2 of 3

১৮।৪ অষ্টাদশ কাণ্ড : চতুর্থ অনুবাক

চতুর্থ অনুবাক
প্রথম সূক্ত : পিতৃমেধঃ
[ঋষি : অথর্বা দেবতা : যম, পিতরঃ, অগ্নি, চন্দ্রমা ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, ভুরিক, জগতী, শক্করী, বৃহতী, অনুষ্টুপ, গায়ত্রী, পংক্তি, উষ্ণিক]

 আ রোহত জনিত্ৰীং জাতবেদসঃ পিতৃযাণৈঃ সং ব আ রোহয়ামি। অবাড়ব্যেষিততা হব্যবাহ ঈজানং যুক্তা সুকৃতাং ধত্ত লোকে ॥১॥ দেবা যজ্ঞমৃতবঃ কল্পয়ন্তি হবিঃ পুরোডাশং সুচো যজ্ঞায়ুধানি। তেভিৰ্যাহি পথিভির্দেৰ্বর্যানৈর্যৈরীজানাঃ স্বর্গং যন্তি লোক৷৷ ২৷৷ ঋতস্য পন্থমনু পশ্য সাধ্বঙ্গিরসঃ সুকৃত যেন যন্তি। তেভিৰ্যাহি পথিভিঃ স্বর্গং যত্রাদিত্যা মধু ভক্ষয়ন্তি তৃতীয়ে নাকে অধি বি শ্ৰয়স্ব৷ ৩৷৷ এয়ঃ সুপর্ণা উপরস্য মায়ু নাকস্য পৃষ্ঠে অধি বিষ্টপি শিতাঃ। স্বর্গ লোকা অমৃতেন বিষ্ঠা ইষমূৰ্জং যজমানায় দুহ্রাম ॥৪ জুহূর্দার দ্যামুপভৃদন্তরিক্ষং ধ্ৰুবা দাধার পৃথিবীং প্রতিষ্ঠা। প্রতীমাং নোকা ঘৃতপৃষ্ঠাঃ স্বর্গাঃ কামংকামং যজমানায় দুহ্রাম ॥৫৷৷ ধ্রুব আ রোহ পৃথিবীং বিশ্বভোজসমৃন্তরিক্ষমুপভূদা ক্রমস্ব। জুহু দ্যাং গচ্ছ যজমানেন সাকং সুবেণ বৎসেন, দিশঃ,প্রপীনাঃ সর্বা ধুম্ফারূণীয়মানঃ ॥ ৬৷৷ তীর্থৈস্তরন্তি প্ৰবতো মহীরিতি যজ্ঞকৃতঃ সুকৃতো যেন যন্তি। অত্রাদধুর্যজমানায় লোকং দিশো ভূতানি যদকল্পয়ন্ত ॥৭॥ অঙ্গিরসাময়নং পূর্বো অগ্নিরাদিত্যনাময়নং গার্যপত্যো দক্ষিণানাময়নং দক্ষিণাগ্নিঃ। মহিমানমগ্নের্বিহিতস্য ব্ৰহ্মণা সমঙ্গঃ সর্ব উপ যাহি শগ্মঃ ॥ ৮পূর্বো অগ্নিদ্ধা তপতু শং পুরস্তাচ্ছং পশ্চাৎ তপতু গাহপত্যঃ। দক্ষিণাগ্নিষ্টে তপতু শৰ্ম বর্মোত্তরতো মধ্যততা অন্তরিক্ষাদ। দিশোদিশো অগ্নে পরি পাহি ঘোরাৎ ॥৯॥ যুয়মগ্নে শমাভিস্তনুভিরীজানমভি লোকং স্বর্গ। অশ্বা ভূত্বা পৃষ্টিবাহো বহাথ যত্র দেবৈঃ সধমাদং মদন্তি ॥১০৷৷

বঙ্গানুবাদ –হে জাতবেদাগণ (জাত প্রাণীগণের বেত্তা অগ্নিসকল)! [ বৈনিক বহ্নিকে লক্ষ্য ) করে বহুবচন করা হয়েছে। আহুনীয়, গার্হপত্য, দক্ষিণাগ্নি ইত্যাদি ভেদে অগ্নি এক নন, একাধিক ]। তোমরা আপন উৎপাদক অরণিতে (জনিত্ৰীং) প্রবিষ্ট হও (আ রোহত)। আমিও তোমাদের পিতৃযান মার্গে সম্যক অর্থাৎ বিধি অনুযায়ী অরণিদ্বয়ে অধিরোহণ করাচ্ছি (সম্ বঃ আ রোহয়ামি)। [মার্গ দুরকম–দেবযান ও পিতৃযান। দেবলোকপ্রাপ্তিসাধনভূত দেবযান এবং পিতৃলোক প্রাপক পিতৃযান। যে দুই খণ্ড কাষ্ঠের ঘর্ষণে অগ্নি জ্বালানো হয়, তা অরণী; সেইজন্য পিতৃযজ্ঞ সাধনের জন্য যজ্ঞাগ্নিকে অরণিদ্বয়ে সমারোপণের কথা বলা হয়েছে]। হব্যবাহক অগ্নি দেবগণের উদ্দেশে (ইষিতঃ) যজমান কর্তৃক প্রদত্ত হবিঃ বহন করেছেন (অবাট)। [দেবতাগণের নিমিত্ত হব্য বহন করেন যে অগ্নি তিনি হব্যবাহক; যে, অগ্নি পিতৃগণের নিমিত্ত হব্য বহন করেন তিনি কব্যবাহন]। অতএব হে অগ্নিগণ! তোমরা পরস্পর সমবেত ভাবে (যুক্তাঃ) হয়ে দেশান্তরে মৃত এই যজমানকে (ঈজানং) পুণ্যাত্মাগণের প্রাপণীয়, লোকে (সুকৃতাং লোকে) ধারণ বা স্থাপন করো (ধত্ত)। ১।

ইন্দ্র প্রমুখ যাগযোগ্য দেবতাগণ (দেবাঃ) ও বসন্ত ইত্যাদি কালসমূহ (ঋতবঃ) যজ্ঞ কল্পনা করেছেন; (অর্থাৎ স্বয়ং হবিঃ-স্বীকারের নিমিত্ত ও যজ্ঞকারীর ফলসিদ্ধির নিমিত্ত যজ্ঞ নির্মাণ করেছেন। হবিঃ (চরু-আজ্য-সোমলক্ষণ), পুরোডাশ (পিষ্টময়), সুচ (যজ্ঞীয় পাত্র) ও যবে আয়ুধবৎ অর্থাৎ যজ্ঞের জুহু ইতাদি অন্যান্য পাত্রগুলির নির্মাতা, হে আহিতাগ্নি! (তুমি এই প্রেত সহ) দেবলোক-প্রাপ্তিসাধন মার্গে গমন করো (পথিভিঃ যাহি)। [ সুক ইত্যাদি যজ্ঞীয় পাত্রগুলি যজ্ঞবিদ্বেষকারী ও উপদ্রবকারীগণকে যজ্ঞের মাধ্যমে পরিহারে সমর্থ বলে এগুলিকে আয়োধনসাধন-শস্ত্র ইত্যাদিরূপে উল্লেখ করা হয়েছে। তুমি সেই পথে গমন করো, যে পথে ইষ্টবন্ত অর্থাৎ কৃতজ্ঞ পুরুষগণ (ঈজানাঃ) সুখাত্মক স্থানে (স্বর্গং নোকম) গমন করে থাকে (যন্তি)। ২।

হে প্রেত! তুমি সত্যভূত যজ্ঞের পথ (ঋতস্য পন্থাং) সম্যক্ (অর্চি ইত্যাদি মার্গ) অনুক্রমে জ্ঞাত আছো (সাধুং অনু পশ্য)। সুকর্মা অঙ্গারোৎপন্ন মহর্ষিগণ (সুকৃত অঙ্গিরসঃ) যে পথে স্বর্গলোকে গমন করেছেন (যেন যান্ত) (অঙ্গিরাগণ সত্রযাগনুষ্ঠানের স্বর্গলোক প্রাপ্ত হয়েছিলেন), সেই পথে স্বর্গ গমন করো (তেভি পিথিভি স্বর্গং যাহি)। যে স্বর্গে (যত্রা) আদিত্যগণ (অর্থাৎ আদিতির পুত্র দেবগণ) মধুবপ্রীতিকর অমৃত আস্বদন করছেন (মধু ভক্ষয়ন্তি), তুমিও সেই ত্রিত্বসংখ্যাপূরক (উত্তম) দুঃখলেশহীন লোকে (অর্থাৎ সুখাত্মক স্বর্গে) প্রতিষ্ঠিত হও (তৃতীয়ে নাকে অধি বি শ্ৰয়স্ব) ৷ ৩৷৷

সুন্দর পক্ষশালী তিন (দেব) অগ্নি, সূর্য ও সোম ঊর্ধ্বলোকে অর্থাৎ স্বর্গে (উপরস্য নাকস্য পৃষ্ঠে) এবং মায়ুমন্ত অর্থাৎ শব্দকারী বায়ু ও মেঘ (মায়ু) অন্তরিক্ষ লোকে (বিষ্টপি) অধিশ্রিত রয়েছেন। (অগ্নি ইত্যাদির দ্বারা অধিষ্ঠিত) এই সুখাত্মক লোকসমূহ (স্বর্গ লোকা) অমরসাধন সুধারসের দ্বারা (অমৃতেন) পূর্ণা (বিষ্ঠা)। তারা যজমান অর্থাৎ যজ্ঞকর্তা বা স্মার্ত অর্থাৎ বৈদিক কর্ম-অনুষ্ঠানকারী এই প্রেতকে (যজমানায়) অন্ন (ইষং) ও বলকর অনুরস (উর্জং) প্রদান করুন (দুঘ্রাম)। ৪

জুহু অর্থাৎ হোমসাধনভৃত পাত্রবিশেষ দ্যুলোককে ধারণ করেছে, (দ্যাঃ দাধার); উপভৃৎ অর্থাৎ হোমসাধনভূত পাত্রবিশেষ অন্তরিক্ষ অর্থাৎ মধ্যম লোককে ধারণ করেছে; বহিতে স্থাপন হতে আরম্ভ করে যজ্ঞের পরিসমাপ্তি পর্যন্ত অচলভাবে প্রতিষ্ঠিত (প্রতিষ্ঠাং) বা নামে অভিহিত সুক (যজ্ঞপাত্র বিশেষ) চরাচরাত্মক জগতের আশ্রয়ভূতা পৃথিবীকে ধারণ করেছে। এই ধ্রুবার দ্বারা ধারিত পৃথিবীর (ইমাং) অভিলক্ষ্য (প্রতি) ঘৃতপৃষ্ঠ (ঘৃক্ষরণদীপ্ত্যো) অর্থাৎ দীপ্তির উপরিভাগে সর্বতো জ্যোতিষ্মন্ত সুখাত্মক লোকসমূহ (স্বর্গা) যজমানের কাম্যমান সকল ফল প্রদান করুন (কামংকামং দুহ্রা)। [পূর্বৰ্মন্ত্রে যজমানের স্বকর্মার্জিত সুকৃত ফলের বিষয় বলা হয়েছিল। এই মন্ত্রে পুণ্যক্ষয়ের পর মর্ত্যলোক প্রাপ্ত হলে আহিতাগ্নি যেন সেই যজমানের পূর্বজন্মার্জিত সুকৃত-বাসনা বলে এই লোকেও পুনরায় এক স্বর্গলোক প্রাপক যজ্ঞ ইত্যাদি সমীচীন কর্ম করতে পারেন, তেমন করেন] ৷ ৫৷৷

হে ধ্ৰুবা নামধেয় সুক (যজ্ঞে ঘৃতপ্রক্ষেপের নিমিত্ত পাত্রবিশেষ)! তুমি সকল ভোজয়িত্রী বা সকল ভোগাধিকরণভূতা পৃথিবীতে আরোহণ করো অর্থাৎ অধিষ্ঠিত হও (আ রোহ)। (বহিতে স্থাপন হতে আরম্ভ করে যজ্ঞের পরিসমাপ্তি পর্যন্ত আজ্যের দ্বারা সম্পূর্ণ হয়ে স্থিরভাবে অর্থাৎ ধ্রুবভাবে অবস্থান করার নিমিত্ত সুক যেমন ধ্রুব নামে অভিহিত, তেমনই পৃথিবীও স্থিরা। সেই কারণে পৃথিবীকে সুকের অধিষ্ঠাত্রী বলা হয়)। হে উপভৃৎ (বটকাষ্ঠনির্মিত গোলাকার যজ্ঞপাত্র, যাতে রক্ষিত আজ্য সুকে গ্রহণ করা হয়)! তুমি অন্তরিক্ষ অর্থাৎ মধ্যমলোকে অধিষ্ঠিত হও (আ ক্রমস্ব)। (অধ্বর্য যাগকালে অগ্নিতে ঘৃত প্রক্ষেপের সুবিধার নিমিত্ত দক্ষিণ হস্তে জুহু বা সুক এবং বাম হস্তে উপভৃৎ ধারণ করেন)। হে জুহু! তুমি যজমানের সাথে (যজমানেন সাকং) দ্যুলোকে গমন করো (দ্যা গচ্ছ)। (ধ্রুব ইত্যাদি সুক ক্রমে পৃথিবী ইত্যাদি লোকসমূহে যজমানের দ্বারা অধিষ্ঠিত হোক–এটাই বক্তব্য)। এবং যজমান বৎসরূপ সুবের দ্বারা (বৎসেন সুবেন) সকল দিকে (সর্বা দিশঃ) প্রকর্ষের সাথে (প্রপীনাঃ) অভিলষিত ফলের ধুন্ধু দোহক (অহৃনীয়মানঃ) হোন। (বৎস যেমন প্রথম স্তন্যপানের দ্বারা মাতাকে স্থূলস্তনবিশিষ্টা অর্থাৎ দুগ্ধপূর্ণ-শুনশালিনী করে, সেই রকমেই সুবও অর্থাৎ হোমের নিমিত্ত খদির ইত্যাদি কাষ্ঠনির্মিত পাত্রবিশেষ সকল জুহু ইত্যাদি পাত্রগুলিকে বৎসত্বরূপেই আজ্যপূরিত করে দেয়–এটাই বৎসেন সুবেন শব্দ দুটির বক্তব্য) ৷ ৬ ৷৷

 তরণসাধন অর্থাৎ মহতী আপদ অতিক্রামক (তীর্থেঃ তরন্তি প্রবতঃ মহীঃ) এমন বুদ্ধিতে যাঁরা যজ্ঞ করেন (ইতি যজ্ঞকৃতঃ) ও বৈদিক স্মার্তকর্ম সাধিত করেন, যাঁরা সুকৃত কর্মপথে গমন করে পুণ্যলোক প্রাপ্ত হয়েছেন (সুকৃতঃ যেন) এই (অত্র) পুণ্যলোক প্রাপ্তিসাধনের পথ অনুসরণে আগত যজমানের উদ্দেশে (যজমানায়) দিকসমূহ এবং তদর্থ পুণ্যার্জিত লোক (লোকং) বা সেই লোকবাসী প্রাণীবর্গ (ভূতানি) পূর্বৰ্মন্ত্রে উল্লিখিত অভিলষিত ফল (যৎ) সম্পাদন করুক (অকল্পয়ন্ত)। ৭।

 পূর্ব দিকে বর্তমান (পূর্বঃ) অঙ্গিরাগণের অয়ন নামক (অঙ্গিরসাময়নং) সত্ৰাত্মক আহবনীয় অগ্নি, আদিত্যগণের অয়ন নামক (আদিত্যানামায়নং) সত্ৰাত্মক গার্হপত্য অগ্নি এবং দক্ষগণের অয়ন নামক (দক্ষিণানাময়নং) সত্ৰাত্মক দক্ষিণাগ্নি (দক্ষিণ দিকে বর্তমান অগ্নি এই মন্ত্রের দ্বারা বা মন্ত্রসাধ্যসত্ৰ্যাগাত্মক (ব্ৰহ্মণা) নির্মিত পৃথক আয়তনে স্থাপিত (বিহিতস্য) অগ্নির মহিমা (অগ্নেমহিমানং) (অর্থাৎ আহ্বানীয় ইত্যাদি সংজ্ঞায় অভিহিত অগ্নিসমূহের বিভূতি) সংহতাবয়ব (সমঙ্গ) ও সম্পূর্ণাবয়ব (সর্বঃ); এতএব হে প্রেত! তুমি সুস্থিত (শগ্মঃ) হয়ে (সেই সল দহ্যমান অগ্নির নিকট) গমন করো (উপ যাহি)। ৮।

 হে অগ্নির দ্বারা দহ্যমান প্রেত! পূর্ব দিকে দীপ্যমান আহ্বানীয় অগ্নি (পূর্বঃ অগ্নিঃ) তোমাকে পূর্ব দিক হতে (পুরস্তাৎ) তোমার যাতে সুখ (শং) হয় তেমন ভাবে তোমাকে দহন করুক (দহতু); তথা গার্হপত্য অগ্নি (অর্থাৎ গৃহপতি যজমানের দ্বারা আহিত সকল অগ্নির যোনিভূত অগ্নি) তোমার পশ্চিমভাগে (পশ্চাৎ) তোমাকে সুখে দগ্ধ করুক। [পূর্বকালে প্রতি সাগ্নিক ব্রাহ্মণ আপন গৃহে দিবারাত্র (সর্বক্ষণ) একটি অগ্নি প্রজ্বলিত করে রাখতেন। অপর যে কোনও অগ্নি প্রজ্বলনের জন্য এই অগ্নি থেকেই সাহায্য নেওয়া হতো। এই অগ্নির নাম গার্হপত্য অগ্নি। সুতরাং এই অগ্নিকে সকল অগ্নির যোনিভূত বলা হয়েছে। দক্ষিণ দিকে নিহিত দক্ষিণাগ্নি তোমাকে সর্ববারক কবচের (বর্ম) দ্বারা আচ্ছাদিত-করণের ন্যায় সুখের সাথে (শর্ম, দগ্ধ করুক। হে অগ্নি! (আহবনীয় ইত্যাদি অগ্নির অনুগতত্বে এখানে একবচন প্রয়োগ করা হয়েছে)। তুমি উত্তর দিক। হতে (উত্তরঃ) মধ্য অর্থাৎ পূর্ব ইত্যাদি চতুর্দিক হতে, আকাশ হতে (অন্তরিক্ষাৎ) ও দশ দিক হতে অর্থাৎ সকল অবান্তর দিক হতে (এই প্রেতকে) রক্ষা করো (পরি পাহি); কেবল দিক নয়, কিন্তু সেই সকল দিকের ভয়ঙ্কর অর্থাৎ ক্রুর বা হিংসকগণ হতেও (ঘোরাৎ) রক্ষা করো ৷ ৯

হে অগ্নিগণ! (একই অগ্নির ত্রিধাভবনের কারণে শূয়ং-এই বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে)। পৃথক আয়তনে স্থাপিত তোমাদের অত্যন্ত সুখকরী বা মঙ্গলময় শরীর (শমাভিস্তভিঃ)! (প্রধানতঃ অগ্নি দ্বিবিধ-ঘোর অর্থাৎ ভয়ঙ্কর এবং শিব অর্থাৎ মঙ্গলময়)। সেই মঙ্গলময় তনুর দ্বারা তোমরা তোমাদের ইষ্টবন্ত (যাগকারী) পুরুষকে (ঈজানম) সুখাত্মক লোকে (স্বর্গং লোকং) অভিগমন বা আরোহণ করাও (অভি বহাথ)। (অগ্নিত্রয়ের অর্থাৎ ত্রিধাভূত অগ্নির গন্তব্যপ্রাপণের দৃষ্টান্তস্বরূপ তাঁদের তিনটি অশ্বরূপে বলা হচ্ছে)–তিনটি অশ্বভূত (পৃষ্টিবাহঃ) হয়ে দৈবরথে বহন করে তোমরা এই যজমানকে (সেই) স্বর্গলোকে অভিগমন করাও, যে স্বর্গলোকে (যত্র) অমৃতপায়ী অর্থাৎ দেবতগণের সাথে সে প্রসন্নতা প্রাপ্ত হবে (দেবৈঃ সধমাদং মদন্তি)। ১০।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –চতুর্থেনুবাকে নব সূক্তানি। তত্র আ রোহত জনিত্ৰীং জাতবেদসঃ ইত্যাদিভিঃ পঞ্চদশভিঋগভিশ্চিতিস্থং আহিতাগ্নিং প্রেতং উপতিষ্ঠেত।…ইত্যাদি। (১৮কা, ৪অ. ১সূ). ৷৷

 টীকা –চতুর্থ অনুবাকের নয়টি সূক্তই মূলে একটি সূক্তে গ্রথিত। পাঠের সুবিধার্থে নয়টি সূক্তের মধ্যে উপযুক্ত প্রথম সূক্তের দশটি মন্ত্রে (এবং পরবর্তী সূক্তের পাঁচটি মন্ত্রে) চিতিস্থ আহিতাগ্নি প্রেতের উপাসনা বিহিত আছে। এই সূক্তের প্রথম মন্ত্রটি দেশান্তরে মৃত প্রেতের অরণী দুটি অগ্নিতে প্রত্যর্পণে বিনিয়োগ কর্তব্য। পঞ্চম ও ষষ্ঠ মন্ত্র দুটির দ্বারা প্রেতাঙ্গে প্রক্ষেপ যজ্ঞপাত্রগুলি অনুমন্ত্ৰণীয় ॥ (১৮কা. ৪অ. ১সূ.)।

.

দ্বিতীয় সূক্ত : পিতৃমেধঃ

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : যম, পিতরঃ, অগ্নি, চন্দ্রমা ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, ভূরিক, জগতী, শক্করী, বৃহতী, অনুষ্টুপ, গায়ত্রী, পংক্তি, উষ্ণিক]

 শমগ্নে পশ্চাৎ তপ শং পুরস্তাচ্ছমুত্তরাচ্ছমধরাৎ তপৈন। একস্ত্রেধা বিহিতো জাতবেদঃ সম্যগেনং ধেহি সুকৃতামু লোকে৷ ১শমগ্নয়ঃ সমিদ্ধা আ অভন্তাং প্রাজাপত্যং মেধ্যং জাতবেদসঃ। শৃং কৃন্ত ইহ মাব চিক্ষিপ৷ ২ যজ্ঞ এতি বিততঃ কল্পমান ঈজানমভি লোকং স্বর্গ। তমগ্নয়ঃ সর্বহুতং জুষাং প্রাজাপত্যং মেধ্যং জাতবেদসঃ শৃং কৃথন্ত ইহ মাব চিক্ষিপ ॥ ৩। ঈজানশ্চিতমারুক্ষদগ্নিং নাকস্য পৃষ্ঠাদ দিবমুৎপতিষ্যন। তস্মৈ প্রভাতি নভগো জ্যোতিষীমাৎস্বর্গঃ পন্থাঃ সুকৃতে দেবযানঃ ॥ ৪৷৷ অগ্নিহোতাধ্বর্য্যষ্টে বৃহস্পতিরিন্দ্রো ব্রহ্মা দক্ষিণতন্তে অস্তু। হুতোইয়ং সংস্থিতো যজ্ঞ এতি যত্র পূর্বময়নং হুতানাম্ ॥৫৷৷ অপূপবান্ ক্ষীরবাংশ্চরেহ সীতু। লোককৃতঃ পথিকৃতো যজামহে যে দেবানাং হুতভাগা ইহ স্থ॥ ৬। অপূপবান্ দধিবাংশ্চরেহ সীতু। লোককৃতঃ পথিকৃতে যজামহে যে দেবানাং হুতভাগা ইহ স্থ॥৭॥ অপূপবান্ দ্রম্পবাংশ্চরুরেহ সীদ। লোককৃতঃ পথিকৃত যজামহে যে দেবানাং হুতভাগা ইহ স্থ॥ ৮অপূপবান্ ধৃতরাংশ্চরেহ সীদতু। লোককৃতঃ থিকৃতে যজামহে যে দেবানাং হুতভাগা ইহ স্থ॥৯॥ অপূপবান মাংসংশ্চরুরেহ সীদ।, লোককৃতঃ পথিকৃতো যজামহে যে দেবানাং হুতভাগা ইহ স্থ॥১০

 বঙ্গানুবাদ –হে অগ্নি! তুমি পশ্চিম (পশ্চাৎ) ভাগে (গার্হপত্য অগ্নি রূপে) একে সুখে দহন করো (তপ)। পূর্বভাগে পুরস্তাৎ) একে সুখে দগ্ধ করো (শং)। উত্তরদিক প্রদেশে (উত্তরা) ও দক্ষিণদিক্ প্রদেশে (অধরা। অধর শব্দে উত্তর প্রতিযোগিনী দক্ষিণ দিক উক্ত হয়) একে সুখে (আহিতাগ্নি রূপে) দহন করো (তপৈন)। হে জাতবেদা (জামাত্রেরই জ্ঞাতা অগ্নি)! তুমি এক হয়েও (গার্হপত্য ইত্যাদি) তিনরূপে তোমাকে স্থাপনকারী (একঃ ত্রেধা বিহিত) এই যজমান প্রেতকে (এনং) সুকৃতকর্মকারীগণের লোকে (অর্থাৎ স্বর্গে) সম্যক্ (অর্থাৎ চিরকালের জন্য) স্থাপন করো (ধেহি)। ১।

(এইখানে অগ্নিসকলের মিলন প্রার্থনা করা হচ্ছে)–হে জাতবেদা অগ্নিসকল (শমগ্নয়ঃ) তোমরা সম্যক প্রদীপিত হয়ে (সমিদ্ধা) প্রজাপতি-দেবতা রূপে পিতৃমেধে (মেধ্যং) প্রেতরূপ পশুকে পাক পূর্বক (শৃতম্ কৃথন্তঃ) অবক্ষিপ্ত করো না (মা অব চিক্ষিপ)। (অর্থাৎ নিরবশেষে দগ্ধ কবে) ৷ ২৷

এই পূর্ব ইত্যাদি সকল দিকে বিস্তৃত (বিততঃ) পিতৃমেধ নামে আখ্যাত ইষ্ট প্রদেশ প্রাপণে সমর্থ যজ্ঞ (কল্পমনঃ) যাগকারী প্রেতকে (ঈজানং) সুখাত্মক লোক (স্বর্গ) প্রাপ্ত করায় (অভি)। অতএব জাতবেদা অগ্নিসকল (জাতবেদসঃ অগ্নয়ঃ) মেধ্য এই (প্রাজাপত্যং) প্রেতরূপ পশুকে নিরবশেষে দগ্ধ পূর্বক সেবা করুক। এই দহনকর্মে যজ্ঞাই এই পশুকে পাক পূর্বক অবক্ষিপ্ত করো না ৷ ৩৷৷

এই যাজ্ঞিক পুরুষ (ঈজানঃ) বিষমসংখ্যক শলাকায় ও ইষ্টকে সংস্কৃত চিতাগ্নি প্রদেশে (চিতং) আরোহণ করেছে। (কেন? না–) দুঃরহিত স্বর্গের উপরিভাগে (নাকস্য পৃষ্ঠে) তৃতীয় কক্ষ্যারূপ দ্যুলোকে (দিবং) গমনের উদ্দেশে (উৎপতিষ্য)। এই হেন সুকৃতকর্মকারীর নিমিত্ত মধ্যাকাশের নভসঃ) জ্যোতির্মান অর্থাৎ প্রকাশক (জ্যোতিষীমান) দেবযান পথ অর্থাৎ দেবতাগণের সুখের দ্বারা গন্তব্য পথ বা স্বর্গসাধনভূত পথ (পন্থাঃ) প্রকর্ষের সাথে দীপ্ত বা প্রকাশ হোক (প্রভাতি) ৪

হে চিতাস্থ প্রেত! তোমার এই পিতৃমেধ যজ্ঞে অগ্নি হোতা অর্থাৎ বষট্‌কর্তা ঋত্বিক হোন (অগ্নিহোতা অস্তু)। দেবগণের পালক অর্থাৎ বৃহস্পতি অধ্বর্য অর্থাৎ যজমানের কাময়মান ঋত্বিক হোন। ইন্দ্র দক্ষিণ দিকে আসীন ব্রহ্মা নামক ঋত্বিক হোন। এইরূপ হোতা ইত্যাদি রূপে অগ্নি ইত্যাদির দ্বারা অনুষ্ঠিত পিতৃমেধে (যজ্ঞঃ) সমাপিত হয়ে (সংস্থিত) গমন করছে। (গন্তব্য স্থানটি কোথায়? না) যে স্থান (যত্র) পূর্বকালীন যজ্ঞের প্রাপ্তিস্থান (হুতানাং অয়নং)। (যজ্ঞের দ্বারা সংস্কৃত পুরুষের স্বর্গলোকপ্রাপ্তি হয়ে থাকে–এটাই বক্তব্য)। ৫৷৷

 গোধুম ইত্যাদির পিষ্টবিকার (অর্থাৎ চূর্ণীকৃত গম, অপূপবা), গোদুগ্ধ (ক্ষীরবান) এবং কুম্ভে পক্ক ও ওদন বা অন্ন (চরুঃ) এই সঞ্চয়ন কর্মে অস্থিসমূহের সমীপে পশ্চিম দিক্-ভাগে উপস্থিত হোক (আ সীদ)। এইগুলির দ্বারা সংস্ক্রিয়মাণ প্রেতের স্বর্গলোকের (লোককৃতঃ) পথিকৃৎ অর্থাৎ গন্তব্যস্থান স্বর্গলোকের মার্গপ্রদর্শক দেবতাগণকে প্রীত করছি। এই সঞ্চয়ণকর্মে অর্থাৎ অপূপক্ষীরযুক্ত চরু নিবেদনের দ্বারা যাগযোগ্য ইন্দ্র প্রমুখ দেবগণের মধ্যে তোমরা যারা (যে) হবির অংশপ্রাপক (হুতভাগাঃ) এই স্থানে আছে (ইহ স্থ), তাদের উদ্দেশে যাগ করছি ৷ ৬ ৷

গোধুমচূর্ণ (অপূপবান), দধি (দধিবা) ও চরু (দধিযোগে দ্বিতীয় চরুবিশেষ) এইস্থানে অর্থাৎ এই সঞ্চয়ন কর্মে উপস্থিত হোক (ইহ সীদ)। সংস্ক্রিয়মাণ প্রেতের স্বর্গলোকের পথিকৃৎ দেবতাগণকে এর দ্বারা প্রীত করছি। এই সঞ্চয়ণকর্মে যাগযোগ্য ইন্দ্রপ্রমুখ দেবগণের মধ্যে তোমরা যারা হবির অংশপ্রাপক এই স্থানে আছো, তাদের উদ্দেশে যাগ করছি ॥ ৭

পিষ্টকৃত গোধুম (অপূপবা), দধিকণা (দ্রক্ষ্মা) ও চরু (দধিকণা মিশ্রিত চরুবিশেষ) এই সঞ্চয়ণকর্মে উপস্থিত থোক। এর দ্বারা সংস্ক্রিয়মাণ প্রেতের স্বর্গলোকের পথিকৃৎ দেবতাগণকে প্রীত করছি। এই সঞ্চয়ণকর্মে যাগযোগ্য ইন্দ্র প্রমুখ দেবগণের মধ্যে তোমরা যারা হবির অংশপ্রাপক এই স্থানে আছে, তাদের উদ্দেশে যাগ করছি ॥ ৮৷৷

পিষ্টকৃত গোধুমের বিকার (অপূপবা), বহুতর ঘত (ঘৃতবা) ও চরু (প্রচুর ঘৃতমিশ্রিত চরুবিশেষ) এই সঞ্চয়ণকর্মে উপস্থিত থোক। এর দ্বারা সংস্ক্রিয়মাণ প্রেতের স্বর্গলোকের পথিকৃৎ দেবতাগণকে প্রীত করছি। এই সঞ্চয়ণকর্মে যাগযোগ্য ইন্দ্র প্রমুখ দেবগণের মধ্যে তোমরা যারা হবির অংশপ্রাপক এই স্থানে আছে, তাদের উদ্দেশে যাগ করছি। ৯।

পিষ্টকৃত গোধুমের বিকার (অপূপবা), মাংস ও চরু (মাংসবত্ত্ব চরুবিশেষ এই সঞ্চয়ণকর্মে উপস্থিত থোক। এর দ্বারা সংস্ক্রিয়মাণ প্রেতের স্বর্গলোকের পথিকৃৎ দেবতাগণকে প্রীত করছি। এই সঞ্চয়ণকর্মে ইন্দ্রপ্রমুখ যাগযোগ্য দেবগণের মধ্যে তোমরা যারা হবির অংশপ্রাপক এই স্থানে আছে, তাদের উদ্দেশে যাগ করছি। ১০

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –শমগ্নে ইতি দ্বিতীয় সূক্তে আদিতঃ পঞ্চানাং ঋচাং চিতিস্থাহিতাগ্নপস্থানে বিনিয়োগ উক্তঃ। ঈজানশ্চিতমারুৎ ইতি দ্বাভ্যাং ঝগভ্যাং চিতাবুত্তানং আহিতং প্রেতং কর্তা অনুমন্ত্রয়েত। অপূপবান্ ক্ষীরবান ইতি নবভিঋভির্মন্ত্রোক্তদ্রব্যযুতান্ নবসংখ্যাকাংশ্চরূ অভিমন্ত্র অং সমীপে পশ্চিমদিকপ্রভৃত্যষ্টসু দিক্ষু একং মধ্য ইতি ক্রমেণ নিদধ্যাৎ৷৷ (১৮কা, ৪অ. ২সূ)।

টীকা –উপযুক্ত সূক্তের শমগ্নে ইত্যাদি প্রথম পাঁচটি মন্ত্র চিতিস্থ আহিতাগ্নির উপাসনায় বিনিযুক্ত হয়। চতুর্থ ও পঞ্চম মন্ত্র দুটি চিস্থিত প্রেতের ঔধ্বদেহিক কর্মকারী কর্তৃক অনুমন্ত্ৰণীয়। এই সূক্তের শেষ পাঁচটি এবং পরবর্তী সূক্তের প্রথম চারটি মন্ত্র প্রেতের অস্থিসমীপে অষ্ট দিকে একে একে (ক্রমে ক্রমে) মন্ত্রোক্ত দ্রব্যযুত সামগ্রী সহকারে যাগ-করণে বিনিয়োগ করণীয় ॥ (১৮কা. ৪অ, ২সূ.)।

.

তৃতীয় সূক্ত : পিতৃমেধঃ

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : যম, পিতরঃ, অগ্নি, চন্দ্রমা ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, ভূরিক, জগতী, শক্করী, বৃহতী, অনুষ্টুপ, গায়ত্রী, পংক্তি, উষ্ণিক]

 অপূপবানন্নবাংশ্চরুরেহ সীদতু। লোককৃতঃ পথিকৃত যজামহে যে দেবানাং হুতভাগা ইহ স্থ॥১॥ অপূপবান্ মধুমাংশ্চরুরেহ সীতু। লোককৃতঃ পথিকৃত যজামহে যে দেবানাং হুতভাগা ইহ স্থ॥ ২॥ অপূপবান্ রসংশ্চরুবেহ সীতু। লোককৃতঃ পথিকৃত যজামহে যে দেবানাং হুতভাগা ইহ স্থ৷ ৩৷৷ অপূপবানপবাংশ্চরুরেহ সীতু। লোককৃতঃ পথিকৃতো যজামহে যে দেবানাং হুতভাগা ইহ স্থ॥৪॥ অপূপাপিহিতা কুম্ভান্ যাংস্তে দেবা অধারয়। তে তে সন্তু স্বধাবন্তো মধুমন্তো ঘৃততঃ ॥৫॥ যাস্তে ধানা অনুকিরামি তিলমিশ্রাঃ স্বধাবতীঃ। তাস্তে সন্তুড়ীঃ প্রভৃীস্তাস্তে যমো রাজানু মন্যতাম্ ॥৬৷৷ অক্ষিতিং ভূয়সীম৷৷ ৭দ্রশ্চস্কন্দ পৃথিবীমনু দামিমং যোনিমনু যশ্চ পূর্বঃ। সমানং যোনিমনু সঞ্চরন্তং দ্রং জুহোম্যনু সপ্ত ছোত্রাঃ ॥ ৮শতধারং বায়ুমর্কং স্বর্বিদং নৃচক্ষসস্তে অভি চক্ষতে রয়িম্। যে পৃণন্তি প্ৰ চ যচ্ছন্তি সর্বদা তে দুতে দক্ষিণাং সপ্তমাতরম্ ॥৯॥ কোশং দুহন্তি কলশং চতুর্বিলমিড়াং ধেনুং মধুমতীং স্বস্তয়ে। ঊর্জং মদন্তীমদিতিং জনেম্বগ্নে মা হিংসীঃ পরমে ব্যোমন্৷৷ ১০৷৷

বঙ্গানুবাদ –গোধুম ইত্যাদির পিষ্টবিকার (অপূপবান), অন্ন ও চরু (ওদনান্তর যুক্ত চরুবিশেষ) এই সঞ্চয়ণ কর্মে উপস্থিত হোক। এর দ্বারা সংস্ক্রিয়মাণ প্রেতের স্বর্গলোকের পথিকৃৎ দেবতাগণকে প্রীত করছি। এই সঞ্চয়ণকর্মে ইন্দ্রপ্রমুখ যাগযোগ্য দেবগণের মধ্যে তোমরা যারা হবির অংশপ্রাপক এই স্থানে আছে, তাদের উদ্দেশে যাগ করছি। ১৷৷

গোধুম ইত্যাদির পিষ্টবিকার (অপূপবা), মাক্ষিক (মধুমা) ও চরু (মধুমিশ্রিত চরুবিশেষ) এই সঞ্চয়ণকর্মে উপস্থিত হোক। এর দ্বারা সংস্ক্রিয়মাণ প্রেতের স্বর্গলোকের পথিকৃৎ দেবতাগণকে প্রীত করছি। এই সঞ্চয়ণকর্মে ইন্দ্রপ্রমুখ যাগযোগ্য দেবগণের মধ্যে তোমরা যারা হবির অংশপ্রাপক এই স্থানে আছে, তাদের উদ্দেশে যাগ করছি ॥ ২॥

 গোধুম ইত্যাদির পিষ্টবিকার (অপূপবা), কটু-তিক্ত-কষায়-লবণ-অম্ন ও মধুর এই ছয় রসযুক্ত পিষ্টক (রসবান) ও চরু (রসাত্মক কুম্ভী-পক্ক ওদনরূপ চরু) এই সঞ্চয়ণকর্মে উপস্থিত থোক। এর দ্বারা সংস্ক্রিয়মান প্রেতের স্বর্গলোকের পথিকৃৎ দেবতাগণকে প্রীত করছি। এই সঞ্চয়ন কর্মে ইন্দ্রপ্রমুখ যাগযোগ্য দেবগণের মধ্যে তোমরা যারা হবির অংশপ্রাপক এই স্থানে আছে, তাদের উদ্দেশে যাগ করছি। ৩।

গোধুম ইত্যাদির পিষ্টবিকার (অপূপবান), ভিন্ন প্রকৃতির পিষ্টক (অপবা) ও চরু (স্বতন্ত্রভাবে কুম্ভী-পক্ক ওদনরূপ চরু) এই সঞ্চয়ণকর্মে মধ্যপ্রদেশে (ইহ) উপস্থিত থোক। এর দ্বারা সংস্ক্রিয়মাণ প্রেতের স্বর্গলোকের পথিকৃৎ দেবতাগণকে প্রীত করছি। এই সঞ্চয়ণকর্মে ইন্দ্রপ্রমুখ যাগযোগ্য দেবগণের মধ্যে তোমরা যারা হবির অংশপ্রাপক এই স্থানে আছো, তাদের উদ্দেশে যাগ করছি। ৪

গোধুম ইত্যাদি পিষ্টবিকারের দ্বারা আচ্ছাদিত নয়টি চরুপূর্ণ কলস মন্ত্রোক্ত দেবগণ, হে সঞ্চিতাস্থিরূপ প্রেত! নিজেদের ভাগরূপে স্বীকার করেছেন (অধারয়); সেই কুম্ভস্থ চরুসমূহ পরলোকপ্রাপ্তবন্ত তোমাকে স্বধাবন্ত (অনুবা), মধুমন্ত (মধুমান) করুক ও তোমার পক্ষে আজ্য ক্ষরণকরী (ঘৃততঃ) হোক। (অর্থাৎ তোমার অস্থিসমীপে স্থাপিত চকসমূহ পরলোক প্রাপ্ত তোমা হেন প্রেতের প্রীতির নিমিত্ত বহু অন্নরাশি সহ মধুঘৃতকুল্যাযুক্ত হোক)। ৫।

হে সঞ্চিতাস্থিরূপ প্রেত! তোমার নিমিত্ত (তে) তিলমিশ্রিত (কৃষ্ণতিলযুক্ত) অন্নবতী (স্বধাবতী) ও ভৃষ্টয়বান যব (ধান্য) অনুক্রমে বিকীর্ণ বা বিক্ষেপ করেছি, সেইগুলি পরলোকপ্রাপ্তবন্ত তোমার পক্ষে প্রভূত পরিমাণে (প্রভৃীঃ) প্রীতিদায়করূপে প্রাপ্ত হোক এবং পিতৃলোকের রাজা যম সেইগুলি বহুকাল পর্যন্ত (ভূয়সীং অক্ষিতিং-৭ম মন্ত্র) তোমার ভোগের নিমিত্ত অনুজ্ঞা প্রদান করুন (অনুমন্যতা)। (লোকে অবস্থানকারী পুরুষ যেমন আপন ধনসমূহ পুরস্বামীর অনুমতিক্রমে ভোগ করে, যমলোক-প্রাপ্ত প্রেত তেমনই আপন লব্ধ স্বধা ইত্যাদি ভোগের নিমিত্ত পিতৃলোকাধীশ্বর যমের অনুজ্ঞা প্রার্থনা করে)। ৬-৭

 (ধূম ইত্যাদি পরিকীর্ণ পথ অবলম্বন পূর্বক পিতৃত্ব প্রাপ্ত জনসমূহ পিতৃলোকে উপনীত হয়ে সোমযাগজনিত সুকৃতফল উপভোগ করে। এই কারণে এই পিত্রে অর্থাৎ পিতৃ-সম্পর্কিত) প্রকরণে সোমে স্থিত জলের কণা বা সোমের স্তুতি করা হচ্ছে)–সোমরস-স্থিত উদককণা (দ্রপ্সঃ) ভূলোক (পৃথিবীং) ও দ্যুলোকে (দ্যাং) বিকীর্ণ (চস্কন্দ) হয়েছে। (গ্রাবে অর্থাৎ প্রস্তরে অভিষবণের সময়ে সোমরস ভূমিতে ক্ষরিত হয়ে থাকে এবং দশাপবিত্র হতে দ্রোণকলসের প্রতি ধারাপাত সময়ে সোমকণাসমূহ অন্তরিক্ষে বিকীর্ণ হয়ে থাকে। এই কারণে এমন বলা হচ্ছে)। চরাচরাত্মক সর্ব জগতের কারণ পৃথিবী অনুলক্ষ্য করে (ইমং যযানিং) তথা পূর্বে উৎপন্ন দ্যুলোককে অনুলক্ষ্য করে বিকীর্ণ সোমরসকণা (দুন্সং) সপ্তসংখ্যক বষটকর্তার (সপ্ত হোত্রাঃ) উদ্দেশে জুহোমি অর্থাৎ যাগাগ্নিতে প্রক্ষেপ করছি। (অর্থাৎ হোতৃ-মৈত্রাবরুণ- ব্রাহ্মণাচ্ছংসি-পোত্ব নো-আগ্নী-অচ্ছাবাক সংজ্ঞক সপ্ত বষট্‌কর্তাকে অনুলক্ষ্য করে এই সোমরসকণা অগ্নিতে প্রক্ষেপ করছি। এই সোমরস বাজসনেয়-ব্রাহ্মণে আদিত্য রূপে স্তুত)। ৮।

হে প্রেত! শতসংখ্যক ছিদ্ৰপতিত-উদকপ্রবাহযুক্ত (শতধারং), বিচরণশীল বায়ুর ন্যায় অর্চনীয় (বায়ুমর্কং), স্বর্গের লম্ভক (স্বর্বিদং), মনুষ্যগণের দ্রষ্টব্য (নৃচক্ষসঃ) কুম্ভটি দেবতাবর্গ তোমার ধন (রয়িং) বলে জ্ঞাত আছেন (অভিচক্ষতে)। তোমার যে (গোত্ৰিণঃ অর্থাৎ) গোত্রীয় সংস্কারকর্তাগণ অস্থিরূপ তোমাকে কুম্ভের জলের দ্বারা প্রীত করে (পৃণন্তি) এবং কুম্ভজল প্রদান করে (প্র যচ্ছন্তি), তারা সপ্তসংখ্যক মাতৃভূতা অগ্নিষ্টোম ইত্যাদি সংস্থায় বা কর্মে সর্বদা দক্ষিণা দোহন করে (সর্বদা দুহূতে দক্ষিণা)। (জলের দ্বারা আপ্লাবন অর্থাৎ স্নান বা সিক্ত করণের নাম দক্ষিণাদোহন)। ৯

(শতসংখ্যক ছিদ্রযুক্ত কুম্ভের চারিটি ছিদ্রাবয়বের স্তুতি। চতুচ্ছিদ্র অর্থাৎ চতুঃস্তন কোশ-কোশবৎ কোশ)–ধন, সুবর্ণ ইত্যাদির দ্বারা সম্পূর্ণ কোশের (কোশং) সমান, পয়ঃপূর্ণ কুম্ভোপম (কলশ) চারিটি ছিদ্রযুক্ত (ঊধঃ অর্থাৎ স্তনবৃন্ত-সম্পন্না) মধুররসক্ষরযুক্তা (মধুমতীং) ইড়া নাম্নী ধেনুকে বা ভূমিরূপা ধেনুকে প্রেতের সর্বদা পরলোক নিবাসের নিমিত্ত দোহন করা হচ্ছে। (চতুচ্ছিদ্র কলশের জলে আপ্লাবনের নাম চতুঃস্তনধেনুর দোহন)। হে অগ্নি! প্রেতরূপ পিতৃত্ব-প্রাপ্ত (অর্থাৎ পিতৃলোকপ্রাপ্ত) জনের ভোগের নিমিত্ত সন্তোষকর (মদন্তীং), অখণ্ডনীয়া (অদিতিং), বলকর অন্ন (উজ) তুমি খণ্ডিত করো না (মা হিংসীঃ)। পরমে অর্থাৎ উৎকৃষ্ট আকাশে (ব্যোমে) শতচ্ছিদ্র কলশের দোহন হচ্ছে ॥ ১০৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –অপূপবানন্নবাংশ্চরুঃ ইতি আদিতশ্চতৃণাং ঋচাং অস্থিসমীপে। মন্ত্রোক্তচরু-স্থাপনকর্মণি উক্তো বিনিয়োগঃ ….ইত্যাদি। (১৮কা. ৪অ. ৩সূ).।

টীকা –উপযুক্ত সূক্তের প্রথম চারটি মন্ত্র অস্থির নিকটে চরু-স্থাপন কর্মে বিনিযুক্ত হয়। পরবর্তী মন্ত্রে। পূর্বস্থাপিত নবচরুকুম্ভ অভিমন্ত্ৰণীয়। অষ্টম মন্ত্রের দ্বারা অগ্নিষ্টোম ইত্যাদি সোমযাগে বহিষ্পবমান প্রসৰ্পণকালে বৈষহোম করণীয়। শেষ দুই ঋকের দ্বারা অভিমন্ত্রিত করে শতচ্ছিদ্রপাত্র হতে পতিত জলের দ্বারা অস্থিসমূহ আপ্লাবন করণীয় (১৮কা. ৪অ. ৩সূ.)।

.

চতুর্থ সূক্ত : পিতৃমেধঃ

 [ঋষি : অথর্বা দেবতা : যম, পিতরঃ, অগ্নি, চন্দ্রমা ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, ভূরিক, জগতী, শক্করী, বৃহতী, অনুষ্টুপ, গায়ত্রী, পংক্তি, উষ্ণিক]

এতৎ তে দেবঃ সবিতা বাসো দদাতি ভর্তবে। তৎ ত্বং যমস্য রাজ্যে বসানস্তাপঁং চর ॥১॥ ধানা ধেনুরভবদ বৎসসা অস্যাস্তিলোহভবৎ। তাং বৈ যমস্য রাজ্যে অক্ষিতামুপ জীবতি৷৷ ২৷৷ এস্তে অসৌ ধেনবঃ কামদুঘা ভবন্তু। এনীঃ শ্যেনীঃ সরূপা বিরূপাস্তিলবৎসা উপ তিষ্ঠন্তু স্বাত্ৰ ৷৩৷৷ এনীৰ্ধানা হরিণীঃ শ্যেনীরস্য কৃষ্ণা ধান রোহিণীর্ধেনবস্তে। তিলবৎসা ঊর্জৰ্মস্মৈ দুহানা বিশ্বাহা সন্তুনপস্ফুরন্তীঃ ॥৪॥ বৈশ্বানরে হবিরিদং জুহোমি সাহং শতধারমুৎস। স বিভর্তি পিতরং পিতামহান্ প্রপিতামহান্ বিভর্তি পিন্বমানঃ ॥৫॥ সহস্রধারং শতধারমুৎসমক্ষিতং ব্যচ্যমানং সলিলস্য পৃষ্ঠে। ঊর্জং দুহানমনপস্ফুরন্তমুপাসতে পিতরঃ স্বধাভিঃ ॥৬॥ ইদং কসাম্বু চয়নেন চিতং তৎ সজাতা অব পশ্যতেত। মর্ত্যোহয়মমৃতত্বমেতি তস্মৈ গৃহান্ কৃণুতে যাবৎত্সবন্ধু ॥৭॥ ইহৈবৈধি ধনসনিরিহচিত্ত ইহতুঃ। ইহৈধি বীর্যবত্তরো বয়োধা অপরাহতঃ ॥ ৮৷৷ পুত্রং পৌত্রমভিতৰ্পয়ন্তীরাপো মধুমতীরিমা। স্বধাং পিতৃভ্যো অমৃতং দুহানা আপো দেবীরুভয়াংস্তৰ্পরন্তু ॥৯॥ আপো অগ্নিং প্র হিণুত পিতৃরূপেমং যজ্ঞং পিতরো মে জুষন্তা। আসীনামূর্জমুপ যে সচন্তে তে নো রয়িং সর্ববীরং নি যচ্ছা ॥ ১০।

বঙ্গানুবাদ –হে প্রেত! সকলের প্রেরক সবিতা দেব, তোমার আচ্ছাদনের নিমিত্ত (ভর্তবে) এই বসন (এতৎ বাসঃ) প্রদান করছেন। এবং তুমি সেই প্রীতিকর (তৎ তাপং) বস্ত্রে আচ্ছাদিত হয়ে (বসানঃ) প্রেতাধিরাজ যমের রাজ্যে পরিভ্রমণ করো (চর)। (মতান্তরে তার্পং অর্থাৎ তৃপা নামক তৃণবিশেষে নির্মিত ঘৃতাক্ত বস্ত্রে আচ্ছাদিত হয়ে যমলোকে বিচরণ করো)। ১।

ভৃষ্ট যব (ধান) গো-সদৃশ (ধেনুরভব) এবং এই তিলসমূহ বৎস-সমান (বৎসো অভবৎ)। সেই (তাং) বৎসরূপ তিলের সাথে ধেনুরূপা সৃষ্ট যব যমের রাজ্যে ক্ষয়রহিত ভাবে অর্থাৎ দীর্ঘকাল এই প্রেত উপভোগ করুক (অক্ষিতা উপ জীবতি) ২

হে অমুক নামধেয় প্রেত (অসৌ)! তোমার এই ভৃষ্ট যবসমূহ (তে এতা) কাম্যমান ফল দোহনকারিণী অর্থাৎ ইষ্টফলদা ধেনুরূপা হোক (কামদুঘা ধেনবঃ ভবন্তু); সন্ধ্যাবর্ণা (এনীঃ), শুভ্রবর্ণা (শ্যেনীঃ), সমানরূপা (সরূপা) বিবিধরূপা (বিরূপাঃ), তিলাত্মক বৎসসহিতা (তিলবৎসা) ধেনুরূপা ভৃষ্ট যবগুলি এই যমরাজ্যে (অত্র), তোমার নিকটে অভিমতফল দোহনার্থে পরিচর‍্যা করুক (উপ তিষ্ঠন্তু ত্ব) ৷৷ ৩৷৷

(পূর্ব মন্ত্রোক্ত অর্থ ব্যাখ্যাত হচ্ছে)–হে প্রেত! সন্ধ্যাবর্ণা, শুভ্রবর্ণা, হরিতবর্ণা (হরিণীঃ), অভিভর্জনের জন্য কৃষ্ণবর্ণা, অরুণবর্ণাঃ (রোহিণীঃ) ধেনুরূপা ভৃষ্ট যবগুলি তোমার হোক (তে)। সেই তিলবৎসা ধেনুসমূহ চিরদিন (বিশ্বাহা) অবিনশ্বর ভাবে (অনপস্ফুরত্য) অর্থাৎ অক্ষীণ হয়ে অস্থিরূপ (অস্মৈ) তোমাকে বলকর অন্ন (উর্জম) প্রদায়ক হোক (দুহানাঃ সন্তু) ॥ ৪৷

 বৈশ্বানর (বৈশ্বানরে বিশ্বনরহিতো বিশ্বানরঃ। নরে সংজ্ঞায়াং ইতি পূর্বপদস্য দীর্ঘঃ। বিশ্বানর এব বৈশ্বানরঃ) অগ্নিতে এই (ইদং) পয়োরূপ বা স্থালীপাকরূপ হবিঃ প্রক্ষেপ করছি (জুহোমি)। সহস্রবিবোধক প্রবাহযুক্ত (সাহং), শতপ্রবাহেপেত (শতধারং) প্রস্রবণ-সদৃশ এই হবিঃ (হবিরিদং)। (যেমন এইরকম উৎস স্বাপজীবিগগণের প্রীত করে, সেইরকম এই হবিঃ নানাবিধ সৎ পিতৃপুরুষগণের পুষ্টির উৎসরূপে রূপিত)। হবির দ্বারা প্রীত সেই (স) বৈশ্বানর অগ্নি পিতৃত্বপ্রাপ্ত স্বজনক প্রেত (পিতরং) পিতা, পিতামহ ও প্রপিতামহগণের প্রীতি সাধন পূর্বক পোষণ করেন (বিভর্তি পিন্বমানঃ) ॥ ৫॥

সহস্ৰসংখ্যকচ্ছিদ্র-পতিত জলপ্রবাহযুক্ত (সহস্রধারং), শতধারা সমন্বিত প্রস্রবণের মতো (উৎসবৎ) ক্ষয়রহিত (অক্ষিতং), অন্তরিক্ষের উপরিভাগে (সলিলস্য পৃষ্ঠে) ব্যাপ্ত, বলকর অন্নসাধোদক ক্ষারণকারী (ঊর্জং দুহানং), বহুচ্ছিদ্রযুক্ত অবিদীৰ্যমান বা সম্যক্ শোভমান (অনপফুরন্তং) যে কুম্ভপ্রেতভূত পিতৃগণ (পিতরঃ) আপন তুষ্টির হেতু সেই কুম্ভের সেবা করেন (স্বধাভিঃ)। ৬৷

হে সমানকুলে জাত বা সমগোত্রীয়গণ (সজাতা)! তোমরা এই সঞ্চয়নকর্মের দ্বারা (চয়নেন) সঞ্চিত বা সমূহীকৃত অস্থিগুলি (কসান্ত্ব) অবলোকন করো (অব পশ্যত)। (অর্থাৎ পূর্বৰ্মন্ত্রে উদকাপ্লাবিত যে অস্থিগুলির কথা বলা হয়েছে, তা দর্শন করো)। আগত হও (এত)। এই মরণধর্মা প্রেত (অয়ম মর্ত) অমৃতত্ব অর্থাৎ অমরণ-ধর্ম প্রাপ্ত হয়েছে (অমৃতত্বং এতি)। সেই নিমিত্ত তোমরা যত সমান-গোত্রীয় সবান্ধব আছো (যাবৎসবন্ধু), তারা সকলে তাকে (তস্মৈ) অর্থাৎ সেই প্রেতকে স্থান করে দাও (গৃহাণ কৃণুত)। (প্রেতের অস্থি নিরীক্ষণই পরলোকে স্থানকরণ–এটাই অর্থ)। ৭।

হে দীপ্তপাংসুতে (ধূলিতে) স্থাপিত অঙ্গার (উন্মুক) বা অঙ্গারময় প্রেত! তুমি এই পাংসুলক্ষণ প্রদেশেই অবস্থান করো (ইহৈব এধি। আমাদের ধনের দাতা হও (ধনসনিঃ); এই প্রদেশে প্রজ্ঞাত হও (ইহ চিত্ত); আমাদের কর্ম-সম্পাদক হও (ইহক্রতুঃ);তথা এই প্রদেশে অত্যন্ত বলবান বিধাতা হও (বীর্যবত্তরঃ বয়োধা); সেই বিধাতারূপে শত্রুর দ্বারা অপরাজিত হয়ে অবস্থান করো (অপবাহতঃ এধি)। ৮।

মধুরবসোপেতা এই আচমনাহ জলসমূহ (ইমা আপঃ) পুত্র-পৌত্রগণের প্রীতিকর (অভিতৰ্পয়ন্তীঃ), অতএব পিণ্ডোপজীবী আপন পিতৃগণের উদ্দেশে (পিতৃভ্যঃ) অমরণসাধন আত্মপ্রীতিকর অন্ন (অমৃতং স্বধাং) প্রদায়ক (দুহানাঃ) দ্যোতমানা (দেবীঃ) আচমনীয় সমুদায় (আপঃ–জলরাশি) পুত্র ও পৌত্রদের (উভয়া) বর্ধন করুক (তপয়ন্তু)। (অথবা–উভয় শব্দের দ্বারা আপন মাতৃ ও পিতৃকুলের তৃপ্তি সাধন করুক, অর্থাৎ পিণ্ডদানের পর ক্রিয়মাণ আচমনের দ্বারা তৃপ্তি সাধন করুক–এমনও অর্থ করা যায়। এই পক্ষে পিতৃভ্যঃ অর্থে পিতা মাতা বুঝতে হবে)। ৯।

হে অবসেচন-সাধনভূতা জলরাশি (আপঃ) তোমরা তোমাদের অবসিচ্যমান দক্ষিণাগ্নিকে (অগ্নিং) পিতৃপিতামহ ইত্যাদির সমীপে প্রেরণ করো (প্র হিণুত); (অর্থাৎ বৰ্হিতে অর্থাৎ কুশে প্রদত্ত পিণ্ড দানের নিমিত্ত প্রেরণ করো)। পিতৃগণ আমাদের (মে) ইদানীং অনুষ্ঠীয়মান পিণ্ডপিতৃযজ্ঞ নামক যজ্ঞের (ইমং যজ্ঞং) সেবা করুন (জুষন্তা); (অর্থাৎ পিণ্ড আস্বাদন করুন)। যে পিতৃগণু কুশে উপবিষ্ট হয়ে আছেন, তাঁরা বলকর পিণ্ডলক্ষণ অন্ন স্বীকার করুন (ঊর্জং উপসচন্তে); তাঁরা আমাদের বহু কর্মকুশল পুত্রপৌত্র ইত্যাদির সাথে স্থির ধন দান করুন (নঃ রয়ি সর্ববীরং নি যচ্ছা)। ১০

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –এতৎ তে দেবঃ ইতি সূক্তস্য আদয়া ঋচা বাসোহভিমন্ত্র প্রেতং প্রচ্ছাদয়েৎ। ধানা ধেনুরভবৎ, এতান্তে অসৌ ধেনবঃ, এনীধনা হরিণীঃ ইতি তিসৃভিঋগভিঃ অহ্রাং উপরি তিলমিশ্রা ধানা আদধ্যাৎ-ইত্যাদি৷ (১৮কা. ৪অ. ৪সূ.)।

টীকা –উপযুক্ত সূক্তের প্রথম মন্ত্রটির দ্বারা বস্ত্র অভিমন্ত্রিত পূর্বক প্রেতকে আচ্ছাদন করণীয়। পরবর্তী তিনটি ঋকের দ্বারা অস্থির উপরে তিলমিশ্রিত সৃষ্ট যব নিক্ষেপণীয়। এ ছাড়া অপর মন্ত্রগুলির মাধ্যমে পিতৃমেধের দ্বিতীয় দিবসে দহনস্থানের নিকট গোদুগ্ধে বা পক্ক স্থালীপাকে যজ্ঞ সাধনীয়।…(কৌ. ১১৮, ১১৯ দ্রষ্টব্য)।..ইত্যাদি ॥ (১৮কা. ৪অ. ৪সূ.) ৷

.

পঞ্চম সূক্ত : পিতৃমেধঃ

 [ঋষি : অথর্বা দেবতা : যম, পিতরঃ, অগ্নি, চন্দ্রমা ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, ভূরিক, জগতী, শক্করী, বৃহতী, অনুষ্টুপ, গায়ত্রী, পংক্তি, উষ্ণিক]

সমিন্ধতে অমর্ত্যং হব্যবাহং ঘৃতপ্রিয়। স বেদ নিহিতা নিধী পিতৃন্ পরাবততা গতান্ ॥১॥ যং তে মন্থং যমোদনং যন্মাংসং নিপূণামি তে। তে তে সন্তু স্বধাবন্তো মধুমন্তো ঘৃততঃ ২যাস্তে ধানা অনুকিরামি তিলমিশ্রাঃ স্বধাবতীঃ। তাস্তে সন্তুষ্ট্ৰীঃ প্রভৃীস্তান্তে যমো রাজানু মন্যতাম্ ॥৩॥ ইদং পূর্বপরং নির্যনং যেনা তে পূর্বে পিতরঃ পরেতাঃ। পুরোগবা যে অভিশাচো অস্য তে ত্বা বহন্তি সুকৃতামু লোক॥৪. সরস্বতীং দেবয়ন্তো হবন্তে সরস্বতীমধ্বরে তায়মানে। সরস্বতীং সুকৃতত হবন্তে সরস্বতী দাশুষে বাৰ্যং দাৎ ॥৫৷৷ সরস্বতীং পিতরো হবন্তে দক্ষিণা যজ্ঞমভিনক্ষমাণাঃ। আসদ্যস্মিন বহির্ষি মাদয়ধ্বমনমীবা ইষ আ ধেহ্যস্মে ৷ ৬ ৷৷ সরস্বতী যা সরথং যয়াথোকথৈঃ স্বধাভির্দেবি পিতৃভিমর্দন্তী। সহস্রার্ঘমিতো অত্র ভাগং রায়স্পোষং যজমানায় ধেহি ॥৭॥ পৃথিবীং ত্বা পৃথিব্যামা বেশয়ামি দেবো নো ধাতা প্র তিরাত্যায়ুঃ। পরাপরৈতা বসুবিদ বো অধা মৃতাঃ সং ভবন্তু, ॥৮॥ আ প্র চ্যবেথামপ তন্মুজেথাং যদ বামভিতা অত্রাচুঃ। অম্মাদেতমঘৌ তদ বশীয়োদাতুঃ পিতৃষিহভোজনৌ মম ॥৯॥ এয়মগ দক্ষিণা ভদ্রতো নো অনেন দত্তা সুদুঘা বয়োধাঃ। যৌবনে জীবানুপপৃঞ্চতী জরা পিতৃভ্য উপসংপরাণয়াদিমান্ ॥১০।

বঙ্গানুবাদ –কর্মকর্তাগণ (যাগকারীবৃন্দ) অমরণধর্মা (অমর্ত্য), আজ্যপ্রিয় (ঘৃতপ্রিয়), হবির বাহক (হব্যবাহ) অগ্নিকে সমিধের (অর্থাৎ কাষ্ঠের) দ্বারা সম্যক্ দীপিত করছেন (সমিন্ধতে)। তিনি (স) অর্থাৎ সেই অগ্নি ভূমিতে নিহিত নিধির ন্যায় অতি দূরদেশগত পিতৃগণকে জ্ঞাত আছেন। (ভূমিতে নিগূঢ় নিধি যেমন প্রদর্শক বিনা প্রকাশ পায় না, পিতৃলোকপ্রাপ্ত পিতৃগণও সেই রকম, দূরবর্তী, অজ্ঞাতলোকে অবস্থান করলেও একমাত্র অগ্নিদেবই তাদের অবস্থান জ্ঞাত আছেন–এটাই বক্তব্য) ১॥

(প্রেতেরই প্রীতির নিমিত্ত সত্তুমন্থ ইত্যাদি প্রদান করা হচ্ছে)–হে প্রেত! তোমার প্রীতি নিমিত্ত যে মন্থ (যন্মন্থং), যে অন্ন (যমোদনং), যে মাংস (যন্মাংসং) প্রদান করছি (নিপূণামি), তে অর্থাৎ সেই মন্থ ইত্যাদি তোমার বহু অন্নযুক্ত (স্বধাবন্তঃ), মধুযুক্ত (মধুমন্তঃ) এবং ঘৃতের সাথে যুক্ত (ঘৃততঃ ) তোক (সন্তু) ॥ ২॥

হে প্রেত! তোমার উদ্দেশে এই যে কৃষ্ণ তিলযুক্ত ভৃষ্ট যব নিক্ষেপ করছি, সেগুলি মহৎ ও প্রভূত পরিমাণে তোমার প্রাপ্ত হোক; এবং পিতৃলোকাধিপতি যম তা ভক্ষণের জন্য তোমাকে অনুজ্ঞা প্রদান করুন। [ এই মন্ত্রটি এই অনুবাকের তৃতীয় সূক্তের ষষ্ঠ মন্ত্রেও পাওয়া যায় ] ৷ ৩৷

 এই যে পুরোবর্তী প্রেতবহনের শকট (নিনং), তা পূর্বের এবং অদ্যতন; অর্থাৎ পূর্বে যে শকটে তোমার পিতৃপুরুষগণ পরাজুখে গমন করেছিলেন (পরেতাঃ), বর্তমানেও সেই শকট প্রেতবহনের জন্য অবস্থিত রয়েছে। ইদানীং এই সন্নহ্যমান শকটের (অস্য) সম্মুখভাগের দুই পার্শ্বে (অভিশাচঃ) যে দুটি বলদ যুক্ত হয়ে আছে, তারা তোমাকে (তুমি হেন প্রেতকে) সুকৃতলোকে বহন পূর্বক গমন করুক (বহন্তি সুকৃতাম্ লোকম)। ৪

মৃতদেহের সংস্কার করণশালী অগ্নি বা যমের প্রীতির নিমিত্ত সকলশব্দ-সরণিস্বরূপা বাগদেবতার (সরস্বতীর বা সরণবতীর) আহ্বান করা হয়। তথা অধ্বরে অর্থাৎ জ্যোতিষ্টোম ইত্যাদি যজ্ঞের তায়মানে অর্থাৎ বিস্তার লাভ ঘটলে বাগদেবীর (সরস্বতীর) আহ্বান করা হয়। (যজ্ঞে সারস্বত হোমের বিদ্যমানতার কারণে স্তোত্ৰশব্দ ইত্যাদির বাগাত্মকত্ব এবং তার সিদ্ধির নিমিত্ত সরস্বতীর আহ্বান করা হয়ে থাকে)। পূর্বে সুকৃত কর্মকারীগণ আপন আপন অভিমত ফল-লাভের নিমিত্ত দেবী সরস্বতাঁকে আহ্বান করেছেন; এখনও সরস্বতী দেবী হবির্দানরত যজমানকে বরণীয় বস্তু (বার্যং) দান করুন। [এই মন্ত্রটি এই কাণ্ডের প্রথম অনুবাকের পঞ্চম সূক্তের প্রথম মন্ত্র রূপেও পাওয়া যায়। ৫৷৷

বেদীর দক্ষিণ দিকে প্রতিষ্ঠিত পিতৃপুরুষবর্গও দেবী সরস্বতীর আহ্বান করে থাকেন। হে পিতৃপুরুষগণ! তোমরা এই যজ্ঞে বিরাজমান হয়ে আমাদের প্রদত্ত স্বধা লাভপূর্বক প্রসন্নতা প্রাপ্ত হও। হে দেবী সরস্বতী! তুমি পিতৃগণের দ্বারা আহুতা হয়ে রোগ-রহিত অভীপ্সিত অন্ন আমাদের প্রদান করো। [এই মন্ত্রটিও এই কাণ্ডের প্রথম অনুবাকের পঞ্চম সূক্তের দ্বিতীয় মন্ত্র রূপেও পাওয়া যায়। ৬।

 হে সরস্বতী দেবী! তুমি উথ-শস্ত্রে (সামবেদীয় অংশবিশেষ বা যজ্ঞবিশেষে) ও স্বধায় (পিতৃলোকের উদ্দেশে প্রদত্ত জল-পিণ্ড ইত্যাদি বা জল-পিণ্ডদানের মন্ত্রে) তৃপ্ত হয়ে পিতৃগণ সমভিব্যাহারে এক-রথে গমন করছো। তুমি বহু পুত্র ও প্রজাদের তৃপ্ত করার উপযুক্ত অন্নের ভাগ এবং গো-ইত্যাদি লক্ষণ ধনের পুষ্টি আমি হেন যজমানকে প্রদান করো। [এই মন্ত্রটিও এই কাণ্ডের প্রথম অনুবাকের পঞ্চম সূক্তের তৃতীয় মন্ত্র রূপেও পাওয়া যায়] ॥ ৭।

পৃথিবীবিকারভূত কুম্ভীরূপা (পৃথিব্যাং) হে মৃত্তিকা (পৃথিবীং)! তোমাকে আমি আলিম্পিত করছি। (অর্থাৎ মৃত্তিকা, গোময় ইত্যাদি লেপনের দ্বারা আমি এই চরুস্থালী ঈষৎ দৃঢ়া (ত্বা) করছি)। বিধাতা (ধাতা) অর্থাৎ সকলের দেবতা আমাদের সকল যজ্ঞীয় অনুষ্ঠানের অনুষ্ঠাতা রূপে আমাদের জীবন (আয়ুঃ) বর্ধন করুন (প্র তিরাতি)। হে দূরদেশে গত (পরাপরৈতাঃ) পিতৃগণ! তোমরা বসুবিৎ অর্থাৎ এই অন্নলক্ষণ ধন তোমাদের প্রাপয়িত্রী হোক; (অর্থাৎ এই মৃত্তিকালিপ্তা চরুকুন্তী তোমরা লাভ করো)। চরু-প্রদান, স্বাহাকার ইত্যাদির পর (অধ) ইদানীন্তন পরলোক প্রাপ্ত (মৃতাঃ) পিতৃগণ আপন পূর্বজ পিতৃবর্গের সাথে সংযুক্ত হোন (সং ভবন্তু) ৮

হে প্রেতবাহক বৃষভদ্বয়! তোমরা শকট হতে বিযুক্ত হয়ে (প্র চ্যাবেথাং) আমাদের অভিমুখে আগত হও (আ); সেই নিন্দারূপ বাক্য অপমার্জিত অর্থাৎ শোধন করো (অপ তৎ মৃজেথাং), যা দূষক পুরুষগণ (অভিভাঃ) তোমাদে সম্পর্ক বলে থাকে। এই বৃষভদ্বয় অস্পৃশ্য, অনিরীক্ষ প্রেতকে বহন কর্মে নিয়োজিত হয়েছে–ইত্যাদি নিন্দারূপ যে বাক্য উদিত হয়েছে, তা শোধন করো। অতএব হে অহন্তব্য অর্থাৎ অবধ্য (অগ্নৌ) বৃষভদ্বয়! তোমরা এই নিন্দানিমিত্ত শকট হতে আগত হও। সেই আগমন (তৎ) শ্রেষ্ঠ (বশীয়ঃ) হবে। তাহলে এই (ইহ) পিতৃমেধ যজ্ঞে অর্থাৎ পিতৃগণের উদ্দেশে অগ্নির প্রদাতা (দাতুঃ) বা হবির প্রদাতা আমার পক্ষে তোমরা পালয়িন (মম ভোজনৌ) হবে ॥ ৯

এই গোরূপা দক্ষিণা (ইয়ং দক্ষিণা) সংস্কারকারী আমাদের (নঃ) কল্যাণ প্রদেশ হতে (ভদ্রতঃ) আগত হয়েছে (আ অগন)। এই প্রেতের দ্বারা বিতীর্ণা (অনেন ৭৬, দোঞ্জী (সুদুঘা), অন্নের ক্ষীরলক্ষণ-প্রদাত্রী (বয়োধাঃ) গোরূপা দক্ষিণা বার্ধক্যে জরাযুক্তা হলেও বর্তমানের ন্যায় যৌবন সদৃশ জীবন (শরীরের মধ্যাবস্থা) প্রাপ্ত হোক (যৌবনে জীবান)। অধিকন্তু, (এই গোরূপা দক্ষিণা) অধুনা (ইমা) সংস্ক্রিয়মাণ পূর্ব পিতৃগণের সমীফে সম্যক্ প্রাপ্ত হোক (উপসম্পরাণয়াৎ)। ১০.

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –সমিন্ধতে ইতি আদ্যয়া ঋচা পিণ্ডপিতৃযজ্ঞে সমিধং আদধ্যাৎ। (সূত্রিতং হি)।…যাস্তে ধানাঃ ইত্যাস্যা অস্থিষু তিলমিশ্ৰধানাবিকিরণে বিনিয়োগ উক্তঃ। ইদং পূর্বং ইত্যনয়া দহনার্থং প্রেতং উত্থাপ্য শকটে নিদধ্যাৎ। সরস্বতীং দেবয়ন্তুঃ ইতি তিসৃণাং প্রেতশরীরে অগ্নিদানান্তরং সারস্বতহোমে বিনিয়োগ উক্তঃ।–ইত্যাদি৷৷(১৮কা. ৪অ. ৫সূ.)।

 টীকা –উপযুক্ত সূক্তের প্রথম মন্ত্রের দ্বারা সমিধ গ্রহণ করা হয়। পরবর্তী সূমন্ত্রগুলি তিলমিশ্র ধান নিক্ষেপণে, দহনের নিমিত্ত প্রেতশরীরকে উত্থাপিত করে শকটে স্থাপন, প্রেতশরীরে অগ্নিদানের পর সারস্বতহোমে বিনিয়োগ, সবযজ্ঞে মৃত্তিকা-গোময় ইত্যাদির দ্বারা চরুস্থালী আলিম্পন (কৌ. ৮/২), প্রেতবাহন বৃষভদ্বয়কে অভিমন্ত্রিত করে গ্রহণ, পিতৃমেধের চতুর্থ দিবসে দক্ষিণারূপা গাভী অভিমন্ত্রণ পূর্বক প্রতিগ্রহণ ইত্যাদি নির্ধারিত হয়েছে ॥ (১৮কা. ৪অ. ৫সূ.)।

.

ষষ্ঠ সূক্ত : পিতৃমেধঃ

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : যম, পিতরঃ, অগ্নি, চন্দ্রমা ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, ভূরিক, জগতী, শক্করী, বৃহতী, অনুষ্টুপ, গায়ত্রী, পংক্তি, উষ্ণিক]

 ইদং পিতৃভ্যঃ প্র ভরামি বহিজবং দেবেভ্য উত্তরং সৃণামি। তদা রোহ পুরুষ মেধধ্যা ভবন্ প্রতি ত্বা জানন্তু পিতরঃ পরেতম্ ॥১॥ এদং বহিরসদো মেধ্যোহভুঃ প্রতি ত্বা জানন্তু পিতরঃ পরেতম। যথাপরু তন্বং সং ভরস্ব গাত্রাণি তে ব্ৰহ্মণা কল্পয়ামি৷ ২ পর্ণো রাজাপিধানং চরূণামূৰ্জো বলং সহ ওজো ন আগন্। আয়ুজীবেভ্যো বিদধ দীর্ঘায়ুত্বায় শতশারদায় ॥ ৩৷৷ ঊর্জো ভাগো য ইমং জজানাশ্মন্নানামাধিপত্যং জগাম। তমত বিশ্বমিত্রা হবিভিঃ স নো যমঃ প্রতরং জীবসে ধাৎ ॥ ৪ যথা যমায় হমবপন্ পঞ্চ মানবাঃ। এবা বপামি হং যথা মে ভুরয়োহসত ॥৫॥ ইদং হিরণ্যং বিভৃহি যৎ তে পিতাবিভঃ পুরা। স্বর্গং যতঃ পিতুহং নিড়টি দক্ষিণম্ ৷৬৷ যে চ জীবা যে চ মৃতা যে জাতা যে চ যজ্ঞিয়াঃ। তেভ্যো ঘৃতস্য কুল্যৈ তু মধুধারা বুন্দতী ॥৭৷ বৃষা মতীনাং পবতে বিচক্ষণঃ সূরো অহ্নাং প্রতরীতোষসাং দিবঃ। প্রাণঃ সিন্ধুনাং কলশা অচিক্রদদিন্দ্রস্য হার্দিৰ্মবিশন্মনীষয়া ॥ ৮. ত্বেষস্তে ধূম ঊর্ণোতু দিবি ষংছুক্র আততঃ। সূরো ন হি তা ত্বং কৃপা পাবক নোচসে ॥৯॥ প্র বা এতীন্দুরিন্দ্রস্য নিষ্কৃতিং সখা সখন প্র মিনাতি সঙ্গিরঃ। মর্য ইব যোষাঃ সমর্ষসে সোমঃ কলশে শতযামনা পথা ॥১০

বঙ্গানুবাদ— পিতৃপুরুষগণের নিমিত্ত (পিতৃভ্যঃ) এই কুশ (ইদং বৰ্হি) আস্তৃত করছি (প্র ভরামি)। সেই আস্তীর্ণ কুশের উপর (উত্তরং) আমি হেন সংস্কারক (জীব–জীবনবান) দেবতাগণের নিমিত্ত অপর কুশ আস্তীর্ণ করছি (খৃণামি)। হে পুরুষ! তুমি এই পিতৃমেধাখ্য যজ্ঞের যোগ্য (মেধ্য) হয়ে সেই কুশে আরোহণ করো (আ রোহ)। তোমার পূর্বজ পিতৃগণ (পিতরঃ) পরাঙ্খ-গত বা পরলোক-প্রাপ্ত (পরেতং) তোমাকে অনুমোদন করুন (ত্বা প্রতি জানন্তু); (অর্থাৎ কুশে আরোহণের কারণে তারা এই কথা স্মরণ করুন যে, আমাদের এই জন পিতৃলোক লাভ করেছে)। ১।

 হে প্রেত! তুমি এই (ত্বং ইদং) চিতায় আস্তীর্ণ কুশে আরোহণ করে (বহিরসদো) এবং অতঃপর পিতৃমেধ যজ্ঞের যোগ্য হও (মেধ্যেভূঃ); অর্থাৎ দহনের দ্বারা সংস্কৃত হও)। তোমার পূর্বজ পিতৃগণ (পিতরঃ) পরাঙ্খ-গত বা পরলোক-প্রাপ্ত (পরেতং) তোমাকে অনুমোদন করুন। জীবিত অবস্থায় তোমার দেহের অস্থিগুলির পর্বে যেমন সন্নিবেশিত ছিল (তন্বং যথাপরু সংভরস্ব গাত্রাণি), আমিও এই ব্রহ্মমন্ত্রের দ্বারা তা পূর্বস্থিত পর্বানতিক্রমে সংহত করছি (কল্পয়ামি)। (আমিও অর্থে–অহমপি কুলে জ্যেষ্ঠ অর্থাৎ কুলের জীবিত জ্যেষ্ঠ পুরুষ রূপে)। ২।

কুম্ভ্যা-পক্ক অন্নের (চরূণাম) আচ্ছাদনভূত (পিধানং) সকল যজ্ঞীয় বৃক্ষের অধিপতি পলাশবৃক্ষ (পর্ণঃ রাজা) আমাদের বলবন্তকারী অন্নরস (ঊর্জঃ), শারীরিক ও বাহ্যিক অর্থাৎ মনুষ্য-সম্পদ ইত্যাদি লক্ষণ সমন্বিত দুই প্রকার বল, শত্রুধর্ষণের সামর্থ্য (সহঃ), শরীরের কান্তি বা শরীরধারক অষ্টম ধাতু (ওজঃ) প্রদানের নিমিত্ত আগত হোক; (অর্থাৎ সকলচরু-পিধায়ক পলাশপর্ণ আমাদের উর্জবল ইত্যাদির আকর হয়ে আগমন করুক)। (কেবল অন্ন ইত্যাদি দানই নয়, অধিকন্তু) জীবিত আমাদের (জীবেভ্য) আয়ুকে শতসম্বৎসরব্যাপী দীর্ঘায়ুত্ব প্রদান করুক (বিদধৎ) ৩

অস্থিসমীপে স্থাপিত অন্নের সম্ভোগকারী (উর্জঃ ভাগঃ) যম (য) এই প্রেতকে উৎপাদিত করেছেন (ইমস্ জজান)। এবং যমের দ্বারা (যেন চ) চরুর আচ্ছাদক পাষাণ (অশ্ম) চরুর উপর স্থায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েছে (অন্নানাম্ আধিপত্য জগাম)। হে সকলের উপকারীজনবস্তু বান্ধবগণ (বিশ্বমিত্রা )! তোমরা সেই যমকে চরুপুরোডাশ ইত্যাদি হবির দ্বারা প্রীত করো (তম্ অৰ্চত হবির্ভি)। সেই অর্চিত যম (স যমঃ) আমাদের (নঃ) প্রকৃষ্ট (প্রতরং) জীবন বা দীর্ঘ আয়ু লাভের নিমিত্ত ধারণ করুন (জীবসে ধাৎ)। [ এই ঋকটির অর্ধাংশ এই কাণ্ডের তৃতীয় অনুবাকের সপ্তম সূক্তের তৃতীয় মন্ত্রে পাওয়া যায় ] ৷৷ ৪

পঞ্চ সংখ্যক জন (মনোরপত্য ইত্যাদি পঞ্চ মানবাঃ) অর্থাৎ নিষাদ ও ব্রাহ্মণ ইত্যাদি চতুবর্ণীয় মানব অথবা ঐতরেয়ক ব্রাহ্মণানুসারে দেব-মনুষ্য-গন্ধর্বপ্সরা-সর্প ও পিতৃগণ) যে প্রকারে (যথা) প্রেতাধিপতি যমের নিমিত্ত নিবাসস্থান নির্মাণ করেছে (হং অবপন), তেমন (এব) প্রেতের নিবাসের নিমিত্ত উন্নত পিতৃগৃহ মৃত্তিকার দ্বারা সম্পাদিত করছি (হং আবপামি), যাতে আমার বান্ধবগণ (মে) বহু (ভুরয়ঃ) হয় (অসত); (অর্থাৎ প্রেতরূপী বান্ধবগণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে নিবাস করতে পারে)। (প্রেতের নিমিত্ত উন্নত স্থান না করলে বন্ধুবর্গের অনিষ্ট বা অসুবিধা হতে পারে, সেই কারণেই উন্নত পিতৃগৃহ নির্মাণের প্রয়োজন হয়)। ৫।

হে প্রেত! এই সুবর্ণনির্মিত অঙ্গুরি (ইদং হিরণ্যং) ঘৃতের দ্বারা ধারণ করো (বিভৃহি), যে হিরণ্য (যৎ) তোমার (তে) পিতা অতীতে দক্ষিণ হস্তে ধারণ করতেন। সুখের সাথে কর্মার্জিত লোকে গমনকারী (স্বর্গং যত) জনকের দক্ষিণ হস্ত নিৰ্মার্জন বা শোধন করে দাও (নিঃ মৃড়টি দক্ষিণ)। (দক্ষিণহস্তে ধারণের কারণে দক্ষিণ হস্তের প্রমার্জন প্রয়োজন) ॥ ৬

যারা জীববন্ত (অর্থাৎ জীবন্ত) ও যারা মৃত, যারা জনিমন্ত (অর্থাৎ জাত হয়েছে) এবং যারা জনিষ্যমাণ (যজ্ঞিয়াঃ-অৎ উৎপাদিতব্য)–সেই সকলের (তেভ্যঃ) নিমিত্ত মধুপ্রবাহ বিশেষভাবে অভিবর্ষিত হোক (মধুধারা ব্যুন্দতী) এবং আজ্যের কৃত্রিম নদী (ঘৃতস্য কুল্যা) তাঁদের প্রীতির নিমিত্ত গমন করুক বা প্রবাহিত হোক (এতু)। ৭৷

(পিতৃত্ব প্রাপ্ত পুরুষগণ. ধূম ইত্যাদি মার্গ অবলম্বনে পিতৃলোক প্রাপ্ত হয়ে সোমযাগ ইত্যাদি জনিত সুকৃত বা পুণ্যফল উপভোগ করে। সেই কারণে পিতৃপ্রকরণে সোমের স্তুতি করা হচ্ছে)।–স্তোতৃগণের (মতীনাং) অভিমত ফলবৰ্ষক (বৃষা) বা স্তুতিবিষয়ে বিশেষভাবে দ্রষ্টা (বিচক্ষণঃ) সকলের দ্রষ্টব্য সোম দশাপবিত্র হতে স্যন্দিত অর্থাৎ ক্ষরিত হচ্ছে (পবতে)। দিবা ও রাত্রির নিষ্পদয়িতা (অহ্নাং সূরঃ), উষাকাল ও দুলোকের প্রবর্ধয়িতা (প্রতরীতা উষসাং দিবঃ), ক্ষরণশীল বসতীবরী জলের (সিন্ধুনাং) প্রাণভূত স্বাত্মরূপের কর্তা (প্রাণঃ) সোমকলশসমূহের (অর্থাৎ দ্রুমময় যজ্ঞপাত্রবিশেষের) অথবা (ইন্দ্র-বায়ু ইত্যাদি সম্বন্ধীয় গ্রহপাত্রের) অভিলক্ষ্যে অত্যন্ত শব্দ করছে অথবা ধারাপাতনের ধ্বনিতে তাদের সেইরকম ধ্বনি উৎসারিত করাচ্ছে (অচিক্রদৎ)। অতঃপর তিন সবনে (ত্রৈকালিক যজ্ঞে) যষ্টব্য ইন্দ্রের (ইন্দ্রস্য) হৃদয়ে বা জঠরে (হার্দিৰ্ম) যথামনোভিলাষে (মনীষয়া) প্রবেশ করছে। (অবিশৎ)। ৮।

(এই স্থানে প্রেতাগ্নির স্তুতি করা হচ্ছে)–হে প্রেতাগ্নি! তোমার দীপ্ত ধূম আচ্ছাদিত করুক (অর্থাৎ অন্তরিক্ষের সর্বত্র মেঘে পরিণত হোক) (তে ত্বেষ ধূমঃ উর্ণোতু)। অন্তরিক্ষে প্রভাময় হয়ে বিস্তীর্ণ (দিবি সন্ শুক্রঃ আততঃ) হে পাবক বা পবিত্রকারক (অর্থাৎ দাহক বা শোধক প্রেতাগ্নি)! তুমি (ত্বং) স্তুতির সাথে অর্থাৎ স্থূয়মান হয়ে (কৃপয়া) সূর্যের ন্যায় (সূরঃ ন) দীপ্ত হয়ে প্রকাশমান হচ্ছো (দ্যুতা রোচসে)। ৯

(পিতৃলোকাধিপতি সোমের স্তুতি করা হচ্ছে)-স্যমান অর্থাল ক্ষরণশীল সোম (ইন্দুঃ) ইন্দ্রের জঠরলক্ষণ স্থানে (নিষ্কৃতিং) গমন বা প্রবেশ করছে (বৈ প্রৈতি)। সখার ন্যায় হিতকরী সোম (সখা) অভিষবস্তোত্র ইত্যাদির দ্বারা সখিভূত (সখৃঃ) ইন্দ্রকে কাম্যমান বস্তু সমূহ প্রদান করছে অথবা সখা সোম তার সখা ইন্দ্রের উদর শূন্য হতে দিচ্ছে না (ন প্র মিনাতি) অর্থাৎ সর্বদা নিজের দ্বারা পূর্ণ করছে। মরণধর্মা মনুষ্য যেমন (মর্য ইব)। যেমন যুবতীর সাথে সঙ্গত হয়, সেইরকম সোমও সোমাধারে অর্থাৎ দ্রোণকলসে (কলশে) শত পথে অর্থাৎ বহুধারায় (শত্যমনা পথা) পতিত হচ্ছে অর্থাৎ সঙ্গত হচ্ছে (সমর্ষসে)। ১০ ]

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— ইদং পিতৃভ্য ইতি প্রথমায়াঃ প্রথমার্ধেন চিতিকাষ্ঠানাং উপরি দর্ভনি স্মৃণাতি। উত্তরাধেন আস্তীর্ণদর্ভায়া চিতৌ প্রেতং উত্তানশয়ং কুর্যাৎ।…ইত্যাদি৷৷ (১৮কা. ৪অ. ৬সূ.)।

টীকা –উপযুক্ত সূক্তের প্রথম মন্ত্রের প্রথমার্ধের দ্বারা চিতিকাষ্ঠের উপরে কুশ বিস্তার ও শেষার্ধের দ্বারা কুশাস্তীর্ণ চিতায় প্রেতকে (অর্থাৎ শবকে) ঊর্ধ্বমুখ (অর্থাৎ চিৎ) করে শায়িত করা হয়।..দ্বিতীয় মন্ত্রে কুলের জ্যেষ্ঠ জনের দ্বারা অস্থিপর্বগুলি সন্নিবেশ করণীয়। এইভাবে পর পর মন্ত্রগুলি শতচ্ছিদ্ৰপাত্র ও পলাশপত্রের আচ্ছাদন, চরুর আচ্ছাদক পাষণ স্থাপন, মৃত্তিকার দ্বারা উন্নত পিতৃগৃহ নির্মাণ, জ্যেষ্ঠপুত্র কর্তৃক প্রেতহস্তে বিদ্যমান হিরণ্যাঙ্গুরীয় মার্জন, পূর্ব ও উত্তর পুরুষদের নিমিত্ত কৃত্রিম আজ্য-নদীর আবাহন ইত্যাদি পিতৃমেধ সম্পর্কিত কর্মে বিনিয়োগ করা হয় ॥ (১৮কা. ৪অ. ৬সূ.)।

.

সপ্তম সূক্ত : পিতৃমেধঃ

 [ঋষি : অথর্বা দেবতা : যম, পিতরঃ, অগ্নি, চন্দ্রমা ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, ভূরিক, জগতী, শক্করী, বৃহতী, অনুষ্টুপ, গায়ত্রী, পংক্তি, উষ্ণিক]

 অক্ষন্নমীমদন্ত হ্যব প্রিয়া অধূষত। অস্তোষত স্বভানবো বিপ্রা যবিষ্ঠা ঈমহে॥১॥ আ যাত পিতরঃ সোম্যাসো গম্ভীরৈঃ পথিভিঃ পিতৃযাণৈঃ। আয়ুরস্মভ্যং দধতঃ প্রজাং চ রায়শ্চ পৌষেরভি নঃ সচধ্বম্ ॥ ২॥ পরা যাত পিতরঃ সোম্যাসো গম্ভীরৈঃ পথিভিঃ পূর্যাণৈঃ। অধা মাসি পুনরা যাত নো গৃহান্ হবিরং সুপ্রজসঃ সুবীরাঃ ॥ ৩৷৷ যদ বো অগ্নিরজহাদেকমঙ্গং পিতৃলোকং গময়ং জাতবেদাঃ। তদ ব এতৎ পুনরা প্যায়য়ামি সাঙ্গাঃ স্বর্গে পিতরো মাদয়ধ্বম্ ॥ ৪৷৷ অভূদ দূতঃ প্রহিতো জাতবেদাঃ সায়ং ন্যহ্ন উপবন্দ্যো নৃভিঃ। প্রাদাঃ পিতৃভ্যঃ স্বধয়া তে অক্ষন্নদ্ধি ত্বং দেব প্রযতা হবীংষি ॥ ৫৷৷ অসৌ হা ইহ তে মনঃ ককুৎসলমিব জাময়ঃ। অভ্যেনং ভূম ঊর্ণহি ॥ ৬৷৷ শুম্ভন্তাং লোকাঃ পিতৃষনাঃ পিতৃষদনে ত্বা। লোক আ সাদয়ামি ॥৭॥ যেহস্মাকং পিতরস্তেষাং বৰ্হিরসি ॥ ৮৷ উদুত্তমং বরুণ পাশমম্মদবাধমং বি মধ্যমং শ্ৰথায়। অধা বয়মাদিত্য ব্রতে বানাগসো অদিতয়ে স্যাম ॥৯॥ প্ৰাম্মৎ পাশা বরুণ মুঞ্চ সর্বান্ যৈঃ সমামে বধ্যতে যৈামে। অধা জীবেম শরদং শতানি ত্বয়া রাজন্ গুপিতা রক্ষমাণাঃ ॥১০।

বঙ্গানুবাদ— (এখানে পিতৃগণের স্তুতি করা হচ্ছে)–কুশের উপরে দত্ত পিণ্ডসমূহ (অক্ষ) ভক্ষণ পূর্বক পিতৃপুরুষগণ তুষ্ট হয়েছেন (অমীমদন্ত হি অব)। পুনরায় তারা আপনাপন শরীরকে (প্রিয়া) কম্পায়মান করছেন (অধুষত); (অর্থাৎ অতিশয়িত রসাস্বাদনের নিমিত্ত তাদের শরীরে কম্পন হচ্ছে)। অনন্তর নিজেদের আয়ত্তাধীন দীপ্তি সম্পন্ন (স্বভানবঃ) পিতৃগণ সাধু কর্ম করার নিমিত্ত আমাদের প্রশংসা করছেন। সেই পিণ্ডভক্ষণে তৃপ্ত পিতৃগণের নিকটে মেধাবি (বিপ্রাঃ) যুবতম (যবিষ্ঠাঃ) আমরা আপন ইষ্টফল যাচনা করছি (ঈমহে)। ১।

 হে পিতৃগণ! সোমের যোগ্যরূপী তোমরা (সোম্যাসঃ) দুর্গম পিতৃযান পথে আগমন করো (আ যাত গম্ভীরৈঃ পথিভি পিতৃযানৈঃ)। এবং আগমন পূর্বক পিণ্ডদানার্থে আস্তীর্ণ কুশের উপর তিল বিকিরণকারী আমাদের (অস্মভ্য) বহুকালব্যাপী জীবন (আয়ুঃ) ও প্রকর্ষের দ্বারা জায়মান পুত্রপৌত্র ইত্যাদি লক্ষণ সন্ততি (প্রজাং) প্রদান করো (দবতঃ)। অধিকন্তু আমাদের ধন ও সমৃদ্ধির সাথে সংযোজিত কমরো (রায়শ্চ পোষৈঃ অভি নঃ সচধ্বম্ ২

হে সোমের (সোমপান, বা সোমযাগের) যোগ্যরূপী পিতৃগণ (পিতরঃ সোম্যাসঃ)! তোমরা আপন লোক-প্রাপ্তি সাধনে (পূর্যাণৈঃ) দুর্গম পিতৃযান পথে অর্থাৎ পরাজুখে গমন করো। অনন্তর এক মাস পূর্ণ হলে (মাসি পূর্ণে, অর্থাৎ পরবর্তী অমাবস্যায়) হবির্ভক্ষণের স্থানভূত (হবিঃ অতুম) আমাদের গৃহে পুনরায় আগমন করো (পুনঃ আ যাত নঃ গৃহান)। (আমাদের গৃহের বৈশিষ্ট্য কি?-না) আমাদের গৃহ শোভন পুত্রযুক্ত (সুপ্রজসঃ) ও কর্মকুশল পৌত্র ইত্যাদি সমন্বিত (সুবীরাঃ) ৷ ৩৷৷

 হে প্রেত পুরুষবর্গ! তোমরা (বঃ) পিতৃগণের অধিষ্ঠিত স্থানের প্রাপক (পিতৃলোকং গময়ং)। জাত প্রাণীমাত্রেরই পুণ্য-পাপের জ্ঞাতা অগ্নি (জাবেদাঃ) প্রেতদহনকালে তোমাদের যে (যৎ) একটি অঙ্গ ত্যাগ করেছেন (অজহাৎ), সেই পুরোবর্তী অবয়ব, অগ্নিতে প্রক্ষেপ করছি (পুনরা প্যায়য়ামি)। তোমরা সম্পূর্ণ অঙ্গে (সাঙ্গাঃ) পিতৃগণের স্থানভূত স্বর্গে (পিতরঃ স্বর্গে) গমন পূর্বক প্রসন্নতা প্রাপ্ত হও (মাদয়ধ্বম্) ৪

সন্ধ্যায় ও প্রাতঃকালে (সায়ং ন্যহ্নে) মনুষ্যগণের উপাসনীয় (নৃভিঃ উপবন্দ্যো), জামাত্রেরই জ্ঞাতা (জাতবেদাঃ), দূতত্বে নিযুক্ত হয়ে আমাদের পিতৃপুরুষগণের প্রতি প্রেরিত (দূতঃ প্রহিতঃ অভূৎ)–এই হেন তুমি হে অগ্নিদেব! আমাদের হবিঃ পিতৃপুরুষগণকে প্রদান করো (পিতৃত্যঃ প্রাদাঃ প্রযতানি হবীংষি); এবং পিতৃপুরুষগণ (তে) স্বধাকারের দ্বারা (স্বধয়া অক্ষ) হবিঃ ভক্ষণ করুন। অনন্তর হে দেব অগ্নি! তুমিও আমাদের দ্বারা তোমাকে প্রদত্ত হবিঃ ভক্ষণ করো (অদ্ধি ত্বম)। ৫৷৷

(এখানে প্রেতকে সম্বোধন করা হচ্ছে)–হে (অমুকনামধেয়) প্রেত (অসৌ হা)! তোমার মন (তে মনঃ) এই ইষ্টকচিত প্রদেশে (ইহ) (অর্থাৎ শ্মশানপ্রদেশে) অবস্থিত রয়েছে। হে ভূমি চিতশ্মশাদেশ! এই স্থানে অবতিষ্ঠমান (এনং) প্রেতকে সর্বতোভাবে আচ্ছাদিত করো (অভূর্ণহি)। (তার দৃষ্টান্ত) আপ্তা বান্ধবাঃ ককুৎসলমিব জাময়–অর্থাৎ স্ত্রীগণ যেমন পুত্র ইত্যাদির মস্তক প্রভৃতি অঙ্গসমূহ শীত-আতপ-বায়ু নিবারণের নিমিত্ত আপন বসনের দ্বারা আচ্ছাদিত করেন ॥ ৬৷৷

হে প্রেত! তোমার পিতৃপুরুষগণের নিবাসস্থান (পিতৃসদনাঃ) পিতৃলোকসমূহ তোমার নিমিত্ত প্রকটিত হোক (শুম্ভন্তাং)। আমি হেন সংস্কর্তা সেই পিতৃসদনে (অর্থাৎ পিতৃগণের অধিষ্ঠিত লোকে) তোমাদের স্থাপন করছি (ত্বা আ সাদয়ামি) ॥৭॥

 (পিণ্ডদানার্থে আস্তীর্ণমান বৰ্হি অর্থাৎ কুশকে সম্বোধন করা হচ্ছে)–হে বৰ্হি! যারা আমাদের (যে অস্মাকং) পিতৃপুরুষ অর্থাৎ পিতৃলোক প্রাপ্ত পূর্বজ পিতৃগণ (পিতরঃ), তুমি তাদের (তেষাং) বৰ্হি (অর্থাৎ কুশরূপ আসদনস্থান হয়ে থাকো (অসি)। ৮।

 এই মন্ত্রটি অষ্টম অনুবাকের দ্বিতীয় সূক্তের তৃতীয় মন্ত্রে ব্যাখ্যাত হয়েছে। প্রসঙ্গতঃ স্মরণীয়-বরুণপাশ তিন প্রকার, উত্তম-অধম-মধ্যম। এই স্থলে সেই কারণে বরুণের উদ্দেশে বলা হচ্ছে–হে বরুণ! তোমার উত্তম পাশ আমাদের নিকট হতে ঊর্ধ্বে উন্মোচন করো (উত্তমং পাশং তস্মৎ উৎ শ্ৰথায়); (অর্থাৎ উত্তম পাশটিকে আমাদের কাছ থেকে অনেক উপরে নিয়ে গিয়ে বিনাশ করো)। অধম অর্থাৎ নিকৃষ্ট পাশ আমাদের নিকট হতে নিম্নে মোচন করো (অব শ্ৰথায়) এবং মধ্যম পাশ শ্লথ করে অর্থাৎ শিথিল করে আমাদের দিকে বিমোচন করো (বি শ্ৰথায়), (যাতে ঐ পাশ আমাদের ক্ষতি করতে না পারে)। অনন্তর বিমুক্তপাশ আমরা, হে অদিতি পুত্ৰ বরুণ (অধা বয়ম্ আদিত্য)। তোমার পরিচরণরূপে (তব ব্রতে) নিদোষ অর্থাৎ প্রত্যবায়রহিত হয়ে (অর্থাৎ তোমার উদ্দেশে যাগানুষ্ঠানের যোগ্য হয়ে) অহিংসায় নিযুক্ত হবো (অদিতয়ে স্যাম); (অর্থাৎ তোমাকে সেবা পূর্বক অহিংসিত হয়ে থাকবো)– ৯

হে বারক দেব (বরুণ)! তোমার যে পাশসমূহে (যৈঃ) সন্নিহিত প্রদেশের ও দূর প্রদেশের পুরুষ বদ্ধ হয় (সমামে বধ্যতে যৈবামে), তোমার সেই সকল বন্ধনসাধনভূত: পাশ হতে (পাশা) আমাদের প্রমোচিত করো (অস্মৎ প্র মুঞ্চ)। তোমার পাশমোচনের পর, হে রাজা বরুণ (রাজ)! তোমার দ্বারা রক্ষিত হয়ে বা পালিত হয়ে (গুপি) আমরা শত শরব্যাপী (শরদং শতানি) অর্থাৎ বহুবর্ষ পর্যন্ত জীবনবন্ত হয়ে থাকবো (জীবেম)। ১০।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –পিণ্ডপিতৃযজ্ঞে অক্ষমীমদন্ত ইতি প্রথমা ঋচা পিণ্ডেপস্থানানন্তরং উত্তরপরিষেকং কুর্যাৎ আ যাত পিতরঃ ইতি ঋচা পিণ্ডদানার্থং স্তীর্ণে বহিষি তিলান প্রকিরেৎ। পরা যাত ইতি ঋচা পিতৃন বিসর্জয়েৎ…স্মৎ পাশান ইতি ঋচং পিতৃমেধে দশরাত্ৰপর্যন্তং সায়াতঃ স্বস্ত্যয়নার্থং (পঠেয়ুঃ)–ইত্যাদি৷৷ (১৮কা. ৪অ. ৭সূ.)।

টীকা— উপযুক্ত সূক্তের প্রথম ঋকটির দ্বারা পিণ্ডপিতৃযজ্ঞে পিণ্ডেপস্থানের পর (অর্থাৎ কুশের উপরে। পিণ্ডদানের পর) উত্তরপরিষেক করণীয়। দ্বিতীয় মন্ত্রটির দ্বারা আস্তীর্ণ কুশে তিল-বিক্ষিপ্ত করণীয়। পরবর্তী ঋকটি পিতৃগণের বিসর্জন অর্থাৎ পিতৃলোকে প্রেরণ সম্পর্কে বিনিয়োগ করণীয়। এইভাবে পরপর মন্ত্রগুলি তণ্ডল হোমে, সমিৎ-আধানের পর অগ্নির প্রত্যানয়নে, শ্মশানদেশে শলাকা স্থাপন ও চিতা নির্মাণে, পিণ্ড প্রদানের নিমিত্ত কুশ আস্তীর্ণ করণে, শবদাহের পর ব্রাহ্মণগণের স্নান করণে বিনিয়োগ নির্দিষ্ট আছে। শেষোক্ত ঋকটি পিতৃমেধে দশরাত্র পর্যন্ত সন্ধ্যায় ও প্রাতে স্বস্ত্যয়নের নিমিত্ত পঠনীয় ॥ (১৮কা. ৪অ. ৭সূ.)।

.

অষ্টম সূক্ত : পিতৃমেধঃ

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : যম, পিতরঃ; অগ্নি, চন্দ্রমা ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, ভূরিক, জগতী, শক্করী, বৃহতী, অনুষ্টুপ, গায়ত্রী, পংক্তি, উষ্ণিক]

অগ্নয়ে কব্যবাহনায় স্বধা নমঃ ॥১॥ সোমায় পিতৃমতে স্বধা নমঃ ॥২॥ পিতৃভ্যঃ সোমব্যঃ স্বধা নমঃ ॥ ৩৷৷ যত্বমায় পিতৃমতে স্বধা নমঃ ॥৪॥ এতৎ তে প্ৰততামহ স্বধা যে চ মনু ॥৫৷৷ এতৎ তে প্রততামহ স্বধা যে চ ত্বমনু ৷৬৷৷ এতৎ তে তত স্বধা ॥৭ ৷৷ স্বধা পিতৃভ্যঃ পৃথিবিষ্যঃ ॥৮॥ স্বধা পিতৃভ্যো অন্তরিক্ষসত্ত্যঃ ॥৯॥ … স্বধা পিতৃভ্যো দিবিষ্যঃ ॥১০৷৷.

 বঙ্গানুবাদ –[দৈবহবির অর্থাৎ দেবতার উদ্দেশে দেয় হবির প্রাপক বা বাহক অগ্নি হব্যবাহক। এই হবিঃ স্বাহাকারের (বষারের) দ্বারা অগ্নিকে অর্পণ করা হয়। পিতৃগণের উদ্দেশে প্রদত্ত হবিকে যেহেতু কব্য বলা হয়, সুতরাং সেই হবির প্রাপক (বা বাহক) অগ্নি হলেন কব্যবাহক। এই হবিঃ স্বধাকারের দ্বারা হুত হয়। সেই কারণে পিণ্ডপিতৃ-যজ্ঞে প্রথম চারটি মন্ত্রে স্বধাকার উল্লেখ করা হয়েছে। ] কব্যবাহক অগ্নিকে স্বধাকারের দ্বারা এই হবিঃ অর্পণ করছি। তাকে নমস্কার। (অর্থাৎ তার বহনের মাধ্যমে আমার পিতৃপুরুষগণ কব্য প্রাপ্ত হোন) ॥ ১।

পিতৃমান সোমের উদ্দেশে স্বধাকারের দ্বারা এই হবি অর্পণ করছি। তাঁকে নমস্কার। (অর্থাৎ যে সকল পিতৃগণ সোমরূপে অবস্থিত, তাঁরা এই কব্য লাভ করুন)। ২৷

সোমশালী (অর্থাৎ জীবিতকালে সোমযাগকারী) পিতৃপুরুষগণের উদ্দেশে স্বধাকারের এবং নমস্কারের দ্বারা সম্পন্ন এই হবিঃ অর্পণ করছি। তারা এই হবিঃ প্রাপ্ত হোন ॥ ৩৷

পিতৃগণের অধিপতি যমের উদ্দেশে স্বধা এবং নমস্কারের দ্বারা এই হবিঃ অর্পিত হচ্ছে। (আমার পিতৃগণ এই হবিঃ প্রাপ্ত হোন)। ৪

(এই ভাবে পিণ্ডপ্রদানমন্ত্র কথিত হচ্ছে)–হে। প্রপিতামহ (ততামহ)! [ তত শব্দ পিতৃবচন ] তোমার উদ্দেশে এই পিণ্ডলক্ষণ হবিঃ স্বধাকারের দ্বারা প্রদত্ত হচ্ছে এবং যে পিতৃ-পুরুষগণ ভার্যা-পুত্র ইত্যাদি সহ তোমাকে অনুসরণ পূর্বক অবস্থান। করছেন (ত্বা অনু) তাদের উদ্দেশেও স্বধামন্ত্রে এই পিণ্ডলক্ষণ হবিঃ অর্পিত হোক; (অর্থাৎ তারাও এই পিণ্ডের অংশভাগী হোন)। ৫।

 হে পিতামহ (ততামহ)! তোমার উদ্দেশে এই পিণ্ডলক্ষণ হবিঃ স্বধাকারের দ্বারা প্রদত্ত হচ্ছে এবং যে পিতৃগণ (অর্থাৎ পরলোকগত পিতামহ স্থানীয়গণ) ভার্যা-পুত্র ইত্যাদি সহ তোমাকে অনুসরণ পূর্বক অবস্থান করছেন, তাঁরাও এই পিণ্ডের অংশভাগী হোন। ৬।

হে পিতা (ততা)! তোমার উদ্দেশে স্বৰ্ধকার যুক্ত অর্পিত এই হবিঃ তুমি প্রাপ্ত হও এবং পিতৃস্থানীয় পরলোকপ্রাপ্ত জন, যাঁরা তোমাকে অনুসরণ পূর্বক অবস্থান করছেন, তাঁরাও এর অংশভাগী হোন। (এই ক্ষেত্রে অনুগামী হিসাবে ভার্যা-পুত্র ইত্যাদির উল্লেখ করা হয়নি; কারণ পিণ্ডপ্রদাতা পুত্র জীবিত থাকায় পরলোকগত পিতার অনুগামী জনের নাম মন্ত্রশেষে উল্লেখনীয়)। ৭।

 পৃথিবীতে অবস্থানকারী (পৃথিবিষ্যঃ) পিতৃগণের উদ্দেশে (পিতৃভ্য) স্বধাকারে এই হবিঃ অর্পিত হচ্ছে। তারা তা প্রাপ্ত হোন। ৮।

অন্তরিক্ষলোকে অবস্থানকারী (অন্তরিক্ষসদ্ভঃ) পিতৃপুরুষগণের উদ্দেশে (পিতৃভ্যো) স্বকারে এই হবিঃ অর্পিত হচ্ছে। তারা তা প্রাপ্ত হোন। ৯

দ্যুলোকে অর্থাৎ স্বর্গে অবস্থানকারী (দিবিষ্য) পিতৃপুরুষগণের উদ্দেশে স্বধাকারে প্রদত্ত এই হবিঃ তাদের লভ্য হোক। ১০

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –পিণ্ডপিতৃযজ্ঞে অগ্নয়ে কব্যবাহনায় ইতি ত্রিভিমন্ত্রৈঃ স্বধা পিতৃভ্যঃ পৃথিবিষ্যঃ ইতি অষ্টমনবমদশমৈশ্চ ত্রিভিঃ স্থালীপাকং জুহুয়াৎ। সূত্রিতং হি (কৌ. ১১৯, ১১ ৮)।… পিণ্ডপিতৃযজ্ঞ এব এতৎ তে প্ৰততামহ স্বধা ইতি পঞ্চমষষ্ঠসপ্তমৈর্মন্ত্রৈবহিষি ত্ৰী পিণ্ডান সংহিতান নিদধ্যাৎ। সূত্রিতং হি।–ইত্যাদি৷৷ (১৮কা, ৪অ. ৮সূ.)।

টীকা –উপযুক্ত নির্দেশানুসারে এই মন্ত্রগুলির দ্বারা স্থালীপাক-যাগ, কুশে পিণ্ড সংহিত করণ ইত্যাদি বিধেয়। কৌশিক সূত্রে এই ক্রিয়ার বিস্তৃত নির্দেশ উল্লিখিত আছে ॥ (১৮কা. ৪অ. ৮সূ.)।

.

নবম সূক্ত : পিতৃমেধঃ

 [ঋষি : অথর্বা দেবতা : যম, পিতরঃ, অগ্নি, চন্দ্রমা ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, ভূরিক, জগতী, শক্করী, বৃহতী, অনুষ্টুপ, গায়ত্রী, পংক্তি, উষ্ণি]

নমো বঃ পিতর ঊর্জে নমো বঃ পিতরো রসায়॥১॥ নমো বঃ পিতররা ভামায় নমো বঃ পিতরো মন্যবে৷ ২৷ নমো বঃ পিতরো যদ ঘোরং তস্মৈ নমো বঃ পিতরো যৎ ক্রুরং তস্মৈ ৷ ৩৷৷ নমো বঃ পিতরো যচ্ছিবং তস্মৈ নমো বঃ পিতরো যৎ স্যোনং তস্মৈ ॥ ৪ নমো বঃ পিতরঃ স্বধা বঃ পিতরঃ ॥৫॥ যেহত্র পিতরঃ পিতরো যেহত্র শূয়ং স্থ যুম্মাংস্তেহনু ঘূয়ং তেষাং শ্রেষ্ঠা ভূয়াস্থ ৷৷ ৬ ৷৷ য ইহ পিতরো জীবা ইহ বয়ং স্মঃ। অম্মাংস্তেইনু বয়ং তেষাং শ্রেষ্ঠা ভূয়াশ্ম ॥ ৭৷৷ আ ত্বগ্ন ইধীমহি দুমন্তং দেবাজর। যদ ঘ সা তে পনীয়সী সমিদ দীদয়তি দ্যবি। ইষং স্তোতৃভ্য আ ভর ॥ ৮। চন্দ্রমা অপস্বন্তরা সুপর্ণো ধাবতে দিবি। ন বো হিরণ্যনেময়ঃ পদং বিন্দন্তি বিদ্যুতো বিত্তং মে অস্য রোদসী৷৷৷৷—

বঙ্গানুবাদ— [এই মন্ত্রগুলি কথিতরূপে ব্যাখ্যাত হয়েছে। এগুলির দ্বারা পিতৃগণের প্রতি নমস্কার প্রতিপাদিত (সম্পন্ন) করা হচ্ছে। (তৈ, ব্রা, ১৩১০৮)। নমস্কারের ফল প্রতিপাদকসমূহ ঊর্জে (অন্ন) ইত্যাদি অথবা পিতৃগণের দীয়মান অন্নরসকে নমস্কার করা হয়েছে। পরবর্তী সর্বক্ষেত্রে এইরকমই বোধিতব্য হে পিতৃগণ! তোমাদের উদ্দেশে দীয়মান ঊর্জকে (অন্নকে) ও অন্নরসকে (রসায়) নমস্কার করছি। ১।

 হে পিতৃগণ! তোমাদের সম্বন্ধী ক্রোধের উদ্দেশে (ভামায়) এবং তোমাদের সম্বন্ধী মনু নামক বিশেষ ক্রোধের (মন্যবে) (অর্থাৎ অহঙ্কারজনিত রোষের) উদ্দেশে নমস্কার করছি। ২।

হে পিতৃগণ! তোমাদের সেই অহিতকারী ভয়ঙ্কর রূপকে (ঘোরং) এবং তোমাদের সেই হিংস্র রূপকে নমস্কার করছি৷৷ ৩৷৷

হে পিতৃগণ! তোমাদের যে মঙ্গলময় রূপ আছে (যৎ শিব), তার উদ্দেশে নমস্কার করছি; তোমাদের যে সুখপ্রদ রূপ আছে (স্যোনং), তার উদ্দেশেও নমস্কার করছি। ৪

হে পিতৃগণ! তোমাদের উদ্দেশে নমস্কার করছি। হে পিতৃগণ! স্বধাকারের দ্বারা এই হবিঃ তোমাদের নিমিত্ত স্বাহুত হোক ॥ ৫॥

এই পিণ্ডপিতৃযজ্ঞে (অত্র) যে পিতৃগণ দেবতাত্ব প্রাপ্ত হয়েছে, তোমাদের অনুসরণকারী (বা আশ্রিত) যাঁরা আছেন, তোমরা তাঁদের মধ্যে প্রশস্যতম অবলম্বন (শ্রেষ্ঠাঃ) হয়ে ওঠো (ভূয়াস্থ)। তোমাদের প্রসাদে তারা পিণ্ডাংভাগী হোন; (অর্থাৎ এই যজ্ঞে পিতৃত্বের দ্বারা যারা সম্ভাবিত হয়েছেন তাদের মধ্যে তোমরা শ্রেষ্ঠ হয়ে ওঠো)। ৬।

 এই লোকে (ইহ) পিণ্ডদাতা আমরা (বয়ং) যেন জীবনবস্তু (অর্থাৎ আয়ুষ্মন্ত) হই (স্মঃ)। আমাদের অনুসরণকারী (সমানবয়স্ক, সমবয়সী, সমানবংশসম্পন্ন, সমান বিদ্যাশালী ও সমানধনশালী) যাঁরা, আমরা যেন তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হয়ে উঠি (তেম শ্রেষ্ঠা ভূয়াস্ম)। ৭।

 হে দ্যোতমান (দেব) অগ্নি? তুমি দীপ্তিমন্ত (দ্যুমন্তং), জরারহিত (অজরং)। তোমাকে আমি সমিধের দ্বারা উদ্দীপিত করছি (ত্বা আ ইধীমহি)। তোমার স্তুতিরূপ প্রশংসনীয় দীপ্তি (পনীয়সী) অন্তরিক্ষে সম্যক্ প্রকাশিত হচ্ছে (সমিৎ)। হে অগ্নি! তুমি সমিদ্ধমান হয়ে (সমিধা) স্তুতিকারী আমাদের নিমিত্ত (স্তোতৃভ্যঃ) অন্ন বা ইষ্টফল (ইষং-ইষ্যমা) আহরণ পূর্বক প্রদান করো (আ ভর) ॥ ৮

অন্তরীক্ষজাত উদকময় মণ্ডলের মধ্যে (অসু অন্তঃ) (অথবা অন্তরিক্ষনামক জলে) বর্তমান শোভনপতন (সুপর্ণঃ) অথবা সুপর্ণ নামক রশ্মি সহ (অর্থাৎ সুষুম্না নামক সূর্যরশ্মির সাথে যুক্ত) সকল জগতের (অথবা দাসীরূপা তারাগণের আহ্বাদকারী চন্দ্রমা দ্যুলোকে শীঘ্র ধাবিত হয়ে চলেছেন (দিবি আ ধাবতে)। সেই হেন চন্দ্রমাসম্বন্ধিনী সুবর্ণসদৃশপর্যন্তা বা হিতরমণীয়প্রাপ্তা নেমিগুলি অর্থাৎ কূপের উপরিস্থ পট্টসমূহ (হিরণ্যনেময়ঃ), হে বিদ্যোতমানা রশ্মিসমুদায় (বিদ্যুতঃ)! তোমাদের পাদস্থানীয় অগ্রাংশ (বঃ পদং) (কুপের তারা আবৃত থাকার কারণে) আমার ইন্দ্রিয়সমূহের গোচরীভূত হচ্ছে না (ন বিন্দন্তি); (অতএব এটি অনুচিত; সেই কারণে আমাকে কূপ হতে উদ্ধার করো, এটাই বক্তব্য)। অপিচ, হে দ্যাবাপৃথিভী (রোদসী)! তোমরা আমার এই স্তোত্র জ্ঞাত হও (মে ২ অস্য বিত্তং)। (অথবা মে অর্থাৎ মদীয় কূপপতনরূপ এই দুঃখ অবগত হও। অর্থাৎ আমার স্তোত্র শ্রবণ পূর্বক, আমাকে কুপ হতে উদ্ধার করো–এই-ই বক্তব্য ॥ ৯ ৷৷

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –নমো বঃ পিতরঃ ইতি অষ্টভির্যজুর্মন্ত্রৈবহির্ষি পিণ্ডেমু আবাহিতা পিতৃন উপতিষ্ঠেত। সূত্রিতং হি (কৌ. ১১৯)। তত্রৈব কর্মণি…সমিধং আদধ্যাৎ!..আ ত্বাগ ইধীমহি (৪র্থ মন্ত্র) ইত্যাদি।…ইত্যাদি৷৷ (১৮কা: ৪অ. ৯সূ.)।

টীকা –উপযুক্ত সূক্তের প্রথম আটটি যজুর্মন্ত্রে বহিতে পিণ্ড প্রদানের পর পিতৃগণের উদ্দেশে নমস্কার, জ্ঞাপন করা হয়েছে। এ ছাড়াও সমিধ সংগ্রহ ইত্যাদি এবং সমিধপ্রাপ্ত অগ্নির স্তুতি ইত্যাদি কর্মেও এই মন্ত্রগুলির সূত্রানুসারে বিনিয়োগ নির্ধারিত আছে। শেষোক্ত (নবম) মন্ত্রটি বরুণদেবতার উদ্দেশে মহাশান্তির নিমিত্ত নক্ষত্ৰকল্প (১৮) অনুযায়ী আবপনীয়।–এই মন্ত্রটির ব্যাখ্যায় প্রথমেই শাট্যায়ন নামক জনৈক ঋষি কথিত একটি ইতিহাস-কথার উল্লেখ করা হয়েছে।–পুরাকালে একত, দ্বিত এবং ত্রিত নামক তিন বান্ধব-ঋষি কোন মরুস্থলীর অরণ্যের মধ্য দিয়ে গমনকালে পিপাসার্ত হয়ে একটি কূপ দর্শন করেন। প্রথম জন ত্রিত জলপানের উদ্দেশ্যে সেই কূপে অবতরণ পূর্বক জল পান করে তৃপ্ত হয়ে অপর দুজনের জন্য জল উত্তোলন করে দেন। একত ও দ্বিত নামক ঋষিদ্বয় সেই জল পান করে তৃপ্ত হয়ে দুর্বুদ্ধিবশতঃ ত্রিতকে সেই কূপ থেকে উদ্ধার না করে বরং তার ধনসামগ্রী অপহরণ পূর্বক তাকে সেই কূপের মধ্যেই ত্যাগ করে সেই কূপের মুখটি একটি রথের চক্রের দ্বারা আবৃত করে গমন করেন। অতঃপর কূপে পতিতাবস্থায় সেই ত্রিত কূপ থেকে নির্গত হতে অসমর্থ হয়ে মনে মনে প্রার্থনা করতে থাকেন–সর্বে দেবা মাং উদ্ধরন্তু, অর্থাৎ সকল দেবতা আমাকে উদ্ধার করুন। অতঃপর রাত্রিকালে কূপের উপরিস্থ প্রান্তভাগে ক্ষীণ চন্দ্ররশ্মি, দর্শন করে উপযুক্ত (নবম) ঋটির দ্বারা বিলাপ (পরিদেবন) করতে থাকেন।-(আমরা মনে করি, এই কাহিনীটি রূপক এবং কিছু কিছু ত্রুটিযুক্ত। শাট্যায়ন ঋষির মূল বক্তব্য আমরা পাঠ করিনি। কিন্তু বর্তমান ব্যাখ্যাকার মরুভূমৌ অরণ্যে অর্থাৎ মরুভূমির অরণ্যে কথাটি উল্লেখ করেছেন। মরুস্থলীতে অরণ্য থাকা সম্ভব হয় না। মরূদ্যানে গাছপালা থাকতে পারে, কিন্তু তাকে অরণ্য বলা যায় না। তারপর কূপং রথচক্রেণ পিধায় ইত্যাদি। এখন, ঐ অরণ্যে রথচক্র কোথা থেকে পাওয়া গেল? আসলে মূল মন্ত্রের হিরণ্যনেময়ঃ শব্দাটি থেকে নেমি অংশের ধারণায় রথচক্রের নেমি-র অবতারণা। কিন্তু নেমি শব্দটির অর্থ কেবল চক্ৰপরিধি বা চক্রের প্রান্ত-ই নয়, নেমি অর্থে কূপের উপরিস্থ পট্ট বা প্রান্তভাগ-ও বোঝায়। সেই হিসেবে আলোচ্য বঙ্গানুবাদে রথচক্র কথাটি অবান্তর। সেই জন্যই আমরা ব্যাখ্যাকারের ব্যাখ্যা অনুসারে কূপের মুখটি রথের চক্রের দ্বারা আবৃত করার কথা বলেও কূপের উপরিস্থ প্রান্তভাগে ক্ষীণ চন্দ্র রশ্মি দর্শন ইত্যাদি উল্লেখ করেছি।যাই হোক, এই কাহিনীর রূপকত্ব থাকলেও এটি একটি বিশেষ উপাখ্যানরূপে এখানে গৃহীত হওয়ার যোগ্য; তাতে কোন সংশয় নেই) ॥ (১৮কা. ৪অ. ৯সূ.)।

[ইতি অষ্টাদশং কাণ্ডং সমাপ্তম্]

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *