জানুয়ারির কুড়ি তারিখ। বুধবার।
ভোরবেলা এক পশলা বৃষ্টি হওয়ায় আবহাওয়া শীতল। গারোপাহাড় থেকে কনকনে হাওয়া আসছে। ডিসট্রিক্ট জজ আবুল কাশেম এজলাশে বসেছেন। তাঁর গায়ে কোট। গলায় মাফলার। এই মাফলার তার মেয়ে শাহেদা নিজের হাতে বুনেছে। অতিরিক্ত ঠান্ডা পড়েছে বলে কোর্টে রওনা হওয়ার সময় মাফলার গলায় দিয়েছিলেন। কাজটা ভুল হয়েছে। মাফলারটা তার কাছে সাপের মতো লাগছে। যেন রঙিন একটা সাপ তার গলা পেঁচিয়ে আছে। মাফলারটাকে সাপের মতো মনে হওয়ার কারণ আছে। শাহেদা নামের যে মেয়ে মাফলার বুনেছে, সে রবিবার ভোরে পালিয়ে কুমিল্লায় চলে গেছে। তিনি খবর পেয়েছেন কুমিল্লায় সে বিয়ে করেছে। বিয়ে করেছে তার গানের টিচারকে। হারামজাদার নাম কিসমত।
আবুল কাশেম গলা থেকে মাফলার খুলতে খুলতে চাপা গলায় বললেন, বদমাইশ কোথাকার!
চাপরাশি বলল, কিছু বললেন স্যার?
আবুল কাশেম বললেন, পানি দাও। পানি খাব। মাফলারটা নিয়ে যাও।
আবুল কাশেম ঝিম ধরে বসে আছেন। আদালতও ঝিম ধরে আছে। ফরিদের মামলার আজ রায় হবে। খুনের মামলার রায়। আদালত ঝিম ধরে থাকারই কথা।
আবুল কাশেম অস্ফুট স্বরে বললেন, হারামজাদি! এইবার মেয়েকে উদ্দেশ করে বলা। মেয়ে সবার সামনে তাকে বেইজ্জত করেছে। মেয়ের কারণে তাকে সবার কাছে মিথ্যা বলতে হয়েছে। জটিল মিথ্যা—’বাধ্য হয়ে বিয়ে ভেঙে দিয়ে মেয়েকে কুমিল্লায় তার এক ফুপুর কাছে পাঠিয়েছি। পাত্রের বিষয়ে একটা উড়োচিঠি পেয়েছিলাম। আমি কোনো গুরুত্ব দেই নাই। কিন্তু মেয়ের মা অন্যরকম মহিলা। মেয়ে তার অতি আদরের।
আবুল কাশেম দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন। তার অতি আদরের মেয়ে বিয়ে উপলক্ষে বানানো চল্লিশ ভরি সোনার গয়না এবং নগদ ত্রিশ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়েছে। এই কাজটা বুদ্ধিমতীর মতো করেছে।
দুই পয়সার গানের টিচার বৌকে খাওয়াবে কী? সাত-আটটা টিউশনি করে কয় পয়সা পাবে?
একবার মনে হয়েছিল মেয়ের নামে মামলা করে দেন। চুরির মামলা। ফৌজদারি মামলা, ৪৫৫/৩৮০ ধারা। পুলিশ মেয়েকে ধরে হাজতে কাক। বদ মেয়ে। মানুষ যা ভাবে তা করতে পারে না। সামাজিকতা বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
কত স্বপ্ন ছিল! ধুমধাম করে মেয়ের বিয়ে দিবেন। বিয়েতে অতিথি হিসাবে গভর্নর সাহেব উপস্থিত থাকবেন। পুলিশ লাইন থেকে পুলিশের ব্যান্ডপার্টি আনাবেন, তারা ব্যান্ড বাজাবে। বর রেলস্টেশন থেকে হাতিতে চড়ে আসবে। সুসং দুর্গাপুর থেকে হাতি আসবে। কিছুই হলো না। হারামজাদি চলে গেছে হারামজাদার কাছে। যা বেটি গানবাজনা কর। নাকি সুরে বাকিজীবন রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘খোলা খোলো দ্বার, রাখিও না আর…।’
আবুল কাশেম আদালতের কার্যক্রম শুরু করলেন। রায় পড়ে শোনালেন। দশ পাতা রায়ের মূল বিষয়–
সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু না। আসামির খুন পূর্বপরিকল্পিত। তাকে নগ্ন করে ভাটিপাড়ায় ঘোরানোর অপমানের শোধ নেওয়ার জন্যেই সে খুনের পরিকল্পনা করে। সে নিজেই খুনের উদ্দেশ্যে বুলেট সংগ্রহ করে। খুনের পরিকল্পনার কথাও অতি ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের কাছে প্রকাশ করে। তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো…
কোর্টরুম নিস্তব্ধ। ফরিদ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সফুরা হঠাৎ মাথা ঘুরে বেঞ্চে পড়ে গেল।
রায় পড়া হলো দুপুর একটায়। ঠিক একই সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইমার্জেন্সি গেটের সামনে আসাদুজ্জামানকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পিস্তল দিয়ে খুব কাছ থেকে গুলি করে পুলিশের এক ডিএসপি, নাম বাহাউদ্দিন
উত্তরের উত্তাল গণআন্দোলনের সেদিনই শুরু। ঢাকা শহরের মানুষ তীব্র রোষে ফেটে পড়ে। শহর হয়ে যায় সমুদ্র, যে সমুদ্রে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ সুনামি।
শহিদের রক্তমাখা শার্ট নিয়ে লাখো মানুষের মিছিল হলো রাজপথে। স্বতঃস্ফুর্ত গণজাগরণ।
পরের দিনের দৈনিক আজাদ পত্রিকার হেডলাইনে লেখা হলো—মৃত্যুর জানাজা মোরা কিছুতেই করিব না পাঠ। জীবনের দাবি আজ এতই বিরাট!
রক্তমাখা শার্ট নিয়ে কবি শামসুর রাহমান তার বিখ্যাত কবিতা লিখলেন—
আসাদের শার্ট
গুচ্ছ গুচ্ছ রক্তকরবীর মতো কিংবা সূর্যাস্তের
জ্বলন্ত মেঘের মতো আসাদের শার্ট
উড়ছে হাওয়ায় নীলিমায়।
বোন তার ভায়ের অম্লান শার্টে দিয়েছে লাগিয়ে
নক্ষত্রের মতো কিছু বোতাম কখনো
হৃদয়ের সোনালি তন্তুর সূক্ষ্মতায়
বর্ষীয়সী জননী সে শার্ট
উঠোনের রৌদ্রে দিয়েছেন মেলে কতদিন স্নেহের বিন্যাসে।
ডালিম গাছে মৃদু ছায়া আর রোদ্দুর-শোভিত
মায়ের উঠোন ছেড়ে এখন সে শার্ট
শহরে প্রধান সড়কে
কারখানার চিমনি-চুড়োয়
গমগমে এভেনর আনাচে কানাচে
উড়ছে উড়ছে অবিরাম
আমাদের হৃদয়ের রৌদ্র-ঝলসিত প্রতিধ্বনিময় মাঠে,
চৈতন্যের প্রতিটি মোর্চায়।
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা।
ঢাকার আন্দোলন ময়মনসিংহ শহরে সেদিন পৌঁছেনি। শহর শান্ত। শহরের কাজকর্ম ঠিকমতো চলছে। চায়ের দোকানে চা বিক্রি হচ্ছে। চিন্তিত পথচারী সিগারেট খেতে খেতে যাচ্ছে। কাধে বাঁদর নিয়ে বাঁদরওয়ালা ঘুরছে।
কোর্ট থেকে ফিরে হাবীব খাওয়াদাওয়া শেষ করে দুপুরে ঘুমাতে গেছেন। তার মধ্যে কোনো উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠা দেখা যাচ্ছে না। পিয়ন চিঠি দিয়ে গেছে। তিনি চিঠি পড়ছেন। রশিদ তার পায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। হাবীব বললেন, সফুরা কি ফিরেছে?
রশিদ বলল, তাকে প্রণব স্যার হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।
রায়ের খবর বাড়ির মহিলারা জানে?
জি-মা।
হাবীব বললেন, আমার পা টিপার প্রয়োজন নাই। সফুরাকে গিয়ে বললো, হতাশ হওয়ার কিছু নাই। আমরা আপিল করব। কাগজপত্র হাইকোর্টে যাবে। তখন সব ঠিক হয়ে যাবে।
রশিদ নিচুগলায় বলল, স্যার, আসলেই কি ঠিক হবে?
হাবীব তাকালেন রশিদের দিকে রশিদ কখনো তাঁরচাখে। চালে তাকায় না। আজ একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তাকে সত্যি কথা বলা প্রয়োজন। রশিদ তার অতি পছন্দের একজন অনেক কাছের। সব মানুষেরই একজন ছায়া লাগে। রশিদ তার ছায়া।
হাবীব বললেন, ঝামেলা হয়ে গেছে হাইকোর্ট সাজা বহাল রাখবে। খুনের মামলায় প্রত্যক্ষ সাক্ষী গুরুত্বপূর্ণ। কঠিন প্রত্যক্ষ সাক্ষী আছে।
রশিদ বলল, স্যার, সব তো মিথ্যা!
কিছু মিথ্যা আছে যা একসময় আর মিথ্যা থাকে না, সত্য হয়ে যায়।
একজন নির্দোষ মানুষ ফাঁসিতে ঝুলবে?
হাবীব বিছানায় উঠে বসতে বসতে বললেন, রশীদ মন দিয়ে শোনো তুমি আল্লাহ বিশ্বাস করো?
অবশ্যই করি স্যার।
তিনি কী বলেছেন? তিনি বলেছেন, আমার হুকুম ছাড়া গাছের পাতাও নড়বে। তুমি বলো, বলেছেন?
জি স্যার।
কাজেই যা ঘটছে আল্লাহর হুকুমেই ঘটছে, ঠিক?
রশিদ চুপ করে রইল। হাবীব বললেন, আরও পরিষ্কার করে বলি–পাঁচটা বিষয় আল্লাহপাক নিজের হাতে রেখেছেন। হায়াত, মউত, রিজিক, ধনদৌলত এবং বিবাহ। মউত কার কীভাবে ঘটবে তা উনি নির্ধারণ করেন। মানুষের এখানে কোনো হাত নাই। ফরিদ ফাঁসিতে ঝুলে মরবে নাকি পাতলা পায়খানা করতে করতে মারা যাবে তা পূর্বনির্ধারিত। এখন পরিষ্কার হয়েছে?
জি।
তাহলে যাও যা করতে বলেছি করো।
রশিদ চলে গেল। হাবীব চিঠি পড়তে বসলেন। একটা চিঠি এসেছে নাদিয়ার শিক্ষক বিদ্যুত কান্তি দে’র কাছ থেকে। হাবীব ভুরু কুঁচকে চিঠি পড়তে শুরু করলেন। এই লোক তাকে কেন চিঠি লিখবে?
জলাব,
আমি বিদ্যুত। আপনার মেয়ে নাদিয়ার শিক্ষক। আপনাকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্যে এই চিঠি।
আমি অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের এক ছেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভ ভাকেন্সির চাকরি চলে যাওয়ায় বিরাট বিপদে পড়ি। প্রায় অনাহারে থাকার মতো অবস্থা। তখন হঠাৎ শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি পাই। আমাকে জরুরি ভিত্তিতে দেখা করতে বলা হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে জানতে পারি আমাকে Ph.D প্রোগ্রামের স্কলারশিপ দেওয়া হয়েছে। গভর্নর মোনায়েম খানের সুপারিশে এই কাজটি হয়েছে।
নাদিয়ার পড়াশোনায় বিরাট বিঘ্ন ঘটেছে। আপনি বিচক্ষণ মানুষ। বিঘ্ন দূর করে নাদিয়ার পড়াশোনা শুরুর ব্যবস্থা করুন। আমার বিনীত অনুরোধ।
আমি ফেব্রুয়ারি মাসে যাত্রা করব। এরমধ্যে পাসপোর্ট ভিসার ঝামেলা শেষ করব।
আমি ঈশ্বর-ভগবান এইসবে বিশ্বাস করি না। তারপরেও ঈশ্বরের কাছে আপনার এবং আপনার পরিবারের সকল সদস্যের মঙ্গলের জন্যে প্রার্থনা করছি।
ইতি
কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ
বিদ্যুত কান্তি দে
হাবীব সন্ধ্যাবেলা বারান্দায় চা খেতে বসে নাদিয়াকে ডেকে চিঠি পড়তে দিলেন। তিনি অবাক হয়ে লক্ষ করলেন, চিঠি হাতে নিয়ে নাদিয়া অল্প অল্প কাঁপছে। তার চোখ ছলছল করছে। হাবীব বললেন, কাঁদছিস কেন?
নাদিয়া বলল, স্যারের এত ভালো একটা খবর শুনে চোখে পানি এসে গেছে। স্যারকে আমরা কী যে পছন্দ করি! উনার সবচেয়ে বড় গুণ কী জানো বাবা? উনি মানুষের মধ্যে স্বপ্ন ঢুকিয়ে দিতে পারেন।
তোর মধ্যে কী স্বপ্ন ঢুকিয়েছেন?
নাদিয়া জবাব না দিয়ে চিঠিটা আবার শুরু থেকে পড়তে শুরু করল। এখনো তার হাত কাঁপছে।
নাদিয়া।
জি বাবা।
হোসনা মেয়েটার কী অবস্থা? এখন কি কথা বলে?
না বেশির ভাগ সময় ছাদের চিলেকোঠায় বসে থাকে। তাকে কোনোদিন কাঁদতে দেখি নাই। কঁদলে মনে হয় তার ভালো লাগত। বিদ্যুত স্যার যদি কিছুক্ষণ মেয়েটার সঙ্গে কথা বলতেন মেয়েটা ভালো হয়ে যেত।
উনি কি তোর কাছে মহাপুরুষ পর্যায়ের কেউ?
প্রশ্নের জবাব না দিয়ে নাদিয়া বলল, বাবা, উনাকে চিঠি লিখে আসতে বলি? উনি পদ্মকে ঠিক করে দিয়ে যাক।
পদ্ম কে?
হোসনার নাম আমি পদ্ম রেখেছি।
হাবীব হাই তুলতে তুলতে বললেন, আমি তোর বিয়ের ব্যবস্থা করব। তোের দাদির শরীর এখন খুবই খারাপ, যে-কোনোদিন অঘটন ঘটে যাবে। তুই আপত্তি করিস না।
আপত্তি করব না।
প্রস্তাব দিয়ে প্রণবকে পাঠাই, দেখি কী হয়। কার কাছে প্রস্তাব পাঠাচ্ছি জানতে চাস না?
আমি জানি।
ফরিদের মামলার আজ রায় হয়েছে, এই খবর জানিস?
তো! মামলার বিষয়টাই আমি কিছু জানি না। মামলা মোকদ্দমা বিষয়ে কেউ আমার সঙ্গে কিছু বলে না।
আমি নিষেধ করে দিয়েছি। আমার মতে পুরুষদের জগৎ আলাদা। মেয়েদের জগৎ আলাদা। মামলা মোকদ্দমা পুরুষদের বিষয়। ভালো কথা, তুই চিঠিটা আবার পড়া শুরু করেছিস কেন? মুখস্থ করবি? এটা তো কোনো পাঠ্যবই না।
নাদিয়া চিঠি নামিয়ে লজ্জিত ভঙ্গিতে তাকাল। হাবীব মেয়েকে চমকে দিয়ে বললেন, তোর স্যারকে আসতে বল। দেখি সে কীভাবে মানুষের মুখে বুলি ফোটায় নাদিয়া তার বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। তার কাছে মনে হচ্ছে বাবা এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষদের একজন।
নাদিয়া ক্ষীণ গলায় বলল, বাবা! সত্যি আসতে বলব?
হ্যাঁ। তোর কাছে আমার একটা উপদেশ আছে।
বলো কী উপদেশ?
কোনো মানুষকেই মহাপুরুষ ভাববি না। পৃথিবীতে মহাপুরুষ জন্মায় না।
নাদিয়া বলল, বাবা, পৃথিবীতেই মহাপুরুষ জন্মায়। অনেকেই জন্মেছে। ভবিষ্যতেও জন্মাবেন। কয়েকজনের নাম বলব বাবা?
হাবীব উঠে দাঁড়ালেন। পিচ্চি মেয়ের সঙ্গে তর্কযুদ্ধ শুরু করার কিছু নেই।
প্রণব শুকনা পাতা জড়ো করে আগুন করেছেন। ঝাটা হাতে ছোটাছুটি করছে ভাদু! সে বাগান থেকে শুকনা পাতা নিয়ে আসছে। তার উৎসাহের সীমা নাই। প্রণব বললেন, আর লাগবে না। তুই তো শুকনা পাতার পাহাড় বানিয়ে ফেলেছিস। কাছে বস, আগুনে শরীর গরম কর।
শরীর গরম করব না স্যার।
করবি না কেন?
শরীর গরম করতে শরম পাই।
প্রণব হেসে ফেললেন। তাঁর মনে হলো ভাদুর মতো বুদ্ধিহীন হয়ে জন্মালে জীবনটা সুখের হতো। জগতের কোনো কিছুই তাকে স্পর্শ করত না। তিনি মাথা থেকে ফরিদের বিস্মিত চোখ সরাতে পারছেন না। তিনি তাকিয়ে আছেন আগুনের দিকে। তাঁর কাছে মনে হচ্ছে বাঁ-পাশে ফরিদ দাঁড়িয়ে আছে। তিনি তাকালেন বাদিকে, মনে হলো ফরিদ এখন ঠিক তার পেছনে।
‘তদেতৎ কারণং পশ্য যদর্থং তুং ময়া হতঃ।’
কেন তোমাকে বধ করেছি তার কারণ শোনো…
প্রণবের মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে। যতই সময় যাবে যন্ত্রণা বাড়বে। এই যন্ত্রণা কতদিন থাকবে কে জানে।
ভাদু!
জে সার।
একটা গল্প বল।
ভাদু সঙ্গে সঙ্গে গল্প শুরু করল—এক দেশে ছিল এক রাজা। রাজা তিনটা শাদি করেছে কিন্তু পুত্রসন্তান হয় নাই। খালি কন্যাসন্তান হয়। রাজা হইল বেজার। হাঁক দিয়া মন্ত্রী ডকিল। বলল, ও মন্ত্রী। মন্ত্রী বলল, জে। রাজা বলল, আমার মন বেজার হইছে…।
ভাদু গল্প বলে যাচ্ছে। হাত-পা নেড়ে গল্প। গল্পে অভিনয় অংশও আছে। প্রণব তাকিয়ে আছেন। তার কাছে মনে হচ্ছে ভাদু কী সুখেই না আছে।
———–
আমানুল্লাহ মোহম্মদ আসাদুজ্জামান।
আসাদের মৃত্যুর পর তার এম, এ পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। ইতিহাসে মেধা তালিকায় স্থান করে দ্বিতীয় শ্রেণী লাভ করেন।
বাবা : এম, এ তাহের। শিবপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক।
মা : মতিজাহান খাদিজা খাতুন। প্রধান শিক্ষিকা, নারায়ণগঞ্জ আই. টি. স্কুল।