১৯১২। বয়স ১৩ বছর
উচ্চবিদ্যালয়ে জীবনানন্দের প্রিয় শিক্ষকদের মধ্যে একজন ছিলেন রাখাল চট্টোপাধ্যায়, সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়ে সত্যানন্দ দাশ তাঁরই স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। সত্যানন্দ দাশ জীবনানন্দদের ইংরেজি পড়াতেন, জেঠা হরিচরণ পড়াতেন অঙ্ক। সংস্কৃতের শিক্ষক ছিলেন কামিনী বিদ্যাবিনোদ। বিদ্যাবিনোদ মশাইকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন জীবনানন্দ। স্কুলের অন্যান্য মাস্টারমশাইয়ের মধ্যে ভুবন ঘোষ, তারিণী সেনও জীবনানন্দকে খুব স্নেহ করতেন।
রবীন্দ্রনাথের বয়স ৫১। ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে’র উদ্যোগে টাউন হলে রবীন্দ্রনাথের ৫০ বছর জন্মবর্ষপূর্তি উপলক্ষে উৎসব হল। এই উৎসব অভূতপূর্ব। ২৫ মে বি.এন. রেলওয়ের বোম্বে মেলে বিলেত যাত্রা করলেন রবীন্দ্রনাথ; সঙ্গে পুত্র রথীন্দ্রনাথ, পুত্রবধূ প্রতিমা দেবী ও সোমেন্দ্র দেববর্মা। তখনও ‘গীতাঞ্জলি’ (Song offerings)-র সব কবিতা অনূদিত হয়নি। বিলেত যাত্রাপথে জাহাজে বসেও কবি অনুবাদে নিমগ্ন ছিলেন। নিজের সব অনুবাদ তাঁর পছন্দ হচ্ছিল না। অসিতকুমার চক্রবর্তী, কুমারস্বামীর তরজমাও তাঁর পছন্দ হচ্ছিল না। তাই তিনি নিজে অনুবাদে মনোযোগী হলেন। সোমেন্দ্র দেববর্মা লিখেছেন নিজের কবিতাগুলোকে ‘বিদেশী ভূষণে সাজাইয়া নিজের আনন্দে তিনি তন্ময় থাকিতেন।’ লন্ডনে রোদেনস্টাইনের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় রবীন্দ্রনাথের। রবীন্দ্রনাথ ইংরেজি গীতাঞ্জলি তাঁর হাতে দেন। তাঁর ঘরে বহু সাহিত্যিকের সামনে ইয়েটস্ ‘ Song offerings’ থেকে আবৃত্তি করেন। এই সভাতেই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে এজরা পাউন্ড ও অ্যান্ড্রুজের আলাপ হয়। লন্ডনের ইন্ডিয়া সোসাইটি থেকে নভেম্বরে ইয়েটস্-এর ভূমিকাসহ ‘Gitanjali’ প্রকাশিত হল, ৭৫০ কপি। আমেরিকায় প্রথমবারের মতো ‘Gitanjali’-র ৬টি কবিতা শিকাগোর ‘পোয়েট্রি’ পত্রিকায় প্রকাশিত হল।
রেলের এক বাঙালি খ্রিস্টান গার্ড ঘোষ সাহেব নজরুলের গানে মুগ্ধ হয়ে নিজের বাসায় নজরুলকে বাবুর্চির কাজ দেন। নজরুল সে কাজ বেশি দিন করেননি। তারপর আসানসোলের এম. বস-এর রুটির দোকানে ভৃত্যের চাকরি নেন নজরুল। এসময় পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টর কাজী রফিজুল্লাহ ও তাঁর পত্নী শামসুন্নেসা খানমের সূত্রে তাঁদের বাড়িতে পাঁচ টাকা বেতনের গৃহ-ভৃত্যের কাজ পান।
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে স্থানান্তর হয়। দিল্লির রাজপথে শোভাযাত্রার সময় হস্তীপৃষ্ঠে উপবিষ্ট লর্ড হার্ডিঞ্জ আততায়ীর নিক্ষিপ্ত বোমার আঘাতে গুরুতর আহত হন। বোমা নিক্ষেপকারী ছিলেন রাসবিহারী বসু ও তাঁর সঙ্গীরা।
সান ইয়েৎ সেনের নেতৃত্বে চীনে বিদ্রোহ শুরু হয়। রাজকীয় সেনাদল পরাজিত হলে চীনে সাধারণতন্ত্র ঘোষিত হয়। ইউয়ান-শি-কাই চীনের প্রথম প্রেসিডেন্ট হন।
নিউফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপের ভাসমান বরফস্তূপে ধাক্কা খেয়ে ‘টাইটানিক’ জলমগ্ন হয় ( ১৪ এপ্রিল রাত ১০টা)। ১ হাজার ৬ শত ৩৫ জন নরনারীর সলিল সমাধি হয়।
মিশরের মেম্ফিজ নগরের সাফ্ফারা অঞ্চলের ভূগর্ভে স্ফটিক প্রস্তর নির্মিত স্ফিঙ্কস্ মূর্তি আবিষ্কৃত হয়। মূর্তিটি ১৪ ফুট উচ্চ; ওজন ৮০ টন। মূর্তিটির মাথা মানুষের মতো, শরীর শুয়েথাকা সিংহের মতো।
বলকান যুদ্ধ শুরু। মন্টেনেগ্রো, বুলগেরিয়া, সার্বিয়া ও গ্রিসের মিলিত বাহিনীর কাছে তুর্কি সুলতানের পরাজয় ঘটে।
এ বছর জন্মেছেন সাগরময় ঘোষ, দক্ষিণারঞ্জন বসু, জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী, বিমল মিত্র, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, আয়োনেস্কো।
পরলোক গমন করেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ (নটসূর্য), বিখ্যাত ইংরেজ সাহিত্যিক Andrew Lang.
এ বছর সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পান জি. হাউপ্টম্যান (১৮৬২–১৯৪৬)। জার্মানির নাট্যকার।
হাউপ্টম্যান সম্পর্কে নোবেল কমিটির মন্তব্য এরকম-
‘Primarily in recognition of his fruitful varied and outstanding production in the realm of dramatic art.’
তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ—’The Weavers’, ‘The Sunken Bell’, ‘The Great Dream’, ‘Book of Passion’।
প্রকাশিত গ্রন্থ : প্রকাশিত হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’, ‘গল্প চারটি’, ‘জীবনস্মৃতি’, ‘অচলায়তন’, ‘ছিন্নপত্র’, ‘মালিনী’ ও ‘চৈতালি’। ইংল্যান্ড থেকে বের হল ‘Song offerings’. অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়র ‘গৌড়লেখমালা’, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘নবীন সন্ন্যাসী’, অক্ষয়কুমার বড়ালের ‘এষা’, সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘কুহু ও কেকা’, ভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ‘লন্ডন রহস্য’ প্রকাশ পেল। বের হল রবীন্দ্র-ব্যঙ্গ সমৃদ্ধ দ্বিজেন্দ্রলালের ‘আনন্দ বিদায়’ নাটক। প্রকাশিত হল বার্নার্ড শ’র ‘পিগম্যালিয়ন’।