লৌহ গরাদের ওপারে আকাশ।
শুধু কি আকাশ? পৃথিবী নিজের অন্তহীন বিস্তার অস্বীকারের জন্য গণ্ডির মধ্যে বিচিত্রার আতসবাজি জ্বালিয়ে জ্বালিয়ে এগোয়। থামতে চাইলেও থামতে পারে না। তার শ্রেষ্ঠ সন্তান মানুষের মধ্যেই, তাই পৃথিবী ভেঙে ভেঙে টুকরো-টুকরো ছড়িয়ে পড়ে; কিশোরীর দুর্বাবনে কুঁচফল হারিয়ে পুনরায় খোঁজার মত। খুঁজে পাওয়ার পর আবার ছড়ানো। ঝর্ণা-উৎসারিত ছত্রাকার জলবিন্দুর উখানে-পতনে এই লীলার আভাস কিছুটা চোখে পড়ে। তাই গরাদের ওপাশে শুধু আকাশই অস্তিত্বের ইশারা জাগায় না, ধেয়ে আসে চূর্ণিত পৃথিবী, টুকরো-টুকরো রঙীন কাঁচের মত অন্তহীন বর্ণসজ্জায়–পলানুপল, দণ্ড-প্রহর, অহর্নিশ।
গরাদের ওপারে তাই ত মানুষ মাথা কোটে। নিপ্ৰাণ পাথরেও চেতনার প্রলেপ আরোপ করে। মেজে-মেজে হৃদয়কে করে তোলে অমলিন নিদাগ আরশি। সেখানে অন্ততঃ পৃথিবীর ছায়া পড়ক।
গরাদের এপার এবং ওপারের দূরত্ব-পার্থক্য মুছে দিতে তাই নবেন্দ্রিয় সৃষ্টি হয়। ধারা বিচ্ছিন্ন উপনদী সমুদ্রের স্বপ্ন দেখে। তরঙ্গ-কল্লোল একক শব্দে কখনও মুক্তি পায় না।
ওইখানে হাব্সী-মুখের দিকে তাকাও। কোড়াহত ও-মুখ কি অনড় স্থৈর্যে অবিকল? না। কৃষ্ণ হাব্সীমুখ সফেদ আরমেনী মুখের আদলে কী ডুবে যাচ্ছে না? আশির সমতল রূপান্তর ধরে রাখছে না শুধু।
তুমি হয়ত দেখতে পাও না। কারণ, তুমি সেই নবন্দ্রিয়ের অধিকারী নও। তার চেয়ে গরাদের প্রাচীরেই কান পাতো। পাষাণেও চেতনা-প্রবাহ আছে। অভিশপ্ত বগ্দাদ এখনও নিদ্রা-সমাহিত। তার ঘুম যেন কেয়ামতের পরও ভাঙবে না।