নূহ (আ)-এর কাহিনী
তিনি হলেন নূহ ইব্ন লামাক ইব্ন মুতাওশশালিখা ইব্ন খানুখ। আর খানুখ হলেন ইদরীস
(আ)। ইব্ন জারীর প্রমুখের বর্ণনা মতে, আদম (আ)-এর ওফাতের একশ’ ছাব্বিশ বছর পর তাঁর জন্ম। আহলি কিতাবদের প্রাচীন ইতিহাস মতে নূহ (আ)-এর জন্ম ও আদম (আ)-এর ওফাতের মধ্যে একশ’ ছেচল্লিশ বছরের ব্যবধান ছিল। দু’জনের মধ্যে ছিল দশ করন (যুগ)-এর ব্যবধান। যেমন হাফিজ আবু হাতিম ইব্ন হিব্বান (র) তাঁর সহীহ গ্রন্থে আবু উমামা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসূল! আদম (আ) কি নবী ছিলেন? রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন হ্যা, আল্লাহ তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। লোকটি পুনরায় জিজ্ঞেস করল, তাঁর ও নূহ (আ)-এর মাঝে ব্যবধান ছিল কত কালের রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, দশ যুগের। বর্ণনাকারী বলেন, এ হাদীসটি মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ। তবে তিনি তা রিওয়ায়াত করেননি। সহীহ বুখারীতে ইব্ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আদম (আ) ও নূহ (আ.)-এর মাঝখানে ব্যবধান ছিল দশ যুগের। তাঁরা সকলেই ইসলামের অনুসারী ছিলেন।
এখন করুন, বা যুগ বলতে যদি একশ’ বছর বুঝানো হয়- যেমনটি সাধারণ্যে প্রচলিত তাহলে তাদের মধ্যকার ব্যবধান ছিল নিশ্চিত এক হাজার বছর। কিন্তু এক হাজার বছরের বেশি হওয়ার কথাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। কেননা, ইব্ন আব্বাস (রা) তাঁকে ইসলামের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন। আর তাদের দু’জনের মধ্যবতী সময়ে এমন কিছু যুগও অতিবাহিত হয়ে থাকবে, যখন লোকজন ইসলামের অনুসারী ছিল না। কিন্তু আবু উমামার হাদীস দশ করুন-এ সীমাবদ্ধ হওয়ার কথা প্রমাণ করে আর ইব্ন আব্বাস (রা) একটু বাড়িয়ে বলেছেন, ‘তারা সকলে ইসলামের অনুসারী ছিলেন।’ এসব তথ্য আহলি কিতাবদের সে সব ঐতিহাসিক ও অন্যদের এ অনুমানকে বাতিল বলে প্রমাণ করে যে, কবীল ও তার বংশধররা অগ্নিপূজা করতো। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
আর যদি করুন দ্বারা প্ৰজন্ম বুঝানো হয়ে থাকে ৪ যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন,
a a * A / . w くタイ*/ * / / و گم افلگنا من القزور وین بغیر نو. ‘নূহের পর আমি কত প্ৰজন্মকে ধ্বংস করেছি।’ (১৭ : ১৭)
ثم أنشأنا من بغد هم قرونا اخیر بین ۰ ‘তারপর তাদের পরে আমি বহু প্রজন্ম সৃষ্টি করেছি।’ (২৩ ও ৪২)
তাদের অন্তবতীকালের বহু প্ৰজন্মকেও। (২৫ : ৩৮)
м ( A 鼎 AK (ルイ* 4 * / / و کم آهلکنا قبلهم من قزين . ‘তাদের পূর্বে কত প্রজন্মকে আমি বিনাশ করেছি।’ (১৯ : ৭৪)
আবার যেমন রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, ৩৭,০৯, ৩,৩১৯ | ১২। উত্তম প্রজন্ম আমার প্রজন্ম। এ-ই। যদি হয়, তাহলে নূহ (আ)-এর পূর্বে বহু প্ৰজন্ম দীর্ঘকাল যাবত বসবাস করেছিল। এ হিসাবে আদম (আ) ও নূহ (আ)-এর মধ্যে ব্যবধান দাঁড়ায় কয়েক হাজার বছরের। আল্লাহই সর্বজ্ঞ। 唐
মোটকথা, যখন মূর্তি ও দেব-দেবীর পূজা শুরু হয় এবং মানুষ বিভ্রান্তি ও কুফৱীতে নিমজ্জিত হতে শুরু করে, তখন মানুষের জন্য রহমতস্বরূপ আল্লাহ তা’আলা নূহ (আ)-কে প্রেরণ করেন। অতএব, জগদ্বাসীর প্রতি প্রেরিত তিনিই সর্বপ্রথম রাসূল, যেমন কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে উপস্থিত লোকজন তাকে সম্বোধন করবে। আর ইব্ন জুবায়র (র) প্ৰমুখের বর্ণনা মতে নূহ (আ)-এর সম্প্রদায়কে বনু রাসিব বলা হতো।
নবুওত লাভের সময় নূহ (আ)-এর বয়স কত ছিল, এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, তখন তাঁর বয়স ছিল পঞ্চাশ বছর। কেউ বলেন, তিনশ’ পঞ্চাশ বছর। কারো কারো মতে, চারশ’ আশি বছর। এ বর্ণনাটি ইব্ন জরীরের এবং তৃতীয় অভিমতটি ইব্ন আব্বাস (রা)-এর বলে তিনি বর্ণনা করেছেন।
আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে নূহ (আ.)-এর কাহিনী তাঁর সম্প্রদায়ের যারা তাকে অস্বীকার করেছিল প্লাবন দ্বারা তাদের প্রতি অবতীর্ণ শাস্তির কথা এবং কিভাবে তাকে ও নীেকার অধিবাসীদেরকে মুক্তি দান করেছেন তার বিবরণ উল্লেখ করেছেন। সূরা আ’রাফ, ইউনুস, হুদ, আম্বিয়া, মু’মিনূন, শু’আরা, আনকাবুত, সাফফাত ও সূরা কমরে এসবের আলোচনা রয়েছে। তাছাড়া এ বিষয়ে সূরা নূহ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরাও অবতীর্ণ হয়েছে।
সূরা আ’রাফে আল্লাহ তা’আলা বলেন :
অর্থাৎ-আমি তো নূহকে পাঠিয়েছিলাম তার সম্প্রদায়ের নিকট এবং সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়!! আল্লাহর ইবাদত কর, তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন ইলাহ নেই। আমি
ROR
তোমাদের জন্য মহাদিবসের শাস্তির আশংকা করছি। তার সম্প্রদায়ের প্রধানগণ বলেছিল, আমরা তো তোমাকে স্পষ্ট ভ্ৰান্তিতে দেখতে পাচ্ছি।
সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! আমাতে কোন ভ্ৰান্তি নেই। আমি তো জগতসমূহের প্রতিপালকের রাসূল। আমার প্রতিপালকের বাণী আমি তোমাদের নিকট পৌছাচ্ছি ও তোমাদেরকে হিতোপদেশ দিচ্ছি এবং তোমরা যা জান না। আমি তা আল্লাহর নিকট হতে জানি।
তোমরা কি বিস্মিত হচ্ছে যে, তোমাদেরই একজনের মাধ্যমে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তোমাদের কাছে উপদেশ এসেছে, যাতে সে তোমাদেরকে সতর্ক করে তোমরা সাবধান হও এবং তোমরা অনুকম্পা লাভ কর।
তারপর তারা তাকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করে। তাকে ও তার সঙ্গে যারা নীেকায় ছিল আমি তাদেরকে উদ্ধার করি এবং যারা আমার নিদর্শন প্রত্যাখ্যান করেছিল তাদেরকে ডুবিয়ে দেই। তারা ছিল এক অন্ধ সম্প্রদায়। (৭ : ৫৯–৬৪)
সূরা ইউনুসে আল্লাহ তা’আলা বলেন :
অর্থাৎ-তাদেরকে তুমি নূহ-এর বৃত্তান্ত শোনাও। সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! আমার অবস্থিতি ও আল্লাহর নিদর্শন দ্বারা আমার উপদেশ দান তোমাদের নিকট যদি দুঃসহ হয় তবে আমি তো আল্লাহর উপর নির্ভর করি, তোমরা যাদেরকে শরীক করেছ সেগুলোর সঙ্গে তোমাদের কর্তব্য স্থির করে নাও, পরে যেন কর্তব্য বিষয়ে তোমাদের কোন সংশয় না থাকে। আমার সম্বন্ধে তোমাদের কর্ম নিম্পন্ন করে ফেল এবং আমাকে অবকাশ দিও না।
তারপর তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিলে নিতে পোর, তোমাদের নিকট আমি তো কোন পারিশ্রমিক চাইনি, আমার পারিশ্রমিক আছে আল্লাহর নিকট। আমি তো আত্মসমৰ্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে আদিষ্ট হয়েছি।
আর তারা তাকে মিথ্যাবাদী প্ৰতিপন্ন করে-তারপর তাকে ও তার সঙ্গে যারা নীেকায় ছিল তাদেরকে আমি উদ্ধার করি এবং তাদেরকে স্থলাভিষিক্ত করি ও যারা আমার নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করেছিল তাদেরকে নিমজ্জিত করি। সুতরাং দেখা যাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিল তাদের পরিণাম কি হয়েছে? (১০ : ৭১-৭৩)
QDVD
সূরা হুদ-এ আল্লাহ তা’আলা বলেন :
অর্থাৎ-আমি তো নূহকে তার সম্প্রদায়ের নিকট পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, আমি তোমাদের জন্য প্রকাশ্য সতর্ককারী। যাতে তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুর ইবাদত না কর; আমি তোমাদের জন্য এক মর্মত্যুদ শাস্তির আশংকা করি।
তার সম্প্রদায়ের প্রধানরা যারা ছিল কাফির-বলল, আমরা তো তোমাকে আমাদের মতই মানুষ দেখছি। অনুধাবন না করে তোমার অনুসরণ করছে তারাই, যারা আমাদের মধ্যে অধম এবং আমরা আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব দেখতে পাচ্ছি না, বরং আমরা তোমাদেরকে মিথ্যাবাদী মনে করি।
সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আমাকে বল, আমি যদি আমার প্রতিপালক প্রেরিত স্পষ্ট নিদর্শনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকি এবং তিনি যদি আমাকে তাঁর নিজ অনুগ্রহ দান করে থাকেন,
ՀVOG
অথচ এ বিষয়ে তোমরা জ্ঞানান্ধ হও, আমি কি এ বিষয়ে তোমাদেরকে বাধ্য করতে পারি, যখন তোমরা এটা অপছন্দ করা?
হে আমার সম্প্রদায়! এর পরিবর্তে আমি তোমাদের নিকট ধন-সম্পদ যাম্রঞা করি না। আমার পারিশ্রমিক তো আল্লাহরই নিকট এবং মু’মিনদেরকে তাড়িয়ে দেয়া আমার কাজ নয়, তারা নিশ্চিতভাবে তাদের প্রতিপালকের সাক্ষাৎ লাভ করবে। কিন্তু আমি দেখছি, তোমরা এক অজ্ঞ সম্প্রদায়।
হে আমার সম্প্রদায়! আমি যদি তাদের তাড়িয়ে দেই। তবে আল্লাহর শাস্তি থেকে আমাকে কে রক্ষা করবে? তবুও কি তোমরা চিন্তা করবে না?
আমি ভোেমাদেরকে বলি না, আমার নিকট আল্লাহর ধন-ভাণ্ডার আছে, আর না অদৃশ্য সম্বন্ধে আমি অবগত এবং আমি এও বলি না যে, আমি ফেরেশতা। তোমাদের দৃষ্টিতে যারা হেয় তাদের সম্বন্ধে আমি বলি না যে, আল্লাহ তাদেরকে কখনো মঙ্গল দান করবেন না, তাদের অন্তরে যা আছে, তা আল্লাহ সম্যক অবগত। তাহলে আমি অবশ্যই জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হব।
তারা বলল, হে নুহ! তুমি আমাদের সাথে বাচসা করেছ-তুমি আমাদের সাথে অতিমাত্রায় বাচসা করছি। তুমি সত্যবাদী হলে আমাদেরকে যার ভয় দেখােচ্ছ তা নিয়ে আসা। সে বলল, ইচ্ছা! করলে আল্লাহই তা তোমাদের নিকট উপস্থিত করবেন এবং তোমরা তা ব্যর্থ করতে পারবে না।
আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিতে চাইলেও আমার উপদেশ তোমাদের উপকারে আসবে না, যদি আল্লাহ তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করতে চান। তিনিই তোমাদের প্রতিপালক এবং তারই নিকট তোমরা প্ৰত্যাবর্তন করবে।
তারা কি বলে যে, সে তা রচনা করেছে? বল, আমি যদি তা রচনা করে থাকি তবে আমিই আমার অপরাধের জন্য দায়ী হব। তোমরা যে অপরাধ করছি তার জন্য আমি দায়ী নই।
কেউ কখনো ঈমান আনবে না। সুতরাং তারা যা করে সে জন্যে তুমি ক্ষোভ করো না।
তুমি আমার তত্ত্বাবধানে ও আমার প্রত্যাদেশ অনুযায়ী নীেকা নির্মাণ করা এবং যারা সীমালংঘন করেছে তাদের সম্পর্কে তুমি আমাকে কিছু বলো না, তারা তো নিমজ্জিত হবে।
সে নৌকা নির্মাণ করতে লাগল এবং যখনই তার সম্প্রদায়ের প্রধানরা তার নিকট দিয়ে যেত, তাকে উপহাস করত; সে বলত, তোমরা যদি আমাকে উপহাস কর তবে আমরাও তোমাদেরকে উপহাস করব, যেমন তোমরা উপহাস করছি। এবং তোমরা অচিরেই জানতে পারবে, কার উপর আসবে লাঞ্ছনাদায়ক শান্তি আর কার উপর আপতিত হবে স্থায়ী শান্তি।
অবশেষে যখন আমার আদেশ আসল এবং উনুন উথলে উঠল, আমি বললাম : এতে উঠিয়ে নাও প্রত্যেক শ্রেণীর যুগল, যাদের বিরুদ্ধে পূর্ব-সিদ্ধান্ত হয়েছে তারা ব্যতীত তোমার
পরিবার-পরিজনকে এবং যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে। তার সঙ্গে ঈমান এনেছিল গুটি কতেক
লোক।
সে বলল, এতে আরোহণ কর, আল্লাহর নামে এর গতি ও স্থিতি। আমার প্রতিপালক অবশ্যই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
২৩৬
পৰ্বত-প্রমাণ ঢেউয়ের মধ্যে তা তাদের নিয়ে বয়ে চলল, নূহ তার পুত্ৰ যে তাদের থেকে পৃথক ছিল, তাকে আহবান করে বলল, হে আমার পুত্র! আমাদের সঙ্গে আরোহণ কর এবং কাফিরদের সঙ্গী হয়ে না।
সে বলল, আমি এমন এক পর্বতে আশ্রয় নিব যা আমাকে প্লাবন থেকে রক্ষা করবে। সে বলল, আজ আল্লাহর বিধান থেকে রক্ষা করার কেউ নেই, যাকে আল্লাহ। দয়া করবেন। সে ব্যতীত। তারপর ঢেউ তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দিল এবং সে নিমজ্জিতদের অন্তর্ভুক্ত হলো।
এরপর বলা হলো, হে পৃথিবী! তুমি তােমার পানি গ্ৰাস করে লও এবং হে আকাশ! ক্ষান্ত হও। তারপর বন্যা প্রশমিত হলো এবং কার্য সমাপ্ত হলো, নীেকা জুদী পর্বতের উপর স্থিত হলো এবং বলা হলো জালিম সম্প্রদায় ধ্বংস হোক।
নূহ তার প্রতিপালককে সম্বোধন করে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার পুত্র আমার পরিবারভুক্ত এবং আপনার প্রতিশ্রুতি সত্য এবং আপনি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিচারক।
তিনি বললেন, হে নুহ! সে তোমার পরিবারভুক্ত নয়। সে অসৎ কর্মপরায়ণ। সুতরাং যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে আমাকে অনুরোধ করো না। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, তুমি যেন অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত না হও।
সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! যে বিষয়ে আমার জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে যাতে আপনাকে অনুরোধ না করি এ জন্য আমি আপনার শরণ নিচ্ছি। আপনি যদি আমাকে ক্ষমা না করেন এবং আমাকে দয়া না করেন তবে আমি ক্ষতিগ্ৰস্তাদের অন্তর্ভুক্ত হব।
বলা হলো, হে নুহ! অবতরণ করা আমার দেয়া শান্তিসহ এবং তোমার প্রতি ও যে সমস্ত সম্প্রদায় তোমার সঙ্গে আছে তাদের প্রতি কল্যাণসহ। অপর সম্প্রদায় সমূহকে জীবন উপভোগ করতে দেব, পরে আমার পক্ষ থেকে মর্মতুদি শাস্তি তাদেরকে স্পর্শ করবে।
এ সমস্ত অদৃশ্য লোকের সংবাদ আমি তোমাকে ওহী দ্বারা অবহিত করছি, যা এর আগে তুমি জানতে না এবং তোমার সম্প্রদায়ও জানত না। সুতরাং ধৈর্যধারণ কর, শুভ পরিণাম
মুত্তাকীদেরই জন্য। (১১ : ২৫-৪৯)
সূরা আম্বিয়ায় আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
অর্থাৎ-স্মরণ করা নূহকে, পূর্বে সে যখন আহবান করেছিল, তখন আমি তার আহবানে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে ও তার পরিজন বৰ্গকে মহান সংকট থেকে উদ্ধার করেছিলাম, এবং আমি তাকে সাহায্য করেছিলাম সে সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে, যারা আমার নিদর্শনাবলী অস্বীকার করেছিল, তারা ছিল এক মন্দ সম্প্রদায়। এ জন্য আমি তাদের সকলকেই নিমজ্জিত করেছিলাম। (ՀՏ 3 ԳՆ-ԳԳ)
২৩৭
সূরা মুমিনুনে আল্লাহ তা’আলা বলেন :
অর্থাৎ-আমি তো নূহকে পাঠিয়েছিলাম তার সম্প্রদায়ের নিকট। সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়!! আল্লাহর ইবাদত কর, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ নেই। তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না?
তার সম্প্রদায়ের প্রধানগণ-যারা কুফরী করেছিল তারা বলল, এতো তোমাদের মত একজন মানুষই তোমাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে চাচ্ছে। আল্লাহ ইচ্ছা করলে ফেরেশতাই পাঠাতেন, আমরা তো আমাদের পূর্ব-পুরুষদের কালে এরূপ ঘটেছিল এমন কথা শুনিনি। এতো এমন লোক, একে উন্মত্ততা পেয়ে বসেছে। সুতরাং এর সম্পর্কে কিছুকাল অপেক্ষা কর।
নূহ বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সাহায্য কর, কারণ তারা আমাকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করছে। তারপর আমি তার প্রতি ওহী নাযিল করলাম, তুমি আমার তত্ত্বাবধানে ও আমার ওহী অনুযায়ী নীেযান নির্মাণ কর, তারপর যখন আমার আদেশ আসবে ও উনুন উথলে উঠবে, তখন উঠিয়ে নিও প্রত্যেক জীবের এক এক জোড়া এবং তোমার পরিবার-পরিজনকে তাদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে পূর্বে সিদ্ধান্ত হয়েছে তাদের ব্যতীত। জালিমদের সম্পর্কে তুমি আমাকে কিছু বলো না, তারা তো নিমজ্জিত হবে।
যখন তুমি ও তোমার সঙ্গীরা নীেযানে আসন গ্ৰহণ করবে তখন বলবে : সমস্ত প্ৰশংসা আল্লাহরই, যিনি আমাদেরকে উদ্ধার করেছেন জালিম সম্প্রদায় থেকে।
আরো বলিও, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে এমনভাবে অবতরণ করাও যা হবে কল্যাণকর; আর তুমিই শ্রেষ্ঠ অবতারণকারী। এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে। আমি তো তাদেরকে পরীক্ষা করেছিলাম। (২৩ : ২৩-২৯)
RVDbot
সূরা শু’আরায় আল্লাহ তা’আলা বলেন :
অর্থাৎ-নূহের সম্প্রদায় রাসূলগণের প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছিল। যখন তাদের ভাই নূহ তাদেরকে বলল, তোমরা কি সাবধান হবে না? আমি তো তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল! অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। আমি তোমাদের নিকট এর জন্য কোন প্রতিদান চাই না; আমার পুরস্কার তো জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকটই আছে। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।
তারা বলল, আমরা কি তোমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করব, অথচ ইত্যরজনরা তোমার অনুসরণ করছে?
নূহ বলল, তারা কী করত তা আমার জানা নেই। তাদের হিসাব গ্রহণ তো আমার প্রতিপালকেরই কাজ, যদি তোমরা বুঝতে। মু’মিনদেরকে তাড়িয়ে দেয়া আমার কাজ নয়। আমি তো কেবল একজন স্পষ্ট সতর্ককারী। তারা বলল, হে নুহ! তুমি যদি নিবৃত্ত না হও তবে নিশ্চয় তুমি প্রস্তরাঘাতে নিহতদের শামিল হবে।
নূহ বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার সম্প্রদায় তো আমাকে অস্বীকার করছে। সুতরাং আমার ও তাদের মধ্যে স্পষ্ট মীমাংসা করে দাও এবং আমাকে ও আমার সাথে যে সব মু’মিন। আছে তাদেরকে রক্ষা কর।
তারপর আমি তাকে ও তার সঙ্গে যারা ছিল তাদেরকে রক্ষা করলাম বোঝাই নীেযানে। তারপর অবশিষ্ট সকলকে নিমজ্জিত করলাম। এতে অবশ্যই রয়েছে নিদর্শন, কিন্তু তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী নয় এবং তোমার প্রতিপালক, তিনি তো পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু। (২৬ 3 do V-d RNR)
ՀVD5
সূরা আনকাবুতে আল্লাহ তা’আলা বলেন . ل
অর্থাৎ-আমি তো নূহকে তার সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। সে তাদের মধ্যে অবস্থান করেছিল পঞ্চাশ বাদ এক হাজার বছর। তারপর প্লাবন তাদেরকে গ্ৰাস করে; কারণ তারা ছিল সীমালজযানকারী। তারপর আমি তাকে এবং যারা নীেযানে আরোহণ করেছিল তাদেরকে রক্ষা করলাম এবং বিশ্বজগতের জন্য একে করলাম একটি নিদর্শন। (২৯ : ১৪-১৫)
সূরা সাফফাতে মহান আল্লাহ বলেন :
অর্থাৎ-নূহ আমাকে আহবান করেছিল, আর আমি কত উত্তম সাড়া দানকারী। তাকে এবং তার পরিবারবর্গকে আমি উদ্ধার করেছিলাম মহা সংকট থেকে এবং তার বংশধরদেরকে আমি বংশ পরম্পরায় বিদ্যমান রেখেছি। আমি এটা পরবর্তীদের স্মরণে রেখেছি। সমগ্র বিশ্বের মধ্যে নূহের প্রতি শান্তি বৰ্ষিত হোক। এভাবেই আমি সৎকর্মপরায়ণদের পুরস্কৃত করে থাকি। সে ছিল আমার মু’মিন বান্দাদের অন্যতম। তারপর অবশিষ্ট সকলকে আমি নিমজ্জিত করেছিলাম। (৩৭ 3 ad-by-S)
সূরা কামারে আল্লাহ বলেন :
অর্থাৎ—এদের আগে নৃহের সম্প্রদায়ও মিথ্যা আরোপ করেছিল। মিথ্যা আরোপ করেছিল আমার বান্দার প্রতি এবং বলেছিল, এতো এক পাগল। আর তাকে ভীতি প্ৰদৰ্শন করা হয়েছিল। তখন সে তার প্রতিপালককে আহবান করে বলেছিল, আমি তো অসহায়, অতএব তুমি
S8o
প্রতিবিধান কর। ফলে আমি আকাশের দ্বার উন্মুক্ত করে দিলাম প্ৰবল বারি বর্ষণে এবং মাটি হতে উৎসারিত করলাম প্রস্রবণ; তারপর সকল পানি মিলিত হলো এক পরিকল্পনা অনুসারে।
তখন আমি নূহকে আরোহণ করালাম কাঠ ও পেরেক নির্মিত এক নৌযানে, যা চলত আমার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে; এটা পুরস্কার তার জন্য যে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। আমি একে রেখে দিয়েছি। এক নিদর্শনরূপে, অতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি? কী কঠোর ছিল আমার শাস্তি ও সতর্কবাণী! কুরআন আমি সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য, কে আছে উপদেশ গ্রহণের জন্য? (৫৪ : ৯-১৭)
সূরা নূহ-এ আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
অর্থাৎ-নূহকে আমি প্রেরণ করেছিলাম তার সম্প্রদায়ের প্রতি এ নির্দেশ দিয়ে-তুমি তোমার সম্প্রদায়কে সতর্ক কর তাদের প্রতি শাস্তি আসার পূর্বে।
সে বলেছিল, হে আমার সম্প্রদায়! আমি তো তোমাদের জন্য স্পষ্ট সতর্ককারী এ বিষয়ে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর ও তাকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর; তিনি তোমাদের পাপ ক্ষমা করবেন এবং তিনি তোমাদেরকে অবকাশ দেবেন। এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত। নিশ্চয় আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত কাল উপস্থিত হলে তা বিলম্বিত হয় না, যদি তোমরা তা Tesor (V5।(
সে বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তো আমার সম্প্রদায়কে দিবা-রাত্রি আহবান করেছি, কিন্তু আমার আহবান তাদের পলায়ন প্রবণতাই বৃদ্ধি করেছে। আমি যখনই তাদেরকে
নিজেদেরকে ও জিদ করতে থাকে এবং অতিমাত্রায় ঔদ্ধত্য প্ৰকাশ করে। তারপর আমি তাদেরকে আহবান করেছি। প্রকাশ্যে, পরে আমি সোচ্চার প্রচার করেছি ও উপদেশ দিয়েছি গোপনে।
আমি বলেছি, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থীনা কর, তিনি তো মহা ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন এবং তোমাদেরকে সমৃদ্ধ করবেন। ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন। উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন। ननेी-नाला।
তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করতে চাচ্ছি না। অথচ তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন পর্যায়ক্রমে। তোমরা কি লক্ষ্য করনি? আল্লাহ কিভাবে সাত স্তরে বিন্যস্ত আকাশমণ্ডলী সৃষ্টি করেছেন এবং সেখানে চাঁদকে স্থাপন করেছেন আলোরূপে ও সূর্যকে স্থাপন করেছেন প্ৰদীপরূপে।
তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে উদ্ভূত করেছেন তারপর তাতে তিনি তোমাদেরকে প্রত্যাবৃত্ত
করবেন ও পরে পুনরুখিত করবেন এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য ভূমিকে করেছেন বিস্তৃত যাতে তোমরা চলাফেরা করতে পার প্রশান্ত পথে।
নূহ বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক! আমার সম্প্রদায় তো আমাকে অমান্য করেছে এবং অনুসরণ করেছে এমন লোকের যার ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তার ক্ষতি ব্যতীত আর কিছুই বৃদ্ধি করেনি।
তারা ভয়ানক ষড়যন্ত্র করেছিল এবং বলেছিল, তোমরা কখনো পরিত্যাগ করো না তোমাদের দেব-দেবীকে, পরিত্যাগ করো না ওয়াদ, সূওয়া, য়াগুছ, য়াউক ও নাসরকে। তারা অনেককে বিভ্রান্ত করেছে। সুতরাং জালিমদের বিভ্রান্তি ব্যতীত আর কিছুই বৃদ্ধি করো না।
তাদের অপরাধের জন্য তাদেরকে নিমজ্জিত করা হয়েছিল এবং পরে তাদেরকে প্রবিষ্ট করা হয়েছিল আগুনে, পরে তারা কাউকেও আল্লাহর মুকাবিলায় সাহায্যকারী পায়নি।
(১ম খণ্ড) ৩১
Հ8Հ
নূহ আরো বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক! পৃথিবীতে কাফিরদের মধ্য থেকে কোন ঘরের লোককে অব্যাহতি দিও না। তুমি তাদেরকে অব্যাহতি দিলে তারা তোমার বান্দাদেরকে বিভ্রান্ত করবে এবং জন্ম দিতে থাকবে কেবল দুষ্কৃতকারী ও কাফির।
হে আমার প্রতিপালক! তুমি ক্ষমা কর আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং যারা মুমিন হয়ে আমার ঘরে প্রবেশ করে তাদেরকে এবং মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে আর জালিমদের শুধু ধ্বংসই বৃদ্ধি করা। (৭১ : ১-২৮)
তাফসীরে আমরা এর প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেছি। পরে আমরা এ বিক্ষিপ্ত তথ্যাবলী একত্র করে এবং হাদীস ও রিওয়ায়াতসমূহের আলোকে কাহিনীর মূল বিষয়-বস্তু একত্রে উল্লেখ করব। এ ছাড়া কুরআনের আরো বিভিন্ন স্থানে নূহ (আ)-এর আলোচনা এসেছে যাতে তার প্রশংসা এবং তার বিরুদ্ধবাদীদের নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়েছে।
যেমন সূরা নিসায় আল্লাহ তা’আলা বলেন :
অর্থাৎ—তোমার নিকট আমি ওহী প্রেরণ করেছি। যেমন নূহ ও তার পরবর্তী নবীদের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তার বংশধরগণ, ঈসা, আয়ুব,
ইউনুস, হারূন এবং সুলায়মানের নিকট ওহী প্রেরণ করেছিলাম এবং দাউদকে যাবুর দিয়েছিলাম।
অনেক রাসূল প্রেরণ করেছি। যাদের কথা পূর্বে তোমাকে বলেছি এবং অনেক রাসূল যাদের
কথা তোমাকে বলিনি এবং মূসার সঙ্গে আল্লাহ সাক্ষাৎ বাক্যালাপ করেছিলেন। সুসংবাদবাহী ও
সাবধানকারী রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি। যাতে রাসূলগণ আসার পর আল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের
কোন অভিযোগ না থাকে এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (৫ : ১৬৩-১৬৫)
সূরা আন’আমে আল্লাহ তা’আলা বলেন :
অর্থাৎ— এবং এটা আমার যুক্তি-প্রমাণ যা ইবরাহীমকে দিয়েছিলাম তার সম্প্রদায়ের মুকাবিলায়; যাকে ইচ্ছা মৰ্যাদায় আমি উন্নীত করি; তোমার প্রতিপালক প্রজ্ঞাময়, জ্ঞানী।
এবং তাকে দান করেছিলাম। ইসহাক ও ইয়াকুব ও এদের প্রত্যেককে সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম; পূর্বে নূহকেও সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম এবং তার বংশধর দাউদ, সুলায়মান, আয়ুব, ইউসুফ, মূসা ও হারূনকেও; আর এভাবেই আমি সৎকর্ম পরায়ণদেরকে পুরস্কৃত করি।
এবং যাকারিয়া, ইয়াহয়া, ঈসা এবং ইলিয়াসকেও সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম, এরা সকলেই সজ্জনদের অন্তর্ভুক্ত। আরো সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম ইসমাঈল, আল-য়াসাআ, ইউনুস ও লুতকে এবং প্রত্যেককে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলাম বিশ্ব জগতের উপর এবং এদের পিতৃ-পুরুষ, বংশধর, এবং ভ্রাতৃবৃন্দের কতককে; তাদেরকে মনোনীত করেছিলাম এবং সরল পথে পরিচালিত করেছিলাম। (৬ : ৮৩-৮৭)
সূরা তাওবায় আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
অর্থাৎ—তাদের পূর্ববতী নূহ, আদি ও ছামুদের সম্প্রদায়, ইবরাহীমের সম্প্রদায় এবং মাদয়ান ও বিধ্বস্ত জনপদসমূহের অধিবাসীদের সংবাদ কি তাদের কাছে আসেনি? তাদের কাছে স্পষ্ট নিদর্শনসহ তাদের রসূলগণ এসেছিল। আল্লাহ এমন নন যে, তাদের উপর জুলুম করেন, কিন্তু
তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করে। (৯ : ৭০)
সূরা ইবরাহীমে আল্লাহ তা’আলা বলেন :
অর্থাৎ—তোমাদের নিকট কি সংবাদ আসেনি তোমাদের পূর্ববতীদের, নৃহের সম্প্রদায়ের, ‘আন্দের ও ছামুদের এবং তাদের পূর্ববতীদের? তাদের বিষয় আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না।
Հ88
তাদের কাছে স্পষ্ট নিদর্শনসহ তাদের রাসূল এসেছিল, তারা তাদের হাত তাদের মুখে স্থাপন করত এবং বলত, যাসহ তোমরা প্রেরিত হয়েছ তা আমরা প্ৰত্যাখ্যান করি এবং আমরা অবশ্যই বিভ্ৰান্তিকর সন্দেহ পোষণ করি সে বিষয়ে, যার প্রতি তোমরা আমাদেরকে আহবান করছি। (>888)
সূরা ইসরােয় আল্লাহ তা’আলা বলেন :
A ذر نة من حملنا منع نو. اگه گان عبدا شگوارا. হে ঐ সব লোকের বংশধরগণ! যাদেরকে আমি নূহের সঙ্গে আরোহণ করিয়েছিলাম, সে তো ছিল পরম কৃতজ্ঞ বান্দা। (১৭ : ৩)
بصيزا . অর্থাৎ-নূহের পর আমি কত মানব গোষ্ঠীকে ধ্বংস করেছি। তোমার প্রতিপালকই তার বান্দাদের পাপাচরণের সংবাদ রাখা ও পর্যবেক্ষণের জন্য যথেষ্ট। (১৭ : ১৭)
সূরা আম্বিয়া, মুমিনুন, শু’আরা ও আনকাবুতে তাঁর ঘটনা পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে। সূরা আহ্যাবে আল্লাহ তা’আলা বলেন :
অর্থাৎ-স্মরণ করা, যখন আমি নবীদের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম এবং
তোমার কাছ থেকেও এবং নূহ, ইবরাহীম, মূসা, মারিয়ামের পুত্র ঈসার কাছ থেকে। তাদের কাছ থেকে গ্ৰহণ করেছিলাম দৃঢ় অঙ্গীকার। (৩৩ : ৭)
সূরা সাদে আল্লাহ তা’আলা বলেন :
অর্থাৎ-এদের পূর্বেও রাসূলদেরকে মিথ্যাবাদী বলেছিল নূহের সম্প্রদায়, আদি ও বহু শিবিরের অধিপতি ফিরআউন। ছামুদ, লুত ও আয়কার অধিবাসী, তারা ছিল এক একটি বিশাল বাহিনী। এদের প্রত্যেকেই রাসূলগণকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করেছিল। ফলে তাদের ক্ষেত্রে আমার শাস্তি হয়েছে বাস্তব। (৩৮ : ১২-১৪)
সূরা গাফির তথা সূরা মুমিনে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
অর্থাৎ- এদের পূর্বে নৃহের সম্প্রদায় এবং তাদের পরে অন্যান্য দলও মিথ্যা আরোপ করেছিল। প্রত্যেক সম্প্রদায় নিজ নিজ রাসূলকে পাকড়াও করার অভিসন্ধি করেছিল এবং তারা অসার তর্কে লিপ্ত হয়েছিল, সত্যকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য। ফলে আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম এবং কত কঠোর ছিল আমার শাস্তি! এভাবে কাফিরদের ক্ষেত্রে সত্য হলো তোমার প্রতিপালকের বাণী-এরা জাহান্নামী। (৪০ : ৫-৬)
সূরা শূরায় মহান আল্লাহ বলেন;
অর্থাৎ-তিনি তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন দীন যার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি নূহকে আর যা ওহী করেছি। আমি তোমাকে এবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে এ বলে যে, তোমরা দীনকে প্রতিষ্ঠা কর এবং তাতে দলাদলি করো না। তুমি মুশরিকদেরকে যার প্রতি আহবান করছ তা তাদের নিকট দুর্বল মনে হয়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা দীনের প্রতি আকৃষ্ট করেন এবং যে তার অভিমুখী তাকে দীনের দিকে পরিচালিত করেন। (৪২ : ১৩)
وعيد . অর্থাৎ—এদের পূর্বেও সত্য প্রত্যাখ্যান করেছিল নূহের সম্প্রদায়, রাসাস ও ছামূদ সম্প্রদায়, আদ, ফিরআউন ও লুত সম্প্রদায় এবং আয়কার অধিবাসী ও তুব্বা সম্প্রদায়, তারা সকলেই রাসূলগণকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করেছিল। ফলে তাদের উপর আমার শাস্তি আপতিত হয়। (cto 3 SS-S8)
- 4 ‘ ‘ ል &, • ኣ ( ارم ፳ ላረ ^ ۶ ۷ ۸ / ۶ ام پس و قوم نوح بین قبل انتهم کاشوا فؤمنافاسپیقین : ۹۶۱۹چC5 SIIgl ۹۴۹۹ 11}* অর্থাৎ-আমি ধ্বংস করেছিলাম। এদের পূর্বে নৃহের সম্প্রদায়কে, তারা ছিল সত্যত্যাগী সম্প্রদায়। (৫১ : ৪৬)
সূরা নাজমে আল্লাহ তা’আলা বলেন :
অর্থাৎ—আর এদের পূর্বে নৃহের সম্প্রদায়কেও (আমি ধ্বংস করেছিলাম) তারা ছিল অতিশয় জালিম, অবাধ্য। (৫৩ ৪ ৫২) সূরা কামারে (৫০) তাঁর ঘটনা ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে।
Հ8V2
সূরা হাদীদে মহান আল্লাহ বলেনঃ
/ /と高 / 4 2 4 ۸?ری نئی ۔ / / / a a (, / a 2
অর্থাৎ-আমি নূহ এবং ইবরাহীমকে রাসূলরক্ৰপে প্রেরণ করেছিলাম এবং আমি তাদের বংশধরগণের জন্য স্থির করেছিলাম নবুওত ও কিতাব কিন্তু তাদের অল্প কিছু লোক সৎপথ অবলম্বন করেছিল এবং অধিকাংশই ছিল সত্যত্যাগী। (৫৭ : ২৬)
সূরা তাহরীমে মহান আল্লাহ বলেন :
অর্থাৎ-আল্লাহ কাফিরদের জন্য নূহ ও লুতের স্ত্রীর দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করছেন, তারা ছিল আমার বান্দাদের মধ্যে দুই সৎকর্মপরায়ণ বান্দার অধীন। কিন্তু তারা তাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল; ফলে নূহ ও লুত তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারল না এবং তাদেরকে বলা হলো, জাহান্নামে প্রবেশকারীদের সঙ্গে তোমরাও তাতে প্ৰবেশ কর। (VV 3 So)
কুরআন, হাদীস ও বিভিন্ন রিওয়ায়াতের তথ্য মোতাবেক আপনি সম্প্রদায়ের সঙ্গে নূহ (আ)-এর যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছিল তার সারমর্ম উল্লেখ প্রসঙ্গে ইমাম বুখারী (র) কর্তৃক বর্ণিত ইব্ন আব্বাস (রা)-এর হাদীসে পৃর্বেই আমরা উল্লেখ করে এসেছি যে, আদম (আ) ও নূহ (আ)-এর মধ্যে ব্যবধান ছিল দশ করন। তারা সকলেই ইসলামের অনুসারী ছিলেন। আর আমরা এও উল্লেখ করেছি যে, করন বলতে হয় তো প্ৰজন্ম কিংবা যুগ বুঝানো হয়েছে। তারপর এ সৎকর্মশীলদের করনসমূহের পর এমন কিছু পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়; যার ফলে সে যুগের অধিবাসীরা মূর্তিপূজার দিকে ঝুকে পড়ে। এ।( 654.68 1;/t_6%-এ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে ইব্ন আব্বাস (রা) সূত্রে ইমাম বুখারী (র) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস অনুযায়ী তাঁর করন ছিল এই যে, (ওয়াদ, সূওয়া, য়াগুছ, ইত্যাদি) এসব হলো নূহ (আ)-এর সম্প্রদায়ের কয়েকজন পুণ্যবান ব্যক্তির নাম। এদের মৃত্যুর পর শয়তান তাদের সম্প্রদায়ের প্রতি মন্ত্রণা দেয় যে, এরা যে সব স্থানে বসতেন তোমরা সে সব স্থানে কিছু মূর্তি নির্মাণ করে তাদের নামে সে সবের নামকরণ করে দাও। তখন তারা তাই করে। কিন্তু তখনও এগুলোর পূজা শুরু হয়নি। তারপর যখন তাদের মৃত্যু হয় এবং ইলম লোপ পায় তখন থেকে এ সবের পূজা শুরু হয়। ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, নূহ (আ)-এর সম্প্রদায়ের এ দেব-দেবীগুলো পরে আরবেও প্রচলিত হয়ে পড়ে। ইকরিমা, যাহহাক, কাতাদা এবং মুহাম্মদ ইব্ন ইসহাক (র)-ও অনুরূপ মত প্ৰকাশ করেছেন। ইব্ন জারীর (র) আলোচ্য আয়াতের তাফসীরে মুহাম্মদ ইব্ন কায়স (র)-এর বরাতে বলেন, তারা ছিলেন আদম (আ) ও নূহ (আ)-এর মধ্যবতী কালের পুণ্যবান ব্যক্তিবর্গ। তাদের
Հ8 Գ
বেশ কিছু অনুসারী ছিল। তারপর যখন তাদের মৃত্যু হয়, তখন তাদের অনুসারীরা বলল, আমরা যদি এঁদের প্রতিকৃতি তৈরী করে রাখি, তাহলে তাদের কথা স্মরণ করে ইবাদতে আমাদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে। তখন তারা তাদের প্রতিকৃতি নির্মাণ করে রাখে। তারপর যখন তাদের মৃত্যু হয় এবং অন্য প্রজন্ম আসে; তখন শয়তান তাদের প্রতি এ বলে প্ররোচণা দেয় যে, লোকজন তাদের উপাসনা করত এবং তাদের ওসীলায় বৃষ্টি প্রার্থীনা করত। তখন তারা তাদের পূজা শুরু করে দেয়। ইব্ন আবু হাতিম উরওয়া ইব্ন যুবোয়র সূত্রে বর্ণনা করেন যে, উরওয়া ইব্ন যুবোয়র বলেন, ওয়াদ য়াগুছ, য়াউক, সূওয়া ও নাসর আদম (আ)-এর সন্তান। ওয়াদ ছিলেন এদের বয়সে সকলের চাইতে প্রবীণ এবং সর্বাধিক পুণ্যবান ব্যক্তি।
ইব্ন আবু হাতিম বর্ণনা করেন যে, আবুল মুতাহ্যার বলেন, একদা আবু জাফর আল বাকির সালাতরত অবস্থায় ছিলেন। তখন লোকজন য়ায়ীদ ইব্ন মুহাল্লাবের কথা আলোচনা করছিল। সালাত শেষে তিনি বললেন, তোমরা য়ায়ীদ ইব্ন মুহাল্লাবের কথা বলছি। সে এমন স্থানে নিহত হয়, যেখানে সর্বপ্রথম গায়রুল্লাহর পূজা হয়েছিল। আবুল মুতাহ্যার বলেন, তারপর তিনি ওয়াদ সম্পর্কে বলেন, তিনি একজন পুণ্যবান এবং জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। মৃত্যুর পর বাবেলে জনতা তাঁর কবরের চতুপার্শ্বে সমবেত হয়ে শোক প্রকাশ করতে শুরু করে। ইবলীস তা দেখে মানুষের রূপ ধরে তাদের কাছে এসে বলল, এ ব্যক্তির জন্য তোমাদের হা-হুতাশ আমি লক্ষ্য করছি। আমি কি তোমাদের জন্য তাঁর অনুরূপ প্রতিকৃতি তৈরি করে দেব? তা তোমাদের মজলিসে থাকবে। আর তোমরা তাকে স্মরণ করবে। তারা বলল, হ্যা, দিন। ইবলীস তাদেরকে তার অনুরূপ প্রতিকৃতি তৈরি করে দিল। বৰ্ণনাকারী বলেন, আর তারা তা তাদের মজলিসে স্থাপন করে তাকে স্মরণ করতে শুরু করে। ইবলীস তাদেরকে তাকে স্মরণ করতে দেখে এবার বলল, আচ্ছা, আমি তোমাদের প্রত্যেকের ঘরে এর একটি করে মূর্তি স্থাপন করে দেই? তাহলে নিজের ঘরে বসেই তোমরা তাকে স্মরণ করতে পারবে। তারা বলল, হ্যা, দিন! বৰ্ণনাকারী বলেন, তখন ইবলীস প্রত্যেক গৃহবাসীর জন্য তাঁর একটি করে মূর্তি নির্মাণ করে দেয়। আর তারা তা দেখে দেখে তাকে স্মরণ করতে শুরু করে। বর্ণনাকারী বলেন, এভাবে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম তাকে দেবতা সাব্যস্ত করে আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাঁকে পূজা করতে শুরু করে। এ ওয়াদই সেই দেবতা; আল্লাহর পরিবর্তে সর্বপ্রথম যার পূজা করা হয়।
উপরোক্ত বক্তব্য প্রমাণ করে যে, এর প্রতিটি মূর্তিকেই কোন না কোন মানব গোষ্ঠী পূজা করেছিল। তাছাড়া বর্ণিত আছে যে, কালক্রমে তারা সে প্রতিকৃতিগুলোকে দেহবিশিষ্ট মূর্তিতে পরিণত করে। তারপর আল্লাহর পরিবর্তে তাদেরই উপাসনা শুরু হয়ে যায়। এসবের উপাসনার
ংখ্য পদ্ধতি ছিল। তাফসীরের কিতাবে যথাস্থানে আমরা তা উল্লেখ করেছি। সকল প্ৰশংসা আল্লাহরই জন্য।
সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে আছে যে, উম্মে সালামা ও উন্মে হাবীবা (রা) রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সামনে তাদের হাবশায় দেখে আসা মারিয়া’ নামক গির্জা এবং তার রূপ-সৌন্দর্য ও তাতে স্থাপন করে রাখা প্রতিকৃতির কথা উল্লেখ করলে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন : ‘তাদের নিয়ম ছিল তাদের মধ্যে সৎকর্মপরায়ণ কেউ মারা গেলে তার কবরের উপর তারা একটি উপাসনালয় নির্মাণ করত। তারপর তাতে তাঁর প্রতিকৃতি স্থাপন করে রাখত। আল্লাহর নিকট
Հ8Եr
মােটকথা, বিকৃতি যখন পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে এবং তাদের মধ্যে মূর্তিপূজার ব্যাপক প্রসার ঘটে তখন আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দা ও রসূল নূহ (আ)-কে প্রেরণ করেন। তিনি এক লা-শরীক ‘আল্লাহর ইবাদতের প্রতি আহবান জানান এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্যদের উপাসনা করতে নিষেধ করেন। এ নূহ (আ.)-ই সর্বপ্রথম রাসূল যাকে আল্লাহ তা’আলা পৃথিবীবাসীর কাছে প্রেরণ করেন। যেমন সহীহ বুখারী ও মুসলিমে নবী করীম (সা) থেকে আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণিত শাফা’আতের হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : ‘তারা আদম (আ)-এর কাছে এসে বলবে, হে আদম! আপনি মানব জাতির পিতা। আল্লাহ তা’আলা আপনাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন, আপনার মধ্যে তাঁর রূহ সঞ্চার করেছেন, তাঁর আদেশে ফেরেশতারা আপনাকে সিজদা করে এবং তিনি আপনাকে জান্নাতে বসবাস করতে দেন। আপনার রবের কাছে আপনি আমাদের জন্য একটু সুপারিশ করবেন কি? আমাদের অবস্থা তো দেখতেই পাচ্ছেন। তখন আদম (আ) বলবেন, আমার প্রতিপালক এত বেশি রাগান্বিত হয়েছেন যে, এত বেশি রাগান্বিত তিনি কখনো হননি এবং পরেও কখনো হবেন না। তিনি আমাকে বৃক্ষের ফল খেতে নিষেধ করেছিলেন, কিন্তু আমি তা অমান্য করি। নাফসী! নাফসী! তোমরা অন্য কারো কাছে যাও, তোমরা নূহের কাছে যাও। তখন তাঁরা নূহ (আ.)-এর নিকট গিয়ে বলবে, হে নূহ! আপনি পৃথিবীবাসীর কাছে প্রেরিত প্রথম রাসূল এবং আল্লাহ। আপনাকে ‘কৃতজ্ঞ বান্দা’ আখ্যা দিয়েছেন। আমরা কী অবস্থায় এবং কেমন বিপদে আছি তা কি আপনি দেখতে পাচ্ছেন না? আপনি আপনার প্রতিপালকের নিকট আমাদের জন্য একটু সুপারিশ করবেন কি? তখন তিনি বলবেন, আমার রব আজ এত বেশি রাগান্বিত হয়েছেন যে, এত রাগ ইতিপূর্বে তিনি কখনো করেননি এবং পরেও করবেন না। নাফসী! নাফসী! বৰ্ণনাকারী এভাবে হাদীসটি সবিস্তারে বর্ণনা করেন যেমনটি ইমাম বুখারী (র) নূহ (আ)-এর কাহিনীতে তা উল্লেখ করেছেন।
যা হোক, আল্লাহ তা’আলা নূহ (আ)-কে প্রেরণ করলে তিনি সম্প্রদায়-কে একমাত্র লা-শরীক আল্লাহর ইবাদত করার এবং তাঁর সঙ্গে কোন প্রতিকৃতি, মূর্তি ও তাগৃতের ইবাদত না করার এবং তাঁর একত্ব স্বীকার করে নেয়ার আহবান জানান এবং ঘোষণা দেন যে, তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, কোন রব নেই। যেমন, আল্লাহ তা’আলা তার পরবর্তী সকল নবী-রাসূলকে এ আদেশ দান করেন, যারা সকলেই তাঁরই বংশধর ছিলেন। যেমন আল্লাহ বলেন, ذرینه هم الباقین L14 (, ‘আর তার বংশধরদেরকেই আমি বংশ পরম্পরায় বিদ্যমান রেখেছি।’ (৩৭ : ৭৭) হযরত নূহ (আ.) ও ইবরাহীম (আ) সম্পর্কে বলেনঃ
‘এবং তাঁর বংশধরদের মধ্যে আমি নবুওত ও কিতাব রেখেছি।’ (৫৭ : ২৬) অর্থাৎ নূহ (আ)-এর পরে যত নবী এসেছিলেন, তারা সকলেই তাঁর বংশধর ছিলেন। এমনকি ইবরাহীম (अ)-७।
সূরা নাহলে আল্লাহ তা’আলা বলেন :
r = W s
Հ85
অর্থাৎ-আল্লাহর ইবাদত করার ও তাগৃতিকে বর্জন করার নির্দেশ দেয়ার জন্য আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি। (১৬ : ৩৬)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন ৪
অর্থাৎ—তোমার পূর্বে আমি যেসব রাসূল প্রেরণ করেছিলাম, তাদেরকে তুমি জিজ্ঞেস কর, আমি কি দয়াময় আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য সাব্যস্ত করেছিলাম, যাদের ইবাদত করা M37 (8S 38(t)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন :
অর্থাৎ—আমি তোমার পূর্বে এমন রাসূল প্রেরণ করিনি তার প্রতি এ ওহী ব্যতীত যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদত করা। (২১ : ২৫)
এ কারণেই নূহ (আঃ) তাঁর সম্প্রদায়কে বলেছিলেন :
অর্থাৎ-(হে আমার সম্প্রদায়!) তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ নেই। আমি তোমাদের জন্য এক মহা দিনের শাস্তির আশংকা করছি।
(°ላ 8 Qእs)
সূরা হ্রদে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ بل
অর্থাৎ—তােমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদত কৰ্ম্ম না। আমি (VSTANOWIK TESNJ <5 মর্মান্তিক দিনের শাস্তির আশংকা করছি। (১১ : ২৬)
অর্থাৎ-হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তোমরা কি সাবধান হবে না? (৭ : ৬৫)
মোটকথা, আল্লাহ তা’আলা একথা জানিয়ে দেন যে, নূহ (আঃ) তাঁর সম্প্রদায়কে আল্লাহর প্রতি দাওয়াতের যত পদ্ধতি আছে তার সবই প্রয়োগ করেছেন। রাতে-দিনে, গোপনে-প্রকাশ্যে কখনো উৎসাহ দিয়ে, কখনো বা ভয় দেখিয়ে। কিন্তু এর কোনটিই তাদের মধ্যে কার্যকর ফল বয়ে আনতে পারেনি। বরং তাদের অধিকাংশই গোমরাহী, সীমালজঘন এবং মূর্তিপূজায় অটল থাকে এবং সর্বক্ষণ তার বিরুদ্ধে শক্ৰতা করতে থাকে। তাকে ও তার ঈমানদার সঙ্গীদেরকে (১ম খণ্ড) ৩২
Հ@ Օ r
তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে থাকে এবং তাদেরকে প্রস্তরাঘাতে মেরে ফেলার ও দেশ থেকে বের করে দেয়ার ভয় দেখাতে থাকে। তারা তাদের ক্ষতিসাধন করে এবং এ ব্যাপারে সীমা ছাড়িয়ে যায়।
অর্থাৎ-তাঁর সম্প্রদায়ের প্রধানগণ বলেছিল, আমরা তো তোমাকে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে দেখতে পাচ্ছি। সে বলেছিল, হে আমরা সম্প্রদায়! আমাতে কোন ভ্ৰান্তি নেই, আমি তো জগতসমূহের প্রতিপালকের রাসূল। (অর্থাৎ তোমরা যে ধারণা করছি আমি ভ্রান্ত, আমি তা নই। বরং আমি সঠিক পথ ও হিদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত। আমি জগতসমূহের সে প্রতিপালকের রাসূল, যিনি কোন বস্তুকে ‘হও’ বললেই তা হয়ে যায়।) আমার প্রতিপালকের বাণী আমি তোমাদের কাছে পৌছাচ্ছি ও তোমাদেরকে হিতোপদেশ দিচ্ছি এবং তোমরা যা জান না, আমি তা আল্লাহর
নিকট হতে জানি। (৭ : ৬০-৬২)
বলাবাহুল্য যে, একজন রাসূলের শান এমনিই হওয়া দরকার যে, তিনি হবেন বাকপটু। তার ভাষা হবে সহজ-সরল ও প্রাঞ্জল, লোকদেরকে তিনি হিতোপদেশ দিবেন এবং আল্লাহ সম্পর্কে তার জ্ঞান হবে সর্বাধিক।
নূহ (আ)-এর বক্তব্যের জবাবে তারা বললঃ
অর্থাৎ-আমরা তো তোমাকে আমাদের মতই দেখছি; অনুধাবন না করে তোমার অনুসরণ করছে তারাই, যারা আমাদের মধ্যে অধম এবং আমরা আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব দেখছি না, বরং আমরা তোমাদেরকে মিথ্যাবাদী মনে করি। (১১ : ২৭)
নূহ (আ) মানুষ হয়ে রাসূল হওয়ায় তাঁর সম্প্রদায় বিস্মিত হয় এবং যারা তার অনুসরণ করেছিল তাদেরকে তাচ্ছিল্য করে ও হেয়াপ্রতিপন্ন করে। কথিত আছে যে, নূহ (আ)-এর বিরোধী সম্প্রদায় ছিল নেতৃস্থানীয় আর তাঁর অনুসারীরা ছিল সমাজের দুর্বল শ্রেণীর লোক। যেমন : রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস বলেছিলেন, নবী-রাসূলদের অনুসারীরা দুর্বল শ্রেণীরই হয়ে থাকেন। এর কারণ হলো-সত্য অনুসরণের ব্যাপারে তাদের সম্মুখে কোন প্রতিবন্ধকতা 20द न्मा।
বিরুদ্ধবাদীদের উক্তি এi_°L% -এর অর্থ হলো চিন্তা-ভাবনা ও বিচার-বিবেচনা না করে স্রেফ তোমার দাওয়াত শুনেহঁ। তারা সাড়া দিয়েছে। কিন্তু এ কটাক্ষটি মূলত এমনই একটি গুণ যে কারণে তারা প্ৰশংসা হাঁ। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট। কারণ প্রকাশ্য সত্য চাক্ষুস দর্শন ও চিন্তা-ভাবনার অপেক্ষা রাখে না। বরং তা প্ৰকাশ পাওয়া মাত্র তা স্বীকার করে নিয়ে তার অনুসরণ করাই আবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণেই নবী করীম (সা) আবু বকর সিদীক
G
(রা)-এর প্রশংসা করে বলেছিলেন : যাকেই আমি ইসলামের প্রতি আহবান করেছি। প্রত্যেকেই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিল। কিন্তু আবু বকর এর ব্যতিক্রম। কারণ তিনি এতটুকু বিলম্বও করেন নি। আর এ কারণেই ছাকীফার দিনেও কোনরূপ চিন্তা-বিবেচনা না করেই দ্রুত তার বায়আতি সম্পন্ন হয়। কেননা, সাহাবাগণের কাছে অন্যদের উপর তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ছিল দিবালোকের মত স্পষ্ট। আর এ কারণেই রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর খিলাফত সম্পর্কে কিছু লিখতে গিয়েও তা বাদ দিয়ে বলেছিলেনঃ ‘আল্লাহ ও ঈমানদারগণ আবু বকর (রা) ছাড়া আর কারো ব্যাপারে রায়ী হবেন না।’
নূহ (আঃ) তৃত্যুর ঈমাদৃত্যু স্ত্রীদের উদ্দেশে তাঁর সম্প্রদায়ের কাফিরদের – ‘تمه ደረ ሥ1 / W. M. a ( ላ « ሥ ላ 2ኃ ( く ۸2 تA ، . *3*。 . 8681,691 38 5ى-وما تُرى لكم علينا وبث فضلN101नाइ
ঈমান আনার পর আমাদের ওপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ পায়নি। আমরা বরং
তোমাদেরকে মিথ্যাবাদীই মনে করি। এর জবাবে নূহ (আঃ) বললেনঃ
অর্থাৎ- সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আমাকে বল, আমি যদি আমার প্রতিপালক প্রেরিত স্পষ্ট নিদর্শনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকি এবং তিনি যদি আমাকে তার নিজ অনুগ্রহ দান করে থাকেন, অথচ এ বিষয়ে তোমরা জ্ঞানান্ধ হও, আমি কি এ বিষয়ে তোমাদেরকে বাধ্য করতে পারি, যখন তোমরা তা অপছন্দ কর। (১৬ : ২৮)
এই হলো তাদেরকে সম্বোধনে নূহ (আ.)-এর কোমলতা অবলম্বন এবং সত্যের দাওয়াতের
ক্ষেত্রে তাদের সাথে নম্রতার অভিব্যক্তি। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন :
অর্থাৎ—তার সঙ্গে তােমরা নম্র কথা বলবে, হয়ত সে উপদের্শ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে। (২০ : 88)
অন্যত্র আল্লাহ তা’আলা বলেন, :,
অর্থাৎ—তুমি মানুষকে তােমার প্রতিপালকের পথে আহবান কর হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সঙ্গে আলোচনা কর সদ্ভাবে। (২১ : ১২৫)
ঠিক এ ধারায়ই নূহ (আঃ) বলেছিলেন :
অর্থাৎ- তোমরা আমাকে বল, আমি যদি আমার প্রতিপালক প্রেরিত স্পষ্ট নিদর্শনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকি এবং তিনি যদি আমাকে তার নিজ অনুগ্রহ (তথা নবুওত ও রিসালাত) দান
w
٣
ՀՓ Հ ज्ञाब्ल-दिशी ७ग्रान्न निशशा
করে থাকেন, অথচ তোমরা এ বিষয়ে জ্ঞানান্ধ হও, (অর্থাৎ তোমরা তা বুঝতে না পার ও তার দিশা না পাও,)। আমি কি এ বিষয়ে তোমাদেরকে বাধ্য করতে পারি (অর্থাৎ আমার কোন জোর চলে না,) যখন তোমরা তা অপছন্দ করা? (অর্থাৎ তোমরা যখন তা অপছন্দ কর তখন তোমাদের ব্যাপারে আমার কোন কৌশল চলে না।)
অর্থাৎ-হে আমার সম্প্রদায়! এর পরিবর্তে আমি তোমাদের নিকট ধন-সম্পদ চাই না। আমার পারিশ্রমিক তো আল্লাহরই কাছে অর্থাৎ তোমাদের কাছে তোমাদের দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণকর বাণী পৌছানোর বিনিময়ে তোমাদের কাছে আমি কোন পারিশ্রমিক চাই না। তা চাই আমি একমাত্র আল্লাহর কাছে, যার প্রতিদান আমার জন্য তোমরা আমাকে যা দিবে। তদপেক্ষা অনেক উত্তম ও স্থায়ী। (১১ : ২৯)
/Yy /Y (আ)-এর নিকট তাঁর দুর্বল শ্রেণীর অনুসারীদেরকে তার কাছ থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি করেছিল এবং এ দাবি পূরণ করা হলে তারা তাঁর দলে ভিড়বুে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
، به بر ۸۷ در ۱,۸2 / اس ۸
কিন্তু নূহ (আ) তা প্রত্যাখ্যান করে বললেন, : ২, 1;:43, ‘এরা এদের প্রতিপালকের
‘حمي سمير সঙ্গে সাক্ষ্যৎ করবে।’ অর্থাৎ আমার ভয় হয়, যদি আমি তাদের তাড়িয়ে দেই; তাহলে আল্লাহ তা’আলার কাছে আমার বিরুদ্ধে তারা জুড়িযােগ আনবে, তাই তিনি বললেনঃ
/.A*2 // くん% A*** // 4, .? / 、ノ* A・/ ^ / 、ハ4 / ويقوم من ينصرنى من الله ان طردتهم، افلا تذكرون. অর্থাৎ-আর হে আমার সম্প্রদায়! আমি যদি তাদেরকে তাড়িয়ে দেই, তবে আল্লাহর শাস্তি থেকে আমাকে কে রক্ষা করবে? তবুও কি তোমরা চিন্তা করবে না? (১১ : ৩০)
আর এ কারণেই কুরায়শ কাফিররা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট আম্মার, সুহায়ব, বিলাল ও খাকবাব (রা) প্রমুখ সমাজের দুর্বল শ্রেণীর মুমিনকে তাঁর সান্নিধ্য থেকে তাড়িয়ে দেয়ার যখন দাবি করেছিল; তখন আল্লাহ তা’আলা রাসূলুল্লাহ (সা)-কে এ কাজ করতে নিষেধ করে দেন। সূরা আন’আম ও সূরা কাহফে আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করেছি।
4,é 6,/ / A ሥ,?, ኦጄ4 ረ / / ል / ጎ,ሥ /,❖ 4,ሩ / . ጎ ء% %. A 8 عنرى خزائن الله ولا اعلم الغيب ولا اقول إنى مُلك قلا
› / ላ / // A / /-2る A/ Aを々タ*4
ஆபிப்ட் تُزهرى أغيتُكُمْ لَن يُؤتيهم اللّه خيرًا. آلله أقلم بمكافئ
أنفسهم إتى إِذَا لَمِنَ الظالميك. অর্থাৎ-আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ধন-ভাণ্ডার আছে আর না অদৃশ্য সম্বন্ধে আমি অবগত এবং আমি এও বলি না যে, আমি ফেরেশতা বরং আমি বান্দা ও রাসূল। আল্লাহ আমাকে যা অবগত করিয়েছেন তা ব্যতীত তাঁর ইলমের কিছুই আমি জানি না,
তিনি আমাকে যে কাজের শক্তি দান করেছেন; তা ব্যতীত কোন শক্তিই আমি রাখি না এবং তার
ՀՓv9
ইচ্ছা ব্যতীত আমার নিজের কোন উপকার ও অপকারের ক্ষমতা আমার নেই। তোমাদের দৃষ্টিতে (আমার অনুসারীদের মধ্যকার) যারা হেয় তাদের সম্বন্ধে আমি একথা বলি না যে, আল্লাহ তাদেরকে কখনোই মঙ্গল দান করবেন না। তাদের অন্তরে যা আছে তা আল্লাহ সম্যক অবগত। তাহলে আমি অবশ্যই জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হব। অর্থাৎ তাদের বিরুদ্ধে আমি এ সাক্ষ্য দেই না যে, আল্লাহর নিকট কিয়ামতের দিন তাদের জন্য কোন কল্যাণ নেই। তাদের সম্বন্ধে আল্লাহই ভালো জানেন এবং তাদের অন্তরে যা আছে অদূর ভবিষ্যতে আল্লাহ তার প্রতিফল দান করবেন। ভালো হলে ভালো আর মন্দ হলে মন্দ। (১১ : ৩১)
যেমন অন্যত্র তারা বলেছিল ৪
অর্থাৎ-আমরা কি তোমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করব। অথচ ইত্যরজনেরা তোমার অনুসরণ করছে? নূহ বলল, তারা কী করত তা আমার জানা নেই। তাদের হিসােব গ্ৰহণ তো আমার প্রতিপালকেরই কাজ; যদি তোমরা বুঝতে! মুমিনদেরকে তাড়িয়ে দেয়া আমার কাজ নয়। আমি তো কেবল একজন স্পষ্ট সতর্ককারী। (২৬ : ১১১-১১৪)
নূহ (আ) ও তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে এ বাদানুবাদ চলে।
w جمي ‘حمي اولین فنفيهم ألف سنة الأخميسثين عاما. فأخذهم الطوفان وهم
ظالمؤن .
অর্থাৎ-সে তাদের মধ্যে অবস্থান করেছিল পঞ্চাশ কম এক হাজার বছর। তারপর প্লাবন তাদেরকে গ্ৰাস করে। কারণ তারা ছিল সীমালজয়নকারী। (২৯ : ১৪)
অর্থাৎ এত দীর্ঘকাল ধরে দাওয়াত দেওয়া সত্ত্বেও তাদের অল্প সংখ্যক লোকই তার প্রতি ঈমান এনেছিল এবং প্রত্যেক প্রজন্ম পরবর্তীদেরকে নূহ (আ.)-এর প্রতি ঈমান না আনার এবং তার সঙ্গে বিবাদ ও বিরুদ্ধাচরণের ওসীয়ত করে যেত। সন্তান বয়োপ্ৰাপ্ত ও বোধসম্পন্ন হলে পিতা একান্তে তাকে নৃহের প্রতি জীবনে কখনো ঈমান না আনার ওসীয়ত করে দিত। তাদের সহজাত প্রকৃতিই ঈমান ও সত্যের বিরোধী ছিল।
এ জন্যই নূহ (আঃ) বলেছিলেন : ‘%s%%1134.14 5 6 তাঁরা কেবল দুষ্কৃতকারী ও কাফির জন্ম দিতে থাকবে। (৭১ : ২৭) / / て / x
SG8
অর্থাৎ-হে নুহ! তুমি আমাদের সঙ্গে বিতণ্ডা করেছ, তুমি বিতণ্ডা করেছ। আমাদের সঙ্গে অতিমাত্রায়. সুতরাং তুমি সত্যবাদী হলে আমাদেরকে যার ভয় দেখােচ্ছ তা আনয়ন কর। সে বলল, ইচ্ছা করলে আল্লাহই তোমাদের নিকট তা উপস্থিত করবেন এবং তোমরা তা ব্যর্থ করতে পারবে না। (১১ : ৩২-৩৩)
অর্থাৎ আমি তোমাদেরকে যার ভয় দেখাচ্ছি তা আনয়ন করার শক্তি আল্লাহর আছে। কোন কিছু তাকে ব্যর্থ করতে পারে না এবং কিছুই তাকে ব্যর্থকাম করতে পারে না। বরং তিনি কোন বস্তুকে বলেন ‘হও’ সাথে সাথে তা হয়ে যায়।
অর্থাৎ-আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিতে চাইলেও আমার উপদেশ তোমাদের উপকারে আসবে না, যদি আল্লাহ তোমাদেরকে বিভ্ৰান্ত করতে চান। তিনিই তোমাদের প্রতিপালক এবং তারই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তন করবে। (১১ : ৩৪)
অর্থাৎ আল্লাহ কাউকে বিপথগামী করতে চাইলে তাকে পথে আনবার ক্ষমতা কারো নেই। তিনিই যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা বিভ্ৰান্ত করেন, তিনি যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারেন। তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়; কে হিদায়াতের উপযুক্ত এবং কে বিভ্ৰান্ত হওয়ার যোগ্য সে সম্পর্কে জ্ঞানবান এবং পরম প্রজ্ঞা ও অকাট্য প্রমাণ তারই।
অর্থাৎ-নূহের প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছিল, যারা ঈমান এনেছে তারা ব্যতীত তোমার সম্প্রদায়ের আর কেউ কখনো ঈমান আনবে না। (এটা নূহের প্রতি তাঁর সম্প্রদায়ের শক্রতা ও দুর্ব্যবহারের সান্তুনা বাক্য। অর্থাৎ তাদের আচরণ তোমার কোন ক্ষতিসাধন করতে পারবে না।
কারণ সাহায্য নিকটে এবং আশ্চর্যজনক সংবাদ সম্মুখে আসছে।)
আর তুমি আমার তত্ত্বাবধানে ও আমার প্রত্যাদেশ অনুযায়ী নীেকা নির্মাণ কর এবং যারা সীমালজম্বন করেছে তাদের সম্পর্কে তুমি আমাকে কিছু বলো না। তারা তো নিমজ্জিত হবে। (SS 3 out-ba)
এর কারণ হলো, নূহ (আঃ) যখন তাদের সংশোধন ও মুক্তির ব্যাপারে নিরাশ হন এবং বুঝতে পারেন যে, তাদের মধ্যে কোন মঙ্গল নেই এবং সর্বপ্রকার আচরণ ও উচ্চারণে তার নির্যাতন, বিরুদ্ধাচরণ ও মিথ্যা প্ৰতিপন্ন করার শেষ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে, তখন তিনি তাদের
Só (ሱ
বিরুদ্ধে বদ দু’আ করেন। ফলে আল্লাহ তাঁর আহবানে সাড়া দেন এবং তাঁর দু’আ কবুল করেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা বলেন, :
অর্থাৎ-নূহ আমাকে আহবান করেছিল। আর আমি কত উত্তম সাড়া দানকারী। তাকে এবং তার পরিবারবর্গকে আমি উদ্ধার করেছিলাম মহা সংকট থেকে। (৩৭ : ৭৫-৭৬)
অর্থাৎ—ম্মরণ কর নূহকে, পূর্বে সে যখন আহবান করেছিল তখন আমি তার আহবানে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে ও তার পরিবারবর্গকে মহা সংকট থেকে উদ্ধার করেছিলাম।
অর্থাৎ-নূহ বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার সম্প্রদায় তো আমাকে অস্বীকার করছে। সুতরাং তুমি আমার ও তাদের মধ্যে স্পষ্ট মীমাংসা করে দাও এবং আমাকে ও আমার সঙ্গে যে সব মুমিন আছে তাদেরকে রক্ষা কর! (২৬ : ১১৭-১১৮)
کا کرکۂ انبوہ کفاؤنڈ لائنصژ
سمي في অর্থাৎ— নূহ তখন তাঁর প্রতিপালককে আহবান করে বলেছিল, আমি তো অসহায়। অতএব, তুমি প্রতিবিধান করা। (৫৪ : ১০) গু34…< LK) 2:23, ৩১%
* ۳ سمي حسيح عي অর্থাৎ-হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সাহায্য কর, কারণ তারা আমাকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করে | (২৩ : ৩৯)
অর্থ তাদের অপরাধের জন্য তাদেরকে নিমজ্জিত করা হয়েছিল এবং পরে তাদেরকে দাখিল করা হয়েছিল আগুনে, তারপর তারা কাউকেও আল্লাহর মুকাবিলার সাহায্যকারী পায়নি।
নূহ আরো বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক! পৃথিবীতে কাফিরদের মধ্য থেকে কোন গৃহবাসীকে অব্যাহতি দিও না।
তুমি তাদেরকে অব্যাহতি দিলে তারা তোমার বান্দাদেরকে বিভ্রান্ত করবে এবং জন্ম দিতে থাকবে কেবল দুষ্কৃতকারী ও কাফির। (৭১ : ২৫-২৭)
ՀՓ Ն
মোটকথা, যখন তাদের কুফৱী অনাচার-পাপাচারসমূহ ও নবীর বন্দ দু’আ একত্র হয় তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে নৌকা নির্মাণ করার আদেশ করেন। সে এমন এক ‘বিশাল জাহাজ যার কোন নজীর ছিল না। সাথে সাথে আল্লাহ তা’আলা নূহ (আ)-কে আগাম বলে রাখেন যে, যখন তার আদেশ আসবে এবং অপরাধীদের প্রতি তার অপ্রতিরোধ্য আযাব পতিত হয়ে যাবে; তখন যেন তিনি তাদের ব্যাপারে নমনীয়তা না দেখান। কেননা হতে পারে যে, নিজ সম্প্রদায়ের প্রতি অবতীর্ণ আযাব স্বচক্ষে দেখে তাদের ব্যাপারে তার মনে দয়ার উদ্রেক হবে। কারণ সংবাদ কখনো চাঙ্গুস দেখার সমান হয় না। আর এ জন্যই আল্লাহ্ তা’আলা বলেন :
অর্থাৎ-যারা সীমালজান করেছে তাদের ব্যাপারে তুমি আমাকে কিছু বলো না, তারা তো নিমজ্জিত হবে। সে নীেকা নির্মাণ করতে লাগল এবং যখনই তার সম্প্রদায়ের প্রধানরা তার নিকট দিয়ে যেত তাকে উপহাস করত। (অর্থাৎ নূহ (আঃ) তাদেরকে যে আযাবের ভয় দেখিয়েছিলেন তা সংঘটিত হওয়া সুদূর পরাহত মনে করে তারা তাকে নিয়ে ঠাট্টা করত) (১১ : bԳ-ՓԵ)
তার জবাবে নূহ (আঃ) বললেনঃ
اث تشخزوايكا مُرِنَا تُشحَرُ مِنكُمْ كما تُشخّرون.
অর্থাৎ-তোমরা যদি আমাদেরকে উপহাস কর তবে আমরাও তোমাদেরকে উপহাস করব যেমন তোমরা উপহাস করছি। অর্থাৎ তোমাদের কুফরীর উপর অটল থাকা এবং তোমাদের অবাধ্যতার জন্য যা তোমাদের জন্য আযাব ডেকে আনে–আমরাও তোমাদেরকে উপহাস
করব। (১১ : ৩৮) عكثم ፖ
فسوف تعلمؤنَّ مَنْ يأتثبو عذابة يُخزيو ويجب عليكم عَذَا تُقيم. অর্থাৎ—তোমরা অচিরেই জানতে পারবে যে, কার উপর আসবে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি আর কার উপর আপতিত হবে স্থায়ী শাস্তি। (১১ : ৩৯)
বলাবাহুল্য যে, দুনিয়াতে জঘন্যতম কুফারী ও চরম অবাধ্যতা তাদের মজ্জাগত বিষয় হয়ে গিয়েছিল। আখিরাতেও তাদের অবস্থা অনুরূপই হবে। কারণ, কিয়ামতের দিন তারা তাদের কাছে রাসূল আগমন করার বিষয়টিও অস্বীকার করবে।
যেমন ইমাম বুখারী (র) বর্ণনা করেন যে, আবু সাঈদ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : (কিয়ামতের দিন) নূহ (আ.) ও তাঁর উম্মত উপস্থিত হবেন। তখন আল্লাহ তা’আলা। বলবেন, তুমি কি দীনের বাণী পৌঁছিয়েছিলো? নূহ (আঃ) বলবেন, জী হ্যা, হে আমার রব! তারপর আল্লাহ তা’আলা তাঁর উম্মতকে জিজ্ঞাসা করবেন, নূহ কি তোমাদের নিকট দীনের দাওয়াত পৌঁছিয়েছিল? তারা বলবে, না, আমাদের নিকট কোন নবীই আসেননি। তখন আল্লাহ তা’আলা নূহ (আ)-কে বলবেন, তোমার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে কে? তিনি বলবেন, মুহাম্মদ (সা) ও
ՀՓ Գ
তাঁর উম্মত। তখন উম্মতে মুহাম্মদী এ সাক্ষ্য দেবে যে, ‘নূহ (আঃ) তাঁর তাবলীগের দায়িত্ব পালন করেছেন।’
এ প্রসঙ্গেই আল্লাহ তা’আলা বলেন :
الز شنول علیگ شویدا. অর্থাৎ-এভাবে আমি তোমাদেরকে এক মধ্যপন্থী জাতিরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছি; যাতে তোমরা মানব জাতির জন্য সাক্ষীস্বরূপ এবং রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষীস্বরূপ হবে। (২ : ১৪৩) 1, …।( অৰ্থ gএ • J| তথা ইনসাফ বা মধ্যপন্থা। মোটকথা, এ উম্মত তাঁর সত্যবাদী নবীর সাক্ষ্যের সপক্ষে এ সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, আল্লাহ তা’আলা নূহ (আ)-কে সত্যসহ প্রেরণ করেছিলেন, তার উপর সত্য নাযিল করেছিলেন এবং তাকে সত্যের অনুসরণ করার আদেশ দিয়েছিলেন আর তিনি তাঁর উম্মতের নিকট পরিপূর্ণরূপে তা পৌঁছে দিয়েছিলেন। দীনের ক্ষেত্রে তাদের জন্য উপকারী এমন কোন বিষয় সম্পর্কে তাদেকে আদেশ দিতে ছাড়েন নি এবং ক্ষতিকর এমন কোন বিষয় ছিল না, যা করতে তিনি নিষেধ করেননি। সকল নবীর শান এমনই হয়ে থাকে। এমনকি তিনি তার সম্প্রদায়কে দাজাল সম্পর্কে পর্যন্ত সতর্ক করে দিয়েছিলেন, যদিও তাদের আমলে দাজ্জালের আবির্ভাবের কোন আশংকাই ছিল না। কওমের প্রতি দয়া অনুগ্রহবশত তিনি তা করেছিলেন।
ইমাম বুখারী (র) বর্ণনা করেন যে, ইব্ন উমর (রা) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) একদিন জনসাধারণের মধ্যে দাঁড়িয়ে আল্লাহ তা’আলার শানে উপযুক্ত প্ৰশংসা বর্ণনা করেন। তারপর দাজালের কথা উল্লেখ করে বললেন, : ‘তোমাদেরকে আমি তার ব্যাপারে সাবধান করছি।’ এমন কোন নবী নেই যে, আপনি সম্প্রদায়কে তার ব্যাপারে সাবধান করেন নি। নূহ (আ.) ও আপন সম্প্রদায়কে তার ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছিলেন। তবে তার ব্যাপারে তোমাদেরকে আমি এমন একটি কথা বলে দেই যা কোন নবী তার সম্প্রদায়কে বলেননি। তোমরা জেনে রেখ, সে এক-চক্ষুবিশিষ্ট। কিন্তু আল্লাহ্ তা’আলা এক-চক্ষুবিশিষ্ট নন।
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে যথাক্রমে আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : ‘আমি কি তোমাদেরকে দাজ্জাল সম্পর্কে এমন একটি কথা বলব যা কোন নবী তার সম্প্রদায়কে বলেন নি? সে হলো কানা। আর সে নিজের সাথে জান্নাত ও জাহান্নামের অনুরূপ কিছু নিয়ে আসবে। যাকে সে জান্নাত বলবে, আসলে তাই হবে জাহান্নাম। আর আমি তোমাদেরকে তার সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছি, যেমন নূহ (আঃ) তাঁর সম্প্রদায়কে সতর্ক করেছিলেন।’
কোন কোন পূর্বসূরি আলিম বলেন, আল্লাহ তা’আলা যখন নূহ (আ.)-এর দু’আ কবুল করেন, তখন তাঁকে নীেকা নিমাণের উদ্দেশ্যে একটি বৃক্ষ রোপণ করার আদেশ দেন। ফলে নূহ (আ) একটি বৃক্ষ রোপণ করে একশ বছর অপেক্ষা করেন। তারপর পরবর্তী শতাব্দীতে তা কেটে কাঠ করে নেন। কারো কারো মতে, চল্লিশ বছর পরে। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
মুহাম্মদ ইব্ন ইসহাক (র) বর্ণনা করেন যে, সে নীেকাটি শাল কাঠ দ্বারা নির্মাণ করা হয়েছিল। কেউ কেউ বলেন, দেবদারু, কাঠ দ্বারা। আর এটি হলো তাওরাতের বক্তব্য। ছাওরী
(১ম খণ্ড) ৩৩
Հ@ Եr
বলেন, আল্লাহ তা’আলা নূহ (আ)-কে আরো নির্দেশ দিয়েছিলেন যেন নৌকাটি দৈর্ঘে আশি হাত, প্রস্থে পঞ্চাশ হাত করে তৈরি করেন। তার ভিতরে ও বাইরে আলকাতরা দ্বারা প্রলেপ দেন এবং তার এমন সরু গলুই নির্মাণ করেন, যা পানি চিরে অগ্রসর হতে পারে। কাতাদা বলেন, তার দৈর্ঘ ছিল তিনশ হাত আর প্রস্থ পঞ্চাশ হাত। আমি তাওরাতে এমনই দেখেছি।
হাসান বসরী (র) বলেন, দৈর্ঘ ছ’শ হাত আর প্রস্থ তিনশ হাত। ইব্ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত দৈর্ঘ এক হাজার দু’শ হাত প্ৰস্থ ছ’শ হাত। কারো কারো মতে, দৈর্ঘ দু’হাজার হাত আর প্রস্থ এক’শ হাত। এরা সকলেই বলেন, তার উচ্চতা ছিল ত্ৰিশ হাত আর তা ত্রিতল বিশিষ্ট छिल।
প্রতি তলা দশ হাত করে। নিচের তলা কীট-পতঙ্গ ও জীব-জানোয়ারের জন্য, দ্বিতীয় তলা মানুষের জন্য আর উপর তলা পাখ-পাখালির জন্য। তার দরজা ছিল পাশে এবং উপর দিকে ঢাকনা দ্বারা আবৃত। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
অর্থাৎ-নূহ বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সাহায্য কর, কারণ তারা আমাকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করছে। তারপর আমি তার প্রতি ওহী নাযিল করলাম যে, তুমি আমার তত্ত্বাবধানে ও আমার ওহী অনুযায়ী নীেযান নির্মাণ করা। অর্থাৎ তোমাকে দেয়া আমার আদেশ অনুযায়ী এবং তোমার নির্মাণ কাৰ্য আমার সরাসরি তত্ত্বাবধানে তুমি নীেযান নির্মাণ করা যাতে তা
নিৰ্মাণু আমি তোমাকে সঠিক নির্দেশনা দুড় পারি;
অর্থাৎ-তারপর যখন আমার আদেশ আসবে ও উনুন উথলে উঠবে; তখন তাতে তুলে নিও প্রতিটি জীবের এক এক জোড়া এবং তোমার পরিবার-পরিজনকে, তাদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে পূর্বে সিদ্ধান্ত হয়ে আছে তারা ব্যতীত। আর জালিমদের সম্বন্ধে তুমি আমাকে কিছু বলে। না, তারা তো নিমজ্জিত হবে। (২৩ : ২৭)
এখানে আল্লাহ্ তা’আলা নূহ (আ)-কে আগাম নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন যে, যখন তাঁর আদেশ আসবে এবং তাঁর শাস্তি আপতিত হবে, তখন যেন তিনি বংশ ধারা রক্ষার জন্য সে নীেকায় প্রত্যেক জীব, সকল প্রাণী ও খাদ্য-দ্রব্য প্রভৃতির এক এক জোড়া উঠিয়ে নেয় এবং নিজের সাথে কাফিরদের ব্যতীত নিজের পরিবার-পরিজনকে তুলে নেন। তাঁর পরিবারের যারা কাফির তাদেরকে এজন্য বাদ দেয়া হয়েছে যে, তাদের ব্যাপারে অপ্রতিরোধ্য বন্দ দু’আ কার্যকর হয়ে গেছে এবং তারা আযাবে নিপতিত হওয়া অবধারিত হয়ে গেছে। আর আল্লাহ তা’আলা। তাকে এ আদেশও দিয়ে রাখেন যে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের মধ্যে আযাব এসে পড়লে যেন তিনি আল্লাহর নিকট কোন সুপারিশ না করেন।
RQ’s
জামহুর উলামার কাছে,,,।( দ্বারা ভূ-পৃষ্ঠকে বুঝানো হয়েছে। এ হিসাবে আয়াতের অর্থ হলো, যখন ভূমি সর্বদিক থেকে উৎসারিত হবে এমনকি আগুনের আধার উনুন থেকে পর্যন্ত পানির ফোয়ারা নিৰ্গত হবে। ইব্ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে,,,,।( হলো ভারতের একটি কুয়া। শাবী কুয়াটি কুফার এবং কাতাদা (র) আরব উপত্যকায় অবস্থিত ছিল বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আলী ইব্ন আবু তালিব (রা) বলেন, ১১,,।( দ্বারা প্ৰভাতের আলো বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ এ সময়ে তুমি প্রতি জীবের এক এক জোড়া এবং তোমার পরিবার-পরিজনকে নীেযানে তুলে নিও। তবে এ অভিমতটি গরীব।’ পর্যায়ের।
অন্যত্র আল্লাহ আ’আলা বলেন :
অর্থাৎ- এভাবে যখন আমার আদেশ আসল এবং উনুন উথলে উঠল; তখন আমি বললাম, এতে তুমি প্রত্যেক জীবের এক এক জোড়া এবং যাদের বিরুদ্ধে পূর্বে সিদ্ধান্ত হয়েছে তারা ব্যতীত তোমার পরিবার-পরিজনকে এবং যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আরোহণ করাও। আর অল্প সংখ্যক ব্যতীত কেউ ঈমান আনেনি।
এখানে আদেশ দেওয়া হয়েছে যে, তাদের প্রতি আযাব। আপতিত হলে যেন তিনি তাতে প্রত্যেক জীবের এক এক জোড়া তুলে নেন। আর আহলে কিতাবদের গ্রন্থে আছে, আল্লাহ তা’আলা নূহ (আ)-কে প্রতি হালাল পশুপাখির সাত জোড়া করে, আর নিষিদ্ধগুলোর নর-মাদা দুই জোড়া করে তুলে নেয়ার আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এ কথাটি কুরআনের ৬১%), শব্দের অর্থের সাথে সংঘাতপূর্ণ, যদি একে আমরা কর্মকারক হিসেবে গণ্য করি। আর যদি একে ৩24.3% শব্দের তাকীদ রূপে সাব্যস্ত করে কর্মকারক উহা মানি; তাহলে কোন সংঘাত থাকে না। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
কেউ কেউ বলেন এবং ইব্ন আব্বাস (রা) থেকেও এরূপ বৰ্ণিত আছে যে, পক্ষীকুলের মধ্যে সর্বপ্রথম নীেকায় যা প্রবেশ করেছিল। তাহলো টিয়া আর প্রাণীকুলের মধ্যে সর্বশেষে যা প্রবেশ করেছিল তাহলো গাধা এবং ইবলীস গাধার লেজের সাথে ঝুলে প্রবেশ করে।
ইব্ন আবু হাতিম আসলাম (র) সূত্রে বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন, নূহ (আ) নীেযানে প্ৰতি জীবের এক এক জোড়া তুলে নিলে তাঁর সংগীরা বললেন, সিংহের সঙ্গে আমরা কিভাবে বা গৃহপালিত প্রাণীরা কিভাবে নিরাপদ বোধ করবে? তখন আল্লাহ্ তা’আলা সিংহকে জুরাক্রান্ত করে দেন। পৃথিবীতে এটাই ছিল সর্বপ্রথম জ্বরের আবিভাব। তারপর তাঁরা ইদুরের ব্যাপারে অনুযোগ করে বললেন, ‘পাজিগুলো তো আমাদের খাদ্যদ্রব্য ও জিনিসপত্র সব নষ্ট করে ফেলল! তখন আল্লাহ তা’আলার নির্দেশে সিংহ হাঁচি দেয়। এতে বিড়াল বের হয়ে আসে। বিড়াল দেখে ইদুররা সব আত্মগোপন করে।’ এ হাদীসটি ‘মুরসাল পর্যায়ের। ৬.*$1 4f1716 06:11, … … এর অর্থ হলো, কাফির হওয়ার কারণে তোমার পরিবারের যাদের ধ্বংস অনিবাৰ্য হয়ে গেছে তাদের ব্যতীত অন্য সকলকে নৌকায় তুলে নিও। এদের মধ্যে নূহ (আ)-এর পুত্ৰ য়ামও ছিল যে নিমজ্জিত হয়েছিল। এর আলোচনা পরে আসছে।
SNo
ኦ / ህ ሉ ሥ ሥ
5%| 5_4_% এর অর্থ—তোমার উম্মতের যারা তোমার সাথে ঈমান এনেছে তাদেরকেও তুমি নীেকায় তুলে লও।
( / در w تي جميF আল্লাহ্ তা’আলা বলেন :’%1 ¥ $1 4_4_% 50%। t_%, অর্থাৎ— সম্প্রদায়ের মধ্যে নূহ (আ)-এর এত দীর্ঘ সময় অবস্থান এবং রাতে-দিনে নরম-গরম নানা প্রকার কথা ও কাজের মাধ্যমে দীনের দাওয়াত দেয়া সত্ত্বেও অল্প সংখ্যক ব্যতীত কেউ ঈমান আনেনি।
নূহ (আ.)-এর সঙ্গে নীেকায় যারা ছিল, তাদের সংখ্যা কত এ ব্যাপারে আলিমগণের মতভেদ আছে। ইব্ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত যে, নারী-পুরুষ মিলে তারা ছিলেন আশিজন। কা’ব। ইব্ন আহবাব থেকে বর্ণিত যে, তাঁরা ছিলেন বাহাত্তর জন্য। কারো কারো মতে দশজন। কেউ কেউ বলেন, তারা ছিলেন নূহ, তাঁর তিন পুত্র ও য়াম-এর স্ত্রীসহ তার চার পুত্ৰবধু, যে য়াম মুক্তির পথ থেকে সরে গিয়েছিল। তবে এ অভিমতটি স্পষ্ট আয়াতের পরিপন্থী। কারণ নূহ (আ)-এর সঙ্গে তাঁর পরিবারের লোকজন ব্যতীত অন্য একদল ঈমানদার লোকও ছিল বলে কুরআনে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। যেমন নূহ (আঃ) বলেছিলেন : ৩ × 4 ৬১%%,। পুর্ব ১৬ .6, -3201অর্থাৎ–’আমাকে ও আমার সঙ্গী মুমিনগণকে মুক্তি দাও’ (২৬ : ১১৮) {
কেউ কেউ বলেন, তাঁরা ছিলেন সাতজন। আর নূহ (আ)-এর স্ত্রী তথা তাঁর সব ক’টি ছেলে হাম, সাম, য়াফিস ও য়াম-আহলে কিতাবদের মতে যার নাম কানআন এবং তাঁর এ ছেলেটিই ডুবে মরেছিল। এদের মা প্লাবনের আগেই মারা গিয়েছিল। কেউ কেউ বলেন, সেও নিমজ্জিতদের সঙ্গে ডুবে মরেছিল। তার কুফরীর কারণে সেও অনিবাৰ্যরূপে ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। আর আহলে কিতাবদের মতে সে নীেকায় ছিল। একথাটি সঠিক হলে বলতে হবে যে, সে প্লাবনের পরেই কুফরী করেছিল কিংবা তাকে কিয়ামত দিবসের জন্য অবকাশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্ৰথম অভিমতটিই যুক্তিসঙ্গত। سمم
কারণ নূহ (আঃ) বলেছিলেন : .)لا تذر على الأرض من الكافرين دیار অর্থাৎ- তুমি পৃথিবীতে কাফিরদের একটি গৃহবাসীকেও অব্যাহতি দিও না। (৭১ : ২৬) আল্লাহ তৃতা’আলা दळान्?
অর্থাৎ- যখন তুমি ও তোমার সঙ্গীরা নৌযানে আসন গ্ৰহণ করবে তখন বলবে সমস্ত
ংসা আল্লাহরই যিনি আমাদেরকে জালিম সম্প্রদায় থেকে উদ্ধার করেছেন। আরো বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে এমনভাবে অবতরণ করাও যা হবে কল্যাণকর, আর তুমিই শ্রেষ্ঠ অবতারণকারী। (২৩ : ২৮-২৯)
এ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা নূহ (আ)-কে তাঁর প্রতিপালকের প্রশংসা করার আদেশ দিয়েছেন। কারণ তিনি এ নীেযানকে তার বশীভূত করে দিয়ে তা দিয়ে তাকে উদ্ধার করেছেন, তার ও তার সম্প্রদায়ের মধ্যে মীমাংসা করে দিয়েছেন এবং যারা তার বিরুদ্ধাচরণ করেছিল।
ABS
এবং তাকে মিথ্যা প্ৰতিপন্ন করেছিল তাদের শাস্তি দানের মাধ্যমে তার প্রাণ জুড়িয়েছেন। যেমন আল্লাহ্ তা’আলা বলেন :
অর্থাৎ- যিনি জোড়াসমূহের প্রত্যেককে সৃষ্টি করেন এবং যিনি তােমাদের জন্য সৃষ্টি করেন এমন নীেযান ও পশু যাতে তোমরা আরোহণ করা। যাতে তোমরা তাদের পিঠে স্থির হয়ে বসতে পার। তারপর তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ স্মরণ কর, যখন তোমরা তার উপর স্থির হয়ে ‘বস এবং বল, পবিত্র ও মহান তিনি যিনি এদেরকে আমাদের বশীভুত করে দিয়েছেন, যদিও আমরা এদেরকে বশীভূত করতে সমর্থ ছিলাম না। আমরা আমাদের প্রতিপালকের কাছে অবশ্যই প্রত্যাবর্তন করব। (৪০ : ১২-১৪)
এভাবে যাবতীয় কাজের শুরুতে দু’আ করার আদেশ দেওয়া হয়ে থাকে, যাতে তা মঙ্গলজনক ও বরকতময় এবং তার শেষ পরিণাম শুভ হয়। রাসূলুল্লাহ (সা) যখন হিজরত করেন তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে বলেছিলেন :
অর্থাৎ-বল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে প্রবেশ করাও কল্যাণের সাথে এবং
আমাকে বের করাও কল্যাণের সাথে এবং তোমার কাছ থেকে আমাকে দান কর সাহায্যকারী শক্তি। (১৭৪৮০) বলাবাহুল্য যে, নূহ (আ) এ উপদেশ মত কাজ করেন।
وَقَالَ اث كثوا فيها يشم الته مجبها ومُرُسلها. إنه وبث العُقُوة لأجية.
অর্থাৎ- এবং বলেন, তোমরা এতে আরোহণ কর, আল্লাহর নামে এর গতি ও স্থিতি, আমার প্রতিপালক অবশ্যই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। অর্থাৎ এর চলার শুরু এবং শেষ আল্লাহরই। নামে। আমার প্রতিপালক ক্ষমাশীল ও দয়ালু হওয়ার সাথে সাথে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তিদাতাও বটে। অপরাধী সম্প্রদায় থেকে তার শাস্তি রোধ করার সাধ্য কারো নেই। যেমনটি আপতিত হয়েছিল তাদের প্রতি, যারা আল্লাহর সাথে কুফরী করেছিল এবং তাকে বাদ দিয়ে অন্যের পূজা <Gsse I (SSg8S)
و هی تجربی به فیثی موج کالجبال : SIgl۹e۱۹۲۹) «C۶۹ অর্থাৎ—পাহাড়তুল্য তরঙ্গৰ্মালার মধ্যে তা তাদেরর্কে র্নিয়ে চলল। (১১ : ৪২) তা এভাবে হয়েছিল যে, আল্লাহ্ তা’আলা আকাশ হতে এমন বৃষ্টি বর্ষণ করেন, যা পৃথিবীতে ইতিপূর্বে কখনো দেখা যায়নি এবং এমন বৃষ্টি পরেও আর কখনো হবার নয়—যা ছিল
ՀԿՀ
মশকের খোলা মুখের মত অঝোর ধারায়। আর আল্লাহ্ তা’আলা ভূমিকে আদেশ দেন, ফলে তা সর্বদিক থেকে উৎসারিত হয়ে উঠে।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
অর্থাৎ- তখন নূহ তার প্রতিপালককে আহ্বান করে বর্লেছিল, আমি তো অর্সহায়, আঁতএব, তুমি প্রতিবিধান কর। ফলে আমি উন্মুক্ত করে দিলাম আকাশের দ্বার প্রবল বারি বর্ষণে এবং মাটি থেকে উৎসারিত করলাম ঝর্ণাধারা। তারপর সকল পানি মিলিত হলো এক সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুসারে। তখন নূহকে আরোহণ করালাম কাঠ ও পেরেক নির্মিত এক নীেযানে যা চলত আমার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে। এটা ছিল প্রতিশোধ তার পক্ষ থেকে যাকে (নূহকে)
প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। (৫৪ : ১০-১৪)
ইব্ন জারীর (র) প্রমুখ ঐতিহাসিক বর্ণনা করেন যে, কিবতীদের বর্ষপঞ্জী অনুযায়ী এ মহাপ্লাবন ‘আব’ মাসের ১৩ তারিখে শুরু হয়েছিল। আল্লাহ তা’আলা বলেন :
অর্থাৎ- যখন জলোচ্ছাস হয়েছিল তখন আমি তোমাদেরকে আরোহণ করিয়েছিলাম নীেযানে, আমি তা করেছিলাম তোমাদের শিক্ষার জন্যে এবং এজন্য যে, শ্রুতিধর কান তা সংরক্ষণ করে। (৬৯ : ১১-১২)
অনেক মুফাসসির বলেন, পানি পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ার পনের হাত উপর পর্যন্ত উচু হয়েছিল। আহলি কিতাবদের অভিমতও এটাই। কেউ কেউ বলেন, আশি হাত। সে প্লাবনে সমগ্ৰ পৃথিবীর সমভূমি, পাথুরে ভূমি, পাহাড়, পর্বত ও বালুকাময় প্রান্তর সবই প্লাবিত হয়েছিল, ভূপৃষ্ঠে ছোট-বড় কোন একটি প্রাণীও অবশিষ্ট ছিল না। ইমাম মালিক (র) যায়দ ইব্ন আসলাম (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, সে যুগের অধিবাসীরা সমতল ভূমি ও পাহাড়-পর্বত সবকিছু পরিপূর্ণ করে রেখেছিল। আবদুর রহমান ইব্ন যায়দ ইব্ন আসলাম (রা) বলেন, পৃথিবীর প্রতিটি ভূখণ্ডেরই কেউ না কেউ মালিক ছিল। ইবৃন আবু হাতিম এ দু’টি বর্ণনা দিয়েছেন।
অর্থাৎ— নূহ তার পুত্র, যে তাদের থেকে পৃথক ছিল, তাকে আহবান করে বলল, হে আমার পুত্র! আমাদের সঙ্গে আরোহণ কর এবং কাফিরদের সঙ্গী হয়ে না।
سمي
ՀՆO
সে বলল, আমি এমন এক পর্বতে আশ্রয় নেব যা আমাকে প্লাবন থেকে রক্ষা করবে। সে বলল, আজ আল্লাহর বিধান থেকে রক্ষা করার কেউ নেই, যাকে আল্লাহ দিয়া করবেন। সে ব্যতীত। এরপর তরঙ্গ তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দিল এবং সে নিমজ্জিতদের অন্তর্ভুক্ত হলো। (sy 3 8 S-8W0)
এ পুত্ৰই হলো সাম, হাম ও য়াফিছ-এর ভাই য়াম। কেউ কেউ বলেন, এর নাম কান আন। কাফির ও বদ-আমল হওয়ায় সে পিতার দীন-ধর্মের বিরুদ্ধাচরণ করে। ফলে ধ্বংসপ্ৰাপ্তদের সঙ্গে সেও ধ্বংস হয়ে যায়। অপরদিকে তার দীন-ধর্মের সমর্থক অনেক অনাত্মীয়ও তার পিতার সঙ্গে মুক্তিলাভ করেন।
অর্থাৎ— এরপর বলা হলো, হে পৃথিবী! তুমি তোমার পানি গ্ৰাস করে নাও এবং হে আকাশ! ক্ষান্ত হও। এরপর বন্যা প্রশমিত হলো এবং কার্য সমাপ্ত হলো, নীেক জুদী পর্বতের উপর স্থির হলো এবং বলা হলো, জালিম সম্প্রদায় ধ্বংস হোক। (১১ : ৪৪)
অর্থাৎ প্লাবনে গাইরুল্লাহর পূজারীদের সকলে সমূলে নিশ্চিহ্ন হওয়ার পর আল্লাহ্ তা’আলা পৃথিবীকে তার পানি গ্ৰাস করে নেয়া এবং আকাশকে বারি বর্ষণ ক্ষান্ত করার আদেশ
দেন। ZL, 11 J. : অর্থ পানি পূর্বে যা ছিল তার চেয়ে কমে গেল। আর ‘S’। –অর্ণ অর্থ আল্লাহ তা’আলা ইলম ও তার নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুসারে তাদের প্রতি যে আযাব ও ধ্বংস
M ኣህሥ .ሥ/ A ም / . «
আপতিত হওয়ার কথা ছিল তা বাস্তবায়িত হলো। .وقيل بعدا للقوم الظالمين
অর্থাৎ- কুদরতের ভাষায় ঘোষণা দেয়া হলো যে), ওরা রহমত ওঁ মাগফিরাত থেকে দূর হোক। যেমন আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
অর্থাৎ- তারপর তারা তাকে মিথ্যাবাদী প্ৰতিপন্ন করে। ফলে আমি তাকে ও তার সঙ্গে যারা নীেকায় ছিল তাদেরকে উদ্ধার করি এবং যারা আমার নিদর্শনসমূহ প্রত্যাখ্যান করেছিল
তাদেরকেও নিমজ্জিত করি। তারা ছিল এক অন্ধ সম্প্রদায়। (৭ : ৬৪)
অর্থাৎ–আর তারা তাকে মিথ্যাবাদী প্ৰতিপন্ন করে। তারপর তাকে ও তার সঙ্গে যা নীেকায় ছিল তাদেরকে আমি উদ্ধার করি এবং তাদেরকে স্থলাভিষিক্ত করি ও যারা আমার নিদর্শনসমূহকে প্রত্যাখ্যান করেছিল তাদেরকে নিমজ্জিত করি। সুতরাং দেখ, যাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিল তাদের পরিণাম কী হয়েছিল? (১০ : ৭৩)
ՀՆ8
অর্থাৎ–এবং আমি তাকে সাহায্য করেছিলাম। সে সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যারা আমার নিদর্শনাবলী অস্বীকার করেছিল, তারা ছিল এক মন্দ সম্প্রদায়। এজন্য তাদের সকলকেই আমি নিমজিত করেছিলাম। (২১ : ৭৭)
অর্থাৎ–তারপর আমি তাকে ও তার সঙ্গে যারা ছিল তাদেরকে রক্ষা করলাম বোঝাই
নীেযানে। তারপর অবশিষ্ট সকলকে নিমজ্জিত করলাম। এতে অবশ্যই রয়েছে নিদর্শন, কিন্তু তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী নয় এবং তোমার প্রতিপালক! তিনি তো পরাক্রমশালী, পরম VīRN।( (RV 8 ddd-dRNR)
অর্থাৎ–তারপর আমি তাকে এবং যারা নীেকায় আরোহণ করেছিল তাদেরকে রক্ষা করলাম ረ 1 ኃ‛ /A/*%の。
এবং বিশ্বজগতের জন্য একে করলাম একটি নিদর্শন। (২৯ : ১৫) 14:48, L· · · · · · তারপর অবশিষ্ট সকলকে আমি নিমজ্জিত করি। (৩৭-৮২) •
অর্থাৎ–আমি একে রেখে দিয়েছি। এক নিদর্শনরূপে। অতএব, উপদেশ গ্ৰহণকারী কেউ আছে কি? কি কঠোর ছিল আমার শান্তি ও সতর্কবাণী! কুরআনকে আমি সহজ করে দিয়েছি
উপদেশ গ্রহণের জন্য, কে আছে উপদেশ গ্রহণের জন্য? (G8 3 SG-Sa)
অর্থাৎ–তাদের অপরাধের জন্য তাদেরকে নিমজ্জিত করা হয়েছিল এবং পরে তাদেরকে দাখিল করা হয়েছিল আগুনে; তারপর তারা কাউকেও আল্লাহর মুকাবিলায় সাহায্যকারী পায়নি। নূহ আরো বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক! পৃথিবীতে কাফিরদের মধ্য থেকে কোন
গৃহবাসীকে অব্যাহতি দিও না। তুমি তাদেরকে অব্যাহতি দিলে তারা তোমার বান্দাদেরকে বিভ্রান্ত করবে এবং জন্ম দিতে থাকবে কেবল দুষ্কৃতকারী ও কাফির। (৭১ : ২৫-২৭)
ՀՆ(?
বলাবাহুল্য যে, আল্লাহ তা’আলা নূহ (আ)-এর বদদু’আ কবুল করেছিলেন। সমস্ত প্রশংসা ও অনুগ্রহ তারই। ফলে তাদের একটি প্ৰাণীও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায়নি।
ইমাম আবু জাফর ইব্ন জারীর ও আবু মুহাম্মদ ইব্ন আবু হাতিম আপন আপনি তাফসীরে উন্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা)-এর বরাতে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : নূহের সম্প্রদায়ের কারো প্ৰতি যদি আল্লাহ। দয়া করতেন, তাহলে অবশ্যই শিশুর মায়ের প্রতি দয়া করতেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেন, : নূহ (আঃ) তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যে (পঞ্চাশ কম) এক হাজার বছর অবস্থান করেন এবং বৃক্ষ রোপণ করে একশ’ বছর অপেক্ষা করেন। বৃক্ষটি বড় হয়ে পোক্ত হলে তা কেটে তা দিয়ে নীেকা নির্মাণ করেন। নীেকা নির্মাণকালে সম্প্রদায়ের লোকেরা তাঁর নিকট দিয়ে অতিক্রম করত, তাকে ঠাট্টা করত এবং বলত, তুমি ডাঙ্গায় নীেকা নির্মাণ করছ, এ চলবে কিভাবে? নূহ (আঃ) বলতেন, অচিরেই তোমরা জানতে পারবে।
যখন তিনি নৌকা নির্মাণ শেষ করলেন এবং পানি উৎসারিত হলো ও তা অলিতে-গলিতে ঢুকে পড়ল, তখন একটি শিশুর মা তার ব্যাপারে আশংকা বোধ করল। সে তাকে অত্যন্ত স্নেহ করত। অগত্যা শিশুটিকে নিয়ে সে এক পাহাড়ের এক-তৃতীয়াংশ উপরে গিয়ে উঠে। পানি বাড়তে বাড়তে তার পর্যন্ত পৌছুলে এবার সে শিশুটিকে নিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে ওঠে। এবার পানি তার ঘাড় পর্যন্ত পৌছুলে সে তার দু হাত দ্বারা শিশুটিকে উপরে তুলে ধরে। তারপর তারা দুজনই ডুবে যায়। আল্লাহ। যদি তাদের কাউকে দয়া করতেন, তাহলে ঐ শিশুর মাকে অবশ্যই দয়া করতেন।
এ হাদীসটি গরীব’ পর্যায়ের। কা’ব আল-আহবার ও মুজাহিদ প্রমুখ থেকে এর অনুরূপ কাহিনী বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিও কা’ব আল-আহবারের ন্যায় কারো থেকে মওকুফ হওয়ার সম্ভাবনাই অধিক। আল্লাহ ভালো জানেন।
মোটকথা, আল্লাহ্ তা’আলা কাফিরদের একটি গৃহবাসীকেও অবশিষ্ট রাখেননি। সুতরাং কোন কোন মুফাসসির কিভাবে ধারণা করেন যে, আওজ ইব্ন উনুক মতান্তরে ইব্ন আনাক নূহ (আ)-এর পূর্ব থেকে মূসা (আ)-এর আমল পর্যন্ত বেঁচে ছিল। অথচ তাঁরাই বলেন যে, সে ছিল সীমালংঘনকারী, উদ্ধত ও বিরুদ্ধাচারী কাফির। তারা আরো বলেন যে, সে ছিল আদমের কন্যা আনাকের জারয। সন্তান। সমুদ্রের তলদেশ থেকে মাছ ধরে এনে সে সূর্যের তাপে তা সিদ্ধ করত। নূহ (আ)-কে সে উপহাস ছলে বলত, তোমার এ ছোট্ট পেয়ালাটি কি হে? তারা আরো উল্লেখ করেন যে, তার উচ্চতা ছিল তিন হাজার তিনশ তেত্ৰিশ হাত ছয় ইঞ্চি। এ ধরনের আরো অনেক অলীক কাহিনী রয়েছে। এ সংক্রান্ত বিবরণসমূহ এতই প্রসিদ্ধ যে, তাফসীর ও ইতিহাস ইত্যাদির বহু গ্রন্থে যদি এসব কথার উল্লেখ না থাকত; তাহলে আমরা তা আলোচনাই করতাম না। তাছাড়া এসব কথা যুক্তি এবং নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়েতের পরিপন্থী।
যুক্তি বলে, আল্লাহ তা’আলা নূহ (আ)-এর পুত্রকে তার কুফরীর কারণে ধ্বংস করবেন, অথচ তার পিতা হলেন উম্মতের নবী ও ঈমানদারদের প্রধান আর আওজ ইব্ন আনাক বা আনাককে ধ্বংস করবেন না, অথচ সে হলো চরম অত্যাচারী ও অবাধ্য; এটা হতেই পারে না। তাছাড়া অপরাধীদের কাউকে আল্লাহ। দয়া করবেন না, এমনকি শিশুর মাকেও না, শিশুকেও না, (১ম খণ্ড) ৩৪—
NRWWW
আর এ স্বেচ্ছাচারী, অবাধ্য, চরম পাপাচারী কাফির ও বিতাড়িত শয়তানকে অব্যাহতি দিবেন, এটা তো হতে পারে না!
নির্ভরযোগ্য রিওয়ায়তের ব্যাপারে বলা যায়- আল্লাহ্ তা’আলা বলেন :
/ a (, / ፩ / ስ / Gሥ2
‘তারপর আমি অন্যদেরকে নিমজ্জিত করি।’,16:24,( الاخرين
প্রতিপালক! পৃথিবীতে কাফিরদের কোন গৃহবাসীকে তুমি অব্যাহতি দিও না।’ (৭১ : ২৬)
তাছাড়া উক্ত মুফাসসিরগণ তার যে উচ্চতার কথা উল্লেখ করেছেন তা সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হাদীসের পরিপন্থী, যাতে বলা হয়েছে নবী করীম (সা) বলেছেন : সৃষ্টির সময়
আদম (আ)-এর উচ্চতা ছিল। ষাট হাত। তারপর থেকে তা কমতে কমতে বর্তমান অবস্থায় এসে পৌঁছেছে।
এ হলো নিষ্পাপ, সত্যবাদী এমন এক মহান সত্তার উক্তি, যিনি মনগড়া কোন কথা বলেন না, যা প্ৰত্যাদেশ হয় কেবল তা-ই বলেন। তাঁর মতে, আদম (আ) থেকে এ যাবত মানুষের উচ্চতা ক্রমেই কমছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত এভাবে কমতে থাকবে।
তাঁর এ বক্তব্য প্রমাণ করে যে, আদমের সন্তানদের মধ্যে কাউকে আদম অপেক্ষা দীর্ঘ পাওয়া যায়নি। এমতাবস্থায় তাঁর এ তথ্য বর্জন করে আহলি কিতাবদের সেসব মিথ্যাবাদী কাফিরদের অভিমত কিভাবে গ্রহণ করা যেতে পারে, যারা আল্লাহ্ তা’আলার নাযিলকৃত কিতাবসমূহকে পরিবর্তন ও বিকৃত করে ফেলেছে এবং তার প্রচুর অপব্যাখ্যা করেছে? এ-ই যেখানে অবস্থা, সেখানে একান্তই তাদের নিজস্ব অভিমত এবং বর্ণনা সম্পর্কে তাদের উপর কতটুকু নির্ভর করা চলে? আমাদের ধারণা, আওজ ইব্ন আনোক সম্পর্কিত এ তথ্য তাদেরই একদল নাস্তিক ও পাপাচারীর স্বকপোলকল্পিক উক্তি, যারা ছিল নবীদের শত্রু। আল্লাহ ভালো
Til(AA |
তারপর আল্লাহ্ তা’আলা নূহ (আ) কর্তৃক তাঁর পুত্রের ব্যাপারে তাঁর প্রতিপালকের কাছে ফরিয়াদ করার এবং অবগতি লাভের উদ্দেশ্যে তার নিমজ্জিত হওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করার কথা উল্লেখ করেন। প্রশ্ন করার কারণ হলো এই যে, আপনি আমার পরিবার-পরিজনকে আমার সাথে রক্ষা করার ওয়াদা করেছিলেন। আর এও তো তাদেরই একজন। অথচ সে নিমজ্জিত হলো। এর উত্তরে বলা হলো, সে তােমার পরিবারভুক্ত নয়, যাদেরকে রক্ষা করার ওয়াদা আমি তোমাকে দিয়েছিলাম অর্থাৎ আমি কি তোমাকে এ কথা বলিনি যে, তোমার পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করবো। তবে তাকে নয় যার বিরুদ্ধে পূর্বেই ধ্বংসের সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। তোমার এ পুত্র তো তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ পূর্বেই তা আমি বলে দিয়েছিলাম যে, কুফরীর কারণে এ নিমজ্জিত হবে। এজন্যই তো ভাগ্য তাকে ঈমানদারদের পরিবেশ থেকে সরিযে নেয়। পরিণামে সে কাফির ও সীমালংঘন কারীদের দলের সঙ্গে নিমজ্জিত হয়েছে।
Հ ՆԳ
তারপর আল্লাহ তা’আলা বলেন, :
অর্থাৎ- বলা হলো, হে নূহ! অবতরণ করা আমার প্রদত্ত শান্তিসহ এবং তোমার প্রতি ও যে সমস্ত সম্প্রদায় তোমার সঙ্গে আছে তাদের প্রতি কল্যাণসহ; অপর সম্প্রদায়সমূহকে আমি জীবন উপভোগ করতে দেব, পরে আমার পক্ষ থেকে মর্মত্যুদ শাস্তি তাদেরকে স্পর্শ করবে। (»» 3 8 br)
এ হলো নূহ (আ.)-এর প্রতি সে সময়কার আদেশ, যখন পানি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে সরে গিয়েছিল, তা চলাচল ও অবস্থান উপযোগী হয়েছিল এবং দীর্ঘ ভ্রমণের পর জুদী পর্বতের পৃষ্ঠদেশে স্থির হয়ে থাকা নীেকা থেকে নেমে যাওয়ার সুযোগ হয়ে উঠেছিল। জুদী জযিরা অঞ্চলের একটি প্রসিদ্ধ পর্বতের নাম। পর্বত সৃষ্টির অধ্যায়ে আমরা এর আলোচনা করে এসেছি।
হলো, তুমি নিরাপদে এবং তোমার প্রতি এবং তোমার 8د بشلاو ميتا وبركاتر ভবিষ্যত বংশধরদের প্রতি বরকতসহ অবতরণ করা। এখানে ভবিষ্যত বংশধর বলতে শুধু নূহ
(আ)-এর বংশধর। এজন্য বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তা’আলা নূহ (আ) ব্যতীত তার ঈমানদার সঙ্গীদের অন্য কারো বংশ ও উত্তরসূরি সৃষ্টি করেননি।
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ . …’, q%j ** وجَعَلْنَا دَرَيّشة আমি তার বংশধরকেই অবশিষ্ট রেখেছি। (৩৭ : ৭৭) অতএব, যত আদম সন্তান আজ ভূ-পৃষ্ঠে আছে তারা সকলেই নূহ (আ)-এর তিন পুত্ৰ সাম, হাম ও য়াফিস-এর বংশধর।
ইমাম আহমদ (র) বর্ণনা করেন যে, সামুরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : সাম আরবের আদি পুরুষ, হাম আবিসিনিয়ার আদি পুরুষ এবং য়াফিছ রূমের আদি পুরুষ।
আর ইমাম তিরমিয়ীও হাদীসটি হুবহু বৰ্ণনা করেছেন। শায়খ আবু ইমরান ও ইব্ন আবদুল বারুর বলেন যে, ইমরান ইব্ন হুসায়ন (রা) সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে অনুরূপ বৰ্ণিত আছে।
উপরোক্ত হাদীসে রূম দ্বারা প্রথম রূম বুঝানো হয়েছে। এরা হলো গ্ৰীক জাতি। এদের বংশধারা রূমী ইব্ন লিবতী ইব্ন ইউনান ইব্ন য়াফিস ইব্ন নূহ (আ.) পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে। সাঈদ ইব্ন মুসায়্যাব সূত্রে বর্ণিত হাদীসে আছে যে, তিনি বলেছেন : নূহ (আ)-এর তিন পুত্ৰ জন্মলাভ করে। সাম, য়াফিস ও হাম। আবার এ তিনজনের প্রত্যেকের তিনটি করে পুত্র জন্ম নেয়। সাম-এর পুত্ররা হলো আরব, ফারিস ও রূম। য়াফিস-এর পুত্ররা হলো তুর্ক, সাকালিবা ও য়াজুজ-মাজুজ এবং হামের পুত্ররা হলো কিবৃত, সূদান ও বারবার।
হাফিজ আবু বকর বাযযার তাঁর মুসনাদে বর্ণনা করেন যে, আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : ‘নূহের ঔরসে সাম, হাম ও য়াফিস জন্মগ্রহণ করেন। তারপর সামের ঔরসে আরব, ফারিস ও রূমরা জন্মগ্রহণ করে। এদের মধ্যে য়াফিছ-এর ঔরসে জন্ম নেয় য়াজুজ-মা’জুজ, তুর্ক ও সাকালিবা। এদের মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। আর হামের ঔরসে
ՀՆԵ
জন্ম নেয় কিবৃত, বারবার ও সূদান। এ বর্ণনাটি মারফু নাকি মুরসাল পর্যায়ের এ নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
কথিত আছে যে, নূহ (আ)-এর তিন পুত্রের জন্ম প্লাবনের পরেই হয়েছিল। প্লাবনের পূর্বে তার ঔরসে কানআনের জন্ম হয়েছিল, যে নিমজ্জিত হয়ে যায় এবং তার অপর পুত্র আবির-এর মৃত্যু প্লাবনের পূর্বেই হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সঠিক কথা হলো, তার তিন পুত্র তাঁর সঙ্গে নীেকায় ছিলেন। তাদের মাতা এবং স্ত্রীগণও তাদের সঙ্গে ছিলেন। এটাই তাওরাতের ভাষ্য। আরো বর্ণিত আছে যে, হাম নীেকায় তার স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গম করেন। ফলে নূহ (আ) তার জন্য বাদ দুআ করেন যেন তার এ বীর্য দ্বারা কুশ্রী সন্তান সৃষ্টি করা হয়। পরিণামে তাঁর একটি কালো সন্তান জন্ম নেয়। সে হলো সুদানের আদি পুরুষ কানআন ইব্ন হাম। বরং ঘটনাটি সম্পর্কে কথিত আছে যে, হাম তার পিতাকে ঘুমন্ত অবস্থায় বিবস্ত্র অবস্থায় দেখেও তার সতর আবৃত করে দেননি। পরে তার অপর দু’ভাই তা আবৃত করে দেন। এজন্য নূহ (আঃ) তার জন্য এ বাদ দুআ করেন, যেন তার শুক্রের বিকৃতি ঘটে এবং তার সন্তানগণ যেন তার ভাইদের দাস হয়ে থাকে।
ইমাম আবু জাফর ইব্ন জারীর ইব্ন আব্বাস (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন : হাওয়ারীগণ ঈসা ইব্ন মরিয়মকে বললেন, নূহ (আ)-এর নীেযানে ছিলেন এমন একজন লোককে আপনি আমাদের জন্য যদি পুনজীবিত করে দিতেন তাহলে তার কাছে আমরা নূহ (আ)-এর নীেযানের বিবরণ শুনতে পেতাম। ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, ফলে ঈসা (আ) তাদেরকে নিয়ে কিছুদূর অগ্রসর হয়ে একটি মাটির ঢিবির নিকট উপনীত হন এবং তা থেকে এক মুষ্টি মাটি হাতে নিয়ে বললেন, তোমরা কি জান এগুলো কি? তারা বলল, আল্লাহ ও তার রাসূলই ভালো জানেন। ঈসা (আ) বললেন, এ হলো নূহ-এর পুত্র হাম-এর পায়ের গিট। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) বলেন, তারপর তিনি হাতের লাঠি দ্বারা ঢিবিতে আঘাত করে বললেন, আল্লাহর আদেশে উঠে দাড়াও। সঙ্গে সঙ্গে তিনি (হাম ইব্ন নূহ) মাথা থেকে ধূলা-বালি ঝাড়তে ঝাড়তে উঠে দাড়ালেন। তার চুল পাকা দেখে ঈসা (আ) জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি এ অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করেছিলেন? জবাবে হাম বললেন, : না, বরং যুবক অবস্থায়ই আমার মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু আমি ধারণা করেছিলাম, এ বুঝি কিয়ামত তাতেই আমার চুল পেকে যায়।
ঈসা (আ) বললেন, আমাদেরকে নূহের নীেকার একটি বিবরণ দিন তো! জবাবে তিনি বললেন, : তার দৈর্ঘ ছিল এক হাজার দু’শ হাত আর প্রস্থ ছিল ছয়শ হাত। এটি ছিল তিনতলা বিশিষ্ট। একতলায় ছিল জীব-জানোয়ার ও হিংস্র পশ্বাদি। একতলায় মানুষ এবং আরেক তলায় পাখি। জীব-জানোয়ারের মল অধিক হয়ে গেলে আল্লাহ তা’আলা নূহ (আ.)-এর প্রতি ওহী নাযিল করলেন যে, তুমি হাতীর লেজটা উচিয়ে ধর। তিনি তা-ই করলেন। ফলে তার মধ্য থেকে একটি শূকর ও একটি শূকরী বেরিয়ে আসে। সঙ্গে সঙ্গে তারা মল খেতে শুরু করে। আবার ইদুর যখন নৌকা ছিদ্র করতে শুরু করে দেয়, তখন আল্লাহ তা’আলা নূহ-এর প্রতি প্রত্যাদেশ করেন যে, তুমি সিংহের দুচক্ষুর মাঝখানে আঘাত কর। তিনি তাই করলেন। ফলে তার নাকের ছিদ্র থেকে একটি বিড়াল এ একটি বিড়ালী বের হয়ে এসে সঙ্গে সঙ্গে ইদুরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
তখন ঈসা (আ) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, নূহ (আ) কিভাবে জানতে পেরেছিলেন যে, গোটা পৃথিবী নিমজ্জিত হয়ে গেছে? হাম বললেন : সংবাদ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তিনি একটি কাক প্রেরণ করেছিলেন। কাকটি একটি মড়া দেখতে পেয়ে তা খেতে আরম্ভ করে। এ জন্য নূহ (আ) তার জন্য বন্দ দুআ করেন, যেন সে সর্বদা ভীত থাকে। এ কারণেই কাক ঘড়-বাড়িতে থাকে না। তারপর তিনি কবুতর প্রেরণ করেন। কবুতরটি ঠোঁটে করে একটি যায়তুন পাতা এবং পায়ে করে কিছু কাদা মাটি নিয়ে আসে। এতে নূহ (আ) বুঝতে পারলেন যে, সমগ্ৰ ভূ-ভাগ নিমজ্জিত হয়ে গেছে। তখন তিনি তার গলায় একটি সবুজ বেষ্টনী দিয়ে দেন এবং তার জন্য দুআ করলেন, যেন সে লোকালয়ে ও নিরাপদে থাকতে পারে। তখন থেকেই কবুতর ঘরে থাকতে
শুরু করে |
ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, তারপর হাওয়ারীগণ বললেন, : হে আল্লাহর রাসূল! একে আমরা আমাদের পরিবার-পরিজনের কাছে নিয়ে যাব কি? এ আমাদের সঙ্গে বসে আমাদের সাথে কথাবার্তা বলবেন! ঈসা (আ) বললেন, এমন ব্যক্তি কিভাবে তোমাদের অনুগমন করবে: যার রিযিক অবশিষ্ট নেই! ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, তারপর ঈসা (আ) বললেন, আল্লাহর আদেশে আপনি পূর্বাবস্থায় ফিরে যান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাটিতে রূপান্তরিত হয়ে যান। এটি একান্তই একটি ‘গরীব’ পর্যায়ের বর্ণনা।
আলবা ইব্ন আহমার ইকরিম (রা) সূত্রে এবং তিনি ইব্ন আব্বাস (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, নীেকায় নূহ (আ)-এর সঙ্গে আশিজন পুরুষ এবং তাঁদের পরিবার-পরিজন ছিলেন। নীেকায় তাঁরা একশ পঞ্চাশ দিন অবস্থান করেন। আল্লাহ তা’আলা প্রথমে নীেকাটি মক্কা অভিমুখী করে দেন। ফলে তা বায়তুল্লাহর চতুষ্পার্শ্বে চল্লিশ দিন যাবত ঘুরতে থাকে। তারপর তাকে জুদীর দিকে ফিরিয়ে দিলে তথায় গিয়ে তা স্থিত হয়। তখন নূহ (আ) পৃথিবীর সংবাদ সংগ্রহের জন্য একটি কাক প্রেরণ করেন। কাকটি গিয়ে একটি মড়ার উপর ঝাপিয়ে পড়ে। এতে তার ফিরতে বিলম্ব হয়ে যায়। ফলে নূহ (আ) এবার একটি পায়রা প্রেরণ করেন। পায়রা তার দু’পায়ে কাদা মাটি মাখা অবস্থায় একটি যায়তুন পাতা নিয়ে ফিরে আসে। এতে নূহ (আঃ) বুঝতে পারলেন যে, পানি নেমে গিয়েছে। তাই তিনি জুদী পাহাড় থেকে নিচে নেমে আসেন এবং একটি পল্লী নির্মাণ করে তার আশিটি নামকরণ করে দেন। ফলে হঠাৎ একদিন তাদের মুখের বুলি আশিটি ভাষায় পরিণত হয়ে যায়। তার একটি হলো আরবী। তখন তাঁরা কেউ কারো ভাষা বুঝত না। নূহ (আ) একজনের কথা অপরজনকে বুঝিয়ে দিতেন।
কাতাদা (র) প্রমুখ বলেন, রজব মাসের দশম তারিখে তাঁরা নীেকায় আরোহণ করে একশ’ পঞ্চাশ দিন ভ্ৰমণ করেন এবং জুদীর উপর স্থিত অবস্থায় তাদের নিয়ে নৌকাটি একমাস অবস্থান করে। আর মুহাররম মাসের আশুরা দিবসে তারা নৌকা থেকে বেরিয়ে আসেন। ইব্ন জারীর (র) এর সমর্থনে একটি মারফু হাদীসও বর্ণনা করেছেন। আর সেদিন তারা রোযাও রেখেছিলেন।
ইমাম আহমদ (র) বর্ণনা করেন যে, আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) একদিন কতিপয় ইহুদীর নিকট দিয়ে অতিক্রম করেন। তারা সেদিন আশুরার দিবসের রোযা রেখেছিল।
ՀԳO
তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এ কিসের রোযা? তাঁরা বলল, সেই দিন যেদিন আল্লাহ তা’আলা মূসা (আ) ও বনী ইসরাঈলকে নিমজ্জিত হওয়া থেকে উদ্ধার করেন এবং ফিরআউন ডুবে মরে। আর এদিনে (নূহ আ-এর) নীেকা জুদী পর্বতে স্থিত হয়। ফলে নূহ ও মূসা (আঃ) আল্লাহর কৃতজ্ঞতা স্বরূপ রোযা রেখেছিলেন। একথা শুনে নবী করীম (সা) বললেন, ‘মূসা (আ)-এর উপর আমার হকই বেশি এবং এদিনে রোযা রাখার আমিই বেশি হকদার। আর সাহাবাদেরকে তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যকার যারা আজ রোযা রেখেছে, তারা যেন তা পূর্ণ করে আর যারা খাদ্য গ্ৰহণ করেছে তারা যেন দিনের বাকি অংশে পানাহার না করে। সহীহ বুখারীতে অন্য সূত্রে হাদীসের সমর্থন রয়েছে। তবে এ প্রসঙ্গে নূহ (আ)-এর উল্লেখ গরীব পর্যায়ের।
পক্ষান্তরে, বেশ কিছু মূৰ্থ লোক এ কথা বর্ণনা করে থাকে যে, সেদিন তাঁরা তাদের সঙ্গে থাকা খাদ্য-দ্রব্যের অবশিষ্ট টুকু এবং শস্যাদি পিষে খেয়েছিলেন এবং নীেকার অন্ধকারে থাকার দরুন হ্রাসপ্রাপ্ত দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধির জন্য সুরমা ব্যবহার করেছিলেন, এর কোনটিই সঠিক নয়। এসবই হলো বনী ইসরাঈল সূত্রে বর্ণিত ভিত্তিহীন কথা, যার উপর মোটেই নির্ভর করা যায় না এবং যার অনুসরণ করা চলে না। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
মুহাম্মদ ইব্ন ইসহাক (র) বলেন, আল্লাহ তা’আলা যখন সে প্লাবন বন্ধ করার ইচ্ছা! করলেন, তখন তিনি ভূ-পৃষ্ঠের উপর এক ধরনের বায়ু প্রেরণ করেন। এতে পানি শান্ত হয়ে যায় ও পৃথিবীর ঝরনাসমূহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পানি হ্রাস পেতে শুরু করে। তাওরাতওয়ালাদের ধারণা মতে, নীেকার স্থিতি ছিল রজবের আঠার তারিখে এবং শাওয়ালের প্রথম তারিখে পর্বতসমূহের চূড়া দৃষ্টিগোচর হয়। এরপর চল্লিশদিন অতিবাহিত হওয়ার পরে নূহ (আ) নীেকার বাতায়ন খুলে ফেলেন। তারপর পানির অবস্থা দেখে আসার জন্য একটি কাক প্রেরণ করেন। কিন্তু সে আর ফিরে না আসায় তিনি একটি কবুতর প্রেরণ করেন। কবুতর এ সংবাদ নিয়ে ফিরে আসে যে, সে পা রাখার এতটুকু স্থানও পায়নি। নূহ (আ) হাত পেতে কবুতরটি ধরে নীেকায় ঢুকিয়ে রাখেন।
এরপর আরও সাতদিন অতিক্রান্ত হলে পানির অবস্থা দেখে আসার জন্য তিনি আবারও কবুতরটি প্রেরণ করেন। কিন্তু এবার আর সে সহসা ফিরে আসল না। সন্ধ্যার সময় পায়রাটি একটি যায়তুন পাতা মুখে করে ফিরে আসে। এতে নূহ (আঃ) বুঝতে পারলেন যে, এবার ভূপৃষ্ঠ থেকে পানি নেমে গেছে। এরপর আরো সাতদিন অবস্থান করে তিনি পায়রাটিকে আবারো প্রেরণ করেন। কিন্ত এবার সে আর তার নিকট ফিরে যায়নি। এতে নূহ (আঃ) বুঝতে পারলেন যে, এবার পানি শুকিয়ে গেছে। মোটকথা, আল্লাহ তা’আলার প্লাবন প্রেরণ এবং নূহ (আ)-এর কবুতর প্রেরণের মাঝে এক বছর পূর্ণ হয়ে দ্বিতীয় বছরের প্রথম তারিখ শুরু হলে ভূ-পৃষ্ঠ প্রকাশ পায় ও স্থলপথ আত্মপ্রকাশ করে এবং নূহ (আ) নীেকার ঢাকনা উন্মুক্ত করেন। ইব্ন ইসহাকের এ বর্ণনা হুবহু আহলি কিতাবদের হস্তস্থিত তাওরাতের বিবরণের অনুরূপ।
ইবুন ইসহাক () বলেন, পরবর্তী বছরের দ্বিতীয় মাসের ছাব্বিশ তারিখে বলা হলো : 2, 42 سمبر
ՀԳS
অর্থাৎ- হে নূহ! অবতরণ করা আমার দেয়া শান্তিসহ এবং তোমার প্রতি ও যে সমস্ত সম্প্রদায় তোমার সঙ্গে আছে তাদের প্রতি কল্যাণসহ, অপর সম্প্রদায়সমূহকে জীবন উপভোগ করতে দেব, পরে আমার পক্ষ থেকে মর্মত্যুদ শাস্তি তাদেরকে স্পর্শ করবে। (১১ : ৪৮)
আহলে কিতাবদের বর্ণনা মতে, আল্লাহ তা’আলা নূহ (আ.)-এর সঙ্গে এ বলে কথা বলেছিলেন যে, তুমি, তোমার স্ত্রী, তোমার পুত্ৰগণ, তোমার পুত্রবধূগণ এবং তোমার সঙ্গে সকল প্রাণী নিয়ে নৌকা থেকে বের হয়ে পড়। যাতে তারা পৃথিবীতে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। ফলে তারা বেরিয়ে যায় এবং নূহ (আ) আল্লাহ তা’আলার উদ্দেশে পশু জবাই করার স্থান নির্ধারণ করেন এবং সকল প্রকার হালাল জীব-জানোয়ার ও হালাল পক্ষীকুল থেকে কিছু কিছু নিয়ে কুরবানী করেন। আল্লাহ তা’আলা তাকে এ প্রতিশ্রুতি দেন যে, তিনি পুনরায় পৃথিবীবাসীর উপর (এরূপ) প্লাবন আর দিবেন না এবং এ প্রতিশ্রুতির নিদর্শনস্বরূপ মেঘের মধ্যে ধনুক স্থাপন করে রেখেছেন যাকে রঙধনু বলা হয়। ইতিপূর্বে ইব্ন আব্বাস (রা) সূত্রে আমরা উল্লেখ করে এসেছি যে, রঙধনু হলো নিমজ্জিত হওয়া থেকে নিরাপত্তাস্বরূপ। মোটকথা, মেঘের মধ্যে এ ছিলাবিহীন রঙধনু স্থাপন করে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, এ মেঘমালা থেকে প্রথমবারের ন্যায় আর প্লাবন হবে না।
পারস্য দেশীয় ও ভারত উপমহাদেশীয় কিছু সংখ্যক মূর্থ লোক প্লাবনের কথা অস্বীকার করেছে! আবার তাদেরই কেউ কেউ তা স্বীকার করে বলেছে যে, প্লাবন হয়েছিল বাবেল ভূখণ্ডে, আমাদের অঞ্চল পর্যন্ত তা পৌঁছেনি। তাদের দাবি হলো, কাইউমার্স তথা আদম (আ) থেকে এ পর্যন্ত পুরুষাণুক্রমে আমরা এদেশের উত্তরাধিকার ভোগ করে আসছি। এসব হলো অগ্নিপূজারী মজুসী ও শয়তানের অনুচর ধর্মদ্রোহীদের উক্তি।
এ হলো ভিত্তিহীন বাজে ধারণা, জঘন্য কুফারী ও চরম অজ্ঞতা এবং বাস্তবতার প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন, আসমান-যমীনের রবকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার নামান্তর। অথচ সর্বকালের সর্ব ধর্মের সকলে প্লাবন সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে একমত। আর এ ব্যাপারেও তাদের মধ্যে কোন দ্বিমত নেই যে, তা হয়েছিল বিশ্বব্যাপী এবং নূহ নবীর দুআ এবং তাকদীরের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নস্বরূপ আল্লাহ তা’আলা কাফিরদের একটি প্ৰাণীকেও অবশিষ্ট রাখেননি।
নূহ (আ) সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য
আল্লাহ তা’আলা বলেন : ১ %:K…. ….. ৩,৫৫%, ‘নিশ্চয়ই সে ছিল এক পরম কৃতজ্ঞ বান্দা।’ কেউ কেউ বলেন, নূহ (আ.) পানাহার ও পোশাক পরিধানসহ সকল কাজেই আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা করতেন।(১
ইমাম আহমদ (র) বর্ণনা করেন যে, আনাস (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : ‘আল্লাহ তা’আলা সে বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন, যে খাদ্য খেয়ে কিংবা পানীয় পান করে তাঁর প্রশংসা জ্ঞাপন করে।’ এভাবে ইমাম মুসলিম, তিরমিয়ী, নাসাঈ, আবু উসামা (রা) সূত্রে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
১. গোটা সূরাটির অনুবাদ ইতিপূর্বে দেয়া হয়েছে। – সম্পাদক
ՀԳՀ
বলাবাহুল্য যে, ১৯৫২ …. সে ব্যক্তিকে বলা হয়, যে যাবতীয় ইবাদত পালন করে অন্তর, রসনা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা। কারণ শোকর আদায় এসব পদ্ধতিতেই হয়ে থাকে। যেমন কবি
न्दनन्?
অর্থাৎ— আমার পক্ষ থেকে তিনটি নিয়ামত তোমাদেরকে উপকৃত করেছে। আমার হাত, আমার রসনা ও আমার সে হৃদয় যা দৃশ্যমান নয়।
নূহ (আ.)-এর সাওম পালন
ইব্ন মাজাহ (র) নূহ (আ.)-এর রোযা অধ্যায়ে বলেছেন যে, আবু ফিরাস (র) বলেন, তিনি আবদুল্লাহ ইব্ন আমর (রা)-কে বলতে শুনেছেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলতে শুনেছি যে, নূহ (আ) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাঁর দিন ব্যতীত সারা বছর সাওম পালন করতেন। এভাবে ইব্ন মাজাহ (র) অন্য সূত্রে এবং অন্য পাঠেও হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
তাবারানী আবদুল্লাহ ইব্ন আমর (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : নূহ (আ) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন ব্যতীত সারা বছর, দাউদ (আ) বছরের অর্ধেক এবং ইবরাহীম (আ) প্রতি মাসে তিনদিন করে রোযা রাখতেন। সারা বছর রোযা, সারা বছর রোযাবিহীন।’
নূহ (আ.)-এর হজ্জ
হাফিজ আবু ইয়ালা বর্ণনা করেন যে, ইব্ন আব্বাস (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) হজ্জ করেন। এক পর্যায়ে তিনি উসফান উপত্যকায় এসে উপনীত হলে বললেন, আবু বকর! এ কোন উপত্যকা? আবু বকর (রা) বললেন, এ হলো উসফান উপত্যকা। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, : এ প্রান্তর দিয়ে নূহ (আ), হুদ (আ.) ও ইবরাহীম (আ) তাদের লাল রঙের জওয়ান উটনীতে চড়ে অতিক্রম করেছেন। ওগুলোর লাগাম ছিল খেজুর গাছের ছালের তৈরি। তাদের পরনে তখন থাকতো চােগা ধরনের লুঙ্গি এবং গায়ে থাকতো চিত্ৰ-বিচিত্ৰ চাদর। তাঁরা আদিঘর কা’বায় হজ্জ পালন করতেন। বর্ণনাটি গরীব পর্যায়ের।
পুত্রের প্রতি নূহ (আ.)-এর উপদেশ
ইমাম আহমদ (র) বর্ণনা করেন যে, আবদুল্লাহ ইব্ন আমর (রা) বলেন, আমরা একদিন রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এ সময়ে রেশমের ঘুণ্ডিযুক্ত পাড়বিশিষ্ট (অর্থাৎ অতি উন্নতমানের) জুব্বা পরিহিত এক বেদুঈন তথায় আগমন করে। এসে সে বলল, তোমাদের সঙ্গীটি অশ্বারোহীর পুত্ৰ অশ্বারোহীদেরকে (অর্থাৎ বংশগত সন্ত্রান্ত লোকদেরকে) হীন করেছে আর রাখালের বাচ্চা রাখালদেরকে (অর্থাৎ বংশতগত নীচ লোকরেদকে) উপরে তুলে দিয়েছে।
বর্ণনাকারী বলেন, : একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা) তার জুব্বা চেপে ধরে বললেন, তোমার গায়ে তো আমি নির্বোধের পোশাক দেখছি না! তারপর তিনি বললেন, ওফাতের সময় আল্লাহর নবী নূহ (আঃ) তাঁর পুত্রকে বলেছিলেন, আমি তোমাকে একটি উপদেশ দিচ্ছি। তোমাকে আমি
দু’টি কাজ করার আদেশ দিচ্ছি এবং দুটি কাজ করতে নিষেধ করছি। তোমাকে আমি ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর আদেশ দিচ্ছি। কারণ, সাত আসমান ও সাত যমীনকে যদি এক পাল্লায় রাখা হয়। আর ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’কে অপর পাল্লায় রাখা হয়, তাহলে সাত আসমান ও সাত যমীনের চাইতে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর পাল্লাটি ভারী হবে। আর যদি সাত আসমান ও সাত যমীন একটি খোলা মুখ আংটা হয়। আর ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ও সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহী সে খোলা মুখ চাপ প্রয়োগে বন্ধ করতে চায়; তবে সে তা পারবে, কারণ সবকিছুর সংযুক্তি এর দ্বারাই হয়ে থাকে এবং এর উসিলায়ই সৃষ্টি জগতের সকলের জীবিকা প্ৰদান করা হয়ে থাকে। আর আমি তোমাকে শিরক ও অহঙ্কার থেকে বারণ করছি।
বর্ণনাকারী বলেন, একথা শুনে আমি বা অন্য কেউ একজন বলল, হে আল্লাহর রাসূল! শিবৃক কি তাতো আমরা জানি। কিন্তু অহংকার জিনিসটা কি? এই যে আমাদের কারো সুন্দর ফিতা যুগল বিশিষ্ট সুন্দর এক জোড়া জুতা থাকা কি অহংকার? রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, না। বলেন, তাহলে কি উন্নতমানের পোশাক পরিধান করা অহংকারা? আল্লাহর রাসূল বললেন, না। প্ৰশ্নকারী বললেন, তাহলে কি আরোহণের পশু থাকা? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, না। প্রশ্নকারী আবার বললেন, তা হলে কারো একাধিক সঙ্গী-সাখী থাকা, যারা তার নিকট এসে বসে? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, না। অবশেষে আমি বললাম কিংবা বলা হলো, তাহলে অহংকার কি SSBBBB BBDBB BBD BBBB SBBBS BB 0S SAAaLLS AASAA AASAA AA L LS AASS LBBiS
সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে হেয় জ্ঞান করা।
এ হাদীসটির সনদ যদিও সহীহ, সিহাহ সিত্তার সংকলকগণ তা বর্ণনা করেননি।
আবুল কাসিম ত্যাবারানী (র) আবদুল্লাহ ইব্ন আমর (রা) সূত্রে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : পুত্রের প্রতি নূহ (আ)-এর উপদেশের মধ্যে এও ছিল যে, আমি তোমাকে দুটি স্বভাব অবলম্বন করার আদেশ দিচ্ছি এবং দু’টি স্বভাব থেকে তোমাকে বারণ করছি …।
আবু বকর, বাযযার ও আবদুল্লাহ ইব্ন উমর ইব্ন খাত্তাব (রা)-এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে হাদীসটি হুবহু বৰ্ণনা করেছেন। তবে প্রকৃতপক্ষে এ হাদীসটি আবদুল্লাহ ইব্ন আমর ইব্ন আস (রা) থেকে বর্ণিত। যেমন আহমদ তাবারানী (র) তা বর্ণনা করেছেন। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
আহলে কিতাবগণ মনে করেন যে, নূহ (আঃ) যখন নীেকায় আরোহণ করেন; তখন তাঁর বয়স ছিল ছশ বছর। ইব্ন আব্বাস (রা) থেকে পূর্বে আমরা এরূপ একটি বর্ণনা উদ্ধৃত করেছি। তারপর তিনি তিনশ পঞ্চাশ বছর বেঁচে ছিলেন। কিন্তু এ বক্তব্যে আপত্তি রয়েছে। তাছাড়া এ অভিমত ও কুরআনের প্রতিপাদ্যের মাঝে যদি সমন্বয় সাধন করা সম্ভব না হয়; তাহলে আহলে কিতাবদের অভিমতটি স্পষ্টতই ভ্ৰান্ত। কেননা কুরআন প্রমাণ করে যে, নূহ (আ) তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যে নবুওতের পর ও প্লাবনের পূর্বে পঞ্চাশ কম এক হাজার বছর অবস্থান করেছিলেন। তারপর প্লাবন তাদেরকে পাপাচারী হিসাবে গ্ৰাস করে। তারপর তিনি কতকাল বেঁচেছিলেন তা আল্লাহই ভালো জানেন। নবুওত প্ৰাপ্তির সময়, তাঁর বয়স ছিল চার শ’ (১ম খণ্ড) ৩৫—
&as ऊनाव्न-लिशा ७ान् निशशी
আশি বছর এবং প্লাবনের পর তিনি তিনশ’ পঞ্চাশ বছর বেঁচেছিলেন। এ মর্মে ইব্ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত তথ্যটি যদি সঠিক হয়ে থাকে তাহলে বলা যায় যে, তিনি এক হাজার সাতশ’ আশি বছর আয়ু পেয়েছিলেন।
এদিকে নূহ (আ.)-এর কবর সম্পর্কে ইব্ন জারীর ও আযরাকী আবদুর রহমান ইব্ন সাবিত থেকে বা অন্য কোন তাবেয়ী সূত্রে মুরসালরূপে বর্ণনা করেন যে, নূহ (আ)-এর কবর হলো মসজিদুল হারামে। এ অভিমতটি সে অভিমত অপেক্ষা বেশি শক্তিশালী ও সুপ্ৰমাণিত যা পরবর্তী যুগের বেশ কিছু আলিম উল্লেখ করেন যাতে বলা হয়ে থাকে যে, নূহ (আ.)-এর কবর সে ভূখণ্ডে অবস্থিত বর্তমানে যা ‘কারক-ই-নূহ’ নামে পরিচিত এবং সেখানে তাঁর কবরকে কেন্দ্র করেই একটি জামে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।