১৭ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার ১৯৭১
রেবা টাট্রুকে নিয়ে করাচি চলে যাচ্ছে আগামীকাল। মিনিভাইয়ের পাশের বাসার পড়শী লেঃ কর্নেল কেরোয়শীর ভাবভঙ্গি ক্রমেই আতঙ্কজনক হয়ে উঠছে। দ্রলোকের পড়শীসুলভ সদ্ভাব বজায় রাখার প্রচেষ্টা ক্রমেই মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মিনিভাইদের বাড়ির সব্বার দেখভাল করার দায়িত্ব যেন ওর কাঁধেই গিয়ে পড়েছে। দুবাড়ির মাঝখানের বাউন্ডারি ওয়াল বেশ নিচু। ভদ্রলোক বিকেলে লনে তো বসবেই, এদিকে মিনিভাইরা কেউ বেরোলেই সে বাউন্ডারি ওয়ালের কাছে এসে চেঁচিয়ে ডেকে খোশগল্প। জুড়ে দেবে। মিনিভাইদের বাড়িতে কেউ মেহমান এলেই খানিক পরে কোরায়শীও এ বাড়িতে আড্ডা দিতে এসে হাজির হয়ে যাবে। আর জাহির, টাট্রু, সোজন, মিনিভাই রেবার তিন ছেলে যেন তারও চোখের মণি। এই ছেলেদের খবরদারির চোটেই মিনিভাই-রেবার ঘুম হারাম হয়ে উঠেছে। মার্চ-এপ্রিলের দিকে রুমী-জামীকে নিয়ে যখন এ বাসায় একটু বেশি আসতাম, তখন আমার সঙ্গেও পরিচয় হয়েছিল এর। টাট্রু পরীক্ষা দিতে পারে নি দেশদ্রোহী দুষ্কৃতকারীদের জন্য, করাচিতে নভেম্বরে পরীক্ষা হচ্ছে, করাচিতে টাট্রুর বাবার বিজনেস পার্টনার যখন আছেনই, তখন ছেলেকে ওখানে পাঠিয়ে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ, ছেলের একটা বছর নষ্ট হবে না কোরায়শী সাহেবের এসব সুবুদ্ধির ঠেলায় মিনিভাইরা দিশেহারা।
শেষমেষ ছেলেকে নিয়ে করাচি যাওয়াই ঠিক হয়েছে। রেবা নিয়ে যাচ্ছে আগামীকাল।