দুই সপ্তাহে মন ভালো করুন
এই বইটা যখন লেখা শুরু করি তখন আমি সবচেয়ে প্রেরণাদায়ক আর উপকারে লাগে এমন সত্যিকার একটা কাহিনীর জন্য দশ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করি। কাহিনীর বিষয় ছিল; কী করে দুশ্চিন্তা দর করেছি।
বিচারক ছিলেন তিনজন নামকরা লোক : ইষ্টার্ণ এয়ার লাইনসের প্রেসিডেন্ট এডি বিকেনব্রেকার, লিঙ্কন মেমোরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ডঃ ম্যাকব্লেল্যাণ্ড আর বেতার বিশেষজ্ঞ ভি ক্যাপ্টেনবর্ণ। যাই হোক আমরা এমন দুটো সত্য কাহিনী পেলাম যে, কোনটা শ্রেষ্ঠ তা বিচার করা অসম্ভব হয়ে পড়ল। শেষ পর্যন্ত পুরস্কার দুজনকে ভাগ করে দেওয় হল। প্রথম পুরস্কার প্রাপ্ত একটি কাহিনী ছিল সি, আর, বার্টনের, যিনি মোটরগাড়ি বিক্রীর প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। কাহিনীটি এই রকম :
আমার ন’বছর বয়সে আমি মাকে হারাই আর বারো বছর বয়সে বাবাকে, মি. বার্টন লেখেন, আমার বাবাব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান আর মা শেফ উনিশ বছর আগে বাড়ি থেকে চলে যান,আর কখনও তাকে দেখিনি । আমার ছোট্ট যে বোন দুটিকে তিনি নিয়ে যান তাদেরও আর দেখিনি। সাত বছর কাটার আগে মা কোন চিঠিও পর্যন্ত লেখেন নি। বাবা, মা চলে যাওয়ার তিন বছর পরে দুর্ঘটনায় মারা যান। তিনি তার এক বন্ধুর সঙ্গে মিসৌরীতে একটা কাফে খুলেছিলেন। বাবা ব্যবসার কাজে বাইরে গেলে তাঁর বন্ধু সব বেচে দিয়ে টাকা কড়িসহ পালিয়ে যায়। এক বন্ধুর তার পেয়ে তাড়াহুড়ো করে আসতে গিয়ে গাড়ির র্ঘটনায় বাবার মৃত্যু ঘটে। বাবার তিনজন বৃদ্ধা, রুগ্ন আর গরিব বোন, তিনটে শিশুর ভার নেন। কেউ মামায় আর আমার ছোট ভাইকে রাখল না। আমরা শহরের দয়ায় নির্ভর করে বেঁচে রইলাম । আমাদের অনাথ বলা হবে ভেবে দারুণ ভয় পেতাম। হলও তাই। এক দরিদ্র পরিবারে আমরা থাকতাম, সেই লোকটির চাকরি গেল, ফলে তার পক্ষে আর খাওয়ানো সম্ভব হল না। এরপর মি. আর মিসেস লফটিন এগারো মাইল দূরে তাঁদের খামারে নিয়ে গেলেন। বৃদ্ধ আমায় এক শর্তে নিয়ে যান। তা হল : আমি যতদিন খুশী সেখানে থাকতে পারি, কিন্তু কোনদিন মিথ্যে বলব না। চুরি করব না। যা বলা হবে তাই করব। আমি বর্ণে বর্ণে তা মেনে চলোম। এ আমার কাছে বাইবেলের মত পবিত্র ছিল। এরপর স্কুলে গেলাম আর বাড়ি এসে অঝোরে কাঁদলাম। অন্য ছেলে মেয়েরা আমার নাক দেখে তামাশা করত আর মিচকে অনাথ বলে ক্ষেপাতো। মাঝে মাঝে ওদের সঙ্গে মারামারি করতে ইচ্ছে হত। মিঃ লফটিন একদিন বললেন, মারামারি সবাই করতে পারে। তা না করে ফিরে আসাই সাহসের কাজ। কথাটা মনে রেখ। কিন্তু একদিন একজনকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য বেশ পিটলাম। ঐদিন একটি ছেলে মুরগীর নাড়িভুঁড়ি আমার মুখে ছুঁড়ে মেরেছিল তাই তাকে উচিত শিক্ষা দিয়েছিলাম। এর ফলে দু একজনের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বও হল ।
একদিন মিসেস লফটিন বললেন, আমি যদি লোকের কাজ করি, উপকার করি তাহলে তারা আর বিরক্ত করবে না বন্ধুত্ব করবে। আমি তাই করতে লাগলাম আর পড়াশুনায় মন দিলাম ফলে পরীক্ষায় প্রথমও হলাম। কেউ আমায় দেখে ঈর্ষা করেনি।
আমি বহু ছেলেকে তাদের লেখাপড়ায় সাহায্য করতাম। আমি বিতর্কের কিছু বিষয় ছেলেদের খাতায় লিখে দিতাম। একটি ছেলে যাকে আমি সাহায্য করতাম সে বাড়িতে তার মাকে একথা বলতে লজ্জাবোধ করতো। সে তার মাকে বলতো পোশম শিকার করতে যাচ্ছে। তারপর আমি একটি ছেলেকে তার বইয়ের সমালোচনা এবং সন্ধ্যায় একটি মেয়েকে অঙ্ক শেখাতাম। অনেকেই তাই আমার কাছে আসত ।
এরপর আমাদের পাড়ায় মৃত্যু হানা দিল। দুই বয়স্ক কৃষক মারা গেল আর এক মহিলার স্বামী তাকে ত্যাগ করে গেল। চারটি পরিবারে আমিই একমাত্র পুরুষ তাই সব দায়িত্ব আমাকেই নিতে হল । আমি তাদের সাহায্য করলাম । কেউ আর আমায় গাল দেয়না সবাই বন্ধু হল । আমি যখন নৌবাহিনী থেকে ফিরলাম দুশরও বেশি লোক আমায় দেখতে এল, তাদের অনেকেই আশি মাইল দূর থেকে এসেছিল। আমার প্রতি তাদের ভালবাসা ছিল অন্তরের। অন্যকে সাহায্য করেছি বলে আমার দুশ্চিন্তা ছিলো না। আমায় গত তেরো বছর কেউ আর অনাথ বলেনি।
সি. আর. বার্টনের প্রশংসা করাই উচিত। কী করে বন্ধুত্ব করতে হয় তিনি জানেন। আর এও জানেন কিভাবে দুশ্চিন্তা কাটিয়ে জীবনকে উপভোগ করতে হয়। ঠিক এমনটাই জানতেন ওয়াশিংটনের ডঃ ফ্রাঙ্ক লুপ। তিনি প্রায় তেইশ বছর ধরে বাতের অসুখের ফলে চলৎশক্তি হীন । সিরটল স্টারের স্টুয়ার্ট হোয়াইট হাউস আমায় লেখেন, আমি ডঃ লুপকে বহুবার দেখেছি। তার মত এমন নিঃস্বার্থ মানুষ আর দেখিনি। তাঁর মতো জীবন উপভোগ করতেও কাউকে দেখিনি।
একজন চলৎশক্তিহীন মানুষ কীভাবে জীবন উপভোগ করলেন? তিনি কি সবসময় অনুযোগ আর সমালোচনা করতেন?নাকি চিৎকার করে অপরের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন? এটাও না। প্রিন্স অব ওয়েলসের মত তাঁর জীবনের ব্রত ছিল : ইখ ডিয়েন’–আমি সেবা করি। তিনি অন্যসব চলৎশক্তিহীন মানুষের ঠিকানা জোগাড় করে প্রেরণা দিয়ে চিঠি লিখতেন–এতে তার প্রচুর আনন্দ হত। এইভাবে তিনি একটা লেখার ক্লাবই গড়ে তোলেন। তিনি শেষ পর্যন্ত একটা সঙঘ প্রতিষ্ঠা করেন–তার নাম দেন বন্ধ হয়ে থাকাঁদের সমাজ।
তিনি বিছানায় শুয়ে বছরে গড়পড়তা চৌদ্দশ চিঠি লিখতেন। তিনি হাজার হাজার পঙ্গুকে রেডিও আর বই পাঠাতেন।
ড. লুপ আর অন্যান্যদের মধ্যে তফাৎ কী? এটাই যে ড. লুপের অন্তরে একটা প্রজ্জ্বলিত বাসনা জেগেছিল, একটা উদ্দেশ্য কাজ করত। তিনি জানতেন তার কাজের মধ্যে রয়েছে একটা মহান উদ্দেশ্য। বার্নার্ডাশ বলেছিলেন, অনেক আত্মকেন্দ্রিকই অভিযোগ করে যে সবাই তাকে সুখী করার চেষ্টা করছে না।
বিখ্যাত মনস্তাত্ত্বিক অ্যাডলার, অ্যাডলারের যে চমৎকার বক্তব্য শুনেছিলাম এখানে সেটাই বলতে চাই। তিনি এগুলো তার মনোবিকলনে আক্রান্ত রোগীদের বলতেন, আপনারা চৌদ্দদিনেই সেরে উঠবেন যদি এই নিয়ম মেনে চলতে পারেন। প্রতিদিন ভেবে দেখুন প্রতিদিন কীভাবে অন্তত একজনকে খুশি করতে পারেন।
কথাটা এতই অবিশ্বাস্য মনে হয় যে ড. অ্যাডলারের বই থেকে কয়েকটা লাইন না পড়লে বিশ্বাস হবে না। বইটার নাম হোয়াট লাইফ সুড মিন টু ইউ।
বইটির ২৫৮ পৃষ্ঠায় ড. অ্যাডলার বলেছেন :
মনোবিকলন জন্মায় বহুদিন ধরে অন্যের প্রতি রাগ আর বিদ্বেষ পুষে রাখার ফলে। এই রোগ হলে রোগীরা নিজেদের দোষ সম্বন্ধে অপ্রসন্ন বোধ করে আর তারা তা করে অন্যের কাছ থেকে যত্ন, দয়া আর সমর্থন আদায় করার জন্য। বিষাদগ্রস্ত রোগীরা প্রথমেই এই রকম ভাবে, আমার মনে পড়ছে আমি যে কোচটায় শুয়ে থাকি আমার ভাই সেখানে শুয়ে ছিল। আমি এমনই কাঁদলাম যে সে জায়গা ছেড়ে উঠে যায়।
বিষাদগ্রস্ত রোগীরা প্রায়ই নিজেদের উপর প্রতিশোধ নিতে আত্মহত্যা করতে চায়। তাই ডাক্তারের প্রথম চেষ্টা হয় তাদের কোন আত্মহত্যার সুযোগ না দেওয়া । আমি তাদের এ থেকে নিবৃত্ত করার জন্য বলি : যা আপনার ভাল লাগে না তা করবেন না। ব্যাপারটা খুবই সামান্য মনে হলেও আমার ধারণা এতে একেবারে রোগের মূলে পৌঁছানো যায়। কোন বিষাদগ্রস্ত রোগী যা চায় সে যদি তাই করতে পারে তাহলে সে কার উপর রাগ করবে? নিজের উপর তার প্রতিশোধ নেবারই বা দরকার কী? যদি আপনার থিয়েটার বা ছুটিতে যেতে ইচ্ছে করে তাহলে তাই করবেন এই হল আমার কথা । পথে যদি আবার ইচ্ছে না হয় তাহলে বন্ধ করবেন। এরকম অবস্থায় থাকাই সবচেয়ে মজার। নিজের শ্রেষ্ঠ হওয়ার চেষ্টাকে এটা মিটিয়ে দেয়। এ নিয়মটা চমৎকার আরাম দেয়। এর ফলে আমার রোগীদের মধ্যে একটাও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেনি।
সাধারণত রোগীরা বলে, আমার কিছুই করতে ইচ্ছে করে না। এর উত্তরও আমার ঠিক করা আছে। আমি বলি, তাহলে যা ইচ্ছে হয় না তা করবেন না। কখনও সে হয়তো বলে, আমায় সারাদিন শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। আমি জানি তিনি তা কখনই করবেন না, আবার বাধা দিলে লড়াই শুরু করবেন। আমি তাই সব সময় রাজি হয়ে যাই।
এ হল একটা নিয়ম। অনেকে আবার নিজেদের জীবনযাত্রা প্রণালী নিয়ে সরাসরি আক্রমণ করে। আমি তাদের বলি, আপনারা চৌদ্দ দিনেই রোগ মুক্ত হবেন যদি এই নিয়মটা মেনে চলেন। একেবার ভেবে দেখুন প্রতিদিন অন্তত একজনকে কিভাবে সুখী করতে পারেন। এতে তাদের কি মনে হয় একবার ভাবুন। তাদের মনে ভাবনা জাগে, কাউকে কীভাবে জ্বালাই। এর উত্তরও বেশ মজার। কেউ বলে, এটা আমার কাছে বেশ সহজ। সারা জীবনই এটা করেছি আসলে তারা এটা কখনই করেনি। আমি তাদের ভাবতে বলি। তারা তা করে না। আমি তখন বলি, যখন ঘুম আসবে না তখন ভাববেন অন্যদের কেমন করে খুশি করা যায়, এতে আপনার স্বাস্থ্য ভালো হবে। পরের দিন দেখা হলে বলি, যা বলেছিলাম ভেবে দেখেছেন? তাদের উত্তর হল : গতরাতে শুয়েই ঘুমিয়ে পড়ি। এসবই করতে হয়। ধীরে, কোন রকম শ্রেষ্ঠত্বের ভাব না রেখে।
.
অন্যেরা বলে, আমি কিছুতেই দুশ্চিন্তার জন্য এটা করতে পারিনি। আমি তাদের বলি, দুশ্চিন্তা বন্ধ করবেন না তবে সেই সঙ্গে অন্যদের কথাও ভাববেন। অনেকে এতে বলে, অন্যদের সুখী করব কেন? তারা তো আমাকে সুখী করতে চায় না। আমি বলি প্রথমে তোমার স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করতে হবে অন্যরা পরে জ্বরে ভুগবে। এমন কোন রোগী মেলা সত্যিই ভার যে বলে, আপনি যা বলেছেন তা নিয়ে ভেবেছি। শুধু তাদের সামাজিক বোধ জাগ্রত করতে আমার সমস্ত চেষ্টা কাজে লাগাতে চাই। ধর্মেও আছে সবচেয়ে ভালো কাজ হল তোমার প্রতিবেশীকে ভালোবাসো। যে অন্যদের সম্পর্কে আগ্রহী নয় সে নিজেও কষ্টে পড়ে অন্যকেও কষ্ট দেয়। তাই দরকার সকলের সহযোগিতা করা। মানুষ হিসেবে একজনের কাছে আমাদের দাবি সহযোগিতা, বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার, ভালোবাসায় এবং বিয়েতে যাতে সত্যিকার অংশীদার হয়।
ড. অ্যাডলার আমাদের প্রতিদিন একটা ভাল কাজ করতে বলেছেন। কিন্তু ভালো কাজ কী? মহাপুরুষ মহম্মদ বলেছিলেন, যে কাজ করে অপরের মুখে হাসি ফোঁটানো যায় সেটাই ভালো কাজ।
প্রতিদিন কোনো ভালো কাজ করলে যে করে তার উপর এমন চমৎকার প্রতিক্রিয়া হয় কেন? কারণ অপরকে সুখী করতে গিয়ে আমরা নিজেদের কথা ভুলে যাই। সেটাই যে আমাদের সব দুশ্চিন্তা, ভয় আর বিপদের কারণ।
নিউ ইয়র্কের মিসেস উইলিয়াম টি, মুনকে দুসপ্তাহ ধরে অন্যকে কেমন করে সুখী করা যায় ভাবতে হয়নি। তাঁকে ড. অ্যাডলারের মতো চৌদ্দ দিন পরিশ্রম করতে হয় নি। তার চেয়ে তাড়াতাড়িই তিনি তা করেন মাত্র দুই অনাথকে সুখী করে ।
ঘটনা এই রকমই, যেমন মিসেস মুন আমায় লেখেন : পাঁচ বছর আগে ডিসেম্বরের একদিন আত্মগ্লানি আর দুঃখ আমায় চেপে ধরে। বহুদিন সুখী বিবাহিত জীবন কাটানোর পর স্বামীকে হারাই। বড়দিনের ছুটি এসে গেল আমার দুঃখ আরও বেড়ে গেল। কোনদিন একা বড়দিন কাটাইনি–তাই বড়দিন এগিয়ে এলে ভয়ও বাড়তে লাগল। বন্ধুরা আমায় তাদের সঙ্গে বড়দিন কাটানোর আহ্বান জানিয়েছিল কিন্তু আমার তা ইচ্ছে হল না। আমি জানতাম তাদের মধ্যে বেমানান হয়ে পড়ব। ক্রমশ বড়দিন এগিয়ে এলে আমার আত্মধিক্কার জাগল। এটা সত্যি, অনেক ব্যাপারেই আমার ধন্যবাদ জানাবার ছিল, সকলেরই যা থাকে । বড়দিনের আগের দিন বেলা সাড়ে তিনটের সময় আমি একাকী উদ্দেশ্যহীনভাবে ফিফথ অ্যাভিনিউ বরাবর হাঁটতে শুরু করলাম, আশা ছিল বিষাদ দূর হবে। সারা পথ আনন্দমগ্ন মানুষে জমজমাট–আমার মনে অতিতের সুখ স্মৃতি জেগে উঠল । কিছুতেই মানতে পারলাম
একাকী নিঃসঙ্গ ফ্ল্যাটে ফিরে যাব। কী করব বুঝতে পারলাম না, চোখের জলও বাধা মানল না। একঘণ্টা হাঁটার পর একটা বাসে উঠে পড়লাম। হাডসন নদী পার হয়ে বাসটা কোথাও এসে দাঁড়াতে কন্ডাক্টরকে বলতে শুনলাম, শেষ স্টপ, মহাশয়া। আমি নেমে পড়লাম । এ শহরের নামও জানিনা, তবুও হাঁটতে আরম্ভ করলাম। একটা গির্জার সামনে এসে পড়লাম, সেখানে নীরব রাত্রি সঙ্গীতের মুর্হনা ভেসে আসছে। গির্জা খালি, একমাত্র অর্গ্যান বাদক বসে অর্গান বাজাচ্ছেন। তার অলক্ষে একটা ঘেরা চেয়ারে বসে পড়লাম। সুন্দর সাজানো খ্রিস্টমাস ট্রিতে আলো ঝলমল করে যেন আকাশের তারার দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছিল। পরিবেশটা এমনই যে কখন ঘুমিয়ে পড়লাম বুঝতে পারিনি।
যখন জেগে উঠলাম কোথায় আছি বুঝতে পারলাম না। দারুণ ভয় হল। সামনে দেখলাম দুটি শিশু সম্ভবত খ্রিস্টমাস ট্রি দেখতে এসেছিল। একটি মেয়ে আমায় দেখিয়ে বলেছিল, ওঁকে বোধ হয় সান্টাক্লস নিয়ে এসেছে। আমি জেগে উঠলে ওরা ভয় পেয়ে গেল। আমি ওদের বললাম ওদের কিছু করব না। ওদের পোশাক ছিল খুবই মলিন। আমি ওদের বাবা মা কোথায় জানতে চাইলাম। ওরা বলল, আমাদের কোন বাবা মা নেই। বুঝলাম ওই দুজন অনাথের অবস্থা আমার চেয়েও খারাপ। ওদের কথা ভেবে আমার নিজের জন্য লজ্জা হল। আমি ওদের খ্রিস্টমাস ট্রি দেখিয়ে একটা দোকানে নিয়ে গিয়ে খাওয়ালাম আর কিছু জিনিস কিনে দিলাম। আমার নিঃসঙ্গতা নিমেষে যাদুবলেই দূর হয়ে গেল। ওই দই অনাথ আমার মনে যে সুখ এনে দিল তা বহুমাসই পাইনি। ওদের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম আমি কত ভাগ্যবান। আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলাম যে ছোটবয়সে কত আনন্দে বাবা মার কাছে বড়দিনের আনন্দ উপভোগ করেছি। ওই দুই অনাথ আমার জন্য যা করল, তার তুলনায় ওদের জন্য কিছুই আমি দিইনি । আমি দেখলাম সুখ বড় ছোঁয়াচে। দিলেই কিছু পাওয়া যায়। কাউকে সাহায্য করে আমি শোক আর নিঃসঙ্গতা দূর করেছি। আমি নতুন মানুষ হয়ে উঠেছি–আর তা বরাবরের জন্য।
.
আমি এমন বহুলোকের গল্প বলতে পারি যারা নিজেদের ভুলে সুখী হয়েছিলেন। এমন গল্পে বহু বই লেখা হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে মার্গারেট টেলার ইয়েটসের কথাই ধরুন তিনি হলেন আমেরিকার নৌবাহিনীর সবচেয়ে জনপ্রিয় মহিলা।
মিসেস ইয়েটস ঔপন্যাসিক, তবে তার রহস্য কাহিনী তাঁর জীবন কাহিনীর চেয়ে বেশি আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারেনি। তার জীবনের সেই সত্য কাহিনী, যেদিন জাপানীরা পার্ল হারবার আক্রমণ করে। মিসেস ইয়েটস প্রায় একবছর ধরে পঙ্গু হয়ে ছিলেন–হার্ট খারাপের জন্য। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে বাইশ ঘণ্টায় । শুয়ে কাটাতেন। সবচেয়ে বেশি হাঁটাহাঁটি করতেন তিনি মাত্র দু–ঘণ্টার জন্য বাগানে গিয়ে, পরিচারিকার কাঁধে ভর দিয়ে। তিনি আমায় বলেছিলেন, তিনি ভাবতেন সারা জীবনটাই তাঁর পঙ্গু হয়ে কাটবে। আমি সত্যিই জীবন ফিরে পেতাম না যদি না জাপানীরা পার্ল হারবার আক্রমণ করত আর আমার মনকে এমনভাবে নাড়া না দিত।
এটা যখন ঘটল, মিসেস ইয়েটস লেখেন : সবকিছুতেই গন্ডগোল লেগে যায়। একটা বোমা আমার বাড়ির এতই কাছে পড়ে যে ঝাঁকুনিতে বিছানা থেকে ছিটকে যাই। ট্রাকগুলো পাগলের মত ছুটোছুটি করে সেনাবাহিনীর সবার স্ত্রী আর ছেলেমেয়েদের একটা স্কুল বাড়িতে নিয়ে আসতে থাকে। রেডক্রস থেকে যাদের বাড়িতে বাড়তি ঘর আছে তাদের সবাইকে রাখতে বলে। আমার বাড়িতে ফোন ছিল, তখনই জেনে নিলাম আমার স্বামী নিরাপদেই আছেন। আমি এরপর ফোন করে সকলকে সান্ত্বনা জানাতে লাগলাম । যে সব মহিলার স্বামী মারা গেছিলেন তাদেরও সান্ত্বনা জানালাম। প্রায় আড়াই হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন।
ফোন করতে গিয়ে আমার নিজের কথা ভুলে গেলাম। এতই উত্তেজিত হই যে আমার পঙ্গুত্ব আর রইল না। অপরের জন্যই আমি আবার নিজেকে ফিরে পেলাম আর কখনও শয্যায় পড়ে থাকতে হল না আমাকে। এখন বুঝি জাপানীরা পার্ল হারবার আক্রমণ না করলে এটা হতো না, আমি সারাজীবন পঙ্গু হয়েই থাকতাম।
পার্ল হারবার আক্রমণ আমেরিকার ইতিহাসে বিরাট এক বিয়োগান্ত অধ্যায়, কিন্তু আমার কাছে হয়েছে আশীর্বাদ। ওই প্রচণ্ড প্রয়োজনই আমায় জাগিয়ে তোলে, তাই নিজের কথা ভাববার সুযোগ ছিলো না।
মনস্তাত্ত্বিকদের কাছে যারা সাহায্যের আশায় ছোটেন তাঁদের অন্ততঃ এক তৃতীয়াংশ রোগ মুক্ত হতেন যদি তারা মার্গারেট ইয়েটসের মত অপরের ভালো করার কথা ভাবতেন। এটা আমার কথা? মোটেই না, ঠিক এই কথাই বলেছেন কার্ল জাঙ্গ, তিনি বলেছিলেন : আমার রোগীদের এক তৃতীয়াংশই কোন রোগে ভোগে না, তারা ভোগে অসাড় উদ্দেশ্যহীন আর শূন্যতায়।
আপনি হয়তো বলবেন, এ কাহিনী আমার মনে দাগ কাটছে না। আমি নিজেও দুজন অনাথকে নিয়ে সময় কাটাতে পারতাম বা পার্ল হারবারে থাকলে মার্গারেট ইয়েটসের মতোই কাজ করতাম। কিন্তু আমার জীবন আলাদা। সাধারণ জীবন আমার। রোজ আটঘণ্টা বাজে কাজ করি। নাটকীয় কিছুই আমার জীবনে ঘটে না। অন্য লোকের ব্যাপারে আমার আগ্রহ জাগবে কেন? এতে আমার লাভ কী হবে?
প্রশ্নটার যথাযথ জবাব দেয়ার চেষ্টাই করব। আপনার জীবন যতই একঘেয়ে হোক, রোজই কোনো কোনো মানুষের সঙ্গে আপনার দেখা হয়। তাদের ব্যাপারে কি করেন? শুধু কি তাকিয়ে দেখেন না ভাবেন তারা কীভাবে থাকে? যে ডাকপিওন কয়েকশ মাইল হেঁটে আপনার চিঠি বিলি করে একবারও ভেবেছেন কি সে কোথায় থাকে? তার বৌ ছেলেমেয়েদের ছবি কোনোকালে দেখতে চেয়েছেন কি? কখনও কি প্রশ্ন করেছেন তার ক্লান্তি আসে কিনা বা কাজ তার একঘেয়ে লাগে কিনা?
মুদির দোকানের ছেলেটির কথাই ধরুন। তার সম্বন্ধে কখনও ভেবেছেন? আপনার দৈনিক খবর কাগজওয়ালার সম্বন্ধে কোনো খবর রাখেন? কিংবা ঐ যে ছেলেটি জুতো পালিশ করছে তার কোন খবর? মানুষ হিসেবে এদের মনে দুঃখ, কষ্ট, এবং যে উচ্চাশার স্বপ্ন দেখে তাদের কথা কোনদিন শুনতে চেয়েছেন কি? এই রকম কথাই বলছি। পৃথিবীকে ভালোভাবে উন্নতি করতে আপনাকে ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল বা সমাজসংস্কারক হতে হবে না। যে সব মানুষের দেখা পান তাদের দিয়ে কাল থেকে কাজ শুরু করতে পারেন।
এসব করে আপনার কি হবে? আরও বেশি সুখ পাবেন, পাবেন আত্মগর্ব। অ্যারিস্টটল একেই বলেছিলেন, ‘আলোকপ্রাপ্ত স্বার্থপরতা’। জরথুষ্ট বলেছিলেন, ভালো কাজ করা কোনো কর্তব্য পালন করা নয়। এ হল একটি আনন্দ, এতে আপনার স্বাস্থ্য আর সুখ বেড়ে যাবে। বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন আরও সরলভাবে বলেছিলেন–আপনি অন্যের প্রতি ভালো হলে আপনি হবেন সর্বশ্রেষ্ঠ।
অন্যের কথা ভাবলে আপনার যে কেবল দুশ্চিন্তা দূর হবে তাই নয়, এর ফলে আপনার ঢের বন্ধু হতে আর মজাও পাবেন। কেমন করে? কথাটা একবার ইয়েলের প্রফেসর উইলিয়াম লিও ফেলসূকে জিজ্ঞাসা করি। তিনি যা বলেছিলেন তা এইরকম : আমি হোটেল, নাপিতের দোকান বা কোন দোকানে যখনই যাদের দেখা পাই তাদের মিষ্টি কথা না বলে যাই না। আমি এমনভাবে কথা বলি যাতে তারা বোঝে তারা কোন যন্ত্র নয়। কোন দোকানে গেলে যে মেয়েটি আমায় জিনিস পত্র বিক্রি করে তাকে বলি তার চুল বা চোখ কি সুন্দর। নাপিতকে বলি সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকতে তার কষ্ট হয় কিনা। আমি দেখেছি মানুষের নিজেদের সম্পর্কে আগ্রহ দেখালে তাদের মুখ চোখ আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। আমি তাদের সঙ্গে প্রায়ই করমর্দন করি। মনে পড়ছে এক গ্রীষ্মঝরা দিনে আমি নিউ হ্যাঁভেন রেলপথের ডাইনিং কামরায় মধ্যাহ্ন ভোজ সারতে যাই। ভিড় উপচে পড়া কামরাটাকে মনে হচ্ছিল যেন আগুনের চুল্লী, কাজকর্মও বেশ ধীর। শেষ পর্যন্ত যখন স্টুয়ার্ড আমার হাতে মেনু তুলে দিল আমি বললাম : যে ছেলেরা এই গরমে রান্না করছে তাদের আজ খুবই কষ্ট। স্টুয়ার্ড চাপা গলায় অভিশাপ বর্ষণ করছিল, ওর গলার স্বর ছিল তিক্ত। প্রথমে ভাবলাম সে ক্রুদ্ধ । আচমকা সে বলল : ঈশ্বর সর্বশক্তিমান। লোকে এখানে এসে কেবল খাদ্য খারাপ এই কথাটাই বলে। তারা ধীর কাজ, দাম আর গরম সম্বন্ধে অভিযোগ জানায়। গত উনিশ বছর ধরে এই অভিযোগ শুনে আসছি আমি, আর আজ আপনিই একমাত্র মানুষ যিনি ফুটন্ত রান্নাঘরের পাঁচকদের জন্য এ কথা বললেন। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি আপনার মত আরও যাত্রী যেন আসেন।
স্টুয়ার্ড অবাক হয়েছিল কারণ আমি ওই রেলপথের রান্নাঘরের নিগ্রো পাঁচকদের মানুষ বলেই ভেবেছিলাম, তাদের রেলপথের মেশিনের যন্ত্র মাত্র ভাবতে পারিনি। তাদের মানুষ মনে করেছিলাম। মানুষ যা চায় তা হল তাদের একটু মানুষ বলেই ভাবা হোক। রাস্তায় চলার ফাঁকে কারও কোন কুকুর। দেখলে তার প্রশংসা করি আমি। তারপর এগিয়ে যাওয়ার পর পিছনে ফিরে তাকালে দেখি লোকটি কুকুরকে আদর জানাচ্ছে।
একবার ইংল্যাণ্ডে একজন মেষপালককে দেখি, তার ভেড়ার রক্ষক কুকুরটিকে দেখে আমার প্রশংসা বাঁধ মানে নি। আমার প্রশংসায় মেষপালক দারুণ খুশি হয়। ঐ কুকুর আর তার মেষপালক সম্বন্ধে সামান্য আগ্রহ দেখানোর ফলে আমি ঐ মেষপালককে আনন্দ দিয়েছিলাম এবং নিজেও আনন্দ পেয়েছিলাম।
একবার ভাবতে পারেন যে মানুষ পথ চলতে গিয়ে কুলির করমর্দন করে, পাঁচককে সহানুভূতি জানায় আর কুকুরের প্রশংসা করে; তাকে কখনও কোন মনস্তাত্বিকের কাছে যেত হয় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে? কখনই তা বলতে পারবেন না। এক চীনা প্রবাদ আছে : হাতে গোলাপ ফুল ধরলে তার কিছু গন্ধ লেগে থাকে।
বিলি ফেলপস একথা যে জানতেন তা আর বলতে হয় না ।
আপনি যদি পুরুষ হন তাহলে এই অংশটা না পড়তেও পারেন। এতে আপনার আগ্রহ না লাগাই সম্ভব। এতে শোনাব এক অসুখী, দুশ্চিন্তা পীড়িত তরুণীকে কিভাবে বেশ কজন পুরুষ বিয়ের প্রস্তাব দেয়। মেয়েটি আজ ঠাকুমা হয়েছে। বেশ ক বছর আগে আমি ওই মেয়েটির এবং তার স্বামীর বাড়িতে রাত কাটাই। ওদের শহরে আমি বক্তৃতা দেবার জন্য গিয়েছিলাম পরদিন সকালে সে আমায় গাড়ি চালিয়ে পঞ্চাশ মাইল দূরে স্টেশনে পৌঁছে দেয়। কথায় কথায় আমি তাকে বন্ধুত্ব অর্জন নিয়ে কথা বললে সে বলে : মিঃ কার্নেগী, আপনাকে এমন কিছু শোনাবো যা আমার স্বামীকেও বলিনি । সে আমায় জান্নাত। সে মানুষ হয় ফিলাডেলফিয়ার এক সমাজ সেবার অফিসে। সে বলে : আমার শৈশব কাটে চরম দাদি। এবং পোষাক ছিল খুব সস্তার। আমার এতে লজ্জার অবধি ছিল না, তাই কাঁদতাম। আমার সহকারীকে তাই সব সময় তার নিজের কথা জিজ্ঞাসা করতাম, যাতে সে আমার পোষাকের দিকে না তাকায়। এতে একটা আশ্চর্য ব্যাপার ঘটে গেল। আমি ওই তরুণদের ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে উঠলাম। আমি চমৎকার শ্রোতা ছিলাম, তারাও তাই খুব খুশি হত। তাই আমি হয়ে উঠলাম সবচেয়ে জনপ্রিয় তরুণী । ওদের তিনজন আমায় বিয়ের প্রস্তাব করল।
এ কাহিনী শুনে অনেকেই হয়তো বলবেন, অন্যের ব্যাপারে আগ্রহী হওয়া বাজে ব্যাপার! এসব আমার চলবে না। আমার টাকা আমার ব্যাগেই রাখব, ইচ্ছেমত সব খরচ করবো–কারও কথায় কান দেব না!
তা আপনার অভিমত এ রকম হলে করার কিছু নেই, তবে আপনার কথা যদি ঠিক হয় তাহলে ইতিহাসের প্রারম্ভ থেকে আজ পর্যন্ত যত দার্শনিক আর শিক্ষাগুরু জন্মেছেন যেমন,যীশু, কনফুসিয়াস, বুদ্ধ, প্লেটো, অ্যারিস্টটল, সক্রেটিস, সেন্ট ফ্রান্সিস–সবাই ভুল করেছেন। ধর্মগুরুদের কথা আপনার ভাল না লাগলে আসুন কজন নাস্তিক কি বলেছেন শোনা যাক। প্রথমেই ধরা যাক কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এ.ই. হাউসম্যানের কথা। এ যুগের তিনি একজন বিখ্যাত পণ্ডিত। ১৯৩৬ সালে তিনি কেম্ব্রিজে এক ভাষণে অবতার নাম ও প্রকতি নিয়ে বলেন। তাতে তিনি বলেছিলেন : যীশুর এই কথাই সব সেরা : সবচেয়ে বড় নীতি তারই আবিষ্কার–যে জীবন আবিষ্কার করতে পারে, সেই তা হারায়, আর যে আমার জন্য জীবন হারাবে সেই তা খুঁজে পাবে।
আমার সারা জীবন ধরেই ধর্মপ্রচারকদের একথা বলতে শুনেছি। কিন্তু হাউসম্যানের কথা আলাদা, তিনি ছিলেন ঘোর নাস্তিক আর বাস্তববাদী; একসময় আত্মহত্যার কথাও তিনি ভেবেছিলেন। তিনিই। বলেছিলেন : যে শুধু নিজের কথা ভাবে সে জীবনে কিছুই পায় না। সে বড় দুঃখী। কিন্তু অন্যের উপকার যে করে সে জীবন পরিপূর্ণ উপভোগ করতে পারে।
হাউসম্যান যদি আপনার মনে দাগ কাটতে না পারেন তাহলে বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ আমেরিকান নাস্তিক থিয়োডোর ড্রেইসারের পরামর্শ নিতে পারেন। ড্রেইসার সব ধর্মকে বলতেন : নিছক রূপকথা আর বোকাঁদের উদ্ভট কল্পনা। জীবন তার কাছে মূল্যহীন। এসত্ত্বেও ড্রেইসার যীশুর একটা কথা মানতেন–অপরকে সেবা করা।
অতএব অপরের জীবন যদি আমরা সুখময় করতে চাই, তাহলে কেবল নিজের জন্য নয়, অন্যদের উন্নতি জন্য চেষ্টা করা উচিত। নিজের আনন্দ নির্ভর করে অন্যদের আনন্দের উপর। তাই ড্রেইসারের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা যদি অন্যদের উন্নতির চেষ্টা করি তা এখনই করা উচিত। যদি দুশ্চিন্তা কাটিয়ে শান্তি আহরণ করতে চাই, চাই সুখ, তাহলে সাত নম্বর নিয়ম হলো :
অপরের প্রতি আগ্রহী হয়ে নিজেকে ভুলে যান। প্রতিদিন অন্তত একজনের মুখে হাসি আর আনন্দ ফুটিয়ে তুলুন।