১৯২৪। বয়স ২৫ বছর
রবীন্দ্রনাথের বয়স ৬৩। ক্ষিতিমোহন সেন, নন্দলাল বসু, এলমহার্স্ট, কালিদাস নাগকে সঙ্গে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ২১ মার্চ চীন যাত্রা করলেন, ব্যয়ভার বহন করলেন ঘনশ্যাম দাস বিড়লা। পিকিং তথা বেজিং-এ বিপুল সংবর্ধনা পেলেন কবি। তারপর সাংহাই হয়ে জাপান ঘুরে দেশে ফিরলেন ২১ জুলাই।
পেরুর স্বাধীনতা উৎসবে নিমন্ত্রিত হয়ে মাদ্রাজ, কলম্বো, প্যারিস, শেরবুর্গ হয়ে ৭ নভেম্বর বুয়েনস্ এয়ার্সে পৌঁছলেন রবীন্দ্রনাথ। তিন সপ্তাহের সমুদ্রযাত্রায় ‘পূরবী’র বহু কবিতা লেখা হল। বুয়েনস্ এয়ার্সে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর সংস্পর্শে এলেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথকে ওকাম্পো তাঁর বাগানবাড়িতে আতিথ্য দিলেন, পরিচর্যা করলেন। ‘পূরবী’ কাব্য উৎসর্গ করলেন ওকাম্পোকে। ওকাম্পোর নাম দিলেন বিজয়া’। ৩৫ বছরের ওকাম্পোর সঙ্গে ৬৩ বছরের রবীন্দ্রনাথের বন্ধুত্ব গড়ে উঠল।
মেদিনীপুর কলেজে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নজরুলের গান ও আবৃত্তিতে মুগ্ধ হয়ে স্থানীয় এক স্কুলশিক্ষকের কন্যা কমলা নিজের গলার হার খুলে নজরুলকে দেন। এই ঘটনায় সমাজে ধিক্ ত হয়ে মেয়েটি আত্মহত্যা করে। ২৪ এপ্রিল নজরুল গিরিবালা দেবীর কন্যা আশালতা সেনগুপ্তকে (জন্ম. ১৯০৮) বিয়ে করেন। বিয়ের পর নজরুল পত্নীর নামকরণ করেন— প্রমীলা। বিয়ের কাজী ছিলেন মইনুদ্দীন হোসেন। সেপ্টেম্বরে প্রথম পুত্র আজাদ কামাল ওরফে কৃষ্ণ মহম্মদের জন্ম হয় এবং ডিসেম্বরে ছেলেটির মৃত্যু ঘটে। ১০ আগস্ট ‘বিষের বাঁশী’ কাব্য গ্রন্থের প্রকাশ। প্রকাশক : কাজী নজরুল ইসলাম। নজরুল কাব্যটি উৎসর্গ করেন মিসেস এম. রহমানকে। মিসেস এম. রহমান ছিলেন নজরুল-প্রমীলার বিয়ের প্রধান উৎসাহদাত্রী। একই সঙ্গে প্রকাশিত হয় ‘ভাঙার গান’ কাব্যগ্রন্থটি। ২২ অক্টোবর ‘বিষের বাঁশী’ নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। ১১ নভেম্বর ‘ভাঙার গান’ কাব্যটি বাজেয়াপ্ত হয়। ২৪ ডিসেম্বর ‘রিক্তেন বেদন’ গল্প গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। প্রকাশক : মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক।
সত্যেন্দ্রনাথ বসু লিখলেন—’প্লাঙ্কসূত্র ও কোয়ান্টাম প্রকল্প প্রবন্ধ।’ আইনস্টাইন কর্তৃক জার্মান ভাষায় অনুবাদের মাধ্যমে এই সূত্র বিশ্বে প্রচার লাভ করল। পরে এটি ‘বোস- আইনস্টাইন থিয়োরি’ হিসেবে খ্যাতি লাভ করে।
দক্ষিণেশ্বরে গোপীনাথ সাহা গুলিতে টেগার্ট ভ্রমে ডে সাহেবকে হত্যা করলেন। বিচারে গোপীনাথের ফাঁসি হল। ভারত গভর্নমেন্ট মি. গান্ধীকে জেল থেকে মুক্তি দিল।
মিশরের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন সা’দ জগলুল পাশা। মিশরের প্রধান সেনাপতি ও সুদানের গভর্নর জেনারেল Sir Lee Stak কায়রোর রাজপথে অজ্ঞাতনামা লোকের গুলিতে নিহত হলে ব্রিটিশ গভর্নমেন্ট ৭৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে। এতে বিরক্ত হয়ে সা’দ জগলুল পাশা পদত্যাগ করেন। পারস্যে সাধারণতন্ত্র ঘোষিত হল।
কর্নেল নটনের নেতৃত্বে একদল অসম সাহসী ইংরেজ তৃতীয় বারের মতো এভারেস্ট শৃঙ্গে আরোহণ করতে গিয়ে ব্যর্থ হন।
এ বছর উল্লেখনীয় যাঁরা জন্মেছেন তাঁরা হলেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, নরেশ গুহ (যাঁর উদ্যোগে ও তত্ত্বাবধানে সিগনেট প্রেস থেকে ‘বনলতা সেন’-এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়), জগন্নাথ চক্রবর্তী, রাম বসু, এস.এম. সুলতান, সমরেশ বসু, সানাউল হক।
মারা গেলেন স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, লেনিন, ফ্রানৎস কাফকা, ১৯২১ সালে সাহিত্যে নোবেল জয়ী আনাতোল ফ্রান্স।
এ বছর সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পান বলাদিশ রেমেন্ট (১৮৬৭ – ১৯২৫)। উপন্যাসকার। পোল্যান্ডের অধিবাসী তিনি।
যে কারণে নোবেল পুরস্কার পান, তা হল—
‘For his great national epic — ‘The Peasants.’
তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখনীয়—’দ্য পিস্যান্টস’, ‘দ্য কমেডিয়ান’, ‘ফর্মেন্টস’, ‘দ্য প্রমিস্ড ল্যান্ড’, ‘লিলি’, ‘ইন দ্য লাইট অব জাসটিস্’।
প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রিকা : প্রকাশ পায় ইংরেজিতে লেখা রবীন্দ্রনাথের ‘লেটারস্ ফ্রম অ্যাব্রড’, ‘দি কার্স এট ফেয়ারওয়েল’। বের হল সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘বিদায় আরতি, বুদ্ধদেব বসুর ‘মর্মবাণী’, গোলাম মোস্তফার ‘রক্তরাগ’, রাজশেখর বসুর ‘গড্ডলিকা’, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ‘পদ্মরাগ’, সুকুমার রায়ের ‘হ-য-ব-র-ল’, মনীন্দ্রলাল বসুর ‘রমলা’, যোগেশচন্দ্ৰ চৌধুরীর ‘সীতা’। প্রকাশিত হয় ফস্টারের ‘প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া’, রোমা রোলার ‘গান্ধী জীবনী। পত্রিকা প্রকাশিত হয় ‘সত্যাগ্রহী’, ফনীন্দ্রনাথ পালের ‘যমুনা’ এবং ‘শনিবারের চিঠি’ [সাপ্তাহিক। সম্পাদক: যোগানন্দ দাস (১৩৩১)। নীরোদ চৌধুরী (১৩৩৫)। সজনীকান্ত দাস (১৩৩৫, ১৩৩৮, ১৩৪৫–)। রঞ্জন দাস (১৩৬২–১৩৮৯)। ১৩৩৬ সালে বন্ধ। পুনঃপ্রকাশ: ১৩৩৮ সালে]।
ধনগোপাল মুখোপাধ্যায় ‘গে নেক’ উপন্যাসের জন্যে আমেরিকার ‘নিউব্যারি’ পুরস্কার পেলেন। সাবিত্রীপ্রসন্ন চট্টোপাধ্যায়ের ‘রক্তরেখা’ নামক কবিতার বইটি ইংরেজ সরকার নিষিদ্ধ করল।