পঞ্চম পরিচ্ছেদ
১৮৮৩, ২৮শে নভেম্বর
কেশবের বাটীর সম্মুখে — “পশ্যতি তব পন্থানম্”
[কেশব, প্রসন্ন, অমৃত, উমানাথ, কেশবের মা, রাখাল, মাস্টার ]
কার্তিক কৃষ্ণা চর্তুদশী; ২৮শে নভেম্বর, ১৮৮৩ খ্রীষ্টাব্দ, বুধবার। আজ একটি ভক্ত কমলকুটিরের (Lily Cottage) ফটকের পূর্বধারের ফুটপাথে পায়চারি করিতেছেন। কাহার জন্য ব্যাকুল হইয়া যেন অপেক্ষা করিতেছেন।
কমলকুটিরের উত্তরে মঙ্গলবাড়ি, ব্রাহ্মভক্তেরা অনেকে বাস করেন। কমলকুটিরে কেশব থাকেন। তাঁহার পীড়া বাড়িয়াছে। অনেকে বলিতেছেন, এহার বোধ হয় বাঁচিবার সম্ভাবনা নাই।
শ্রীরামকৃষ্ণ কেশবকে বড় ভালবাসেন! আজ তাঁহাকে দেখিতে আসিবেন। তিনি দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি হইতে আসিতেছেন। তাই ভক্তটি চাহিয়া আছেন, কখন আসেন।
কমলকুটির সার্কুলার রোডের পশ্চিমধারে। তাই রাস্তাতেই ভক্তটি বেড়াইতেছিলেন। বেলা ২টা হইতে তিনি অপেক্ষা করিতেছেন। কত লোকজন যাইতেছে, তিনি দেখিতেছেন।
রাস্তার পূর্বধারে ভিক্টোরিয়া কলেজ। এখানে কেশবের সমাজের ব্রাহ্মিকাগণ ও তাঁহাদের মেয়েরা অনেকে পড়েন। রাস্তা হইতে স্কুলের ভিতর অনেকটা দেখা যায়। উহার উত্তরে একটি বড় বাগানবাড়িতে কোন ইংরেজ ভদ্রলোক থাকেন। ভক্তটি অনেকক্ষণ ধরিয়া দেখিতেছেন যে, তাঁহাদের বাড়িতে কোন বিপদ হইয়াছে। ক্রমে কালোপরিচ্ছদধারী কোচম্যান ও সহিস মৃতদেহের গাড়ি লইয়া উপস্থিত হইল। দেড় দুই ঘন্টা ধরিয়া ওই সকল আয়োজন হইতেছে।
এই মর্ত্যধাম ছাড়িয়া কে চলিয়া গিয়াছে — তাই আয়োজন।
ভক্তটি ভাবিতেছেন, কোথায়? দেহত্যাগ করিয়া কোথায় যায়?
উত্তর হইতে দক্ষিণদিকে কত গাড়ি আসিতেছে। ভক্তটি এক-একবার লক্ষ্য করিয়া দেখিতেছেন, তিনি আসিতেছেন কি না।
বেলা প্রায় পাঁচটা বাজিল। ঠাকুরের গাড়ি আসিয়া উপস্থিত হইল, সঙ্গে লাটু ও আর দু-একটি ভক্ত। আর মাস্টার ও রাখাল আসিয়াছেন।
কেশবের বাড়ির লোকেরা আসিয়া ঠাকুরকে সঙ্গে করিয়া উপরে লইয়া গেলেন। বৈঠকখানার দক্ষিণদিকে বারান্দায় একখানি তক্তপোষ পাতা ছিল। তাহার উপর ঠাকুরকে বসানো হইল।