১৯৩১। বয়স ৩২ বছর
বৈবাহিক জীবনের ১০ মাসের মাথায় কন্যা মঞ্জুশ্রীর জন্ম। জন্মতারিখ : ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ, ৩ ফাল্গুন ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ। কিন্তু জীবনানন্দ দাশের Literary Notes (১৯৪৭)-এর সুবাদে জানা যায়—মঞ্জুশ্রী দাশের জন্ম : ফাল্গুন ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ।
মঞ্জুশ্রীর ডাকনাম মঞ্জু। মঞ্জুশ্রী বিভিন্ন সময়ে ছাড়া ছাড়াভাবে স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। শেষজীবনে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমিতে কর্মরত ছিলেন। অল্পস্বল্প লেখালেখি করতেন। শেষ বয়সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং মানসিক রোগের চিকিৎসালয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর তারিখ : ১৯ মার্চ ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দ। ৪ চৈত্র, ১৪০১ বঙ্গাব্দ। রবিবার।
এই সময়ের জীবনানন্দ-জীবনের খণ্ডচিত্র পাওয়া যায় এভাবে
‘তাঁর প্রথম সন্তান মঞ্জুশ্রী জন্মগ্রহণ করেছে; এক মঞ্জুশ্রী ছাড়া আর কাউকে আশ্রয় করার কথা ভাবছেন না এখন; স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কটা তেমন উৎসাহব্যঞ্জক হয়ে উঠতে পারছে না। এদিকে কলকাতার পথেঘাটে ক্বচিৎ দু’একটি মেয়ে তাদের বিশিষ্ট রূপচারিত্র্য নিয়ে তাঁর চোখে আটকে যাচ্ছে, তাঁর কোনো এক অনেককাল আগের পরিচিত গ্রাম্য কিশোরীর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।’ [জীবনানন্দ দাশের দিনলিপি’, সম্পাদক : ভূমেন্দ্র গুহ]
১৯৩১-এ যখন জীবনানন্দ দাশ প্রতিষ্ঠিত-বেকার, তখন তিনি খবরের কাগজ ফেরির কথা ভেবেছেন। [সূত্র : Literary Notes: July- September 1931]
কর্মহীন জীবন বড়ই বিড়ম্বিত মনে হয় জীবনানন্দের কাছে। একা হলে কথা ছিল, সঙ্গে অন্য দুজন। স্ত্রী আর কন্যা। ওরা বরিশালে, তিনি কলকাতায়। বিরহবোধ এবং অক্ষমতা তাঁকে কুরে কুরে খাচ্ছে। ২৮.০৩.১৯৩১ তারিখে তিনি নিজের ডায়েরিতে লেখেন-
‘moneylessness, like a dirty wallowing pig, bespattering me’. অর্থহীন এই জীবন তাঁর কাছে মনে হয়, নোংরা ঘাঁটা কাদা ময়লায় গড়াগড়ি যাওয়া শুয়োরের মতো, ক্রমাগত তাকে এক কদর্য গ্লানির মধ্যে ডুবিয়ে রাখছে।
শ্রাবণ ১৩৩৮ বঙ্গাব্দে সুধীন্দ্রনাথ দত্তের সম্পাদনায় ‘পরিচয়’ পত্রিকার প্রকাশ। [১৩৩৮ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ মাসে ১ম বর্ষ ১ম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। আকার : ১০ ́ x ৬; মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৬৮, তার ভেতরে ১৩ পৃষ্ঠা বিজ্ঞাপন। প্রকাশক : শ্রীজগদ্বন্ধু দত্ত, রুম নং ১৭ স্টিফেন হাউস, ৪ ও ৫ ডালহৌসি স্কোয়ার, কলিকাতা। মুদ্রক : মডার্ন আর্ট প্রেস, দুর্গা পিতুড়ি লেন। প্রতি সংখ্যা ১ টাকা; বার্ষিক চার টাকা চার আনা]। ‘পরিচয়ে’র মাঘ ১৩৩৮ বঙ্গাব্দে প্রথম বর্ষ তৃতীয় সংখ্যায় জীবনানন্দের ‘ক্যাম্পে’ কবিতাটি প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পর অশ্লীলতার অপবাদ শুরু হয় তাঁর বিরুদ্ধে। পরিচয়গোষ্ঠীর লেখকদের মধ্যেই এই বিতর্কের সূত্রপাত হয়। ‘শনিবারের চিঠি’ ব্যাপারটিকে আরো ঘোলা করে। ক্যাম্পে’ কবিতাটি ‘পরিচয়ে’ প্রকাশিত হবার পর কবিতাটিকে চূড়ান্ত অশ্লীল বলে আখ্যায়িত করে সজনীকান্ত ‘শনিবারের চিঠি’তে লেখেন—
‘বনের যাবতীয় ভাই হরিণকে তাহাদের হৃদয়ের বোন ঘাই হরিণী ‘আঘ্রাণ’ ও ‘আস্বাদের’ দ্বারা তাহার পিপাসার সান্ত্বনার জন্য ডাকিতেছে। পিস্তুতো মাস্তুতো ভাইবোনদের আমরা চিনি। হৃতুতো বোনের সাক্ষাৎ এই প্রথম পাইলাম।’
সজনীকান্তের স্থূলতায় ক্ষুব্ধ হয়ে জীবনানন্দ এই অভিযোগের একটা ব্যাখ্যা লিখেছিলেন। তাতে বলেছিলেন যে, ‘হৃদয়ের বোন’ শব্দ-বন্ধটির জন্যে তিনি শেলীর ‘Soul’s Sister’ অভিব্যক্তির কাছে ঋণী। এখানেই নিবিড় বিরক্তি নিয়ে তিনি আরো লিখেছিলেন-
‘বাংলাদেশে সজনে গাছ ছাড়া আরো ঢের গাছ আছে।’ [‘শতভিষা’, একচত্বারিংশ সংকলন, পৃ.৭]
এই বাক্যটির আগে একই লেখায় জীবনানন্দ দুর্বোধ্যতার অভিযোগ এবং অশ্লীলতার অপবাদ খণ্ডন করার জন্য লিখেছিলেন—
‘যদি কোনো একমাত্র স্থির নিষ্কম্প সুর এ কবিতাটিতে (ক্যাম্পে) থেকে থাকে তা জীবনের—মানুষের-কীট-ফড়িঙের সবার জীবনেরই নিঃসহায়তার সুর। সৃষ্টির হাতে আমরা ঢের নিঃসহায় ক্যাম্পে’ কবিতাটির ঈঙ্গিত এই; এইমাত্র। কবিতাটির এই সুর শিকারী, শিকার, হিংসা এবং প্রলোভনে ভুলিয়ে যে হিংসা সফল পৃথিবীর এইসব ব্যবহারে বিরক্ত তত নয়, বিষণ্ন যতখানি; বিষণ্ণ-নিরাশ্রয়।’
জীবিতাবস্থায় জীবনানন্দের এই ব্যাখ্যা কোথাও ছাপা হয়নি।
এই বছরেই মার্চ থেকে অত্যন্ত নিভৃতে ছোটগল্প লেখায় মনোযোগী হন জীবনানন্দ। পরবর্তী তিন বছর নিভৃত চর্চায় একটার পর একটা ছোটগল্প লিখে গেছেন তিনি। তাঁর গল্প সংখ্যা প্রায় ৯৭। গল্পগুলোর শিরোনাম—১. আকাঙ্ক্ষা-কামনার বিলাস, ২. সঙ্গ-নিঃসঙ্গ, ৩. রক্তমাংসহীন, ৪. জামরুল তলা, ৫. নিরুপম যাত্রা, ৬. পালিয়ে যেতে, ৭. পূর্ণিমা, ৮. মেয়ে মানুষ, ৯. হিশেব-নিকেশ, ১০. কথা শুধু কথা—কথা, কথা, কথা, কথা, কথা, ১১. কুয়াশার ভিতর মৃত্যুর সময়, ১২. মেয়েমানুষদের ঘ্রাণে, ১৩. মাংসের ক্লান্তি, ১৪. বিবাহিত জীবন, ১৫. নকলের খেলায়, ১৬. মা হবার কোনো সাধ, ১৭. শুধু মাঠ, শুধু রক্ত, শুধু ভালবাসা, ১৮. প্রেমিক স্বামী, ১৯. মহিষের শিং, ২০. প্রণয় প্রেমের ভাবে, ২১. বাসরশয্যার পাশে, ২২. বাসর ও বিচ্ছেদ, ২৩. তাজের ছবি, ২৪. পাতা-তরঙ্গের বাজনা, ২৫. আর্টের অত্যাচার, ২৬. বিস্ময়, ২৭. শাড়ি, ২৮. হাতের তাস, ২৯. কোনো গন্ধ, ৩০. বেশি বয়সের ভালবাসা, ৩১. বত্রিশ বছর পরে, ৩২. তিমিরময়, ৩৩. সাত ক্রোশের পথ, ৩৪. চাকরি নেই, ৩৫. ক্ষণিকের মুক্তি দেয় ভরিয়া, ৩৬. শেষ পছন্দের সময়, ৩৭. কুষ্ঠের স্ত্রী, ৩৮. সুখের শরীর, ৩৯. নষ্টপ্রেমের কথা, ৪০. বাসর রাত, ৪১. প্রণয়-প্রণয়িনী, ৪২. মেয়েমানুষের রক্তমাংস, ৪৩. একঘেয়ে জীবন, ৪৪. কিন্নর লোক, ৪৫. হৃদয়হীন গল্প, ৪৬. বিবাহ অবিবাহ, ৪৭. শীতরাতের অন্ধকারে, ৪৮. বাসনা কামনার গল্প, ৪৯. অঘ্রাণের শীত, ৫০. অশ্বত্থের ডালে, ৫১. সমুদ্রের স্রোতের মতো, ৫২. বিচ্ছেদের কথা, ৫৩. মজলিস, ৫৪. লোভ, ৫৫. মানুষ-অমানুষ, ৫৬. জিনিসের জন্ম ও যৌবন, ৫৭. ঐকান্তিক অতীত, ৫৮. ক্ষমা-অক্ষমার অতীত, ৫৯. ভগ্নস্তূপ, ৬০. প্যাচা ও জোনাকীদের মধ্যে, ৬১. প্রণয়হীনতা, ৬২. আকাঙ্ক্ষার জগৎ, ৬৩. মৃত্যুর গন্ধ, ৬৪. প্রেম, আকাঙ্ক্ষা, দাক্ষিণ্যের তৃষ্ণা, ৬৫. লোকসানের মানুষ, ৬৬. জীবনের অন্তঃপুর ও তেপান্তর, ৬৭. মানুষের মুখের আভা, ৬৮. জন্মমৃত্যুর কাহিনী, ৬৯. জাদুর দেশ, ৭০. নক্ষত্রের বিরুদ্ধে মানুষ, ৭১. মেহগিনি গাছের ছায়ায়, ৭২. করুণার রূপ, ৭৩. এক এক রকম পৃথিবী, ৭৪. বাইশ বছর আগের ছবি, ৭৫. কবিতা আর কবিতা, তারপরেও আবার কবিতা, ৭৬. কুড়ি বছর পরে, ৭৭. রক্তের ভিতর, ৭৮. মনোবীজ, ৭৯. কবিতা নিয়ে, ৮০. রক্ত মাংসের স্পন্দন, ৮১. ধূসর পাণ্ডুলিপি, ৮২. পৃথিবীটা শিশুদের নয়, ৮৩. করুণার পথ ধরে, ৮৪. মায়াবী প্রাসাদ, ৮৫. অস্পষ্ট রহস্যময় সিঁড়ি, ৮৬. সোনালি আভায়, ৮৭. সাধারণ মানুষ, ৮৮. আস্বাদের জন্ম, ৮৯. কুড়ি বছর পর ফিরে এসে, ৯০. এক সেতুর ভিতর দিয়ে, ৯১. বৃত্তের মতো, ৯২. বাসনার দেশ, ৯৩. ভালোবাসার সাধ, ৯৪. বই, ৯৫. উপেক্ষার শীত, ৯৬. বিন্দুবাসিনী, ৯৭. সোমনাথ ও শ্রীমতি।
এ সময় ‘মৃণাল’, ‘বিরাজ’ ও ‘কল্যাণী’ নামে তিনটি উপন্যাসও রচনা করলেন জীবনানন্দ। উপন্যাসগুলো তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়।
রবীন্দ্রনাথের বয়স ৭০। বার্নার্ড শ’র সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের দীর্ঘ আলোচনা হল ৮ জানুয়ারি। সাত মাস পর ৩১ জানুয়ারি দেশে ফিরেন রবীন্দ্রনাথ। জুলাই-এ অর্থের সন্ধানে ভূপালের রাজদরবারে গেলেন। কিন্তু অর্থ সংগ্রহে ব্যর্থ হলেন। ডিসেম্বরে টাউন হলে হল সপ্তাহব্যাপী রবীন্দ্রজয়ন্তী ও চিত্র-প্রদর্শনী। এটাই ভারতে রবীন্দ্রনাথের প্রথম চিত্র-প্রদর্শনী। বক্সার দুর্গের রাজবন্দীরা রবীন্দ্র-জন্মোৎসব পালন করলেন।
১৯৩১ সালের ১৭ নভেম্বর (১ অগ্রহায়ণ ১৩৩৮) রাত এগারোটায় পটলডাঙার বাড়িতে অকস্মাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এবং অল্পক্ষণের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়। রাতেই শবদেহ কলকাতা থেকে নৈহাটির বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পরদিন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
‘ভক্ত ধ্রুব’ নাট্যচিত্রে নারদের ভূমিকায় অভিনয় করলেন কাজী নজরুল ইসলাম। এই ছায়াছবির সঙ্গীত পরিচালক নজরুল স্বয়ং। ১৮টি গানের মধ্যে ১৭টির রচয়িতা নজরুল। কলকাতার জেলেটোলা লেনে পুত্র অনরুিদ্ধর জন্ম। লেনিনের নামের অনুসরণে তার ডাক নাম রাখা হয় ‘নিনি’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে এমএ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন বুদ্ধদেব বসু।
বিজ্ঞান ও মানবমনস্তত্ত্ব বিষয়ে ব্যাপক অনুশীলনসহ দেশি-বিদেশি সাহিত্যপাঠে মনোযোগী হয়ে কলেজীয় পাঠ বিষয়ে অবহেলা করায় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমবার বিএসসি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে অকৃতকার্য হন।
ভগৎ সিংহের ফাঁসি হল, হিজলি জেলে রাজবন্দীদের ওপর গুলি চালাল পুলিশ। বিপ্লবী বিমলকৃষ্ণ আলীপুরের দায়রা জজ মি. গার্লিফকে হত্যা করে আত্মহত্যা করেন।
প্রথম বাংলা সবাক চলচ্চিত্র নির্মিত হল—শরৎচন্দ্রের ‘দেনাপাওনা’। পরিচালক প্রেমাঙ্কুর আতর্থী; শ্রেষ্ঠাংশে ছিলেন—দুর্গাদাস, নিভাননী, উমাশশী। এই ছবি চিত্রা সিনেমায় প্রথম প্রদর্শিত হল ডিসেম্বর ৩০-এ।
ভারতের বড় লাট লর্ড আরউইন পদত্যাগ করেন। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেন লর্ড ইউলিংডন।
ভারতে সপ্তম বারের মতো লোকসংখ্যা গণনা করা হয়। ভারতীয় নেতৃবৃন্দকে ঘিরে দ্বিতীয় বারের মতো গোলটেবিল বৈঠকের অনুষ্ঠান হয়। কংগ্রেসের পক্ষে যোগদান করেন মহাত্মা গান্ধী। স্যার মুহম্মদ ইকবালও এই বৈঠকে মুসলমানদের পক্ষে যোগদান করেছিলেন।
নিউইয়র্কে ১০২ তলাবিশিষ্ট জগদ্বিখ্যাত এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং-এর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়।
অস্ট্রিয়া ও জার্মানির মধ্যে আঁতাত হল। জাপান চীনের মাঞ্চুরিয়া আক্রমণ করলে লীগ অব নেশনস্ কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হল জাপান।
এ বছর যাঁরা জন্মালেন, তাঁরা হলেন শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়, পূর্ণেন্দু পত্রী, ফণিভূষণ আচার্য, বদরুদ্দীন উমর, মোবাশ্বের আলী, কণ্ঠশিল্পী আবদুল আলিম।
মৃত্যুবরণ করেছেন মতিলাল নেহরু, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, কিরণধন চট্টোপাধ্যায়, ১৯৩১ সালে সাহিত্যে নোবেল জয়ী আঙ্কেল কার্লফেল্ট।
এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন ই. আস্কেল কার্লফেল্ট (১৮৬৪ —১৯৩১)। সুইডেনের কবি তিনি।
তাঁকে পুরস্কার দেওয়ার কারণ হিসেবে নোবেল কমিটি লেখেন –
‘Because he represents our character with a style and a genuineness that we should like to be ours.’
কার্লফেল্টের বিখ্যাত গ্রন্থগুলো হল— ‘ Songs of the Wilderness and Love’, ‘Fridolin’s Pleasure Garden ‘, ‘Fridolin’s Songs’.
প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রিকা : প্রকাশিত হল রবীন্দ্রনাথের ‘রাশিয়ার চিঠি’, ‘শাপমোচন’, ‘সহজপাঠ’, ‘গীতবিতান’, ‘বনবাণী’, ‘সঞ্চয়িতা’। প্রকাশ পায় শরৎচন্দ্রের ‘শেষ প্রশ্ন, কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ভাদুড়ীমশাই’, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের ‘বিবাহের চেয়ে বড়ো’, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চৈতালী ঘূর্ণি’, জগদীশ গুপ্তের ‘লঘুগুরু’। বের হল প্রবোধচন্দ্র সেনের ‘বাংলা ছন্দে রবীন্দ্রনাথের দান’, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ‘অবরোধবাসিনী’, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘মাটির ঘর’, অতুলপ্রসাদের ‘গীতিগুঞ্জ’, অন্নদাশঙ্করের ‘পথে প্রবাসে’, করুণানিধানের শতনরী’, ধূর্জটিপ্রসাদের ‘আমরা ও তাঁহারা’।
সুধীন্দ্রনাথ দত্ত সম্পাদিত ‘পরিচয়’ পত্রিকা প্রকাশিত হল। তিনি পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন (১৯৩১–১৯৪৩)। সুধীন্দ্র-পর্বের ‘পরিচয়ে’ প্রকাশিত জীবনানন্দের কবিতা ক’টির নাম—’ক্যাম্পে’ (মাঘ ১৩৩৮), ‘সমুদ্র চিল’ (কার্তিক ১৩৪৪), ‘প্যারাডিম’ (আশ্বিন ১৩৪৭), ‘রবীন্দ্রনাথ’ (অগ্রহায়ণ ১৩৪৭)।
‘পরিচয়’-এর প্রথম বর্ষ প্রথম সংখ্যায় বিষ্ণু দে-র ‘অর্ধনারীশ্বর’ ও ‘বজ্রপাণি’ কবিতা দুটি এবং ফরাসি ঔপন্যাসিক মারশেল প্রস্ত-এর ‘উইথ ইন এ বাডিং গ্রোভ’ গ্রন্থের বিষ্ণু দে-কৃত আংশিক বঙ্গানুবাদ ‘বিচ্ছেদ’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। ১৩৯১-এর একটু আগে ‘পরিচয়’-এর শুক্রবাসরীয় আড্ডায় কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে যুক্ত হন বিষ্ণু দে। পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা হয় সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, যামিনী রায়, সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে।
নজরুল ছ’মাস কারাদণ্ড ভোগ করলেন ‘প্রলয়শিখা’র জন্যে। কালীকিঙ্কর সেনগুপ্তের ‘মন্দিরের চাবি’ বাজেয়াপ্ত হল। বিমলপ্রতিভা দেবীর উপন্যাস ‘নতুন দিনের আলো’, নরেন্দ্রনাথ দাসের ‘দীনেশের শেষ’, ‘দেশভক্ত’, ‘ফাঁসি’, ‘রক্ত পতাকা’, ‘শোকসিন্ধু’ কাব্যসমূহ নিষিদ্ধ হল।