১৬. ফার্মেসির ম্যানেজার হেদায়েতুল ইসলাম

নিউ সালেহা ফার্মেসির ম্যানেজার হেদায়েতুল ইসলামের চাকরি আজ দুপুর বারটায় নট হয়েছে। শুধু যে নট হয়েছে তা-না, হাবিবুর রহমান ফার্মেসির আরেক কর্মচারী সামছুকে বলেছেন–হারামজাদা ম্যানেজারটার গালে শক্ত করে একটা চড় দাও দেখি।

সামছু চড় দেয় নি। সে মাথা নিচু করে সামনে থেকে বিদায় হয়েছে।

হেদায়েতুল ইসলামের চাকরি যাওয়ার কারণ সে মাঝে মধ্যেই রাতে ফার্মেসিতে থেকে যেত। গভীর রাতে নিশিকন্যাদের আনাগোনা হতো। ব্যাপারটা অনেকদিন থেকেই চলছিল। হাবিবুর রহমান ধরতে পারেন নি। আজই ধরা পড়েছে। হাবিবুর রহমান মোহাম্মদপুর বাজার থেকে কাঁচাবাজার করে ফিরেছেন। গরমে ঘেমে অস্থির। তিনি কিছুক্ষণ ফ্যানের বাতাস খাবার জন্য ফার্মেসির পেছনের ঘরটায় ঢুকলেন। ফ্যান ছেড়ে দিলেন, তখন তাঁর চোখে পড়ল বালিশের কাছে কালো কী যেন ঝলমল করছে। হাতে নিয়ে দেখেন কনডমের খোলা প্যাকেট। তিনি ডেকে পাঠালেন সামছুকে। সে রাতে ফার্মেসির মেঝেতে তোষক বিছিয়ে ঘুমায়।

সামছু এসে সামনে দাঁড়াল। হাবিবুর রহমান ঠাণ্ডা গলায় বললেন, এই বস্তুটা আমি আমার বিছানায় বালিশের কাছে পেয়েছি। বস্তুটা চেন? হাতে নিয়ে দেখ।

সামছু হাতে নিয়ে বলল, চিনি স্যার।

এই বস্তু আমার ঘরে এলো কীভাবে? ঠিকমতো জবাব দিবে। বলো। কীভাবে এসেছে? কে এনেছে? কে এই জিনিস ব্যবহার করেছে?

আমি জানি না স্যার।

কে জানে?

ম্যানেজার সাব জানে।

ম্যানেজার সাহেব কাল রাতে এখানে ছিল?

জি স্যার।

কোনো মেয়ে এসেছিল তার কাছে?

জি স্যার।

কোন মেয়ে?

নাম জানি না স্যার। আজেবাজে মেয়ে।

ম্যানেজার কি প্রায়ই ফার্মেসিতে থেকে যেত?

জি স্যার।

আমাকে আগে বলো নি কেন?

ম্যানেজার সাব বলতে নিষেধ করেছিলেন।

আচ্ছা তুমি যাও। ম্যানেজারকে পাঠাও।

হেদায়েতুল ইসলাম এসে মাথা কাত করে দাঁড়িয়ে রইল। হাবিবুর রহমান। ভেবে পেলেন না এত বড় একটা বদমাশ এত দিন বদমায়েশি করে যাচ্ছে, তিনি কিছুই বুঝতে পারেন নি। উল্টো তার বিয়েও ঠিক করে ফেলেছেন।

তোমার চাকরি নট।

জি আচ্ছা স্যার।

ক্যাশের চাবি আমার কাছে দিয়ে বিদায় হও।

জি আচ্ছা।

এক তারিখ এসে ভাংতি মাসের বেতন নিয়ে যাবে।

হেদায়েতুল ইসলাম পিচ করে তার পায়ের কাছে থুথু ফেলে বলল, বেতন লাগবে না।

হাবিবুর রহমানের এই পর্যায়ে ধৈর্যচ্যুতি হলো। তিনি সামছুর দিকে তাকিয়ে বললেন, হারামজাদা ম্যানেজারটার গালে শক্ত করে একটা চড় দাও দেখি।

সামছু চড় দেয় নি। মাথা নিচু করে বের হয়ে গেছে। সামছুটাও বদমাশ। তাকেও বিদায় করা উচিত। একসঙ্গে সব বিদায় করলে তিনি চলবেন কীভাবে? এই তো এখনই সামছুকে লাগবে। বাসায় বাজার পাঠাতে হবে। আজ টাটকা মলা মাছ পেয়েছেন। মাছ এখনই না পাঠালে টাটকা মাছ কেনা অর্থহীন হয়ে যাবে। রাতে ফার্মেসিতে কাউকে না কাউকে থাকতে হবে। তার পক্ষে ফার্মেসিতে থাকা সম্ভব না। হঠাৎ করে সালেহার শরীর অতিরিক্ত খারাপ করেছে। একা একা বাথরুমে যেতে পারে না। তাকে ধরে ধরে নিতে হয়।

ম্যানেজারের ঘটনা শুনে তার কী রিঅ্যাকশান হয় কে জানে। রোগে ভুগে ভগে তার মেজাজ হয়েছে অতিরিক্ত খারাপ। সামান্য কারণে এমন হৈচৈ শুরু করে! সালেহাকে মূল ঘটনা বলা যাবে না। ঘটনা অতিরিক্ত নোংরা। বলতে হবে টাকা-পয়সা চুরি করেছে বলে চাকরি গেছে। তৌহিদা বেচারির ভাগ্যটা খারাপ যাচ্ছে। কোনো বিয়ে নিয়ে তিনি শেষ পর্যন্ত এগুতে পারছেন না। মনে হয় তাবিচ-কবচের কোনো ব্যবস্থা করতে হবে। বিয়ে-শাদির জন্যে তাবিচ-কবচে ভাললা তদবির আছে। সবচে ভালো হতো যদি আজমির শরিফের সুতা এনে বাঁ-হাতে পরানো যেত। আজমির শরিফের সুতা মন্ত্রের মতো কাজ করে।

সামছু! সামছু কই?

সামছু এসে মাথা নিচু করে দাঁড়াল। হাবিবুর রহমান বললেন, মাছ নিয়ে বাসায় দিয়ে আস। বলবে ঝাল ঝাল করে যেন রান্না করে।

জি আচ্ছা স্যার।

তেলাপিয়া মাছ আছে। তেলাপিয়ার ভাজি।

জি আচ্ছা স্যার।

মাছ দিয়ে এসে আমার এই ঘরের পাটি ফেলে দিবে। বালিশ ফেলে দিবে। নতুন পাটি নতুন বালিশ কিনে আনবে।

জি আচ্ছা স্যার।

ডেটলের পানি দিয়ে ঘর ধুবে।

জি আচ্ছা স্যার।

তুমি নিজেও আমাকে যথাসময়ে খবর না দিয়ে বিরাট অন্যায় করেছ। তুমিও অপরাধী।

জি স্যার অপরাধী।

তুমি আগে কানে ধরে পঞ্চাশবার উঠবোস কর, তারপর বাজার নিয়ে যাও।

সামছু মনে হলো এই শাস্তিতে আনন্দিত। সে আগ্রহ নিয়ে উঠবোস করছে। তার চোখমুখ দেখে মনে হচ্ছে না সে লজ্জা পাচ্ছে। উঠবোস করতে তার যে কষ্ট হচ্ছে তাও না। অর্থহীন শাস্তি। হাবিবুর রহমান বিরক্ত মুখে বললেন, ঠিক আছে আর লাগবে না, এখন মাছ নিয়ে রওনা দাও।

 

হাবিবুর রহমান বাড়ি ফিরলেন সন্ধ্যাবেলায়। শোবার ঘরে ঢুকে তিনি হতভম্ব। সালেহা ছটফট করছে। তাঁর চোখের মণি স্থির। হাত-পা শক্ত।

হাবিবুর রহমান বললেন, কী হয়েছে?

তিনি বড় বড় করে নিঃশ্বাস নিতে নিতে বললেন, কলেমা পড়। চার কলেমা পড়ার দরকার নাই, শুধু কলেমা তৈয়ব।

হাবিবুর রহমান বললেন, কলেমা পড়ব কেন?

সালেহা বেগম বললেন, আমি মারা যাচ্ছি এইজন্যে।

হাবিবুর রহমান বললেন, আগে ডাক্তারের ব্যবস্থা করি। পরে কলেমা।

সালেহা বেগম হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, আমার ডাক্তার লাগবে না। আজরাইল চলে এসেছে। আমি চোখের সামনে দেখছি। ঐ তো দাঁড়ানো।

সালেহা বেগমের দৃষ্টি একটি বিশেষ দিকে স্থির হয়ে গেল। হাবিবুর রহমান। ভীত গলায় বললেন, বলো কী? লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।

হৈচৈ শুনে তৌহিদা ছুটে এসেছে। সেও হতভম্ব। সালেহা বললেন, তৌহিদা, তুই আমাকে সূরা ইয়াসিন পাঠ করে শোনা। বলেই স্বামীর দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললেন–ওগো তুমি আমার হাত ধরে পাশে বসো। আমার মাথা কোলে নাও। আমি তোমার কোলে মাথা রেখে মরব।

হাবিবুর রহমান স্ত্রীর মাথা কোলে নিলেন। তাঁর চোখে পানি এসে গেল। তৌহিদা সূরা ইয়াসিন পাঠ করা শুরু করল না, সে সালেহার পায়ের তালুতে সরিষার তেল মালিশ করতে লাগল। সালেহা স্বামীর দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললেন, মরণের সময় আমি যদি তোমার কাছে একটা জিনিস চাই তুমি কি দেবে?

হাবিবুর রহমান ধরা গলায় বললেন, অবশ্যই অবশ্যই।

আল্লাহপাকের নামে কীরা কাট।

হাবিবুর রহমান আল্লাহর নামে শপথ করলেন। সালেহা বেগম বললেন, আমি তো মারা যাচ্ছি। আমার মৃত্যুর পর তোমাকে কে দেখবে? তুমি বিবাহ করবে।

আচ্ছা ঠিক আছে। তোমার মৃত্যুর পর আমি বিবাহ করব, কথা দিলাম। এখন শান্ত হও।

যে-কোনো মেয়ের হাতে আমি তোমাকে দিব না। আমি নিজে পছন্দ করে তোমার বিয়ে দিয়ে যাব। তুমি বিয়ে করবে তৌহিদাকে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তার মত আছে।

হতভম্ভ হাবিবুর রহমান বললেন, এইসব কী বলো!

সালেহা হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, তুমি আল্লাহর নামে কীরা কেটেছ। ভুলে যেও না। এক স্ত্রী থাকতে দ্বিতীয় বিবাহ হয় না। স্ত্রীর অনুমতি থাকতে হয়। আমার অনুমতি আছে। আমি তোমার বিয়েতে সাক্ষী হবো।

তুমি শান্ত হও। আমি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করি।

সালেহা বললেন, অ্যাম্বুলেন্স না। তুমি কাজির ব্যবস্থা কর। এক্ষণ যাও। আমি আর বেশি সময় নাই। তোমার বিয়ে না দিয়ে আমি যদি মারা যাই তাহলে তুমি কিন্তু সারাজীবনের জন্যে দায়ী থাকবে।

সালেহা বড় বড় করে শ্বাস নিতে নিতে কলেমা তৈয়বা পড়তে লাগলেন।

হাবিবুর রহমান তৌহিদার দিকে তাকিয়ে হতাশ গলায় বললেন, কী করিরে তৌহিদা?

তৌহিদা বলল, ভাইজান, বুবু যা বলছেন তাই করেন। উনার পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।

হাবিবুর রহমান বললেন, তুই কি পাগল হয়ে গেলি? তোকে কেন বিয়ে করব!

সালেহা বললেন, তাহলে থাক। বিয়ের দরকার নাই। আমাকে তোমরা বিদায় দাও।

সালেহার খিঁচুনি শুরু হলো।

 

রাত আটটায় তিন লক্ষ এক টাকা দেনমোহরে হাবিবুর রহমানের সঙ্গে তৌহিদার বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের পর পর সালেহার শ্বাসটানা স্বাভাবিক হয়ে গেল। তিনি বিছানায় উঠে বসতে বসতে বললেন, তৌহিদা, আমাকে কড়া করে এককাপ চা দাও।

তৌহিদা চা আনতে উঠে গেল। সালেহা স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন, বিয়ে হয়ে গেছে বলে একসঙ্গে ঘুমানো শুরু করবে না। একসঙ্গে থাকা শুরু করবে আমার মৃত্যুর পর। তার আগে না। তৌহিদাকে বলে দিবে, তোমাকে আগে যেমন ভাইজান ডাকত এখনো যেন ভাইজান ডাকে।

হাবিবুর রহমান বিড়বিড় করে বললেন, তোমার শরীরের অবস্থা কী?

সালেহা বললেন, ভালো। মাছ দিয়ে মাষকালাইয়ের ডাল খেতে ইচ্ছা করছে। তুমি মাষকালাইয়ের ডাল নিয়ে আস। খোসাসহটা আনবে। টাকি মাছ। আনবে। অন্য মাছ না।

হাবিবুর রহমান বললেন, তুমি এটা কী করলে?

সালেহা বললেন, যা করেছি ঠিক করেছি। তুমি আমার ছাগল ভাইটাকে টেলিফোন করে বিয়ের খবর দাও।

দরকার কী?

সালেহা বললেন, দরকার আছে। যা করতে বলছি কর। ঠিক আছে তোমাকে ফোন করতে হবে না। আমিই করব। লাইন ধরে দাও।

এখনই টেলিফোন করতে হবে না। তোমার শরীর ভালো না। তুমি রেস্ট নাও।

কে বলেছে আমার শরীর ভালো না। আমার শরীর ঠিকই আছে। কই টেলিফোন ধরে দাও।

হাবিবুর রহমান টেলিফোনে মতিনকে ধরে রিসিভার এগিয়ে দিলেন। সালেহা বললেন, কে? মতিন?

মতিন বলল, কেমন আছ বুবু? অনেকদিন পর তোমার গলা শুনলাম। তোমার গলা শুনে মনে হচ্ছে ভালো আছ।

হুঁ ভালো আছি।

দুলাভাই কেমন আছেন?

সেও ভালো আছে। সে আরেকটা বিয়ে করেছে।

বলো কী? কবে?

এই তো কিছুক্ষণ আগে। তিনলক্ষ এক টাকা দেনমোহরে তৌহিদাকে বিয়ে করেছে।

তোমার কথার আগামাথা পাচ্ছি না। দুলাভাই তৌহিদাকে কেন বিয়ে করবে?

তুই বিয়ে করবি না বলে তোর দুলাভাইও করবে না এটা কেমন কথা!

বিয়ে কি সত্যি হয়েছে?

হ্যাঁ হয়েছে। এক কথা কতবার বলব!

দুলাভাই এখন আছেন কোথায়?

এখানেই আছে। তৌহিদাও আছে। তোর দুলাভাইয়ের সঙ্গে কথা বলবি?

এখন বলব না। পরে বলব। ঘটনাটা আগে হজম করে নেই।

সালেহা তৃপ্তি তৃপ্তি গলায় বললেন, যা হজম কর। এমনিতে হজম না হলে হজমি বড়ি খা।

সালেহা আরাম করে চা খেলেন। অনেকদিন পর নিজেই মাষকালাই দিয়ে টাকি মাছ রান্না করলেন। রাতে ঘুমুতে যাবার আগে আগে বললেন, অনেকদিন একসঙ্গে ছবি দেখা হয় না। ভিসিআর-এ একটা ছবি ছাড় তো। পাহেলি নামের একটা ছবি আনা আছে, ঐটা ছাড়। তৌহিদাকে ডাক। সেও দেখুক। দুই পাশে দুই বউ নিয়ে ছবি দেখার আলাদা মজা। হি… হি… হি…।

তৌহিদা ছবি দেখতে রাজি হলো না। সালেহা অনেক রাত পর্যন্ত স্বামীর সঙ্গে ছবি দেখলেন। ছবিতে এক মেয়ের স্বামী বিয়ের পর পর বিদেশে চলে যায়। তখন একটা ভূত স্বামীর বেশ ধরে মেয়েটির সঙ্গে বাস করতে আসে, তাদের একটা বাচ্চাও হয়।

ছবি দেখতে দেখতে সালেহা বললেন, ভূত স্বামীর ছায়া পড়ছে না। দেখ ভালো করে, সবার ছায়া পড়ে, ভূতটার পড়ে না।

হাবিবুর রহমান চিন্তিত গলায় বললেন, তোমার শরীর তো মনে হয় ঠিক হয়ে গেছে।

সালেহা বললেন, তাতে কি তোমার কোনো সমস্যা?

হাবিবুর রহমান বললেন, সমস্যা হবে কেন?

ছবি শেষ করে সালেহা মুখভর্তি পান নিয়ে ঘুমুতে গেলেন। স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন, আজ শরীরটা বেশ ভালো লাগছে। তোমার বিশেষ কিছু লাগলে বলো? লাগবে কিছু?

হাবিবুর রহমান না-সূচক মাথা নাড়লেন। সালেহা আরাম করে ঘুমালেন। এমনিতে রাতে কয়েকবার তার ঘুম ভাঙে। পানি খান। মাথার তালু গরম হয়ে যায়। তালুতে ভেজা ন্যাকড়া দিতে হয়। আজ রাতে সে-সব কিছুই হলো না। তবে হাবিবুর রহমানের এক ফোঁটা ঘুম হলো না। তিনি সারারাত স্ত্রীর পাশে জেগে বসে রইলেন। মনে মনে মন্ত্র জপের মতো বলতে লাগলেন, ভুল করেছি। বিরাট ভুল। আকাশপাতাল ভুল। স্ত্রীর প্ররোচনায় সব স্বামী এরকম ভুল করে। আদম আলায়সসালামকে গন্ধম কে খাইয়েছে? বিবি হাওয়া।

তৌহিদাও জেগে রইল। সে তার ঘরের বাতি জ্বেলে তাকিয়ে থাকল সিলিং ফ্যানের দিকে। সিলিং ফ্যানে শাড়ি ঝুলিয়ে মেয়েরা ফাঁস নেয়। তার নিজের মাও এই কাণ্ড করেছিলেন। আদর্শ মায়ের আদর্শ মেয়ে হিসেবে এই কাজটা কি সে করতে পারে না? শাড়ি কীভাবে গলায় পেঁচায়? মতিন ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হবার পর তার জন্যে একটা বিয়ের শাড়ি কেনা হয়েছিল। ঐ শাড়িটা গলায় পেঁচালে হয় না? কেন হবে না! অবশ্যই হয়, সাহস করে পেঁচিয়ে দিলেই হয়।

 

ভোরবেলায় তৌহিদাকে পাওয়া গেল সম্পূর্ণ অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায়। তার গায়ে পেটিকোট ছাড়া কোনো কাপড় নেই। পরনের শাড়ির একটা মাথা ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে। অন্য মাথা বিছানায়। তৌহিদা খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে।

তৌহিদা অনেকবেলা পর্যন্ত ঘরে বসে আছে কেন এটা দেখতে গিয়ে তাকে এই অবস্থায় পাওয়া গেল। তৌহিদা সালেহাকে দেখে খুবই স্বাভাবিক গলায় বলল, বুবু, পান খাব। আমাকে জর্দা দিয়ে একটা পান দেন।

সালেহা ভীত গলায় বললেন, তোর কী হয়েছে?

তৌহিদা বলল, আমার কিছু হয় নাই। বুবু, একটা পান দেন।

তুই নেংটা হয়ে বসে আছিস কী জন্যে?

তৌহিদা বলল, পান খেয়ে গোসল করব, তারপর নতুন শাড়ি পরব।

তোর কি জ্বর? দেখি কপালটা।

তৌহিদা কঠিন গলায় বলল, খবরদার আমার গায়ে হাত দিবা না। স্বামী ছাড়া কেউ আমার গায়ে হাত দিবে না। বুবু, পান কই? খালিমুখে কতক্ষণ বসে থাকব।

ঘরে পান ছিল না। হাবিবুর রহমান পান নিয়ে এলেন। তৌহিদা মুখে পান নিয়ে আরাম করে চিবুচ্ছে। পানের পিক ফেলছে। তার আচার আচরণে স্পষ্ট কোনো অস্বাভাবিকতা নেই। শাড়ি পরতে কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না। তবে সালেহা তাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে হাবিবুর রহমানের একটা পাঞ্জাবি পরিয়ে দিয়েছেন।

হাবিবুর রহমান খুবই ভয় পেয়েছেন। তিনি ঘরে ঢুকছেন না। দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি সেখান থেকেই বললেন, তৌহিদা, তোর কি রাতে ঘুম হয় নাই?

তৌহিদা বলল, জি-না ভাইজান।

ফ্যানে শাড়ি ঝুলিয়েছিস কী জন্যে?

সেটা তোমাকে বলব না ভাইজান। বললে তুমি রাগ করবে।

আচ্ছা থাক বলার দরকার নাই।

ভাইজান, আমি দেশের বাড়িতে যাব। আমাকে দেশের বাড়িতে রেখে আস।

দেশের বাড়িতে তো তোর কেউ নাই।

না থাকুক, আমি যাব। আমাকে ট্রেনে তুলে দিলেই আমি যেতে পারব।

আচ্ছা ঠিক আছে। তোকে ঘুমের ওষুধ দিব। ঘুমের ওষুধ খেয়ে আরাম করে ঘুমা। ঘুম ভাঙলে তোকে দেশের বাড়িতে নিয়ে যাব।

একটা নতুন স্যুটকেস কিনে দিও। আগের স্যুটকেসটার তালা ভাঙা।

নতুন স্যুটকেস কিনে দেব।

ভাইজান, এখন কিনে দাও।

হাবিবুর রহমান হতাশ চোখে সালেহার দিকে তাকালেন। তিনি বুঝতে পারছেন তাঁর সামনে মহাবিপদ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *