১৮. অনেক দূরে কোথাও ঘণ্টা বাজছে

অনেক দূরে কোথাও ঘণ্টা বাজছে। ঘণ্টাধ্বনি অস্পষ্ট কিন্তু তীক্ষ্ণ। শব্দ মাথার ভেতর ঢুকে যাচ্ছে। এই ঘণ্টা কিসের ঘণ্টা? গীর্জার না মন্দিরের? গীর্জার ঘণ্টার সঙ্গে মন্দিরের ঘণ্টার কোনো প্রভেদ কি আছে? মন্দিরেতে কাসার ঘণ্টা বাজল ঢং ঢং। ঘণ্টা কি সবসময় কাসার হয়? কাসা কোন বস্তু? তামা কাসা। তামা হলো কপার, কাসা কী?

নিশু চোখ মেলল ঘণ্টাধ্বনি শুনতে শুনতে। তার মাথায় তামা-কাসা বিষয়ক জটিলতা। সে শুয়ে আছে হাসপাতালের বিছানায়। খোলামেলা কেবিন। মাথার কাছে বড় জানালা। জানালা গলে রোদ এসে পড়েছে বিছানায়। রোদের কারণেই কেবিনের দেয়াল হলুদ দেখাচ্ছে। তাকে ঘিরে যারা বসে আছে তাদের মুখও হলুদাভ।

মতিন বলল, অ্যাই নিশু! অ্যাই!

নিশু মাথা ঘুরিয়ে তাকাল। মতিনের পাশে একজন পুলিশ অফিসার বসে আছেন। তাঁর গায়ে খাকি পোশাক। মাথায় টুপি। পুলিশ অফিসারের চেহারা খুব চেনা চেনা লাগছে। উনি কি নিশুর পরিচিত? পরিচিত হলে তাঁকে তামা এবং কাসার তফাত কী জিজ্ঞেস করা যায়।

মতিন বলল, নিশু, তুমি চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাক।

নিশু বাধ্য মেয়ের মতো চোখ বন্ধ করল। পুলিশ অফিসার বললেন, আপনি স্টেটমেন্ট দিতে চাইলে দিতে পারেন। আমার সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট আছে। আপনি কি স্টেটমেন্ট দিতে চান?

নিশু চোখ না খুলেই বলল, চাই।

এখন দেবেন?

জি।

তাড়াহুড়া কিছু নেই, ধীরেসুস্থে বলুন কী ঘটেছিল।

নিশু ক্লান্ত গলায় বলল, ঘণ্টা বাজছিল। অনেক দূরে কোথাও ঘণ্টা বাজছিল। ঘন্টাটা গীর্জার না মন্দিরের আমি বুঝতে পারছি না। আমার মনে হয় গীর্জার। কারণ গীর্জার ঘণ্টা যে-কোনো সময় বাজতে পারে। কারো মৃত্যুসংবাদ গীর্জায় পৌঁছালেই ঘণ্টা বাজে। মন্দিরের ঘণ্টা বাজার নির্দিষ্ট সময় আছে। মন্দিরের ঘণ্টা হয় কাসার তৈরি। কাসা তামা না।

পুলিশ অফিসার বললেন, ম্যাডাম, আপনি বিশ্রাম করুন। আপনার স্টেটমেন্ট পরে নেয়া হবে।

নিশু বলল, আচ্ছা।

তার চোখ বন্ধ। তারপরেও জানালা দিয়ে আসা হলুদ রোদ সে দেখতে পারছে। কীভাবে পারছে সেটাও এক রহস্য। আপাতত সে কোনো রহস্য নিয়ে চিন্তা করতে চাচ্ছে না। তার ঘুম দরকার। দীর্ঘ শান্তিময় ঘুম।

 

নিশু ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে পরদিন ভোরে স্টেটমেন্ট দিল। কী ঘটেছিল কিছুই বাদ দিল না। ওসি সাহেব বললেন, আপনি মামলা করবেন?

নিশু বলল, অবশ্যই।

ভালোমতো চিন্তা করে ডিসিশান নিন।

এখানে চিন্তা করার কী আছে?

রেপ কেস নিয়ে নানান লেখালেখি হবে। পত্রিকায় নানান গল্প ছাপা হবে। আপনার নিজের সামাজিক অবস্থান আছে। সেটাও বিবেচনায় রাখতে হবে।

নিশু বলল, একটা জিনিসই বিবেচনায় রাখতে হবে। দোষী যেন শাস্তি পায়।

ওসি সাহেব বললেন, রেপ কেসে বেশির ভাগ সময় দোষী শাস্তি পায় না। যে মামলা করে তার মানসম্মান নিয়ে টানাটানি শুরু হয়।

নিশু বলল, আপনি ওদের পক্ষ নিয়ে কথা বলছেন কেন?

ওসি সাহেব বললেন, আমি বাস্তবের পক্ষ নিয়ে কথা বলছি, কারো পক্ষ নিয়ে কথা বলছি না। আপনি মামলা করলে আমি অপরাধীদের গ্রেফতার করব। এই বিষয়ে আপনি নিশ্চিত থাকুন।

নিশ্চিত থাকব?

হ্যাঁ নিশ্চিত থাকবেন। আপনার বাবা আমার শিক্ষক ছিলেন। আমি বেশ অনেকবার আপনাদের বাসায় গিয়েছি। একবার আপনি নাশতা হিসেবে আমাকে এক বাটি নুডুলস দিয়েছিলেন। নুডুলসে লবণ ছিল না বলে স্যার আপনার সঙ্গে রাগারাগিও করেছিলেন। এখন কি আপনার সন্দেহ দূর হয়েছে?

জি।

আমরা মামলা ঠিকমতোই চালাব, কিন্তু আপনার সামনে মহাসঙ্কট।

 

ভোরের স্বদেশ পত্রিকায় নিশুকে নিয়ে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনের শিরোনাম–

মক্ষিরানীর বিপদ
স্টাফ রিপোর্টার জানাচ্ছেন, নিশু নামের জনৈকা উচ্চশিক্ষিতা অবিবাহিতা তরুণী একাকী একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে বাস করতেন। সন্ধ্যার পর ফ্ল্যাটে সন্দেহজনক চরিত্রের পুরুষদের আগমন ঘটত। লীলাখেলা চলত গভীর রাত পর্যন্ত। মধুলোভী কিছু পুরুষ রাতে থেকেও যেত। এই বিষয় নিয়ে অন্যান্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা অনেক দেন-দরবার করেছেন। বাড়িওয়ালাও মক্ষিরানীকে বিদায় করার অনেক চেষ্টা করেছেন। তাতে লাভ হয় নি। এখন মক্ষিরানী নিজের কাটা খালের পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছেন। পাড়ার কিছু বেয়াড়া ছেলেপুলেও মধুর লোভে মক্ষিরানীর ফ্ল্যাটে হানা দিয়েছে। সবাই মজা লুটবে, তারা কেন বাদ পড়বে? ফলাফল?

মক্ষিরানী গুরুতর আহত। তার জীবন সংশয়। মতিন ভোরের স্বদেশ পত্রিকা অফিসে বসে আছে। তার সামনে আজহার উল্লাহ। আজহার উল্লাহ আজ নানাবিধ কারণে বিরক্ত। তাঁর শরীরও খারাপ। জ্বর এসেছে। তিনি জ্বর নিয়েই অফিসে এসেছেন। কারণ আজ সাহিত্য পাতার পেস্টিং।

আজহার উল্লাহ মতিনের দিকে তাকিয়ে বললেন, কোনো কথা থাকলে বলো। কথা না থাকলে বিদায় হও। ভোতা মুখে অকারণে আমার সামনে বসে থাকবে না।

কথা ছিল স্যার।

কথা থাকলে বলো।

আপনার হাতের কাজ শেষ করুন। তারপর বলি।

আজহার উল্লাহ বিরক্ত গলায় বললেন, আমার সব কাজই মাথার কাজ। আমার হাতের কোনো কাজ নেই। মাথার কাজ কখনো শেষ হয় না। কাজেই তোমার যা বলার এখনই বলো।

মতিন বলল, স্যার, আপনাদের পত্রিকার প্রথম পাতায় একটা খবর বের হয়েছে–মক্ষিরানীর বিপদ। খবরটা কি আপনি পড়েছেন?

আজহার উল্লাহ বললেন, ধর্ষণের খবর আমি পড়ি না।

খবরটা পড়া থাকলে আমার ব্যাখ্যা করতে সুবিধা হতো। খবরটা বানোয়াট। একটা মেয়ে রেপড়া হয়েছে। সে মামলা করেছে। পুলিশ আসামিদের খুঁজছে। এই সময় একটা মিথ্যা খবর খুবই ক্ষতিকর।

আজহার উল্লাহ বললেন, পত্রিকার খবর নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। কাজেই তুমি এসব নিয়ে মোটেই চিন্তা করবে না। ক্লিয়ার?

জি ক্লিয়ার।

এখন বিদায় হবে?

জি-না স্যার। আপনার কাজ শেষ হলে কিছুক্ষণ গল্প করব, তারপর চলে যাব।

গল্প এখনই শেষ করে বিদায় হও। আজ আমার শরীর ভালো না। জ্বর।

মতিন বলল, গল্পটা রবীন্দ্রনাথের গানবিষয়ক। রবীন্দ্রনাথের একটা গান আছে, গীতবিতানে বর্ষার গান অংশে। কথাগুলি হচ্ছে–

এসো এসো হে তৃষ্ণার জল কলকল ছলছল
ভেদ করি কঠিনের ক্রুর বক্ষতল কলকল ছলছল
এসো এসো উৎস স্রোতে গৃঢ় অন্ধকার হতে?
মরুদৈত্য কোন মায়াবলে করেছে বন্দি পাষাণ শৃঙ্খলে।

আজহার উল্লাহর চোখ তীক্ষ্ণ। ভুরু কুঁচকে আছে। তিনি মন দিয়েই শুনছেন।

গানের কথাগুলি কেমন লাগছে স্যার?

রবীন্দ্রনাথের কথা নিয়ে কোনো প্রশ্নই থাকে না।

মতিন সামান্য ঝুঁকে এসে বলল, শান্তিনিকেতনে প্রথম যখন টিউবওয়েল বসানো হয় গানটা তখন লেখা। টিউবওয়েল বসানো উপলক্ষে গান। এটা বর্ষার গান না। স্যার, ইন্টারেস্টিং না?

অবশ্যই ইন্টারেস্টিং! আমি জানতাম না। গল্পটা হঠাৎ আমাকে বলার উদ্দেশ্য কী? উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই আছে। আছে না?

জি আছে। মক্ষিরানী নামে যে মেয়েটির কথা আপনার পত্রিকায় ছাপা হয়েছে গল্পটা সেই মেয়েটির কাছে আমি শুনেছি। তার মতো পড়ুয়া মেয়ে দেশে বিদেশে কোথাও পাওয়া যাবে না। মেয়েটি জীবনে কোনো পরীক্ষায় ফার্স্ট ছাড়া সেকেন্ড হয় নি। সে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়ে পিএইচডি করতে যাচ্ছে। তাকে নিয়ে একটি পত্রিকা নোংরা গল্প ছাপবে এটা কি ঠিক?

ঠিক না। আমি ব্যবস্থা করব।

স্যার যাই?

যাও। চা খেয়ে যাও।

রমনা থানার ওসি সাহেব আমাকে খবর পাঠিয়েছেন। জরুরি কী কথা বলবেন। তাঁর কাছে যাব।

আজহার উল্লাহ বললেন, মেয়েটা কি তোমার প্রণয়িনী?

মতিন বলল, জি-না। আমার এত সৌভাগ্য না।

 

রমনা থানার ওসি সাজ্জাদ সাহেব মতিনের সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করলেন। চা-বিসকিট খাওয়ালেন। দেশের রাজনীতি কোন পথে চলছে তা নিয়ে কিছুক্ষণ আলোচনা করলেন। পুলিশ কখনো রাজনীতি নিয়ে আলাপ করে না। কেউ যখন করে তখন বুঝতে হয় ঝামেলা আছে। মতিন ঝামেলাটা ধরতে চেষ্টা করছে, পারছে না।

মতিন বলল, স্যার, আমাকে ডেকেছেন কী জন্যে? (থানার ওসি সাহেবকে স্যার বলা ঠিক হচ্ছে কি-না এটা নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ভেবেছে মতিন। সমাধানে আসাতে পারে নি। তবে সে লক্ষ করল, স্যার ডাকতে তার তেমন অস্বস্তি হচ্ছে না।)

ওসি সাহেব বললেন, আপনাকে ডেকেছি দুটি খবর দেবার জন্যে। দুটি খবরই খারাপ।

বলুন শুনি।

তিনজন আসামির দুজন ধরা পড়েছে, পুলিশ কাস্টডিতে আছে।

এটা তো ভালো খবর। খারাপ হবে কেন?

এদের পক্ষে একজন মন্ত্রী দুজন বিরোধী দলের এমপি সুপারিশ করছেন। সুপারিশ এমন পর্যায়ের যে সন্ধ্যার মধ্যেই তাদের ছেড়ে দিতে হবে। যদি ছেড়ে না দেই তাহলে আগামীকাল তাদের কোর্টে নিতে হবে। কোর্টে সঙ্গে সঙ্গে জামিন হয়ে যাবে। টাকার খেলা।

মতিন বলল, স্যার, আপনার এখানে সিগারেট খাওয়া যায়?

ওসি সাহেব বললেন, অবশ্যই খাওয়া যায়। সিগারেট ধরান।

মতিন সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলল, দ্বিতীয় খারাপ খবরটা কী?

ওসি সাহেব হতাশ গলায় বললেন, দ্বিতীয় খারাপ খবরটা হচ্ছে নিশু মেয়েটির বাড়িওয়ালা থানায় একটা জেনারেল ডায়েরি করে রেখেছেন। জেনারেল ডায়েরির বিষয়বস্তু হচ্ছে–নিশু মেয়েটি চরিত্রহীনা। তার কাছে নানান ধরনের লোক আনাগোনা করে।

মতিন বলল, এ ধরনের মিথ্যা ডায়েরির গুরুত্ব কী?

কোর্টে যখন মামলা উঠবে তখন ডায়েরিটা গুরুত্ব পাবে। আসামি পক্ষের লইয়ার বিষয়টি কোর্টে তুলে প্রমাণ করবে নিশু খারাপ মেয়ে।

মতিন বলল, আমাদের কী করা উচিত?

ওসি সাহেব ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে চুপ করে রইলেন।

মতিন আবার বলল, আমাদের কী করা উচিত?

ওসি সাহেব বললেন, আমি পরামর্শ দিব না। আমি ঘটনা বললাম। আপনারা বিচার বিবেচনা করবেন। আমাদের দেশটা ছোট, সবাই সবার আত্মীয়। ভয়ঙ্কর যে-কোনো অপরাধীরও খালাতো ফুপাতো চাচাতো ভাই থাকেন প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন। বুঝতে পারছেন ঘটনা?

পারছি।

মমাটেই পারছেন না। এই ঘটনা বাইরের কেউ বুঝবে না। আমরা পুলিশের লোকরা বুঝি। কাউকে কিছু বলতে পারি না। আর বললেও কেউ বিশ্বাস করবে না। আমরা খারাপ। মার্কামারা খারাপ।

মতিন বলল, আপনারা কি আসামি ছেড়ে দিবেন?

দিতেও পারি।

কাজটা ঠিক হবে?

আসামি পক্ষের আত্মীয়স্বজনরা বলবে কাজটা সঠিক হয়েছে। আপনারা বলবেন কাজটা বেঠিক হয়েছে।

আপনি নিজে কী বলবেন?

আমি কিছুই বলব না। আমরা পুলিশ, বলাবলির মধ্যে আমরা নাই। আরেক কাপ চা খাবেন?

খেতে পারি।

চা খেতে খেতেই মন্ত্রী সাহেবের টেলিফোন চলে এলো! ওসি সাহেব টেলিফোনে বিগলিত গলায় বললেন, স্যার, কেমন আছেন? আপনার টেলিফোনের দরকার ছিল না। আপনার পিএস করলেই হতো।

মন্ত্রী বললেন, কাজটা কি হয়েছে?

ওসি সাহেব বিনয়ে গলে গিয়ে বললেন, আপনি নিজে বলবে আর কাজ হবে না এটা কেমন কথা।

থ্যাংক য়্যু। ওরা ছাড়া পেয়েছে?

এখনো পায় নাই। সামান্য একটু ঝামেলা হয়েছে। পত্রিকার লোকজন জেনে গিয়েছে। আসামি ছেড়ে দিলে এরা নিউজ করে ফেলবে—মন্ত্রীর নির্দেশে ধর্ষক আসামি খালাস।

আমার কথা এখানে আসবে কেন?

অবশ্যই আসবে না। আমি কথার কথা বললাম। আপনি স্যার একটা লিখিত অর্ডার দিলে আমার জন্য সুবিধা হয়। সঙ্গে সঙ্গে আসামি খালাস করে দিতে পারি।

আমার মুখের কথা কোনো কথা না?

স্যার, এটা আপনি কী বলেন! আপনার মুখের কথার উপরে কোনো কথা আছে? তবে স্যার একবার পূর্তমন্ত্রীর টেলিফোনে আসামি থানা হাজত থেকে ছেড়ে দিয়েছিলাম। সেটা নিয়ে এমন ক্যাচাল লেগে গেল। পূর্তমন্ত্রী বললেন, টেলিফোনে তাঁর সঙ্গে আমার কোনো কথাই হয় নি। আমার চাকরি যায় যায় অবস্থা।

ওসি সাহেব।

জি স্যার।

আপনি ভালো ত্যাঁদড় আছেন। তবে আমার কাছে ত্যাঁদড় ঠিক করার মন্ত্র আছে।

ওসি সাহেব টেলিফোন রাখতে রাখতে ছোষ্ট্র নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, নিশুর বাবা আমার ডাইরেক্ট টিচার ছিলেন। অনেকদিন স্যারের বাসায় গিয়েছি। দুপুরে স্যারের বাসায় গিয়েছি আর না খেয়ে ফেরত এসেছি এরকম কখনো হয়। নি। স্যারের স্ত্রী মারা গিয়েছিলেন, উনি নিজেই রান্না করতেন। একবার কচুর লতি দিয়ে মুরগি রান্না করলেন। আপনি কি কচুর লতি দিয়ে মুরগি কখনো খেয়েছেন?

জি-না।

আমিও খাই নি। এই প্রথম, এই শেষ।

খেতে কেমন ছিল?

খেতে কেমন ছিল মনে নেই। ভালো কথা মনে করেছেন, একদিন আমার স্ত্রীকে বলব রান্না করতে। রাজি হবে কি-না জানি না। মেয়েরা ট্র্যাডিশনের বাইরে যেতে পারে না।

মতিন উঠে দাঁড়াল। তাকে কিছু কাজকর্ম করতে হবে। দুএকদিনের মধ্যেই নিশু হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবে। নিশুর থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। পুরনো ফ্ল্যাটে ফিরে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। তবে নিশুর রগ ত্যাড়া। সে হয়তো পুরনো জায়গাতেই ফিরে যেতে চাইবে। দুএকজন ভালো উকিলের সঙ্গেও পরামর্শ করা দরকার। রোগী চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া চলতে পারে না। মামলা একটা রোগ, উকিল রোগের চিকিৎসক।

 

নিশু হাসপাতালের বিছানায় আধশোয়া হয়ে আছে। তার হাতে স্যুপের বাটি। দীর্ঘ সময় পর পর সে চামচে করে খানিকটা স্যুপ মুখে দিচ্ছে। তার ঘর খালি, তবে দরজার বাইরে চেয়ার পেতে একজন পুলিশ বসা। রমনা থানার ওসি সাহেব পুলিশ পাহারার ব্যবস্থা করেছেন।

মতিনকে ঢুকতে দেখেই নিশু হাসল। মতিনের কাছে মনে হলোঁ, দশ এগারো বছরের একটা বালিকা হাসছে। অল্প কয়েক দিনেই নিশু খুব রোগা হয়ে গিয়েছে। কণ্ঠার হাড় বের হয়েছে। গাল ভেঙে গেছে। তরুণী মেয়ে হঠাৎ রোগা হয়ে গেলে তার চেহারায় প্রবল বালিকা ভাব আসে। নিশুর ক্ষেত্রে তাই ঘটেছে।

মতিন হাসিমুখে বলল, লোহ্যা।

নিশু বলল, লোহ্যা কী?

হ্যালোটা উল্টো করে বললাম। আছিস কেমন?

নিশু বলল, লোভা। অর্থাৎ ভালো।

মাথার যন্ত্রণা আছে না গেছে?

হালকাভাবে আছে।

ততাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়বে কবে?

আগামীকাল সন্ধ্যায়।

মতিন বলল, গুড। এর মধ্যে আমি তোর থাকার ব্যবস্থা করে ফেলব।

নিশু বলল, থাকার ব্যবস্থা করে ফেলব মানে কী?

মতিন বলল, তুই নিশ্চয়ই আগের জায়গায় ফিরে যেতে চাচ্ছিস না?

নিশু বলল, চাচ্ছি।

মতিন বলল, অবশ্যই লা। জায়গাটা তোর জন্যে রিস্কি। তার উপর ঐ ফ্ল্যাটে তোর খারাপ স্মৃতি আছে। ফিরে যাওয়া অবশ্যই ঠিক হবে না।

আমি যাবটা কোথায়?

আপাতত কিছুদিন আমার দুলাভাইয়ের বাড়িতে।

উনার সঙ্গে কথা হয়েছে?

এখনো হয় নি। হবে।

উনি যদি না বলেন তখন?

আমার দুলাভাই জীবনে কখনো কোনো কিছুতে না বলেন নি। তুই যদি দুলাভাইকে বলিস, আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই, উনি মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলবেন, আচ্ছা দেখি কী করা যায়।

নিশু শব্দ করে হাসছে। মতিন হাসছে। দরজার বাইরে চেয়ারে বসে থাকা পুলিশ বিস্মিত হয়ে তাকাচ্ছে। পুলিশরা কাউকে শব্দ করে হাসতে দেখলে খুব বিস্মিত হয়।

 

হাবিবুর রহমান নিউ সালেহা ফার্মেসিতে মন খারাপ করে বসে আছেন। রাত বাজে আটটা। ফার্মেসি রাত এগারোটা পর্যন্ত খোলা থাকার কথা। রাতে রোগের প্রকোপ বাড়ে। ফার্মেসিগুলিতে ওষুধ বিক্রি বাড়ে সন্ধ্যার পর। তার দোকানের দুজন কর্মচারীই গতকাল থেকে অনুপস্থিত। একজনের ডেঙ্গু হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। অন্য একজনের কী হয়েছে কেউ জানে না। সে নাকি বাসায়ও ফিরে নাই।

রাত এগারোটা পর্যন্ত হাবিবুর রহমান ফার্মেসিতে বসে থাকতে পারেন না। বসে থেকে লাভও কিছু নেই। কোথায় কোন ওষুধ থাকে তিনি জানেন না। দামও জানেন না। তারপরেও দোকান খোলা রাখতে হয়। দোকান বন্ধ থাকলেই লোকজনের মলে ধারণা ঢুকে যাবে নিউ সালেহা ফার্মেসি সন্ধ্যার পর পর বন্ধ। হয়ে যায়। রাতে ওষুধের দরকার পড়লে তারা প্রথমেই নিউ সালেহা ফার্মেসি বাদ দিবে। ধরেই নেবে এই ফার্মেসি বন্ধ।

হাবিবুর রহমান আবার ঘড়ি দেখলেন। আটটা পাঁচ বাজে। মাত্র পাঁচ মিনিট পার হয়েছে, অথচ তার কাছে মনে হয়েছে খুব কম করে হলেও আধাঘণ্টা পার হয়েছে। তিনি ঠিক করে রেখেছেন রাত নটা পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। নটার সময় ফার্মেসি বন্ধ করে যাবেন নিরাময় ক্লিনিকে। তৌহিদাকে দেখে আসবেন। গতকাল যেতে পারেন নি। তৌহিদা নিশ্চয়ই অপেক্ষা করেছে। আজকে যেতেই হবে।

দুলাভাই, ঘুমাচ্ছেন নাকি?

হাবিবুর রহমান জেগেই ছিলেন। ফার্মেসির দরজার দিকে তাকিয়েও ছিলেন, তারপরেও তিনি কেন মতিনকে ঢুকতে দেখেন নি এটা ভেবে বিস্মিত বোধ করলেন। মতিনকে দেখে তার ভালো লাগছে। ভালো লাগাটা তিনি প্রকাশ করলেন না।

দুলাভাইয়ের শরীর খারাপ না-কি?

না।

দেখে তো মনে হচ্ছে শরীর খারাপ।

হাবিবুর রহমান জবাব দিলেন না। মতিন বলল, তৌহিদাকে না-কি ক্লিনিকে ভর্তি করেছেন, এটা কি সত্যি?

হাবিবুর রহমান বললেন, হুঁ।

বুবুকেও ক্লিনিকে ভর্তি করিয়ে ঝাড়া হাত-পা হয়ে যান। থাকবেন আমার সঙ্গে মেসে। ঠিক আছে?

হাবিবুর রহমান বললেন, তুমি কতক্ষণ থাকবে?

মতিন বলল, যতক্ষণ বলবেন ততক্ষণ থাকব।

রাতে আমার সঙ্গে খাওয়া দাওয়া কর।

আচ্ছা।

বাসায় ফেরার পথে তৌহিদাকে দেখে যাব। তুমিও সঙ্গে চল। তোমাকে দেখলে সে খুশি হবে।

আচ্ছা।

হাবিবুর রহমান ঘড়ি দেখলেন না। আটটা পনেরো বাজে। নটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে ইচ্ছা করছে না। মতিনকে নিয়ে সকাল সকাল বাড়ি ফেরাই ভালো। তার খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও করতে হবে। ঘরে কিছুই নেই। এক কেজি খাসির মাংস কিনে ফিরতে হবে।

মতিন।

জি দুলাভাই।

তুমি সারাক্ষণ ডুব দিয়ে থাক, এটা অন্যায়।

মতিন হাই তুলতে তুলতে বলল, সারাক্ষণ ভেসে থাকাও অন্যায়।

হাবিবুর রহমান বিরক্ত মুখে বললেন, তোমার সঙ্গে কথা বলাও অন্যায়। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বাকি জীবন তোমার সঙ্গে কথা বলব না। তোমার বোনও এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মতিন সিগারেট ধরিয়েছে। মুরব্বিদের সামনে সিগারেট ধরানোটা বেয়াদবি। হাবিবুর রহমান মতিনের এই বেয়াদবি উপেক্ষা করলেন। সবসময় সবকিছু ধরতে নেই।

মতিনকে দেখে হাবিবুর রহমানের ভালো লাগছে। বিপদের সময় একজন কেউ পাশে থাকলে ভালো লাগে। ভরসা পাওয়া যায়।

দুলাভাই, আপনাকে একটা জরুরি কথা বলতে এসেছি।

বলো।

আপনি যেরকম রাগী রাগী ভঙ্গিতে কথা বলছেন, ভরসা পাচ্ছি না। একটু সহজভাবে তাকাবেন আমার দিকে?

আগডুম বাগডুম না করে কী বলবে বলো।

একটা মেয়ে ভয়ঙ্কর বিপদে আছে। কয়েকটা দিন তাকে আপনার বাড়িতে আশ্রয় দিতে হবে। অসুবিধা আছে?

অসুবিধার কী আছে? নাম কী মেয়ের?

নাম জানা কি দরকার? তার পরিচয় সে একজন বিপদগ্রস্ত মেয়ে। দুলাভাই, চা খেতে ইচ্ছা হচ্ছে। আপনার এখানে চায়ের ব্যবস্থা আছে?

না। সামনে টি-স্টল আছে, ওখান থেকে খেয়ে আস।

আপনিও চলুন।

দোকান বন্ধ করে যাই।

মতিন বলল, দোকান বন্ধ করার দরকার কী? আপনার তো আর সোনার দোকান না যে লুট করে নিয়ে যাবে। ওষুধ কে নিবে?

হাবিবুর রহমান কঠিন গলায় বললেন, আমার সঙ্গে পাগলের আলাপ করবে না। তুমি পাগল হতে পার, আমি পাগল না। তুমি চায়ের অর্ডার দাও। আমি দোকান বন্ধ করে আসছি।

 

নিরাময় ক্লিনিকের কেয়ারটেকারের চেহারা সিনেমার নায়কদের মতো। তার কথাবার্তা পোশাক-আশাকও সেরকম। সিনেমার নায়করা যেমন নায়িকা ছাড়া আর সবার সঙ্গেই ভুরু কুঁচকে কথা বলে এও সেরকম। সারাক্ষণ ভুরু কুঁচকে আছে। তার হাতে চা বা কফির মগ। কথা বলছে চোখের দিকে না তাকিয়ে।

রোগীর সঙ্গে দেখা হবে না। আপনারা চলে যান।

হাবিবুর রহমান বললেন, দেখা হবে না কেন?

রোগীকে নটার সময় ঘুমের ওষুধ দেয়া হয়েছে। সে ঘুমাচ্ছে।

হাবিবুর রহমান বললেন, ডাক্তার সাহেব বলেছিলেন রাত দশটা পর্যন্ত দেখা করা যাবে।

কেয়ারটেকার বলল, আমার প্রতি সেরকম নির্দেশ নেই। খামাখা তর্ক করবেন না। বাসায় চলে যান।

হাবিবুর রহমান মতিনের দিকে তাকিয়ে হতাশ গলায় বললেন, কী করব?

মতিন বলল, এসেছি যখন দেখা করে যাব।

কীভাবে?

ব্যবস্থা করছি। আপনি ক্লিনিকের গেটের বাইরে গিয়ে সিগারেট ধরান।

মতিন কাউন্টারের দিকে এগিয়ে গেল। কেয়ারটেকারের পাশে একজন নার্স এসে দাঁড়িয়েছে। তার হাতে ফাইল। নার্সটার চেহারা সুন্দর। কেয়ারটেকারের ভুরু এখন সহজ হয়েছে। মুখ হাসি হাসি। নায়ক সিনড্রম। মতিন নিজেও হাসি হাসি মুখ করে বলল, ভাই, আপনার নাম জানতে পারি?

কেয়ারটেকারের ভুরু আবার কুঁচকে গেল। গলার স্বর কঠিন।

নাম জেনে কী করবেন?

কী করব সেটা পরের ব্যাপার। আপনার কি নাম বলতে অসুবিধা আছে?

নাজমুল হাসান।

মতিন শান্তগলায় বলল, হাসান সাহেব, কী বলছি মন দিয়ে শুনুন। আমার নাম মতিন! আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর পলিটিক্যাল পিএস। আইডেনটিটি কার্ড দেখতে চান?

নাজমুল হাসান শুকনো গলায় বলল, কী সমস্যা বলুন তো?

সমস্যা আপনাকে বলব না। ক্লিনিকের যিনি পরিচালক তাকে বলব। আপনি টেলিফোনে উনাকে ধরে দিল।

স্যারকে এখন পাওয়া যাবে না। তিনি সিঙ্গাপুর গিয়েছেন। আঠারো তারিখ ফিরবেন।

উনার নেক্সটম্যান কে?

আপনারা কী চাচ্ছেন বলুন, আমি ব্যবস্থা করি। পেসেন্ট তৌহিদার সঙ্গে কথা বলবেন তো? নার্স, পেসেন্টকে নিয়ে এসো।

কাউন্টারে বড় বড় করে লেখা NO SMOKING. সেদিকে তাকিয়েই মতিন সিগারেট ধরিয়ে আয়োজন করে ধোয়া ছাড়তে লাগল। কেয়ারটেকার নাজমুল তাকিয়ে আছে। কিছু বলছে না।

তৌহিদা কিছুক্ষণ অবাক হয়ে মতিনকে দেখল। তার চেহারা ঝলমল করে উঠল। সে কিশোরীর আনন্দময় গলায় বলল, আমাকে নিতে এসেছ?

মতিন বলল, হুঁ।

তৌহিদা বলল, ব্যাগ নিয়ে আসি?

মতিন হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ল।

তৌহিদা উল্কার মতোই ছুটে গেল। মতিন কেয়ারটেকারের দিকে তাকিয়ে শান্তগলায় বলল, আপনারা ভুল তথ্য দিয়েছিলেন। রোগী ঘুমাচ্ছে। রোগী তো দিব্যি জেগে আছে। আপনার সমস্যাটা কী?

নাজমুল হাসান কিছু বলল না। তাকে হঠাৎ করেই খুব বিচলিত মনে হলো। মতিন বলল, পেসেন্টের রিলিজের ব্যবস্থা করুন। আমরা পেসেন্ট এখানে রাখতে ভরসা পাচ্ছি না।

পেসেন্ট কীভাবে রিলিজ করব?

যেভাবে রিলিজ করা হয় সেভাবে করবেন। আপনাদের কর্তাব্যক্তি যারা আছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আমি কথা বলব, প্রয়োজনে মাননীয় মন্ত্রী সাহেব কথা বলবেন। আমি ব্যবস্থা করে দেব। পেসেন্ট মন্ত্রী সাহেবের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। উনি চান না বিষয়টা সবাই জানুক। সে কারণেই গোপন।

ভাই সাহেব, আমি তো বিরাট যন্ত্রণায় পড়লাম। স্যারও দেশে নাই।

সিঙ্গাপুরে উনি যে হোটেলে আছেন সেখানে টেলিফোন করুন। কমুনিকেশন বিপ্লবের যুগে এটা কোনো ব্যাপার না। রেইন ফরেস্টের গাছের উপর কেউ বসে থাকলে ও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়।

কেয়ারটেকার নাজমুলকে দেখে মনে হচ্ছে সে পুরোপুরি বিপর্যস্ত। মতিন। আরেকটা সিগারেট ধরাল।

 

রাত সাড়ে দশটায় তৌহিদাকে নিয়ে মতিন ক্লিনিকের গেট দিয়ে বের হলো। তৌহিদার হাতে কাপড়ের একটা ব্যাগ। মতিনের হাতে বিশাল এক স্যুটকেস। হাবিবুর রহমান গেটের বাইরে চিন্তিত মুখে হাঁটাহাঁটি করছিলেন। দুজনকে বেরুতে দেখে অবাক হয়ে বললেন, এ-কী! মতিন বলল, দুলাভাই, একটা ট্যাক্সি ক্যাব দেখুন। ঘটনা পরে ব্যাখ্যা করব।

তৌহিদার খুবই আনন্দ হচ্ছে। তার মাথায় অনেক কিছু মিলিয়ে জট পাকিয়ে গিয়েছিল, এখন মনে হচ্ছে সব জট খুলে গেছে। তার বিয়ে হয়েছে মতিনের সঙ্গেই। বিয়ের পর অসুস্থ হয়ে সে হাসপাতালে ছিল। অসুখ সেরে গেছে বলে তার স্বামী তাকে নিতে এসেছে।

তৌহিদা মতিনের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি স্যুটকেস হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছ কেন? ভার লাগে না? স্যুটকেস নামিয়ে রাখ।

মতিন স্যুটকেস নামিয়ে রাখল।

তৌহিদা বলল, রাতের খাবার খেয়েছ?

মতিন বলল, না। বাসায় গিয়ে খাব।

বাসায় রান্না কী?

জানি না কী রান্না।

তৌহিদা বলল, কী রান্না সেটা নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। আমি গিয়ে রাঁধব।

মতিন বলল, ঠিক আছে।

তৌহিদা মতিনের দিকে এগিয়ে এসে সহজ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে মতিনের হাত ধরল। তার মোটেও লজ্জা লাগছে না। স্ত্রী স্বামীর হাত ধরবে এতে লজ্জার কী আছে? তাছাড়া রাস্তায় লোকজনও নেই। কেউ দেখছেও না।

তৌহিদা বলল, অ্যাই, তোমার হাত এত ঠাণ্ডা কেন?

মতিন বলল, জানি না কেন?

তুমি কোনো চিন্তা করবে না। আমি আজ রাতে ঘুমাবার সময় তোমার হাতে আর পায়ে তেল মালিশ করে দেব।

আচ্ছা।

শুধু আজ না, আমি রোজ রাতে তেল মালিশ করে দেব।

আচ্ছা।

আমি এতদিন ধরে হাসপাতালে পড়ে আছি, তুমি আজ প্রথম আমাকে দেখতে এসেছ। সরি বলো।

সরি।

হাবিবুর রহমান ইয়েলো ক্যাব নিয়ে ফিরেছেন। দরজা খুলে নামার সময় দেখলেন, তৌহিদা মতিনের গায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *