জানলার পর্দাটা সরালেই দেখতে পাওয়া যায় ছোট বাগানা ঝকঝক করছে সকালের রোদে। এরকম একটা ঘর যে পাওয়া যাবে, অতীন স্বপ্নেও ভাবেনি। এতদিন পর তার একটা নিজস্ব ঘর! অতীন মনে মনে বললো, থ্যাংকস্ আ লট, পাঁচুদা!
কার কাছে যে কখন কোন উপকার পাওয়া যাবে, তা কিছুই বলা যায় না আগে থেকে। অতি স্বল্পভাষী পাঁচুদা, অনেকের ভিড়ে এমন এক কোণে বসে থাকেন যে তাঁর প্রতি অন্যদের নজরই পড়ে না। তিনিও অন্যদের নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন কিনা তাও বোঝা যায় না কক্ষনো। আসবার আগেরদিন শান্তাবৌদির বাড়িতে আবার খাওয়া-দাওয়া হল। প্রথমদিন শান্তাবৌদির বাড়িতে এসে অতীন যে কুচ্ছিত ব্যবহার করেছিল, তার স্মৃতি সে পুরোপুরি মুছে দিয়েছে সে রাতে প্রচুর হৈ চৈ করে, সে শান্তাবৌদির গানের সময় তাল দিয়েছে কার্পেট চাপড়ে, নিজেও একসময় হেঁড়ে গলায় গেয়ে উঠেছে অ্যারাইজ ও প্রিজনার অফ স্টার্ভেশন, অ্যারাইজ ও রেচেড অফ দা আর্থ…
এরই মাঝখানে পাঁচুদা একবার হাতছানি দিয়ে অতীনকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তুমি বস্টনে থাকবে কোথায়?
এই সমস্যাটা নিয়ে অতীন চিন্তিত ছিল ভেতরে ভেতরে। বস্টন শহরে, বিশেষত কেমব্রিজে, চট করে বাড়ি পাওয়া যায় না, পাওয়া গেলেও একা একটা পুরো অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া নেওয়া অতীনের সামর্থ্যের বাইরে। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়েছিল, সমীরের দাদা-বৌদি থাকেন ওখানে, সেই বাড়িতেই অতীন আপাতত উঠবে, তারপর ডর্মিটারিতে সীট পাওয়ার চেষ্টা করবে। যদিও অচেনা কোনো পরিবারের মধ্যে থাকাটা অতীনের একেবারে পছন্দ হয় না! কিন্তু আর কোনো উপায় তো নেই!
পাঁচুদা বলেছিলেন, কোনো ব্যবস্থা না হলে আমি সত্যকিংকরকে বলে দেখতে পারি! ওর ওখানে যদি জায়গা থাকে।
এই নামটাও অতীনের পছন্দ হয়নি। সত্যকিংকরটা আবার কে? সমীরের দাদা-বৌদির সঙ্গে তবু তো একটা যোগসূত্র আছে, এই লোকটা তো আরও অচেনা, তার বাড়িতে অতীন থাকতে যাবে কেন?
সে বিনীতভাবে বলেছিল, না, অন্য একটা জায়গায় উঠছি আপাতত। মানে…একটা ব্যাপার কী জানেন, পাঁচুদা, আমার খানিকটা প্রাইভেসি দরকার, কোনো ফ্যামিলির সঙ্গে থাকলে সেটা ঠিক পাওয়া যায় না।
পাঁচুদা হেসে বলেছিলেন, ঠিক তাই। আমাদের দেশের অনেকে প্রাইভেসির মর্মই বোঝে না। সত্যকিংকরের কাছে তোমাকে পয়সা দিয়ে থাকতে হবে। একটা আলাদা ঘর পাবে, মেইন ডোরের পাস কী পাবে, যখন ইচ্ছে আসবে-যাবে, কেউ ডিসটার্ব করবে না। তবে রান্নাঘর, বাথরুম কমন, ভাড়া বোধহয় পঁচাত্তর-আশি ডলার, টেলিফোন বা গ্যাসের আলাদা চার্জ দিতে হয় না।
এবার অতীন একটু উৎসাহ দেখিয়ে বলেছিল, পঁচাত্তর কিংবা আশি ডলারে একটা আলাদা ঘর? ওটা কি মেস বাড়ির মতন ব্যাপার নাকি? ঐ ভাড়ায় একটা ঘর পেলে আমি এক্ষুনি। নিতে রাজি আছি।
টেলিফোনটার দিকে হাত বাড়িয়ে পাঁচুদা বলেছিলেন, দাঁড়াও দেখছি, সত্যকিংকরের বাড়িতে ঘর খালি আছে কি না। না, মেস বাড়ি নয়। সত্যকিংকর মানুষটি ভারি অদ্ভুত, আলাপ করলে তোমার হয়তো ভালো লাগবে। আর যদি ভালো না লাগে দু’এক মাসে অন্য কোথাও চলে যেও!
পাঁচ মিনিটে সব ব্যবস্থা হয়ে গেল। ফোনে পাওয়া গেল সত্যকিংকরকে। তিনি জানালেন, তাঁর বাড়িতে অ্যাটিকের ঘর খালি আছে, অন্য ঘরের জন্য আশি ডলার লাগে, কিন্তু অ্যাটিকের ঘর বলেই তার ভাড়া বাহাত্তর ডলার।
এ এক অভাবনীয় যোগাযোগ। গম্ভীর, নির্লিপ্ত ধরনের পাঁচুদা যে অতীনের জন্য চিন্তা করেছেন, এই জন্যই তাঁর প্রতি আরও কৃতজ্ঞতাবোধ হয়। শান্তাবৌদির অনেক গুণ। তিনি সুন্দরী, গান গাইতে, অভিনয় করতে পারেন, চমৎকার রান্না করেন, সেইজন্য তাঁর খুব জনপ্রিয়তা, পাঁচুদাকে বিশেষ কেউ পাত্তাই দেয় না, কিন্তু অতীনের মনে হয়েছিল, মানুষ হিসেবে পাঁচুদা অনেক উঁচুতে। পরে অতীন আরও শুনেছে যে পাঁচুদা নাকি চুপি চুপি এরকম অনেকের উপকার করেন।
এদেশে উপার্জনের এক চতুর্থাংশই চলে যায় বাড়ি ভাড়ায়। খাওয়ার খরচটাই সবচেয়ে কম। কিন্তু জামা-কাপড়, যাতায়াত আর বাড়ি ভাড়াতেই অনেক টাকা ব্যয় হয়। সেই তুলনায় অতীন বেশ শস্তায় একটা চমৎকার ঘর পেয়েছে। অ্যাটিকের ঘর তো কী হয়েছে, এটাই তার বেশি ভালো লেগেছে।
যেসব অঞ্চলে খুব বেশী তুষারপাত হয়, সেখানে কোনো বাড়ির ছাদ থাকে না। বাড়িগুলি হয় কৌণিক, ছাদের ঘরটা অনেকটা টোপরের মতন। এতেই অতীনের স্বচ্ছন্দে চলে যাবে। ঘরে সমস্ত আসবাব রয়েছে, খাট, চেয়ার টেবিল, বুক র্যাক, ওয়ার্ডরোব, এমনকি কম্বলও কিনতে হয়নি অতীনকে। ঘরখানা তার খুব মনের মতন।
সিদ্ধার্থ-সমীররা গাড়িতে পৌঁছে দিয়ে গেছে অতীনকে। সঙ্গে নীপা আর বাসবীও এসেছিল, নিউইয়র্ক থেকে বস্টন আসতে প্রায় আট ঘণ্টা লেগে গেল, সারা রাত এক ফোঁটাও না ঘুমিয়ে প্রবল হুল্লোড় করতে করতে ওরা এসেছে। শনিবার সকালে পৌঁছে ওরা ফিরে গেছে রবিবার রাত্তিরে।
সত্যকিংকর নামটা শুনলেই মনে হয় গলায় পৈতে আছে, তাদের বাড়িতে দৈনিক নারায়ণ পুজো হয়। আতপ চাল আর চাপা কলা চটকে মেখে প্রসাদ খায়, ফস নিরামিষ চেহারা, মাথায় অল্প টাক… অতীনের মনে এইরকম একটা ছবিই ফুটে উঠেছিল। কিন্তু সত্যকিংকর লাহিড়ী একজন পাক্কা সাহেব, পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়েস, স্বাস্থ্যবান পুরুষ, তিনি ঘুম থেকে উঠেই বোধহয় গলায় টাই পরে নেন, কারণ তাঁকে গ্রীষ্মকালেও নাকি কেউ ক্যাজুয়াল পোশাকে দেখেনি। এ দেশে আছেন প্রায় তেইশ বছর, মেম বিয়ে করেছেন, তাঁর স্ত্রীর নাম মাথা। দম্পতিটি নিঃসন্তান।
বাড়িটি সত্যকিংকরের নিজস্ব! চারখানা ঘর ভারতীয় ছাত্রদের ভাড়া দেন, স্বামী-স্ত্রী থাকেন বেসমেন্টে। বাগানওয়ালা এমন একখানা সুন্দর বাড়ির মালিক হয়েও কেন যে নিজেরা মাটির তলার ঘরে থাকেন, তা বোঝা যায় না। সত্যকিংকর বাড়ি ভাড়া দেন লাভের জন্যও নয়, তা হলে তিনি আরও অনেক বেশি ভাড়া চাইতে পারতেন। অতীনের ঘরের ভাড়া বাহাত্তর ডলার, পঁচাত্তর বা আশি তো হতেই পারতো, অন্যান্য ঘরের ভাড়াও আটাত্তর বা চুরাশি এইরকম খুচরো ধরনের, অর্থাৎ সত্যকিংকরের একটা কিছু হিসেব আছে। নিছক চাকরিজীবীদের তিনি বাড়িতে রাখেন না, ছাত্র বা রিসার্চ স্কলারদের শুধু ভাড়া দেন, গুজরাটি, পাঞ্জাবী, মাদ্রাজী, ভারতের যে-কোনো অঞ্চলের ছাত্ররা থাকতে পারে, এমনকি দু’জন পাকিস্তানীও আছে এক ঘরে।
সোমেন দত্ত নামে একজন বাঙালী ছেলে থাকে একতলায়। সে প্রথমদিন আলাপে অতীনকে বলেছিল, বাড়িওয়ালা সত্যদা ভাড়াটেদের কোনো ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলান না, তবে তিনি যদি জানতে পারেন যে কোনো ছাত্র পড়াশুনোয় ফাঁকি দিচ্ছে, কোনো সেমেস্টারে পাস করতে পারেনি, তা হলে তিনি তাকে ঘর ছেড়ে দেবার নোটিস দেন। অর্থাৎ মানুষটি আদর্শবাদী।
প্রথম দিন অতীন এসে দেখেছিল, সুট-টাই, জুতো-মোজা পরা সত্যকিংকর অ্যাটিকের ঘরের মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে পর্দা সেলাই করছেন। ভ্যাকুয়াম ক্লিনারটি রয়েছে একপাশে, বোঝা যায়, তিনি নিজেই একটু আগে ঘর পরিষ্কার করে এখন পর্দা মেরামত করতে লেগে গেছেন। অতীনকে দেখে তিনি বিশেষ কোনো স্বাগত ভাষণ না জানিয়ে শুধু মুখটা একবার ফিরিয়ে বলেছিলেন, হাই! ডিড ইউ হ্যাভ আ গুড জার্নি?।
অতীন একটু শঙ্কিত হয়ে ভেবেছিল, এই রে, এই লোকটা সর্বক্ষণ ইংরিজি বলবে নাকি? এর মেম বউকে সে আগেই নিচে দেখে এসেছে। লন্ডন বা আমেরিকায় অতীন এর আগে শুধু বাঙালীদের সঙ্গেই থেকেছে।
সত্যকিংকর আবার পদ সেলাই করতে করতে ইংরিজিতে বলেছিলেন, তুমি অ্যাটিকের ঘরে আগে কখনো থেকেছো? এখানে শীত একটু বেশি লাগতে পারে। এখনও শীত একেবারে যায়নি, বৃষ্টি হলেই বেশ ঠাণ্ডা পড়ে। রুম হিটার আছে, তবু যদি শীত করে আমার স্ত্রীর কাছে অতিরিক্ত কম্বল চাইতে পারো।
অতীনের পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল সিদ্ধার্থ, সে বাংলাতেই বলে উঠেছিল, মিঃ লাহিড়ী, আপনার এখানে কি কুকিং-এর ব্যবস্থা আছে? ঘরের মধ্যে চা-টা বানানো যাবে?
সতকিংকর এবার কাজ থামিয়ে ঘরে বসে বাংলাতে জিজ্ঞেস করলেন, বাঙালী? এই ঘরে তো দু’জনের থাকার কথা ছিল না। পাঁচুদা আমাকে বলেছিলেন—
অতীন তাড়াতাড়ি বলেছিল, না, না, ও আমার বন্ধু, আমাকে পৌঁছে দিতে এসেছে। আমার নাম অতীন মজুমদার, আমি এখানে থাকবো।
সত্যকিংকর বলেছিলেন, হ্যাঁ, রান্নার ব্যবস্থা আছে নিচের কিচেনে। একটা বড় ফ্রিজ আছে, সেখানে খাবার জিনিসপত্র রাখতে পারেন, তবে বীফ কিংবা পৰ্ক জাতীয় কিছু রাখা যাবে না। দু’জন মুসলমান আছে, একটি গুজরাটি ছেলে আছে, সে বীফের ছোঁয়াও খায় না। ইচ্ছে করলে একটা ছোট ফ্রিজিডেয়ার কিনে নিজের ঘরে রাখতে পারেন। যেমন, বসবার ঘরে টি ভি আর ফোন আছে সকলের ব্যবহারের জন্য, কিন্তু ইচ্ছে করলে যে-কেউ ঘরে আলাদা ফোনের কানেকশান নিতে পারে, নিজের টি ভি-ও রাখতে পারে। সেগুলোর চার্জ যার যার নিজস্ব। আপনার কোন্ ডিসিপ্লিন? পোস্ট ডক্টরেট করতে এসেছেন?
ইংরিজিতে আপনি-তুমি নেই, বাংলায় কথা বলার সময় সত্যকিংকর ওদের আপনি সম্বোধন করায় অতীন খুশী হয়েছিল। বয়েসে বড় বলেই যে হুট করে তুমি বলা শুরু করবে, তার কোনো মানে নেই। লোকটির ইংরিজি উচ্চারণ নিখুঁত হলেও বাংলা কথায় বেশ প্রকট বাঙাল টান। আছে। অতীন তাকে নিজের পড়াশুনো এবং এখানকার কাজের কথা জানালো।
সিদ্ধার্থ একটা সিগারেট ধরাতেই সত্যকিংকর উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, আই ডোন্ট মাইন্ড আদার পিপলস স্মোকিং, কিন্তু ধোঁয়ার গন্ধ আমার সহ্য না। আমি এখন যাচ্ছি, কোনো রকম অসুবিধে হলে আমাকে কিংবা আমার স্ত্রীকে বলতে দ্বিধা করবেন না। টেবিলের ড্রয়ারে একটা অ্যাশট্রে আছে, ব্যবহার করবেন।
মার্থার সঙ্গেও আলাপ হয়েছে অতীনের। বেশ মোটা-সোটকা মহিলা, গাল দুটো ফুলে ফুলো এবং একেবারে গোলাপি রঙের, তাঁকে সত্যকিংকরের চেয়ে বয়েসে বড় দেখায়। মার্থার বাবা-মা শ্বেত রাশিয়ান, যদিও মার্থার জন্ম এ দেশেই। ভাঙা ভাঙা বাংলা বলতে পারেন মার্থা, তিনি তাঁর স্বামীর মতন আদব-কায়দা দুরস্ত নন। বেশ কথা বলতে ভালোবাসেন। যদিও তাঁর সন্তান হয়নি, তবু তাঁর ব্যবহারে একটা মা মা ভাব আছে। প্রথম আলাপেই তিনি অতীনের নামটা ঝালিয়ে নেবার চেষ্টা করলেন অনেকবার। উটিন? ওতেন? আটিন? এমন কিছু শক্ত নাম নয়, তবু অতীন কথাটা কিছুতেই তাঁর ঠোঁটে আসে না। হাসতে হাসতে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, লোঞ্চ য়ু হ্যাভ আ নিক নেইম?
বাবলু নামটা শুনে তিনি যেন দারুণ স্বস্তি পেয়ে বললেন, দ্যাটস ইজি, এটা আমি পারবো, বাবু? বাবলিউ? নো? বাব-লু? বাবলু! আমি তোমার এই নাম কল করবো! বাব-লু, ভেরি সুইট নেইম!
প্রথম দিনের উপহার হিসেবে তিনি অতীনকে একটা বেশ বড় পিৎসা খাওয়ালেন।
সবদিক থেকেই বাড়িটা বেশ পছন্দ হয়েছে অতীনের। দেশত্যাগ করার পর সে এত আনন্দে আর কখনো থাকেনি।
সিদ্ধার্থ-সমীররা যে দুদিন থেকে গেল, তার মধ্যে শর্মিলার সঙ্গে দেখা হয়নি ওদের। উইক এন্ডে শর্মিলাকে যেতে হয়েছিল ওয়াশিংটন ডি সি-তে তার মামার কাছে। আগে থেকেই ঠিক হয়েছিল, ক্যানসেল করার উপায় ছিল না, শর্মিলার মামা অত্যন্ত জাঁদরেল ধরনের মানুষ, শর্মিলা তাঁকে ভয় পায়। সিদ্ধার্থ-সমীরদের সঙ্গে যে শর্মিলার এ যাত্রায় দেখা হয়নি তাতে অতীন খুশীই হয়েছে। সিদ্ধার্থের জিভ আলগা, শর্মিলার সামনে সে কী উল্টোপাল্টা ইয়ার্কি বলে বসতো তার ঠিক নেই। সেই যে এক রাতে শান্তাবৌদির বাড়ি থেকে ফেরার পথে হঠাৎ ঝোঁকের মাথায় গাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়ার ব্যাপারটা অতীন ঘুণাক্ষরেও জানায়নি শর্মিলাকে। সিদ্ধার্থ প্রায়ই ব্ল্যাকমেইল করার ছলে বলতো, টেলিফোন করবো শর্মিলাকে? ওকে বলবো যে তুই আসলে ওকে একটুও ভালোবাসিস না, স্বার্থপরের মতন মরতে গিয়েছিলি।
আজ শর্মিলা ফিরবে দুপুর তিনটের বাসে। অতীন চেয়েছিল বাস স্টেশনে গিয়ে শর্মিলাকে নিয়ে আসতে, কিন্তু শর্মিলা বারণ করেছে। তার সঙ্গে একজন মামাতো বোন থাকবে, বাস স্টেশান থেকে সোজা এখানে আসতে পারবে না শর্মিলা।
আমেরিকায় এসে এই এতগুলো মাসের মধ্যে শর্মিলার সঙ্গে অতীনের দেখা হয়েছে মাত্র দু’বার। একবার নিউ ইয়র্ক এয়ারপোর্টে আর একবার গ্রে হাউন্ড বাস স্টেশানে। কোনো নিভৃত জায়গায় নয়। নিউ ইয়র্ক থেকে বস্টনে আসার গাড়ি ভাড়া ছিল না অতীনের। শর্মিলা এখানে থাকে তার মামাতো বোনের সঙ্গে, তার পক্ষেও যখন তখন নিউ ইয়র্ক যাওয়া সম্ভব ছিল না।
আজ অতীনের একটা নিজস্ব ঘর আছে, সেখানে এসে বসবে শর্মিলা। চার দেওয়ালের মধ্যে শুধু তারা দু’জন জামশেদপুরের পর এই প্রথম।
কাজে যোগ দিতে এখনও দু’দিন দেরি আছে অতীনের, তবু সকালে সে একবার ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস ঘুরে এলো। রান্নাবান্না সে এখনও শুরু করেনি, দুপুরে একটা ড্রাগ স্টোরে ঢুকে দুটো হট ডগ আর কফি নিয়ে বসে বেশ কিছুক্ষণ একটা থ্রিলার পড়লো। তবু সময় কাটছে না। এই অচেনা শহরে রাস্তায় রাস্তায় একলা ঘুরে বেড়াবার কোনো মানে হয়, তাছাড়া এই মে মাসেও বেশ সিরসিরে হাওয়া দিচ্ছে। মাঝে মাঝে খুব মিহিন বৃষ্টি। অতীনকে একটা রেইন কোট কিনতে হবে।
বাড়িতেই ফিরে এলো অতীন। দুপুরে অন্য ছাত্ররা কেউ থাকে না। সত্যকিংকর অফিসে গেছেন। মাথা কিছুদিন কোনো কাজ করছেন না, এ দেশে এরা যখন ইচ্ছে চাকরি ছাড়ে, মাঝখানে তিন-চার মাস চুপচাপ বসে থেকে আবার একটা কিছু পেয়ে যায়। মাথা একটা কলেজে রুশ ভাষা পড়ান, হঠাৎ তাঁর গ্রীক ভাষা শেখার শখ হয়েছে, তাই তিনি চাকরি ছেড়ে গ্রীক ভাষার চর্চা করছেন। অদ্ভুত এদের ব্যাপার-স্যাপার।
বসবার ঘরে এসে অতীন টি ভি খুললো। দুপুরবেলা প্রায় সব চ্যানেলেই বাজে বাজে সোপ অপেরা হয়, অথবা রান্নার রেসিপি শেখায়, অথবা ন্যাকা ন্যাকা টক শো। সি বি এস-এ একটা পুরনো সিনেমা পাওয়া গেল, তাও আবার হিস্টোরিক্যাল, এইসব সঙের মতন পোশাক পরা হলিউডী ইতিহাস অতীনের একেবারে সহ্য হয় না। নেহাত ইউল ব্রাইনার আছে বলেই দেখা যায়। শর্মিলা তিনটের বাসে পৌঁছালেও পাঁচটার আগে আসতে পারবে না এ বাড়িতে।
টেলিফোনটা বেজে উঠতেই অতীন টি ভির ভলিউম কমিয়ে রিসিভারটা তুলে নিল। আওয়াজ শুনেই তার ধারণা হলো এই টেলিফোন তারই জন্য।
একটি পুরোপুরি মার্কিনী নারী কণ্ঠ আদুরে আদুরে গলায় বললো, হাই ডারলিং, হাউ হ্যাভ যু বীন?
অতীন খানিকটা হতাশ হয়ে বললো, হুম ডু য়ু ওয়ান্ট?
খিলখিল করে হেসে সেই নারী কণ্ঠ বললো, আই ওয়ান্ট যু, সুইটি? আর যু ফ্রি দিস ইভিনিং? আই অ্যাম ফ্রি!
এ বাড়িতে বেশ কয়েকজন অবিবাহিত যুবক থাকে, তাদেরই কারুর বান্ধবী হতে পারে। কিংবা অল্পবয়েসী মেয়েরা টেলিফোনে এরকম ইয়ার্কি করে। নতুন ছেলেরা এই সব মেয়েদের পাল্লায় পড়ে নাকানিচোবানি খায়!
ফোনটা রেখে দিতেই কয়েক সেকেন্ড পড়ে আবার বেজে উঠল। এবারও অতীন শুনলো সেই মেয়েটার হাসি। অন্য সময় হলে অতীন হয়তো এর সঙ্গে খানিকটা রসিকতা করতো, এখন ভেতরে ভেতরে সে উত্তেজনায় কাঁপছে। সে কড়া গলায় বললে, গেট লস্ট! তারপর জোরে শব্দ করে রেখে দিল।
হঠাৎ, খুবই অপ্রাসঙ্গিকভাবে অতীনের মনে পড়ে গেল, অলি আসবে?
যে-কথাটা সে গোপন করে রাখতে চাইছে, কিংবা ভুলে যেতে চাইছে, সেটা অবচেতন। থেকে হঠাৎ হঠাৎ ভূস করে মাথা তুলছে। টেলিফোনে একটা প্রগলভা মেয়ের কণ্ঠস্বরের সঙ্গে অলির কথা মনে পড়ার কোনো সম্পর্কই নেই, তবু মনে এলো।
অলি হয়তো এ মাসেই পৌঁছে যাবে এদেশে। অলি অ্যাডমিশানের সুযোগ পেয়েছে এদিকের ইউনিভার্সিটিতে, নিউ ইয়র্ক হয়েই তাকে যেতে হবে। নিউ ইয়র্কেও তার বাবার চেনা কেউ থাকতে পারে। অলি কি প্রথম সেখানে উঠবে? না, তা হতেই পারে না। অলি নিশ্চয়ই আশা করবে যে বিমান থেকে নেমেই সে দেখতে পাবে অতীনকে। এ দেশে প্রথমবার পা দিয়ে একটা চেনা মুখ না দেখতে পেলে যে কী খারাপ লাগে, তা কি অতীন জানে না? সে যেদিন প্রথম নিউ ইয়র্কে আসে, সেদিন সিদ্ধার্থ এয়ারপোর্টে পৌঁছোতে চল্লিশ মিনিট দেরি করেছিল, তার মধ্যেই দারুণ বিমর্ষ হয়ে পড়েছিল অতীন।
অলিকে শর্মিলার কথা কিছুই জানানো হয়নি। শর্মিলাও জানে না অলির কথা। অতীন এদের দু’জনের সঙ্গেই তঞ্চকতা করছে? না, অলি কিংবা শর্মিলাকে কোনো ভাবেই সে ঠকাতে চায় না, ওদের একজনকেও সে আঘাত দিতে চায় না। বলতে তো হবেই, কিন্তু কী করে বলবে? অলিকে কি বলা যায়, আমি তোমাকে আর চাই না, আমি শর্মিলা নামে একটি মেয়েকে ভালোবাসি? তা ছাড়া এটাও তো মিথ্যে, অলিকে তো সে এখনো একটুও কম ভালোবাসে না, অলিকে সে কোনোভাবে দুঃখ দিচ্ছে, এটা ভাবতে গেলেই তার বুক টনটন করে। আর শর্মিলা, সেও একটা অসাধারণ মেয়ে, কোনো রকম স্বার্থ জ্ঞান নেই তার, অতীন যদি শর্মিলাকে বলে যে অলি নামের একটি মেয়ের সঙ্গে তার অনেকদিনের সম্পর্ক, তাহলে শর্মিলা নিশ্চিত সরিয়ে নেবে নিজেকে। সে কাঁদবে হয়তো, কিন্তু অতীনকে জানতে দেবে না।
শর্মিলাকে ছাড়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। শর্মিলার সঙ্গে সে যতখানি অন্তরঙ্গ হয়েছে, শর্মিলা তার ওপর এত নির্ভর করে, এখন শর্মিলাকে কোনোভাবে সরিয়ে দেবার চিন্তাটাও চরম নীচতা ও কাপুরুষতা!
মুখে বলার চেয়েও চিঠিতে জানানো তবু সহজ। একবার কোনোক্রমে লিখে ফেলতে পারলেই হলো। অলি এখানে এসে পৌঁছোবে, তার সঙ্গে অতীনের দেখা হবে না, এ রকম তো হতেই পারে না! অতীনকে সেদিন যেতেই হবে নিউ ইয়র্ক এয়ারপোর্টে। কিন্তু এখানে পৌঁছোবার পর অলি যখন জানতে পারবে, সে দারুণ আঘাত পাবে না? খুব নরম মেয়ে অলি, বিদেশে এসেই এ রকম একটা আঘাত পেলে যদি একেবারে ভেঙে পড়ে? সে ভাববে, বাবলুদা তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা শুধু করেনি, নিছক বাজে লোকদের মতন সে কথা এতদিন গোপন করেও গেছে। আগে জানতে পারলে তবু অলি মনটাকে শক্ত করে নিতে পারবে। অতীন তো তার বন্ধু থাকছেই। এদেশে অলি এলে অতীন তাকে সব রকম সাহায্য করবে।
চিঠি লেখার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। আজকালের মধ্যেই পোস্ট না করলে সে চিঠি হয়তো অলির কাছে আর পৌঁছোবেই না। আজই একটা এরোগ্রাম কিনে আনলে হতো।
আসলে, অতীন অলিকে চিঠি লিখতে পারছে না, তার কারণ সে মন ঠিক করতে পারছে না, কাকে আগে জানাবে? অলি দূরে আছে বলে এমন কি দোষ করেছে যে প্রথম আঘাতটা তাকেই দিতে হবে? অলি এসে পৌঁছবার পর যদি শর্মিলা সব জানতে পারে, তখন শর্মিলার মনে হবে না যে, অতীন এসব কথা তাকে আগে কেন বলেনি?
এই গোপনীয়তার বোঝা অসহ্য হয়ে উঠছে অতীনের, অথচ সে জানিয়েও ফেলতে পারছে না।
সবচেয়ে ভালো হয়, আজই শর্মিলাকে খোলাখুলি সব কিছু জানিয়ে দেওয়া। শর্মিলার পায়ের কাছে বসে অতীন পরিপূর্ণ স্বীকারোক্তি দিয়ে বলবে, এবার তুমি আমার বিচার করো। আমাকে যা খুশি শাস্তি দাও, কিন্তু আমি তোমাকে কিছুতেই ছাড়তে পারবো না।
টি ভি-তে সিনেমা শেষ হয়ে শুরু হয়েছে বাচ্চাদের প্রোগ্রাম, অতীন কিছুই দেখছে না।
তার সিগারেট ফুরিয়ে গেছে কিন্তু বাইরে গিয়ে সিগারেট কিনতে ইচ্ছে করছে না। যদি এর মধ্যেই শর্মিলা এসে পড়ে, কিংবা বাস স্টেশন থেকে ফোন করে? এখানে পৌঁছেই সে হয়তো ফোন করবে। এতটা সময় নষ্ট না করে বইপত্র নিয়ে বসলে হতো। পড়াশুনায় এবার মন দিতে হবে। কিন্তু শর্মিলার সঙ্গে দেখা না হলে এখানে যেন কিছুই শুরু করা যাচ্ছে না। বস্টনে পৌঁছোবার পর অতীন এক ক্যান বীয়ারও খায়নি। সে মদ্যপান ছেড়ে দেবে, সিগারেট খাওয়া কমাবে, এখন শুধু পড়াশুনো। আর টাকা বাঁচিয়ে পাঠাতে হবে বাড়িতে মায়ের একটা ফ্রিজ কেনার শখ ছিল, আজও বোধহয় কেনা হয়নি, হলে মুন্নি নিশ্চয়ই চিঠিতে জানাতে।
শর্মিলার সঙ্গে যদি দেখা না হতো কখনো? শর্মিলার সঙ্গে দেখা হবার পরই তার জীবনের একটা অন্য পর্ব শুরু হয়েছে। শর্মিলার সঙ্গে ঐ একটা সম্পর্ক না হলে সে জেল থেকে বেরিয়ে কিছুতেই বিলেতে পালাতে রাজি হতো না। এ রকম নির্লজ্জের মতন বাঁচতে চাইতো না সে।
বেসমেন্ট থেকে মাথা উঠে এসে বললেন, হাই বাবলু, তুমি বুঝি টি ভি অ্যাডিকট? সাবানের বিজ্ঞাপন দেখতে ভালোবাসো?
বাবা কোনো উত্তর না দিয়ে হাসলো।
মার্থা মাথায় একটা স্কার্ফ বাঁধতে বাঁধতে বললো, আমি একটু শপিং-এ যাচ্ছি!
মার্থা বেরিয়ে পরার একটু পরেই একটা ট্যাক্সি থামলো গেটের সামনে। সময় বাঁচাবার জন্য ট্যাক্সির পয়সা খরচ করে এসেছে শর্মিলা।
যার জন্য সারাদিন উদগ্রীব অপেক্ষা, তাকে দেখেই যে হৃদয় আনন্দে ঝলমল করে উঠবে তার কোনো মানে নেই। শর্মিলাকে দেখেই অতীনের মনে হলো, যদি শর্মিলার বদলে এখন। অলি আসতো? এই প্রথম যেন অতীন আবিষ্কার করলো, শর্মিলার সঙ্গে অলিব চেহারার বেশ মিল আছে।
একটা গোলাপি রঙের শাড়ির ওপর পাতলা সাদা রঙের রেইন কোট পরে এসেছে শর্মিলা। মাথার চুল সব খোলা। তার মুখে সব সময় একটা লজ্জা লজ্জা ভাব থাকে।
অতীন এগিয়ে গিয়ে শর্মিলার হাত ধরতেই সে বললো, সুমিকে একটা মিথ্যে কথা বলে চলে এলুম! এক মিনিট দেরি করতে ইচ্ছে করছিল না!
বাড়িতে এখন কেউ নেই। মার্থা বেরিয়ে যাওয়ায় অতীন খুশী হয়েছে। যদিও সে জানে যে তার ঘরে কোনো বান্ধবীকে নিয়ে গেলে কেউ কিছুই মনে করবে না, তবু অন্যদের সামনে একটু অস্বস্তি লাগে। এখন কেউ দেখবার নেই। এই পর্চে দাঁড়িয়েই শর্মিলাকে চুমু খাওয়া যায়। কিন্তু আজ শর্মিলাকে আগে অলির কথা বলে নেবে অতীন।
শর্মিলা বললো, চমৎকার বাড়ি পেয়েছে, যদিও আমার বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে।
–চলো। আমার ঘরটা দেখবে চলো!
শর্মিলার হাত ছেড়ে দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে পাশাপাশি উঠলো অতীন। তার বুকের মধ্যে দুম দুম শব্দ হচ্ছে। অলির কথা শুনে কী প্রতিক্রিয়া হবে শর্মিলার? যদি সে বলে, ছিঃ, তুমি একটা মেয়েকে কষ্ট দিয়ে আমাকে খুশী করতে চাও!
দরজার সামনে এসে সে প্যান্টের পকেটে হাত দিয়েই আঁতকে উঠলো। চাবি নেই! ঘরের মধ্যে চাবি রেখে সে দরজা টেনে বেরিয়ে এসেছে, এতক্ষণে মনে পড়লো। এখন কী হবে? তার ঘর দেখাতে পারবে না শর্মিলাকে? মাথা বেরিয়ে গেলেন, তাঁর কাছে ডুপ্লিকেট চাবি আছে। নিশ্চয়ই, কিন্তু সেটাও তো এখন পাওয়া যাবে না।
তার ফ্যাকাশে মুখ দেখে শর্মিলা জিজ্ঞেস করলো, কী হয়েছে? অতীন বললো, চাবি ভেতরে রয়ে গেছে… ল্যান্ডলেডিও বাড়িতে নেই, কী করে ঢুকবো?
শর্মিলা বললো, তুমি দেখছি, আমার চেয়েও ভুলো! একটু সরে এসো তো!
অতীনের হাত টেনে ধরে সরিয়ে দিয়ে শর্মিলা নিচু হয়ে দরজার সামনের কার্পেটের কোণটা তুলে দেখলো। তারপর বললো, এই দ্যাখো, তোমাদের মতন গ্রীন হর্নদের জন্য ডুপ্লিকেট চাবিটা এখানে রাখা থাকে।
ঠিক যেন ম্যাজিশিয়ানদের ভঙ্গিতে শর্মিলা চাবিটা দিল অতীনের হাতে।
তক্ষুনি শর্মিলাকে আলিঙ্গন করে দরজার গায়ে চেপে ধরে অসংখ্য চুমু দেবার জন্য আকুলি-বিকুলি করতে লাগলো অতীনের বাসনা। কিন্তু না, আগে অলির কথা বলে নিতে। হবে।
চাবিটা সে শর্মিলাকে ফিরিয়ে দিয়ে বললো, তুমি খোলো।
শর্মিলা দরজাটা খুলে বললো, জানো আমার কী খারাপ লাগছিল? তুমি শনিবার এসে পৌঁছেলে, আমি থাকলে সব জিনিস-টিনিস গুছিয়ে দিতে পারতুম! একী, এত সুন্দর করে সাজিয়ে কে দিল?
অতীন বললো, আগে থেকেই সবকিছু এরকম ছিল। আমি শুধু আমার সুটকেস, বইপত্তর আর রাস্তা থেকে কুড়োনো একটা স্ট্যান্ড ল্যাম্প ছাড়া আর কিছুই আনিনি নিউ ইয়র্ক থেকে। ঘরটা সুন্দর না? জানলার কাছে এসো, নদী দেখা যায়, খানিকটা দূরে অবশ্য।
শর্মিলা বললো, সবকিছুই আগে থেকে ছিল? বিছানার চাঁদর, এটাও তোমার নিজের না?
অতীন দু’দিকে মাথা নাড়লো।
শর্মিলা একটানে চারদটা তুলে ফেলে বললো, অন্যের চাঁদরে তুমি শোবে, তোমার ঘেন্না করে না? কাল আমি তোমায় বেডশীট এনে দেবো।
অতীন বললো, বাঃ, আমরা যখন কোনো হোটেলে থাকি।
শর্মিলা বললো, এটা কি হোটেল? আমি মাঝে মাঝে এখানে দুপুরে এসে থাকবো।
শর্মিলা দ্রুত হাতে ঘরের টুকিটাকি জিনিসপত্র এদিক ওদিক করতে লাগলো। নারী স্পর্শের লালিত্যে ঘরের চেহারাটা কেমন বদলে যায়। অতীন এক দৃষ্টিতে দেখছে শর্মিলাকে, এই ক’মাসে বেশ রোগা হয়ে গেছে যেন, বেরিয়ে গেছে কণ্ঠার হাড়। তবু সে কী সুন্দর, যেন মূর্তিমতী সারল্য!
অতীন বললো, শর্মি, তোমার সঙ্গে আমার একটা বিশেষ কথা আছে।
টেবিলের ওপরের কাঁচটা তুলে বিছানার চাঁদর দিয়ে মুছছিল শর্মিলা, সে মুখ তুলে তাকিয়ে বললো, তোমার কী হয়েছে বলো তো? কীরকম গম্ভীর গম্ভীর দেখছি। জানলার কাছ থেকে ছুটে এলো অতীন। শর্মিলাকে বুকে চেপে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট মেলালো। সে চুম্বনের যেন কোনো শেষ নেই। এখন কথা বলার কোনো উপায় নেই। সেই রকম ঠোঁটে ঠোঁট, বুকে বুক, উদরে উদর, উরুতে উরু মেলানো অবস্থাতেই দু’জনে শুয়ে পড়লো বিছানায়। অতীনের কোনো কথাই বলা হলো না।