পূর্ববঙ্গের এক জমিদারনন্দন কবির জীবন অতিষ্ঠ করে দিচ্ছে একেবারে। জোড়াসাঁকোয় সে প্রতিদিন আসে, শান্তিনিকেতনেও ধাওয়া করে। এই সব ছোটখাটো জমিদারদেরও অনেকে রাজা বলে, যুবকটির রাজপুত্রসুলভ কান্তি, লেখাপড়াও কিছুটা শিখেছে, গান জানে, কবির কাছে বসে তাঁরই গান শোনায়। উদ্দেশ্য একটাই। অনেকেই জেনে গেছে, কাশীর রূপবতী-গুণবতী কন্যাটিকে বধূরূপে পেতে গেলে সর্বাগ্রে কবির সম্মতি আদায় করতে হবে।
কবি ছেলেটিকে মোটামুটি পছন্দ করেও ঠিক যেন মেনে নিতে পারেন না।
ছেলেটির তেমন কিছু ব্যক্তিত্ব নেই, বাধ্য ধরনের, কবির নির্দেশ মেনে চলছে বলেই মনে হয়, কিন্তু ওদের পরিবার রক্ষণশীল। যদি রাণুকে সুদূর মৈমনসিং-এ নিয়ে গিয়ে পরিবারের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখে? সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
রাণুর সঙ্গে ছেলেটির পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। কবি একদিন জানতে চাইলেন, ওকে তোমার কেমন লাগে?
রাণু ওষ্ঠ উলটে বলল, লাল মুলো!
বৃহৎ ঠাকুর পরিবারেও যুবকের অভাব নেই। তাদের কেউ কেউ এখন নতুন উৎসাহে কবির রচনা কণ্ঠস্থ করে, কবির কাছে তার পরীক্ষাও দিতে চায়।
এ ছাড়াও বিলেত ফেরত ব্যারিস্টার ও উচ্চ রাজকর্মচারী তরুণেরা কবির কাছে আসা যাওয়া করে, তাদের অভিভাবকেরা চিঠি লেখেন, কবি কিছুতেই মনস্থির করতে পারছেন না। কারুকেই পুরোপুরি মনঃপূত হয় না।
রাণুর বাবা-মা অধীর হয়ে পড়লেও এখনও কিছুই ঠিক হল না। তারা অপেক্ষা করে আছেন কবির নির্দেশের। হয়তো নাটকের শেষ পৃষ্ঠাটি লেখার মতন, রাণুর বিবাহ-পর্বও যতদূর সম্ভব বিলম্বিত করতে চান কবি। চেতনে কিংবা অবচেতনে।
চিঠি লেখা কমাতে পারেননি, রাণু লিখলে উত্তর না দেওয়া কি তাঁর পক্ষে সম্ভব? রাণু তাঁর কাছে আসতে চাইলে তিনি কি নিষেধ করতে পারেন? বরং, এক-দু মাসের ব্যবধান হলেই তাঁর ভেতরে একটা ছটফটানি শুরু হয়। লিখতে লিখতে থেমে যায় কলম।
এ রকম একটা আশঙ্কা তাঁর মনের গহনে রয়ে গেছে, যদি রাণু নিজেই হঠাৎ কারুকে পছন্দ করে ফেলে? অত্যুৎসাহী যুবকেরা যদি বেনারসেও চলে যায়। সেখানে কী ঘটছে, তার সব তো কবি জানতে পারছেন না।
অবশ্য রাণুর মা কথা দিয়েছেন, কবির সম্মতি না নিয়ে কারুকে পাকা কথা দেওয়া হবে না।
শত কাজের মধ্যেও কবি যেন একটা যাই যাই শব্দ শুনতে পান। রাণু চলে যাবেই। খেলার সাথী, বিদায় দ্বার খোলো-এবার বিদায় দাও। গেল যে খেলার বেলা। ডাকিল পথিকে দিকে বিদিকে, ভাঙিল রে সুখমেলা।
চিনদেশ থেকে আমন্ত্রণ এসেছে। অনেকদিন দেখা হবে না, রাণু তাই এসেছে শান্তিনিকেতনে। কিন্তু তার সঙ্গে নিরিবিলিতে বিশ্রম্ভালাপ করার কি জো আছে, যেন অবিরাম স্রোত বয়ে যাচ্ছে মানুষের। শান্তিনিকেতনে কেন হঠাৎ এত মানুষ আসছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন কিছু কিছু বিশিষ্টজন, কবিকে তাঁদের জন্য সময় দিতেই হয়।
রাণু এসে এক একবার উঁকি মারে, ঘর ভরা লোকজন দেখলে চকিতে সরে যায়। কবি দেখতে পান তার বুক ভরা অভিমান তরঙ্গিত হচ্ছে মুখে।
রাণুকে কিছু সময় আটকে রাখার জন্য কবি একটা উপায় বার করেছেন।
চেকোস্লোভাকিয়া থেকে এসেছেন এক বিশিষ্ট শিল্পী। এঁর পোট্রেট আঁকার হাত খুব ভাল। ইনি নিজেই একদিন টগরফুলের মালা গাঁথতে থাকা রাণুকে দেখে তার একটা প্রতিকৃতি আঁকার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন কবির কাছে। কবিরও মনে হয়েছিল, বিয়ের আগে রাণুর একখানা ছবি আঁকিয়ে রাখলে খুব ভাল হয়।
তেল রঙের ছবি, বেশ কয়েকদিন সিটিং দিতে হবে। তিনি রাণুকে রাজি করালেন। বলে দিলেন, বেশি নড়াচড়া করবে না। শিল্পী যেদিকে বলবেন, সেদিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে হবে।
শিল্পীর নাম নভ্কভ্স্কি, দীর্ঘকায় পুরুষ, কাজ চালানো গোছের ইংরিজি বলতে পারেন। কণ্ঠস্বর গমগমে। তাঁর ঘর ‘শান্তিনিকেতন’ বাড়িটির দোতলায়। সেখানে উত্তরের আলো আসে।
এঁর ছবি আঁকার ধরনটি বিচিত্র। ইজেলে ক্যানভাস লাগানো, কিন্তু প্রথম কয়েকটি দিন তিনি তুলির বদলে রঙিন পেন্সিলে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় রাণুর স্কেচ করতে লাগলেন কাগজে। শুধু বিভিন্ন ভঙ্গিমায় নয়, নানা রকম পোশাকে।
প্রথম দিনই তিনি রাণুকে বললেন, তোমার অনেকগুলো পোশাক নিয়ে এসো। আলাদা আলাদা রঙের।
এক পোশাকে একটা স্কেচ করার পর বললেন, এবার হলুদ কাপড়টা পরে নাও!
রাণু পোশাকগুলো নিয়ে বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে, শিল্পী বললেন, কোথায় যাচ্ছ, এখানেই বদলে নাও!
রাণু অবাক চোখে তাকাল। লোকটি বলে কী? অন্য লোকের সামনে মেয়েরা কাপড় বদলাতে পারে?
সে চলে গেল পাশের ঘরে।।
তার ফিরতে দেরি হচ্ছে বলে অস্থির হয়ে উঠছেন শিল্পী।
রাণু ফিরতেই তিনি বললেন, আমি সময় নষ্ট করতে পারি না। এর পরের বার আমি উলটোদিকে ফিরে থাকব, তুমি এখানেই পালটে নিও।
রাণু বলল, না। আমি তা পারব না।
এবার শিল্পীটির অবাক হবার পালা। তিনি যদি না তাকিয়ে থাকেন, তাতেও লজ্জার কী আছে? প্রাচ্য দেশে অনেক কিছুই বোেঝা যায় না।
চারদিন পর রেখাঙ্কন শেষ হল। এবার শিল্পী রাণুকে একটি চেয়ারে বসিয়ে তুলি হাতে নিলেন। ক্যানভাসে তুলি ছোঁয়াবার আগে তিনি রাণুর কাছে এসে গালটি ধরে বললেন, একটু ডানদিকে তাকাও। কাঁধে হাত দিয়ে বললেন, রিল্যাক্স, রিল্যাক্স।
রাণু কেঁপে উঠল। অচেনা পুরুষ মানুষের স্পর্শ। এ দেশের লোকেরা মেয়েদের গায়ে হাত দেয় না। কিছু কিছু গুরুজন শ্রেণীর প্রৌঢ়দের কথা আলাদা, যারা স্নেহ জানাবার অছিলায় বুকে জড়িয়ে ধরতে চায়। রাণু সেই সব গুরুজনদের কাছাকাছি যায় না দ্বিতীয়বার।
এক এক সময় মনে হয়, ছবি আঁকার ব্যাপারটা যেন শাস্তির মতন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গায় বসে থাকা যায়? তাও নড়াচড়া করা চলবে না। একটু এদিক ওদিক হলেই শিল্পী কাছে এসে গাল ধরবেন, কাঁধ ধরবেন, বুকের আঁচল ঠিক করে দেবেন। তাতে আরও অস্বস্তি।
ছবির জন্য এসে বসতে হয় দুপুরে, বিকেলের আলো ম্লান হয়ে গেলে রাণুর ছুটি। তখনও কবির ঘরে নোকজন ভর্তি দেখলে সে বলে, আমি সুরুলে চলে যাচ্ছি এল্মহার্স্টের কাছে!
সুরুলে যেতে কোনও অসুবিধে নেই, রাণু সাইকেল চালানো শিখে নিয়েছে।
এল্মহার্স্ট ভারী সুন্দর চা বানায়। যুদ্ধের গল্প বলে। ইংরিজি গান গাইতে পারে বেশ, কিন্তু বাংলা গান কিছুতেই তার গলায় মানায় না।
রাণু জানে, এল্মহার্স্ট এখান থেকে চলে যাবে। কবির সঙ্গে চিন ভ্রমণের লোভে আরও কয়েকটা দিন থেকে যাচ্ছে, ভারত আর চিনের মধ্যে কতখানি মিল বা অমিল তা সে দেখে আসতে চায়। তবে এমহাস্টের কথায় একটা ব্যাপার স্পষ্ট হয়ে ওঠে, আর যত দেশই সে ঘুরুক, বাংলাকে সে ভুলবে না, বিশেষত শান্তিনিকেতনকে। তারপর রাণুর দিকে চেয়ে বলে, এবং তোমাকে।
পাশাপাশি অন্য একটা সাইকেলে এল্মহার্স্ট রাণুকে সন্ধের পর আশ্রমে পৌঁছে দিয়ে যায়।
রাত্রির আহারের পর কবি আর কারুর সঙ্গে দেখা করেন না। তখনই রাণুর সময়। তখন বারান্দায় বসে দু’জনের গল্প শুরু হয়।
গল্পের চেয়ে গানই বেশি। কবি অনেক গান রচনা করছেন এখন। নতুন-পুরনো অনেক গান শোনান রাণুকে। সেই গানই যেন কথা বলা।
ভেবেছিলেম আসবে ফিরে, তাই ফাগুন শেষে দিলেম বিদায়। তুমি গেলে ভাসি নয়ননীরে, এখন শ্রাবণদিনে মরি দ্বিধায়। এখন বাদল সাঁঝের অন্ধকারে আপনি কাঁদাই আপনারে, একা ঝর ঝর বারিধারে ভাবি কী ডাকে ফিরাব তোমায়। যখন থাকো আঁখির কাছে, তখন দেখি ভিতর বাহির সব ভরে আছে। সেই ভরা দিনের ভরসাতে চাই বিরহের ভয় ঘুচাতে, তবু তোমা হারা বিজন রাতে, কেবল হারাই হারাই বাজে হিয়ায়।
গান শুনতে শুনতে রাণুর চোখে জল আসে। কবির হাতের ওপর হাত রেখে সে বলে, ভানুদাদা, আমি কোথাও যাব না।
তবু যে যেতেই হবে এক সময় তা কবিও জানেন, রাণুও জানে।
এ যেন ট্রেনের কামরার দরজায় দাঁড়িয়ে আছে একজন, আর একজন প্ল্যাটফর্মে। দুজনের হাত মুঠি করে ধরা। ট্রেন নড়েচড়ে উঠতেই সে দুটি হাতে টান পড়ল। কে কাকে টানছে? দুজনেই যেন বলছে, এসো, এসো। তবু মুঠি খুলে যাবে।।
ছবি আঁকা এগিয়েছে অনেকখানি, ক্যানভাসে ফুটে উঠেছে স্পষ্ট রাণুর আদল। ছবি আঁকার সময় শিল্পীর কথা বলা অভ্যেস। মাঝে মাঝেই বলেন, তোমার মতন এমন নীরব বাত্ময় চোখ আমি আগে আর কোনও নারীর দেখিনি। তোমার কোমরের গড়ন এমন নিখুঁত হল কী করে। তুমি কি কাশীর গঙ্গায় সাঁতার কাটো? তোমার আঙুলগুলি ঠিক চাঁপা ফুলের মতন।
এ সব শুনলে লজ্জারুণ হয়ে যায় রাণু। মুখটা নিচু করলেই শিল্পী দ্রুত কাছে এসে থুতনি ধরে তুলে দেন, তাকিয়ে থাকেন অনেকক্ষণ।
একদিন বিকেল প্রায় শেষ হয়েছে, এবার আঁকা বন্ধ হবে। তুলি রেখে, হাত থেকে রং মুছে শিল্পী রাণুর কাছে এসে তার থুতনিটা ধরলেন। তারপর বললেন, অনেক ছবি এঁকেছি আমি, কিন্তু তুমি আমায় হারিয়ে দিলে। তোমার প্রকৃত রূপ কিছুতেই যেন ফোটাতে পারছি না। আমার সৃষ্টির চেয়েও জীবন্ত তুমি অনেকগুণ সুন্দর। হয়তো আমি যদি তোমায় একবার খুব নিবিড় করে কাছে পাই, একবার জড়িয়ে ধরে একটি চুম্বন করি—
রাণু উঠে দাঁড়িয়ে শিল্পীকে ঠেলে সরিয়ে ছুটে বেরিয়ে গেল। ছুটতে ছুটতেই মাঠ পেরিয়ে কবির বাড়িতে চলে এল। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে দেখল, কবি নেমে আসছেন একা।
রাণু কবির বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, ভানুদাদা, আমি আর ছবি আঁকাবো না, তুমি আমাকে ওখানে আর যেতে বোলো না?
কবি হকচকিয়ে গিয়ে বললেন, কী হয়েছে?
রাণু বলল, ওই লোকটা আমাকে…ওই লোকটা–
সে আর কিছু বলতে পারল না, শুধু কাঁদতে লাগল।
কবি একটুক্ষণ চুপ করে রইলেন। শরীর জ্বলতে লাগল তাঁর। নিশ্বাস পড়তে লাগল ঘনঘন।
তিনি কঠোর স্বরে বললেন, থাক, তোমাকে আর যেতে হবে না। আমি নভুকভস্কিকে নিষেধ করে দেব। দরকার নেই ছবির।
রাণুর পিঠে তিনি হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। তারপর তাকে সামনে ফিরিয়ে দেখলেন তার সজল মুখ।
এই মুখ কি রং তুলিতে ক্যানভাসে ফোটানো সম্ভব? কিংবা শব্দে শব্দে গেঁথে?
সে রাতে কবি রাণুকে আর একটি গান শোনালেন।
আমার মন চেয়ে রয় মনে মনে, হেরে মাধুরী। নয়ন আমার কাঙাল হয়ে মরে না ঘুরি। চেয়ে চেয়ে বুকের মাঝে গুঞ্জরিত একতারা যে— মনোরথের পথে পথে বাজল বাঁশরি। রূপের কোলে ওই যে দোলে অরূপ মাধুরী। কূলহারা কোন রসের সরোবরে মূলহারা ফুল ভাসে জলের পরে। হাতের ধরা ধরতে গেলে ঢেউ দিয়ে তায় দিই যে ঠেলে—আপন মনে স্থির হয়ে রই, করিনে চুরি। ধরা দেওয়ার ধন সে তো নয়, অরূপ মাধুরী।
পরদিন সকালে বাগানে ফুল তুলতে গেছে রাণু। শরৎ এসেছে, ফুটেছে অজস্র শিউলি ফুল। গাছে যত মাটিতে ঝরে আছে আরও বেশি। আজ শিউলির মালা গেঁথে কবিকে পরাতে হবে।
হঠাৎ সামনে একটা দীর্ঘ ছায়া পড়ল।
চমকে পেছনে তাকিয়ে রাণু দেখল শিল্পী নভ্কভ্স্কি এক দৃষ্টে চেয়ে আছে তার দিকে। রাণুর বুক কেঁপে উঠল। এই রে, শিল্পী কি প্রতিশোধ নিতে এসেছেন নাকি? কাছাকাছি কেউ নেই।
শিল্পী দুঃখী ভাঙা গলায় বললেন, রাণু, তুমি কবিকে বলে দিলে কেন?
রাণু অধোবদনে পায়ের নখ দিয়ে মাটি খুঁটতে লাগল।
শিল্পী বললেন, আমি যা চেয়েছিলাম, তুমি রাজি না হলে আমি কি জোর করতাম? আমি কি বর্বর?
রাণু বুঝতে পারল, মানুষটি খুবই আঘাত পেয়েছেন। কিন্তু রাণু কী করবে, কাল যে সে ভয় পেয়ে গিয়েছিল।
শিল্পী বললেন, আজই আমি শান্তিনিকেতন ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আর কোনওদিন দেখা হবে না।
রাণু কেঁদে উঠে বলল, সে কি, আপনি আজই চলে যাবেন? আপনার সব কাজ হয়ে গেছে?
শিল্পী একটা গাছের গুড়ির গায়ে ঘুষি মেরে বললেন, চুলোয় যাক কাজ!
আপনি আমার ব্যবহারের জন্যই চলে যাবেন? আমি ঠিক বুঝতে পারিনি।
শিল্পী এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন রাণুর মুখের দিকে।
অস্ফুট স্বরে বললেন, হল না। কিছুই ফোটানো হল না।
তার উল্টোদিকে ফিরে হাঁটতে লাগলেন হন হন করে।
রাণু চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। তার একটা গাছ হয়ে যেতে ইচ্ছে হল।
তারপর দূর থেকে কেউ ডাকল রাণুর নাম ধরে।
রাণুকেও কাশী ফিরে যেতে হবে। শান্তিনিকেতনে ছুটি শুরু হচ্ছে। কবি সদলবলে যাত্রা করলেন চিন দেশের উদ্দেশে।
সেখান থেকে জাপান ঘুরে দেশে ফিরবেন প্রায় পাঁচ মাস পরে।
তার দু’মাস পরে আবার দিলেন বহু দূরপাল্লার পাড়ি। পেরুর স্বাধীনতার শতবার্ষিকী উৎসবে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ পেয়েছেন। দক্ষিণ আমেরিকায় আগে যাওয়া হয়নি, তাঁর অনেক দিনের সাধ, আমন্ত্রণটিও খুব সম্মানের।
রাণুর পত্র নির্বাচন হল না এখনও। কবি মনে মনে জানেন, তিনি যতদিন না ফিরছেন, ততদিন রাণুর পরের ঘরে যাবার কোনও সম্ভাবনা নেই। ততদিন রাণুর একমাত্র মনের মানুষ থাকবে তার ভানুদাদা।