১৭. মনোবিজ্ঞানের বিখ্যাত কিছু পরীক্ষা

১৭. মনোবিজ্ঞানের বিখ্যাত কিছু পরীক্ষা

মানুষের মন বড় বিচিত্র একটা বিষয়–এটা বোঝা খুব সহজ নয়। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে এটা প্রায় সময়েই “কমন সেন্স” দিয়ে বোঝা যায় না। যেমন ধরা যাক যদি কাউকে জিজ্ঞেস করা হয় যে একজন মানুষ আত্মহত্যা করার জন্যে সাততলা বাসার ছাদে দাঁড়িয়ে আছে, আরেকজন মানুষ তাকে দেখতে পেলে কী করবে? মোটামুটি নিশ্চিতভাবে বলা হবে যে মানুষটি চেষ্টা করবে সাততলা বাসার ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে আত্মহত্যা থেকে নিবৃত্ত করতে। 1981 সালে কিছু মনোবিজ্ঞানী এটা নিয়ে গবেষণা করে খুবই বিচিত্র একটা বিষয় আবিষ্কার করেছেন। তারা দেখেছেন যদি আত্মহত্যা করতে ইচ্ছুক মানুষটিকে দেখে শ’তিনেক মানুষ থেকে বেশি মানুষ ভিড় করে এবং যদি সময়টা সন্ধেবেলার দিকে হয় তাহলে সম্মিলিত মানুষ আত্মহত্যাটাকে থামানোর চেষ্টা করবে না। উল্টো সবাই মিলে লোকটাকে ছাদ থেকে লাফ দেবার জন্যে প্ররোচিত করতে থাকবে। আমি জানি ব্যাপারটাকে মোটেও বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না কিন্তু মনোবিজ্ঞানীরা এ ধরনের অনেকগুলো ঘটনা বিশ্লেষণ করে এটাই জানতে পেরেছেন। মানুষ এককভাবে একরকম ব্যবহার করে, যখন একসাথে অনেক মানুষ থাকে তখন হঠাৎ করে তাদের ব্যক্তিগত চরিত্র পাল্টে সম্মিলিত মানুষের সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা চরিত্র ফুটে ওঠে।

মানুষের মন বোঝার জন্যে মনোবিজ্ঞানের বেশ কিছু চমকপ্রদ পরীক্ষা করা হয়েছে। 1956 সালে সলোমন এশের এরকম একটা পরীক্ষা এখন খুব সুপরিচিত। পরীক্ষাটা খুবই সহজ, একটা কাগজে একটা সরলরেখা আঁকা হয়েছে, অন্য একটা কাগজে তিনটা সরলরেখা আঁকা হয়েছে, যার মাঝে একটা প্রথম কাগজে আঁকা রেখাটার সমান। যে কোনো মানুষকে জিজ্ঞেস করা হলে সে তিনটা রেখার মাঝে কোন রেখাটা প্রথম রেখাটার সমান সেটা খুব সহজেই বলে দিতে পারে । সলোমন এশ এবারে একটা মজার কাজ করলেন, তিনি আটজন মানুষের একটা ছোট দলকে এই কাজটি করতে দিলেন, তিনটি রেখার ভেতর থেকে সঠিক দৈর্ঘ্যের রেখাঁটি খুঁজে বের করতে হবে। আটজনের এই দলের মাঝে একটা বৈশিষ্ট্য ছিল, সাতজনই ছিল সলোমন এশের নিজের লোক, একজন ছিল খাঁটি এবং সে ঘুণাক্ষরেও সন্দেহ করে নি যে অন্যেরা এই বৈজ্ঞানিক “ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত। সলোমন এশের নির্দেশ অনুযায়ী সাতজন মানুষই ইচ্ছে করে একটা ভুল রেখাকে শনাক্ত করল, মজার ব্যাপার দেখা গেল যে খাঁটি মানুষটি ষড়যন্ত্রে পা দিয়ে নিজেও ভুল রেখাটাকে শনাক্ত করছে। কোনটি সঠিক উত্তর হবে সে খুব ভালো করে জানে কিন্তু অন্য সাতজনের উত্তর শুনে সে ভুল উত্তরটাকেই সঠিক উত্তর ভাবতে শুরু করেছে! বৈজ্ঞানিক মহলে এটা ঐকমত্যের (conformity) পরীক্ষা নামে বিখ্যাত হয়ে আছে–তবে আমরা বহুদিন থেকে এটা জানি। আমাদের বাংলা ভাষায় এটা নিয়ে একটা বাগধারাও আছে, আমরা সেটাকে বলি, “দশচক্রে ভগবান ভূত!”

মনোবিজ্ঞানের জগতে যে পরীক্ষাটি সবচেয়ে বিখ্যাত হয়ে আছে সেটার নাম স্ট্যানলি মিলগ্রামের পরীক্ষা। অনুমান করা হয় আজকাল এরকম পরীক্ষা আইনসঙ্গত মনে করা হবে না এবং কাউকে করতে দেয়া হবে না। তবে ষাটের দশকে (1963)। মনোবিজ্ঞানী স্ট্যানলি মিলগ্রামের এটা করতে কোনো সমস্যা হয় নি। এই বিখ্যাত পরীক্ষাটি করা হয়েছে এভাবে : খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে ছাত্র এবং শিক্ষক সংক্রান্ত একটা পরীক্ষা করা হবে সে জন্যে স্বেচ্ছাসেবক প্রয়োজন। সেই বিজ্ঞাপন দেখে অনেকেই পরীক্ষায় অংশ নিতে এসেছেন। মনোবিজ্ঞানীরা প্রথমে তাদেরকে বিষয়টা বুঝিয়ে দিলেন। পরীক্ষাটা করার জন্যে দুজন স্বেচ্ছাসেবক দরকার, তার মাঝে একজন হবে শিক্ষক অন্যজন হবে ছাত্র। দুজন স্বেচ্ছাসেবককে দিয়ে শুরু করা হলো এবং লটারি করে একজনকে শিক্ষক অন্যজনকে ছাত্রের দায়িত্ব দেয়া হলো, ছাত্রকে প্রথমে বেশ কিছু জোড়া শব্দ মুখস্থ করতে বলা হলো এবং তাকে বলা হলো জোড়া শব্দের প্রথম শব্দটি তাকে বলা হলে তাকে দ্বিতীয় শব্দটি বলতে হবে। সে যদি সঠিকভাবে বলতে না পারে তাকে ইলেকট্রিক শক দিয়ে শাস্তি দেয়া হবে। পরীক্ষার উদ্দেশ্য ইলেকট্রিক শক দিয়ে তাকে আরো দ্রুত শেখানো যায় কী না সেটা পরীক্ষা করা। ইলেকট্রিক শক দেওয়ার একটা যন্ত্রও আলাদাভাবে তৈরি করা আছে–এটা শুরু হয় 45 দিয়ে এবং 15 ভোল্ট করে বাড়াতে বাড়াতে 450 ভোল্ট পর্যন্ত যাওয়া যায়। 45 ভোল্টের ইলেকট্রিক শক প্রায় বোঝাই যায় না কিন্তু সেটা বাড়তে বাড়তে যদি 450 ভোল্ট হয়ে যায় তাহলে সেটা ভয়াবহ–রীতিমতো মেরে ফেলার অবস্থা!

মনোবিজ্ঞানীরা গম্ভীরভাবে শিক্ষকের দায়িত্ব নেয়া স্বেচ্ছাসেবককে বলে দিলেন প্রতিবার ছাত্র একটা ভুল করবে ততবার তাকে ইলেকট্রিক শক দিতে হবে। শুধু তাই নয়, প্রত্যেকবার ভুল করার পর ইলেকট্রিক শকের মাত্রা 15 ভোল্ট করে বাড়িয়ে দিতে হবে। এখানেই শেষ নয়, মনোবিজ্ঞানীরা বলে দিলেন, পরীক্ষাটা শুরু করার পর শেষ না করে কেউ উঠে যেতে পারবে না। ছাত্র এবং শিক্ষক দুজনেই রাজি হলো। ছাত্রটাকে তখন একটা ঘরে একটা চেয়ারে রীতিমতো বেঁধে ফেলা হলো। তার শরীরে ইলেকট্রিক তার লাগানো হলো ইলেকট্রিক শক দেওয়ার জন্য।

শিক্ষকে তখন অন্য একটা ঘরে ইলেকট্রিক শক দেওয়ার যন্ত্রটাসহ বসানো হলো, যন্ত্রটা কীভাবে কাজ করে তাকে শেখানো হলো এবং 45 ভোল্টের একটা ছোট শক দিয়ে তাকে ইলেকট্রিক শক খেলে কেমন লাগে তার অনুভূতি দেওয়া হলো। তারপর মনোবিজ্ঞানীরা শিক্ষক এবং ছাত্রকেই পুরো পরীক্ষাটা শেষ করার নির্দেশ দিলেন, তাদেরকে মনে করিয়ে দিলেন, পরীক্ষার নিয়ম অনুযায়ী একবার শুরু করা হলে পুরো পরীক্ষা শেষ করতে হবে।

পরীক্ষা শুরু হলো। শিক্ষকের দায়িত্ব পাওয়া স্বেচ্ছাসেবক একটা করে শব্দ উচ্চারণ করেন এবং ছাত্রের দায়িত্ব পাওয়া স্বেচ্ছাসেবক তার জোড় শব্দটি বলেন। যদি উত্তর সঠিক হয় তাহলে ভালো কিন্তু যখনই উত্তরটা ভুল হয় তখনই ছাত্রকে একটা ইলেকট্রিক শক দিয়ে ভোল্টেজের মাত্রাটা বাড়িয়ে দেয়া হয়। প্রথম দিকে কাজটা সহজ ছিল কিন্তু যখন ছাত্র একটু পরে পরে ভুল করতে লাগল তখন ভোল্টেজের মাত্রা বেড়ে যেতে লাগল এবং ইলেকট্রিক শক খেয়ে যন্ত্রণায় ছাত্রটা গগনবিদারি চিৎকার করতে থাকে। রীতিমতো অমানুষিক ব্যাপার–শিক্ষকের দায়িত্ব পাওয়া স্বেচ্ছাসেবক এই ভয়ঙ্কর অমানবিক পরীক্ষা বন্ধ করার অনুমিত চাইল কিন্তু মনোবিজ্ঞানীরা রাজি হলেন না। শিক্ষকের দায়িত্ব পাওয়া স্বেচ্ছাসেবক একেবারে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষাটা চালিয়ে গেলেন, শেষের দিকে ভোল্টেজ এত বেড়ে গেল যে ইলেকট্রিক শক খেয়ে “ছাত্র” বেচারা জ্ঞান হারিয়ে ফেলল কিন্তু তবু তার মুক্তি নেই।

এই ছিল বিখ্যাত স্ট্যানলি মিলগ্রামের বিখ্যাত পরীক্ষা এবং যারা এটা পড়ছেন তারা নিশ্চয়ই ভাবছেন বিজ্ঞানী হয়ে কেমন করে এরকম অমানবিক একটা পরীক্ষা করতে পারলেন? পরীক্ষাটা আসলেই ভয়ঙ্কর অমানবিক একটা পরীক্ষা হতো যদি না পুরো ব্যাপারটা আসলে একটা সাজানো নাটক হতো। এই পুরো পরীক্ষাটাই সাজানো, প্রকৃতপক্ষে শক দেওয়ার যন্ত্রটি মোটেও ইলেকট্রিক শক দেয় না, ছাত্রকে কখনোই শক দেয়া হয় নি, সে ইলেকট্রিক শক খাওয়ার ভান করে গগনবিদারি চিৎকার করেছে। শিক্ষকের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক কখনোই অনুমান করতে পারে নি যে লটারি করে তাকে শিক্ষক হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে সেটাও ছিল সাজানো। মূল পরীক্ষাটা মোটেও ছাত্র-শিক্ষক এবং শেখার ব্যাপার নয়। মূল পরীক্ষাটা ছিল ধোপদুরস্ত বৈজ্ঞানিকের চেহারার মানুষ একজন সাধারণ মানুষকে কোনো আদেশ দিলে তারা সেই আদেশ কতটুকু মানে। অন্য একজনকে নির্মম যন্ত্রণা দেওয়ার আদেশ তারা মানতে রাজি হয় কী না। স্ট্যানলি মিলগ্রাম দেখিয়েছেন সাধারণ মানুষ একটা অন্যায় আদেশ দেয়া হলে সেটা না মানার মনোবল বা দৃঢ়তা দেখাতে পারে না। যুদ্ধে সাধারণ সৈনিকেরা যে অবলীলায় সাধারণ মানুষকে গুলি করে মেরে ফেলতে পারে, তার কারণটাও আসলে এর মাঝে লুকিয়ে রয়েছে। এই সত্যটা জানে বলেই সেনাবাহিনীতে সাধারণ সেনাবাহিনীকে কোনো প্রশ্ন না করে তাদের উপরের অফিসারের আদেশ মেনে নেয়া শেখানো সম্ভব হয়।

স্ট্যানলি মিলগ্রামের পরীক্ষা ছিল এক ধরনের মানসিক চাপের পরীক্ষা। মনে হচ্ছিল কোনো কোনো মানুষ শারীরিক যন্ত্রণা পাচ্ছে কিন্তু আসলে সেটা ছিল অভিনয়। কিন্তু এখন যে পরীক্ষাটার কথা বলা হবে সেটা সবাই জানত অভিনয় কিন্তু তার ফলে যে যন্ত্রণার জন্ম হয়েছিল সেটা ছিল পুরোপুরি বাস্তব। এই পরীক্ষাটা করেছিলেন ফিলিপ জিমবার্ডো, 1973 সালে প্রথমে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির 24 জন আন্ডারগ্রাজুয়েট ছাত্রকে বেছে নেয়া হলো। যাদেরকে বেছে নেয়া হলো তারা সবাই শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ। এবং সবল। তারপর লটারি করে তাদের অর্ধেককে তৈরি করা হলো গার্ড বাকি অর্ধেক হলো কয়েদি। গার্ডদের দেয়া হলো গার্ডের পোশাক, কয়েদিদের কয়েদির পোশাক এবং পায়ে শিকল। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞান বিভাগের নিচে একটা বেসমেন্টকে তৈরি করা হলো একটা জেলখানা তারপর কয়েদিদের জেলখানায় পুরে গার্ডদের বলা হলো পাহারা দিতে। তাদেরকে দুই সপ্তাহ কয়েদি এবং গার্ড হিসেবে থাকতে হবে। এবং মনোবিজ্ঞানীরা তাদের পরীক্ষা করে দেখবেন। কমবয়সী আন্ডারগ্রাজুয়েট ছাত্ররা সানন্দে রাজি হয়ে গেল।

মাত্র ছয়দিন পর এই পরীক্ষা বন্ধ করে দিতে হলো কারণ দেখতে দেখতে গার্ডের ভূমিকায় থাকা ছেলেগুলো হয়ে উঠল নিষ্ঠুর, কয়েদির ভূমিকায় থাকা ছেলেগুলো হয়ে গেল অসহায়। সেই নিষ্ঠুর ছেলেগুলো অসহায় কয়েদিদের গালিগালাজ, অপমান, উলঙ্গ করে অত্যাচার এরকম ভয়ানক নির্যাতন শুরু করল যে কয়েদিরা মানসিকভাবে পুরোপুরি ভেঙে পড়ল। পুরো বিষয়টা ছিল এক ধরনের অভিনয় কিন্তু দেখতে দেখতে সেটি বাস্তব হয়ে গেল। গার্ভের ভূমিকা পাওয়া ছেলেগুলো মনে করতে লাগল তারা সত্যিই বুঝি নিষ্ঠুর গার্ড। কয়েদির ভূমিকা পাওয়া ছেলেগুলো মনে করতে লাগল তারা সত্যিই বুঝি অসহায় কয়েদি, তারা প্রতিবাদ করতেই আর সাহস পেল না।

ল্যাবরেটরিতে করা এই পরীক্ষার ত্রিশ বছর পর সারা পৃথিবীর মানুষ ইরাকের আবু গারিব জেলখানার ঘটনাটা জানতে পেরেছিল, যেখানে আমেরিকার নারী এবং পুরুষ গার্ডেরা ইরাকি কয়েদিদের উপর অমানুষিক একটা নির্যাতন চালিয়েছিল। মনোবিজ্ঞানের বইয়ে আবু গারিব জেলখানার ঘটনা এখন ফিলিপ জিমবার্ডোর সাড়া জাগানো পরীক্ষার বাস্তব রূপ বলে ধরে নেয়া হয়।

যে পরীক্ষাটার কথা বলে শেষ করা হবে সেটা আসলে মনোবিজ্ঞানীদের কোনো পরীক্ষা নয় কিন্তু বহুল আলোচিত একটা ঘটনা, যেটা মানুষের মনোজগতের একটা বিশেষ দিকে উঁকি দেয়। ঘটনাটি ঘটিয়েছিলেন জশুয়া বেল নামে পৃথিবীর একজন সর্বশ্রেষ্ঠ বেহালাবাদক। 2007 সালের 7 এপ্রিল তিনি জীর্ণ-শীর্ণ পোশাক পরে একটা বেহালা নিয়ে ওয়াশিংটন ডি.সি.র পাতাল ট্রেনের একটা স্টেশনের গেটের কাছে এসে দাঁড়ালেন। বেহালার বাক্সটা সামনে খুলে রেখে তিনি বেহালা বাজাতে লাগলেন, সেই দেশের দরিদ্র ভিখারিরা যেভাবে ভিক্ষা করে সেভাবে। তিনি যেই বেহালটি বাজাচ্ছিলেন সেটি ছিল অত্যন্ত মূল্যবান একটা বেহালা এবং বেহালায় তিনি যে সুর তুলছিলেন সেই সুর শোনার জন্যে পৃথিবীর অসংখ্য মানুষ হাজার হাজার ডলার খরচ করে তার অনুষ্ঠানে যায়।

কিন্তু মজার ব্যাপার হলো প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বেহালা বাজালেন, কেউ তার দিকে ঘুরেও তাকাল না। ভিক্ষে যেটুকু পেলেন সেটি না পাওয়ার মতোই। কেউ তাকে চিনল না এবং হাজার হাজার মানুষ ব্যস্তভাবে ট্রেন ধরতে কিংবা ট্রেন থেকে নেমে ছুটে গেল, কেউ তার বেহালার সুর শোনার জন্যে থমকে দাঁড়াল না।

থমকে দাঁড়াল শুধু শিশুরা–তারা মন্ত্রমুগ্ধের মতো দাঁড়িয়ে সেই অপূর্ব বেহালার সুর শুনতে চাইছিল। মায়েরা তাদের সেটা শুনতে দেয় নি, স্টেশনে ছেঁড়া কাপড় পরা এক ভিখিরির বেহালা শোনার তাদের সময় নেই, মায়েরা তাদের সন্তানদের টেনেহিঁচড়ে নিয়ে চলে গিয়েছিল।

তার পরেও আমরা কী শিশুদের বিচারবুদ্ধিকে অবহেলা করব?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *