১৯০৩। বয়স ৪ বছর
জীবনানন্দ বালকবেলায় গল্প শুনতেন দাদামশায়ের কাছে। মজার সে-সব কাহিনী। ঠাকুরমা শোনাতেন রূপকথার নানা রোমাঞ্চকর গল্প। আরও শুনতেন অতুলানন্দ কাকার নানা শিকার ও সাহসের কথা। মোতির মা ছিল বাড়ির পুরাতন পরিচারিকা। আপনজন হয়ে উঠেছিল সে। তার কাছ থেকে জীবনানন্দ শুনতেন পুরাণকথা, ডাইনির গল্প, প্লাবনের গল্প, মাছধরার গল্প।
রবীন্দ্রনাথের বয়স ৪২। মেজো কন্যা রেণুকার গলক্ষত রোগ যক্ষ্মায় পরিণত হল। তখনো যক্ষ্মার কোনো ওষুধ বের হয় নি। ১৯ সেপ্টেম্বর রেণুকার মৃত্যু হয়। তখন তার বয়স ১২ বছর। তারপর বেশ কিছুদিন রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতন ও পদ্মার শান্ত তীরে বাস করলেন।
গ্রামের মক্তবে নজরুল লেখাপড়া শুরু করলেন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বার্মা চলে গেলেন। প্রত্যক্ষ রাজনীতি করবেন বলে ভগিনী নিবেদিতা রামকৃষ্ণ মিশনের সংস্রব ত্যাগ করলেন।
‘অনুশীলন সমিতি’ জোরালো হল। প্রধান উদ্যোক্তা প্রমথনাথ মিত্র, চিত্তরঞ্জন দাশ ও বিপিনচন্দ্র পাল। সৈয়দ এমদাদ আলীর সম্পাদনায় ‘মাসিক নবনূর’ প্রকাশিত হল। এর উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গীয় মুসলিম সুধী সমাজে বাংলা ভাষার চর্চা বৃদ্ধি।
বুদ্ধগয়া মন্দির হিন্দু মোহন্তর তত্ত্বাবধানে থাকা উচিত কি না বিবেচনার জন্যে গঠিত কমিশনের সদস্য নির্বাচিত হন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী।
স্বদেশি আন্দোলনের সূচনা হল। এ আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল বিদেশিপণ্য বর্জন, দেশীয় শিল্পের বিকাশ ও অখণ্ড বাংলার জয়গান। এ আন্দোলনে মুসলমান সমাজের অংশগ্রহণ ছিল নগণ্য। লর্ড কার্জন সপ্তম এডওয়ার্ডের অভিষেক উপলক্ষে দরবার ডেকে দেশীয় রাজন্যদের সামনে ব্রিটিশ আধিপত্য ও জাঁকজমক জাহির করলেন। কার্জন হায়দরাবাদের নিজাম মীর মহবুব আলী খাঁকে বার্ষিক ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে বিরার প্রদেশকে চিরকালের জন্যে ইংরেজ শাসনের অধীনে আনেন। ইঙ্গ-ফরাসি বন্ধুত্ব গাঢ় হল। সপ্তম এডওয়ার্ড প্যারিস গেলেন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ঘুরে গেলেন লন্ডন।
রোমের পোপ ত্রয়োদশ লিওঁ পরলোক গমন করেন। সার্বিয়ার রাজা প্রথম আলেকজান্ডার সপরিবারে বিদ্রোহীদের হাতে নিহত হলেন। বিখ্যাত ইংরেজ পণ্ডিত হার্বার্ট স্পেন্সারের মৃত্যু হয়।
নিজেদের তৈরি বিমানে প্রথম আকাশে উড়ে চিরস্মরণীয় হলেন ওহায়োর বৈজ্ঞানিক রাইট ভ্রাতৃদ্বয়। এই বিমানযাত্রার স্থায়িত্ব ছিল ১২ সেকেন্ড। ফরাসি বিজ্ঞানী মঁসিয়ে কুরি ও তাঁর পোলিশ স্ত্রী মাদাম কুরি রেডিয়াম আবিষ্কার করলেন।
এ বছর যাঁরা মারা যান তাঁদের মধ্যে উল্লেখ্য হলেন হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘রূপজালাল’- খ্যাত কবি ফয়জুননেসা চৌধুরানী ও ১৯০২ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী থিওডর মমসেন।
এ বছর জন্মগ্রহণ করেন অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, নীহাররঞ্জন রায়, আবুল ফজল, জসীম উদ্দীন, প্রমথেশ বড়ুয়া, যোগেশচন্দ্র বাগল, শিবরাম চক্রবর্তী। সিমেননেরও জন্ম এ বছর।
এ বছর সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পেলেন নরওয়ের কবি বিয়র্নসেন (১৮৩২–১৯১০)। তাঁর সম্পর্কে নোবেল কমিটির মন্তব্য ছিল এরকম—
‘As a tribute to his noble, magnificent and versatile work as a poet, which has always been distinguished by both the freshness of its inspiration and the bare purity of its spirit.’
তাঁর বিখ্যাত রচনা হল—’Sunhill’, ‘A Happy Boy’, ‘Arni’, ‘Lami’, ‘Hulda’.
প্রকাশিত গ্রন্থ : এ বছর প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হল—রবীন্দ্রনাথের ‘চোখের বালি’ ও ‘কর্মফল’, রোমা রোলাঁর ‘জাঁ ক্রিস্তফ’ [Roman Rolland ফরাসি দেশের কালজয়ী সাহিত্যিক ও দার্শনিক। রোমা রোলাঁর জন্ম ২৯ জানুয়ারির ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে। ‘জাঁ ক্রিস্তফ তাঁর অমূল্য কীর্তি। এ গ্রন্থের জন্যে তিনি ১৯১৫ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। ৩০ ডিসেম্বর ১৯৩৯ সালে তাঁর মৃত্যু হয়], স্যামুয়েল বাটলারের ‘ওয়ে অব অল ফ্লেশ’, গ্রিয়ারসনের ‘Linguistic Survey of India’.