১৭. জং বাহাদুর

নিশানাথ বাবু সাত সকালে টেলিফোন করেছেন, হ্যালো শফিক, এক কাণ্ড হয়েছে! হ্যালো, শুনতে পাচ্ছ?

পাচ্ছি। কী হয়েছে?

কে যেন একটা গাড়ি কিনে পাঠিয়েছে। নীল রঙের একটা বুইক।

কে পাঠিয়েছে?

কিছুই লেখা নেই।

পরিচিত যারা আছে, তাদের জিজ্ঞেস করেছেন?

পরিচিতরা আমাকে গাড়ি দেবে কেন?

ভুলটুল হয় নি তো? অন্যের গাড়ি ভুলে হয়তো দিয়ে গেছে।

উঁই। আমার নাম লেখা আছে।

বলেন কি!

তুমি একবার আসবে শফিক? আমি মহা চিন্তায় পড়েছি।

এক ঘণ্টার মধ্যে আসছি। জং বাহাদুরের কাণ্ডকারখানাও বলব।

নতুন কিছু করেছে নাকি?

হ্যাঁ হ্যাঁ–না শুনলে আপনার বিশ্বাস হবে না। শালা বজ্জাতের হাড্ডি।

তাই নাকি?

গতকালকে ফস করে আমার পকেট থেকে নোটবইটা নিয়ে গেছে। আমাকে ভয় দেখাবার জন্যে এই রকম ভাব করছে, যেন সে নোট বইটা খেয়ে ফেলবে। বুঝন অবস্থা! বাসায় থাকবেন, আমি আসছি।

তুমি কি এক্ষুণি আসছ?

একটু দেরি হবে। ল্যাবরেটরিতে গিয়ে ওদের সকালের খাবার দিয়েই আসব। বাসায় থাকবেন আপনি।

 

ভোর নটা পঁয়ত্ৰিশ মিনিটে ড. লুইস শফিককে বললেন জং বাহাদুরকে নিয়ে ল্যাবরেটরি ওয়ানে যেতে। খাঁচা খুলতেই শান্ত ভঙ্গিতে জং বেরিয়ে এল। গুটিসুটি হয়ে বসে রইল শফিকের কোলে। ড. লুইস হেসে বললেন, এটি দেখছি খুব শান্ত স্বভাবের। খাঁচা থেকে বের করলে এরা খুব চিৎকার করে। ওদের একটা সিক্সথ সেন্স আছে–বুঝতে পারে কিছু একটা হবে।

ড. লুইস জং বাহাদুরের গায়ে দুটি ইনজেকশন করলেন এবং শফিককে বললেন, একে এখন চব্বিশ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। তিন নম্বর খাঁচায় রেখে দাও।

শফিক দেখল জং বাহাদুর ঝিম মেরে গেছে, নড়াচড়া করছে না। খাঁচায় নামিয়ে রাখতেই সে শান্ত ভঙ্গিতে মাঝখানে গিয়ে বসে রইল। শফিক বলল, এই ব্যাটা, কী হয়েছে তোর?

জং বাহাদুর দাঁত বের করল না। জিভ বের করে ভেংচে দিল না। শুধু চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে রইল।

ড. লুইস, কী দিয়েছেন ওকে?

হেভি মেটাল পয়জনিং করা হয়েছে। রক্তের মধ্যে মারকারির একটা সল্ট ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। ও মারা যাবে ছত্রিশ ঘণ্টার মধ্যে। আমরা মেটাল পয়জনিংএর এফেক্ট লক্ষ করব। ব্লাড-প্ৰেশার কী করে ফল করে, সেটা মনিটার করা হবে।

শফিকের গা কাঁপতে লাগল। তিন নম্বর খাঁচার সামনে গিয়ে ভাঙা গলায় ডাকল, জং বাহাদুর, জং বাহাদুর।

জং বাহাদুর ঘাড় ঘুরিয়ে থাকল। কী শান্ত দৃষ্টি!

দু নম্বর খাঁচার সব কটি বানর ভীত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জং বাহাদুরের দিকে। ওরা কি কিছু বুঝতে পারছে? ড. লুইস এসে দেখলেন, পিপুল ডাইলেটেড হতে শুরু করেছে, মুখ দিয়ে ফেনা ভাঙছে। লোহিত রক্ত-কণিকা ফুসফুস থেকে আর রক্ত নিয়ে যেতে পারছে না।

শফিক ক্লান্ত স্বরে বলল, ড. লুইস, বড্ড খারাপ লাগছে আমার।

শফিকের চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে লাগল। জং বাহাদুর তোকাচ্ছে শফিকের দিকে। শফিক মৃদু স্বরে বলল, লাইলাহা ইল্লা আনতা সোবহানাকা ইন্নি কন্তু মিনায-যোয়ালেমিন।

ড. লুইস অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। সেন্টিমেন্টাল ইণ্ডিয়ানস। সিলি সেন্টিমেন্টের জন্যেই ওদের কিছু হয় না। চাইনীজ পোস্ট ডাকটিও চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে শফিকের দিকে। সে অস্পষ্ট স্বরে চাইনীজ ভাষায় কী যেন বলল–নিশ্চয়ই কোনো ইস্টার্ন ফিলোসফি। রাবিশ, এসব সেন্টিমেন্টাল ইণ্ডিয়ানদের নিয়ে মুশকিল। এরা বড়ো ঝামেলা করে।

শফিক জং বাহাদুরের খাঁচার শিক দু হাতে ধরে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। জৎ বাহাদুর মনে হল এগিয়ে আসছে তার দিকে। শফিক চেঁচিয়ে কেঁদে উঠল।

 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *