বাঙ্গলার একখানি প্রাচীন ইতিহাস আবিষ্কার
অল্পদিন হইল প্যারিসের জাতীয় পুস্তকাগার (Biblio– theque Nationale ) একখানি অদ্বিতীয় প্রকাণ্ড হস্তলিপি পাইয়াছে, যাহাতে ১৬০৮ হইতে ১৬২৪ পর্যন্ত বাঙ্গলার বিস্তৃত সম্পূর্ণ ও অমূল্য সমসাময়িক ইতিহাস লিপিবদ্ধ হইয়াছে। বইখানির নাম বহারিস্তান-ই-ঘাইবী। মির্জা সহ (বা সহিন্) আলাউদ্দীন, ইস্ফাহানী ইহার রচয়িতা। জাহাঙ্গীর তাঁহাকে শিতাব খাঁ উপাধি দেন; মুসলমান জগতে প্রায় প্রত্যেক কবি ও গ্রন্থকারই একটা ছদ্মনাম (তাখালুস্ ) লইতেন; ইঁহার ছদ্মনাম ‘ঘাইবী’ ছিল। ইঁহার পিতা মালিক আলি সম্রাটের একজন প্রধান সেনাপতি ছিলেন এবং ইহতমাম খাঁ উপাধি পান। মির্জ্জা সহ ভারতবর্ষে জন্মগ্রহণ করেন, কিন্তু পারসীক জাতীয় “ইস্ফাহানী” বলিয়া গৰ্ব্ব করিতেন। গ্রন্থের প্রায় অর্দ্ধেক মির্জ্জা সহনের বঙ্গদেশে যুদ্ধের বিবরণে পূর্ণ, সুতরাং ইহাকে “শিতাব খাঁর আত্মকাহিনী” নাম দিলে মন্দ হয় না।
বহারিস্তান চারি অধ্যায়ে বিভক্ত। সমগ্র গ্রন্থে ৬৫৬ পৃষ্ঠা, প্রতি পৃষ্ঠায় ২১ পংক্তি। প্রথমভাগে ২৮২ পৃষ্ঠা, ইহাতে ইস্লাম খাঁর সুবাদারীর অর্থাৎ ১৬০৮ হইতে ১৬১৪ পর্যন্ত বাঙ্গলায় বিবরণ। দ্বিতীয়ভাগে কাসিম খাঁর সুবাদারীর ইতিহাস (১২০ পৃষ্ঠা)। তৃতীয়ভাগে ইব্রাহিম খাঁর বঙ্গ শাসন এবং যুবরাজ শাহজাহানের সঙ্গে যুদ্ধে মৃত্যু বর্ণিত হইয়াছে (১৮০ পৃষ্ঠা)। চতুর্থভাগে বিদ্রোহী শাহজাহান কর্তৃক বঙ্গ অধিকার এবং তাঁহার পরাজিত হইয়া প্রত্যাগমন নিবদ্ধ আছে (৬৪ পৃষ্ঠা)।
বঙ্গের জমিদারগণের এবং কুচবিহার কুচহাজো (অর্থাৎ কামরূপ) আসাম এবং ত্রিপুরার রাজগণের অতি বিস্তৃত নূতন বিবরণে এই গ্রন্থ অমূল্য করিয়াছে
[প্রভাতী, বৈশাখ, ১৩২৯।]