অনেকদিন পর ফরিদা আবার ঐ মেয়েটিকে দেখলেন। ঘোমটা দেয়া মেয়েটা, কুয়ার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।
সন্ধ্যা মাত্র মিলিয়েছে। আকাশ মেঘে ঢাকা বলে একটু বেশি অন্ধকার। তবু তার মধ্যেও মেয়েটিকে পরিষ্কার দেখা গেল। তিনি প্রথমে ভাবলেন বীণা। পর মুহূর্তেই মনে হল—না এতো বীণা না। তিনি তীক্ষ্ণ গলায় বললেন, কে ওখানে? মেয়েটা চট করে চাঁপা গাছের আড়ালে চলে গেল।
তাঁর বুক ধক করে উঠল। ঘরে তিনি এবং তাঁর শাশুড়ি ছাড়া আর কেউ নেই। সবাই গেছে বুলুর কাছে। বুলুর অবস্থা খারাপ হয়েছে। আজ তার পা কেটে বাদ দেয়া হবে। অপারেশন সন্ধ্যার পর পরই হবার কথা। তিনি যেতে চেয়েছিলেন যেতে পারেন। নি। সকাল থেকেই বুকের ব্যথায় কাতর হয়েছেন। আজকের ব্যথাটা অন্য যে কোনো দিনের চেয়েও তীব্র। সন্ধ্যাবেলা একটু কমেছিল। নামাজের অজু করার জন্যে বারান্দায় এসে এই দৃশ্য দেখলেন। তিনি আবার কাঁপা গলায় বললেন, কে কে কে?
তাঁর শাশুড়ি বললেন, কি হইল বৌমা?
ফরিদা থর থর করে কাঁপতে কাঁপতে বললেন, ভয় পেয়েছি। আম্মা ভয় পেয়েছি।
বৌমা ভয়ের কিছু নাই। আর আমার কাছে। আয়াতুল কুরসি পইড়া বুকে ফুঁ দিব। আস আমার কাছে গোমা।
ফরিদার সমস্ত শরীর কেমন যেন জমে গেছে। তিনি নড়তে পারছেন না। চাঁপা গাছের আড়াল থেকে ঘোমটা পরা মেয়েটি আবার বের হয়ে এসেছে। ফরিদা স্পষ্ট দেখলেন মেয়েটা তার ঘোমটা ফেলে দিল। কি অসম্ভব রূপবতী একটি মেয়ে অথচ তাকে এত ভয়ংকর লাগছে কেন?
ফরিদা ক্ষীর্ণ স্বরে ডাকলেন, আম্মা ভয় লাগে। আম্মা ভয় লাগে।
তাঁর শাশুড়ি ক্ৰমাগত ডাকছেন, আমার লক্ষী মা, কাছে আস। আমি বিছনা থাইকা নামতে পারছি নাগোমা। তুমি আমার কাছে আস।