সেনকর্তার কথানুযায়ী সত্যই আজ শুধু সেনেরাই নয়, গোটা সেনপাড়ার মতো বর্ধিষ্ণু গ্রামখানিই পূর্বের সেই গৌরব যেন হারিয়ে ফেলেছে। অনেকেই দূর বিদেশযাত্রী হয়েছেন কোম্পানির নানা চাকুরি গ্রহণ করে। সেনেদের অবস্থাও প্রায় তাই। অনেকের বিশ্বাস, সেনেরা গোঁসাইদের মতো বিস্তর জমিদারি ক্রয় করেননি বলেই ক্রমাগত তাঁদের অবস্থা ভেঙে যাচ্ছে। সরস্বতীর আরাধনাটা একটু বেশি হওয়ার দরুণই সম্ভবত লক্ষ্মীদেবী তাঁর অঞ্চল সরিয়ে নিচ্ছেন। তা ছাড়া সম্পত্তির বিভক্তিও একটা কারণ বটে।
পালাপার্বণে আজও দানধ্যান আছে, দোলদুর্গোৎসব বারোমাসের তেরো পার্বণে গানবাজনা যাত্রা কিছুই শেষ হয়নি। তবু ঐশ্বর্যের সেই গৌরব ও আলোকোজ্জ্বল যুগ অনেকখানি ম্লান হয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় কথা, চাকুরি ব্যতীত কোম্পানির সঙ্গে নতুন কোনও সম্পর্ক গড়ে তোলা ছাড়া অর্থাৎ ইংরেজের সাহায্যার্থে নতুন কোনও কলাকৌশলে তাঁরা অগ্রসর হননি।
আশ্চর্য, গঙ্গাও সঙ্কীর্ণ হয়ে আসছে। ওপারের গঙ্গার ধার জুড়ে তৈরি হয়েছে চালের আড়ত। সিরাজী পীরের থান আড়তের ভিড়ে একপেশে হয়ে পড়েছে খানিকটা।
আগুরিপাড়ার ঘাটে কালোদুলে এসে আর বসে না— সেই যেদিন থেকে তার নাতি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে চলে গেছে। তার সেই রূপকথার শ্রোতারাও আজ খানিকটা বেসামাল হয়ে পড়েছে জীবনযাপনে।
ফরাসডাঙার বড় সাহেবের কুঠি থেকে রাজকীয় টড়তিবাজনা ঝম ঝম ঝম ঝম করে বাজিয়ে যায় গঞ্জের কাছে গঙ্গার ধার দিয়ে। কালো দুলে আগুরিপাড়ার ঘাটে বসে সেই শব্দের তালে ঘাড় নাড়ত, ঝর ঝর ঝর, ঝর ঝর ঝর। আজও তেমনি বেজে ওঠে রাত্রির প্রথম নাকাড়া থানায় ঘটনায়। এপারের লোকেরা অনুমান করে ফরাসডাঙার উত্তর-দক্ষিণ সীমান্তর দ্বার বন্ধ হল।