তৃতীয় অনুবাক
প্রথম সূক্ত : ছন্দাংসি
[ঋষি : ব্রহ্ম। দেবতা : ছন্দ সমুদায়। ছন্দ : বৃহতী।]
গায়ত্ৰুষ্ণিগনুষ্ঠুব বৃহতী পঙক্তিস্ত্রিষ্টুব জগত্যৈ ॥১॥
বঙ্গানুবাদ –গায়ত্রী ছন্দের উদ্দেশে স্বাহা মন্ত্রে এই আহুতি প্রদান করা হচ্ছে। সেরূপ উষ্ণিক ছন্দের উদ্দেশে, অনুষ্টুপ ছন্দের উদ্দেশে, বৃহতী ছন্দের উদ্দেশে, পংক্তি ছন্দের উদ্দেশে, ত্রিষ্টুপ ছন্দের উদ্দেশে এবং জগতী ছন্দের উদ্দেশে স্বাহা মন্ত্রে এই আহুতি প্রদত্ত হচ্ছে। ১।
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –তৃতীয়েনুবাকে ষট্ সূক্তানি। তত্র গায়ি ইতি প্রথম সূক্তস্য গায়ত্ৰীং ছন্দোব্রহ্মবৰ্চসকামস্য প্রযুঞ্জীত ইতি (ন. ক. ১৭) বিহিতায়াং গায়ত্র্যাখ্যায়াং মহশান্তৌ বিনিয়োগঃ ইত্যাদি৷৷ (১৯কা, ৩অ. ১সূ.)।
টীকা— তৃতীয় অনুবাকের ছটি সূক্তের মধ্যে উপযুক্ত এক ঋক্-বিশিষ্ট প্রথম সূক্তটি ব্রহ্মতেজঃকামী জনের গায়ত্রী নামক মহাশান্তিকর্মে বিনিয়োগ হয়। নক্ষত্র কল্পে (১৭) এ সম্পর্কে বলা হয়েছে। নক্ষত্র কল্পে আরও বলা হয়েছে–ছন্দোগণঃ (২২) গায়ত্ৰাং সমাসঃ (২২।২৩) আঙ্গিরস্যাং ইতি (ন.ক. ১৮) ৷ (১৯কা. ৩অ. ১সূ.)।
.
দ্বিতীয় সূক্ত : ব্ৰহ্মা
[ঋষি : অঙ্গিরা। দেবতা : মন্ত্রোক্ত। ছন্দ : বৃহতী।]
আঙ্গিরসানামাদ্যৈঃ পঞ্চানুবাকৈঃ স্বাহা ॥১॥ ষষ্ঠায় স্বাহা ॥ ২ সপ্তমাষ্টমাভ্যাং স্বাহা ॥৩ নীলনখেভ্যঃ স্বাহা ॥৪॥ হরিতেভ্যঃ স্বাহা ॥৫ ক্ষুদ্রেভ্যঃ স্বাহা ॥৬॥ পর্যায়িকেভ্যঃ স্বাহা ॥ ৭৷৷ প্রথমেভ্যঃ শঙ্খেভ্যঃ স্বাহা ॥৮॥ দ্বিতীয়েভ্যঃ শঙ্খেভ্যঃ স্বাহা ॥৯॥ তৃতীয়েভ্যঃ শঙ্খেভ্যঃ স্বাহা ॥ ১০ উপোত্তমেভ্যঃ স্বাহা ॥১১৷৷ উত্তমেভ্যঃ স্বাহা।১২। উত্তরেভ্যঃ স্বাহা ॥১৩৷৷ ঋষিভ্যঃ স্বাহা ॥১৪৷ শিখিভ্যঃ স্বাহা ॥১৫৷ গণেভ্যঃ স্বাহা ॥ ১৬৷৷ মহাগণেভ্যঃ স্বাহা ॥১৭৷৷ সর্বেভ্যোহঙ্গিরোভ্যো বিদগণেভ্যঃ স্বাহা ॥ ১৮ ৷৷ পৃথসহস্রাভ্যাং স্বাহা ॥১৯৷ ব্ৰহ্মণে স্বাহা ॥ ২০৷ ব্ৰহ্মজ্যেষ্ঠা সম্ভুত বীর্যাণি ব্ৰহ্মাগ্রে জ্যেষ্ঠং দিবমা ততান। ভূতানাং ব্রহ্মা প্রথমোত জজ্ঞে তেনাহতি ব্ৰহ্মণা স্পর্ধিতুং কঃ ॥২১
বঙ্গানুবাদ –বিংশতিকাণ্ডাত্মিকা এই শাখায় (অর্থাৎ অথর্ববেদীয় শৌনক শাখায়) বিদ্যমান অনুবাক, সূক্ত, গণবিশেষ ইত্যাদির সংজ্ঞারূপ শব্দের দ্বারা অনুবাক ইত্যাদির দ্রষ্টা ঋষিগণ প্রতিপাদিত হয়েছেন।–যথা, আঙ্গিরস ঋষির নিমিত্ত আদিতে পঞ্চম অনুবাক হতে এই আহুতি স্বাহুত হোক ॥ ১।
ষষ্ঠে অনুবাকের নিমিত্ত, সপ্তম ও অষ্টম অনুবাকের নিমিত্ত, নীলনখ নামক ঋষির নিমিত্ত, হরিত নামক ঋষির নিমিত্ত, ক্ষুদ্র নামক ঋষির নিমিত্ত, পৰ্যায়িক নামক ঋষির নিমিত্ত, প্রথম শঙ্খ নামক ঋষির নিমিত্ত, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শঙ্খের নিমিত্ত, উপোত্তম নামক ঋষির নিমিত্ত, উত্তম নামক ঋষির নিমিত্ত, উত্তর নামক ঋষির নিমিত্ত, শিখি নামক ঋষির নিমিত্ত, গণ নামক ঋষির নিমিত্ত, মহাগণ নামক ঋষির নিমিত্ত, সকল বিদ্বান অঙ্গিরার নিমিত্ত, পৃথক সহস্র ঋষিগণের নিমিত্ত এবং ব্রহ্ম নামক বেদস্রষ্টা ঋষির নিমিত্ত আহুতি স্বাহুত হোক। ২-২০
সকল বীরকর্ম (বীর্যাণি) জ্যেষ্ঠ ব্রহ্মা (ব্রহ্মজ্যেষ্ঠা) অর্থাৎ প্রশস্যতম ব্রহ্মা কর্তৃক কৃত। অগ্রে অর্থাৎ সৃষ্টির আদিতে জ্যেষ্ঠ ব্রহ্মা দ্যুলোকে বিস্তারিত হয়েছিলেন (দিবম্ আ ততান)। ব্রহ্মা সকল সৃজ্যমান পদার্থের (ভূতানাং) পূর্বভাবীরূপে উৎপন্ন (প্রথমঃ যজ্ঞে); সেই কারণে অন্য কোন্ দেবতা বা মনুষ্য (কঃ) সেই ব্রহ্মার সাথে স্পর্ধা করতে সমর্থ হবে (ব্ৰহ্মণা স্পর্ধিতুং অতি)? (অর্থাৎ অধিকতর বীর্যবত্তার নিমিত্ত, সর্বোৎকৃষ্ট স্থানের নিবাসিত্বের নিমিত্ত ও সকলের আদিভূতত্বের নিমিত্ত ব্রহ্মার সমান কেউ নেই)। ২১।
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –আঙ্গিরসানামাদ্যৈঃ ইত্যাদি সূক্তদ্বয়স্য আঙ্গিরসীং সম্পৎকামস্য অভিচরতোভিচর্যমাণস্য চ (ন. ক. ১৭) ইতি বিহিতায়াং আঙ্গিরসাখ্যায়াং মহাশূন্তৌ বিনিয়োগঃ। উক্তং হি নক্ষত্রকল্পে।–ইত্যাদি৷৷ (১৯কা, ৩অ. ২সূ.)।
টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি ও পরবর্তী সূক্তটি সম্পদকামী ও অভিচার কর্ম হতে অভিমান জনের নিমিত্ত আঙ্গিরস্যা নামক মহাশান্তি যাগে বিনিয়োগ হয়ে থাকে। নক্ষত্র কল্পে (১৭) এ সম্পর্কে বলা হয়েছে। নক্ষত্র কল্পে আরও বলা হয়েছে–সমাসঃ (১৯।২২।২৩) আঙ্গিরস্যাং ইন্দ্র জুষস্ব (২৫) ইতৈন্দ্রাং (ন. ক. ১৮)। এখানে সমাস শব্দের দ্বারা সূক্তদ্বয় উক্ত হয়েছে ৷ (১৯কা, ৩অ. ২সূ)।
.
তৃতীয় সূক্ত : অথর্বাণঃ
[ঋষি : অথর্বা। দেবতা : মন্ত্রোক্ত। ছন্দ : বৃহতী, ত্রিষ্টুপ, পংক্তি, গায়ত্রী, জগতী।]
আথবর্ণানাং চতুঋচেভ্যঃ স্বাহা ॥১॥ পঞ্চর্চেভ্যঃ স্বাহা ॥ ২॥ ষড়চেভ্যঃ স্বাহা ॥৩৷৷ সপ্তর্ডেভ্যঃ স্বাহা ॥ ৪৷৷ অষ্টৰ্চেভ্যঃ স্বাহা ॥৫৷৷ নবর্চেভ্যঃ স্বাহা ॥৬॥ দশর্চেভ্যঃ স্বাহা ॥৭৷ একাদশর্চেভ্যঃ স্বাহা ॥ ৮ দ্বাদশর্চেভ্যঃ স্বাহা ॥৯॥ এয়োদশর্চেভ্যঃ স্বাহা ॥১০৷ চতুর্দশর্চেভ্যঃ স্বাহা ॥১১৷৷ পঞ্চদশর্চেভ্যঃ স্বাহা ॥১২৷৷ যোড়শর্চেভ্যঃ স্বাহা ॥১৩৷৷ সপ্তদশর্চেভ্যঃ স্বাহা ॥১৪৷ অষ্টাদশর্চেভ্যঃ স্বাহা ॥১৫একোনবিংশতিঃ স্বাহা ॥১৬৷৷ বিংশতিঃ স্বাহা ॥১৭৷ মৎকাণ্ডায় স্বাহা ॥১৮ তৃচেভ্যঃ স্বাহা ॥১৯৷৷ একর্চেভ্যঃ স্বাহা ॥২০৷৷ ক্ষুদ্রেভ্যঃ স্বাহা ॥ ২১৷৷ একাঁচেভ্যঃ স্বাহা। ২২। রোহিতেভ্যঃ স্বাহা ॥ ২৩৷৷ সূর্যাভ্যাং স্বাহা ॥ ২৪৷ ব্রাত্যাভ্যাং স্বাহা। ২৫৷৷ প্রাজাপত্যাভ্যাং স্বাহা। ২৬৷৷ বিষাসহ্যৈ স্বাহা ॥ ২৭৷৷ মঙ্গলিকেভ্যঃ স্বাহা ॥ ২৮৷ ব্ৰহ্মণে স্বাহা ॥ ২৯৷ ব্ৰহ্মজ্যেষ্ঠা সম্ভুত বীর্যণি ব্রহ্মাগ্রে জ্যেষ্ঠং দিবমা ততান। ভূতানাং ব্রহ্মা প্রথমোত জজ্ঞে তেনাহতি ব্ৰহ্মণা স্পর্ধিতুং কঃ ॥ ৩০।
বঙ্গানুবাদ –চতুঋকের দ্বারা অথবাখ্য ঋষির উদ্দেশে আহুতি স্বাহুত হোক। ১।
সেরূপ পঞ্চ ঋকের দ্বারা, ষষ্ঠ ঋকের দ্বারা, সপ্ত ঋকের দ্বারা, অষ্ট ঋকের দ্বারা, নব ঋকের দ্বারা ও দশ ঋকের, দ্বারা, যথাযথ নামধারী অথবণ ঋষিগণের উদ্দেশে আহুতি হুত হোক৷ ২-৭
সেরূপ একাদশ ঋকের দ্বারা, দ্বাদশ ঋকের দ্বারা, ত্রয়োদশ ঋকের দ্বারা, চতুর্দশ ঋকের দ্বারা, পঞ্চদশ ঋকের দ্বারা, ষোড়শ ঋকের দ্বারা, সপ্তদশ ঋকের দ্বারা, অষ্টাদশ ঋকের দ্বারা, ঊনবিংশতি ঋকের দ্বারা ও বিংশতি ঋকের দ্বারা যথাযথ নামধারী অথর্ব বংশীয় ঋষিগণের উদ্দেশে আহুতি স্বাহুত হোক ॥ ৮-১৭৷
মহাকাণ্ড অর্থাৎ বিংশতি কাণ্ডাত্মক অথর্ববেদের সকল বেদবাক্যের দ্রষ্টা যথাযথ নামধারী ঋষির উদ্দেশে আহুতি স্বাহুত হোক। সেরূপ তৃচো ও একাৰ্চোর উদ্দেশে আহুতি স্বাহুত হোক ৷ ১৮-২০
ক্ষুদ্র নামধেয় যজুর্মন্ত্ৰবাচী ঋষির উদ্দেশে, একান্চ অর্থাৎ পর্যায়সূক্তবাচী ঋষিগণের উদ্দেশে, রোহিত নামক ঋষির উদ্দেশে, সূর্য নামক ঋষির উদ্দেশে, ব্রাত্য নামধেয় ঋষির উদ্দেশে, প্রজাপতি নামক ঋষির উদ্দেশে, বিষাসহি নামধেয় ঋষির উদ্দেশে, মাঙ্গলিক নামক ঋষির উদ্দেশে এবং ব্রহ্মা নামক ঋষির উদ্দেশে এই আহুতি স্বাহুত হোক। ২১-২৯।
[অবশিষ্ট অংশ পূর্ববর্তী সূক্তের ২১তম মন্ত্রের অনুরূপ] ॥ ৩০৷
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –আথবাণাং চতুঋচেভ্যঃ ইতি সূক্তস্য সমাসসংজ্ঞকস্য আঙ্গিরস্যাং মহাশান্তৌ বিনিয়োগঃ পূর্বসূক্তের সহ উক্ত।–ইত্যাদি৷ (১৯কা, ৩অ, ৩সূ.)।
টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি সম্পদকামী ও অভিচার কর্ম হতে অভিচর্যমান জনের নিমিত্ত আঙ্গিরস্যা নামক মহাশান্তি কর্মে পূর্ববর্তী সূক্তের সাথে বিনিয়োগ হয়ে থাকে। সূত্রাবলী পূর্ববর্তী সূক্তে উদাহৃত আছে। (১৯কা. ৩অ. ৩সূ.)।
.
চতুর্থ সূক্ত : রাষ্ট্রম
[ঋষি : অথর্বা। দেবতা : মন্ত্রোক্ত। ছন্দ : অনুষ্টুপ, ত্রিষ্টুপ, গায়ত্রী।]
যেন দেবং সবিতারং পরি দেবা অধারয়। তেনেমং ব্ৰহ্মণম্পতে পরি রাষ্ট্রায় ধন ॥১৷৷ পরীমমিন্দ্রমায়ুষে মহে ক্ষত্রায় ধৰ্ত্তন। যথৈনং জরসে নয়াং জ্যোক ক্ষত্রেহধি জাগর। ২ পরীমং সোমমায়ুষে মহে শ্ৰোত্রায় ধন। যথৈনং জরসে নয়াং জ্যোক শ্রোত্রেহধি জাগরৎ ॥৩॥ পরি ধও ধত্ত নো বর্ডসেমং জরামৃত্যুং কৃণুত দীর্ঘমায়ুঃ। বৃহস্পতিঃ প্রাযচ্ছদ বাস এতৎ সোমায় রাজ্ঞে পরিধাতবা উ॥৪॥। জরাং সু গচ্ছ পরি ধৎস্ব বাসো ভবা গৃষ্টীনামভিশস্তিপা উ। শতং চ জীব শরদঃ পুরূচী রায়শ্চ পোষমুপসংব্যয়স্ব ॥ ৫৷৷ পরীদং বাসো অধিথাঃ স্বন্তয়েহভূর্বাপীনামভিশস্তিপা উ। শতং চ জীব শরদঃ পুরূচীর্বসূনি চারুৰ্বি ভজাসি জীবন্॥ ৬। যোগেযোগে তবস্তরং বাজেবাজে হবামহে। সখায় ইন্দ্রমুতয়ে ॥৭॥ হিরণ্যবর্ণো অজরঃ সুবীররা জরামৃত্যুঃ প্ৰজয়া সং বিশস্ব। তদগ্নিরাহ তদু সোম আহ বৃহস্পতিঃ সবিতা তদিন্দ্রঃ ॥ ৮।
বঙ্গানুবাদ –দ্যোতমান ইন্দ্র প্রমুখ দেবতাগণ (দেবাঃ) দ্যোতমান (দেবং) সর্বপ্রেরক আদিত্যকে (সবিতারং) যে হেতুর দ্বারা (যেন) অর্থাৎ যে রক্ষোহনরূপে সর্বত আচ্ছাদন করেছিলেন (পরি অধারয়ন), সেই শত্ৰুনিৰ্হরণাত্মক কারণের দ্বারা (তেন), হে ব্ৰহ্মণস্পতি অর্থাৎ বেদরূপ মন্ত্রের। পালক দেব (ব্ৰহ্মণঃ পতে)! এই মহাশান্তি-প্রযোক্তাকে (ইমং) অর্থাৎ যজমান রাজাকে বা আমাকে রাজ্য রক্ষার্থে (রাষ্ট্রায়) প্রতিস্থাপন করো (পরি ধস্তন)। ১।
হে পরমেশ্বর্যসম্পন্ন ইন্দ্রদেব! তুমি এই সাধক আমাকে বা রাজাকে (ইমং) আয়ুলাভের নিমিত্ত (আয়ুষে) ও চিরকাল (জ্যোক) মহৎ ক্ষাত্রবল অর্থাৎ পরকৃত বাধা-পরিহারক বলে (ক্ষত্রেধি) বলীয়ারূপে অবহিত হতে পারি এবং যাতে (যথা এনং) শান্তিকর্তা (আমি বা রাজা) জরা পর্যন্ত (জরসে) আয়ুলাভ করতে পারি, তেমন ভাবে প্রতিস্থাপিত করো (পরি পত্তন)। ২
হে বাসোভিমানী (অর্থাৎ বস্ত্রের ন্যায় আচ্ছাদনকারী) সোমদেব! এই শান্তিকর্মকারী (ইমং) আমাকে বা যজমানকে দীর্ঘ আয়ুর নিমিত্ত (আয়ুষে), মহান ইন্দ্রিয়সাধ্য রূপ ইত্যাদি উপলব্ধির নিমিত্ত (শ্ৰোত্রায়) ও আদান ইত্যাদি কর্মের নিমিত্ত সর্বত পুষ্ট করো (পরি ধত্তন)। যাতে এই আমি বা রাজা চিরকাল শ্রোত্র ইত্যাদি ইন্দ্রিয়ে শক্তিমান বা যশস্বী হয়ে জাগ্রত বা অবহিত হতে পারি (জাগরৎ) এবং যাতে শান্তিকর্তা (আমি বা রাজা) জরা পর্যন্ত, আয়ুলাভ করতে পারি, তেমন ভাবে প্রতিস্থাপিত করো ॥ ৩॥
[ এই ঋটি দ্বিতীয় কাণ্ডের ত্রয়োদশ সূক্তের (অর্থাৎ তৃতীয় অনুবাকের তৃতীয় সূক্তের) দ্বিতীয় মন্ত্রে ব্যাখ্যাত হয়েছে]–হে দেবগণ! এই মাণবক অর্থাৎ ব্রাহ্মণকুমারকে বস্ত্র পরিধান করিয়ে দাও (পরি ধত্ত–ইমং মাণবকং বাসঃ পরিধাপয়ত); আমাদের একে তেজের দ্বারা আচ্ছাদিত করে দাও বা পুষ্ট করো (নঃ ইমং বচসা। ধত্ত); এ যেন বৃদ্ধাবস্থায় মরণপ্রাপ্ত হয়, অর্থাৎ এর যেন অকালমৃত্যু না ঘটে এবং একে শতপরিমিত আয়ুস্মান করো (জরামৃত্যুং দীর্ঘ আয়ুঃ কৃণুত)। ইন্দ্র প্রমুখ দেবগণের পালক দেবতা বৃহস্পতি এই নির্মিত বসন (এতৎ বাসঃ) ব্রাহ্মণগণের পালক রাজা সোমকে পরিধানের নিমিত্ত (পরিধাতবা) দান করেছিলেন (প্রাযচ্ছৎ)। ৪।
[ এই ঋটিও উপযুক্ত কাণ্ডে (২।১৩।৩) ব্যাখ্যাত হয়েছে। তবে এখানে প্রথম পাদটি ভিন্নতর ]–হে শান্তিপ্রযোক্তা (যজমান)! তুমি সম্যক বার্ধক্য লাভ করো (জরাং সু গচ্ছ), অর্থাৎ জরাকাল পর্যন্ত আয়ুষ্মন হও। এই বসনে আচ্ছাদিত হয়ে (বাসঃ পরি ধৎস্ব), অর্থাৎ এই বসন পরিধানের দ্বারা, গাভীগণের (গৃষ্টীনাং) হিংসা নিমিত্ত ভয় হতে (অভিশস্তিঃ) তাদের পালক হও (পাতা)। অধিকন্তু বহুকালব্যাপী বা বহুবিধ পুত্রপৌত্র ইত্যাদি সহ (পুরূচী) শতসংখ্যক সম্বৎসর পর্যন্ত (শতং শরদঃ) জীবিত থাকো এবং ধনের পুষ্টি বা সমৃদ্ধি (বায়ঃ পোষং) লাভ করো (উপসংব্যয়স্ব), (বক্তব্য এই যে, এই বসন পরিধানের দ্বারা ধন ইত্যাদির সমৃদ্ধি হয়ে থাকে) ॥ ৫॥
[এই সূক্তটিও ঐ দ্বিতীয় কাণ্ডে (২।১৩।৩) ব্যাখ্যাত হয়েছে। তবে এখানে চরম পদগুলি বিভিন্ন ]–হে শান্তিকর্তা (যজমান)! উক্ত বসন (ইদম্ বাসঃ) (তুমি) মঙ্গলের নিমিত্ত পরিহিত হয়েছে। এই বসন পরিধানের দ্বারা গাভীগণের হিংসা নিমিত্ত ভয় হতে তাদের পালক হও। বহুকালব্যাপী শত সম্বৎসর পর্যন্ত জীবনবান্ হয়ে এবং অসামান্য (চারুঃ) বসনের দ্বারা দীপ্যমান হয়ে পুত্র-মিত্র-জ্ঞাতি ইত্যাদির মধ্যে ধনসমূহ (বসূনি) বিভাগ করে দাও (বি ভজাসি) বা অর্থীদের প্রদান করো। ৬।
সকল অপ্রাপ্য ফলের প্রাপ্তি বিষয়ে (যোগ যোগে) ও অন্ন ইত্যাদি লক্ষণযুক্ত ফল লাভের বিষয়ে (বাজেবাজে) অতিশয় সমৃদ্ধ (তবস্বিনং) পরমেশ্বর্যসম্পন্ন দেব ইন্দ্রকে আমরা স্তোতৃবর্গ (সখায়ঃ) রক্ষার নিমিত্ত (উতয়ে) আহ্বান করছি (হবামহে)। (বক্তব্য এই যে, অভিমত ফললাভার্থে, লব্ধ সামগ্রীর পরিপালনার্থে ও নিজেদের রক্ষণার্থে আমরা ইন্দ্রকে এইভাবে আহ্বান করছি)। ৭।
(হে যজমান!) হিতরমণীয় শরীরকান্তিশালী বা হিরণ্যসমান বর্ণশালী (হিরণ্যবর্ণঃ), জরারহিত (অজরঃ), কর্মকুশল বা শোভন পুত্র ইত্যাদি যুক্ত (সুবীরঃ) ও অকাল মরণরহিত হয়ে (জরামৃত্যু সন) প্রকর্ষের সাথে জায়মান পুত্র ইত্যাদি সহ বা ভৃত্য ইত্যাদি রূপ প্রজাগণ সহ (প্রজয়া) আপন গৃহে চিরকাল সুখে অধিষ্ঠিত থাকো বা এই গৃহে সম্যক প্রবেশ করো (সং বিশস্ব)। অঙ্গনাদিগুণযুক্ত অগ্নিদেব, ব্রাহ্মণগণের পালক সোমদেব, দেবগণের গুরু বৃহস্পতি দেবতা, সর্বপ্রেরক সবিতাদেব, ও পরমৈশ্বর্যশালী ইন্দ্রদেব প্রমুখ সকল বাসোভিমানী দেবতাই এই বচনের সমর্থন করেছেন (আহুঃ)। (অতএব এতে কোন বিপ্রতিপত্তি অর্থাৎ সংশয় নেই–এটাই বক্তব্য) ॥ ৮৷৷
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –যেন দেবং সবিতারং ইতি সূক্তং ত্বাষ্ট্রীং বস্ত্ৰক্ষয়ে প্রযুঞ্জীত (ন. ক. ১৭) ইতি বিহিতায়াং মহাশান্তাবাবপেৎ।–ইত্যাদি৷৷ (১৯কা, ৩অ. ৪সূ.)।
টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি মহাশান্তিকর্মে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। নক্ষত্র কল্পে (১৭) এর বিধান উল্লিখিত আছে। নক্ষত্র কল্পে (১৮) এই সম্পর্কে আরও নির্দেশ পাওয়া যায়।(১৯কা, ৩অ. ৪সূ.)।
.
পঞ্চম সূক্ত : অশ্বঃ
[ঋষি : গোপথ। দেবতা : বাজী। ছন্দ : অনুষ্টুপ।]
অশ্রান্তস্য ত্বা মনসা যুনজ্ঞি প্রথমস্য চ।উকুলমুদ্বহে ভবোদুহ্য প্রতি ধাবৎ ॥১॥
বঙ্গানুবাদ –[ হে গান্ধর্ব (অশ্ব)!] তোমাকে শ্রান্তিহীন (অশ্রান্তস্য) অর্থাৎ শত্রুসেনার অভিমুখে গমনেও আয়াসরহিত-শরীর তুরঙ্গমের মনের সাথে, এবং সৃষ্টির আদিতে (প্রথমস্য) অশ্বজাতির উৎপত্তির পূর্বে উৎপন্ন শত্রুধর্ষণোৎসুক বা আপন অধিরোহণকারীকে প্রোৎসাহিত করণশালী অশ্বের মনের সাথে যুক্ত করছি (চ মনসা যুনষ্মি)। (সকল অশ্বাৎপত্তির পূর্বে উৎপন্ন অশ্ব উচ্চৈঃশ্রবা; সেই হেন জিতশ্রম অশ্বশ্রেষ্ঠ উচ্চৈঃশ্রবার মন-উপলক্ষিত সর্বেন্দ্রিয়শক্তি, শারীরিক দৃঢ়তা, আশুত্ব ও পরসেনার অভিভবনসামর্থ্য,–এই শান্তিফল রূপে কাম্যমান যা কিছু, তা এই অশ্বে যোজিত করছি–এটাই বক্তব্য)। এমন সামর্থোপেত হয়ে তুমি অতিদৃপ্ত হও (উৎকূল উহঃ ভব)। নদী যেমন প্রভূত জলপ্রবাহের দ্বারা দুই তীর প্লাবিত করে ঊর্ধ্বে উচ্চলিত হয়ে থাকে, সেই রকমে তুমিও যুদ্ধের নিমিত্ত বর্মিত বা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত শত্রুসৈন্যকে আপন সামর্থ্যে অতিক্রম পূর্বক বিক্ষোভিত করো। অতঃপর হে অশ্ব! তুমি জেত্যব্য স্থানের প্রতি (অর্থাৎ জয়লাভের নিমিত্ত যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে) ধাবিত হও (ত্বং প্রতিধাবতাৎ)। ১৷৷
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –অশ্রান্তস্য ত্ব ইতি একর্ডং সূক্তং গান্ধবীং অশ্বক্ষয়ে প্রযুঞ্জীত ইতি বিহিতায়াং গান্ধবাখ্যায়াং মহাশান্তাবাবপেৎ। উক্তং হি নক্ষত্রকল্পে।–ইত্যাদি৷৷ (১৯কা, ২অ. ৫সূ).।
টীকা –উপযুক্ত এক ঋক্-সম্বলিত সূক্তটি গান্ধর্ব নামক মহাশান্তি কর্মে বিনিযুক্ত হয় (নক্ষত্র কল্প ১৭)। এটি অশ্বের আয়ু ইত্যাদির নিমিত্ত শান্তি স্বস্তিগণেও বিনিযুক্ত হয়ে থাকে (ন. ক. ১৮) ৷ (১৯কা, ২অ. ৫সূ.)।
.
ষষ্ঠ সূক্ত : হিরণ্যধারণম
[ঋষি : অথর্বা। দেবতা : অগ্নি, হিরণ্যম। ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, অনুষ্টুপ, পংক্তি।]
অগ্নেঃ প্রজাতং পরি যদ্ধিরণ্যমমৃতং দস্ত্রে অধি মর্তে্যু। য এনদ বেদ স ইদেনমহতি জরামৃত্যুৰ্ভবতি যো বিভর্তি ॥১॥ যদ্ধিরণ্যং সূর্যেণ সুবর্ণং প্রজাবন্তো মনবঃ পূর্ব ঈষিরে। তৎ ত্বা চন্দ্রং বৰ্চসা সং সৃজত্যায়ুম্মা ভবতি যো বিভর্তি৷ ২। আয়ুষে ত্বা বর্ডসে ভৌজসে চ বলায় চ। যথা হিরণ্যতেজসা বিভাসাসি জনা অনু ॥৩৷৷ যদ বেদ রাজা বরুণণা বেদ দেবো বৃহস্পতিঃ। ইন্দ্রো যৎ বৃত্ৰহা বেদ তৎ ত আয়ুষ্যং ভুবৎ তৎ তে বচস্যং ভুবৎ ॥৪॥
বঙ্গানুবাদ –অগ্নি হতে প্রকর্ষের সাথে উৎপন্ন (প্রজাতং) যে সুবর্ণ (হিরণ্যং) বিদ্যমান, যা মরণধর্মা মনুষ্যের নিকট অমরণসাধন (অমৃতং) রূপে অবস্থিত (দর্ধে), উক্ত হিরণ্যকে (এনৎ) যে পুরুষ স্বরূপে জ্ঞাত হয়, সে এই অম্বাদিষ্ট হিরণ্যরূপ পদার্থ ধারণ করে থাকে (ইৎ এনম্ অহতি)। যে পুরুষ আপন শরীরে (এই হিরণ্যকে) মনি-কুণ্ডল-অঙ্গুলীয়ক ইত্যাদিরূপে ধারণ করে (বিভর্তি), সেই হিরণ্যধারী পুরুষ জরাকালে মৃত্যুপ্রাপ্ত হয় (জরামৃত্যু ভবতি)। (অর্থাৎ অকালমৃত্যুরহিত হয়ে থাকে)। ১।
প্রকর্ষের সাথে জায়মান পুত্র-মিত্র ইত্যাদি সম্পন্ন (প্রজাবন্তঃ) মনুর পুত্র মানবগণ হিরণ্যধারীগণের মধ্যে প্রথমভাবী হয়ে (পূর্বে), বা সৃষ্টির পূর্বে উৎপন্ন মনুগণ (মনবঃ পূর্ব), যে শোভনবর্ণ (সুবর্ণং) হিতরমণীয় হেম (হিরণ্যং) সকলের প্রেরক স্বকারণ আদিত্যের সাথে প্রাপ্ত হয়েছিল (সূর্যেণ ঈষিরে), সেই মনুগণের দ্বারা ধারিত (তৎ) আহ্লাদক হিরণ্য (চন্দ্রং) হিরণধারক তোমাকে (ত্বা) শরীর কান্তির সাথে সংযোজিত করুক (বৰ্চসা সং সৃজতু)। যে পুরুষ (যঃ) হিরণ্য ধারণ করে, সে চিরকাল জীবনবান হয় (আয়ুষ্মন্ ভবতি)। ২।
(হে হিরণ্যধারী মানব!) তোমার চিরকাল জীবনের নিমিত্ত (ত্বা আয়ুষে), তোমার তেজঃ বা কান্তির নিমিত্ত (ত্বা বর্চসে), তোমার শারীরিক বলের বা শরীরধারক অষ্টম ধাতুর নিমিত্ত (ত্বা ওজসে), ও তোমার ভৃত্য ইত্যাদি সম্পত্তিরূপ বাহ্য বলের নিমিত্ত (ত্বা বলায়) সেই হিরণ্য তোমাতে সংযোজিত হোক। যেমন সুবর্ণ তেজের দ্বারা শুক্লভাস্বর রূপে (অর্থাৎ বিশুদ্ধ দীপ্তিশীল হয়ে) বিশেষভাবে দীপ্যমান হয় (বিভাসাসি), সেইরকমে তুমিও জনগণের মধ্যে বিশেষভাবে দীপ্যমান হও (জনান অনু)৷ ৩৷৷
যে হিরণ্যকে (যৎ) রাজমান বরুণ দেব অগ্নি হতে উৎপন্ন বলে ও মনুষ্যগণের মরণ হতে উদ্ধরণের উপায় বলে বিদিত আছেন (বেদ), তথা দেবগণের পালক বৃহস্পতি দেবতা ও বৃহন্তা ইন্দ্রদেবও যে হিরণ্যের উক্তলক্ষণ জ্ঞাত আছেন, সেই বরুণ ইত্যাদির জ্ঞাত বা ধারিত হিরণ্যের প্রভাব, তুমি হেন (তে) হিরণ্যধারণকারী পুরুষের অনুকূলে আয়ুস্কারী–(আয়ুষ্যং) ও তোমার অনুকূলে তেজস্কারী (বৰ্চসং) হোক (ভুবৎ) ॥ ৪৷
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— অগ্নেঃ প্রজাতং ইতি সূক্তেন আগ্নেয়ীং অগ্নিভয়ে সর্বকামস্য চ ইতি বিহিতায়াং আগ্নেয্যাখ্যায়াং মহাশূন্তৌ হিরণ্যনির্মিতং কুণ্ডলাদিকং অভিমন্যু বধীয়াৎ-ইত্যাদি৷৷ (১৯কা. ২অ. ৬সূ.)।
টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি অগ্নিভয়ে ও সকল কামনায় আগ্নেয়ী নামক মহাশান্তি যাগে হিরণ্যনির্মিত কুণ্ডল ইত্যাদি অভিমন্ত্রিত পূর্বক ধারণে বিনিয়োগ হয়। নক্ষত্র কল্পে (১৭, ১৯) এই নির্দেশ পাওয়া যায়। এই সূক্তের দ্বারা তুলাপুরুষ ব্রতে (অর্থাৎ যাগকারীর নিজ ওজনের পরিমাণ স্বর্ণ ইত্যাদি মহাদানে)। শান্তিকলশে ঘৃত ইত্যাদি দ্রব্য আনয়নে বিনিয়োগ হয় (কৌ.৯৪) ৷ (১৯কা, ২অ. ৬সূ.)।