চতুর্থ অনুবাক
প্রথম সূক্ত : সুরক্ষা
[ঋষি : ভৃগ্বঙ্গিরা। দেবতা : ত্রিবৃৎ, চন্দ্রমা। ছন্দ : অনুষ্টুপ, ত্রিষ্টুপ, জগতী, উষ্ণিক ও শক্করী।]
গোভিষ্ট্রা পাতৃষভো ত্বা পাতু বাজিভিঃ। বায়ুষ্টা ব্ৰহ্মণা পাত্বিন্দ্ৰস্তা পাত্বিন্দ্ৰিয়ৈঃ ॥১॥ সোমস্তা পহোষধীভিনক্ষত্রৈঃ পাতু সূর্যঃ। মাদ্ভ্যস্থা চন্দ্রো বৃত্ৰহা বাতঃ প্রাণেন রক্ষতু৷৷ ২৷৷ তিম্রো দিবস্তিস্রঃ পৃথিবীস্ত্রীণ্যন্তরিক্ষাণি চতুরঃ সমুদ্রা। ত্রিবৃতং স্তোমং ত্রিবৃত আপ. আহুস্তাস্তা রক্ষন্তু ত্রিবৃতা ত্রিবৃদ্ভিঃ ॥৩. ত্ৰীন্নাকাংস্ত্রী সমুদ্ৰাংস্ত্রী ব্ৰধাংস্ত্রী বৈষ্টপা। ত্ৰী মাতরিশ্বনস্ত্রীসূর্যান গোন কল্পয়ামি তে ৷ ৪৷৷ ঘৃতেন ত্বা সমুক্ষাম্যগ্ন আজ্যেন বর্ধয়। অগ্নেশ্চন্দ্রস্য সূর্যস্য মা প্রাণং মায়িনো ভন্ ॥ ৫৷৷ মা বঃ প্রাণং মা বোহপিনং মা হয়রা মায়িনো দভ। ভ্রাজন্তো বিশ্ববেদসো দেবা দৈব্যেন ধাবত ॥ ৬৷৷ প্রাণেনাগ্নিং সং সৃজতি বাতঃ প্রাণেন সংহিতঃ। প্রাণেন বিশ্বততামুখং সূর্যং দেবা, অজনয়ন্৷৭৷৷ আয়ুষায়ুঃকৃতাং জীবায়ুম্মা জীব মা মৃথাঃ। প্রাণেনাত্মতাং জীব মা মৃত্যোরুদগা বশম্ ॥ ৮দেবানাং নিহিতং নিধিং যমিন্দ্রোহবিন্দৎ পথিভির্দেবযানৈঃ। .. আপো হিরণ্যং জুগুপুস্ত্রিবৃদ্ভিন্তাস্থা রক্ষন্তু ত্রিবৃতা ত্রিবৃত্তিঃ ॥৯৷৷ ত্রয়স্ত্রিংশদ দেবতাস্ত্রীণি চ বীর্যাণি প্রিয়ায়মাণা জুগুপুরস্কন্তঃ। অস্মিংশ্চন্দ্রে অধি যদ্ধিরণ্যং তেনায়ং কৃণব বীর্যাণি ॥১০। যে দেবা দিব্যেকাদশ স্থতে দেবাসো হবিরিদং জুষধ্বম্ ॥১১। যে দেবা অন্তরিক্ষ একাদশ স্থ তে দেবাসোহবিরিদং জুষধ্বম্ ॥১২। যে দেবাঃ পৃথিব্যামেকাদশ স্থ তে দেবাসোহবিরিদং জুষধ্বম্ ॥১৩৷৷ অসপত্নং পুরস্তাৎ পশ্চাদ্যে অভয়ং কৃতম্। সবিতা মা দক্ষিণত উত্তরাত্মা শচীপতিঃ ॥ ১৪৷৷ দিবো মাদিত্য রক্ষন্তু ভূম্যা রক্ষগ্নয়ঃ। ইন্দ্রাগ্নী রক্ষং মা পুরস্তাদশ্বিনবভিতঃ শৰ্ম যচ্ছতাম। তিরস্টীনগ্ন্যা রক্ষতু জাতবেদা ভূতকৃত মে সর্বতঃ সন্তু বর্ম ॥১৫৷৷
বঙ্গানুবাদ –হে ত্রিবৃৎ-মণিধারক পুরুষ! সেক্তা, প্রবল বৃষ-যুথের পতি (ঋষভঃ) গাভীগণ সমভিব্যাহারে (গোভিঃ সহ) তোমাকে (ত্বা) রক্ষা করুক (পাতু)। (অর্থাৎ বহু অপত্য উৎপাদনের মাধ্যমে সমৃদ্ধিকরণের দ্বারা তোমাকে সমৃদ্ধ করুক)। অথবা–বৃষভদেবতা আপন গো-দেবতাবর্গের সাথে স্বয়ং অনিষ্টসূচক উৎপাত হতে তোমাকে রক্ষা করুক। তথা প্রজননসমর্থ অশ্ব (বৃষা) শীঘ্রগতিশীল অশ্বগণের সাথে (বাজিভিঃ) তোমাকে রক্ষা করুক। (অর্থাৎ অশ্বগণের পুষ্টির মাধ্যমে সমৃদ্ধিকরণের দ্বারা তোমাকে সমৃদ্ধ করুক)। অন্তরীক্ষচর বায়ুদেব যজ্ঞলক্ষণের সাথে (ব্রাহ্মণ) তোমাকে রক্ষা করুন (ত্বা পাতু)। অথবা-বায়ু পরিবৃত বা ব্যাপ্ত সূত্ৰাত্মলক্ষণের সাথে রক্ষা করুক। অথবা-(ব্রহ্ম শব্দে পরিবৃঢ়ং বা অন্তরিক্ষং বা স্বাশ্রয়ং বোঝালে অর্থ হয়)–বায়ু তাঁর আপন আশ্রয়ের সাথে তোমাকে রক্ষা করুন। এইরকমে, ইন্দ্রদেব তার সৃষ্ট বা সেবিত বা ইত্যাদি ইন্দ্রিয় সমুদয়ের সাথে তোমাকে রক্ষা করুন। ১।
সোম অর্থাৎ বল্লীরূপ ওষধীসমূহের রাজা বা দেবতা ব্রীহি ইত্যাদির (ওষধীভিঃ) সাথে তোমাকে রক্ষা করুন (ত্বা পাতু)। এইরকম, সূর্যদেব তাঁর গ্রহসমূহের সাথে (নক্ষত্রৈঃ) তোমাকে পরিরক্ষিত করুন। এইরকম চন্দ্র অর্থাৎ সকল প্রাণীর আহ্বাদকারী দেবতা মাস সমূহের সাথে (মাদ্ভিঃ) তোমাকে সংরক্ষিত করুন। এই রকম, বায়ু প্রাণ ইত্যাদি পঞ্চবৃত্তি-রূপ বায়ুগণের সাথে (অর্থাৎ প্রাণ-অপান-সমান-উদান-ব্যান শরীরস্থ এই পঞ্চবায়ুর সাথে) তোমাকে অনুরক্ষিত করুক (বাতঃ প্রাণেন রক্ষতু) ॥ ২॥
(অভিজ্ঞাঃ কথয়ন্তি অভিজ্ঞ জনেরা বলে থাকেন)–দ্যুলোক অর্থাৎ স্বর্গ বা আকাশ ত্রিগুণশালী (দিবঃ তিস্র)–(অর্থাৎ চন্দ্র-সূর্য-নক্ষত্রের আশ্রয়স্থান ভেদে দ্যুলোক তিন প্রকার অবগন্তব্য; অথবা সেই লোকে গমনাভিলাষীগণ উত্তম-মধ্যম-অধম ভেদে ত্রিবিধ দেখা যায়)। তথা পৃথিবীও তিন প্রকার (পৃথিবী তিস্রঃ)–(অর্থাৎ উত্তম-মধ্যম-অধম ভেদে তিন প্রকার জীবের ভোগাশ্রয় এই পৃথীলোক; অথবা তৃণ-ঔষধি-বনস্পতির উৎপাদিকা হওয়ায় পৃথিবী ত্রিগুণিত)। অন্তরীক্ষও ত্রিগুণিত (ত্রীণি অন্তরিক্ষাণি)-(অর্থাৎ এখানেও তিন প্রকার জীবের গতায়ত হওয়ায় অন্তরীক্ষ তিন প্রকার; অথবা যক্ষ-গন্ধর্ব-অপ্সরাগণের দ্বারা সেবিত হওয়ায় বা তাদের আবাস ভেদে অন্তরীক্ষ ত্রিবিধ)। সমুদ্র চারিপ্রকার (সমুদ্ৰান্ চতুরঃ)-(সমুদ্র সংখ্যা সপ্ত; তথাপি এখানে চারি সমুদ্রের উল্লেখ করা হয়েছে। মনে হয়, উত্তর-পূর্ব-দক্ষিণ-পশ্চিম এই চারিদিকে ব্যাপ্ত সমুদ্রের দিকে লক্ষ্য রেখে সমুদ্র সংখ্যা চারি বলা হয়েছে। তবে উল্লেখ্য এই যে, এই সূক্তে ত্রিবৃৎ মণির স্তুতি সাধনত্বে ত্রিত্বের মহিমা জ্ঞাপন করা হয়েছে; সুতরাং চারি সমুদ্রের উল্লেখ এখানে বিসদৃশ মনে হতে পারে। ভাষ্যকার বলেছেন–চারি সংখ্যার মধ্যে তিন সংখ্যা রয়েছে, অর্থাৎ–তিনকে লঙ্ঘন করেই চারি সংখ্যার অস্তিত্ব। এই বিচারে চতুরঃ সমুদ্র উক্ত হয়েছে)। স্তোম তিন প্রকার (ত্রিবৃতম্ স্তোম)–অর্থাৎ ত্রিবৃৎ নামে আখ্যাত-স্তোমে ত্রয়ানাং ঋচাং অর্থাৎ তিনটি ঋক্ ও গানের ত্রিরাবৃত্তেঃ অর্থাৎ তিনবার আবৃত্তি থাকায় এই স্তোত্র ত্রিবৃৎ নামে কথিত)। তথা জল ত্রিবিধ (আপঃ ত্রিবৃতঃ)–অর্থাৎ স্বর্গস্থ, আকাশস্থ ও পৃথিবীস্থ ভেদে জল তিন রকমের।–এইরকম ত্রিবৃত্ত্ব অর্থাৎ তিন ধর্মশালী দু-পৃথিবী ইত্যাদি সকলে মণিগত সুবর্ণ-রজত-লৌহলক্ষণ ত্রিবৃতের সাথে (অর্থাৎ ত্রিবৃৎ মণির সাথে) অভেদরূপে তোমাকে রক্ষা করুক (ত্বা রক্ষন্তু)। ৩।
হে সুবর্ণ-রজত-লৌহাত্মক ত্রিবৃৎ মণির ধারক পুরুষ! তিন স্বর্গ (ত্রী নাকা) ও তিন সমুদ্র বা অন্তরীক্ষবিশেষকে (ত্রী সমুদ্রা) ত্রিবৃৎ মণির দ্বারা তোমার রক্ষকরূপে কল্পনা বা নিয়োজিত করছি (তে গোন, কল্পয়ামি)। সকলের আধারভূত তিন আদিত্য (ত্রী ব্রধান), তিন ভুবন (ত্রী বৈষ্টপা) অর্থাৎ স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল অথবা দেব-মনুষ্য-পিত্রাত্মক তিন লোক, তিন বায়ু (ত্রী মাতরিশ্বনঃ) অর্থাৎ উধ্বঃ-অধঃ-তির্যক গতিভেদে বা স্বর্গ-মত-পাতালে সঞ্চারাশ্রয়ভূত তিন প্রকার বায়ু, ত্রিগুণশালী, দ্যুলোকে প্রকাশমান রশ্মিমণ্ডলের অধিষ্ঠাতৃ দেবতা তিন সূর্য–তোমার (তে) রক্ষকরূপে কল্পনা বা নিয়োজিত করছি (গোধূন কল্পয়ামি)। ৪
হে অগ্নি! তোমাকে হোমসাধন ঘৃতের দ্বারা অভিবর্ধিত করার অভিলাষে সম্যক সিঞ্চিত করছি (ত্বা আজ্যেন ঘৃতেন বর্ধয় সমুক্ষামি)। হে মণির ধারক পুরুষ! ঘৃতের দ্বারা সমুক্ষিত অগ্নিদেব, চন্দ্রদেব ও সূর্যদেবের অনুগ্রহে, তোমার প্রাণ যেন মায়াবন্ত অসুরবর্গ অপহরণ করতে না পারে (মা মায়িনঃ দভ)। ৫।
হে রাজন্যবৃন্দ (বা পুত্রভৃত্য ইত্যাদি সমন্বিত হে রাজা)! মায়াবন্ত অসুরবর্গ যেন তোমাদের প্রাণের প্রতি হিংসা করতে না পারে (মা দভ)। সেইসঙ্গে তারা যেন তোমাদের অপান ও শত্ৰুবলাপহারক তেজঃ না হরণ করতে পারে (মা হরঃ)। সেই নিমিত্ত, হে দীপ্যমান (ভ্রান্ত) সর্বজ্ঞ বা সকল ধনাধিকারী (বিশ্ববেদসঃ) অগ্নি-চন্দ্র-সূর্য নামক দেবগণ (দেবাঃ)! তোমরা দেবসম্বন্ধী রথে আরূঢ় হয়ে বা রথের সহায়ে সবেগে (দৈব্যেন) এদের প্রাণরক্ষার্থে ধাবিত হও (ধাবত) ॥ ৬।
[এখানে প্রাণরক্ষার প্রয়োজনে তার মাহাত্ম বর্ণিত হচ্ছে ]-সমিন্ধনকর্তা পুরুষ (অর্থাৎ যিনি অগ্নি উদ্দীপন করেন, তিনি) প্রাণের দ্বারা (প্রাণেন) অর্থাৎ মুখস্থিত প্রাণবায়ুর দ্বারা অগ্নি সংযোজিত করেন (অগ্নিং সং সৃজতি)। (অতএব প্রাণ রক্ষিতব্য)। আরও, বাহ্য বায়ু (বাতঃ) প্রাণবায়ুর অর্থাৎ মুখস্থিত বায়ুর সাথে মিলিত (সংহিতঃ) হয়ে থাকে। (অর্থাৎ এর দ্বারা প্রাণবায়ু ও বাহ্যবায়ুর একত্ব কথিত হচ্ছে)। প্রাণের দ্বারা (প্রাণেন) অর্থাৎ সূত্ৰাত্মরূপ ব্রহ্মের দ্বারা সর্বত্র প্রকাশক বা প্রতি পুরুষের অভিমুখ্য জ্ঞান সম্ভবকারী (বিশ্বতোমুখ) সূর্যকে দেবগণ আপন আপন প্রয়োজন মতো লাভ করেছিলেন (অজনয়)। (এই হেন মহানুভাব প্রাণের রক্ষণ অবশ্যই কর্তব্য) ৭
(হে মণিধারক রাজন্!) তুমি আয়ুষ্কৃত হও, অথবা চিরকালজীবী প্রাচীন মহর্ষিগণ তপঃ ইত্যাদির দ্বারা যে আয়ু লাভ করেছিলেন, সেই আয়ুর দ্বারা অথবা তাদের প্রদত্ত আর দ্বারা তুমি জীবায়ুষ্মন্ হও। তুমি জীবিত থাকো, প্রাণত্যাগ করো না (জীব মা মৃথাঃ)। স্থির প্রাণশালী (আত্মম্বতাং) জনের প্রাণের সহায়তায় তুমি জীবিত থাকো; অধিকন্তু মারক দেবতার (মৃত্যোঃ ) বশবর্তী হয়ো না (মা উৎ অগাঃ) ॥ ৮৷
যে দেবযানমার্গে দেবগণ হিরণ্য নামক প্রসিদ্ধ নিধিকে সংগুপ্ত করে রেখেছিলেন (যং নিহিতম), ইন্দ্রদেব সেই দেবযানমার্গে (পথিভিঃ) স্বয়ং গমন পূর্বক সেই দেবনিধিরূপ হিরণ্যকে (যৎ) অন্বেষণ পূর্বক লাভ করেছিলেন (অন্ববিন্দং)। যে দেবনিধিরূপ হিরণ্য উক্ত প্রকারে ত্রিবিধ জল (ত্রিবৃতঃ আপঃ) ত্রিবৃৎ সাধনের দ্বারা রক্ষা করেছিল (জুগুপুঃ), সেই ত্রিবৃৎ জল (তাঃ ত্রিবৃত আপঃ) হিরণ্য রজত-লৌহ এই ত্রিবিধ স্বরূপে (ত্রিবৃৎভিঃ) তোমাকে রক্ষা করুক বা পালন করুক (ত্ব রক্ষন্তু) ॥ ৯৷
ত্রয়স্ত্রিংশ অর্থাৎ তেত্রিশ সংখ্যক দেববৃন্দ (অর্থাৎ অষ্ট বসু, একাদশ রুদ্র, দ্বাদশ আদিত্য, প্রজাপতি ও বষট্কার বা ইন্দ্রদেব) তিন প্রকার বীর্যকে (ত্রীণি বীর্যাণি–অর্থাৎ কায়িক বাঁচিক-মানসিক ভেদে ত্রিবিধ সামর্থ্যকে) অত্যধিক প্রিয়মাণ (প্রিয়ায়মানা) জলের মধ্যে গোপন করে রেখেছিলেন (অপসু অন্তঃ জুগুপুঃ), (যাতে অপরে না হরণ করতে পারে)। অথবা–হিরণ্য রজত-লৌহ সমন্বিত ত্রিবৃৎ মণিতে আয়ুবর্ধনকর, ঐশ্বর্যদায়ক ও শত্ৰুজয়াখ্য যে অনন্যসাধারণ তিন প্রকার বীর্য আছে, তা অন্যে যাতে না প্রাপ্ত হয়, সেই নিমিত্ত জলের মধ্যে গোপন করে রেখেছিলেন।–এই পরিদৃশ্যমান (অস্মি) চন্দ্রে আহ্লাদক উদকে (অধি) যে হিরণ্য বিদ্যমান (যৎ হিরণ্যম), সেই হিরণ্যের মুখ্য অংশের দ্বারা (তেন) এই মণিধারক পুরুষকে (অয়ম) ত্রয়স্ত্রিংশৎ দেবতা কর্তৃক ধারিত ত্রিবিধ সামর্থ্যে মণ্ডিত করুক (কৃণুবৎ বীর্যানি)। ১০।
দিব্যলোকে যে একাদশ সংখ্যক আদিত্য দেবগণ (দেবাঃ) বিদ্যমান, তাঁরা (তে দেবাসঃ) এই হুয়মান আজ্য সেবন করুন (ইদং হবিঃ জুষধ্বম)। আদিত্যের সংখ্যা দ্বাদশ; তথাপি এখানে একাদশ সংখ্যার মাহাত্ম্য প্রসঙ্গে আদিত্য-সংখ্যা একাদশ উল্লেখিত হয়েছে। ভাষ্যকার বলেন–এতে কোন বিরোধ ঘটেনি; কারণ একাদশ সংখ্যা দ্বাদশ সংখ্যার চেয়ে নূন অর্থাৎ দ্বাদশের মধ্যেই একাদশ নিহিত আছে অধিকসংখ্যায়া ন্যূনসংখ্যায়াঃ সম্ভবাৎ] ॥১১।
অন্তরীক্ষলোকে যে একাদশ রুদ্রদেবতা বিদ্যমান, তারা এই হুয়মান আজ্য সেবন করুন। ১২৷৷
পৃথিবী লোকে যে একাদশ দেবতা বিদ্যমান, তারা এই হুয়মান আজ্য সেবন করুন। [এর পূর্বে পৃথিবী তিন প্রকার বলা হয়েছিল। তথাপি একাদশ সংখ্যার মাহাত্ম্য খ্যাপন উপলক্ষে পৃথিবীতে একাদশ দেবতার অধিষ্ঠান বলা হয়েছে ]। ১৩
[যদিও এখানে সম্মুখে ও পশ্চাতে কোন্ দেবতা রক্ষা করবেন, সেই প্রসঙ্গে নির্দিষ্ট কোন উল্লেখ নেই তথাপি কৃতং পদে দ্বিবচন বোঝায় বলে উত্তরাধে সবিতা ও শচীপতি ইন্দ্র উভয়কেই উদ্দেশ করা হয়েছে বলে মনে করা যেতে পারে]–হে উক্ত দেবদ্বয় (অর্থাৎ হে সবিতা ও ইন্দ্রদেব)! তোমরা আমার সম্মুখ বা পূর্ব দিক (পুরস্তাৎ) ও পশ্চিম অর্থাৎ পশ্চাৎ-দিক অভয় করো (অভয়ং কৃত); (অর্থাৎ যাতে শত্রু হতে ভীতি না থাকে, তেমনভাবে রক্ষা করো)। অথবা–সম্মুখভাগ শক্তহীন করো এবং পশ্চাৎ-ভাগ ভয়হীন করো।–তথা সবিতা আমাকে দক্ষিণদিক্ হতে আগত (দক্ষিণতঃ) ভীতি হতে ও ইন্দ্রদেব আমাকে উত্তরদিক হতে আগত (উত্তরা) ভীতি হতে রক্ষা করুন ৷ ১৪।
আদিত্যগণ দুস্থান হতে (দিবঃ) আমাকে রক্ষা করুন ও অগ্নিগণ পৃথিবী হতে (ভূম্যাঃ) আমাকে রক্ষা করুন (রক্ষন্তু)। ইন্দ্রাগ্নী অর্থাৎ ইন্দ্রদেব ও অগ্নিদেব আমাকে (মা) সম্মুখ হতে রক্ষা বা পালন করুন (পুরস্তাৎ রক্ষতাং)। তথা অশ্বীদেবদ্বয় আমাকে সকল দিক হতে সুখ প্রদান করুন (অভিতঃ শৰ্ম যচ্ছতাং)। তির্যক অর্থাৎ বক্রভাবে অবস্থিত দিমূহ হতে (তিরশ্চিন) প্রজাপতি ব্রহ্মা (অগ্ন) রক্ষা করুন; অথবা–তির্যক দিক হতে রক্ষাবিষয়ে প্রজ্ঞাবান্ (জাতবেদাঃ) অগ্নিদেব আমাকে রক্ষা করুন। পৃথিবী ইত্যাদি পঞ্চভূতের কর্তা বা পঞ্চভূতের অভিমানী (ভূতকৃতঃ) অগ্নি ইত্যাদি দেবগণ সর্বত আমার কবচ হোন (মে বর্ম সন্তু); (অর্থাৎ আমার কবচরূপে আমাকে রক্ষা করুন)। ১৫।
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –চতুর্থেনুবাকে সপ্ত সূক্তানি। তত্র গোভিষ্টা পাতু ইতি প্রথমং সূক্তং। ইত্যাদি৷৷ (১৯কা. ৪অ. ১সূ.)।
টীকা –চতুর্থ অনুবাকের মোট সপ্ত সংখ্যক সূক্তের মধ্যে উপযুক্ত প্রথম সূক্তটি প্রাজাপত্য নামক মহাশান্তি যাগে সুবর্ণ-রজত-লৌহময় মণিবন্ধনে বিনিযুক্ত হয়। নক্ষত্রকল্পে (১৭) এই প্রসঙ্গে উল্লেখ আছে– প্রাজাপত্যাং প্রজাপশুকামস্য প্রজায়ে চ। এই সূক্তটির প্রথম মন্ত্র ও ষষ্ঠ কাণ্ডের ১৪২তম সূক্তের শেষ, মন্ত্রটি (৬১৩১৮৩) যবমণি ধারণেও বিনিয়োগের বিধি আছে। (ন. ক. ১৯) ৷ (১৯কা. ৪অ. ১সূ.)।
.
দ্বিতীয় সূক্ত : দৰ্ভমণিঃ
[ঋষি : ব্রহ্মা (সপত্নক্ষয়কামী)। দেবতা : দৰ্ভমণি ও মন্ত্রোক্ত। ছন্দ : অনুষ্টুপ।]
ইমং বামি তে মণিং দীর্ঘায়ুত্বায় তেজসে। দর্ভং সপত্নদম্ভনং দ্বিষতস্তপনং হৃদঃ ॥১॥ দ্বিষতস্তাপয়ন হৃদঃ শত্রণাং তাপয়ন মনঃ। দুহাদঃ সর্বাংস্তুং দর্ভ ঘর্ম ইবভিনৎসন্তাপয়৷ ২৷৷ ঘর্ম ইবাভিতপন্ দর্ভ দ্বিষতো নিতপন্ মণে। হৃদঃ সপনাং ভিদ্ধীন্দ্র ইব বিরুজং বল ৷৩৷৷ ভিদ্ধি দর্ড সপত্নানাং হৃদয়ং দ্বিষং মণে। উদ্য ত্বচমিব ভূম্যাঃ শির এষাং বি পাতয়৷ ৪৷৷ ভিনদ্ধি দর্ড সপত্নান মে ভিনদ্ধি মে পৃতনায়তঃ। ভিনদ্ধি মে সর্বান দুহার্দো ভিদ্ধি মে দ্বিষতো মণে ॥ ৫ছিদ্ধি দর্ভ সপত্নান্ মে ছিদ্ধি মে পৃতনায়তঃ। ছিদ্ধি মে সর্বান্ দুহাদা ছিদ্ধি মে দ্বিষত মণে ॥ ৬৷৷ বৃশ্য দর্ড সপত্নান মে বৃশ্চ মে পৃতনায়তঃ। বৃশ্চ মে সর্বান্ দুহার্দো বৃশ্চ মে দ্বিততা মণে ॥৭॥ কৃন্ত দর্ভ সপত্নান্ মে কৃন্ত মে পৃতনায়তঃ। কৃন্ত মে সর্বান্ দুহাদাং কৃন্ত মে দ্বিষতোমণে ॥৮ পিংশ দর্ড সপত্ন মে পিংশ মে পৃতনায়তঃ। পিংশ মে সর্বান্ দুহাঃ পিংশ মে দ্বিততা মণে ॥৯॥ বিধ্য দর্ড সপত্নান মে বিধ্য মে পৃতনায়তঃ।বিধ্য মে সর্বান্ দুহার্দো বিধ্য মে দ্বিষতে মণে।১০
বঙ্গানুবাদ –হে বিজয়, বল ইত্যাদি কামনাকারী পুরুষ! তোমাকে এই দৰ্ভময় মণি বন্ধন করছি। (ইমং মণিং বর্ধামি)। (কি জন্য?–না) যাতে তুমি দীর্ঘ আয়ু ও অতিশয়িত তেজ লাভ করতে পারো (দীর্ঘায়ুত্বায় তেজসে)। দর্ভনির্মিত মণি (দর্ভং) শত্রুগণের হিংসক ও দ্বেষকারীগণের (অর্থাৎ শত্রুবর্গের) হৃদয়ের সন্তাপক (সপত্নদম্ভনং দ্বিষতঃ তপন হৃদঃ)। ১।
হে দৰ্ভমণি! তুমি দ্বেষকারী শত্রুগণের হৃদয় সন্তপ্ত করো (দ্বিষতঃ হৃদঃ তাপয়), তথা শত্রুগণের মন তাপিত করো। এইভাবে হৃদয়ত দুষ্টভাবান্নগণের (দুহাদঃ) সব কিছু (সর্বান) (অর্থাৎ গৃহ, ক্ষেত্র, পশু ইত্যাদি) আদিত্যের ন্যায় (ঘর্ম ইব) সন্তাপিত করে দাও (সন্তাপয়ন); অথবা-ইন্দ্রের ন্যায় শত্রুর হৃদয় ও বলকে নাশ করো (অভী সন্তাপয়ন)। ২।
হে দর্ভনির্মিত মণি (দর্ভ মণে)! তুমি আদিত্যের মতো (ঘর্ম ইব) অথবা নিদাঘ কালের মতো দ্বেষকারী শত্রুগণের হৃদয় (দ্বিষতঃ) অথবা শত্রুগণকে সকল দিক্ হতে সন্তাপিত করো (অভিপ) এবং সন্তাপের দ্বারা ভেদ করো (নিতপ)। তুমি ইন্দ্রের ন্যায় (ইন্দ্র ইব) শত্রুদের হৃদয় (সপত্নানাং হৃদঃ) বিদারিত করো (ভিদ্ধি) এবং তাদের শারীরিক ও বাহ্যিক বল (বলং) নাশ করো (বিরুজন)। ৩।
হে দৰ্ভমণি! তুমি শত্রুবর্গের হৃদয় বিদারিত করো। ঊর্ধ্বে গমন পূর্বক (উদ্য) শত্রুগণের শির অধঃপাতিত করো (শিরাংসি বি পাতায়), যেমন লোকে গৃহ ইত্যাদি নির্মাণের নিমিত্ত ভূমির ত্বক স্বরূপ (ভূম্যাঃ স্বচমিব) তৃণ-গুল্ম-ঔষধি ইত্যাদি ছেদন করে। ৪
হে দৰ্ভমণি! আমার শক্তবর্গকে বিদারিত করো, আমার ক্ষতির অভিলাষে সেনা সংগ্রহশালী (পৃতনায়তঃ) শত্রুদের বিদারিত করো, সকল দুষ্ট হৃদয়শালী (দুর্দঃ) আমার শত্রুদের বিদারিত করো, আমার প্রতি বিদ্বেষকারী (দ্বিষতঃ) শত্রুদের বিদারিত করো। ৫।
হে দর্ভমণি! আমার শত্রুবর্গকে ছিন্ন অর্থাৎ কর্তিত করো (ছিদ্ধি), আমার ক্ষতির অভিলাষে সেনা সংগ্রহকারী শত্রুদের ছিন্ন করো, সকল দুষ্ট হৃদয়শালী আমার শত্রুদের ছিন্ন করো, আমার প্রতি বিদ্বেষকারী শত্রুদের ছিন্ন করো। ৬।
হে দৰ্ভমণি! আমার শত্রুবর্গকে ছেদন করো (বৃশ্চ), আমার ক্ষতির অভিলাষে সেনা সংগ্রহশালী শত্রদের ছেদন করো, সকল দুষ্ট হৃদয়শালী আমার শত্রুদের ছেদন করো, আমার প্রতি বিদ্বেষকারী শত্রুদের ছেদন করো ॥৭॥
হে দৰ্ভমণি! আমার শক্তবর্গকে চূর্ণবিচূর্ণ করো (কৃন্ত), আমার ক্ষতির অভিলাষে সেনা সংগ্রহকারী শত্রুদের চূর্ণবিচূর্ণ করো, সকল দুষ্ট হৃদয়শালী আমার শত্রুদের চূর্ণবিচূর্ণ করো, আমার প্রতি বিদ্বেষকারী শত্রদের চূর্ণবিচূর্ণ করো ॥ ৮৷৷
হে দমণি! আমার শত্রুবর্গকে পিষ্ট অর্থাৎ মর্দিত করো (পিংশ), আমার ক্ষতির অভিলাষে সেনা সংগ্রহশালী শত্রুদের পিষ্ট করো, সকল দুষ্ট হৃদয়শালী আমার শত্রুদের পিষ্ট করো, আমার প্রতি বিদ্বেষকারী শত্রুদের পিষ্ট করো। ৯।
হে দৰ্ভমণি! আমার শক্রবর্গকে বিদ্ধ করো বা প্রহার করো (বিধ্য), আমার ক্ষতির অভিলাষে সেনা সংগ্রহকারী শত্রুদের প্রহার করো, সকল দুষ্ট হৃদয়শালী আমার শত্রুদের প্রহার করো, আমার প্রতি বিদ্বেষকারী শত্রুদের প্রহার করো। ১০।
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –ইমং বমি তে মণিং ইতি সূক্তত্ৰয়ং ঐন্দ্রীং জয়বলবৃষ্টিপশুকামস্য পরচক্রাগমে চ ইতি বিহিতায়াং ঐন্দ্ৰাখ্যায়াং মহাশূন্তৌ দৰ্ভমণিবন্ধনে বিনিযুক্তং। সূত্রিতং হি নক্ষত্রকল্পে। ইত্যাদি৷৷ (১৯কা. ৪অ. ২সূ.)।
টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি ও এর পরবর্তী দুটি সূক্ত জয়-বল-বৃষ্টি-পশু কামনাকারী জনের দ্বারা ইন্দ্র সম্পর্কিত অর্থাৎ ঐন্দ্রখ্য মহাশান্তি যাগে দমণি অর্থাৎ কুশের দ্বারা নির্মিত আভিচারিক মণি বন্ধনে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। নক্ষত্রকল্পে (১৭,১৯) এর বিধান সূত্রিত আছে। (১৯কা. ৪অ. ২সূ.)।
.
তৃতীয় সূক্ত : দৰ্ভমণিঃ
[ঋষি : ব্রহ্মা। দেবতা : দৰ্ভমণি। ছন্দ : অনুষ্টুপ।]
নিক্ষ দর্ড সপত্নান মে নিক্ষ মে পৃতনায়তঃ। নিক্ষ মে সর্বান্ দুহার্দো নি মে দ্বিততা মণে ॥১॥ তৃদ্ধি দর্ভ সপত্না মে তৃদ্ধি মে পৃতনায়তঃ। তৃদ্ধি মে সর্বান্ দুহাদস্তৃদ্ধি মে দ্বিততা মণে ॥ ২॥ রুদ্ধি দর্ড সপত্নান্ মে রুদ্ধি মে পৃতনায়তঃ। রুদ্ধি মে সর্বান্ দুহার্দো রু৮ি মে দ্বিষতত মণে ॥ ৩৷৷ মৃণ দর্ভ সপত্নান্ মে মৃণ মে পৃতনায়তঃ। মৃণ মে সর্বান্ দুহার্দো মৃণ মে দ্বিষতো মণে ॥৪॥ মন্থ দর্ড সপত্নান মে মন্থ মে পৃতনায়তঃ। মন্থ মে সর্বান্ দুহার্দো মন্থ মে দ্বিততা মণে ॥৫॥ পিণ্ডটি দর্ড সপত্নান মে পিণ্ডটি মে পৃতনায়তঃ। পিণ্ডটি মে সর্বান দুহাদঃ পিণ্ডটি মে দ্বিষতো মণে ॥ ৬৷৷ ওষ দর্ভ সপত্নান্ মে ওষ মে পৃতনায়তঃ। ওষ মে সর্বান দুহার্দ ওষ মে দ্বিষতো মণে ॥৭॥ দহ দর্ভ সপত্নান মে দহ মে পৃতনায়তঃ। দহ মে সর্বান্ দুহার্দো দহ মে দ্বিষতো মণে ॥৮॥ জহি দর্ড সপত্নান্ মে জহি মে পৃতনায়তঃ। জহি মে সর্বান্ দুহার্দো জহি মে দ্বিততা মণে ॥৯॥
বঙ্গানুবাদ –হে দমণি (দর্ভ মণে)! আমার শত্রুবর্গকে চুম্বন করো (নিক্ষ) অর্থাৎ চুম্বনের দ্বারা তাদের অবয়ব নিঃসার করে দাও, আমার ক্ষতির অভিলাষে সেনাসংগ্রহকারী শত্রুদের চুম্বন করো, সকল দুষ্ট হৃদয়শালী আমার শত্রুদের চুম্বন করো, আমার বিদ্বেষী শত্রুদের চুম্বন করো ॥ ১।
হে দৰ্ভমণি! আমার শক্রবর্গকে বিনাশ করো (তৃদ্ধি), আমার ক্ষতির অভিলাষে সেনাসংগ্রহকারী শত্রুদের বিনাশ করো, সকল দুষ্ট হৃদয়শালী আমার শত্রুদের বিনাশ করো, আমার বিদ্বেষী শত্রুদের বিনাশ করো। ২।
হে দৰ্ভমণি! আমার শক্তবর্গকে নিরুদ্ধ করো (রুদ্ধি) অর্থাৎ আবরণের দ্বারা প্রতিরুদ্ধ করো, আমার ক্ষতির অভিলাষে সেনাসংগ্রহকারী শত্রুদের নিরুদ্ধ করো, সকল দুষ্ট হৃদয়শালী আমার শত্রুদের নিরুদ্ধ করো, আমার বিদ্বেষী শত্রুদের নিরুদ্ধ করো ৷৷ ৩৷৷
হে দর্ভমণি! আমার শক্রবর্গকে হিংসা করো (মৃণ) অর্থাৎ হনন করো, আমার ক্ষতির অভিলাষে সেনাসংগ্রহকারী শত্রুদের হিংসা করো, সকল দুষ্ট হৃদয়শালী আমার শত্রুদের হিংসা করো, আমার প্রতি ১ বিদ্বেষপরায়ণ শত্রুদের হিংসা করো। ৪
হে দর্ভমণি! আমার শক্তবর্গকে লোড়িত বা মথিত করো (মন্থ) অর্থাৎ মন্থনের দ্বারা বিনাশ করো, আমার ক্ষতির অভিলাষে সেনাসংগ্রহকারী শত্রুদের মথিত করো, সকল দুষ্ট হৃদয়শালী আমার শত্রুদের মথিত করো, আমার বিদ্বেষী শত্রুদের মথিত করো ৷ ৫৷৷
হে দমণি! আমার শত্রুবর্গকে পিণ্ডাকৃতিভূত বা চূর্ণীভূত করো (পিটি), আমার ক্ষতির অভিলাষে সেনাসংগ্রহকারী শত্রুদের চূর্ণিত করো, সকল দুষ্ট হৃদয়শালী আমার শত্রুদের চূর্ণিত করো, আমার বিদ্বেষী শত্রুদের চূর্ণিত করো। ৬।
হে দর্ভমণি! আমার শত্রুবর্গকে দাহ করো (ওষ) অর্থাৎ ভস্মীকারিত করো, আমার ক্ষতির অভিলাষে সেনাসংগ্রহকারী শত্রুদের দাহিত করো, সকল দুষ্ট হৃদয়শালী আমার শত্রুদের দাহিত করো, আমার বিদ্বেষী শত্রুদের দাহিত করো ॥ ৭৷৷
হে দর্ভমণি! আমার শক্রবর্গকে দহন করো (দহ), আমার ক্ষতির অভিলাষে সেনাসংগ্রহকারী শত্রুদের দহন করো, সকল দুষ্ট হৃদয়শালী আমার শত্রুদের দহন করো, আমার বিদ্বেষী শত্রুদের দহন করো ॥ ৮
হে দৰ্ভমণি! আমার শক্তবর্গকে প্রহার করো (জহি), আমার ক্ষতির অভিলাষে সেনাসংগ্রহকারী শত্রুদের প্রহার করো, সকল দুষ্ট হৃদয়শালী আমার শত্রুদের প্রহার করো, আমার বিদ্বেষী শত্রুদের প্রহার করো ৷ ৯৷
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— …অস্য ঐন্দ্রাং মহাশূন্তৌ দৰ্ভমণিবন্ধনে বিনিয়োগঃ পূর্বসূক্তেন সহ উক্তঃ। (১৯কা. ৪অ. ৩সূ.)।
টীকা –এই সূক্তটি পূর্বসূক্তের সাথেই বিনিযুক্ত হয়। (১৯কা. ৪অ. ৩সূ.)।
.
চতুর্থ সূক্ত : দৰ্ভমণিঃ
[ঋষি : ব্রহ্মা। দেবতা : দৰ্ভমণি। ছন্দ : অনুষ্টুপ।]
যং তে দর্ভ জরামৃত্যুঃ শতং মর্মসু বর্ম তে। তেনেমং বর্মিণং কৃত্বা সপত্নান জহি বীর্যেঃ ॥১॥ শতং তে দর্ড মর্মাণি সহস্ৰং বীর্যাণি তে। তমস্মৈ বিশ্বে ত্বং দেবা জরসে ভর্তবা অদুঃ ॥২॥ জ্বামাহুর্দেববর্ম ত্বাং দর্ভ ব্ৰহ্মণম্পতি। স্বামিন্দ্রস্যাহুবর্ম ত্বং রাষ্ট্রাণি রক্ষসি ॥৩॥ সপত্নক্ষয়ণং দর্ভ দ্বিষতস্তপনং হৃদঃ। মণিং ক্ষত্রস্য বর্ধনং তনূপানং কৃণোমি তে ৪যৎ সমুদ্ৰো অভ্যক্রন্দৎ পর্জনন্যা বিদ্যুতা সহ। তততা হিরণ্যয়ো বিন্দুস্ততো দর্ভো অজায়ত ॥ ৫৷৷
বঙ্গানুবাদ –হে দর্ভ (অর্থাৎ দৰ্ভমণি)! তোমার পর্বে পর্বে অর্থাৎ গ্রন্থিতে গ্রন্থিতে যে অপরিমিত (যৎ তে মর্মসু শতং) জরা ও মৃত্যু পরিহারক কবচ বিদ্যমান (বর্ম), সেই বর্মের দ্বারা (তেন) তোমার ধারক অর্থাৎ রক্ষা-জয় ইত্যাদি কামনাকারী পুরুষকে (অর্থাৎ এই রাজাকে) আযুক্তবর্মিত করে অর্থাৎ বর্মরূপ রক্ষাযুক্ত করে (বর্মিণং কৃত্বা) বীর্যের মাধ্যমে অর্থাৎ পরকৃত উপদ্রব পরিহার ও শত্ৰুবিজয়-করণ ইত্যাদি লক্ষণযুক্ত সামর্থ্যে মণ্ডিত করে শত্রুগণকে বিনাশ করো (সপত্নান জহি)। ১।
হে মণিরূপ দর্ভ! তোমার অপরিমিত পর্বে পর্বে (শতং মর্মাণি) পরকৃতপীড়া পরিহারের নিমিত্ত সহস্ৰসংখ্যক সামর্থ্য (বীর্যাণি) বিদ্যমান। সেই মর্মশতাচ্ছাদনসাধন বীর্য এই রাজার জরাপরিহার ও পোষণের প্রয়োজনে (জরসে ভর্তবৈ) সকল দেবগণ, তোমাকে প্রদান করেছেন (অদুঃ)। অতএব এই রাজার জরা পরিহার করাও এবং এঁকে পোষণ করো ৷ ২।
হে দর্ভমণি! তুমি দেবগণের বর্ম অর্থাৎ রক্ষণার্থ কবচ বলে কথিত (ত্বাং দেববর্ম আঃ)। বেদ-বিদিতগণের রক্ষাকারিত্বের নিমিত্ত তুমি ব্ৰহ্মণস্পতি অর্থাৎ বেদের পালক নামে কথিত। অধিকন্তু, তুমি দেবাধিপতি ইন্দ্রেরও বর্ম অর্থাৎ কবচ বলে কথিত। (ত্বাং ইন্দ্রস্য বৰ্ম আহুঃ)। (বক্তব্য এই যে, দেবগণ, বৃহস্পতি ও ইন্দ্রদেব আপন আপন রক্ষার্থে তোমাকে ধারণ করে থাকেন)। এই হেন তুমি, রাষ্ট্রের ধারয়িতা রাজার রাজ্য রক্ষা বা পালন করো (ত্বং রাষ্ট্রাণি রক্ষসি) ৷ ৩৷৷
হে দর্ভমণি! তোমাকে শত্রুক্ষয়কারী (সপত্নক্ষয়ণ), দেষ্টাগণের হৃদয়-সন্তাপকারী (দ্বিষতঃ তপনম হৃদঃ), ক্ষত্রবলের বর্ধনকারী (ক্ষত্ৰস্য বর্ধন) এবং শরীরের রক্ষাকারী (তনূপানং)–এমন মহানুভাব মণি করছি (মণিং কৃণোমি)। অথবা–হে রক্ষাকামী পুরুষ বা রাজ! শত্রুক্ষয় ইত্যাদি সামর্থোপেত এই দৰ্ভমণিকে তোমার বলবর্ধন ও শরীর রক্ষণের নিমিত্ত সংযোজিত করছি। ৪
যে স্থানে জল উদ্ৰবিত হয় সেই হেন স্থানে (যৎ সমুদ্রঃ) বিদ্যুতের সাথে গর্জনকারী মেঘ হতে (বিদ্যুতা সহ অভিন্দৎ পর্জন্যঃ) যে হিরন্ময় বিন্দু উদ্ভূত হয়েছিল, সেই উৎপাদিত হিরণ্যবিন্দু হতেই (ততঃ হিরণ্যয়ঃ বিন্দু) দর্ভ প্রাদুর্ভূত হয়েছে (দর্ভঃ অজায়ত)। (এই দুর্ভোৎপত্তি বর্ণনার দ্বারা দৰ্ভময় মণির অতিশয়িত বীর্যত্ব উক্ত হয়েছে)। ৫৷৷
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ–…তস্য ঐন্দ্ৰাখ্যায়াং মহাশূন্তৌ দৰ্ভমণিবন্ধনে বিনিয়োগঃ পূর্বসূক্তেন সহ উক্তঃ৷৷ (১৯কা. ৪অ. ৪সূ.)।
টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি পূর্ববর্তী দ্বিতীয় ও তৃতীয় সূক্তের সাথে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। কোন কোন পুঁথিতে এই সূক্তের প্রথম মন্ত্রটির মর্মসু পদটির স্থলে বর্মসু এবং দ্বিতীয় মন্ত্রটির মর্মাণি স্থলে বর্মাণি পাঠান্তর পাওয়া যায় ৷ (১৯কা. ৪অ, ৪সূ.)।
.
পঞ্চম সূক্ত : ঔদুম্বরমণিঃ
[ঋষি : সবিতা (পুষ্টিকামী)। দেবতা : ঔদুম্বরমণি। ছন্দ : অনুষ্টুপ, ত্রিষ্টুপ, পংক্তি, শক্করী।]
ঔদুম্বরেণ মণিনা পুষ্টিকামায় বেধসা। পুশুনাং সর্বেষাং স্ফাতিং গোষ্ঠে মে সবিতা করৎ ॥১॥ যো নো অগ্নিৰ্গাৰ্হপত্যঃ পশূনামধিপা অসৎ। ঔদুম্বরে বৃষা মণিঃ সং মা সৃজতু পুষ্ট্যা ॥ ২॥ করীষিণীং ফলবতীং স্বধামিরাং চ নো গৃহে। ঔদুম্বরস্য তেজসা ধাতা পুষ্টিং দধাতু মে ॥৩॥ যদ দ্বিপাচ্চ চতুষ্পচ্চ যান্যন্নানি যে রসাঃ। গৃহ্নেহহং ত্বেষাং ভূমানং বিভ্রদৌদুম্বরং মণিম্ ॥৪॥ পুষ্টিং পশূনাং পরি জগ্রভাহং চতুষ্পদাং দ্বিপদাং যচ্চ ধান্য। পয়ঃ পশূনাং রসমোবধীনাং বৃহস্পতিঃ সবিতা মে নি যচ্ছাৎ ৫অহং পশূনামধিপা অসানি ময়ি পুষ্টং পুষ্টপতির্দধাতু। মহ্যমৌদুম্বরে মণিদ্রবিণানি নি যচ্ছতু ॥ ৬৷৷ উপ মৌদুম্বরে মণিঃ প্রজয়া চ ধনেন চ। ইন্দ্ৰেণ জিন্বিতো মণিরা মাগনৎসহ বৰ্চসা ॥৭॥ দেবো মণিঃ সপত্নহা ধনসা ধনসাতয়ে। পশোরন্নস্য ভূমানং গবাং স্ফাতিং নি যচ্ছতু ॥ ৮ যথাগ্রে ত্বং বনস্পতে পুষ্ট্যা সহ জজ্ঞিষে। এবা ধনস্য মে স্ফাতিমা দধাতু সরস্বতী ॥৯॥ আ মে ধনং সরস্বতী পয়স্ফাতিং চ ধান্য। সিনীবালুপা বহাদয়ং চৌদুম্বরে মণিঃ ॥ ১০ ত্বং মণীনামধিপা বৃষাসি ত্বয়ি পুষ্টং পুষ্টপতির্জজান। ত্বয়ীমে বাজা দ্রবিণানি সবৌদুম্বরঃ স ত্বমম্মৎ সহস্বাদরাতিমমতিং ক্ষুধং চ ॥১১। গ্রামণীরসি গ্রামণীরুত্থায়াভিষিক্তোহভি মা সিঞ্চ বচসা। তেজোহসি তেজো ময়ি ধারয়াধি রয়িরসি রয়িং মে ধেহি।১২। পুষ্টিরসি পুষ্ট্যা মা সমন্ধি গৃহমেধী গৃহপতিং মা কৃণু। ঔদুম্বরঃ স মস্মাসু ধেহি রয়িং চ নঃ সর্ববীরং নি যচ্ছ রায়ম্পোষায় প্রতি মুঞ্চে অহং ত্বম্ ॥১৩৷৷ অয়মৌদুম্বয়রা মণিবীরা বীরায় বধ্যতে। স নঃ সনিং মধুমতীং কৃপোতু রয়িং চ নঃ সর্ববীরং নি যচ্ছাৎ ॥১৪।
বঙ্গানুবাদ –পুষ্টিকামী অর্থাৎ পশু-পুত্র-ধন-শরীর ইত্যাদি বিষয়ের পুষ্টি কাময়মান জনের নিমিত্ত বিধাতা (বেধসা) উদুম্বরের দ্বারা (ঔদুম্বরেণ) নির্মিত মণি (যজ্ঞডুমুরের মণি) প্রয়োগ করেছিলেন। অথবা-পুষ্টি ইত্যাদির বিধাতা বা কর্তা (বেধসা) ঔদুম্বর মণির দ্বারা তুমি হেন পুষ্টিকামী জনকে রক্ষা করছি। সবিতা অর্থাৎ সকলের প্রেরক দেবতা গোভূমিতে (গোষ্ঠে) আমার (মে) সকল পশুবর্গের বর্ধন সাধন করুন (স্ফাতিং করৎ)। (সকল পশু অর্থে গো-মহিষ-অশ্ব-অজ গজ ইত্যাদি চতুষ্পদ প্রাণী অথবা দ্বিপদ ও চতুষ্পদ উভয়বিধ প্রাণীকেই বোঝাচ্ছে। এখানে শ্রুতি অনুসারে সকলের প্রেরক সবিতা দেবতার নিকট ব্যাঘ্র, তস্কর ইত্যাদি কর্তৃক বিনাশ পরিহার পূর্বক বা গো সহ সকল পশুর বৃদ্ধি প্রার্থনা করা হয়েছে)। ১।
যজমানের দ্বারা সংযুক্ত গার্হপত্য নামক যে অগ্নি বিদ্যমান (যঃ অগ্নিঃ গার্হপত্যঃ), তিনি আমাদের গো-অশ্ব ইত্যাদি পশুগণের রক্ষক বা পালনকর্তা হোন (পশূনাম্ অধিপাঃ অসৎ)। (অর্থাৎ চোর ইত্যাদির ভয় হতে রক্ষা করুন)। অভিমত-ফলবৰ্ষক (বৃষা) উদুম্বর-বিকার মণি (ঔদুম্বরঃ মণিঃ) পোষণের দ্বারা সর্বতঃ শরীরের অভিবৃদ্ধি সৃজন করুন (পুষ্ট্যা আ সং)। (অর্থাৎ পশুগণের পুষ্টি সাধন করুন)। ২।
প্রভূত গোময়যুক্ত (করীষিণীং) (অর্থাৎ গো-গণের সমৃদ্ধি হোক, এই বক্তব্য), প্রকৃষ্ট (ফলবতীং) ব্রীহি যব ইত্যাদি লক্ষণ সমন্বিত অন্ন (স্বধাং) ও ভূমি বা গো (ইরাং) আমাদের গৃহে (নঃ গৃহে) বিদ্যমান হোক। উদুম্বর মণির তেজের দ্বারা বা সামর্থের দ্বারা (তেজসা) ধাতা নামধেয় সকলের ধারণকর্তা দেবতা আমার শরীর ইত্যাদিতে পুষ্টি স্থাপন করুন (মে পুষ্টি দধাতু) ৷৷ ৩৷
ঔদুম্বর মণি ধারণকারী আমি (বিভ্রৎ) দুইপদবিশিষ্ট মনুষ্য ইত্যাদি, চারিপদবিশিষ্ট গো ইত্যাদি পশু, তিল-মাষ-ব্রীহি-যুব প্রিয়ঙ্গু ইত্যাদি অন্ন ও দধি-ক্ষীর-মধু-গুড় ইত্যাদিরূপ রস বহুভাবে (ভূমান) ভোগ করবো (গৃহে)। ৪
আমি (অহং) দ্বিপদা মনুষ্য ইত্যাদির ও চতুষ্পদা গো-মহিষ ইত্যাদি পশুসমূহের এবং ব্রীহি-যুব-ইত্যাদিরূপ ধান্যের পোষণ (পুষ্টিং) পরিগ্রহ করবো (পরিজগ্রভ)। অধিকন্তু, সকলের অনুজ্ঞাতা (সবিতা) বৃহস্পতিদেব পশুগণের রস অর্থাৎ গো-মহিষ ইত্যাদির দুগ্ধ এবং ব্রীহি-যব ইত্যাদির সারভূত অংশ (ওষধীনাম) উদুম্বরের তেজের দ্বারা আমাকে (মে) প্রদান করুন (নি যচ্ছাৎ) ৫
আমি হেন পুষ্টিকামী জন (অহং) পুত্ৰ-ভৃত্য ইত্যাদি দ্বিপদ মনুষ্যগণের ও গো-অশ্ব ইত্যাদি চতুষ্পদ প্রাণীসমূহের পালক হবো (পশুনা অধিপাঃ অসানি)। সেই নিমিত্ত পুষ্টিকামী আমাকে (ময়ি) পশু ইত্যাদির পোষণের স্বামী (পুষ্টপতিঃ) পুষ্টি অর্থাৎ পশুসমূহের সমৃদ্ধি অর্থাৎ উদুম্বর মণি প্রদান করুন (পুষ্টং দধাতু)। উদুম্বরের বিকার সম্ভুত এই মণি আমাকে (মহ্যং) হিরণ্যরাশি প্রদান করুক (নি যচ্ছতু) ৷ ৬ ৷
এই উদুম্বর-বিকৃত মণি পুত্র-পৌত্র ইত্যাদি রূপ প্রজা ও হিরণ্য ইত্যাদি লক্ষণযুক্ত গো-ইত্যাদিরূপ ধনের সাথে আমার নিকট আগমন করুক (মাং উপ)। ইন্দ্রের দ্বারা প্রেরিত (ইন্দ্রেণ জিন্বিতঃ) এই মণি আমাদের অভিলষিত তেজের সাথে (বৰ্চসা সহ) আমাদের প্রাপ্ত হোক (আ মা অগন) ৭
পুষ্টির নিমিত্ত দেবগণ কর্তৃক নির্মিত বা দ্যোতমান এই উদুম্বর-বিকার মণি (দেবঃ মণিঃ) শত্রুগণের হন্তা (সপত্নহা) ও. আমাদের অভিলাষ পূরণকারী অর্থাৎ আমাদের ইচ্ছিত সামগ্রীর দাতা (ধনসাঃ)। এই হেন মণি আমাদের ধনরাশি লাভের নিমিত্তভূত হোক (ধনসাতয়ে)। অধিকন্তু, (এই মণি) পশু ও অন্নের প্রভূত সমৃদ্ধি প্রদান করুক (পশোঃ অন্নস্য চ ভূমানং নি যচ্ছতু) তথা গো-বর্গের অভিবৃদ্ধি প্রদান করুক (গবাং স্ফাতিং নি যচ্ছতু) ৮
হে বনের পালক (বনস্পতি অর্থাৎ উদুম্বরমণি)! তুমি ওষধিরূপ বনস্পতির সৃষ্টির সময়ে (ত্বং যথা অগ্রে) পুষ্টির সাথে উৎপন্ন হয়েছে (পুষ্ট্যা সহ জজ্ঞিষে)। তোমার সাধনের দ্বারা বাক্-দেবী (সরস্বতী) এইরূপে আমার ধনের অভিবৃদ্ধি করুন (এবা..দধাতু)। ৯।
দেবী সরস্বতী আমাকে হিরণ্য ইত্যাদি লক্ষণ সমন্বিত ধন ও গোদুগ্ধের অভিবৃদ্ধি বা প্রাচুর্য (অর্থাৎ গো-সমৃদ্ধি) প্রাপ্ত করান (আ মে ধনম পয়ঃস্ফাতিম্ চ)। সিনীবালী (চতুর্দশীযুক্তা বা প্রতিপদযুক্তা অমাবস্যা, যাতে চন্দ্রকলা দৃষ্ট হয়ে থাকে–সেই শুক্লবর্ণা চন্দ্রকলার অভিমানী দেবতা) ও ঔদুম্বর মণি ব্রীহি-যব ইত্যাদি ওষধীসমূহের ফলরাশি (ধান্য) আমার সমীপে প্রাপ্তির ব্যবস্থা করুন (উপা বহাৎ)। অথবা–বাক্-দেবী (সরস্বতী) হিরণ্য-রজত-মণি-মুক্তা ইত্যাদি ধন আমার হস্তের দ্বারা ধারণযোগ্য করুন এবং সিনীবালী ও উদুম্বর মণি গো-দুগ্ধের অভিবৃদ্ধি ও ব্রীহি-যব ইত্যাদি ধনের সমৃদ্ধি আমার সমীপদেশে প্রেরণ করুন ॥ ১০
হে উদুম্বর মণি (উদুম্বরঃ)! গো-অশ্ব ইত্যাদি সহ সকল পদার্থের পোষণকর্তা (প্রজাপতি) তোমাকে উৎপাদিত করেছেন (পুষ্টপতিঃ জজান); সেই হেতু তুমি দৰ্ভ ইত্যাদি দ্বারা নির্মিত সকল মণি সমূহের অধিপতি ও সকলের অভিমত ফলবর্ষণকারী হয়েছে (মণীনাম্ অধিপাঃ বৃষা অসি)। তুমি সকল সমৃদ্ধির আস্পদভূত; সুতরাং তোমার দ্বারা আমার বহুবিধ অন্ন ও মণি- মুক্তা-প্রবাল ইত্যাদি লক্ষণান্বিত ধন লব্ধ হোক (ত্বয়ি ইমে বাজাঃ দ্রবিণানি সর্বা)। হে ঔদুম্বর! সেই হেন (স) অন্ন-ধন ইত্যাদির সাধক তুমি (ত্বং) আমাদের নিকট হতে (অস্মৎ) অলাভ (অরাতিং) অর্থাৎ ক্ষতি, দারিদ্র্য (অমতিং) বা বুদ্ধিভ্রংশ ও খাদ্যাভাব (ক্ষুধং) অত্যন্ত দূরে অপগমিত করো (আরাৎ সহস্ব)। ১১।
হে ঔদুম্বর! তুমি গ্রামের স্বামীস্বরূপ (গ্রামনীঃ অসি); গ্রামণী যেমন গ্রামের মধ্যে প্রধানভূত, তেমনই তুমি সকল মণির মধ্যে প্রধানভূত; অতএব আমাদের মধ্যেও প্রধান হও; অথবা আমাদেরও শ্রেষ্ঠ করে দাও (গ্রামনীঃ উত্থায় অভিষিক্তঃ); অর্থাৎ আমাদের পক্ষেও অভিমত ফলপ্রাপণকারী হও। তুমি তেজের দ্বারা আচ্ছন্ন (ত্বং বচসা অভিষিক্ত অসি), আমাদেরও তেজের দ্বারা অভিষিক্ত করো (মা বচসা অভি সিঞ্চ)। হে মণি! তুমি সাক্ষাৎ তেজোপ (তেজঃ অসি) অতএব আমার মধ্যে তেজঃ ধারণ করো (ময়ি তেজঃ ধারয়); তুমি ধনপ্রাপ্ত হয়েছে (অধি রয়িঃ অসি), আমাতেও ধন স্থাপন করো অর্থাৎ আমাকেও ধন প্রদান কেরা (রয়িং মে ধেহি)। ১২।
হে মণি! তুমি সাক্ষাৎ পুষ্টিস্বরূপ (পুষ্টিঃ অসি); অতএব পুষ্টির দ্বারা আমাকে সম্যক্ অক্ত করো (সম অগ্ধি) অর্থাৎ সমৃদ্ধ করো। তথা তুমি গৃহমেধী অর্থাৎ গৃহস্থ; অতএব আমাকে গৃহপতি করো অর্থাৎ ধন-স্বর্ণ ইত্যাদি সমৃদ্ধ গৃহের অধিকারী করো বা সোমবাগ ইত্যাদি কর্মের অনুষ্ঠাতা করো (কৃণু)। হে ঔদুম্বর মণি! তুমি সেই হেন উক্তবিধ নানা ধর্মোপেতত্বে বিদ্যমান (স), অতএব সেই গ্রামণীত্ব বৰ্চস্বিত্ব-তেজোরূপত্ব-অধিরয়িত্ব ইত্যাদি সকলই আমাদের মধ্যে স্থাপন করো (অস্মাসু ধেহি)। অধিকন্তু, আমাদের (নঃ) পুত্র-ভৃত্য ইত্যাদি যার দ্বারা আমরা তুষ্ট হই, সেই ধন প্রদান করো (রয়িং চ সর্ববরং নি যচ্ছ)। হে মণি! আমি ধন ইত্যাদির পুষ্টি কামনায় (রায়স্পোষায়) তোমাকে বন্ধন করছি, অর্থাৎ ধারণ করছি (অহং ত্বম্ প্রতি মুঞ্চে)। ১৩ ৷৷
(উপযুক্ত মন্ত্রের শেষাংশ ফলান্তর সম্বন্ধে পরোক্ষে পুনরায় অভিধীত হয়েছে) (আমি ধন ইত্যাদির পুষ্টি কামনায় ঔদুম্বর মণি ধারণ করেছি)। এই মণি (অয়ম্ ঔদুম্বরঃ মণিঃ)। যেখানে বিবিধ শত্রু (বীরঃ) আছে, সেখানেই সেই শত্রুবর্গকে (বীরায়) বধ করে থাকে। তাদৃশ মণি (স) আমাদের প্রভূত মধুবৎ ধন ইত্যাদি লব্ধ করিয়ে দিক (নঃ মধুমতীং সনিং কৃণোতু) এবং আমাদের সকল পুত্র ইত্যাদি প্রদান করুন (নঃ সর্ববীরং নি যচ্ছা)। অথবা-পুত্র ইত্যাদির সাথে ধন প্রদান করুন; অর্থাৎ পুত্র ইত্যাদি ও ধন প্রদান করুন। ১৪।
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ–…অস্য কৌবেরিং ধনকামস্য ধনক্ষয়ে চ ইতি বিহিতায়াং কৌব্যোখ্যায়াং মহাশূন্তৌ ঔদুম্বরমণিবন্ধনে বিনিয়োগ। উক্তং নক্ষত্রকল্পে।–ইত্যাদি। (১৯কা. ৪অ, ৫সূ.)।
টীকা— নক্ষত্র কল্পের (১৭,১৯) সূত্রানুসারে উপযুক্ত সূক্তটি ধনকামনায় ও ধনক্ষয়ে কাবেরী নামে আখ্যাত মহাশান্তি যাগে ঔদুম্বর মণিবন্ধনে বিনিয়োগ হয়ে থাকে। এই ঔদর মণির দ্বারা পুষ্টিকামনাতেও কাবেরী নামক মহাশান্তি যাগে ঔদুম্বরমণিবন্ধন হয়ে থাকে৷ (১৯কা. ৪অ. ৫সূ.)।
.
ষষ্ঠ সূক্ত : দর্ভঃ
[ঋষি : ভৃগু (আয়ুষ্কামঃ)। দেবতা : দর্ভ। ছন্দ : অনুষ্টুপ, বৃহতী, ত্রিষ্টুপ, জগতী।]
শতকাণ্ডো দুশ্চ্যবনঃ সহস্রপূর্ণ উত্তিরঃ। দর্ভো য উগ্র ওষধিস্তং তে বপ্নাম্যাথুষে ১i. নাস্য কেশান্ প্ৰ বন্তি নোরসি তাড়মা ঘতে। যম্মা অচ্ছিন্নপর্ণেন দর্ভেণ শৰ্ম যচ্ছতি ॥ ২ : দিবি তে ভূলমোষধে পৃথিব্যামসি নিষ্ঠিতঃ। ত্বয়া সহস্ৰকাণ্ডেনায়ুঃ প্র বর্ধয়ামহে৷ ৩ তিম্রো দিবো অত্যতৃণৎ তিস্র ইমাঃ পৃথিবীরুত। ত্বয়াহং দুহার্দো জিহ্বাং নি তৃণদ্মি বচাংসি। ৪ত্বমসি সহমাননাহহমস্মি সহস্বা। উভৌ সহস্বন্তৌ ভূত্বা সপত্নান সহিষীমহি ॥ ৫৷৷ সহস্ব নো অভিমাতিং সহস্ব পৃতনায়তঃ। সহস্ব সর্বান্ দুহাদঃ সুহার্দো মে বহু কৃধি ॥ ৬৷৷ দর্ভেন দেবজাতেন দিবি উম্ভেন শশ্বদি। তেনাহং শশ্বততা জনা অসনং সনবানি চ ॥৭৷ প্রিয়ং মা দর্ভ কৃণু ব্রহ্মরাজন্যাভ্যাং শূদ্রায় চার্যায় চ। যস্মৈ চকাময়ামহে সর্বম্মৈ চ বিপশ্যতে ॥ ৮ যো জায়মানঃ পৃথিবীমদৃংহৎ যো অস্তভ্রাদন্তরিক্ষং দিবং চ। যং বিভ্রতং ননু পাস্না বিবেদ স নোইয়ং দর্ভো বরুণো দিবা কঃ ॥৯॥ সপত্নহা শতকাণ্ডঃ সহস্বানোষধীনাং প্রথমঃ সং বভূব। স নোহয়ং দর্ভঃ পরি পাতু বিশ্বতস্তেন সাক্ষীয়, পৃতনাঃ পৃতন্যতঃ ॥১০
বঙ্গানুবাদ — (এখানে মৃত্যুভয় পরিহারের উদ্দেশ্যে দর্ভের মণিসাধনভূত স্বরূপ সম্পাদন পূর্বক বন্ধন কথিত হয়েছে)–অনেক পর্বযুক্ত (শতকাণ্ডঃ), কারো দ্বারা ছেদিতব্য নয় (দুঃচ্যবনঃ), অনেক পত্রযুক্ত (সহস্রপর্ণঃ), সকল ওষধির মধ্যে উৎকৃষ্টতর অর্থাৎ অতিশয় বীর্যশালী (উত্তিরঃ), উর্ণবল (উঃ) দর্ভ নামক যে ওষধিবিশেষ, সেই দর্ভের মণির দ্বারা, হে মৃত্যুভয়ার্দিত পুরুষ! তোমাকে বন্ধন করছি। (কি জন্য?–না) শতসম্বৎসরলক্ষণ আয়ুর নিমিত্ত (আয়ুষে) ১
মৃত্যুদূতবর্গ বা রাক্ষস-পিশাচ ইত্যাদি এর কেশ আকর্ষণ করতে পারে না (ন অস্য কেশান প্র বপন্তি) এবং বক্ষে আঘাত করতে পারে না (ন উরসি তাড়ম্ আ ঘুতে)। প্রয়োগকারী জন সেই মৃত্যুভয়ার্দিত পুরুষকে (যস্মা) অচ্ছিন্নপর্ণ দর্ভের দ্বারা নির্মিত মণি বন্ধন পূর্বক সুখ প্রদান করেছেন (শর্ম যচ্ছতি)। ২।
হে। শতকাণ্ডাখ্য ওষধি! তোমার অগ্রভাগ দ্যুলোকে (তে তুলং দিবি) অর্থাৎ দ্যুলোক পর্যন্ত উর্ধ্বে তোমার অভিবৃদ্ধি এবং সম্পূর্ণ দ্যাবাপৃথিবীব্যাপী অনেক কাণ্ডোপেত (সহস্ৰকাণ্ডেন) তোমার দ্বারা এই মৃত্যুভয়ার্দিতের (অস্য) আয়ু প্রকর্যের সাথে অভিবর্ধন করছি (প্র বর্ধয়ামহে)। ৩।
হে শতকাণ্ডাখ্য ঔষধি! তুমি তোমার ভোগস্থান ত্রিবৃৎ দ্যুলোক এবং এই পরিদৃশ্যমান (ইমাঃ) ত্রিগুণাত্মক পৃথিবী অতিক্রম পূর্বক অবস্থান করে আছো, অর্থাৎ বেষ্টিতবান্ হয়ে আছো (অতি অতৃণৎ)। এমন মহানুভাব তোমার দ্বারা আমি (ত্বয়া অহং) দুষ্টহৃদয়শালী শত্রুর জিহ্বা (দুঃহার্দঃ জিহ্বা) বেষ্টন করছি (নি তৃণদ্মি) এবং তাদের বচন (বচাংসি) রুদ্ধ করছি। ৪
হে শতকাণ্ডাখ্য ঔষধি! তুমি শত্রুগণের আক্রমণ সহনশীল (সহমানঃ অসি), অর্থাৎ তাদের পরাভবক্ষম; আমিও কৃতসহন অর্থাৎ শহিংসাসাধনের বলধারী (অস্মি সহস্বা)। আমরা উভয়ে সহনধর্মী হয়ে (উভৌ সহস্বন্তৌ ভূত্ব) অর্থাৎ সমান বলশালী হয়ে, শক্রবর্গকে অভিভূত করবো (সপত্না সহিষীমহি)। ৫।
হে শকাণ্ডাখ্য ঔষধি! আমাদের অভিহিংসক (অভিমাতি) অর্থাৎ শত্রু বা পাপকে পরাভূত করো (সহস্ব)। তথা আমার সাথে যুদ্ধের উদ্দেশে যারা সেনা সংগ্রহে অভিলাষী (পৃতনায়তঃ), তাদের অভিভব করো (সহস্ব)। সকল দুষ্ট-হৃদয়শালী শত্রুদের (দুঃহার্দঃ) পরাভূত করে আমার প্রতি বহুভাবে শুভ হৃদয়সম্পন্ন করো (সুহাদঃ কৃধি), অর্থাৎ সকলকে আমার অনুরক্ত করো। ৬।
দেবতাবর্গের নিকট হতে উৎপন্ন (দেবজাতেন), দ্যুলোকের অধঃপতন রোধকারী অর্থাৎ স্তম্ভস্বরূপ (ষ্টম্ভেন) বা দ্যুলোকের স্তম্ভনকারী দর্ভের দ্বারা সর্বদা (শশ্বাদৎ) আমি জনগণকে দীর্ঘজীবী করববা (শশ্বতঃ জনা) ও তাদের অলভ্য সামগ্রী সুলভ্য করবো (অসনং সনবানি চ)। ৭।
হে দর্ভ (অর্থাৎ দৰ্ভমণি)! তোমাকে ধারণকারী আমায় ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় বর্ণের প্রিয় করো (প্রিয়ং কৃণু), অর্থাৎ আমি যাতে তাঁদের প্রিয় হই তৈমন করো। তথা শূদ্র ও আর্য অর্থাৎ মানী পুরুষগণকে (শূদ্রায় আর্যায় চ) আমার, প্রিয় করো। অধিকন্তু, আমি অনুলোম ও প্রতিবোম জাতীয়ের মধ্যে যাকে যাকে (যস্মৈ) প্রিয়ভাবে কামনা করবো, সেই সকল পাপাকাঙ্ক্ষিত (বিপশ্যতে) পুরুষবর্গকে আমার প্রিয়ভূত করো। ৮।
যে শতকাণ্ডাখ্য দর্ভ প্রাদুর্ভাব মাত্রই (যে জায়মানঃ) পৃথিবীর সবকিছুকে দৃঢ় করেছে (অদৃংহৎ), অর্থাৎ যাতে জলে সবকিছু বিলীন না হয়, সেই নিমিত্ত আপন মূলের দ্বারা ভূ-ভাগকে দৃঢ় করেছে)। যে প্রাদুর্ভূত হওয়া মাত্রই আপন কাণ্ডের দ্বারা অন্তরীক্ষলোক ও দ্যোতমান দ্যুলোককে স্তম্ভিত করেছে; অর্থাৎ যাতে নিপতিত না হয়, তেমন স্তম্ভস্বরূপ হয়েছে। এই হেন শতকাণ্ডোপেত দর্ভমণি ধারণকারী (বিভ্রতং) পাপ কি তা জানেন না (পাপ্পা ননু বিবেদ), অর্থাৎ তাঁকে পাপ স্পর্শ করতে পারে না। সেই হেন এই অন্ধকার-নিবারক দর্ভ (বরুণঃ দৰ্ভঃ) আমাদের প্রকাশ করুক (নঃ দিবা অকঃ)। ৯।
শত্রুঘাতক (সপত্নহা), শতকাণ্ডোপেত বলবান্ বা মহানুভাব (সহস্বা) দর্ভ ওষধীসমূহের মধ্যে মুখ্যরূপে সস্তৃত হয়েছে (সং বভূব)। এই হেন দর্ভ (অয়ং) আমাদের সকল দিকের ভয় হতে পরিত্রাণ করুক (পরি পাতু)। এই দমণির দ্বারা (তেন) আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে সেনা সংগ্রহে অভিলাষী শত্রুদের (পৃতন্যতঃ পৃতনা) পরাভব করবো (সাক্ষীয়)। ১০।
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –..তস্য যাম্যাং যমভয়ে (ন.ক.১৭) ইতি বিহিতায়াং ম্যাখ্যায়াং মহাশান্তেী দমণিবন্ধনং কুর্যাৎ। সূত্রিতং হি নক্ষত্রকল্পে।-ইত্যাদি। (১৯কা. ৪অ ৬সূ.)।
টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি যামা নামক মহাশান্তি যাগে যমভয়ে ভীত অর্থাৎ মৃত্যুভয়ার্দি পুরুষের দৰ্ভমণিবন্ধনে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। নক্ষত্রকল্পে (১৭) এটি সূত্রিত আছে। নক্ষত্রকল্পের (১৯) সূত্রানুসারে নেচ্ছ (২কা, ২৭মন্ত্র) ইত্যাদি মন্ত্র যেমন অপরাজিতা নামক মহাশান্তি যাগে পাঠামূল মণির বন্ধনে ১ বিনিযুক্ত হয়, উপযুক্ত সূক্তটির বিনিয়োগও একই প্রকার ৷ (১৯কা, ৪অ. ৬সূ.)।
.
সপ্তম সূক্ত : দর্ভঃ
[ঋষি : ভৃগু। দেবতা : দর্ভ। ছন্দ : জগতী, ত্রিষ্টুপ, পংক্তি।]
সহস্রার্ঘঃ শতকাণ্ডঃ পয়স্বানপামগ্নিবীরুধাং রাজসূয়৷ স নোইয়ং দর্ডঃ পরি পাতু বিশ্বততা দেবো মণিরারুষা সং সৃজাতি নঃ ॥১॥ ঘৃতাদুল্লুপ্তো মধুমান্ পয়স্বান্ ভূমিদৃংহোহচ্যুতশ্যাবয়িষ্ণুঃ। নুদসপত্নানধরাংশ্চ কৃন্থ দৰ্ভা বোহ মহতামিন্দ্রিয়েণ ॥ ২॥ ত্বং ভূমিমত্যেষ্যোজসা ত্বং বেদ্যাং সীদসি চারুরধ্বরে। ত্বাং পবিত্ৰমৃষয়েহভরন্ত ত্বং পুনীহি দুরিতান্যস্মৎ ॥ ৩॥ তীক্ষো রাজা বিষাসহী রক্ষোহা বিশ্বচৰ্ষণিঃ। ওজো দেবানাং বলমুগ্ৰমেতৎ তং তে বমি জরসে স্বস্তয়ে ॥৪৷৷ দর্ভেণ ত্বং কৃণবদ বীর্যাণি দর্ডং বিভ্ৰদাত্মনা মা ব্যথিষ্ঠাঃ। অতিষ্ঠায়া বৰ্চসাধান্যাৎসূর্য ইবা ভাহি প্রদিশশ্চতঃ ॥৫॥
বঙ্গানুবাদ— বহুমূল্য (সহস্রার্ঘঃ), বহুঁকাণ্ডোপেত (শতকাণ্ডঃ) বলবান, (পয়স্বান–সহস্বান), জলের অগ্নিস্থানীয় (অপাং অগ্নিঃ) অর্থাৎ জলের স্রষ্টা বা জলের শোষক, লতা ইত্যাদির মধ্যে রাজসূয় সম (বীরুধাং রাজসূয়) অর্থাৎ সকল যজ্ঞের মধ্যে রাজসূয়ের শ্রেষ্ঠত্বের সমতুল্য সকল ওষধির মধ্যে শ্রেষ্ঠ; এই হেন দর্ভ (স অয়ং দর্ভঃ) আমাদের সর্বতোভাবে রক্ষা করুক (নঃ বিশ্বতঃ পরি পাতু)। সেই দেবসৃষ্ট মণি (দেবঃ মণিঃ) আমাদের আয়ুর সাথে সংসর্গ বিশিষ্ট করুক (নঃ আয়ুষা সং সৃজাতি), অর্থাৎ দীর্ঘ আয়ু প্রদান করুন ॥১॥
হুতাবশিষ্ট আজ্যের দ্বারা অনুলিপ্ত (ধৃতাং উৎলুপ্তঃ), মাধুর্যোপেত (মধুমা), প্রভূত দুগ্ধশালী (পয়স্বা), আপন মূলের দ্বারা ভূমির দৃঢ়ীকর্তা (ভূমিদৃংহঃ), চ্যুতি বা নাশরহিত (অচ্যুত), দৃঢ় শত্রুগণেরও ক্ষরণকারী (চ্যায়িষ্ণুঃ), হে দৰ্ভমণি! তুমি শত্রুবর্গকে সুদূরে প্রেরণ করে (নুদ) ও তাদের নিকৃষ্টভাবে বলহীন করে (অধরা স্বয়ং মহত্ত্বোপেত অর্থাৎ অতিশয়িত বীর্যশালী (মহতাং) অন্য ওষধীর ইন্দ্রসৃষ্ট সামর্থ্যের সাথে (ইন্দ্রিয়েন) ভুজ ইত্যাদি প্রদেশে অধিষ্ঠিত হও (আ রোহ)। ২।
হে মণিভূত দর্ভ! তুমি বলের দ্বারা ভূমি অতিক্রম করেছো (ওজসা ভূমি অতি এষি), তুমি হিংসারহিত যজ্ঞের বেদীতে (চারুঃ অধ্বরে বেদ্যা) হবিঃ আস্বাদনের নিমিত্ত উপবিষ্ট হয়েছে (সীদসি)। অধিকন্তু তুমি শুদ্ধিকারক (পবিত্রং ত্বাং)। অতীন্দ্রিয়দ্রষ্টাগণ (ঋষয়ঃ) স্বপাবনার্থে অর্থাৎ নিজেদের শুদ্ধিকরণের নিমিত্ত তোমাকে আহরণ করেছেন (অভরন্ত)। এই হেন তুমি (ত্বম) আমাদের নিকট হতে (অস্মৎ) সকল পাপ (দুরিতানি) শোধন করো (পুনীহি) ॥ ৩॥
অতি তীক্ষ্ণীকৃত শক্তিসম্পন্ন (তীক্ষঃ), সকল ওষধী বা মণির মধ্যে রাজস্বরূপ অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ (রাজা), বিশেষভাবে সহনশীল অর্থাৎ শত্ৰুমৰ্ষক (বিষাসহি), রাক্ষসহন্তা (রক্ষোহা), বিশ্বদ্রষ্টা (বিশ্বচৰ্ষণিঃ), ইন্দ্র প্রমুখ দেবগণের ওজঃ অর্থাৎ তেজঃস্থানীয় (ওজঃ ॥ দেবানাম), পরের পক্ষে অসহনীয় বলস্বরূপ (উগ্রং বলং), এমন রক্ষাসাধন এই দৰ্ভাখ্য বস্তু অথবা অথবা ইদানীং (এতৎ)। এই হেন মণি (তং), হে রক্ষাকামী পুরুষ (তে)! তোমাকে বন্ধন করছি। (কি জন্য?–না) জরাপরিহারার্থে ও ক্ষেমার্থে অর্থাৎ কল্যাণার্থে (জরসে স্বস্তয়ে)। ৪।
হে পুরুষ! তুমি দৰ্ভমণির সাধনের দ্বারা (দর্ভেণ) শত্ৰুজয় ইত্যাদি কর্ম করো (বীর্যাণি কৃণুবৎ)। অতঃপর এই বীর্যসাধন দর্ভ ধারণ পূর্বক তুমি নিশ্চলতার সাথে যুক্ত হয়ে (বিভ্ৰৎ আত্মনা) ব্যথানুভব করো না (মা ব্যথিষ্ঠাঃ)। অধিকন্তু, তুমি শারীরিক বলের দ্বারা অধিষ্ঠিত হয়ে (বচসা অন্যান্) সূর্যের ন্যায় চারি প্রকৃষ্ট দিক প্রকাশ করো (প্রদিশঃ চতস্র আ তাহি), অর্থাৎ সূর্য যেমন আপন তেজে বা আলোকে পূর্ব ইত্যাদি চারিটি দিকের লোকসমূহকে প্রকাশ করে, তুমিও তেমনই প্রকাশ করো। ৫
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— …অস্য যাম্যাং মহশান্তৌ দৰ্ভমণিবন্ধনে বিনিয়োগঃ পূর্বসূক্তেন সহ উক্তঃ (১৯কা. ৪অ. ৭সূ.)।
টীকা –এই সূক্তটি পূর্বসূক্তের সাথে একই রকমে যামা নামক মহাশান্তি যাগে দৰ্ভমণিবন্ধনে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে ৷ (১৯কা. ৪অ. ৭সূ.)।