শ্রীরামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বরে ও ভক্তগৃহে
প্রথম পরিচ্ছেদ
১৮৮৩, ২৫শে জুন
শ্রীরামকৃষ্ণ বলরামের মন্দিরে রাখাল মাস্টার প্রভৃতির সঙ্গে
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ আজ কলিকাতায় বলরামের বাটীতে শুভাগমন করিয়াছেন। মাস্টার কাছে বসিয়া আছেন, রাখালও আছেন। ঠাকুরের ভাবাবেশ হইয়াছে। আজ জ্যৈষ্ঠ কৃষ্ণা পঞ্চমী; সোমবার (১২ই আষাঢ়), ২৫শে জুন, ১৮৮৩ খ্রীষ্টাব্দ; বেলা প্রায় ৫টা হইয়াছে।
শ্রীরামকৃষ্ণ (ভাবাবিষ্ট) — দেখ, আন্তরিক ডাকলে স্ব-স্বরূপকে দেখা যায়। কিন্তু যতটুকু বিষয়ভোগের বাসনা থাকে, ততটুকু কম পড়ে যায়।
মাস্টার — আজ্ঞা, আপনি যেমন বলেন ঝাঁপ দিতে হয়।
শ্রীরামকৃষ্ণ (আনন্দিত হইয়া) — ইয়া!
সকলে চুপ করিয়া আছেন, ঠাকুর আবার কথা কহিতেছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি) — দেখ, সকলেরই আত্মদর্শন হতে পারে।
মাস্টার — আজ্ঞা, তবে ঈশ্বর কর্তা, তিনি যে ঘরে যেমন করাচ্ছেন। কারুকে চৈতন্য করছেন, কারুকে অজ্ঞান করে রেখেছেন।
[স্ব-স্বরূপ দর্শন, ঈশ্বরদর্শন বা আত্মদর্শনের উপায় — আন্তরিক প্রার্থনা — নিত্যলীলা যোগ ]
শ্রীরামকৃষ্ণ — না তাঁকে ব্যাকুল হয়ে প্রার্থনা করতে হয়। আন্তরিক হলে তিনি প্রার্থনা শুনবেই শুনবেন।
একজন ভক্ত — আজ্ঞা হাঁ — ‘আমি’ যে রয়েছে, তাই প্রার্থনা করতে হবে।
শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি) — লীলা ধরে ধরে নিত্যে যেতে হয়; যেমন সিঁড়ি ধরে ধরে ছাদে উঠা। নিত্যদর্শনের পর নিত্য থেকে লীলায় এসে থাকতে হয়। ভক্তি-ভক্ত নিয়ে। এইটি পাকা মত।
“তাঁর নানারূপ, নানালীলা — ঈশ্বরলীলা, দেবলীলা, নরলীলা, জগৎলীলা; তিনি মানুষ হয়ে অবতার হয়ে যুগে যুগে আসেন, প্রেমভক্তি শিখাবার জন্য। দেখ না চৈতন্যদেব। অবতারের ভিতরেই তাঁর প্রেম-ভক্তি আস্বাদন করা যায়। তাঁর অনন্ত লীলা — কিন্তু আমার দরকার প্রেম, ভক্তি। আমার ক্ষীরটুকু দরকার। গাভীর বাঁট দিয়েই ক্ষীর আসে। অবতার গাভীর বাঁট।”
ঠাকুর কি বলিতেছেন যে, আমি অবতীর্ণ হইয়াছি, আমাকে দর্শন করিলেই ঈশ্বরদর্শন করা হয়? চৈতন্যদেবের কথা বলিয়া ঠাকুর কি নিজের কথা ইঙ্গিত করিতেছেন?