১৭. সঞ্জয় অনেক জিনিসপত্তর এনেছে

সঞ্জয় অনেক জিনিসপত্তর এনেছে। এক ঝুড়ি আম, এক হাঁড়ি খোয়া ক্ষীর এবং শাশুড়ির জন্য তসরের শাড়ি। নিজে বুঝে-শুনে কেনাকাটি করে এত জিনিসপত্তর সে আগে কখনো আনেনি।

শাশুড়িকে প্রণাম করে সে সকলের খবর-টবর নিল। তারপর মণিকে জিজ্ঞেস করল, তোদের টিকিট কাটা হয়ে গেছে?

মণি বলল, না। দাদু এসে কেটে দেবেন বলেছেন।

ঠিক আছে, সেজন্য আর ব্যস্ত হতে হবে না। আমিই ব্যবস্থা করব।

তাঁরা ঠিক খেয়ে ওঠার পরই সঞ্জয় এসেছে বলে নিভা দারুণ লজ্জায় পড়েছেন। সঞ্জয় রেলের ডাইনিং কারে লাঞ্চ খেয়ে এসেছে শুনেও তিনি নিবৃত্ত হলেন না, তক্ষুনি তার জন্য রুটি করতে বসলেন আবার। বাড়িতে ঘি নেই, ডালডার লুচি জামাইকে খাওয়ানো যায় না।

প্রায় ঘণ্টা খানেক পরে বাসন্তী তার স্বামীর সঙ্গে নিভৃতে কথা বলার সুযোগ পেল। ছোটো মেয়েটা ঘুমিয়েছে; মণি ছোটোমামার ঘরে চলে গেছে। মাকেও জোর করে পাঠানো হয়েছে। বিশ্রাম করতে।

বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে সঞ্জয়। বাসন্তী একটু দূরে দাঁড়িয়ে রইল। আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করল, তুমি হঠাৎ চলে এলে যে?

সঞ্জয় হাসিমুখে বলল, হঠাৎ তোমাদের দেখতে ইচ্ছে করল। মাঝে মাঝে মন কেমন করে না?

বাসন্তী চুপ করে রইল। সে জানে, একথা সত্যি নয়।

সঞ্জয় বিছানায় চাপড় মেরে বলল, এখানে এসে বোসো!

বাসন্তী বসল। আড়ষ্ট। বুকের মধ্যে একটা বাষ্পের মতন জিনিস ঘুরে ঘুরে উঠছে, গলার কাছে এসে জমাট বাঁধছে। এই উৎকণ্ঠা ক্রমশ বাড়তেই থাকবে।

বাসন্তীর কোমর ও পেটে হাত বুলোতে বুলোতে সঞ্জয় বলল, তোমাদের জন্য একটা সুখবর এনেছি।

বাসন্তী আরও ভয় পেয়ে গেল। সুখবর মানেই তো সঞ্জয়ের আরও উন্নতি!

কী?

বলব, বলব! দাঁড়াও, একটু বিশ্রাম করে নিই। দরজাটা বন্ধ করে দেবে না?

বাসন্তী শিউরে উঠে বলল, পাশের ঘরে মা রয়েছেন না?

তাতে কী হয়েছে?

না, না, দিনের বেলা আমি দরজা বন্ধ করতে পারব না। তা ছাড়া মেয়েটা যদি জেগে ওঠে!

সঞ্জয় বাসন্তীর কাঁধ ধরে আকর্ষণ করে হাসতে হাসতে বলল, কিছু হবে না! একদিনে তোমার কিন্তু শরীরটা বেশ ভালো হয়েছে।

ইদানীং সঞ্জয়ের প্রবৃত্তিবেগ যখন-তখন আসে। আগে সে ছিল শান্ত ধরনের স্বামী এবং স্ত্রীর কাছেও লাজুক। আজকাল নতুন জীবিকা নিয়ে সে অনেক ছটফটে হয়েছে, বাসন্তীর সঙ্গে প্রায় প্রেমিকের মতন ব্যবহার করতে চায়, যখন-তখন বাসন্তীর রূপের প্রশংসা করে। বাসন্তী তবুও খুশি হতে পারে না। মনে হয়, এর কিছুই স্বাভাবিক নয়।

বাসন্তী নিজের শরীরটাকে আলাদা করে সঞ্জয়ের সেবা করতে লাগল। স্ত্রী হিসেবে তার যতখানি করা উচিত।

কিছুক্ষণ বাদে সঞ্জয় বলল, তোমার বাবা কোথায় গেছেন?

বাসন্তী বলল, ওই যে ওঁর এক বন্ধুর আশ্রমে, যেখানে প্রায়ই যান।

ওঁর সঙ্গে আমার দরকারি কথা আছে।

তুমি আমাকে কী খবর দেবে বলছিলে?

বলছি, বলছি, ব্যস্ত হচ্ছ কেন?

দেওয়ালে ঠেসান দিয়ে রাখা সঞ্জয়ের মস্ত সুটকেস। দু-দিনের জন্য যে এসেছে, তার সঙ্গে অত বড়ো সুটকেস কেন? বাসন্তী সেই কথাটাই এবার জিজ্ঞেস না করে পারল না।

সঞ্জয় গম্ভীরভাবে বলল, দরকার আছে। কলকাতায় অনেক কেনাকাটি আছে আমার।

আমরা শনিবারেই ফিরছি তো?

দেখি। কেন, এখানে আর ভালো লাগছে না?

ভালো লাগবে না কেন? খুবই ভালো লাগছে। মণি, খুকু, ওরাও খুব আনন্দে আছে। কিন্তু তোমার তো অসুবিধে হচ্ছে ওখানে।

আমার আর কী অসুবিধে!

তুমি কি বেশিদিনের ছুটি নিয়ে এসেছ?

…ছুটি? আমাকে আর কে ছুটি দেয়? শোনো, তোমাকে যে-কথাটা বলব বলছিলাম—আর চেপে রাখা গেল না। আমি ভাবছি, মুনশিগঞ্জের পাট একেবারেই তুলে দেব। তোমরা এখন থেকে কলকাতাতেই থাকবে। কি, খুশি তো?

বাসন্তীর মুখখানা বিবর্ণ হয়ে গেল। কথাটার মানেই ঠিক বুঝতে পারল না সে। সঞ্জয়ের এটা কি নতুন একটা চাল?

সঞ্জয় বাসন্তীর বুকের ওপর মুখ এনে বলল, মুনশিগঞ্জে আর থাকার কোনো মানে হয় না। কলকাতাতেই একটা বাড়ি ভাড়া করব। ছেলে-মেয়ে দুটোর লেখাপড়াও ওখানে কিছু হত না। এখানে ভালো স্কুলে ভরতি হয়ে যাবে এ-বছরেই। ছোটকুটার একটা চাকরির ব্যবস্থা করেছি পাটনায়। মা এখন ওর কাছেই থাকবে। ব্যবস্থাটা তোমার পছন্দ হচ্ছে না?

বাসন্তী সব কিছু ভুলে গেল। তার মনে হল, চন্দনের গন্ধমাখা বাতাস বইছে পৃথিবীতে। সঞ্জয় আবার বদলে গেছে। সে ফিরে আসছে সংসারে। মুনশিগঞ্জের কয়েকটা বছরের দুঃস্বপ্ন মিলিয়ে গেল। সঞ্জয় এখানে যেকোনো একটা চাকরি বা ছোটোখাটো ব্যাবসা যা-খুশি করুক, তাতেই সে সুখী হবে। সে আবার ফিরে পাচ্ছে ছোট্ট একটা জিনিস, যার নাম শান্তি। তার শরীরের তাপ এসে গেল। সে এবার সঞ্জয়ের পাশে শুয়ে পড়ে বলল, সত্যি? এসব সত্যি বলছ?

বাসন্তীর এই সুখটুকু কয়েকটি মুহূর্তের জন্য মাত্র। স্ত্রীর মুখচুম্বন সমাপ্ত করে সঞ্জয় বলল, সত্যি নাকি মিথ্যে বলছি? মুনশিগঞ্জে শুধু আমার ছোট্ট একটা অফিস থাকবে। তোমাদের নিয়ে সেখানে বাস করা এখন আমার পক্ষে রিস্কি। আমি এখানে একলা থাকব–মাসে দু তিনবার তোমাদের কাছে আসব অবশ্য।

তুমি ওখানে থাকবে?

না-হলে আমার ব্যাবসা দেখবে কে?

দরকার নেই ওই ছাইয়ের ব্যাবসার। তুমি সব ছেড়ে দাও।

বোকার মতন কথা বোলো না। সবে জিনিসটা তৈরি করছি, এখন সব ছেড়ে দেব? এ কি মুখের কথা?

তাহলে আমরা কলকাতায় থাকব কেন? আমরাও ওখানেই থাকব।

তা হয় না! হঠাৎ জাভেরির বাড়ি সার্চ হয়েছে। যেকোনোদিন আমার বাড়িতেও আসতে পারে। যাদের ঘর-সংসার আছে, তাদের ওপর নজর রাখা সহজ।

শোনো, শুধু ব্যাবসা করলে পুলিশ বাড়ি সার্চ করবে কেন?

সে তুমি বুঝবে না।

তাহলে আমিও তোমার সঙ্গে মুনশিগঞ্জেই থাকব। কিছুতেই আমি দূরে থাকতে পারব না।

বলছি তো সেটা হয় না। কলকাতায় মা-বাবার কাছে থাকবে, সেটা পছন্দ হল না? প্রায়ই তো বাপের বাড়ি আসবার জন্য নাকেকান্না কাঁদো।

বাসন্তী চুপ করে গেল। সঞ্জয়ের মেজাজ চড়তে শুরু করলে, সে বড় জোরে জোরে কথা বলে। পাশের ঘরে মা আছেন। তার আর এখন উৎকণ্ঠা নেই, এখন একটা স্পষ্ট ভয়ে তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে। সঞ্জয় সত্যিই কী চায়?

আবার উঠে বসে সে বলল, কলকাতায় আমরা কোথায় থাকব?

একটা বাড়ি-টাড়ি দেখতে হবে। কলকাতায় বাড়ি পাওয়া অবশ্য সহজ নয়। আমি তো ভাবছিলাম, তোমরা এইখানেই তো থেকে যেতে পার। মণীশ নেই, তার ঘরটা তো ফাঁকাই রয়েছে। তোমরা দিব্যি থাকতে পারবে। অন্য জায়গায় ঘর ভাড়া নিলে তোমাদের দেখাশুনো কে করবে, সেও তো একটা কথা। তোমার বাবার সঙ্গে এই নিয়ে একটা কথা বলব ভাবছিলাম।

তার মানে, আমার বাবার ঘাড়ের ওপর চাপব?

কেন? আমি তোমাদের খরচ দেব।

বাবা কক্ষনো তোমার কাছ থেকে টাকা নেবেন না।

নেবেন না মানে? তোমরা এসে এক সপ্তাহ বা এক মাস রইলে—সে তো মেয়ের জন্য সব বাবা-মা-ই করে, কিন্তু যদি পাকাপাকি একটা ব্যবস্থা হয়, সে অ্যারেঞ্জমেন্ট আমি করব। সেইজন্যই তো ওনার সঙ্গে আমি কথা বলতে চাই।

আমার বাবাকে তুমি চেন না।

খুব চিনি। বা

বাকে একথা বললেই বাবা জানতে চাইবেন, মুনশিগঞ্জে তোমার একা থাকার কী এমন। দরকার। তুমি তাঁকে বোঝাতে পারবে?

কেন পারব না, উনি তো ছেলেমানুষ নন।

তুমি তো আমাকেই এখনও বোঝাতে পারছ না।

দেখো, বেশি বাজেকথা বোললা না। তোমার বাবা তো আর দু-তিন বছর বাদেই রিটায়ার করবেন। তখন এই সংসারটা চালাবে কে? মণীশটা তো কুলাঙ্গার। সুব্রতও এখনও মানুষ হল। আমাকেই তখন দেখতে হবে। আমি যদি তোমাদের খরচ বাবদ একটু বেশি করে টাকা দিই।

তার মানে, তুমি আমাদের ফেলে যাচ্ছ।

কী?

বাসন্তী ভূত দেখার মতন চোখে তার স্বামীর দিকে তাকিয়ে রইল। এবার সে তার স্বামীকে চিনতে পেরেছে। এবার সে বুঝতে পেরেছে এইসব কথার মানে। সে বিড়বিড় করে আবার বলল, তার মানে, তুমি আমাদের এখানে ফেলে রেখে চলে যেতে চাও–

কী বলছ কী?

-তুমি যদি আর কখনো ফিরে না আস?

সঞ্জয় এইকথায় রীতিমতন আহত বোধ করল। যদিও বাসন্তীর চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে কিন্তু সেদিকে হৃক্ষেপ না করে সে বলল, তুমি এই কথা বলতে পারলে আমাকে? তোমাদের ভালোর জন্য আমি এত খেটে খেটে মুখের রক্ত তুলছি, আর তুমি ভাবলে— মেয়েছেলেরা এ-রকমই অকৃতজ্ঞই হয়!

ক্রুদ্ধভাবে সে খাট থেকে নেমে এসে গজরাতে গজরাতে বলল, আমি তোমাদের ফেলে রেখে যাব? আমি কি ঠক না জোচ্চোর যে তুমি আমার সম্পর্কে এইকথা ভাব?

নিজেই সে দরজাটায় ছিটকিনি তুলে দিয়ে এল। তারপর গেঞ্জির তলায় পইতের সঙ্গে বাঁধা চাবি বের করে সে সুটকেশটা খুলল। ঝপাং করে ডালাটা তুলে সে ওপরের জামাকাপড় ছুড়ে ফেলতে লাগল এদিকে-ওদিকে। তারপর বলল, দেখো, দেখে যাও। তোমাদের যদি ফেলেই চলে যেতে চাই, তাহলে এগুলো এনেছি কেন?

সুটকেসের নিচে থরে থরে টাকার নোট সাজানো। শুধু সেগুলো দেখিয়েই সে ক্ষান্ত হল না। মণির ইস্কুলের জ্যামিতির ইনস্ট্রমেন্ট বক্সটাও সেখানে রয়েছে। সেটাও খুলে দেখালো সঞ্জয়। বাক্সটায় ভরতি করা আছে কতকগুলো ম্যাড়মেড়ে হলদে রঙের শলাকা।

সঞ্জয় বাক্সটা বাসন্তীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, এই দেখো সোনার বাট, এর কত দাম হবে জানো?

বাসন্তীর কান্না থেমে গেছে। বিহ্বলভাবে সে বলল, এগুলো কোথায় রাখবে?

কেন, এই বাড়িতে। এখনও আমাকে বিশ্বাস করতে পারছ না?

সেজন্য নয়—

বাসন্তী সঞ্জয়ের পায়ের কাছে বসে পড়ে বলল, ওগো, তুমি এ সব কিছু ছেড়ে দাও। আমাদের এসব কিছু চাই না। আমাদের এবাড়ি সেরকম নয়। আমরা না-হয় আধপেটা খেয়ে থাকব, তবু তুমি এসব ছেড়ে দাও।

বাসন্তী হিস্টিরিয়া রুগির মতন সঞ্জয়ের পায়ে মাথা ঠুকতে যেতেই সঞ্জয় তাড়াতাড়ি নীচু হয়ে তাকে ধরে বলল, কী পাগলের মতন করছ, পাশের ঘরে তোমার মা–

ছোটো মেয়েটা এইসব গোলমালে জেগে উঠল। তার ধারণা হল, বাবা আর মা বুঝি মারামারি করছে। সে ভয় পেয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে মা মা বলতে লাগল।

সঞ্জয় কোলে তুলে নিল মেয়েকে। স্নেহময় পিতার মতন তাকে নিয়ে আদর করতে করতে ভোলাতে লাগল। এই দেখো, বাবা এসেছে, বাবা, তুমি ঘুমিয়ে ছিলে মামণি, তোমার জন্য চকলেট এনেছি–

বাসন্তী হাঁটুর ওপর থুতনি দিয়ে বসে আছে। চোখ দুটো ভাসা ভাসা। তার মনে পড়ছে, যদি বাবা এত অল্পবয়সে বিয়ে না দিতেন, যদি দুটো ছেলে-মেয়ে না হয়ে যেত, তাহলে সে এখন নিজের মতামত নিয়ে উঠে দাঁড়াতে পারত। সঞ্জয়কে তার এখন সম্পূর্ণ একজন অচেনা মানুষ মনে হচ্ছে। তবু এর কথা মতনই তাকে চলতে হবে। সঞ্জয় যদি রাগ করে চলে যায়, সত্যিই যদি আর ফিরে না আসে, তাহলে দুটো ছেলে-মেয়ে নিয়ে সে কোথায় দাঁড়াবে?

সঞ্জয় একসময় তার বাবাকে দারুণ ভক্তি করত। কথায় কথায় বাসন্তীকে বলত, তোমার বাবা তো দেবতার মতন মানুষ, এ যুগে ওরকম লোক দেখা যায় না। মণীশ যখন বাড়ি ছেড়ে চলে যায়, তখন সঞ্জয় বলেছিল, তুমি কোনো চিন্তা কোরো না। আমি তো আছি! তোমার বাবাকে আমি কোনোদিন অসুবিধেয় পড়তে দেব না। আমি যদি না খেয়েও থাকি, তবু আমি ওঁর পাশে গিয়ে যেকোনো বিপদের সময় দাঁড়াব।…এখন সেই সঞ্জয় তার বাবাকে ঘুষ দিতে চাইছে। এবাড়িতে বেআইনি জিনিস লুকিয়ে রাখতে চায়। বাসন্তী তো একথা কারুকে বলতেও পারবে না। বাবা কিছু জানতে পারলেই এমন চেঁচামেচি করবেন যে, তাতে বিপদ আরও বাড়বে। চোখ দিয়ে তার টপটপ করে জল পড়তে লাগল।

মেয়েকে একটু শান্ত করে সঞ্জয় তাকে শুইয়ে দিল খাটের ওপর। তারপর বাসন্তীর সামনে এসে গাঢ়গলায় বলল, তোমাকে কিছু চিন্তা করতে হবে না। তোমার বাবার সঙ্গে আমিই যা বলার বলব। আমার কাজ-কারবারের জন্য তোমার বাবার সাহায্য এখন আমার বিশেষ দরকার। উনি তো আমারও বাবার মতন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *