পরপর দু-দিন মণীশের হোটেল থেকে ফিরে আসতে হল ভাস্করকে। মণীশ কোথায় যায় কে জানে! দুপুরে তাকে টেলিফোনেও পাওয়া যায় না। অথচ সে হোটেল ছাড়েনি, কলকাতাতেই আছে।
ভাস্কর একবার বিরক্ত হয়ে ভেবেছিল, আর সে আসবেই না খোঁজ নিতে। মণীশের যদি কোনো উৎসাহ না থাকে তো সে কেন দেখা করবার জন্য এত ব্যস্ত হবে!
ইন্দ্রাণীর সঙ্গেও মণীশ কোনো যোগাযোগ করেনি। এই ব্যাপারটা খুব সন্তর্পণে জানতে হয়েছে। কারণ ইন্দ্রাণী যদি শোনে, মণীশ কলকাতায় এসেও একবারও খোঁজ করেনি তার, তাহলে হয়তো সে নতুন করে আঘাত পাবে। কিংবা, ইন্দ্রাণীর মনটা বোঝা যায় না সহজে, সে এত বেশি চাপা।
মা-বাবা ফিরে এসেছেন। ভাস্করের বাড়ি এখন ফাঁকা নয়। সন্ধ্যে বেলা সে ছবি আঁকার সরঞ্জাম নিয়ে বসেছিল। একসময় সে রং ও রেখার জগতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আশ্রয় নিতে পারত। যদি আবার সেই জগতে ফিরে যাওয়া যেত। নিজের ছবি দেখে তার নিজেরই এখন হাসি পায়। লাইনগুলোর মধ্যে কোনো জোর নেই। খেলাচ্ছলে ভাস্কর একটা দানবের মুখ আঁকতে লাগল।
রাত দশটার সময় ভাস্কর আবার চলে এল মণীশের হোটেলে। এবার তাকে পাওয়া গেল। একতলার বারে সে তিন-চারজন অচেনা লোকের সঙ্গে জমিয়ে বসেছে। ভাস্করকে দেখে সে উৎফুল্লভাবে বলল, এসেছিস? আয়, মাল খাবি আয়।
মণীশের চোখ দুটো লাল, চুলগুলো খাড়াখাড়া, জামার বুকের বোতামগুলো সব খোলা। অনেক মাতালের চেহারাতেই একটা নকল বীরত্বব্যঞ্জক ভাব থাকে, মণীশকেও সেইরকম দেখাচ্ছে। জ্বলজ্বলে চোখ, রুক্ষ কণ্ঠস্বর।
কী খাবি? এতক্ষণ কী খাচ্ছিলি?
প্রতিবাদ করে লাভ নেই, তাই ভাস্কর বলল, একটা বিয়ার।
এতরাত্রে বিয়ার? সর্দি লেগে যাবে রে, হুইস্কি খা। আমার গেলাস থেকে একটা চুমুক দে ততক্ষণ।
দু-দিন এসে তোর দেখা পাইনি।
–কাজের ধান্দায় ঘুরছিলাম। যদি এখানে কিছু বিজনেস পাওয়া যায়!
ভাস্করের মনে হল, সে এখানে এসে পড়ে ভুল করেছে। চারদিকে মাতালের হল্লা। এখানে মণীশের সঙ্গে কোনো কথাও বলা যাবে না।
ভাস্কর আস্তে আস্তে বিয়ারে চুমুক দিচ্ছে, মণীশের সেটা পছন্দ হল না। সে বলল, কী খাচ্ছিস, অ্যাঁ? নে, একটু স্ট্রং করে দিচ্ছি।
দিল সেই বিয়ারের মধ্যে হুইস্কি মিশিয়ে। জিনিসটা বিস্বাদ হয়ে গেল। তা ছাড়া ভাস্করকে মোটরবাইক চালিয়ে ফিরতে হবে বাড়িতে।
এক্ষুনি বার বন্ধ হয়ে যাবে, ঘণ্টা দিচ্ছে। সকলের জন্য আর একটা করে পানীয় জল নিয়ে মণীশ চেঁচিয়ে বলল, বিল লাও।
টেবিলের সব বিল সে একা দেবে। প্রায় দেড়-শো টাকার মতন। মণীশ তার ব্যাগ খুলল, তারমধ্যে চল্লিশ-পঞ্চাশ টাকার বেশি নেই। সে ফিক করে হেসে চুপি চুপি ভাস্করকে বলল, সব টাকা ফুরিয়ে গেছে, জানিস তো! কোই বাত নেহি!
কলম চেয়ে ঘস ঘস করে সই করে দিল বিলগুলোতে। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বলল, চল ভাস্কর, ওপরে আমার ঘরে চল।
আর একজনের দিকে তাকিয়ে বলল, পন্ডিত, একটা বোতল যোগাড় করো-না!
ভাস্কর আর থাকতে চায় না, কিন্তু মণীশ তাকে ছাড়বে না। অন্য লোকগুলোও জুটে গেল বলে ভাস্করের আরও বেশি খারাপ লাগছে। লোকগুলোর আর কোনো পরিচয় আছে বলে মনে হল না, তারা শুধুই মাতাল। চারতলায় মণীশের ঘরে দু-টি মাত্র চেয়ার, বাকিরা বসেছে বিছানায়, অনবরত গেলাসে ঢালাঢলি হচ্ছে, আর জিনিসপত্রের দাম, কলকাতার কোনো হোটেল কীরকম এইসব এলোমেলো কথা।
রাত বেড়ে যাচ্ছে। ভাস্কর জানে, সে বাড়ি না-ফেরা পর্যন্ত তার বাবা-মা দুজনেই জেগে থাকবেন। এই একটা বিশ্রী ব্যাপার। অথচ মণীশ তাকে কিছুতেই যেতে দেবে না। জোর করে হাতটা ধরে আছে।
মণীশের মদ খাওয়া দেখলে শিউরে উঠতে হয়। অ্যালকোহল রক্তের সঙ্গে মিশবার সময়টুকুও দিচ্ছে না। একটা পুরো গেলাস এক চুমুকে শেষ করে ঠক করে গেলাসটা নামিয়ে রাখছে। এটা নেশা নয়, এক ধরনের পাগলামি, ভাস্কর জানে।
একবার বাথরুমে যেতে গিয়ে মণীশ দরজার সঙ্গে দারুণভাবে ধাক্কা খেল। অন্য লোকগুলো ইস করে উঠলেও ভাস্করের মায়া হল না। মণীশ শেষ হয়ে গেছে। যে-মণীশ তার বন্ধু ছিল, সে আর নেই। ওর পক্ষে শিলং-এ ফিরে যাওয়াই এখন ভালো।
মণীশ, আমাকে এখন যেতেই হবে।
দাঁড়া, তুই কি ভাবছিস আমার নেশা হয়েছে? দেখবি, এখনও কীরকম বডি ফিট আছে? শীর্ষাসন করতে পারি।
মণীশ সত্যিই মাটিতে শুয়ে পড়ে ডিগবাজি খেয়ে পা দুটো দেওয়ালে ঠেকিয়ে রাখল। মুখটা টকটকে লাল। সেই অবস্থায় বলল, কতক্ষণ থাকব, বল?
ভাস্কর তার পা দুটো ধরে নামিয়ে দিয়ে বলল, তুই এবার শুয়ে পড়। রাত্তিরে কিছু খাবি নিশ্চয়ই।
মণীশ আবার সদর্পে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল, আমি এখন বেরোবো।
কোথায় যাবি?
ঘুরে আসি একটু! তোর সঙ্গেই যাব।
আমার সঙ্গে যেতে পারবি না, আমি তো মোটরসাইকেলে–
—আলবাত পারব।
অন্য লোকগুলো ঘর থেকে বেরিয়ে আসবার পর মণীশ তালা লাগালো। তারপর একজনকে বলল, পন্ডিত, আমার ক্যামেরাটা দেখেছ তো? একটা খদ্দের দেখো তো! ওয়ান পয়েন্ট ফাইভ লেন্স, হাজার দেড়েক পেলেই ঝেড়ে দেব। আর এই ঘড়িটা, সিকো—এটারও খদ্দের দেখো।
লিফটের অপেক্ষা না-করে সিঁড়ি দিয়েই নেমে এল সবাই। অন্যদের বিদায় দিয়ে মণীশ চেপে বসল ভাস্করের মোটরসাইকেলের পেছনে। ভাস্কর একেবারেই পছন্দ করছে না। মণীশ নিজেকেই সামলাতে পারছে না, যদি হঠাৎ পড়ে-উড়ে যায়। তা ছাড়া এত রাত্রে মণীশকে নিয়ে সে কোথায় ঘুরবে?
সে দৃঢ়স্বরে বলল, আমি কিন্তু বাড়িতে যাব।
আমাকে রাস্তায় যেকোনো জায়গায় নামিয়ে দিস!
এত রাত্রে শুধু শুধু কোথায় ঘুরবি?
যেখানে ইচ্ছে!
তোর বড়োলোক হওয়ার ব্যাপারটা তা হলে বাজেকথা?
কেন?
বড়োলোকরা ক্যামেরা-ঘড়ি বিক্রি করে হোটেলের বিল শোধ করে না!
হ্যা-হ্যা করে হেসে উঠে মণীশ বলল, তুই ধরে ফেলেছিস! ঠিক ধরেছিস তো মাইরি!
মণীশ ভাস্করের পিঠটা খামচে ধরে আছে। সামান্য একটু ঝাঁকুনিতেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। মাঝে মাঝে হেঁচকিও তুলছে খুব জোরে। কতবার্তা জড়িয়ে যাচ্ছে। হাওয়া লেগে ক্রমশই বাড়ছে ওর নেশা।
ততার সঙ্গে আমার অনেক কথা ছিল, কিছুই তো বলা হল না।
হাওয়ার জন্য ঠিক শুনতে পেল না মণীশ। চেঁচিয়ে বলল, অ্যাঁ? কী?
তুই কি রোজ এইরকমভাবেই কাটাবি?
আর কীরকম ভাবে কাটাব?
ইন্দ্রাণীর সঙ্গে সত্যিই দেখা করবি না?
তোকে দিয়ে দিয়েছি তো!
ইন্দ্রাণী কি তোর সম্পত্তি ছিল যে আমাকে দিবি?
তাহলে আবার জিজ্ঞেস করছিস কেন? না রে বাবা, তোরই সম্পত্তি, তুই নে। আমি তো বলেইছি, মেয়েছেলের ব্যাপারে আমার কোনো আগ্রহ নেই!
তুই কোথায় নামবি?
এটা শেক্সপিয়র সরণি না? এখানে একটু দাঁড়া। তোকে একটা জিনিস দেখাই।
কী?
কাল রাত্রে এখানে একটা মেয়েছেলে আমাকে হাতছানি দিয়ে ডেকেছিল। দেখি, আজও সেই মাগীটা আছে কি না!
ভাস্কর নীরসভাবে বলল, তোকে আমি নামিয়ে দিচ্ছি। তোর যত ইচ্ছে দেখ!
মোটরসাইকেলটা থেমেছে। মণীশ বলল, ওই দেখ-না।
আগাছা জঙ্গলে ভরতি একটা মাঠ। তার পাশে ভাঙা দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে। অতিরিক্ত পাউডারমাখা মুখ। নীল রঙের শাড়িতে নকল জরির চুমকি বসানো। ওদের দিকেই চেয়ে আছে।
মণীশ বিড়বিড় করে বলল, ইফ আই প্রোফেন উইথ মাই আনওয়ারদিয়েস্ট হ্যাণ্ড দিস হোলি শ্রাইন, দা জেন্টল সিন ইজ দিস। কার কথা বল তো?
ভাস্কর বলল, জানি না। জুলিয়েটকে রোমিয়ো প্রথম এই কথাটা বলেছিল। এই মেয়েটাই কাল আমাকে— তুই কী করতে চাস এখন?
শোন-না! বড্ড ছটফট করিস! কাল আমি এখানে ট্যাক্সির জন্য দাঁড়িয়েছিলাম, এই। মেয়েটা এসে আমার গা ঘেঁষে দাঁড়াল। ভুরু নাচালো আমার দিকে। জানে না তো, ভুল পার্টির কাছে এসেছে। একটা ধমক দিতেই পোঁ-পোঁ করে পালালো। খিস্তিও দিল খানিকটা। নতুন কিছু ব্যাপার নয়। কিন্তু আজই দুপুরের দিকে এদিকে আবার এসেছিলাম, দেখি যে, ঠিক শেক্সপিয়রের মূর্তির তলায় শুয়ে আছে এই মেয়েটা। দিনের আলো তো, স্পষ্ট দেখলুম, সারা গায়ে একজিমা, ভিডি-র এক্সপোজারও হতে পারে—কী কুৎসিত তুই ভাবতে পারবি না—শেক্সপিয়র একে নিয়ে কিছু লেখেন নি, তাই বুঝি তাঁর পায়ের কাছে শুয়েছিল। এই শোনো–
মণীশ, কী হচ্ছে কী?
-–দেখ না! এই শোনো-না এদিকে—
মোটরবাইক থেকে নেমে দাঁড়িয়ে মণীশ সাড়ম্বরে মেয়েটিকে ডাকতে লাগল। তার শরীরটা দুলছে, সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না।
মেয়েটা এগিয়ে এল তার কাছে। তার মুখটা ভালো করে দেখে নিয়ে বলল, এখন কিন্তু মন্দ দেখাচ্ছে না। ভাস্কর, দেখ ভালো করে, ঠিক যেন বিষকন্যা, এক-একজন পুরুষকে বিষ দেবার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। কত রেট?
মেয়েটা বলল, কোথায় যাবে?
মণীশ পকেট থেকে পাঁচ টাকার একটা নোট বার করে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল, সি স্পিকস। ও, স্পিক এগেইন ব্রাইট এঞ্জেল!
ভাস্কর মণীশের হাত ধরে টানল। মেয়েটা বলল, এখানে দাঁড়িয়ে থেকো না কোথায় যাবে, বলো না!
মণীশ এবার রুক্ষভাবে বলল, কোথাও যাব না। আঁচলটা খোল, তোর পিঠটা দেখি।
পিঠে কী আবার দেখবে?
মণীশ, কী হচ্ছে কী।
আঁচলটা খোল! পিঠ, বুক সব দেখব। চাকা চাকা ঘা, ভালো করে দেখিস ভাস্কর! অথচ দেখ, সেজেগুজে এখন বেশ ভালোই দেখাচ্ছে। কেউ বুঝতে পারবে? এই তো মেয়েছেলে, সব ভেতরে ঘা।
ভাস্কর গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে বলল, আমি চললাম।
মণীশ তার হাত চেপে ধরে বলল, পালাচ্ছিস কেন? তোকে দেখতেই হবে।
মণীশ, আমার হাত ছাড়। কেন তুই আমাকে এ-রকম অপমান করছিস?
অপমান? আমি তোকে কোথায় অপমান করলাম, বাবা! লাও ঠ্যালা! তুই বারবার মেয়েছেলের কথা বলছিলি কিনা, তাই তোকে দেখালাম, মেয়েছেলে কী জিনিস—
এক্ষুনি এখানে পুলিশ-টুলিশ আসবে। একটা বিশ্রী কান্ড হবে।
মণীশ মেয়েটার দিকে ফিরে বলল, যা ভাগ। তোকে মুদ্দোফরাশেও ছোঁবে না। চল ভাস্কর।
তুই এখন কোথায় যেতে চাস?
ইন্দ্রাণীর বাড়িতে।
ভাস্করের মুখে একটা দুঃখের ছাপ পড়ল। এইরকম পরিবেশ, এতরাত্রে ইন্দ্রাণীর নাম মণীশের মুখে এল। ওর আর বিবেক বলে কিছু নেই, মণীশ হাসছে।
আমি এখন আমার বাড়িতে যাচ্ছি।
বেশি রাত হয়নি। চল-না ইন্দ্রাণীর সঙ্গে দেখা করে আসি, তুই এত করে বলছিলি। ওকে কড়কে দিয়ে আসি। কেন ও তোকে বিয়ে করছে না?
পাগলামি করিস না।
চল-না।
আমি তোকে এখানে রেখে যাচ্ছি, তোর যা ইচ্ছে কর।
ঠিক আছে, আমি তাহলে ট্যাক্সি করে যাব।
ভাস্কর সত্যিই গাড়িতে স্টার্ট দিল। খানিকটা দূরে গিয়ে ঘাড় ফিরিয়ে দেখল মণীশ ফুটপাতে বসে পড়েছে। ওকে কি এইরকমভাবে ফেলে রেখে চলে যাওয়া যায়? মহা ঝামেলা!
ভাস্কর আবার ঘুরে এল।
এখানে বসে পড়লি কেন? ওঠ, চল, তোকে হোটেলে পৌঁছে দিয়ে আসি। মণীশ বলল, তুই ফিরে এলি কেন? তুই কি ভাবছিস, আমার ট্যাক্সিভাড়াও নেই? আমি ইন্দ্রাণীর বাড়িতে যাবই। বলেছি যখন যাবই।
এখন বারোটা দশ বাজে।
তাতে কী হয়েছে? দিনের বেলা যে বাড়িতে যাওয়া যায়, রাত্তিরে সেখানে কেন যাওয়া যাবে না। চোরেরাও রাত্তিরে অন্য লোকের বাড়ি যায়। আর ভদ্রলোকেরা যেতে পারবে না?
মণীশ, তোর পায়ে ধরছি।
তোর এত মাথাব্যথা কেন? তুই যা-না!
হঠাৎ স্পিংয়ের পুতুলের মতন উঠে দাঁড়িয়ে মণীশ চেঁচিয়ে উঠল, ট্যাক্সি ট্যাক্সি!
একটা ট্যাক্সি সত্যিই এসে দাঁড়াল। ভাস্কর মণীশের পথ আটকে বলল, তোকে আমি কিছুতেই যেতে দেব না।
মণীশ এক ঝটকায় তাকে সরিয়ে বলল, তুই আমার সঙ্গে গায়ের জোরে পারবি না। কেন বৃথা চেষ্টা করছিস!
ভাস্কর বুঝতে পারছে, মণীশের ক্রমেই নেশা বাড়ছে। তখন ঢক ঢক করে জল খাওয়ার ফল। ওর মাথা এখন আর যুক্তিগ্রাহ্য নেই। সত্যিই হয়তো ইন্দ্রাণীর বাড়িতে চলে যাবে।
টলতে টলতে ট্যাক্সিতে উঠে মণীশ শয়তানের মতন হেসে বলল, দেখ-না, এখন কী কান্ড করি! কাল সকালে খবর নিস ওদের বাড়িতে—চলিয়ে সর্দারজি!
ভাস্কর একবার ভাবল, হয়তো মণীশ এখনও ঠাট্টা করছে তার সঙ্গে। তবু পুরোপুরি বিশ্বাস
হয় না। সে বাড়িতে ফিরতে পারছে না, ট্যাক্সিটাকেই অনুসরণ করতে লাগল। এবং একটু পরেই বুঝতে পারল, মণীশ ঠিক ইন্দ্রাণীদের বাড়ির দিকেই যাচ্ছে।
ভাস্কর তার মোটরবাইকটা ট্যাক্সির সমান্তরালে এনে জানলা দিয়ে বলল, মণীশ, প্লিজ, এ রকম করিস না, তোকে অনুরোধ করছি, আমার শেষ অনুরোধ।
—আমি যাবই।
শান্ত ঘুমন্ত পাড়ায় এসে ট্যাক্সিটা থামল। ভাড়া চুকিয়ে দিয়ে লটপটে পায়ে মণীশ এগিয়ে গেল ইন্দ্রাণীর বাড়ির দিকে। তারপর দরজার সামনে এসে ওপরের দিকে মুখ করে জড়ানো গলায় চেঁচিয়ে উঠল, ইন্দ্রাণী!
মোটরবাইকের শব্দ এখন ভাস্করের নিজের কানেই খুব বিশ্রী শশানাচ্ছে। স্টার্ট বন্ধ করে সে এগিয়ে গেল মণীশের দিকে। অদ্ভুত বিষণ্ণ হয়ে গেছে মুখখানা। সে বুঝতে পারছে, এসব কিছুই তার নিজের দোষে।
ভাস্করকে দেখে মণীশ আরও জোরে ইন্দ্রাণী বলে চেঁচিয়ে উঠল।
ভাস্কর মৃদু গলায় বলল, এই তো কলিং বেল রয়েছে। চেঁচাবার দরকার কী!
নিজেই সে বেল টিপল।