২৫শে ডিসেম্বর। রাত ৩টা
প্লেন উড়ে চলছে।
ইঞ্জিনের হুম-হুম গর্জন ছাড়া অন্য কোন শব্দ নেই। কেবিন-লাইট জ্বলছে। কমান্ডোদের দেখা যাচ্ছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে থাকতে। প্রথম দিকে তারা নিজেদের মধ্যে মৃদুস্বরে কথাবার্তা বলছিল। এখন আর বলছে না।
সময় যতই ঘনিয়ে আসেছ উত্তেজনা ততই বাড়ছে। সবার চেহারায় তার ছাপ পড়েছে। একমাত্র নির্বিঘ্নে ঘুমুচ্ছে বেন ওয়াটসন। এই একটি লোকের মধ্যেই কোনো রকম বিকার নেই।
কেবিন-লাইটের পাশেই একটি লাল বাতি জ্বলে উঠল, যার মানে, প্লেনের ক্যাপ্টেন কথা বলতে চান। ফকনার হেডফোন কানে পরে নিল।
হ্যালো, ফকনার বলছি।
আমরা প্রায় পৌঁছে গেছি স্যার।
তাই নাকি?
কুড়ি মিনিটের মাথায় ড্রপিং জোনে চলে আসব। আপনি সবাইকে তৈরি হতে বলুন।
বাইরের আবহাওয়া কেমন?
খুব ভালো বলা চলে না। শক্ত বাতাস বইছে।
ফকনার ভ্রূ কোঁচকাল। ক্যাপ্টেন বলল, আমি কেবিনের বাতি কমিয়ে দিচ্ছি, যাতে চোখে অন্ধকার সয়ে যায়।
ঠিক আছে।
প্লেনের গতি কমে আসছে। নিচে নেমে এসেছে বেশ খানিকটা। দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। বাইরের প্রচণ্ড বাতাসের ঝাপটায় প্লেন এখন কেঁপেকেঁপে উঠছে। কেবিনের ভেতরটা প্রায় অন্ধকার।
ফকনার গম্ভীর গলায় বলল, অস্ত্ৰ, যন্ত্রপাতি, রসদ এবং প্যারাশুট সবাই পরীক্ষা করে নাও। তোমাদের নিজেদের পরীক্ষা শেষ হলে জনাথন পরীক্ষা করে দেখবে।
বেন ওয়াটসন উঠে বসেছে। সে তাকিয়ে আছে। কেবিনে ঠিক এই মুহূর্তে প্রচণ্ড কৰ্মব্যস্ততা। ফকনার বলল, বাইরে দমকা হাওয়া আছে কাজেই প্যারাশুট খোলার ব্যাপারে খুব সাবধান। মাটির কাছাকাছি না পৌঁছা পর্যন্ত কেউ ফিতা টানবে না, তার আগে ফিতা টানলে বাতাস ভাসিয়ে অনেক দূর নিয়ে যাবে।….
সবার আগে নামবে বেন ওয়াটসন এবং তার দল। তারা নেমে আমাদের জন্যে অপেক্ষা করবে না, দ্রুত চলে যাবে এয়ারপোর্টে।
সবার প্রথমে ঝাঁপ দিল ওয়াটসন। ঠাণ্ডা বাতাস বাইরে। নিচের মাটি দ্রুত কাছে এগিয়ে আসছে। আকাশভর্তি তারা। বেন ওয়াটসনের এক বার মনে হল, প্যারাশুট খোলার ফিতা না টানলে কেমন হয়? এটি একটি পুরোন অনুভূতি। প্যারাশুট নিয়ে লাফিয়ে পড়বার পর প্রায় সবারই এটা হয়। অনেকেই শেষ পর্যন্ত ফিতা খুলতে পারে না।
বেন ওয়াটসন মাটিতে নেমেই ঘড়ি দেখল। তিনটা পঞ্চান—পনের মিনিট লেট। তিনটা চল্লিশের ভেতর সবার মাটিতে পা রাখার কথা।
সে তাকাল আকাশের দিকে। একে-একে নামছে সবাই। সে গুনতে চেষ্টা করল—এক, দুই, তিন, চার পাঁচ…..