

কী স্বপ্ন?

কী স্বপ্ন মনে নেই। তুমি ওসমানকে টেলিফোনে ধর দেখি।

এখন অনেক রাত স্যার।

সেটা কী আমি জানি না? তোমাকে যা করতে বলেছি কর।

বীথি টেলিফোন সেট শোবার ঘরে নিয়ে এল। ওসমান সাহেবকে পেতে দেরি হল না। বীথি অস্পষ্ট স্বরে বলল, আপনি স্যারের সঙ্গে কথা বলুন।

হ্যাঁলো ওসমান?

জি। কী ব্যাপার বাবা?

ব্যাপার কিছু না। তুই কী করছিলি?

ঘুমাচ্ছিলাম। রাত তিনটা বাজে।

রাত তিনটা বাজিলেই ঘুমাতে হবে এমন কোনো কথা নেই। রাত তিনটার সময়ও অনেকে জেগে থাকে।

তা থাকে। আপনি কিছু বলবেন?

হ্যাঁ বলব। আমি এই বাড়িটা বীথির নামে দানপত্র করতে চাই।

করতে চান করুন।

তা তো করবই। তোর অনুমতি লাগবে নাকি? আমি করেই রেখেছি। আলমারীতে দলিল আছে। তোকে টেলিফোন করলাম। এই জন্য যাতে পরে কোনো ঝামেলা না হয়।

কী ঝামেলা হবে?

তোর যদি মনে করে বসিস যে আমার মাথার ঠিক ছিল না। কোট-কাছারি করা শুরু করিাস।

এ সব কিছুই করব না। আপনার শরীর কী ঠিক আছে?

ফয়সল সাহেব কিছু না বলে টেলিফোন নামিয়ে রাখলেন। বীথিকে বললেন, আমার মধ্যে যে সব খারাপ জিনিস আছে তার কোনোটাই আমার ছেলের মধ্যে নেই। ও ছোট বেলা থেকে আমাকে দেখে দেখে নিজেকে ঠিক করেছে। অবিশ্বাস্য ব্যাপার। মানুষ উল্টোটা করে। খারাপটাই শেখে।

বীথি বলল, আপনার কী শরীর খারাপ লাগছে?

হুঁ লাগছে। তুমি একটা টেলিফোন কর এম্বুলেন্সের জন্যে। হাসপাতালে নিয়ে যাও। চেষ্টা করে দেখ আরো কিছুদিন বাঁচিয়ে রাখতে পার কী না।

ফয়সল সাহেব চোখ বন্ধ করে আধশোয়া হয়ে বসলেন। গেটের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অন্ধ ভিখারীর ছবিটি তার সামনে ভেসে উঠল। ভিখিরীটির সঙ্গে এবার একটি নেকড়ে আছে। নেকড়েটির মুখ হাসি হাসি। পশুরা হাসতে পারে না কথাটা ঠিক না। ছেলেবেলোয় ভালুকের খেলা দেখাতে একটি লোক এসেছিল। তার স্পষ্ট মনে আছে ভালুকটা তার দিকে তাকিয়ে হাসছিল। ভয়ঙ্কর একটি দৃশ্য। তিনি প্রায় রাতেই এই ভালুকটাকে স্বপ্নে দেখতেন।

ফয়সল সাহেব চোখ মেললেন। বীথি টেলিফোন করছে। কী সুন্দর লাগছে! কী চমৎকার একটি দৃশ্য।

বীথি।

জি স্যার।

পাওয়া গেছে কাউকে?

এম্বুলেন্স আসছে স্যার।

কাউকে খবর দেয়ার দরকার নেই। তুমি একাই আমাকে নিয়ে যাও।

বীথি ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলল।

ফয়সল সাহেব মারা গেলেন এম্বুলেন্সে। নিঃশব্দ মৃত্যু। বীথি তার হাত ধরে বসেছিল। সে পর্যন্ত বুঝতে পারল না। যেমন হাত ধরে ছিল তেমনি ধরে থাকল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *