মিস মালিশা, তোমার কি রাতে ঘুম হয় নি?
নাহ।
স্নায়ু উত্তেজিত হয়েছিল, সে— জন্যে এই হয়েছে। ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে কোনো একটা সিডেটিভের ব্যবস্থা করার প্রয়োজন ছিল। ভুলটা আমার।
মালিশা চোখ তুলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল এ্যাটর্নির দিকে। অল্পবয়েসী এই ছোকরাকে বেশ লাগছে তার। সে বলল, আমি তোমার নাম ভুলে গেছি। আই এ্যাম সরি।
আমার নাম ডেনিস বেয়ার। তুমি আমাকে বিল ডাকতে পোর।
বিল, একটি বুইক গাড়ি পাঠাবার কথা বলেছিলাম।
পাঠান হয়েছে।
কে পাঠিয়েছে, কি, কিছুই লেখা নেই তো?
না। কিন্তু মিস মালিশা, কাউকে গিফট দেওয়ার প্রধান আনন্দই তো হচ্ছে গিফট পেয়ে সে কেমন খুশি হল তা জানা, ঠিক নয় কি?
মালিশা জবাব দিল না। ডেনিস বেয়ার মিটমিট করে হাসতে লাগল।
মালিশা বলল, হাসছ কেন?
আজকের ন্যাশনাল ইনকোয়ারারে তোমার ছবি ছাপা হয়েছে। তুমি বিখ্যাত হতে শুরু করেছ।
মালিশা ক্লান্ত স্বরে বলল, আমার শরীরটা ভালো লাগছে না। আজ আমি কোথাও যেতে চাই না।
মিস মালিশা, ডিসট্রিক্ট এ্যাটর্নি অফিসে আজকে এক বার যেতেই হবে। ঘণ্টাখানিকের বেশি লাগবে না, অনেস্ট!
মালিশা জবাব দিল না। ডেনিস বেয়ার একটি সিগারেট ধরিয়ে হাসিমুখে বলল, সেখান থেকে যাব চেস ম্যানহাটনে, কথা দিচ্ছি ত্ৰিশ মিনিটের মধ্যে সব কামেলা চুকিয়ে ফেলব।
আজকে না গেলে হয় না?
না, আজকেই যেতে হবে। ডলার একটি চমৎকার জিনিস। পৃথিবীর মধুরতম শব্দের একটি। কিন্তু শব্দটি মধুময় রাখার যন্ত্রণাও কম নয়।
প্রকাণ্ড একটি ফোর-ডোর শোভ্রোলে গাড়ি হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। গাড়ির পেছনের সিটে মধ্যবয়েসী এক জন ভদ্রলোক একটি সামার কোট পরে বসে আছেন। ডেনিস বেয়ার মৃদু স্বরে বলল, ওর নাম জিম। তুমি যখনি বাইরে যাবে, ও ছায়ার মতো থাকবে তোমার সঙ্গে। ও তোমার বডিগার্ড। খুব এফিশিয়েন্ট লোক।
মালিশ ক্লান্ত স্বরে বলল, আমার এসব দরকার ছিল না।
দরকার আছে।
গাড়িতে উঠেই মালিশা বলল, আমার কেন যেন ভালো লাগছে না, কিছুতেই মন বসছে না।
সন্ধ্যাবেলা অপেরা দেখতে চাও?
টিকিট পাওয়া যাবে?
ডলার দিয়ে পৃথিবীর যে-কোনো জিনিস পাওয়া যায়।
তাই কি?
হাঁ। তুমি কী চাও বলবে, আমি ব্যবস্থা করব। ডলারের মতো চমৎকার জিনিস পৃথিবীতে কী আছে?
ডলারের মতো চমৎকার জিনিস পৃথিবীতে নেই, না?
না।
মালিশার মনে হল তার জ্বর আসছে। কিছুই ভালো লাগছে না। গায়ের সঙ্গে গা ঘেঁষে জিম বসে আছে। লোকটি মূর্তির মতো, সমস্ত রাস্তায় এক বার শুধু বলল, চমৎকার ওয়েদার মিস মালিশ।
ডিসট্রিক্ট এ্যাটর্নি অফিসে দু ঘণ্টার মতো লাগল। মালিশাকে তেমন কিছু করতে হল না। শুধু চুপচাপ বসে থাকা। মাঝে মাঝে দু-একটা ফর্মে সই করা। এ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গেও মিনিট দশেকের কথাবার্তা বলতে হল। দু ঘণ্টা বসে মালিশার প্রচণ্ড মাথা ধরে গেল।
চেস ম্যানহাটনে যাবার পথে ডেনিস বেয়ার শান্ত স্বরে বলল, মিস মালিশা, আমি বুঝতে পারছি তোমার খুব বিরক্তি লাগছে। কিন্তু উপায় নেই।
চেস ম্যানহাটনে আজ না গেলে হয় না?
না। আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি।
মালিশ চুপ করে গেল। জিম বলল, চমৎকার ওয়েদার, তাই না মিস্টার বেয়ার?
ডেনিস বেয়ার সে-কথার জবাব না দিয়ে মালিশার দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল, আমার মনে হয়, আই বি এম-এ তোমার যে শেয়ার আছে সেগুলি বিক্রি করে ফেলা উচিত। আই বি এম ফল করতে শুরু করেছে। তুমি কি ওয়াল স্ট্রীট জার্নাল পড়?
না।
এখন থেকে নিয়মিত পড়বে। আমি এক জন এ্যানালিস্টও ঠিক করে রেখেছি। সে সপ্তাহে এক দিন এসে তোমাকে ওয়াল স্ট্রীটের ব্যাপারগুলি এক্সপ্লেইন করবে। মালিশা শুকনো গলায় বলল, গাড়িটা একটু রাখতে বল, আমার বমি আসছে।
গাড়ি থামাবার আগেই মুখ ভৰ্তি করে বমি করল মালিশা। আই এ্যাম সরি।
সরি হবার কিছুই নেই।
এখন কি ভালো লাগছে?
নাহ, বড্ড খারাপ লাগছে। প্লীজ, আমাকে হোটেলে নিয়ে চল।