১৭. শুক্লযজুর্বেদ – সপ্তদশ অধ্যায়

সপ্তদশ অধ্যায়

মন্ত্রঃ– অশ্মমূর্জং পর্বতে শিশিয়াণাম্য ওষধীভ্যো বনস্পতিভ্যো অধিসংভূতং পয়ঃ। তাং ন ইষমূৰ্জং ধত্ত মরুতঃ সংররাণা অশ্মস্তে ক্ষুন্ময় ত উ যং দ্বিম্মস্তং তে শুগচ্ছতু।১৷৷ ইমা মে অগ্ন ইষ্টকা ধেনবঃ সত্ত্বেকা চ দশ চ দশ শতং চ সহস্রং চ সহস্রং চাযুতং চ নিযুতংচনিযুতং চ প্রযুতং চাবুদং চন্যবুদংসমুদ্রশ্চমদ্যং চান্তশ্চ পরাধশ্চৈতা মে অগ্ন ইষ্টকা ধেনবঃ সমুত্ৰামুস্মিল্লোকে৷৷২। ঋতব স্থ ঋতাবৃধ ঋতুষ্ঠাঃ স্থ ঋতাবৃধঃ। ঘৃত্যুতে মধুতে বিরাজো নাম কামদুঘা অক্ষীয়মাণা৷৩৷ সমুদ্রস্য ত্বাহবকয়াগ্নে পরি ব্যয়ামসি। পাবকো অস্মভ্যং শিবোর ভব৷৷৷৷ হিমস্য ত্বা জরায়ুণাংগ্নে পরি ব্যয়ামসি। পাবকো অস্মভ্যং শিবো ভব৷৫৷৷ উপ জমন্যুপ বেতসেহবতর নদী। অগ্নে পিত্তমপামসি মকি তাভিরা গহি সেমং নো যজ্ঞং পাবকবর্ণং শিবং কৃধি৷৷৬৷৷ অপামিদং ন্যয়নং সমুদ্রস্য নিবেশন। অন্যাস্তে অস্মপন্তু হেতয়ঃ পাবকো অস্মভ্যং শিবো ভব৷৭৷৷ অগ্নে পাবক রোচিষা মন্দ্রয়া দেব জিহ্বায়া। আ দেবান্ বক্ষি যক্ষি চ৷৷৷৷ স নঃ পাবক দীদিবোহগ্নে দেবা ইহা বহ। উপ যজ্ঞং হরিশ্চ নঃ ॥৯॥ পাবকয়া যশ্চিতয়ন্ত্যা কৃপা ক্ষামন রুরুচ উষসো ন ভানুনা। তৃবন্ন যামন্নেতশস্য নূরণ আ যো ঘূণে ন ততৃষাণো অজরঃ।।১০ নমস্তে হরসে শোচিষে নমস্তে অর্চিষে। অন্যান্তে অস্তত্তপন্তু হেতয়ঃ পাবকো অস্মভ্যং শিবো ভব৷১১৷ নৃষদে বেডশ্লষদে বেড় বহিষদে বেনষদে বে স্ববিদে বে৷১২। যে দেবা দেবানাং যজ্ঞিয়া যজ্ঞিয়ানাং সংবৎসরীণমুপ ভাগমাসতে। অহুতাদো হবিষো যজ্ঞে অস্মিন্ স্বয়ং পিবন্তু মধুনো ঘৃতস্য৷৷১৩ যে দেবা দেবেম্বধি দেবত্বমায় যেব্ৰহ্মণঃ পুর এতারো অস্য। যেভ্যো ন ঋতে পবতে ধাম কিঞ্চন ন তে দিবোন পৃথিৱ্যা অধিষু।১৪৷ প্রাণদা অপানদা ব্যানদা বর্গোদা বরিবোদাঃ। অন্যাস্তে অস্মপন্তু হেতয়ঃ পাবকো অস্মভ্যং শিবো ভব৷৷১৫। অগ্নিস্তিগেন শোচিষা সদ্বিশ্বং ন্যত্রিণম্। অগ্নিনো বনতে রয়ি৷১৬৷য ইমা বিশ্বা ভূবনানি জুহৃদৃষিহোতা ন্যসীদৎ পিতা নঃ। স আশিষ দ্রবিণমিচ্ছমানঃ প্রথমচ্ছদবরাঁ আ বিবেশ৷১৭৷ কিস্বিদাসীদধিষ্ঠানমারম্ভণংকতমংস্বিকথা ইহসীৎ। যতো ভূমিং জনয় বিশ্বকর্মা বি দ্যামৌর্ণোন্মহিনা বিশ্বচক্ষাঃ ॥১৮৷৷ বিশ্বতশ্চক্ষুরুত বিশ্বততমুখো বিশ্বতোবাহুরুত বিশ্বম্পাৎ। সং বাহুভ্যাং ধমতি সং পতত্ৰৈ দাবাভূমী জনয়ন্ দেব একঃ ॥১৯৷৷ কিংস্বিদ্বনং ক উ স বৃক্ষ আস যতো দ্যাবাপৃথিবী নিষ্টতঃ। মনীষিণো মনসা পৃচ্ছতেদু তদ্যদধ্যতিষ্ঠঙুবনানি ধারয়৷৷২০৷ যা তে ধামানি পরমাণি যাইমা যা মধ্যমা বিশ্বকর্মায়ূতেমা। শিক্ষা সখিভ্যো হবিষি স্বধাবঃ স্বয়ং যজস্ব তন্বং বৃধানঃ২১। বিশ্বকর্মন্ হবিষা বাবৃধানঃ স্বয়ং যজস্ব পৃথিবীমুত দ্যাম্। মুহান্যে অভিতঃ সপত্না ইহাস্মাকং মাঘবা সূররস্তু।২২। বাচস্পতিং বিশ্বকর্মাণমূতয়ে মনোজুবং বাজে অদ্যা হুবেম। স নো বিশ্বানি হবনানি জোষদ্বিশম্ভুরবসে সাধুকর্মা৷২৩৷ বিশ্বকর্মন্ হবিষা বর্ধনেন ত্রাতারমিন্দ্রমকৃপোরবধ্য৷ তস্মৈ বিশঃ সমনমন্ত পর্বীরয়মুগ্রো বিহব্যো যথাহসৎ৷৷২৪৷৷ চক্ষুষঃ পিতা মনসা হি ধীরো ঘৃতমেনে অজনম্নম্নমানে। যদেদন্তা অদহন্ত পূর্ব অদিদ দ্যাবাপৃথিবী প্রথেতা৷৷২৫৷৷ বিশ্বকর্মা বিমনা আদ্বিহায়া ধাতা বিধাতা পরমোত সক। তেষামিষ্টানি সমিষা মদন্তি যত্রা সপ্ত স্ত্রী পর একমাহুঃ।।২৬৷৷ যোনঃ পিতা জনিতা যো বিধাতা ধামানি বেদ ভুবনানি বিশ্বা। যো দেবানাং নামধা এক এব তং সম্প্রশ্নং ভুবনা যন্ত্যন্যা৷৷২৭৷৷ ত আহযজন্ত দ্রবিণং সমস্ম ঋষয়ঃ পূর্বে জরিতারো ন ভূনা। অসূর্তে সূর্তে রজসি নিষত্তে যে ভূতানি সমকৃথন্নিমানি৷৷২৮৷ পরো দিবা পর এনা পৃথিব্যা পরো দেবেতিরসুবৈদস্তি। কিংস্বিদ গর্ভং প্রথমং দব্র আপো যত্র দেবাঃ সমপশ্যন্ত পূর্বে৷৷২৯। তমিদার্ভং প্রথমং দ্রব্র আপো যত্র দেবাঃ সমগচ্ছন্ত বিশ্বে। অজস্য নাভাবধ্যেকমর্পিতং যস্মিন্ বিশ্বানি ভুবনানি তস্তুঃ৩০৷ ন তং বিদাথ য ইমা জজানান্যদ্যুম্মামন্তরং বভূব। নীহারেণ প্রাবৃতা জল্ল্যা চাসুতৃপ উথশাসশ্চ রন্তি।।৩১৷৷ বিশ্বকর্মা হ্যজনিষ্ট দেব আদিগন্ধর্বো দ্বিতীয়, তৃতীয়ঃ পিতা জনিতৌষধীনামপাং গর্ভং বাদবাৎ পুরুত্ৰা ৷৩২ আশুঃ শিশানো বৃষভো ন ভীমো ঘনাঘনঃ ক্ষোভণশ্চর্যণীনা। সংক্রন্দনোহনিমিষ একবীরঃ শতং সেনা অজয়ৎ সাকমিন্দ্রঃ ৩৩৷ সংক্রন্দনেনানিমিষেণ জিষ্ণুনা যুক্তারেণ দুশ্চাবনেন ধৃষ্ণুনা। তদিণে জয়ত তৎসহধ্বং যুথোনর ইমুহস্তেন বৃষ্ণা ৷৩৪৷ স ইমুহস্তৈঃ স নিষঙ্গিভির্বশী সংস্রষ্টা স যুধ ইন্দ্রো গণেন। সংসৃষ্টজিৎসোমপা বাহুশধঁধা প্রতিহিতাভিরস্তা৷৩৫৷ বৃহস্পতে পরি দীয়া রথেন রক্ষোহাইমিত্রা অপৰাধমানঃ। প্রভঞ্জন্তুসেনাঃসনাঃ প্ৰমৃণো যুধা জয়নুস্মাকমেধ্যবিতা থানা৷৷৩৬৷৷ বলবিজ্ঞায় স্থবিরঃ প্রবীরঃ সহস্বান্ বাজী সহমান উগ্রঃ। অভিবীরো অভিসত্বা সহোজা জৈত্রমিন্দ্র রথমা তিষ্ঠ গোবিৎ ৩৭৷ গোত্রভিদং গোবিদংবজ্ৰবাহুং জয়ন্তমজম প্রমৃণমোজসা। ইমং সজাতা অনু বীরয়ধ্বমিং সখায়ো অনু সংরমধ্বম্৷৩৮। অভি গোত্রাণি সহসা গাহমানোহদয়ো বীরঃ শতমন্যুরিন্দ্রঃ। দুশ্চ্যবনঃ পৃতনাষাড়যুপধ্যাহস্মাকং সেনা অবতু প্র যুৎসু৷৷৩৯৷ ইন্দ্র আসাং নেতা বৃহস্পতিদক্ষিণা যজ্ঞঃ পুর এতু সোমঃ। দেবসেনানামভিভঞ্জতীনাং জয়ন্তীনাং মরুতো যন্ত্ৰগ্ৰ৪০৷ ইন্দ্রস্য বৃষ্ণো বরুণস্য রাজ্ঞ আদিত্যানাং মরুতাং শর্ধ উগ্র। মহামনসাং ভুবনচাবানাং ঘোযো দেবানাং জয়মুদস্থাৎ৪১। উদ্ধয় মঘবন্নায়ুধানসভুনাং মামকানাং মংসি। উদ্ধৃহত্ বাজিনাং বাজিনান্থানাং জয়তাং যন্তু ঘোষাঃ ৪২৷৷ অস্মাকমিন্দ্রঃ সমৃতেষু । ধ্বজেদ্ধস্মাকং যা ইষবস্তা জয়ন্তু। অস্মাকং বীরা উত্তরে ভবস্ম উ দেবা অবতা হবে৷৷৪৩৷৷ অমীষাং চিত্তং প্রতিলোভয়ন্তী গৃহাণাঙ্গান্যখে পরেহি। অভি প্রেহি নির্দহ হৃৎসু শশাকৈরন্ধেনমিত্ৰস্তমসা সচন্তাম্॥৪৪৷ অবসৃষ্টা পরা পত শরব্যে ব্রহ্মসংশিতে। গচ্ছামিত্ৰা প্ৰ পদ্যস্ব মাহমীষাং কং নোচ্ছিষঃ৪৫৷৷ প্ৰেতা জয়তা নর ইন্দ্রো বঃ শৰ্ম যচ্ছতু। উগ্রা বঃ সন্তু বাহবোহনাধৃষ্যা যথাহসথ।৪৬৷৷ অসৌ যা সেনা মরুতঃ পরেষামভৈতিন ওজসা স্পর্ধমানা। তাং গৃহত তমসাইপতেন যথাহমী। অনন্যা অন্যং ন জান৷৪৭৷ যত্র বাণাঃ সম্পন্তি কুমারা বিশিখা ইব। তন্ন ইন্দ্রো বৃহস্পতিরদিতিঃ শৰ্ম যচ্ছতু বিশ্বাহা শর্ম যচ্ছতু।৪৮৷৷ মর্মাণি তে বর্মণ ছাদয়ামি সোমা রাজামৃতেনানুবস্তাম্। উবোর্বরীয়ো বরুণস্তো কৃপোতু জয়ন্তং ত্বাহনু দেবা মদন্তু৷৪৯৷ উদেনমুত্তরাং নয়াগ্নে ঘৃতেনাহুত। রায়ম্পোষেণ সংসৃজ প্রজয়া চ বহুং কৃধি ॥৫০৷ইন্দ্রেমং প্রতারং নয় সজাতানামসদ্বশী।সমেনংবচসা সৃজ দেবানাং ভাগদা, অসৎ ॥৫১৷ যস্য কুর্মো গৃহে হবিস্তমগ্নে বধুয়া ত্ব। তস্মৈ দেবা অধি ব্ৰবন্বয়ং চ ব্ৰহ্মণস্পতিঃ ৫২৷ উদুত্ব বিশ্বে দেবা অগ্নে ভরন্তু চিত্তিভিঃ স নো ভব শিবস্তুং। সুপ্রতীকো বিভাবসুঃl৫৩৷৷ পঞ্চ দিশো দৈবীর্যজ্ঞমবস্তু দেবীরপামতিং দুর্মতিং বাধমানাঃ। রায়স্পেষে যজ্ঞপতিমাভজন্তী রায়ম্পোষে আধ যজ্ঞো অস্থাৎ ৫৪৷৷ সমিদ্ধে অগ্নাবধি মামহান উথপত্র ঈড্যো গৃভীতঃ। তপ্তং ঘর্মং পরি গৃহ্যাযজন্তোর্জা যদ্যজ্ঞমযজন্ত দেবাঃ ॥৫৫৷৷ দৈব্যায় ধত্রে জোষ্ট্রে দেবশ্রী শ্রীমনাঃ শতপয়াঃ। পরিগৃহন দেবা যজ্ঞমায় দেবা দেবেভ্যো অধ্বর্যুন্তে অস্তুঃ।।৫৬বীতং হবিঃশমিতং শমিতা যজধ্যে তুরীয়ো যজ্ঞো যত্র হব্যমেতি। ততত বাক্য আশিষো নো জুষা৷৷৫৭৷৷ সূর্যরশ্মিীরিকেশঃ পুরস্তাৎ সবিতা জ্যোতিরুদয়া অজস্র। তস্য পূষা প্রসবে যাতি বিদ্বানসম্পশ্যন্বিশ্বা ভুবনানি গোপাঃ ॥৫৮। বিমান এষ দিবো মধ্য আস্ত আপপ্রিবান্ রোদসী অন্তরিক্ষ। স বিম্বাচীরভিচ ৪ ঘৃতাচীরন্তরা পূর্বপরং চ কেতুমৃ৷৷৫৯৷ উক্ষা সমুদ্রো অরুণঃ সূপর্ণঃ পূর্বস্য যোনিং পিতুরা বিবেশ। মধ্যে দিবো নিহিতঃ পৃরিশ্মা বি চক্রমে রজসম্পাত্যন্তেী।।৬০।ইন্দ্রং বিশ্বা অবীবৃধন্ সমুদ্রব্যচসং গিরঃ। রথীতমং রথীনাং বাজানাং সৎপতিং পতিম্ ॥৬১৷৷ দেবহূর্যজ্ঞ আ চ বক্ষৎ সুম্নহুর্যজ্ঞ আ চ বক্ষৎ। যক্ষদগ্নিৰ্দেবো দেব আচ বক্ষৎ ॥৬২৷৷ বাজস্য মা প্রসব উদগ্রাভেলোদগ্রভীং। অধা সপত্নানিল্লো মে নিগ্রাভেণাধরা অকঃ ॥৬৩৷ উদগ্রাভং চ নিগ্রাভং চ ব্ৰহ্ম দেবা অবধৃধ। অধা সপত্ননিদ্রাগ্নী মে বিমূচীনাৰ্য্যস্যতাম্ ৷৬৪। ক্রমধ্বমগ্নিনা নাকমুখ্যং হস্তেষু বিভ্রতঃ। দিবসৃষ্ঠং স্বৰ্গত্বা মিশ্রা দেবেড়ি রাধ্বম্৷৬৫৷৷ প্রাচীমনু প্রদিশং প্রেহি বিদ্বানগ্নেরগ্নে পুরো অগ্নিৰ্ভবেহ। বিশ্বা আশা দীদ্যানো বি ভার্জং নো ধেহি দ্বিপদে চতুষ্পদে৷৬৬। পৃথিব্যা অহমুদন্তরিক্ষমা হরুহমন্তরিক্ষাদ্দিমারুহ। দিবো নাকস্য পৃষ্ঠাৎ স্বর্জ্যোতিরগামহ৷৷৬৭৷ স্বর্যন্তো। নাপেক্ষন্ত দ্যাং রোহস্তি বরাদসী। যজ্ঞং যে বিশ্বততাধারৎ সুবিদ্বাংসোবিতেনিরে৷৬৮৷৷ অগ্নে প্রেহি প্রথমো দেবয়ং চক্ষুর্দোনামুত মতানা। ইক্ষমাণা ভৃগুভিঃ সজোষাঃ স্বর্যন্তু যজমানাঃ স্বস্তি৷৬৯ নক্তোষাসা সমনসা বিরূপে ধাপয়েতে শিশুমেকং সমীচী। দ্যাবাক্ষামা রুক্সো অন্তর্বি ভাতি দেবা অগ্নিং ধারয় দ্ৰবিনোদাঃ।৭০৷ অগ্নে সহস্রাক্ষ শতমূর্ধঞ্ছতং তে প্রাণাঃ সহস্রং ব্যানাঃ। ত্বং সাহস্রস্য রায় ঈশিষে তস্মৈ তে বিধেম বাজায় স্বাহা।৭১।সুপর্ণোহসি গরুত্মান্ পৃষ্ঠে পৃথিব্যাঃ সীদ। ভাসাইন্তরিক্ষমা পৃণ জ্যোতিষা দিবমুত্তভান তেজসা দিশ উদ দৃংহ।৭২। আজুহানঃ সুপ্রতীক পুরুস্তাদগ্নে স্বং যোনিমা সীদ সাধুয়া। অস্মিধস্থে অধ্যুত্তরম্মিন্বিশ্বে দেবা যজমানশ্চ সীদত।৭৩৷৷ তাং সরিতুর্বরেণ্যস্য চিত্রামাহহং বৃণে সুমতিং বিশ্বজন্যা। যামস্য কথো । অদুহপ্রপীনাং সহস্রধারাং পয়সা মহীংগা৷৭৪৷৷ বিধেম তে পরমে জন্মন্নয়েবিধেম স্তোমৈরবরে সধন্থে। যম্মাদ্যোনেরুদারিথা যজে তং প্র ত্বে হবীংষি জুহুরে সমিদ্ধে৷৷৭৫৷৷ প্রেঘদ্ধা অগ্নে দীদিহি পুরো নোহজম্বয়া সূৰ্যা যবিষ্ঠ। ত্বাং শশ্বস্ত উপ যন্তি বাজাঃ॥৭৬৷ অগ্নে তমদ্যাশ্বং ন স্তোমৈঃ ক্রতুংন ভদ্রং হৃদিশ। ঋধ্যামা ও ঔহৈঃ ৭৭৷ চিত্তিং জুহোমি মনসা ঘৃতেন যথা দেবা ইহাগমন্বীতিহোত্রা ঋতাবৃধঃ। পত্যে বিশ্বস্য ভূমনো জুহোমি বিশ্বকর্মণে বিশ্বাহাইদাভ্যং হবিঃ৭৮৷ সপ্ত তে অগ্নে সমিধঃ সপ্ত জিহাঃ সপ্ত ঋষয়ঃ সপ্ত ধাম প্রিয়াণি। সপ্ত হোত্রাঃ সপ্তধা ত্বাং যজন্তি সপ্ত যোনীরা পৃণস্ব ঘৃতেন স্বাহা।৭৯৷৷ শুক্ৰজ্যোতিশ্চ চিত্ৰজ্যোতিশ্চ সত্যজ্যোতি জ্যোতিৰ্মাশ্চ। শুক্রশ্চ ঋতপাশ্চত্যংহাঃ।৮০৷৷ ঈদৃঙু চান্যাদৃঙ চ সদৃঙ চ প্রতিসদৃঙ চ। মিতশ্চ সংমিশ্চ সভরাঃ ৮১ ঋতশ্চ সত্যশ্চ ধ্রুবশ্চ ধরুণ। ধর্তা চ বিধর্তা চ বিধারয়ঃ ॥৮২৷৷ ঋতজিচ্চ সত্যজিচ্চ সেনজিচ্চ সুষেণশ্চ। অন্তিমিত্র দূরে অমিত্র গণঃ।।৮৩৷৷ ঈদৃক্ষাস এতাদৃক্ষাস উ মুণঃ সদৃক্ষাসঃ প্রতি সদৃক্ষাস, এতন। মিতাস, সম্মিতাসো নো অদ্য সভরসো মরুতো যজ্ঞে অস্মিন্৷৮৪। স্বতবাংশ্চ প্রঘাসী চ সান্তপনশ্চ গৃহমেধী চ। ক্রীড়ী চ শাকী চোজ্জেষী৷৷৮৫৷৷ ইন্দ্ৰং দৈৰীৰ্বিশশা মরুতোহনুৰ্গানোহভব যথেন্দ্ৰং দৈবীর্বিশো মরুতোহনুবর্ক্সানোহভব। এবমিমং দৈবীশ্চবিশশা মানুষীশ্চানুবননা ভবন্তু।।৮৬৷ইমংস্তনমূৰ্জন্তং ধয়াপাং প্রপীনময়ে সরিরস্য মধ্যে। উৎসংজুষমধুমন্তমত্সমুদ্রিয়ংসদনমা বিশ্বস্ব।৮৭৷৷ ঘৃতং মিমিক্ষে মৃতমস্য যোনিতে শ্রিতো ঘৃতস্য ধাম। অনুধমা বহমাদয়স্ব স্বাহাকৃতংবৃষভ বক্ষি হব্য৷৷৮৮। সমুদ্ৰাদূর্মিমধূম উদারদুপাংশুনা সমমৃতত্বমান। ঘৃতস্য নাম গৃহ্যং যদস্তি জিহ্বা দেবানামমৃতস্য নাভিঃ।।৮৯৷৷ বয়ং নাম প্র ব্ৰবামা ঘৃতস্যাস্মিন্ যজ্ঞে দারয়ামা নমোভিঃ। উপ ব্রহ্মা শৃণবচ্ছস্যমানং চতুঃশৃঙ্গোহমীগৌর এতৎ৯০৷৷ চত্বারি শৃঙ্গা ত্রয়ো অস্য পাদা দ্বে শীর্ষে হস্তাসো অস্য। ত্রিধা বন্ধো বৃষভো রৰীতি মহো দেব, মর্তা আ বিবেশ৷৯১৷৷ ত্রিধা হিতং পণিভিগুহ্যমানং গবি দেবোলো ঘৃতমম্ববিন্দ। ইন্দ্র একং সূর্য একং জজান বেনাদেকং স্বধয়া নিষ্টতঃ৯২৷৷ এতা অর্ষন্তি হৃদ্যাৎ সমুদ্ৰাহ্জা রিপুণা নাবচক্ষে। ঘৃতস্য ধারা অভিচাকশীমি হিরণ্যয়ো বেতসো মধ্য আসা৷৯৩৷ সম্যক্ শ্রবন্তি সরিতো ন ধেনা অন্তহৃদা মনসা পূয়মানাঃ। এতে অন্তর্ময়ো ঘৃতস্য মৃগা ইব ক্ষিপণোরীষমাণাঃ।৯৪৷৷ সিম্বোরিব ধ্বনে শুঘনাসো বাতপ্রমিয়ঃ পতয়ন্তি যঃ। ঘৃতস্য ধারা অরুষো ন বাজী কাষ্ঠা ভিন্দমূর্মিভিঃ পিন্বমানঃ ৯৫৷৷ অভিপ্রবন্ত সমনেব যোষাঃ কল্যাণঃ স্ময়মানাসো অগ্নি। ঘৃতস্য ধারাঃ সমিধো নসন্ত জুষাণো হতি জাবেদাঃ৯৬৷ কন্যা ইব বহতুমেতবা উ অঞ্জয়ঞ্জানা অভি চাকশীমি। যত্র সোমঃ সূয়তে যত্র যজ্ঞো ঘৃতস্য ধারা অভি তৎপবন্তে৷৯৭৷৷ অভ্যৰ্ষত সুষ্ঠুতিং গবমাজিমশ্বাসু ভদ্রা দ্রবিণানি ধত্ত। ইমং যজ্ঞং নয়ত দেবতা নো ঘৃতস্য ধারা মধুমপবন্তে।৯৮ ধামং তে বিশ্বং ভুবনমধি শ্রিতমস্তঃ সমুদ্রে হৃদ্যন্তরাযুষি। অপমনীকে সমিথে য আভৃতত্তমশ্যাম মধুমন্তং ত ঊর্মি৷৯৯৷৷

[কণ্ডিকা-৯৯ : মন্ত্র-১০৬]

.

মন্ত্ৰার্থঃ– [এই অধ্যায়ে চিতি-অপরিষেক ইত্যাদি মন্ত্র কথিত হয়েছে]

১। –হে মরুৎবর্গ! সেই মেঘ সমূহ বিন্ধ্য হিমালয় ইত্যাদি পর্বতে আশ্রয় গ্রহণকারী সারভূতা বৃষ্টি তথা ওষধি-বনস্পতিগুলি বিচরণশীল গাভীতে সঞ্চিত দুগ্ধ ইত্যাদি আমাদের প্রদান করো। হে মরুৎবর্গ! অত্যন্ত দাতা তোমরা আমাদের সেই বর্ষা তথা বলস্বরূপ ঘৃত ইত্যাদি প্রদান করো। হে সর্বগ্রাসী অগ্নি! আমাদের হবিঃ পান করে তোমাদের বিশাল ক্ষুধা উৎপন্ন হোক। হে অগ্নি! তোমার তেজ আমাদের হোক। আমরা যাদের দ্বেষ করি, তাদের তোমরা তাপ প্রদান করো।

২। হে অগ্নি! পাঁচটি চিতিতে যে হঁট চয়নকৃত হয়েছে, তারা তোমার প্রসাদে আমাদের অভিমত ফলকে দোহনকারক কামধেনু করে দাও। সেগুলির সংখ্যা ১-১০-১০০-১০০০-১০০০০ ১০০০০০-১০০০০০০-১০০০০০০০-১০০০০০০০০-১০০০০০০০০০-১০০০০০০০০০০ ১০০০০০০০০০০০-১০০০০০০০০০০০০-১০০০০০০০০০০০০০-১০০০০০০০০০০০০০০ ইত্যাদি ইত্যাদি রূপে (অর্থাৎ একের সাথে দশ-দশ গুণিতক পরার্ধরূপে) বর্তমান হোক। হে অগ্নি! এতগুলি হঁট তোমার কৃপায় আমার নিমিত্ত এই লোকে এবং পরলোকে কামধেনু হয়ে আগত (বা প্রাপ্ত) হোক ৷৷

৩। হে ইষ্টকাসমুহ! তোমরা বসন্ত ইত্যাদি ঋতুগণের স্বরূপশালিনী, যজ্ঞের সমৃদ্ধিকারিণী, এবং প্রত্যেক ঋতুকে যজ্ঞে স্থিরভাবে রক্ষাকারিণী। তোমরা ঘৃত ক্ষরণশালিনী, মধু ক্ষরিত করণশীলা, বিরাজসংজ্ঞকা (অর্থাৎ বিরাজ নামে খ্যাতা) এবং কখনও ক্ষীয়মান না হয় এমন ইষ্টকা, যা সাক্ষাৎ কামধেনুস্বরূপা।

৪। হে অগ্নি! আমরা জলকে শৈবালের সাথে তোমাকে পরিবেষ্টিত করছি। এক্ষণে তুমি আমাদের প্রতি শোধক ও শান্ত হও।

৫। হে অগ্নি! আমরা হিমের আবরক এই শৈবালের সাথে তোমাকে পরিবেষ্টিত করছি। এখানে তুমি আমাদের নিমিত্ত শান্ত ও শোধক হও।

৬। হে অগ্নি! তুমি পৃথিবীতে, বেতসের শাখায় এবং নদীর শীতল শৈবালে উত্তরিত হয়ে আগমন করো। হে অগ্নি! তুমি তো জলেরই তেজ। হে মক্কী! তুমি এই শৈবাল বেতের সাথে আমাদের সম্প্রপ্তা হও। সেই তুমি আমাদের এই যজ্ঞকে অগ্নির ন্যায় তেজস্বী ও শান্ত করো।

৭। এই অনুষ্ঠান জলের আপূরক এবং সমুদ্রের মহাস্থল। হে অগ্নি! এক্ষণে তুমি তোমার জ্বালাসমূহে আমাদের ভিন্ন অপর লোকগণকে তাপিত করো। তুমি আমাদের নিমিত্ত সর্বৰ্থা শান্ত থাকো।

৮। হে শোধক অগ্নি! তুমি আপন মন্দ জ্বালাজিহ্বার সাথে আমাদের প্রাপ্ত প্রাপ্ত হও। দেবগণকে এইস্থানে এই যজ্ঞে নিয়ে এস এবং এইস্থানে তাদের পূজা করো।

৯। হে শোধক! হে দেদীপ্যমান অগ্নি! তুমি দেবগণএক এইস্থানে আহ্বান করে আনয়ন করো আমাদের হবিঃ তাদের প্রাপ্ত করাও৷

১০। হে অগ্নি! তুমি আপন শোধক ও চেতনাকারিণী দীপ্তির দ্বারা এই পৃথিবীর উপর প্রকাশিত হয়ে থাক, যেমন উষাকাল আপন দীপ্তিতে শোভিত হয়ে থাকে। যুদ্ধে অশ্বকে শত্রুর প্রতি হিংসিতকারী যে অগ্নি অত্যন্ত তৃষিত ও সদা অজর হয়ে অবস্থান করে, সেই অগ্নিকে আমরা মক্কী, শৈবাল ও বেতস শাখার দ্বারা প্রশমিত করছি৷৷

১১। হে অগ্নি! তোমার রস-হরণশীল তেজকে নমস্কার। তোমার শিখাসমূহকে নমস্কার। তোমার জ্বালার হেতুসমূহ হতে আমাদের ভিন্ন অন্য লোকগণকে তাপিত করো। হে পাবক। তুমি আমাদের নিমিত্ত কল্যাণকারী হও।

১২। জঠরাগ্নিভাবে মনুষ্যে স্থিতিকারী অগ্নির নিমিত্ত এই পরোক্ষ আহুতি প্রদান করছি। জলে.ঔর্বাগ্নিরূপে স্থিত অগ্নির নিমিত্ত এই পরোক্ষাহুতি প্রদান করছি। আহবনীয় ইত্যাদি ভাবে কুশসমূহে স্থিত অগ্নির নিমিত্ত এই পরোক্ষাহুতি প্রদান করছি। বৃক্ষে দাবাগ্নিভাবে স্থিত অগ্নির নিমিত্ত এই পরোক্ষাহুতি প্রদান করছি। স্বর্গে আদিত্যভাবে বর্তমান অগ্নির নিমিত্ত এই পরোক্ষভূতি প্রদান করছি৷

১৩। দেবগণের মধ্যে যে দেবতা যজনের যোগ্য–যে যজনীয় দেবগণের মধ্যেও যারা বার্ষিকভাবে পরিপক্ক অন্ন ইত্যাদি প্রাপ্ত করে–সেই (ইন্দ্র ইত্যাদি হবির্ভুক্ত দেবতাগণ ব্যতীত) প্রাণ ইত্যাদি দেবতা আমাদের এই যজ্ঞে প্রতক্ষ ঘৃত ইত্যাদি ভক্ষণ করুক।

১৪। যে প্রাণ ইত্যাদি দেবতাগণ ইন্দ্র ইত্যাদি দেববর্গের শরীরে স্থিত হয়ে দেবত্ব প্রাপ্ত হয়েছে, যারা এই জীবের সাথে অগ্রগামী হয়ে থাকে এবং যারা ব্যতীত কেউই শরীরে গতি লাভ করতে পারে না, সেই প্রাণদেবতাগণ দ্যুলোকেও থাকে না, এবং পৃথিবীতেও থাকে না; তবে তারা নাসিকা, চক্ষু ইত্যাদি আয়তনেই (স্থানেই) বাস করে থাকে ৷৷

১৫। হে অগ্নি! তোমার প্রাণদাত্রী, অপানদাত্রী, ব্যানদাত্রী, ব্রহ্মবৰ্চস্ (বা ব্রহ্ম বল)-দাত্রী এবং ধনদাত্রী জ্বালাসমূহ আমাদের নিমিত্ত শান্ত হোক। তারা অন্যকে (অর্থাৎ শত্রুকে) তাপান্বিত করুক। হে শোধক অগ্নি! তুমি আমাদের নিমিত্ত শান্ত হও।

১৬। সকল ভক্ষক রাক্ষসগণকেই অগ্নি আপন তীক্ষ্ণ তেজের দ্বারা বিতাড়িত করুক। অগ্নি আমাদের ধন প্রদান করুক।

১৭। যে বিশ্বকর্মা, আদ্য ঋষি, সৃষ্টিযজ্ঞের হোতা এবং আমাদের পিতা (অর্থাৎ প্রাণীগণের পালক), এই সকল ভূতসমূহকে প্রলয়কালে সংহার করেন, তিনি আপন এই একোহহং বহুস্যাম্… (অর্থাৎ এক আমি বহু হবো)–ইচ্ছা পূর্বক বিশ্বসৃষ্টিরূপ ধন কামনা করেন এবং ঐ সৃষ্টিরূপে এই ব্রহ্মাণ্ডকে সর্বপ্রথম আচ্ছাদনকারী হন (অর্থাৎ ঐ সৃষ্টিভাবে বা সৃষ্টিগুণে পরিণত হন)। সেই পরমাত্মা পুনরায় সেই সৃষ্টিতে বিদ্যমান অন্য ভূতমাত্রে প্রবিষ্ট হয়ে যান।

১৮। ব্রহ্মাণ্ডকে সৃষ্টির সময়ে সেই বিশ্বকর্মার অধিষ্ঠানের স্থান কোথায় ছিল? ক্রিয়া কি ছিল? এবং কেমন ছিল বস্ত্র-চক্র ইত্যাদি উপকরণ সম্ভার, যখন ভূমিকে উৎপন্ন করে সর্বদ্রষ্টা বিশ্বকর্মা আপন মহিমায় এই দ্যুলোককে আচ্ছাদিত করেছিলেন?।

১৯। সেই বিশ্বকর্মা ঋষি তাহলে সর্বত্রচক্ষু, সর্বত্রমুখ, সর্বত্রবাহু এবং সর্বত্রপদশালীও। একাকীই সেই পরমাত্মাদের এই দ্যাবাপৃথিবীকে উৎপন্ন করে তাদের মাত্র নিজেরই ভুজদণ্ডে এবং চরণে অধিষ্ঠান বিস্তার করে তস্বরূপ নির্মাণ করে দেন (অর্থাৎ তাতে কোন বাহ্য উপকরণ ইত্যাদির অপেক্ষা থাকে না)।

২০। কোন রকম বন ছিল? কোন রকম সেই বৃক্ষ ছিল, যা থেকে সেই বিশ্বকর্মা এই দ্যাবাপৃথিবীকে গড়েছিলেন? বিদ্বানগণ! আপন মন হতে পর্যালোচনা পূর্বক এই প্রশ্ন উত্থাপিত করো যে আধারে সেই পরমাত্মদেব এই ভুবনকে ধারণ করে আশ্রয়ণ করেছিলেন, তা কি? (তার কোন আধার ছিল না। তিনিই সকলের আধার ও স্রষ্টা ছিলেন)৷

২১। হে বিশ্বকর্মা! তোমার যে উত্তম, মধ্যম এবং অবর লোক বা তেজ আছে, সেগুলি তুমি নিজের ভিন্ন ভিন্ন যজমানগণকে প্রদান করে দাও; কেননা তুমি সেই যজমানবর্গের দ্বারা হবিতেই অন্নবান্ হয়ে থাক। হে বিশ্বকর্মা। আপন বিশ্বরূপ স্বরূপকে যজ্ঞের দ্বারা অভিবর্ধিত করে তুমি স্বয়ংই আপন যজন করো (অর্থাৎ কোন অন্য মানব তোমার যজন করতে সমর্থ হয় না)।

২২। হে বিশ্বকর্মা! হবির দ্বারা অতিবৃদ্ধ হয়ে তুমি দ্যুলোকে স্থিত এবং পৃথিবীতে স্থিত ভূতবর্গকে (প্রাণিগণকে) স্বয়ং যজন করো। তোমাকে এইভাবে স্বয়ংই যজন করতে দর্শন করে আমাদের শত্রুগণ বিমোহিত হয়ে যাক। আমাদের এই যজ্ঞে এক্ষণে ধনশালী ইন্দ্রই আত্মজ্ঞানের উপদেশক হোক৷

২৩। বেদবাণীর পালক, সমস্ত বিশ্বের বিধাতা এবং মনের বেগের ন্যায় বেগশালী সেই বিশ্বকর্মাকে আমরা আজ আপন রক্ষার নিমিত্ত এই যজ্ঞে আহ্বান করছি। রক্ষণে অত্যন্ত কুশল এবং সকলের কল্যাণকারী সেই পরামাত্মা আমাদের সকল সামগ্রীকে আস্বাদিত করুক।

২৪। হে বিশ্বকর্মা! হবির দ্বারা অভিবর্ধনে তুমি রক্ষক ইন্দ্রকে সর্বথা বধরহিত (অবধ্য) করেছ, যাতে সেই উদগ্র্ণ বল ইন্দ্র যুদ্ধে সকলের দ্বারা আহুত হওয়ার যোগ্য রয়ে গিয়েছেন৷

২৫। চক্ষু ইত্যাদির পালক এবং মনে ধীর সেই বিশ্বকর্মা এই চঞ্চল দ্যাবাপৃথিবীকে দৃঢ় করার নিমিত্ত জলকে উৎপন্ন করেছিলেন। যখন পূর্বজাত বশিষ্ঠ ইত্যাদি ঋষিগণ এই দ্যাবাপৃথিবীকে দৃঢ় করেছিলেন, তখন বিশ্বকর্মা সেগুলিকে ব্যাপ্ত করেছিলেন৷৷

২৬। বিশিষ্ট মন, ব্যাপক, ধারণকর্তা, নির্মাতা এবং পরমদৃষ্টি বিশ্বকর্মা যে ভক্তগণকে দর্শনকারী হন, সেই ভক্তগণের নিমিত্ত অভিমত ভোগপদার্থ সেই লোকে অমৃতরসের দ্বারা সুস্বাদু হয়ে থাকে–যেখানে সপ্তর্ষিগণ বিশ্বকর্মায় একত্ব হয়ে বাস করে।

২৭। যিনি আমাদের পালক, যিনি উৎপাদক এবং যিনি আমাদের বিধাতা, যিনি সমস্ত লোককে জ্ঞাত, যিনি একাকীই সকল দেবতার নামকে ধারণ করেন–সেই সম্যক্ প্রষ্টব্য (জিজ্ঞাস্য) পরমাত্মাকেই অন্য সকল প্রাণী প্রলয়কালে প্রাপ্ত হয়৷৷

২৮। পূর্বকালের প্রথম স্তোতা (স্তবকারী) বশিষ্ঠ ইত্যাদি ঋষিগণ সেই বিশ্বকর্মার ব্রহ্মাণ্ডরূপ জলকে অবাহুল্যভাব অর্থাৎ কামনা মাত্র স্বরূপে যজন করেছিলেন (অর্থাৎ হোম করেছিলেন এবং হোমের দ্বারা সৃষ্টি পূর্বক জগৎস্বরূপ বিশ্বকর্মাকে সৃষ্ট জলে অভিবর্ধিত করেছিলেন)। সপ্তদশ অবয়বশালী লিঙ্গশরীরসমূহে প্রেরিত তথা বিস্তীর্ণ অন্তরিক্ষলোকে স্থিত যে বিশিষ্ঠ ইত্যাদি ঋষিগণ এই প্রাণসমূহকে উৎপন্ন করেছিলেন।

২৯। দুলোকের উপরে, এই পৃথিবী হতে বহু দূরে (বা উপরে) এবং যা এই দেবতা-অসুরগণের হতেও উপরে (বা দূরে) বিরাজমান, –কি সেই ঈশ্বরত্ব, যা সেই গর্ভ এবং এই জলকে সর্বপ্রথম ধারণ করেছিল, যাতে (যে গর্ভে) পূর্ববর্তী দেবগণকে দেখা গিয়েছিল অর্থাৎ জন্মেছিল? বা বশিষ্ঠ ইত্যাদি ঋষিগণকে জগতের গর্ভে দেখা গিয়েছিল? (অর্থাৎ জগতের আধার গর্ভরূপকেই যখন জানা যায় না, তখন সেই গর্ভের আধারভূত ঈশ্বরত্বকে আর কিভাবে জ্ঞাত হওয়া সম্ভব?)।

৩০। জল সেই বিশ্বকর্মাকেই প্রথমে গর্ভরূপে ধারণ করেছিল, যে গর্ভে সকল দেবগণ (বিশ্বদেব) সম্প্রপ্ত হয়েছিল। সেই এক জন্মরহিত পরমাত্মার নাভিতে এই ভূত (প্রাণী) এবং দেবতা গ্রথিত হয়েছিল, যাতে এই সমস্ত ভুবন বা ভূতবর্গ প্রলয়কালেও অবস্থান করতে (বা আশ্রয়ান্বিত হতে পারে।

৩১। হে জীবগণ! তোমরা সেই বিশ্বকর্মাকে জ্ঞাত নও, যিনি এই প্রাণীগণকে উৎপন্ন করেছিলেন এবং যিনি তোমাদের অন্দরে বাস্তবায়িত হয়েছেন। তোমরা নীহারের ন্যায় তুচ্ছ অজ্ঞানতায় আবৃত জীবভাবে আমি-তুই এইরকম কথা কহনশীল; প্রাণসমূহের তর্পিত হওয়াতেও স্বতৃপ্তিকে মান্যকারী তথা যজ্ঞে স্বর্গ ইত্যাদি প্রাপক স্তোত্রসমূহ উচ্চারণকারী হয়ে সংসারে ভ্রমণ করতে থাক। (অজ্ঞানে আবৃত হওয়ার কারণে আপন আত্মস্বরূপকে জ্ঞান হয়ে লৌকিক ও স্বর্গীয় ভোগে নিজেকে তৃপ্ত করতে থাক এবং আপন এই মিথ্যাস্বরূপকে তত্ত্বস্বরূপ বলে মনে করে থাকে)

৩২। বিশ্বে সর্বপ্রথম এই বিশ্বকর্মাই গর্ভভাব প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তার পর পৃথিবী অথবা বাণীকে ধারণকারী গন্ধর্বঅগ্নি উৎপন্ন হয়। তখন ওষধিসমূহকে উৎপাদন ও পোষণকারী পর্জন্য উৎপন্ন হয়েছিল। সে বিবিধ জলকে গর্ভে ধারণ করেছিল

৩৩। শীঘ্রগামী, আপন বর্জকে তীক্ষ্ণকারী, বৃষভের সমান ভয়ঙ্কর,শত্রুগণের অত্যন্ত ঘাতক, শত্রু প্রাণীগণকে সংক্ষুব্ধ কারক, নিনাদকারী, পালক-পতনহীন (অর্থাৎ নিমেষমাত্র কর্মকারী), এবং অত্যন্ত বীর সেই ইন্দ্র একাকীই শত্রুর শত শত সেনাকে জয় করে থাকেন৷

৩৪। হে যুদ্ধশীল মনুষ্যগণ! শব্দকারী, পলক-পতনহীন, জয়শীল, যুদ্ধকারী, অজেয়, উদ্ধত, নির্ভীক, বাণযুক্ত হস্তশালী, তথা কামনাবর্ষক ইন্দ্রের দ্বারা তোমরা সকলে আপন আপন শত্রুগণকে বিনত করো ৷

৩৫। সেই যুদ্ধকারী ইন্দ্র বাণযুক্ত ও তরবারিযুক্ত হস্তশালী মরুৎ গণের সাথে মিলিত হয়ে শত্রুমাত্রকে স্ববশে আনয়নশীল। তিনি (অর্থাৎ ইন্দ্র) সম্মিলিত যোদ্ধাগণের বিজেতা। তিনি সোমরস পানশীল। তিনি আপন বাহুদ্বয়ের দ্বারা শত্রুকে হিংসনশালী। তিনি অত্যন্ত উদ্যত (উদঘূর্ণ) বলশালী ধনুষ-সম্পন্ন। তিনি দ্রুততার সাথে বাণ বর্ষণশালী।

৩৬। হে বৃহস্পতি! তুমি আপন রথের দ্বারা সর্বত্র সঞ্চরণ করো। রাক্ষসগণের নাশক, শত্রুগণের বাধক; শত্রুসেনাগণকে ভঙ্গকারী, সংহারকারী এবং যুদ্ধের দ্বারা শত্রুকে পরাজিতকারী, হে ইন্দ্র! তুমি আমাদের (বৃহস্পতির) রথের রক্ষক হও। (যেহেতু বৃহস্পতি ইন্দ্রের পুরোহিত, সেই সম্বন্ধে এই স্তুতি)

৩৭৷ শত্রুর বলকে জ্ঞাতশীল, চিরন্তন (চিরকালীন বা পুরাতন), প্রকৃষ্ট বীর, বলশালী, অন্নবান্, শত্ৰুংসহ (অর্থাৎ শত্ৰুবল-সহ্যকারী বা শত্রুকে পরাভবকারী), উগ্র, বীরগণের দ্বারা বেষ্টিত, সেবকগমের দ্বারা বেষ্টিত, বল হতে উৎপন্ন এবং স্তুতিবাকের জ্ঞাতা, হে ইন্দ্র! তুমি জয়শীল রথে আরূঢ় হও।

৩৮৷ পণিগণকে (অর্থাৎ গো-চোর দস্যগণকে) গোষ্ঠ হতে বিতাড়নকারী, স্তুতিবাক্যের বেত্তা, বজ্রবাহু, যুদ্ধ জয়কারী এবং আপন বলে শত্রুকে বধকারী, এমন ইন্দ্রকে, হে সমানজন্মা মিত্রগণ (বা দেবগণ)! তোমরা স্তুতির দ্বারা তাঁকে। উত্তেজিত করে তাকে যুদ্ধের নিমিত্ত সংক্ষুব্ধ করো ৷৷

৩৯। অসুরকুল বা মেঘবৃন্দকে বিলোড়িতকারী, দায়হীন, বীর, শতশঃ ক্রোধী, অপ্রপ্যাপ্য, সেনাকে অভিভূত করণশীল এবং প্রতিযোদ্ধারহিত এই ইন্দ্র যুদ্ধে আমাদের সোনাকে রক্ষা করুন ৷

৪০। ইন্দ্র ও বৃহস্পতি আমাদের এই সেনাগণের নেতা। যজ্ঞের অধিষ্ঠাতা বিষ্ণু দক্ষিণ পার্শ্বে স্থিতিশীল এবং সোম সম্মুখে অগ্রসর হোন। শত্রুবর্গের সেনাকে খণ্ড খণ্ড করণশালিনী এবং বিজয়িনী আমাদের এই দেবসেনার অগ্রভাগে মরুৎবর্গ চলিত হোক।

৪১। কামনাসমূহের বর্ষক ইন্দ্রের; রাজা বরুণের; আদিত্য ও মরুত্বর্গের; অত্যন্ত উদগ্র্ণ (উদ্যত) বল তথা মহান্ মনসম্পন্ন, ভুবনকে নিষ্পেষণশীল, এবং বিজয়লাভী দেবসৈন্যগণের বা দেবতাবৃন্দের তুমুলনাদ সাথে সাথে বা একসাথে উখিত হয়েছে। (অর্থাৎইন্দ্র, বরুণ, আদিত্যগণ, মরুৎগণ ও সকল দেবতা বলের দ্বারা বিজয় লাভ করে জয়ঘোষ করেছেন)।

৪২। হে ধনবান্ ইন্দ্র! আমাদের হতোৎসাহিত (উদ্যম নষ্ট হয়ে গেছে, এমন) বীরগণের মনোবল তথা আয়ুধগুলি পুনরায় উন্নত করো। হে বৃহ! বেগবাগণের অশ্ব ও জয়শীল রথগুলির নিনাদ (হর্ষ হতে উদ্ভূত রব) উচ্চে উখিত হোক

৪৩৷ উচ্চে উড্ডীন হাওয়া আমাদের ধ্বজাগুলি শত্রুর ধ্বজাগুলির সাথে সঙ্গত হলে (অর্থাৎ যুদ্ধে ইতস্ততঃ ভ্রাম্যমান স্বপক্ষীয় ও বিপক্ষীয় রথীগণের রথধ্বজাগুলি মিলেমিশে গেলে) ইন্দ্র আমাদের রক্ষক হোন। ইন্দ্রের কৃপায় আমাদের যে বাণ আছে, সেগুলি শত্রুকে জয় করুক। আমাদের বীরগণ শত্রুদের অপেক্ষ ভারী পড়ুক (উৎকৃষ্ট হোক)। হে দেবগণ! আহুত হয়ে তোমরা আমাদের রক্ষা করো।

৪৪। শত্রুদের চিত্তকে চলিত করণশালিনী হে অপদেবতাগণ! এই শত্রুদের চিত্তকে প্রতিলুব্ধ করে তোমরা এদের অঙ্গকে নিয়ে দূরে চলে যাও এবং অন্য অঙ্গকে গ্রহণ করে অভিকাঙ্ক্ষামতো পুনরায় তাদের মধ্যে প্রবিষ্ট হও। তোমরা এদের হৃদয়কে পুত্র ইত্যাদির শোকে দগ্ধ করে দাও। আমাদের এই শত্রুদের গভীর অন্ধকারে সঙ্গত হোক৷

৪৫। হে মন্ত্রের দ্বারা তীক্ষ্ণীকৃতা! হে শরবৃষ্টা! তোমরা ছেড়ে যাওয়ার পর তেজের সাথে আরও উত্তমরূপে শত্রুগণের অঙ্গ মধ্যে প্রবেশ করো। হে শরবৃষ্টা! এই শত্রুগণের মধ্যে কেউ যেন জীবিত হতে বা রক্ষা পেতে না পারে ৷

৪৬। আমার সেনা হে মনুষ্য! তোমরা শত্রুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ো–তাদের জয় করো। ইন্দ্র তোমাদের সুখ প্রদান প্রদান করুন। তোমাদের বাহু এমন কিছু প্রকার উদয়ূর্ণ (উদ্যত) বল প্রাপ্ত হোক যাতে পুনরায় তোমাদের কেউ পরাজিত (বা ধর্ষিত) করতে না পারে।

৪৭। হে মরুৎবর্গ! বলের দ্বারা স্পর্ধান্বিত হয়ে এই যে শত্রুগণের সেনা আমাদের প্রতি আক্রমণ করতে অগ্রসর হচ্ছে, তাদের কিছু এমন প্রগাঢ় অন্ধকারে আচ্ছাদিত করে দাও যাতে তারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে এবং তারা পরস্পর একে অপরকে যেন চিনতে না পারে।

৪৮। চঞ্চল বালকের মুণ্ডনকালে তার ছেদিত কেশগুলির ন্যায় শত্রুর নিক্ষিপ্ত অসংখ্য বাণগুলি যে যুদ্ধে বর্ষিত হচ্ছে, সেখানে ইন্দ্র, বৃহস্পতি এবং অদিতি আমাদের সদা শান্তি প্রদান করুক–সুখ দান করুক৷

৪৯। যুদ্ধের নিমিত্ত উদ্যত রাজাকে অধ্বর্যু কর্তৃক কবচ প্রদান)–হে বীর! তোমার মর্মস্থানকে আমি কবচের (অর্থাৎ বর্মের) দ্বারা প্রচ্ছন্ন করছি। রাজা সোম তোমাকে অমৃতে স্থাপন করুক। রাজা বরুণ তোমার কবচকে পৃথু (অর্থাৎ স্থূল বা পুরু) অপেক্ষাও পৃথু করুক, এবং জয়ী হবার জন্য তোমাকে দেবগণ আরও প্রিৎসাহিত করুক৷

৫০। হে ঘৃতের দ্বারা আহুত অগ্নি! তুমি আমার এই যজমানকে উৎকৃষ্ট স্থিতি প্রাপ্ত করাও। এঁকে ধন-সমৃদ্ধির পুষ্টিতে সঙ্গত করো এবং সন্তান ইত্যাদির দ্বারা তুমি এঁকে বহুসংখ্যক করো (অর্থাৎ পুত্র-পৌত্রাদি ক্রমে এর বংশবিস্তৃতি করো)।

৫১। হে ইন্দ্র! তুমি এই যজমানকে অতিপ্রশস্ত স্থিতি প্রাপ্ত করাও। ইনি যেন আপন সজাতীগণকে বশ করতে পারেন, এমন করো। এঁকে তুমি ব্ৰহ্মতেজের সাথে সংযুক্ত করো। এই যজ্ঞে উনি দেবগণকে হবির্ভাগ প্রদাতা হোন।

৫২। হে অগ্নি! যে যজমানের গৃহে আমরা (ঋত্বিগণ) দেবগণকে হবিঃ প্রদান করছি, তুমি তার বর্ধন করো। তার নিমিত্ত সকল দেবতা–ইনি আমাদের প্রিয়, এই রকম অধিবচন বলুন এবং ইনি এই মন্ত্রের দ্বারা সকল বৈদিক কর্মের পালক হোন।

৫৩। হে অগ্নি! বিশ্বদেব তোমাকে সংজ্ঞানের সাথে পোষিত করুক। সুষ্ঠু জ্বালামুখ ও বিভাধন তুমি, হে অগ্নি! আমাদের নিমিত্ত কল্যাণকর হও

৫৪। পঞ্চ দেবতার অধিষ্ঠাত্বে বর্তমানা পঞ্চ দিব্য দিশা (দিক) আমাদের দুর্বুদ্ধি ও কুবিচারণাকে বাধিত করা হতে রক্ষা করুক। ধনের পুষ্টিতে যজমানকে ভাগী করে এই দিক্-দেবিগণ আমাদের যজ্ঞকে ধনের পুষ্টিতে ধারণ করুক।

৫৫। অগ্নি সমিদ্ধ হওয়ার পর মহানতা প্রদানকারী, শস্ত্রের দ্বারা বহনীয়, স্তত্য এবং ধারিত যজ্ঞ অধ্বর্যুর দ্বারা পূর্ণকৃত হয়ে যায়। তপ্ত মহাবীর ঘটকে ধারণ করে দ্যোতমান ঋত্বিক বলের সাথে যজ্ঞকে পূর্ণ করে থাকে।

৫৬। দেবগণের হিতকরী, যজ্ঞের দ্বারা জগতের ধারক তথা হবিঃ সেবনকারী অগ্নির নিমিত্ত দেবগণ কর্তৃক চয়নশীল, যজমানের প্রতি অনুগ্রহবুদ্ধি তথা শতসংখ্যক হবিঃসম্পন্ন যজ্ঞ প্রাপ্ত হয়ে থাকে। এইরকম যজ্ঞকে পরিগ্রহ করে দেবযজ্ঞ প্রাপ্ত হয়। স্বয়ং ঋত্বিকই দেবগণের নিমিত্ত যজ্ঞকর্ম করে স্থির হয়ে থাকে।

৫৭ ৷ দেবতাগণের প্রিয় হবিঃ যজনের নিমিত্ত শমিতামধেয় ঋত্বিকের দ্বারা যজ্ঞার্থে শোধিত করা হলে এবং যখন চতুর্থ যজ্ঞ হব্যকে প্রাপ্ত করে, তখন যজ্ঞ সম্পন্ন হয়।.(সর্ব প্রথম অধ্বর্যু যজুঃকে, হোতা ঋক্‌কে, ব্রহ্মা দক্ষিণে স্থিত অপ্রতিরথকে পাঠ করে এবং তখন চতুর্থটির উপর সাক্ষাৎ হোম করা হয়। এই রকম হোমকে চতুর্থ ক্রিয়া বলে। অথবা পূর্ব দিকে অধ্বর্যু শ্রাবণ করান; তখন আগ্নীব্র প্রতিশ্রাবণ যজ্ঞ করান; তখন অধ্বর্যু প্রৈষ করান, তারপর হোতা বষকার করান। এই রকম হোম-ক্রিয়াও চতুর্থ হোমরূপে গৃহীত হয়)। যজ্ঞ সম্পন্ন হওয়ার পর আমরা স্তোত্র ইত্যাদি এবং আশীর্বাদ প্রাপ্ত হয়ে থাকি ৷

৫৮। সূর্যের ন্যায় রশ্মিময়, কেশস্থানীয় স্বর্ণবর্ণের জ্বালসমূহ-সম্পন্ন, তথা প্রাণীগণকে আপন-আপন ব্যাপারে প্রেরণকারী এই জ্যোতিঃস্বরূপ অগ্নি উখিত হচ্ছে। এ কখনও ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। বিদ্বান্ ও ধর্মের রক্ষক পূদেবতা সমস্ত লোককে দর্শন করতে এই অগ্নির অনুশাসনে বর্তমান থাকেন।

৫৯। ঘূর্ণমান এই প্রস্তররূপ সূর্য দ্যুলোক ও অন্তরিক্ষের মধ্যস্থানে গমন করে থাকে। (আবহনীয় হলো দ্যুলোক, গার্হপত্য হলো ভূলোক এবং আগ্নীব্র অন্তরিক্ষস্থানীয়। সেই আগ্নীদ্রের নিকট স্থিত হওয়ায় প্রস্তর মধ্যস্থানে স্থিত বলা যায়)। এই অশ্ম-পৃশ্নি (প্রস্তরজ্যোতিঃ) আপন তেজে দ্যাবাপৃথিবীকে আপূরিত করে দেয়। ঐ প্রস্তর সর্বত্র প্রাপ্তা বেদিকে তথা ঘৃত-সেচনী সুবাকে দর্শন করে। সে এই পৃঙ্খীলোক, ঐ দ্যুলোককে তথা তাতে স্থিত জনগণের চিত্তকেও দর্শন করে থাকে ৷

৬০। বৃষ্টির দ্বারা সেচনকর্তা, উদয়কালে শিশির কণিকায় জগতকে আর্দ্রকারী, অরুণাভ তথা শুভগমন সূর্য পূর্বদিকে আপন উদয়ভাগে স্থিত হয়ে থাকে। নানারশ্মিসংকুল ঐ সূর্য দ্যুলোকের মধ্যে ধৃত হয়ে থাকে। দ্যুলোকস্থ ঐ সূর্য লোকত্রয়ের সীমাকে সুরক্ষিত রাখে ৷৷

৬১। সমুদ্রের ন্যায় ব্যাপক, রথারোহীগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ রথারোহী এবং অন্নবানগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ অন্নপালক ইন্দ্রকেই সমস্ত স্তুতিগুলি অভিবর্ধিত করে থাকে।

৬২। দেবতাগণকে আহ্বানকারী যজ্ঞ দেবতাগণকে যজ্ঞে বহন করুক। সুখকারী যজ্ঞ দেবতাগণকে যজ্ঞে বহন করুক। অগ্নিদেব দেবতাগণকে যজন করুক। অগ্নি দেবতাগণকে যজ্ঞে বহন পূর্বক আনয়ন করুক।

৬৩। ঊধ্বহস্তে অন্নদানকারী করে ইন্দ্র আমাকে উন্নত (বা দাতা) করুক এবং আমার শত্রুদের নীচু হস্তে ভিক্ষা দানের দ্বারা নীচ করুক।

৬৪৷ উপরে গ্রহণীয় দানের দ্বারা এবং নীচু হয়ে গ্রহণীয় ভিক্ষার দ্বারা দেবগণ আমাকে তথা আমার শত্রুদের এবং বেদত্রয়ীকে অভিবর্ধিত করুক। আমার শত্রুগণকে ইন্দ্র ও অগ্নি নানাস্থানে বিতাড়িত করে দিক ৷৷

৬৫। হে ঋত্বিকগণ! উখার অগ্নিকে হস্তে ধারণ করে তার সাথে স্বর্গে গমন করো। দুলোকের পৃষ্ঠভাগে স্থিত স্বর্গে গমন পূর্বক দেবগণের সাথে মিলিত হয়ে তাদের সাথে স্থিত হও।

৬৬। হে বিদ্বান উখ্যাগ্নি! প্রথমতঃ তুমি আপন অধিকার জ্ঞাত হয়ে পূর্ব দিকের সীমায় গমন করো এবং সেখানে গমন করে তুমি চিত্যগ্নির (অর্থাৎ চিতিরূপ অগ্নির) প্রতি মুখ্য-অগ্নি হও। সমস্ত দিককে অবভাসিত করে বিশেষ রূপে দীপিত হও। তারপরে আমাদের দ্বিপাদ মনুষ্য ইত্যাদির নিমিত্ত অন্ন এবং চতুষ্পদ গো-ইত্যাদির নিমিত্ত ঘাস ইত্যাদি প্রদান করো–উৎপন্ন করো।

৬৭। পৃথিবী হতে উখিত আমি (অর্থাৎ যজমান) অন্তরিক্ষ লোকে আরূঢ় হয়েছি এবং অন্তরিক্ষ হতে দ্যুলোকে আরূঢ় হয়েছি। তারপর দ্যুলোকের শিখর হতে উত্থিত হয়ে আমি সর্গীয় পরমাত্মজ্যোতিকে প্রাপ্ত হয়ে গিয়েছি।

৬৮। স্বর্গে জাত হয়ে তিনি (যজমান) কোনও লৌকিক পদার্থের অপেক্ষা করেন না, তিনি (সেই যজমান) দ্যাবা পৃথিবী হতে উত্থিত হয়ে আদিত্যলোকে আরোহণ করেন; যদি সেই বিদ্বান (যজমান) সর্বত্র ধারণ-সমর্থ যজ্ঞকে বিস্তারিত করেন।

৬৯। হে অগ্নি! তুমি দেবগণের চক্ষুঃস্থানীয় এবং মনুষ্যগণের তো তুমি সাক্ষাৎ চক্ষু। অতএব তুমি দেবকামী (দেবতাকে কামনাকারী) যজমানের অগ্রে অগ্রে গমন করো। ভৃগু (অর্থাৎ বিদ্বান্) ব্রহ্মগণের সাথে প্রীতিশালী তথা যজনশীল যজমান কল্যাণের সাথে স্বৰ্গকে প্রাপ্ত হয়।

৭০। সমান মনঃসম্পন্না, বিপরীত রূপশালিনী তথা সাথে সাথে গমনকারিণী রাত্রি ও উষা এক অগ্নিরূপী শিশুকে প্রজ্বলিত করে থাকে; (অর্থাৎ সায়ং ও প্রাতঃ–দুই সন্ধ্যায় যজনের নিমিত্ত অগ্নি প্রজ্বলিত করা হয়ে থাকে)। দ্যাবাপৃথিবীর মধ্যভাগে (অর্থাৎ অন্তরিক্ষে) বিহিত এই অগ্নি হারবিশেষ-তুল্য শোভিত হয়ে থাকে। ধনদাতা দেবগণ সেই অগ্নিকে ধারণ করেছিল৷

৭১। হে সহস্র স্বর্ণখণ্ড রূপী চক্ষুশালী অগ্নি! হে শতমূর্ধন্ (শত মস্তকশালী)! তোমার শত প্রাণ ও সহস্র ব্যান আছে। তুমি সহস্রপরিমিত গো-অশ্বধন দানে সমর্থ, সেই তুমি হেন অগ্নির নিমিত্ত আমি অন্নার্থে হবির দ্বারা যুজন করছি। এই হবি আহুত হচ্ছে; (অর্থাৎ স্বাহা মন্ত্রে আহুতি প্রদান করছি)

৭২। হে অগ্নি! তুমি সুন্দর পক্ষবান্ গরুড়! তুমি পৃথিবীর পৃষ্ঠভাগ বেদিতে স্থিত। হে অগ্নি! তুমি আপন প্রকাশে (দীপ্তিতে) অন্তরিক্ষকে পূর্ণ করে দাও; আপন জ্যোতিতে দ্যুলোককে ধারিত করো এবং আপন তেজে দিকসমূহকে দৃঢ় করো।

৭৩। হে অগ্নি! আহ্বায়মান তুমি শোভন-জ্বালা হয়ে পূর্ব দিকে আপন স্থানে সরলতার সাথে স্থিত হও। এই উৎকৃষ্ট এবং দেবগণের সাথে উপবেশনের স্থানে বিশ্বদেব (অর্থাৎ ঋত্বিক) ও যজমানও উপবিষ্ট হয়ে থাকেন।

৭৪। বরণীয় এবং সর্বপ্রেরক সূর্যের সেই বহুরূপা এবং সকল দিকের (বহুফলপ্রদা) সম্মতিকে আমি বরণ করি। দুগ্ধে পরিপূর্ণ সহস্রধারাযুক্তা, বহুদুগ্ধা তথা মহতী গাভীরূপা এই সূর্যের যে সম্মতিকে কথ ঋষি যথেচ্ছ দোহন করেছিলেন।

৭৫। উৎকৃষ্ট দ্যুলোকে আদিত্যরূপে বিদ্যমান তুমি, হে অগ্নি! আমি তোমাকে পরিচরিত করছি। অন্তরিক্ষ রূপ নিম্নস্থানে বিদ্যুৎ রূপে বিদ্যমান তুমি, হে অগ্নি! আমি তোমাকে স্তোমের দ্বারা পরিচরিত করছি। হে অগ্নি! যে ইষ্টকাচিতি রূপ স্থানে তুমি বাস্তবে সমুখিত হয়েছে, তোমার সেই যোনিরূপা (উৎপত্তিস্থান রূপা) বেদিকেও আমি পূজিত করি। সমিদ্ধমান তুমি হেন অগ্নিতে ঋত্বিকগণ হবিসমূহের দ্বারা হোম করে।

৭৬। হে যুবতম অগ্নি!সতত সমিধাদানের দ্বারা অত্যন্ত প্রজ্বলিত হয়ে তুমি আমাদের সম্মুখে দেদীপ্যমান হও। তোমাকেই আমাদের সমস্ত হবিরান্ন সদাই প্রাপ্ত হতে থাকে।

৭৭। হে অগ্নি! আজ আমরা হবিসমূহের দ্বারা সর্বফলপ্রাপক স্তোত্রের দ্বারা তোমাকে অভিবর্ধিত করছি; যেমন অশ্বমেধীয় অশ্বকে মন্ত্রের দ্বারা আরও মেধ্য করা হয়, অথবা হৃদয়ে স্থিত কোন সঙ্কল্পকে নানারকম শুভ বিচারসমূহে আরও কল্যাণময় করা হয়।

৭৮। মনের সাথে ঘৃতে আমি ঋত্বিক ও যজমানগণের চিতিতে অগ্নির সাথে সম্বন্ধ করে দিচ্ছি, যাতে যজ্ঞের কামনাশালী তথা যজ্ঞের অভিবর্ধক দেবগণ এইস্থানে যজ্ঞে সপ্রাপ্ত হয়। এই বিশাল বিশ্বের পালক বিশ্বকর্মার উদ্দেশ্যে সদাই অদমনীয় হবিঃ নিবেদন করছি।

৭৯। হে অগ্নি! তোমার সপ্ত সমিধ (অর্থাৎ প্রাণ) আছে; সপ্ত জ্বালাজিহ্বা আছে; সপ্ত ঋষি আছে এবং সপ্তই প্রিয় গায়ত্রী প্রভৃতি ছন্দস্থান আছে। সপ্ত ঋত্বিক তোমাকে অগ্নিষ্টোম ইত্যাদি সপ্ত যজ্ঞ-বিধানের দ্বারা যজন করে। হে অগ্নি! তুমি সপ্ত চিতি-সম্পন্ন বেদিকে ঘৃতে আপূরিত করো। এই আহুতি প্রদত্ত হচ্ছে।

৮০। শুক্ৰজ্যোতি (অর্থাৎ শুদ্ধ যার জ্যোতি), চিত্রজ্যোতি (অর্থাৎ দর্শনীয় যার জ্যোতি), সত্যজ্যোতি (অর্থাৎ ব্রহ্মলক্ষণ যার জ্যোতি), জ্যোতিষ্মন (অর্থাৎ তেজোময় যার জ্যোতি), শুক্র (অর্থাৎ যে দীপ্যমান), ঋতপা (অর্থাৎ যে যজ্ঞস্বরূপ), এবং পাপের অতীতে (পাপের নাগালের বাহিরে) বিদ্যমান যে সপ্তম মরুৎ, সকলে আপন-আপন সপ্তগণের সাথে আমাদের নিকট আগমন করুক

৮১। বে ঈদ (এই পুরোভাশ দর্শনকারী), অন্যাদৃঙ (অন্য পুরোডাশও দর্শনকারী), সদৃঙ (সমান দর্শনকারী), প্রতিসদৃঙ (প্রতি সমান দর্শনকারী), মিত (মান প্রাপ্ত–উত্তম, অধম ও মধ্যম তুল্য), সংমিত (সম্যক্ একীভাবে মান প্রাপ্ত) এবং সভর (একই সঙ্গে রক্ষাকারী) সংজ্ঞক মরুৎবর্গ! তোমরা আমাদের যজ্ঞে আগমন করো।

৮২। ঋত (সত্যরূপ), সত্য (সত্য বস্তু হতে উৎপন্ন) ধ্রুব (স্থির), ধরুন (ধারক), ধর্তা (ধারণকর্তা), বিধর্তা (বিশেষভাবে ধারণকর্তা) এবং বিধারয় (বিবিধ সামগ্রীর ধারণকর্তা) সংজ্ঞক মরুৎবর্গ আমাদের এই যজ্ঞে আগমন করুক।

৮৩। ঋতজিৎ (যজ্ঞ জয়কারী), সত্যজিৎ (সত্যের যাথাতথ্য জয়কারী), সেনজিৎ (শত্রুসৈন্য জয়কারী), সুষেণ (শোভনা সেনাশালী), অন্তিমিত্র (সমীপে মিত্রবান্), দূরে অমিত্র (দূরে শত্রু-সম্পন্ন) এবং গণ (সকল গণশালী) সংজ্ঞক মরুৎবর্গ আমাদের এই যজ্ঞে আগমন করুক।

৮৪। ঈদৃক্ষাস (ইদং দর্শনাঃ), এতাদৃক্ষাস (এতৎ দর্শনাঃ), ঊষুণ (উ সু নঃ এতৎপদত্রয়ং পাদপূৰ্তয়ে), সদৃক্ষাস (সমানদর্শনাঃ), প্রতিসদৃক্ষাস (প্রত্যেকং সমানদর্শনাঃ), মিতাস (মিতাঃ প্রমাণতঃ), সম্মিতাস (সঙ্গত্য মিতাঃ) তথা সভরস (সমান অলঙ্কারাদিকং বিভ্রতি), মরুৎ আজ আমাদের এই যজ্ঞে আগমন করুন।

৮৫। স্বতবান্ (স্বাধীনবলযুক্ত) প্রঘাসী (পুরোভাশভক্ষণশীলঃ), সান্তপন (সূর্যসম্বন্ধী), গৃহমেধী (গৃহধর্মবান্), ক্রীড়া (ক্রীড়াশীল), শোকী (শক্তঃ), উজ্জেষী (উৎকৃষ্টজয়নশীলঃ) মরুৎ আজ আমাদের যজ্ঞে আগমন করুক

৮৬। (উগ্র, ভীম, ধ্বান্ত, ধুনি, সাসস্থান, অভিযুগ্ধা এবং বিক্ষিপ নামধারী মরুত্বর্গের উদ্দেশ্যে আহুতি)–দেবরূপ প্রজা মরুৎবর্গ ইন্দ্রের অনুকূলে চলনশীল হয়েছিল। যে প্রকারে দৈবী প্রজা মরুৎবর্গ ইন্দ্রের আরও অনুকূল হয়ে চলে, সেই প্রকারে এই যজমানের প্রতি এই দৈবী এবং মানব প্রজাগণ অনুকূল থোক।

৮৭। হে অগ্নি! বিশিষ্ট রসবান্ ও ঘৃতে পূর্ণীকৃত এই সুক রূপ স্তন্য পান করো। হে অর্ব (ঘোটক সদৃশ গমনশীল ইন্দ্র)! লোকের মধ্যে এই মধুময় স্রোতকে আস্বাদন করো। হে অগ্নি! তৃপ্ত হয়ে তুমি চয়নযাগ সম্বন্ধি (সমুদ্রিয়ং) এই আপন গৃহে (যজ্ঞগৃহে) প্রবেশ করো ৷

৮৮। আমি এই অগ্নির জ্বালামুখ ঘৃতে আসিঞ্চিত করতে ইচ্ছা করি, কেননা ঘৃতই এর উৎপত্তিভূমি। এই অগ্নি এই ঘৃততেই আশ্রিত হয়ে থাকে। এই ঘৃতই এর তেজ। হে অধ্বর্যুগণ! হবিরান্ন সম্পাদন করে এই অগ্নিকে তা ভক্ষণার্থে আহ্বান করো এবং তার আগমনের পর তাকে পূর্ণতয়া তৃপ্ত করো। হে কামনাবৰ্ষক অগ্নি! তোমায় স্বাহা মন্ত্রে আহুত এই হব্যকে তুমি দেবতাগণের নিকট বহন করে তাদের প্রাপ্ত করাও।

৮৯। গাভীর স্তন্যরূপ সমুদ্র হতে মধুর তরঙ্গ (ঊর্মি) উদ্গমিত হচ্ছে। সেই তরঙ্গ অগ্নির সংযোগে অমৃতত্ব প্রাপ্ত হয়ে যাচ্ছে; (অর্থাৎ গরম হয়ে দুগ্ধ দধি রূপ জমে যায়) ঘৃতের যে প্রিয় নাম আছে, তা দেবতাগণের জিহ্বাকে চঞ্চল করে দেবার পক্ষে পর্যাপ্ত এবং অমরণত্বের নিবন্ধক; (–আয়ুর্বৈ ঘৃতম–ঘৃত ভক্ষণ পূর্বক দীর্ঘায়ু প্রাপ্ত হওয়া যায় এবং ঘৃতের দ্বারা যজ্ঞ সম্পাদন করে অমরত্ব লাভ করা যায়)।

৯০। দেবগণের প্রিয়মতো আমরা ঘৃতের নাম উচ্চারণ করছি এবং তা আমরা যজ্ঞে অন্নের সাথে ধারণ করছি  প্রশস্য (শস্যমানং) এই ঘৃতের নাম ব্রহ্মা (ঋত্বিক) শ্রবণ করুক। চারি ঋত্বিকরূপী শৃঙ্গশালী এই গৌরবর্ণ (শুদ্ধ) যজ্ঞ এক্ষণে ঘৃতজ্ঞফলরূপ শব্দ উদগীর্ণ করছে।

৯১। এই যজ্ঞরূপ বৃষভের চারি ঋত্বিকই চারিটি শৃঙ্গ (যথা ব্রহ্ম, উদাতা, হাতা ও অধ্বর্যু); তিন বেদই তিনটি পদ (যথা–ঋক্, সাম ও যজুঃ); হবির্ধান ও প্রবর্গই এর দুটি শির; এবং সপ্ত ছন্দই এর সাতটি হস্ত (যথা–গায়ত্রী, ত্রিষ্টুপ, অনুষ্টুপ, জগতী, ইত্যাদি)। তিনটি সবনে প্রতিবদ্ধ এই যজ্ঞবৃষভ তুমুল বেদনাদ করছে (তিনটি সবন যথা–প্রাতঃ মাধ্যালিন ও সায়ং)। এই প্রকারে সেই মহান যজ্ঞদেব মনুষ্যে প্রবিষ্ট হয়ে গিয়েছেন৷

৯২। তিন প্রকারে তিন লোকহিতের নিমিত্ত স্থাপিত বা ধৃত তথা পণি নামক অসুরগণের দ্বারা লুকিয়ে রাখা গাভী হতেই দেবগণ অবশেষে ঘৃত প্রাপ্ত হয়েছিল। সেই ঘৃতের এক ভাগ ইন্দ্র এবং এক ভাগ সূর্য উৎপন্ন করেন। তৃতীয় ভাগকে দ্বিজাতিগণ স্বধার (পিতৃদেবোদ্দেশে হবিদানের) দ্বারা যজ্ঞসাধক অগ্নির সহায়তায় সম্পাদন করে।

৯৩৷ দুগ্ধের এই ধারা গাভীর হৃদয়রূপ সমুদ্র হতে উত্থিত। শত শত এই ধারাসমূহ শত্রুর দ্বারা কখনও তিরস্কৃত হতে দেখা যায় নি। আমি ঘৃতের ধারাসমূহকে দর্শন করছি। ধৃতের এই ধারাগুলির মধ্যেই সেই স্বর্ণময় বেতস (অর্থাৎ দীপ্যমান অগ্নি) স্থিত আছে।

৯৪। নদীসমূহের জলধারার মতো হৃদয়ের অন্দরস্থ মনেই পবিত্র হওয়া গাভীর এই ঘৃতের ধারাগুলি সম্যক্ প্রবিত করছে, (অর্থাৎ নিরবচ্ছিন্নভাবে অগ্নির স্তর করছে)। ঘৃতের এই লহরী (স্তবসমূহ) ব্যাধের ভয়ে ভীত পলায়নপর মৃগের মতো সু হতে পরিভ্রষ্ট হচ্ছে।

৯৫। বিষম প্রদেশে মহানদের ক্ষিপ্র লহরী যে প্রকারে পতিত হয়ে নষ্ট হয়ে যায় এবং যে প্রকারে সীমাকে অতিক্রম করে অশ্বদৌড়ের অশ্ব বাহিরে চলে যায়, সেই প্রকার এই ঘৃতের মহতী ধারাগুলিও লহরীতে প্লাবিত হয়ে পতিত হচ্ছে (অর্থাৎ সুক হতে পতিত হচ্ছে)।

৯৬। কল্যাণ চাহনিশালিনী, হাস্যময়ী এবং প্রসন্নচিত্তা স্ত্রীসমূহ যেরূপে আপন প্রিয়তমকে প্রাপ্ত হয় থাকে, সেই প্রকার এই ঘৃতধারাগুলি অগ্নিকে সম্প্রপ্ত হয়ে থাকে। ধৃতের ধারাগুলি সমিধসমূহে সমান হয়ে যায়। সেগুলি সেবন করে জাতপ্রজ্ঞা অগ্নি অত্যন্ত প্রসন্ন হয়ে থাকে৷

৯৭। পতির ঘরের দিকে গমনের নিমিত্ত যে রকমে কন্যাগণ নিজেদের কাজল আভরণ ইত্যাদিতে সজ্জিত করে, সেই রকম এই ঘৃতধারাসমূহকেও আমি দর্শন করছি যে স্থানে সোমরস পাতিত হয় এবং সে স্থানে যজ্ঞ প্রবর্তিত হয়, সেই দেশকে (বা স্থানকে) ঘৃতের ধারাগুলি পবিত্র করে দেয়।

৯৮। হে দেবগণ! তোমরা শোভন স্তুতি ও ঘৃতময় যজ্ঞকে সপ্রাপ্ত হও। সম্প্রপ্তির পরে আমাদের ধনকে ধারিত (বা বর্ধিত) করো। আমাদের এই সৌত্ৰামণি যাগকে দেবগণের মধ্যে প্রাপ্ত করাও। এই মধুর ঘৃতের ধারাসমূহ অগ্নিতে পতিত (নির্বাপিত) হচ্ছে–এগুলিও দেবগণকে প্রাপ্ত করাও

৯৯। হে অগ্নি! এই সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডই তোমার ব্যাপ্তির অভ্যন্তরে স্থিতঃ; অন্তঃসমুদ্রের (বা অন্তরিক্ষের) অন্দরে, হৃদয়ের অন্দরে (অর্থাৎ সকল প্রাণির জঠরাগ্নিরূপে) এবং আয়ুতে (অর্থাৎ সকল প্রাণির প্রাণধারণের নিমিত্ত অন্তরূপে) স্থিত; জলের মুখে (অর্থাৎ জলের সংঘাতে সৃষ্ট বৈদ্যুতাগ্নিরূপে) এবং শত্রুগণের (অর্থাৎ পণিগণের) সাথে যুদ্ধে (তেজোময় অগ্নিরূপে) স্থিত তোমার সে সত্তা ঘৃতে পূর্ণ হয়ে আছে–সেই মধুর ঘৃতের তরঙ্গকে আমি আস্বাদন করব।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *