১৬. পরকালের বিবরণ (১৬তম খণ্ড)

১৬তম খণ্ড পরকালের বিবরণ

কবর জগতের বিবরণ —

মৃত্যুর এবং মৃত্যুর পরবর্তীতে মুমিনের সম্মানঃ

হযরত বারা বিন আযেব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : একদিন আমরা হযরত রাসূলে করীম (ছঃ)-এর সাথে একজন আনসারীর জানাজায় এক কবরস্থানে গেলাম। দেখলাম, তখনও কবর খনন করা শেষ হয়নি। তাই নবী করীম (ছঃ) এবং আমরা তার আশেপাশে এমন আদবের সাথে বসে গেলাম, মনে হল যেন আমাদের মাথার উপর পাখিরা বসে আছে (অর্থাৎ আমরা এমন নীরব নিশ্চল হয়ে অবস্থান করলাম যেন অচেতন পদার্থের মত হয়ে গেলাম)।

হযরত রাসূলে করীম (ছঃ)-এর পবিত্র হাতে ঐ সময় এক টুকরা কাঠ ছিল। তিনি তা দিয়ে জমিনে দাগ কাটছিলেন (চিন্তাযুক্ত ব্যক্তিরা যেমনটি করে থাকে)। হযরত (ছঃ) এমন সময় মাথা তুলে বললেন : তোমরা কবরের শাস্তি থেকে পানাহ চাও। এ কথা তিনি দু’বার বা তিন বার বললেন। তার পর বললেন : এ কথা নিশ্চিত, মু’মিন বান্দা যখন দুনিয়া থেকে আখেরাতের প্রতি গমন করার সময়ে উপনীত হয়, তখন তার দিকে আসমান থেকে ফেরেশতারা আগমন করেন। তাদের সাদা বর্ণের চেহারা সূর্যের মত উজ্জ্বল। তারা সাথে নিয়ে আসেন বেহেশতী কাফন এবং বেহেশতী খোশবু। এ ফেরেশতার সংখ্যা এত বেশি যে, দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত তাদেরকে বসা অবস্থায় দেখবে। অতঃপর মালাকুল মওত হযরত আযরাঈল (আঃ) তাশরীফ আনবেন। তিনি তার মাথার কাছে এসে বসবেন এবং বলবেন : ওহে পবিত্র রূহ, তুমি আল্লাহর মাগফেরাত ও সন্তুষ্টির প্রতি বেরিয়ে আস। তার রূহ আসানীর সাথে বের হয়ে আসে, যেমন মশক থেকে পানির ফোঁটা বের হয়ে আসে। হযরত মালাকুল মওত তখন ঐ রূহ নিজ হাতে গ্রহণ করেন। অন্যান্য ফেরেশতা (যারা ততক্ষণ দূরে বসে ছিলেন) বিন্দুমাত্র দেরী না করে ঐ রূহ তাদের আনা কাফনে ও সুগন্ধির মধ্যে রেখে আসমানে চলে যান। এ সুগন্ধ সম্পর্কে বলা হয়েছে, দুনিয়ায় মেশক থেকে যে সবচাইতে উত্তম সুগন্ধি পাওয়া যায়, এ সুগন্ধি সেই প্রকার। অতঃপর এরশাদ করেন : এ রূহ নিয়ে ফেরেশতারা (আসমানের দিকে) আরোহণ করতে থাকেন এবং ফেরেশতাদের যে দলের নিকট দিয়েই তারা যেতে থাকেন তারা প্রশ্ন করেনঃ এ পবিত্র রূহ কার? তখন তারা ঐ। ব্যক্তিকে দুনিয়ায় যে সকল উত্তম নামে ডাকা হত সে সকল নাম উচ্চারণ করে বলতে থাকেন, এ হল অমুকের পুত্র অমুকের রূহ। ফেরেশতারা এভাবে প্রথম আসমান পর্যন্ত পৌঁছেন এবং আসমানের দরওয়াজা খুলিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করেন। দরওয়াজা খোলার পরে তারা ঐ রূহ নিয়ে, আরো উর্ধ্বে গমন করেন। এমনি করে তারা সাত আসমান পর্যন্ত পৌঁছে যান আর প্রত্যেক আসমানে নৈকট্যশীল ফেরেশতারা পরবর্তী আসমান পর্যন্ত উক্ত রূহকে পৌঁছে দেন। এভাবে যখন সাত আসমান পর্যন্ত পৌঁছে যায় তখন আল্লাহ পাক এরশাদ করেন ও আমার এ বান্দার নাম ইল্লিয়ীন কিতাবে লেখে দাও এবং তাকে দুনিয়ায় নিয়ে যাও। কেননা আমি মানুষকে জমিন থেকেই সৃষ্টি করেছি এবং সেখানেই তাকে ফিরিয়ে দেব, আর সেখান থেকেই তাকে দ্বিতীয় বার বের করে আনব। অতঃপর রূহ তার দেহে প্রবেশ করান হবে। এর পর দু’জন ফেরেশতা তার নিকট আগমন করবেন। তারা তাকে বসিয়ে প্রশ্ন করবেন : তোমার রব কে? সে উত্তরে বলবেঃ আমার রব আল্লাহ্! পুনরায় তাকে প্রশ্ন করা হবে? তোমার দ্বীন কি? সে বলবে ও আমার দ্বীন ইসলাম। আবার প্রশ্ন করা হবে, এ ব্যক্তি কে–যাকে তোমাদের মাঝে প্রেরণ করা হয়েছিল? সে জবাবে বলবে, তিনি হলেন আল্লাহর রাসূল (ছঃ)। এর পর তাকে প্রশ্ন করা হবে? তোমার আমল কি ছিল? সে বলবে : আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি, তার উপর ঈমান এনেছি এবং তা সত্য বলে একীন করেছি। এর পর একজন ঘোষক আসমান থেকে আওয়াজ দেবেন (যিনি হবেন আল্লাহর নির্ধারিত ঘোষক) : আমার বান্দা সত্য বলেছে; তার জন্য বেহেশতে বিছানা বিছিয়ে দাও। বেহেশতের লেবাস পরিয়ে দাও এবং তার জন্য বেহেশতের দিক থেকে একটি দরওয়াজা খুলে দাও। সে অনুযায়ী বেহেশতের দিক থেকে একটি দরওয়াজা খুলে দেয়া হবে। আর এ দরওয়াজা দিয়ে বেহেশতের আরাম ও সুগন্ধ আসতে থাকবে। এ ছাড়া যতদূর দৃষ্টি যাবে ততদূর তার কবর বড় ও প্রশস্ত করে দেয়া হবে।

এর পর অত্যন্ত সুশ্রী চেহারা বিশিষ্ট, উত্তম পোশাক পরিহিত এবং পবিত্র সুগন্ধ বিশিষ্ট এক ব্যক্তি তার নিকট এসে বলবে : শুভ সংবাদ শুনে রাখ। এ হচ্ছে সেই দিন, যার ওয়াদা তোমার নিকট করা হয়েছিল। সে প্রশ্ন করবে : ভাই, তুমি কে? তোমার চেহারাকে সত্যিকার অর্থেই চেহারা বলা যেতে পারে, প্রকৃত শুভ সংবাদ দেয়া ত তোমার পক্ষেই সম্ভব। সে বলবে : ভাই, আমি তোমার নেক আমল।

অতঃপর সে (খুশী হয়ে) বলবে : হে আমার রব, তুমি কেয়ামত কায়েম কর। প্রভু হে, তুমি কেয়ামত কায়েম কর, যাতে করে আমি আমার পরিবার-পরিজন ও সম্পদের মধ্যে পৌঁছে যেতে পারি (এখানে পরিবার পরিজন বলতে বেহেশতের হুর এবং সম্পদ বলতে বেহেশতের অনাবিল সুখ-সামগ্রী ও নেয়ামত বুঝানো হয়েছে)।–(মেশকাত)

কাফেরদের লাঞ্ছনাঃ

কোন কাফের যখন দুনিয়া থেকে আখেরাতের দিকে যাওয়ার সময়ে উপনীত হয় তখন আসমান থেকে কুৎসিত কালো চেহারা বিশিষ্ট ফেরেশতারা তার নিকট হাজির হয়। তাদের সাথে থাকে ছেঁড়া বিছানা। আর যতদূর তার দৃষ্টি যায় ততদূর পর্যন্ত তারা বসেন। এর পর হযরত আযরাঈল (আঃ) এসে তার মাথার কাছে বসেন এবং বলেন : হে নিকৃষ্ট প্রাণ, আল্লাহর অসন্তুষ্টির প্রতি চলে আস। মালাকুল মওতের এ হুকুম শোনামাত্রই তার রূহ দেহের ভেতর এদিক-ওদিক দৌড়াদৌড়ি করতে থাকে। তখন মালাকুল মওত তার রূহ দেহ থেকে এমনভাবে টেনে বের করেন যেমন করে গোশত ভুনা করার শিক ভিজা পশম থেকে পরিষ্কার করা হয় (অর্থাৎ কাফেরের রূহ এমনভাবে জোর করে বের করা হয় যেমন কাঁটাযুক্ত শিকের উপর জড়ানো ভিজা পশম জোর করে টেনে পরিষ্কার করা হয়)। এর পর মালাকুল মওত ঐ রূহ নিজের হাতে গ্রহণ করেন এবং অন্য ফেরেশতারা চোখের পলকে ঐ রূহ গ্রহণ করে ছেঁড়া নেকড়ায় বেঁধে ফেলে (যা তাদের কাছে আগে থেকেই ছিল)। এ নেকড়া থেকে এমন দুর্গন্ধ বের হবে যা এ দুনিয়ার পচা ও গলিত পূতিগন্ধময় মরা লাশের চেয়ে কোন অংশেই ম হবে না।

ফেরেশতারা ঐ দুর্গন্ধ রূহ নিয়ে আসমানে আরোহণ করবেন এবং ফেরেশতাদের যে দলের সাথেই তাদের দেখা হবে তারা প্রশ্ন করবেন? এ নিকৃষ্ট রূহ কার? তখন তারা ঐ ব্যক্তিকে দুনিয়ায় যে সকল খারাপ নামে ডাকা হত সেগুলো উচ্চারণ করে জবাব দেবেন : অমুকের পুত্র অমুকের রূহ। এমনি করে তারা প্রথম আসমানে পৌঁছে দরওয়াজা খোলার অনুমতি চাইবেন। কিন্তু তার জন্য দরওয়াজা খোলা হবে না। এ প্রসংগে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন :

تفتح لهم أبواب السماء ولا يدخلون الجنة حتى يلج الجمل في

উচ্চারণ : লা–তুফাত্তাহু লাহুম আবওয়াবুস সামা-ই ওয়ালা ইয়াদখুলুনাল জান্নাতা হাত্তা ইয়ালিজাল জামালু ফী সাম্মিল খিয়া-ত।

অর্থ : তাদের জন্য আসমানের দরওয়াজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেয়া হবে না এবং তারা বেহেশতে প্রবেশ করবে না, যে পর্যন্ত না উট সূচের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করবে। (সূরা আরাফ)

বস্তুত উট কখনো সূচের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করতে পারে না। সুতরাং কস্মিনকালেও তারা বেহেশতে যেতে পারবে না।

অতঃপর আল্লাহ্ পাক এরশাদ করবেন? এর নাম সিজ্জীন কিতাবে লিখে দাও। এটা জমিনের সর্বনিম্নে অবস্থিত। তখন তার রূহ সেখানে নিক্ষেপ করা হবে। এর পর হযরত (ছঃ) এ আয়াত তেলাওয়াত করেন :

نه الطبر او تهوی به

بما خرمن السدم

ومن با

الريح في مكان ويق

উচ্চারণ : ওয়া মাই ইউশরিক বিল্লা-হি ফাকাআন্নামা খাররা মিনাস সামা-ই ফাতোয়াখতাফুহুত ত্বইরু আও তাহবী বিহি ররীয়াহু ফী মাকা-নিন সাহীক্ব।

অতঃপর রূহকে তার দেহে ফিরিয়ে দেয়া হয় এবং তার নিকট দু’জন ফেরেশতা আগমন করেন। তারা তাকে বসিয়ে প্রশ্ন করেন : তোমার রব কে? সে বলে : হায় হায়! আমি জানি না। এর পর প্রশ্ন করা হয়, তোমার দ্বীন কি? সে বলে? হায় হায়! আমি জানি না। আবার প্রশ্ন করা হয় ও এ ব্যক্তি কে যিনি তোমাদের মাঝে প্রেরিত হয়েছিলেন? সে বলে : হায় হায়! আমি জানি না। এরূপ প্রশ্নোত্তর হওয়ার পর আসমান থেকে একজন ঘোষক আওয়াজ দেবেন, সে মিথ্যা কথা বলেছে, (অর্থাৎ সে তার রবকে ভালো করেই জানে, কিন্তু তাকে সে মানত না। কোন্ দ্বীন সে অনুসরণ করত তাও সে জানে এবং হযরত মুহাম্মদ (ছঃ)-কে নবী হিসেবে জানত, কিন্তু না সে ইসলামের অনুসরণ করেছে, না হযরত (ছঃ)-কে নবী হিসেবে মেনে চলেছে। তাই সে শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য নিজেকে অজ্ঞ বলে জাহির করছে)। তাই তার নীচে আগুন বিছিয়ে। দাও এবং তার জন্য দোজখের দরওয়াজা খুলে দাও। এর পর দোজখের দরওয়াজা খুলে দেয়া হবে এবং দোজখের উত্তপ্ত লু’ হাওয়া করে আসতে থাকবে। আর কবর এত ছোট ও সংকীর্ণ করে দেয়া হবে যে, তার পাঁজরের হাড়গুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে এবং এক শের হাড় অন্য পাশে চলে যাবে। এর পর তার নিকট খারাপ কাপড় পরা কুৎসিত চেহারার এক লোক আসবে। তার শরীর থেকে ভীষণ দুর্গন্ধ আসতে থাকবে। সে ঐ ব্যক্তিকে বলবে? তোমার জন্য বড় দুঃসংবাদ। এ হল সেদিন যে দিন সম্বন্ধে তোমার নিকট ওয়াদা করা হয়েছিল। সে তখন তাকে বলবে, তোমার চেহারা দুঃসংবাদ শোনাবার জন্য উপযুক্তই বটে। তখন আগত লোকটি বলবে? আমি তোমার বদ আমল। এ কথা শুনে সে (এরূপ চিন্তা করে ভীত হবে যে, কেয়ামতের দিন ত এর চেয়েও কঠিন আযাব ভোগ করতে হবে। তাই) বলতে থাকবে, হে আল্লাহ! তুমি কেয়ামত কায়েম করো না। (মেশকাত শরীফ)

হাদীসের এক বর্ণনায় আছে, যখন কোন মুমিনের রূহ বের হয়ে যায় তখন আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী সকল ফেরেশতা এবং আসমানের সমস্ত ফেরেশতা তার প্রতি রহমত প্রেরণ করেন। তার জন্য আসমানের সমুদয় দরওয়াজা খুলে দেয়া হয়। আর প্রত্যেক দরওয়াজার ফেরেশতারা আল্লাহর নিকট দোয়া করতে থাকেন, তার রূহকে আমাদের নিকট থেকে গ্রহণ করে আসমানে আরোহণ করানো হোক। আর ঐ রূহ কাফেরের হলে তারা বলেন : তার রূহ রগসহ বের করা হোক এবং আসমান জমিনের মধ্যবর্তী স্থানে ও আসমানে অবস্থানকারী সকল ফেরেশতা তার প্রতি অভিশাপ দিতে থাকেন। তার জন্য আসমানের সমুদয় দরওয়াজা বন্ধ করে দেয়া হয়। এ ছাড়া দরওয়াজায় অবস্থানকারী ফেরেশতারা আল্লাহর নিকট দোয়া করতে থাকে তার রূহ আমাদের নিকট থেকে গ্রহণ করে আরোহণ করানো না হোক। (মেশকাত শরীফ)

কবরে মুমিনের নামাযের ধ্যানঃ

হযরত জাবের (রাঃ) বলেন : রাসূলে করীম (ছঃ) এরশাদ করেন : মু’মিন ব্যক্তিকে যখন কবরে দাফন করা হয় তখন তার এমন মনে হয় যে, সূর্য অস্ত যাচ্ছে। তাই যখন তার রূহ ফিরিয়ে দেয়া হয় তখন সে চোখ মুছতে মুছতে উঠে বসে এবং (ফেরেশতাদের নিকট) বলে? আমাকে বিরক্ত করো না; আমি নামায আদায় করছি। (ইবনে মাজা)।

মোল্লা আলী কারী (রঃ) বলেন : ঐ ব্যক্তি তখন নিজেকে দুনিয়াতেই আছে বলে মনে করে এবং বলতে থাকে :রাখ তোমাদের সওয়াল-জওয়াব; আমাকে ফরজ (নামায) আদায় করতে দাও; ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাচ্ছে, আমার নামায ফওত হয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এ কথা সে-ই বলবে যে দুনিয়াতে পাবন্দীর সাথে নামায পড়ত এবং সর্বদাই তার নামাযের প্রতি খেয়াল থাকত।

এ ঘটনা থেকে বেনামাযীদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। তাদের নিজের অবস্থা একবার চিন্তা করা দরকার। তারা ভেবে দেখুক, হঠাৎ যখন তাদের প্রশ্ন করা হবে তখন কীরূপ সমস্যায় পড়তে হবে।

কবরে মু’মিনদের কোন ভয় থাকবে নাঃ

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন : হযরত রাসূলে করীম (ছঃ) বলেছেন : এতে কোন সন্দেহ নেই যে, মৃত ব্যক্তি কবরে পৌঁছেই নির্ভয়ে ও নিশ্চিন্ত অবস্থায় উঠে বসে। তার পর তাকে প্রশ্ন করা হয়; তুমি দুনিয়াতে কোন্ দ্বীন অনুসরণ করেছ? সে উত্তর দেয়, ইসলাম অনুসরণ করেছি। আবার প্রশ্ন করা হয়; যাকে তোমাদের নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল তার সম্পর্কে তোমার কি বিশ্বাস ছিল? সে উত্তরে বলবে ৪ তিনি হচ্ছেন আল্লাহ রাসূল হযরত মুহাম্মদ (ছঃ)। তিনি আমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রকাশ্য মু’জেযা (অলৌকিক ব্যাপার) নিয়ে এসেছিলেন। আমরা ঐগুলো সত্য বলে বিশ্বাস করেছি। অতঃপর তাকে প্রশ্ন করা হবে। তুমি কি আল্লাহকে দেখেছ? সে জবাব দেবে ও দুনিয়ায় কোন লোকই আল্লাহকে দেখতে পারে না।–(তাই আমিই বা কেমন করে তাঁকে দেখব?)

অতঃপর তার সামনে দোজখের দিকের একটি জানালা খুলে দেয়া হবে। এর ভেতর দিয়ে সে দোজখের এ দৃশ্য দেখবে যে, আগুনের লেলিহান শিখাগুলো একটি আরেকটিকে খাচ্ছে। দোজখের এ ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখার পর ফেরেশতারা তাকে বলবেন? দেখ, আল্লাহ্ পাক তোমাকে কীরূপ মসিবত থেকে রেহাই দিয়েছেন। এর পর তার সামনে বেহেশতের দিকের একটি জানালা খুলে দেয়া হবে। এর ভেতর দিয়ে সে বেহেশতের সৌন্দর্য এবং অন্যান্য সুখ সামগ্রী দেখতে পাবে। তার পর তাকে বলা হবে, এ বেহেশতই তোমার ঠিকানা। কেননা, তুমি একীনের সাথে জীবন অতিবাহিত করেছ। একীনের সাথে তোমার মৃত্যু হয়েছে এবং একীনের সাথেই তুমি কেয়ামতের দিন কবর থেকে উঠবে, ইনশাআল্লাহ্।

এর পর বলেন : নাফরমান ব্যক্তি কবরে অত্যন্ত ভীত সন্ত্রস্তভাবে উঠে বসবে। তাকে প্রশ্ন করা হবে, তুমি দুনিয়ায় কোন্ দ্বীনের অনুসরণ করেছ? সে বলবে? আমি বলতে পারি না। তার পর তাকে রাসূলে করীম (ছঃ) সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে, তোমার বিশ্বাস অনুযায়ী তিনি কে? সে উত্তরে বলবে ও তার সম্পর্কে অন্য লোকেরা যা বলত আমিও তা-ই বলেছি। এর পর তার সম্মুখে বেহেশতের দিকের একটি জানালা খুলে দেয়া হবে। সে ঐ জানালার ভেতর দিয়ে বেহেশতের অতুলনীয় সৌন্দর্য এবং তার ভেতরকার নানাবিধ সামগ্রী দেখতে পাবে। তার পর তাকে বলা হবে : তুমি আল্লাহর নাফরমানী করেছ। তাই দেখ, আল্লাহ তোমাকে কি নেয়ামত থেকে বঞ্চিত করে দিয়েছেন! অতঃপর তার সামনে দোজখের দিকের একটি জানালা খুলে দেয়া হবে আর সে তার ভেতর দিয়ে দোজখকে এ অবস্থায় দেখতে পাবে যে, আগুনের শিখা একটি আরেকটিকে খেয়ে ফেলছে। এর পর তাকে বলা হবে, এ হবে তোমার আসল ঠিকানা। তুমি সন্দেহের ভেতর দিয়ে জীবন কাটিয়েছ। সন্দেহের ভেতর দিয়েই তোমার মৃত্যু হয়েছে। ইনশাআল্লাহ্ রোজ কেয়ামতেও তুমি সন্দেহের ভেতর দিয়েই উঠবে।-(মেশকাত শরীফ)

মোনাফেক ও কাফেরদের জন্য জমিন সংকীর্ণ হয়ে পড়বেঃ

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন : আল্লাহর রাসূল (ছঃ) বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে যখন কবরে দাফন করা হয় তখন তার নিকট দু’ জন ফেরেশতা আগমন করেন। তাদের দেহের রং কালো এবং চোখগুলো নীল বর্ণের। তাদের একজনকে বলা হয় মুনকার’ এবং অন্যজনকে বলা হয় নকীর’। তারা উভয়েই তাকে প্রশ্ন করবেন : ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কি বল যাকে তোমাদের নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল? সে মু’মিন হলে উত্তরে বলবে : তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তার রাসূল। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই এবং নিশ্চয়ই হযরত মুহাম্মদ (ছঃ) আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল। এ কথা শুনে ফেরেশতাদ্বয় বলবেন : আমরা জানতাম তুমি এরূপই উত্তরই দেবে। অতঃপর তার কবর ৭০ বর্গহাত প্রশস্ত এবং আলোকিত করে দেয়া হবে। এর পর তাকে বলা হবে, (এখন তুমি) শুয়ে থাক। সে বলবেঃ আমি আমার পরিবারবর্গকে (অবস্থা) জানাবার জন্য যাচ্ছি। তারা বলবেন (এখানে আসার পর যাওয়ার কোন বিধান নেই। তাই) দুলহানের মত শুয়ে থাক, যাকে তার স্বামী ব্যতীত অন্য কেউ জাগাতে পারে না। তাই সে আরামের সাথে কবরে অবস্থান করবে। অবশেষে রোজ কেয়ামতে আল্লাহ্ পাক তাকে জাগিয়ে দেবেন।

মৃত ব্যক্তি মোনাফেক (বা কাফের) হলে মুনকার নকীরের প্রশ্নের জবাবে বলবে ও মানুষকে যা বলতে শুনেছি আমিও তা-ই বলেছি; এর চেয়ে অধিক আমি কিছুই জানি না। তখন ফেরেশতাদ্বয় বলবেন : তুমি কি জবাব দিবে তা আমরা পূর্ব থেকেই জানতাম। এর পর জমিনকে হুকুম দেয়া হবে, তাকে চেপে ধর। জমিন তখন এমন জোরে চেপে ধরবে যে, তার এক দিকের পাঁজরের হাড় অন্য দিকে চলে যাবে। এর পর কবরের মধ্যে নানারূপ আযাব ভোগ করতে থাকবে। এভাবে চলতে চলতে আল্লাহ তাকে একদিন সেখান থেকে উঠিয়ে নেবেন। –(তিরমিযী শরীফ)

উপরোক্ত হাদীসসমূহের মাধ্যমে জানা গেল, ঈমানদাররা কবর জগতে শান্তির ভেতর দিয়ে কাল যাপন করবেন, তাদের হুঁশ-জ্ঞান ঠিকই থাকবে। এমন কি নামাযের প্রতিও তাদের খেয়াল থাকবে। ফেরেশতাদের প্রশ্নের জবাব দিতেও তারা ভয় করবেন না। নিজের ভালো অবস্থা সম্পর্কে ঘরের লোকজনদের সুসংবাদ দেয়ার জন্য ফেরেশতাদের নিকট বলবেন, এখন শুতে যাব না; আগে ঘরের লোকদের নিকট সংবাদ পৌঁছিয়ে আসি এবং তারা নিজেদের শুভ পরিণাম স্বচক্ষে দেখে যারপর নেই খুশী হবে। কেয়ামত তাড়াতাড়ি হওয়ার জন্যও আল্লাহর নিকট প্রার্থনা জানাবে–যাতে করে যথাশীঘ্র বেহেশতে পৌঁছতে পারে।

যার প্রতি আল্লাহ্ দয়া করবেন তার হুঁশ-জ্ঞান অবশিষ্ট থাকবে এবং আল্লাহ্ পাক তাকে সঠিক উত্তর দেয়ার তওফীক দান করবেন। তিনি এরশাদ করেন :

يثبت الله الذين آمنوا بالقول الثابت في الحيواني الدنيا وفي الآخرة–

উচ্চারণ : ইউছাববিতুল্লা-হু ল্লাযীনা আ-মানূ বিলক্বাওলিছ ছা-বিতি ফিল হায়া-তি দদুনইয়া ওয়া ফিলআ-খিরাহ।

অর্থ : আল্লাহু ঈমানদারদেরকে তাদের শক্তিশালী বাণী (অর্থাৎ কালেমা তাইয়েবা)-এর কারণে দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনে শক্তিমান করে দেবেন।–(সূরা ইবরাহীম)

হযরত রাসূলে করীম (ছঃ) এরশাদ করেন : হে ওমর! লোকেরা যখন তোমাকে কবরে রেখে দাফন করে চলে আসবে তখন তোমার অবস্থা কি হবে? এর পর তোমার কাছে কবরে এমন দু’জন পরীক্ষক আসবেন যাদের আওয়াজ হবে কঠোর গর্জনতুল্য আর চোখ হবে দৃষ্টিশক্তি হরণকারী বিজলীর ন্যায়। তারা তোমাকে কঠোরভাবে ডেকে তুলবে এবং সম্রাটের ন্যায় তোমার সাথে কথা বলবে। সে সময় তোমার কি দশা হবে? হযরত ওমর (রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (ছঃ)! সে সময় কি আমাদের জ্ঞান থাকবে? হযরত (ছঃ) এরশাদ করলেন : হাঁ, আজকের ন্যায় তখনও তোমাদের জ্ঞান থাকবে। হযরত ওমর (রাঃ) বললেন! তা হলে আমিই বুঝে নেব।–(তাবরানী ও অন্যান্য শওকে ওয়াতান)

মোমেনের নিকট কবরবাসীর প্রশ্ন–অমুকের অবস্থা কি?

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) এক বর্ণনায় বলেন : হযরত রাসূলে করীম (ছঃ) এরশাদ করেন, ফেরেশতারা মুমিনের রূহ নিয়ে সে সকল মুমিনের রূহের নিকট গমন করেন যারা এর পূর্বে ইন্তেকাল করেছেন। পূর্বে মৃত রূহসমূহ নবাগত রূহকে পেয়ে এতটা খুশী হয় যেমন এ দুনিয়ায় তোমরা কোন নিজেদের কোন নিরুদ্দেশ ব্যক্তিকে পেলে খুশী হও। তারা তাকে প্রশ্ন করে ও অমুক ব্যক্তির অবস্থা কি? অমুক ব্যক্তির খবর কি? পর তারা নিজেরা বলাবলি করতে থাকে? আচ্ছা, এখন থাম। পরে জিজ্ঞেস করে নিও। আর বিরক্ত করো না, তাকে এখন বিশ্রাম করতে দাও। কেননা, দুনিয়াতে সে বড় কষ্টে ছিল। তার পর সে বলতে থাকে? অমুক ব্যক্তির অবস্থা এরূপ। অমুক ব্যক্তির সংবাদ এই। এ ছাড়া তার পূর্বে মারা গেছে এমন কিছু লোকের ব্যাপারে সে বলবে? সে ত আমার আগেই মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে। সে কি তোমাদের নিকট আসেনি? এ কথা শুনে তারা বলবে : (সে দুনিয়া থেকে এসেছে, অথচ আমাদের কাছে আসেনি। তখন) অবশ্য অবশ্যই তাকে দোজখে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। (আহমদ ও নাসাঈ)

কবরবাসীদের সামনে জীবিতদের আমল পেশ করা হয়ঃ

তাবরানীর বর্ণনাতে এ কথাও বলা হয়েছে, হযরত রাসূলে করীম (ছঃ) বলেন : নিশ্চয়ই তোমাদের আমলসমূহ তোমাদের কবরবাসী আত্মীয়-স্বজন এবং খান্দানের লোকজনদের নিকট পেশ করা হয়। তোমাদের আমল নেক হলে তারা খুশী হয় এবং আল্লাহ পাকের নিকট দোয়া করে : হে আল্লাহ! এ হচ্ছে তোমার অনুগ্রহ ও রহমত! তাই তাকে তোমার নেয়ামতসমূহ পুরাপুরি দান করো এবং এরূপ অবস্থার ভেতর দিয়ে তাকে মৃত্যু দান করো। পক্ষান্তরে যদি তোমাদের বদ আমল তাদের নিকট পেশ করা হয় তা হলে তারা বলতে থাকে : হে আল্লাহ, তুমি তার অন্তরে নেক কাজের আগ্রহ সৃষ্টি করে দাও। তাই হবে তোমার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের একমাত্র কারণ।–(শওকে ওয়াতান)

মুমিনের দেহে কবরের চাপ মা সন্তানের মাথা টিপে দেয়ার ন্যায় আরামদায়কঃ

হযরত সাঈদ বিন মুসাইয়াব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত আয়েশা (রাঃ) রাসূলে করীম (সাঃ)-এর নিকট আরজ করেন : হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যখন মুনকার নকীরের ভয়ঙ্কর আওয়াজ ও কবর কর্তৃক চাপ দেয়ার কথা উল্লেখ করেছেন, তখন থেকে আমি কোন কিছুতেই শান্তি পাচ্ছি না, মনের উৎকণ্ঠা পেরেশানী কিছুতেই দূর হচ্ছে না। তখন হযরত রাসূলে করীম (ছঃ) বললেন, হে আয়েশা! মুনকার-নকীরের আওয়াজ মুমিনের কানে সুমধুর সুরের মত আনন্দদায়ক মনে হবে এবং চোখে সুরমা ব্যবহার করলে যেমন আরাম মনে হয় ঠিক সেরূপই লাগবে। আর কবর কর্তৃক মু’মিনকে চাপ দেয়া ঠিক সেরূপ, যেরূপ কারো মাথা ব্যথা হলে তার স্নেহময়ী জননী আস্তে আস্তে তার ছেলের মাথা টিপে দেয় এবং সে তাতে খুব শান্তি অনুভব করে। তাই হে আয়েশা! তুমি স্মরণ রাখ, আল্লাহর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণকারীরা ভীষণ অনিষ্টের সম্মুখীন হবে। তাদেরকে কবরে এমনভাবে চাপ দেয়া হবে যেমন ডিম পাথর দ্বারা পিষে দেয়া হয়।–(শওকে ওয়াতান)।

মুমিনের মৃত্যুতে সমগ্র আসমান-জমিন ক্রন্দন করেঃ

হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন : আল্লাহর রাসূল (ছঃ) বলেছেন : প্রত্যেক লোকের জন্য আমানে দু’টি দরওয়াজা আছে। একটি দিয়ে তার আমল উপরে তুলে নেয়া হয় এবং দ্বিতীয়টি দিয়ে তার রিযিক নাযিল করা হয়। যখন কোন মু’মিন মারা যায় তখন উভয় দরওয়াজা কাঁদতে থাকে।–(তিরমিযী)

হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) রাসূলে করীম (ছঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেনঃ এ কথা নিশ্চিত, একজন মু’মিন মারা গেলে তাকে উপলক্ষ করে গোটা কবরস্থান নিজেকে নিজে সাজিয়ে নেয়। সুতরাং তার এমন কোন স্থান থাকে না যা এরূপ আকাক্ষা করে না যে, ঐ ব্যক্তিকে আমার এখানেই দাফন করা হোক।–(ইবনে আসাকের)

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলতেন : একজন মুমিনের মৃত্যুতে ৪০ দিন পর্যন্ত এ জমিন কাঁদতে থাকে।–(হাকেম প্রভৃতি)।

হযরত আতা খোরাসানী (রঃ) বলতেনঃ যে বান্দা জমিনের কোন স্থানে সেজদা করে সে স্থান রোজ কেয়ামতে তার পক্ষে সাক্ষ্য দেবে এবং তার মৃত্যুর দিন ক্রন্দন করতে থাকবে। -(আবু নোআ’ঈম-শওকে ওয়াতান)

সদকায়ে জারিয়া এবং সন্তান-সন্ততি ও অন্যদের ক্ষমা প্রার্থনার উপকারিতা :

হযরত আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলে করীম (ছঃ) বলেন : একথা নিশ্চিত, মৃত্যুর পরে যে সকল কাজের নেকী মুমিনের নিকট পৌঁছতে থাকে তন্মধ্যে একটি হবে এমন ই’লম’, যা সে বিতরণ করেছে, অথবা নেক আওলাদ রেখে গেছে কিংবা কোন কোরআন পাক উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে গেছে, অথবা কোন মসজিদ নির্মাণ করে গেছে, বা কোন মুসাফিরখানা তৈরী করে গেছে, কিংবা কোন পানির নহরের ব্যবস্থা করে গেছে অথবা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী থাকা অবস্থায় নিজের ধন-সম্পদ থেকে এমন কিছু দান করে গেছে–যার ছাওয়াব মৃত্যুর পরেও পৌঁছতে থাকে। (মেশকাত শরীফ)।

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে এ কথাও বর্ণিত আছে, আল্লাহর রাসূল (ছঃ) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তার নেক বান্দাদের দরজা (মর্যাদা) বেহেশতের মধ্যে বুলন্দ করে দেবেন। সে তখন বলবেঃ হে আল্লাহ্। এ সুউচ্চ দরজা আমি কি করে পেলাম? আল্লাহ্ পাক এরশাদ করবেন? তোমার সন্তান-সন্ততিরা তোমার মাগফেরাত প্রার্থনা করেছে, সে কারণেই তুমি এ সুউচ্চ মর্যাদা লাভ করেছ।–(মেশকাত শরীফ)

অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, রোজ কেয়ামতে কোন কোন ব্যক্তির সাথে পাহাড় পরিমাণ নেকী হবে। সে তা দেখে (বিস্মিত হয়ে) বলবে? এত নেকী আমি কোথায় পেলাম? আল্লাহর পক্ষ থেকে এরশাদ হবে, তোমার সন্তান-সন্ততিরা তোমার ক্ষমার জন্য আবেদন করেছে সে কারণে তোমাকে এসব দান করা হয়েছে)।-(শওকে ওয়াতান)।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছঃ) এরশাদ করেছেন, মৃত ব্যক্তি তার কবরে (পানিতে) নিমজ্জমান ব্যক্তির মতই সাহায্যপ্রার্থী হয়ে থাকে। (তার পর বলেন) সে দোয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। তার মাতা-পিতা ও ভাই বান্ধবদের পক্ষ থেকে যখন কোন দোয়া তার নিকট পৌঁছে যায়, তার নিকট তা সমস্ত দুনিয়া এবং দুনিয়ার মধ্যবর্তী যাবতীয় সম্পদের চেয়ে অধিক মূল্যবান ও প্রিয় বলে পরিগণিত হয়। আর এটা নিশ্চিত, দুনিয়াবাসীদের দোয়ার বরকতে আল্লাহ পাক কবরবাসীদেরকে পাহাড় পরিমাণ ছাওয়াব দান করে থাকেন। আরও নিশ্চিত, মৃতদের জন্য জীবিত ব্যক্তিদের উপহার বা হাদিয়া হল ক্ষমা প্রার্থনা করা। -(মেশকাত শরীফ)

মু’মিনকে মালাকুল মওতের সালামঃ

হযরত আনাস বিন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলে করীম (ছঃ) বলেন : মালাকুল মওত যখন আল্লাহর কোন মকবুল বান্দার নিকট আগমন করেন তখন তাকে সালাম দেন এবং বলেন :

الشم عليكم يا ولي الله قم فاخرج من دارك التي خربتها إلى دايك

التی عمرتها۔

উচ্চারণ : আস-সালামু আলাইকুম ইয়া ওয়ালিয়াল্লা-হু, কুম ফাখরুজ মিন দারিকাল্লাতী খাররাবাহা ইলা–দারিকাল্লাতী আম্মারতাহা-।

অর্থ : হে আল্লাহর বন্ধু! তোমার উপর সালাম। তুমি উঠ। (আর প্রবৃত্তির লালসা বিসজর্ন দিয়ে) যে গৃহ তুমি বরবাদ করেছ তা ছেড়ে আস এবং (এবাদত বন্দেগী করে) যে গৃহ তুমি আবাদ করেছ সে গৃহের দিকে চল।–(শরহে ছুদূর)

 মুমিনের দুনিয়ায় থাকতে অস্বীকৃতি এবং শুভ সংবাদলাভ :

হযরত ইবনে জুরাইজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ)-কে বলেন, (মৃত্যুর সময়) মু’মিন যখন ফেরেশতাদেরকে দেখে তখন ফেরেশতারা তাকে বলেন, আপনি কি পছন্দ করেন যে, আমরা আপনাকে দুনিয়াতে ফেরত পাঠাই এবং আপনার জান কবজ না করি? সে তখন বলবে, আপনারা কি আমাকে দুঃখ দুশ্চিন্তার স্থানে রেখে দিতে চান? আমি এখানে থাকব না। আমাকে আল্লাহ পাকের নিকটে নিয়ে বলুন।-(ইবনে জরীর)

হযরত জায়েদ ইবনে আসলাম (রাঃ) বলেন, মৃত্যুর সময় ফেরেশতারা মু’মিন ব্যক্তির নিকট এসে সুসংবাদ শোনান এবং তাকে বলেন, তুমি যেখানে যাচ্ছ সেখানে যেতে ভয় করো না। এতে তার ভয়-ভীতি চলে যেতে থাকে। তারা তাকে আরও বলবেন, দুনিয়া এবং দুনিয়াবাসীদের থেকে পৃথক হওয়ার কারণে কোন দুঃখ করো না; তুমি জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর। সুতরাং সে এমন অবস্থায় ইন্তেকাল করবে যে, আল্লাহ পাক তার চক্ষু শীতল করে দেবেন।–(ইবনে আবী হাতেম)।

 শহীদদের প্রতি আল্লাহ তা’আলার সম্বোধন :

হযরত মাসরূক (তাবেঈ রঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর নিকট নিম্নোক্ত আয়াতের তাফসীর জানার ইচ্ছা করলাম

ولاتحسبن الذين قتلوا في سبيل الله أمواتا بل أحياء عث

ربهم يرزقون

উচ্চারণ : ওয়ালা তাহসাবান্না ললাযীনা কুতিলূ ফী সাবীলিল্লা-হি আমওয়া-তান বাল আহইয়াউন ইনদা রব্বিহিম ইউরযাকুনা।

অর্থ : আর যাদেরকে আল্লাহ পাকের রাস্তায় হত্যা করা হয়েছে তাদেরকে মৃত মনে করো না; বরং তারা জীবিত, স্বীয় প্রভুর নিকটবর্তী, তাদেরকে রিজিক প্রদান করা হয়।–(সূরা নেসা)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমরা এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে হযরত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বলেন, শহীদের রূহসমূহ সবুজ রংয়ের পাখির দেহ নিয়ে চলে। তাদের জন্য আল্লাহ পাকের আরশের নীচে মোমবাতি ঝুলতে থাকে। ঐ পাখিগুলো বেহেশতের যেখানে ইচ্ছা সেখানে চলাফেরা করতে থাকে। অবশেষে উক্ত বাতিগুলোর মধ্যে এসে অবস্থান করে। আল্লাহ পাক তাদেরকে প্রশ্ন করেন, তোমরা আমার নিকট কী চাও? তারা আরজ করবে, আমাদের চাওয়ার কি আছে, আমরা ত যেখানে ইচ্ছা সেখানেই চলাফেরা করি। এরূপে তিন বার প্রশ্নোত্তর হওয়ার পরে যখন তারা বুঝতে পারবে, যতক্ষণ আমরা কিছু না চাইব ততক্ষণ আল্লাহ পাক এভাবেই প্রশ্ন করতে থাকবেন। তখন তারা আরজ করবে, আমাদের রূহসমূহ আমাদের দেহে ফিরিয়ে দেয়া হোক, যাতে করে দ্বিতীয় বার আমরা তোমার রাস্তায় নিহত হতে পারি। এমনি করে পরোয়ার দিগার যখন তাদের নিকট থেকে জানতে পারবেন, এমন কিছু অবশিষ্ট রাখা হয়নি যা তাদের চাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। আর এ কারণেই তারা এখন দুনিয়ায় ফিরে যাওয়ার প্রার্থনা করছে; অথচ ইন্তেকালের পর পুনরায় দুনিয়াতে পাঠানো আল্লাহ পাকের বিধানের বিপরীত। সুতরাং এর পরে আর তাদেরকে প্রশ্ন করা হবে না।–(মুসলিম)

সবুজ পাখিদের দেহে রূহ প্রবেশ করা শুধু শহীদদের জন্যই নির্দিষ্ট নয়; বরং অন্য মু’মিনদের রূহও ঐসকল পাখির দেহে প্রবিষ্ট হয়ে বেহেশতের মধ্যে বিচরণ করবে। যেমন হযরত কা’ব ইবনে মালেক (রাঃ)-এর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেন

إن أرواح المؤمنين في ظرځضرتعلق بشجر الجنۃ۔

উচ্চারণ : ইন্না আরওয়াহাল মু’মিনীনা ফী তইরিন খুদরিন তালুকু বিশাজারিল জান্নাতি।

অর্থ : একথা নিশ্চিত সত্য যে, ঈমানদারদের রূহ সবুজ পাখিদের মধ্যে থাকে; সেগুলো বেহেশতের বৃক্ষ থেকে পানাহার করে।-(মেশকাত শরীফ)

মোল্লা আলী কারী (রঃ) মেশকাত শরীফের ভাষ্য মেরকাত গ্রন্থে বলেন, এক হাদীসে আছে, নিঃসন্দেহে মু’মিনদের রূহ পাখিদের দেহে প্রবিষ্ট হয়ে বেহেশতের ফল আহার করবে, পানি পান করবে এবং আরশের নীচে সোনার বাতির মধ্যে আরাম করবে।

 শাহাদাত বরণের কষ্ট পিঁপড়ার কামড়ের ন্যায় :

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেন, শহীদ ব্যক্তি নিহত হওয়ার কষ্ট এতটুকু অনুভব করবে যেমন তোমরা পিঁপড়ার কামড়ে সামান্য কষ্ট অনুভব কর।-(মেশকাত শরীফ)

.

কবর আযাবের বিস্তারিত বিবরণ

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদা অনুযায়ী কবর আযাব নিশ্চিত সত্য। কবরে নেককার মু’মিনরা যে ভাবে শান্তি পায় এবং অত্যন্ত খুশীর সাথে কেয়ামত পর্যন্ত অবস্থান করে, ঠিক তেমনি কাফের, বদকার ব্যক্তি কবরে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট ও যন্ত্রণা ভোগ করতে থাকে। বহু হাদীস দ্বারাই এ কথা প্রমাণিত।

একবার হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ)-এর নিকট এক ইহুদী স্ত্রীলোক এসে কবর আযাবের কথা আলোচনা করল এবং বলল

أعاد الله من عذاب القبر.

উচ্চারণ : আআ-যাকিল্লা-হু মিন আযা-বিল কাবরি।

অর্থ : আল্লাহ তোমাকে কবর আযাব থেকে রক্ষা করুন।

এর পর হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছঃ)-এর নিকট এ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন

–Aaji /

 উচ্চারণ : না’আম, আযাবুল কাবরি হাককুন।

অর্থ : হ্যাঁ, কবর আযাব সত্য।

হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) বলেন, এর পর রাসূলে পাক (ছঃ) যখনই নামায আদায় করতেন তখনই কবর আযাব থেকে আল্লাহ পাকের নিকট পানাহ চাইতেন। –(বোখারী ও মুসলিম)

হযরত ওসমান জিন্নুরাইন (রাঃ) যখনই কোন কবরের নিকট দাঁড়াতেন তখন এমনভাবে ক্রন্দন করতেন যে, তাতে পবিত্র দাড়ি (চোখের পানিতে) ভিজে যেত। তাকে প্রশ্ন করা হল, আপনি বেহেশত দোজখের আলোচনার সময়ত কাঁদেন না, কিন্তু কবর দেখে (এমনভাবে) কাঁদেন কেন? হযরত ওসমান (রাঃ) উত্তরে বললেন, রাসূল (ছঃ) বলেছেন, নিশ্চয়ই কবর হল আখেরাতের মঞ্জিলসমূহের প্রথম মঞ্জিল। সুতরাং এ মঞ্জিল থেকে নাজাত পেলে পরবর্তী মঞ্জিলসমূহ এর চেয়েও আসান হয়ে যাবে। আর যদি এখান থেকে নাজাত পাওয়া না যায় তা হলে পরবর্তী মঞ্জিলসমূহ এর চেয়েও কঠিন হয়ে পড়বে।–(তিরমিযী)

কবরে আযাবদানকারী ভয়ানক অজগর :

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) এক বর্ণনায় বলেন, রাসূলে পাক (ছঃ) বলেছেনঃ নিঃসন্দেহে কবরে কাফেরদের জন্য ৯৯টি অজগর নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়। ঐগুলো তাদেরকে কেয়ামত পর্যন্ত দংশন করতে থাকবে। সেগুলোর বিষ এতই মারাত্মক যে, সেগুলোর একটি সাপ জগতের উপর নিঃশ্বাস ছাড়লে এখানে আদৌ কোন উদ্ভিদ জন্মাবে না।-(দারেমী)

অর্থাৎ আলোচ্য অজগরগুলোর বিষক্রিয়া এমন যে, তার একটি অজগরও যদি একবার জগতের দিকে নিঃশ্বাস ছাড়ে তা হলে তার বিষের প্রতিক্রিয়া এমন হবে যে, এ জমিন সামান্যতম ঘাস উৎপাদন করতেও সক্ষম হবে না। আজকাল যুদ্ধাস্ত্র এটম বোম ইত্যাদি দেখে রাসূলে পাক (সঃ)-এর বাণীর মর্ম উপলব্ধি করা একেবারেই সহজ।

কবরে আযাবের কারণে আর্তনাদ এবং লোহার গুর্জ দিয়ে প্রহার :

হযরত বারা ইবনে আযেব (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলে পাক (ছঃ) বলেন, (সওয়াল জওয়াবের সময়) কাফেররা যখন বলবে, হায়! হায়! আমি জানি না। তখন আসমান থেকে এক ঘোষক ঘোষণা করবেন, সে মিথ্যা বলছে? তার নীচে আগুন বিছিয়ে দাও। তাকে আগুনের কাপড় পরিয়ে দাও এবং তার জন্য দোজখের একটি দরওয়াজা খুলে দাও। অতঃপর দরওয়াজা খুলে দেয়া হবে। তখন এ দরওয়াজা দিয়ে দোজখের ভীষণ তাপ ও উত্তপ্ত লু হাওয়া বইতে শুরু করবে, কবর সংকীর্ণ করে দেয়া হবে, ফলে তার এক দিকের পাঁজরের হাড় অন্য দিকে চলে যাবে। এর পর তাকে (প্রতিনিয়ত) আযাব দেয়ার জন্য একজন (আযাবদানকারী)-কে নিয়োেগ করা হবে। এই আযাবদানকারী হবে অন্ধ ও বধির। তার কাছে থাকবে লোহার গদা। এ গদা এমন (ভারী ও মারাত্মক) হবে যে, তা দ্বারা পাথরের উপর আঘাত করলে তা ধুলায় পরিণত হয়ে যাবে। (তঃপর আরো বলেন, ) ঐ গদা দিয়ে একবার মারার সাথে সাথেই ঐ ব্যক্তি ধুলা হয়ে যাবে; অতঃপর পুনরায় তার দেহে রূহ ফিরিয়ে এনে জীবিত করা হবে (দ্বিতীয় বার আঘাত করা হবে। এ ভাবে শাস্তি চলতে থাকবে)।-(আহমদ ও আবূ দাউদ)

বোখারী ও মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায় আছে, গদার আঘাতে সে এত জোরে চিৎকার করতে থাকে যে, জিন ও মানুষ ব্যতীত নিকটবর্তী সব কিছুই তার বিকট চিৎকার শুনতে পায়।

এখানে এরূপ প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক যে, জিন ও ইনসানকে মৃত ব্যক্তিকে এ রূপ প্রহার করার এবং তার চিৎকারের শব্দ শোনান হয় না কেন? এর উত্তর হল (শোনান হলে) জিন ও ইনসানের সাথে কবর জগতের একটি মাধ্যম সৃষ্টি হয়ে যেত। কবর আযাব দেখানো হলে কিংবা সেখানকার বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির চিৎকারের শব্দ শোনান হলে মানুষ অবশ্যই ঈমান আনবে এবং নেক আমল শুরু করে দেবে। অথচ আল্লাহ পাকের নিকট ঈমান বিলগায়েব অর্থাৎ না দেখে বিশ্বাস স্থাপন করাই হচ্ছে গ্রহণযোগ্য। মানুষ কেবল হযরত রাসূলে পাক (ছঃ)-এর কথা শুনে বিশ্বাস করবে ও মেনে নেবে। তারা বুঝতে পারুক বা নাই পারুক, সর্বাবস্থায় তাঁর কথাই মেনে নেবে। সঠিক ও সত্য বলে বিশ্বাস করবে। আর একেই ঈমান বলা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন,

إن الذين يخشون ربهم بالغيب لهم مغفرة واجرکبير

উচ্চারণ : ইন্নাল্লাযীনা ইয়াখশাওনা রব্বাহুম বিলগাইবি লাহুম মাগফিরাতুওঁ ওয়া আজরুন কাবীর।

অর্থ : নিশ্চয়ই যারা তাদের রবকে না দেখেই ভয় করেছে, তাদের জন্য রয়েছে মাগফেরাত এবং বড় পারিশ্রমিক।

যদি বেহেশত দোজখ ও বরজখের (অর্থাৎ কবর জগতের) সমস্ত অবস্থা স্বচক্ষে দেখার সুযোগ দেয়া হয় তা হলে ঈমান বিলগায়েব’ বলতে কিছুই থাকে না; তখন সবাই সব কিছু মেনে নেবে এবং ঈমানদার হয়ে যাবে। কিন্তু আল্লাহ পাকের নিকট চোখে দেখে ঈমান আনাতে কোন সার্থকতা নেই। এ কারণেই ঠিক মৃত্যুর মুহূর্তে ঈমান আনার কোন মূল্য নেই। কেননা ঐ সময় আযাবের ফেরেশতা সামনে এসে যান। যেমন আল্লাহ বলেন,

فلم يك ينفعهم إيمانهم لما راو باسنا۔

উচ্চারণ : ফালাম ইয়াকু ইয়ানফাউ’হুম ঈমা-নুহুম লাম্মা–রাআও বা’সানা-।

অর্থ : তাদের ঈমান তাদের কোন উপকার করতে পারবে না যখন তারা স্বচক্ষে আমার আযাব দেখে নেবে।–(সূরা মু’মেন)।

যখন তারা রোজ কেয়ামতে উঠে দাঁড়াবে এবং বেহেশত দোজখ স্বচক্ষে দেখবে, তখন সবাই ঈমান আনবে এবং রাসূলে পাক (ছঃ)-কে সত্য বলে বিশ্বাস করবে, কিন্তু তখনকার ঈমান সম্পূর্ণরূ অর্থহীন।

মানুষকে কবর আযাব না দেখানো এবং তার আওয়াজ না শোনানোর কারণ এ-ও হতে পারে যে, কোন মানুষই তা সহ্য করতে পারবে না। কেউ যদি কবর আযাবের দৃশ্য স্বচক্ষে দেখে অথবা তার আওয়াজ নিজ কানে শোনে, তা হলে সে অবশ্যই বেহুঁশ হয়ে পড়বে। হযরত আবু সাঈদ (রাঃ)-এর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলে পাক (ছঃ) এরশাদ করেছেন, নাফরমান লোকের লাশ যখন লোকেরা বহন করে নিয়ে যায় তখন সে বলে, হায় আমার সর্বনাশ! এরা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? তার এ চিৎকার একমাত্র মানুষে ছাড়া অন্যান্য সবাই শুনতে পায়। মানুষ যদি এটা শুনতে পেত তা হলে বেহুঁশ হয়ে পড়ত।-(বোখারী শরীফ)।

আল্লাহ পাক কেবল তার রাসূল (ছঃ)-কে কবর জগতের যাবতীয় জিনিসের কথা শুধু জানিয়েই দেননি, বরং দেখিয়েও দিয়েছেন। কেননা, তা বরদাশত করার মত শক্তি তার অবশ্যই ছিল। এমন কি দোজখের দৃশ্যসমূহ দেখার পরেও তিনি স্বাভাবিকভাবেই কথাবার্তা বলতেন, হাসি ঠাট্টা করতেন এবং ছাহারায়ে কেরামের সাথে উঠাবসা ও খানাপিনায় শরীক হতেন। হযরত আবু আইউব (রাঃ) এক বর্ণনায় বলেন, হযরত রাসূলে পাক (সঃ) একবার সূর্য অস্ত যাওয়ার পর মদীনা মোনাওয়ারা থেকে বাইরে গমন করেন। তখন তিনি এক ভয়ঙ্কর আওয়াজ শুনে এরশাদ করলেন; ইহুদীদেরকে তাদের কবরে আযাব দেয়া হচ্ছে।-(বোখারী ও মুসলিম)

হযরত জায়েদ বিন সাবেত (রাঃ) বলেন, রাসূলে পাক (ছঃ) একবার একটি বাগানের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন এবং আমরাও তার পেছনে পেছনে অগ্রসর হচ্ছিলাম। যেতে যেতে হঠাৎ করে তার খচ্চরটি এমনভাবে লাফিয়ে উঠল যেন তিনি পড়েই যাচ্ছিলেন। সেখানে ৫/৬টি কবর ছিল। রাসূলে পাক (ছঃ) তখন আমাদের নিকট জানতে চাইলেন, এ কবরবাসীদেরকে কে চিনে? এক ব্যক্তি আরজ করলেন; হুজুর! আমি তাদেরকে চিনি। হযরত রাসূলে পাক (ছঃ) তাকে প্রশ্ন করলেন, এরা কত দিন হল মারা গেছে? লোকটি বলল, তারা শেরেকের যুগে (অর্থাৎ মোশরেক অবস্থায় মারা গেছে। রাসূলে পাক (ছঃ)-বললেন, এ লোকগুলোকে কবরে আযাব দেয়া হচ্ছে। যদি আমার এরূপ আশংকা না হত যে, তোমরা একে অন্যকে দাফন করা ছেড়ে দেবে, তা হলে কবর আযাবের কিছু অংশ তোমাদেরকে অবশ্যই শোনাতাম, যা আমি নিজে শুনতে পাচ্ছি। –(মুসলিম শরীফ)

 চোগলখোরী এবং পেশাব থেকে অসতর্কতায় কবর আযাব হয়ঃ

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলে পাক (ছঃ) দু’টি কবরের নিকট দিয়ে গমন করার সময় এরশাদ করেন, এ কবরের ব্যক্তিদেরকে আযাব দেয়া হচ্ছে। আর এ আযাব কোন কঠিন কাজের জন্য দেয়া হচ্ছে না; বরং এমন ছোটখাটো কাজের জন্য আযাব দেয়া হচ্ছে যা থেকে তারা সহজেই আত্মরক্ষা করতে পারত।

অতঃপর তিনি (ছঃ) উক্ত দু’জনের গোনাহর ব্যাখ্যা প্রসংগে বলেন, একজন পেশাব করার সময় ঠিকমত পর্দা করতো না। অন্য এক বর্ণনায় আছে, পেশাব থেকে আত্মরক্ষা করত না এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি চোগলখোরী করে বেড়াত। অতঃপর তিনি (ছঃ) একটি তাজা ডাল আনিয়ে তা চিরে দু’ভাগ করলেন এবং এক এক অংশ এক একটি কবরের উপর পুঁতে দিলেন। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, হে আল্লাহর হাবীব! আপনি এরূপ কেন করলেন? হযরত রাসূলে পাক (ছঃ) বললেন, হয়ত এ ডাল না শুকানো পর্যন্ত তাদের আযাব কিছুটা হালকা করে দেয়া হবে।–(মুসলিম শরীফ)।

এর ব্যাখ্যায় কতক ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, তাজা ডাল আল্লাহ পাকের যিকির করবে বিধায় আযাব হালকা হতে পারে, এ আশা নিয়ে হযরত রাসূলে পাক (ছঃ) এরূপ করেছেন।

 কিছু নির্দিষ্ট কাজের জন্য নির্দিষ্ট আযাবঃ

বোখারী শরীফে একটি দীর্ঘ বর্ণনা আছে, তাতে হযরত রাসূলে পাক (ছঃ)-এর একটি স্বপ্নের বিবরণ দেয়া হয়েছে এবং বরজখে বিশেষ বিশেষ আযাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত রাসূলে পাক (ছঃ) বলেন, আমি আজ রাতে স্বপ্নে দেখেছি, দু’জন লোক এসে আমার হাত ধরে এক পবিত্র স্থানের দিকে অগ্রসর হল। হঠাৎ দেখলাম, এক ব্যক্তি বসা এবং আরেক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়ানো ব্যক্তির হাতে রয়েছে লোহার চিমটা। সে তা দ্বারা বসা ব্যক্তির চোয়াল চিরছে, এমন কি গ্রীবাদেশ পর্যন্ত চিরে ফেলছে। এর পর দ্বিতীয় চোয়ালকেও একই রূপ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রথম চোয়াল পূর্ণরূপে জোড়া লেগে যায়। তখন পুনরায় তা ঐরূপ চিরে ফেলা হয়। আমি তখন প্রশ্ন করলাম এ কি ব্যাপার! উভয় ব্যক্তি বলল; সামনে অগ্রসর হোন। আমরা আগে অগ্রসর হয়ে দেখতে পেলাম, এক ব্যক্তি শুয়ে আছে এবং তার মাথার উপর আরেক ব্যক্তি খুব ভারী পাথর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়ানো ব্যক্তি পাথর দিয়ে সজোরে শায়িত ব্যক্তির মাথায় আঘাত করছে আর সাথে সাথেই ঐ পাথর দূরে ছিটকে পড়ছে। পাথর আনতে আনতে ঐ ব্যক্তির মাথা পুনরায় জোড়া লেগে পূর্বে যেমন ছিল তেমনটি হয়ে যাচ্ছে। এরূপে পাথর মারা এবং মাথায় জোড়া লাগা চলছে। এটা দেখে আমি প্রশ্ন করলাম; কী কারণে এমন হচ্ছে? তারা দুজনেই উত্তর দিল; আরো সম্মুখে অগ্রসর হোন। তখন আমরা সম্মুখে অগ্রসর হয়ে এমন এক গর্তের নিকট পৌঁছলাম যা ছিল তন্দুরের ন্যায়। তার উপরের দিক সংকীর্ণ এবং নীচের দিক বেশ প্রশস্ত। ভেতরে আগুন জ্বলছিল। তার মধ্যে ছিল বহুসংখ্যক উলংগ নর-নারী। আগুন যখন উপরে উঠে আসে তখন তারাও উপরে চলে আসতো এবং তাদের বের হয়ে পড়ার উপক্রম হত। আর যখন আগুন কমে যায় তখন তারাও নীচের দিকে চলে যায়। আমি প্রশ্ন করলাম; এর কারণ কী? তারা উভয়ে বলল; আরো আগে চলুন। আমরা সামনে এগিয়ে একটি রক্তের নহরের নিকট পৌঁছলাম। এ নহরের মাঝখানে এক লোক দাঁড়িয়ে আছে এবং নহরের তকবীরে এমন এক লোক দাঁড়িয়ে আছে যার সামনে অসংখ্য পাথর। যখন নহরের মধ্যবর্তী লোকটি নহর থেকে বের হওয়ার জন্য তকবীরের কাছে আসে তখন তকবীরের লোকটি এমন জোরে তার মুখের উপর পাথর মারে যে, তার ধাক্কায় সে পুনরায় নহরের মাঝখানে চলে যায়। এভাবে যখনই সে উঠার জন্য তকবীরের দিকে আসে তখনই মুখের উপরে পাথর মেরে তাকে নহরের মাঝখানে চলে যেতে বাধ্য করা হয়। আমি বললাম; এর কারণ কি? লোক দুইটি বলল, আরো সামনে চলুন। আমরা সামনে এগিয়ে একটি সবুজ শ্যামল সুন্দর বাগানে পৌঁছলাম। সে বাগানে রয়েছে একটি বড় বৃক্ষ এবং তার নীচে রয়েছে একজন বৃদ্ধ ব্যক্তিও অনেক শিশু। ঐ বৃক্ষের নিকটে আর এক ব্যক্তি বসে আছে এবং তার সম্মুখে আগুন জ্বলছে। সে ঐ আগুনে তাপ দিচ্ছে। তার পর তারা উভয়েই আমাকে বৃক্ষের উপরে আরোহণ করাল। বৃক্ষের মধ্যে সুন্দর একখানি গৃহ ছিল। তারা আমাকে সেই গৃহেও প্রবেশ করাল। ঐ গৃহের চেয়ে সুন্দর কোন গৃহ আমি কোন সময় দেখিনি। সে গৃহে অনেক যুবক, বৃদ্ধ স্ত্রীলোক এবং শিশুরা ছিল। এর পর তারা ঐ গৃহ থেকে বের করে আমাকে আরো উপরে নিয়ে গেল। সেখানে এর চেয়েও সুন্দর একখানি গৃহ ছিল। ছিল অনেক বৃদ্ধ এবং যুবক। আমি উভয়কে বললাম, তোমরা আমাকে সমগ্র রাত্র বিচরণ করিয়েছ। এখন বল, এগুলো আমাকে কী দেখালে? এগুলোর ভেদ রহস্য কী? তারা বলল; আপনি যার মাথা চিরে ফেলতে দেখেছেন, সে হল মিথ্যাবাদী; সে মিথ্যা ছাড়া বলত না এবং তার কথাগুলো দুনিয়ায় মশহুর হয়ে যেত। তার সাথে কেয়ামত পর্যন্ত ঐরূপ ব্যবহার করা হতে থাকবে। যার মাথা চূর্ণ বিচূর্ণ করতে দেখেছেন, আল্লাহ পাক তাকে কোরআন পাকের ইলম দান করেছিলেন, কিন্তু রাতে সে তা থেকে উদাসীন হয়ে শুয়ে থাকত এবং দিনে (কোরআন অনুযায়ী) আমল করত না। কেয়ামত পর্যন্ত তাদেরকে ঐভাবেই শাস্তি দেয়া হবে। যাদেরকে আগুনের গর্তের মধ্যে দেখেছেন তারা শুন জেনাকার ব্যভিচারী। যাকে রক্তের নহরের মাঝে দেখেছেন সে হল সুদখোর। গাছের নীচে যে বৃদ্ধ ব্যক্তিকে দেখেছেন তিনি হলেন হযরত ইবরাহীম (আঃ)। তাঁর চার পাশে যে শিশুরা ছিল তারা হল মানুষের অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়েরা। যাকে আগুনে ফুঁ দিতে দেখেছেন তিনি হচ্ছেন দোজখের দারোগা মালেক (আঃ)। আর প্রথম যে গৃহে আপনাকে প্রবেশ করান হয়েছিল সেটি হচ্ছে সাধারণ মুসলমানদের ঘর। আর দ্বিতীয় ঘরটি হচ্ছে শহীদদের। আমি হচ্ছি জিবরাঈল, ইনি হচ্ছেন মিকাঈল। এর পর তারা বললেন; মাথা উপরে তুলুন, আমি মাথা উঠালাম। তখন দেখলাম, আমার উপরে বিরাজ করছে একখানি সাদা মেঘ। তারা বললেন! এটা হল আপনার ঘর। আমি বললাম; আমাকে ছেড়ে দাও; আমি আমার ঘরে প্রবেশ করি। তারা বলল; এখনো আপনার বয়স অবশিষ্ট আছে। এখনো পূর্ণ হয়নি। পূর্ণ হলে ত এখনই ওখানে চলে যেতেন।–(মেশকাত শরীফ)

দ্রষ্টব্যঃ নবী রাসুলদের স্বপ্নও অহী। উক্ত ঘটনাবলী নিশ্চিতরূপেই সত্য। এ হাদীস দ্বারা কয়েকটি বিষয় অবগত হওয়া যায়

(১) মিথ্যার শাস্তি অত্যন্ত কঠিন। (২) আমলহীন আলেমের শাস্তি অতীব মারাত্মক। (৩) জেনার প্রতিফল খুব সাংঘাতিক এবং (৪) সুদের আযাবও ভয়ংকর। আল্লাহ পাক সমস্ত মুসলমানকে এ কাজগুলো থেকে হেফাজত করুন।

 জমিন মৃত ব্যক্তির সাথে কথা বলবেঃ

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) এক বর্ণনায় বলেন; একবার রাসূলে পাক (ছঃ) বাইরে গমন করেন। তিনি দেখলেন, লোকেরা এমনভাবে হাসছে যে, তাদের দাঁতগুলো বের হয়ে পড়ছে। তাদের এ অবস্থা দেখে তিনি বললেন; সতর্ক হয়ে যাও। নিশ্চয়ই তোমরা যদি স্বাদ। আহ্লাদ ধ্বংসকারী মৃত্যুর কথা অধিক পরিমাণে স্মরণ করতে, তা হলে তোমাদেরকে আমি এ অবস্থায় দেখতে পেতাম না। অতএব, তোমরা স্বাদ আহ্লাদ ছেদনকারী মৃত্যুর কথা অধিক মাত্রায় স্মরণ কর। কেননা, কবরের এমন কোন দিন অতিবাহিত হয় না যেদিন তা না বলে, আমি অপরিচয়ের ঘর, নিঃসঙ্গ ঘর, মৃত্তিকার ঘর, পোকা মাকড়ের ঘর। অতঃপর তিনি বলেন; যখন কোন ঈমানদার বান্দাকে দাফন করা হয় তখন তাকে কবর বলে; মারহাবা; তোমাকে স্বাগত জানাই। তুমি নিজের ঘরেই এসেছ। নিশ্চয়ই যারা আমার উপরে চলাফেরা করত তাদের মধ্যে তুমি আমার নিকট অধিক প্রিয় ছিলে।

তাই আজ যখন আমার হাতে তোমাকে সোপর্দ করা হয়েছে এবং তুমি আমার নিকট এসে গেছ, তখন দেখে লও আমি তোমার সাথে কীরূপ ব্যবহার করি। অতঃপর ঐ লোকটির দৃষ্টি যতদূর পৌঁছে ততদূর পর্যন্ত তার কবর প্রশস্ত হয়ে যায়। তার জন্য বেহেশতের দিক থেকে একটি দরওয়াজা খুলে দেয়া হয়। আর যখন বদকার বা কাফের বান্দাকে কবর দেয়া হয় তখন কবর তাকে বলে, এখানে আসাটা কতই না খারাপ। তুমি বড় খারাপ জায়গায় এসেছ। যারা আমার উপর চলাফেরা করত তাদের মধ্যে তুমি ছিলে অভিশপ্ত দুশমন। তাই আজ যখন তোমাকে আমার হাতে সোপর্দ করা হয়েছে এবং তুমি আমার নিকট এসেছ, তখন দেখে লও, আমি তোমার সাথে কীরূপ ব্যবহার করি। অতঃপর করব তাকে এমন জোরে চেপে ধরবে যে, তার ডান পাঁজরের হাড় বাম দিকে এবং বাম পাঁজরের হাড় ডান দিকে চলে যাবে। হযরত রাসূলে পাক (ছঃ) একে এ ভাবে প্রকাশ করেছেন যে, তিনি তাঁর পবিত্র এক হাতের আঙ্গুলগুলো অন্য হাতের আঙ্গুলগুলোর মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছেন। -(মেশকাত থেকে সংগৃহীত)

যারা কবর আযাব থেকে মাহফুজ থাকবেঃ

ফখরে বনী আদম রাসূলে পাক (ছঃ) বলেন; সেই সত্তার কসম যার হাতে রয়েছে আমার প্রাণ। মৃত ব্যক্তিকে কবরে রেখে যখন লোকেরা ফিরে আসে তখন সে তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায়। ঈমানদার হলে নামায তার মাথার দিক থেকে আসে, রোযা আসে তার ডান দিক দেখে, জাকাত আসে বাম দিক থেকে এবং যে সকল নফল কাজ সে করত যেমন ছদকা ও দান খয়রাত, নফল নামায, মানুষের সেবা ও উপকার, সেগুলো আসে পায়ের দিক থেকে। অতঃপর মাথার দিক থেকে যদি আযাব আসে তা হলে নামায বলতে থাকবে; আমার দিক থেকে কোন জায়গা হবে না। ডান দিক থেকে যদি আযাব আসে তা হলে রোযা বলতে থাকবে; আমার দিক থেকে কোন সুযোগ পাবে না। অতঃপর বাম দিক থেকে যদি আযাব আসে তা হলে জাকাত বলতে থাকবে; আমার দিক থেকে কোন স্থান পাবে না। এরূপ পায়ের দিক থেকে যদি আযাব আসতে চায় তা হলে মানব কল্যাণকর কাজ, ছদকা এহসান যা মানুষের প্রতি করা হত তা বলতে থাকবে; আমাদের দিক থেকেও কোন জায়গা পাবে না।–(আততারগীব)

সূরা মুলক এবং আলিফ-লাম-মীম সাজদা যারা পড়েন :

হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে রাসূলে পাক (ছঃ)-এর একজন সাহাবী এক কবরের উপর তাঁবু ফেললেন। তিনি জানতেন না, সেখানে কবর ছিল। তিনি তাঁবুতে বসে হঠাৎ শুনতে পেলেন, তার ভেতরে এক লোক সূরা তাবারাকাল্লাযী বিইয়াদিহিল মুক তেলাওয়াত করছে। সে সম্পূর্ণ সূরাটি পড়ে শেষ করল। উক্ত সাহাবী এ ঘটনা রাসূলে পাক (ছঃ)-এর নিকট পেশ করেন। তিনি শুনে বলেন, সূরা মুলক আযাব প্রতিরোধকারী সূরা–এ সূরা ঐ ব্যক্তিকে আযাব থেকে রক্ষা করছে।–(মেশকাত শরীফ)

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলে পাক (ছঃ) বলেন, নিশ্চয়ই কোরআন পাকে এমন একটি সূরা আছে যাতে ৩০টি আয়াত আছে। তা এমন এক ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করেছে যার গোনাহ ছিল পাহাড় সমান। অতঃপর তিনি বলেন, ঐ সূরাটি হচ্ছে তাবারাকাল্লাযী বিইয়াদিহিল মুলক।–(মেশকাত শরীফ)।

হযরত খালেদ বিন মে’দান তাবেয়ী (রঃ) সূরা তাবারাকাল্লাযী বিইয়াদিহিল মুলক এবং সূরা আলিফ-লাম-মীম সাজদা সম্পর্কে বলতেন, এই সূরা দুটি তার পাঠকারীদের জন্য কবরে আল্লাহ পাকের সাথে বাদানুবাদ করবে এবং প্রতিটি সূরাই বলবে, হে আল্লাহ! আমি যদি তোমার কিতাবের মধ্যে থেকে থাকি তা হলে তার পক্ষে আমার সুপারিশ কবুল কর। আর যদি আমি তোমার কিতাবের মধ্যে না থাকি তা হলে আমাকে তোমার কিতাব থেকে মুছে দাও। হযরত খালেদ বিন মে’দান তাবেয়ী (রঃ) এ কারণে বলতেন, এ সূরা দু’টি পাখির ন্যায় তার পাঠকারীদের উপর ডানা মেলে দেবে এবং তাদেরকে কবর আযাব থেকে রক্ষা করবে। -(মেশকাত শরীফ)

এই উভয় সূরাই কবর আযাব থেকে (পাঠকারীকে) রক্ষা করার যথেষ্ট ক্ষমতার অধিকারী, এ কথা উক্ত বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। সরোয়ারে কায়েনাত রাসূলে পাক (ছঃ) এ সূরা দুইটি না পড়ে কখনো শয়ন করতেন না।–(আহমদ ও তিরমিযী)

দ্রষ্টব্যঃ যেভাবে সূরা আলিফ-লাম-মীম সাজদা এবং সূরা মুলক মানষকে কবর আযাব থেকে বাঁচাতে সক্ষম, ঠিক সেভাবেই চোগলখোরী, পেশাব থেকে সতর্ক না থাকা–এ আমল দুটি অধিকতর কবর আযাবের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

উদরাময় রোগে মৃত্যুবরণকারীঃ

হযরত সুলাইমান বিন সুরদ (রাঃ) বলেন, রাসূলে পাক (ছঃ) বলেছেন; যাকে তার পেট (অর্থাৎ পেটের পীড়া বা উদরাময়) হত্যা করে, তাকে কবর আযাব দেয়া হবে না। -(আহমদ ও তিরমিযী)

পেটের পীড়া কয়েক প্রকার। তার ভেতর থেকে যেটাই কারো মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াক না কেন, তার কোন কবর আযাব হবে না। তার প্রত্যেকটিই হাদীসের বিষয়বস্তুর অন্তর্ভুক্ত। যেমন–কলেরা, শূল বেদনা ইত্যাদি।

জুমু’আর রাতে বা জুমু’আর দিনে মৃত্যুবরণকারীঃ

 হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলে পাক (ছঃ) বলেছেন, যে মুসলমান্ জুমু’আর দিন অথবা জুমু’আর রাতে মৃত্যুবরণ করে, আল্লাহ পাক তাকে কবরের ফেতনা থেকে রক্ষা করবেন।–(আহমদ ও তিরমিযী)

 রমযান মাসে যারা এন্তেকাল করেঃ

হযরত আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলতেন, এ কথা নিশ্চিত, রমযান মাসে মৃত ব্যক্তিদের উপর থেকে কবর আযাব উঠিয়ে নেয়া হয়।

পীড়িত অবস্থায় যারা মারা যায়ঃ

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলে পাক (ছঃ) বলেছেন; রোগাক্রান্ত অবস্থায়। যারা মারা যায় তারা শহীদী মৃত্যুবরণ করে। অথবা তিনি বলেছেন; তাদেরকে কবরের ফেৎনা থেকে বাঁচিয়ে দেয়া হয় এবং সকাল সন্ধ্যা তারা বেহেশতের রিজিক পেতে থাকে। -(মেশকাত শরীফ)

মুজাহিদ, সীমান্তরক্ষী ও শহীদঃ

হযরত মিকদাম বিন মা’দীকারিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলে পাক (ছঃ) বলেছেন; আল্লাহ তা’আলার নিকট শহীদদের জন্য ছয়টি পুরস্কার রয়েছে। যথা

(১) রক্তের প্রথম ফোঁটা (জমিনে) পড়ার সাথে সাথেই তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং বেহেশতে তাদের জন্য যে ঠিকানা রয়েছে তা দেখানো হয়।

(২) তাদেরকে কবর আযাব থেকে হেফাজত করা হয়।

(৩) ভয়ংকর ভীতি থেকে তাদেরকে রক্ষা করা হয় (শিংগায় ফুঁ দেয়ার সাথে সাথেই সমস্ত মানুষ এই ভীতির শিকার হবে)।

(৪) তাদের মাথায় সম্মানের এমন মুকুট পরিয়ে দেয়া হবে যার (এক একটি) ইয়াকুত (পাথর) দুনিয়া এবং দুনিয়ার মধ্যবর্তী সকল সম্পদের চেয়েও মূল্যবান।

(৫) তাদের এক একজনকে বড় বড় চক্ষু বিশিষ্ট ৭২ জন সংগিনী প্রদান করা হবে।

(৬) ৭০ জন আত্মীয় স্বজনের জন্য তাদের এক একজনের সুপারিশ কবুল করা হবে। -(তিরমিযী ও ইবনে মাজা)

হযরত আবু আইউব (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলে পাক (ছঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি দুশমনের সাথে মোকাবিলা করবে এবং দৃঢ়পদ থাকবে; এমনিভাবে (শত্রুর হাতে) নিহত কিংবা বিজয়ী হবে, তাকে কবরে কোন ফেৎনায় ফেলা হবে না।-(নাসায়ী ও তাবরানী)

এক ব্যক্তিকে কবর গ্রহণ করেনিঃ

হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি রাসূলে পাক (ছঃ)-এর (অহীর) লেখক ছিল। সে ইসলাম ত্যাগ করে কাফেরদের সাথে মিলিত হয়। তখন রাসূলে পাক (ছঃ) তার জন্য বদদোয়া করলেন, তাকে জমিন (অর্থাৎ কবর) যেন গ্রহণ না করে। ঐ ব্যক্তি যখন মারা গেল তখন হযরত আবু তালহা (রাঃ) তার কবরের নিকট উপস্থিত হলেন। তিনি তাকে কবরের বাইরে পড়ে থাকতে দেখে বলেন, তার লাশ বাইরে পড়ে আছে কেন? তারা বলল; আমরা ঐ ব্যক্তিকে কয়েকবারই কবরে দাফন করেছি, কিন্তু প্রতিবারই জমিন তাকে বাইরে নিক্ষেপ করেছে। তাই আমরা (নিরুপায় হয়ে) তাকে বাইরেই রেখে দিয়েছি। -(বোখারী ও মুসলিম)

কতক উস্তাদের নিকট আমি (লেখক) এরূপ ঘটনা শুনেছি যে, একজন আলেমের কবর কোন জরুরী কারণবশতঃ খনন করা হয়। তার কবরটি মদীনা মোনাওয়ারায় ছিল। কিন্তু সেই কবরে পাওয়া গেল একটি মেয়ের লাশ। উপস্থিত ব্যক্তিদের কেউ কেউ এ মেয়েটিকে চিনত। সে এক খ্রীস্টানের কন্যা ছিল তা তারা জানত। তারা মেয়েটির মা বাবাকে তার খবর জিজ্ঞাসা করল। তারা উত্তরে বলল, মনের দিক থেকে সে মুসলমান ছিল এবং মদীনা মোনাওয়ারায় মৃত্যু বরণ করার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করত। অতঃপর তারা মেয়েটির কবর খুঁড়ে দেখতে পেল, সেখানে রয়েছে সেই আলেম ব্যক্তির লাশ, মদীনায় যার কবরে মেয়েটির লাশ পাওয়া গেছে। অতঃপর ঐ আলেম ব্যক্তির স্ত্রীর নিকট তার সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সে বলল; তিনি বড় নেককার লোক ছিলেন। তবে মাঝে মাঝে বলতেন, খ্রীস্টান ধর্মে এ বিষয়টি অত্যন্ত সহজ যে, তাদের জন্য (স্ত্রী সহবাসের পর) গোসল করা জরুরী নয়। এ কারণেই তাকে ঐ মেয়েটির কবরে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

বরজখে সকাল সন্ধ্যা বেহেশত বা দোজখ উপস্থাপন :

হযরত আবদুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) বর্ণনা করেন, সরোয়ারে আলম রাসূলে আকরাম (ছঃ) বলেছেন, এটা সুনিশ্চিত, যখন তোমাদের কেউ মারা যায় তখন সকাল সন্ধ্যা তার ঠিকানা (অর্থাৎ শেষ গন্তব্যস্থল) বেহেশত বা দোজখ তার সামনে তুলে ধরা হয়। যদি সে বেহেশতী হয় তা হলে সকাল সন্ধ্যায় তার সম্মুখে বেহেশত। আর যদি দোজখী হয় তা হলে দোজখ তুলে ধরা হয়। এভাবে ঠিকানা দেখিয়ে তাকে বলা হয়, এ হচ্ছে তোমার ঠিকানা। অতঃপর তিনি বলেন; কেয়ামতের সেই দিন পর্যন্ত, যেদিন আল্লাহ পাক তাকে কবর থেকে উঠাবেন, (প্রত্যহ) সকাল সন্ধ্যা এভাবেই চলতে থাকবে।–(বোখারী ও মুসলিম)

 রাসূলে পাক (ছঃ)-এর নিকট উম্মতের আমল উপস্থাপন :

হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলে পাক (ছঃ) বলেছেন; আমার জীবন তোমাদের জন্য উত্তম এবং আমার মৃত্যুও তোমাদের জন্য উত্তম। তোমাদের সমস্ত আমল আমার নিকট পেশ করা হবে। সুতরাং যে ভালো কাজ তোমাদের পক্ষ থেকে আমার নিকট পেশ করা হবে এবং যা আমি দেখব, তার জন্য আমি আল্লাহ পাকের প্রশংসা করব। আর যে মন্দ কাজ আমি দেখব–যা তোমাদের তরফ থেকে পেশ করা হবে, তার জন্য আল্লাহ পাকের নিকট তোমাদের মাগফেরাতের জন্য দোয়া করব।–(জামউল ফাওয়ায়েদ)

রাসূলে পাক (ছঃ)-এর রওজা শরীফের কাছে থেকে যে দুরূদ ও সালাম পেশ করা হয় তা তিনি স্বয়ং শ্রবণ করেন। আর দূর থেকে যে দুরূদ ও সালাম পাঠানো হয় তা ফেরেশতারা তাঁর নিকট পৌঁছে দেন।

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলে পাক (ছঃ) বলেছেন; যে কেউই আমার কবরের কাছে বসে আমার প্রতি দুরূদ পড়বে, আমি তা (সরাসরি) শুনতে পাব; আর যে কেউ দূরে বসে আমার উদ্দেশে দুরূদ পড়বে, তা আমার নিকট পৌঁছে দেয়া হবে।-(বায়হাকী)

হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আছে, রাসূলে পাক (ছঃ) বলেছেন; নিশ্চয়ই আল্লাহ পাকের এমন অনেক ফেরেশতা রয়েছে, যারা সমগ্র জগতে ঘোরাফেরা করতে থাকে (এবং) আমার উম্মতের দুরূদ ও সালাম আমার নিকট পৌঁছে দেয়।-(হাকেম, নাসায়ী)

দুনিয়ার নিয়ম হচ্ছে, উপস্থিত ব্যক্তিরা সামনাসামনি হয়ে সালাম করে থাকে আর যারা দূরে অবস্থান করে তারা ডাকযোগে কিংবা তোক মারফত সালাম পৌঁছিয়ে থাকে। আল্লাহ রব্দুল আলামীন অনুগ্রহ করে এ ধারা জারি রেখেছেন যে, যে মুসলমান তার প্রিয় নবীর উদ্দেশে দূর থেকে সালাম পাঠাবে, তা তিনি ফেরেশতাদের মাধ্যমে তাঁর নিকট পৌঁছিয়ে থাকেন।

এ হাদীসসমূহের মাধ্যমে একথা সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, বরজখে অর্থাৎ কবর জগতে অবস্থান করা সত্ত্বেও উম্মতের সাথে রাসূলে পাক (ছঃ)-এর সম্পর্ক বর্তমান এবং আল্লাহ পাক অনুগ্রহ করে এ উম্মতকে এরূপ মর্যাদা দিয়েছেন। তিনি ফেরেশতাদেরকে এ মহান দায়িত্ব অর্পণ করেছেন যে, তারা উম্মতের সালাম সরোয়ারে কায়েনাত রাসূলে পাক (ছঃ)-এর খেদমতে পৌঁছে দেবে। এই হাদীসসমূহের মাধ্যমে এ কথাও অবগত হওয়া যায় যে, আম্বিয়ায়ে কেরাম (আঃ) তাদের কবরে যদিও জীবিত, কিন্তু সর্বত্র হাজির নাজির নন। আর তারা দূরের কোন কথাও শ্রবণ করেন না। যখন আম্বিয়া (আঃ)-এর ক্ষেত্রে এ কথা সুপ্রমাণিত যে, তারা সর্বস্থানে হাজির নাজির নন এবং সমস্ত আওয়াজ শ্রবণও করেন না, তখন আল্লাহ তা’আলার অলীদের ব্যাপারে এরূপ ধারণা করা সম্পূর্ণরূপেই ভুল এবং বেদআত, যারা রাসূলে পাক (ছঃ)-এর ছাহাবীদের চেয়েও কম মর্যাদার অধিকারী।

.

আম্বিয়ায়ে কেরামের কবর জীবন

আম্বিয়ায়ে কেরাম (আঃ) দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার পরও জীবিত থাকেন। যদিও শহীদদের সম্পর্কে কোরআন পাকে এরশাদ করা হয়েছে, তোমরা তাদেরকে মৃত বলো না, কিন্তু আম্বিয়ায়ে কেরাম (আঃ) সম্পর্কে হাদীস শরীফের বিভিন্ন রেওয়ায়েত (বর্ণনা) দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে, এ জগত থেকে স্থানান্তরিত হওয়ার পর তাঁরা জীবিতই থাকেন। সুপ্রসিদ্ধ হাদীস বিশারদ আল্লামা বায়হাকী (রঃ) এবং বিখ্যাত লেখক আল্লামা সুয়ূতী (রঃ) এ বিষয় সম্পর্কে পৃথক পৃথক গ্রন্থ রচনা করেছেন এবং কবরে আম্বিয়ায়ে কেরামের জীবিত থাকা প্রমাণ করেছেন। আল্লামা সুয়ূতী (রঃ) তাঁর ফতোয়ায় লেখেছেন, রাসূলে পাক (ছঃ) এবং অন্যান্য সমস্ত নবী রাসূলের কবরে যথারীতি জীবিত থাকার অকাট্য দলীল আমাদের নিকট আছে এবং এ সম্পর্কে বহু হাদীসই তার প্রমাণ। ইমাম কুরতুবী (রঃ) তাঁর তাযকেরা’ নামক গ্রন্থে বলেছেন, আম্বিয়া (আঃ)-এর মৃত্যুর সারকথা হল, তাঁদেরকে আমাদের দৃষ্টি থেকে আড়ালে রাখা হয়েছে এবং তাদের অবস্থা আমাদের তুলনায় এমন, যেমন আমাদের তুলনায় ফেরেশতাদের অবস্থা, (ফেরেশতারা অবশ্যই আছেন, অথচ তারা আমাদের ন্যায় নন? তাদেরকে আমরা দেখতে পাই না)। মোহাদ্দেস বায়হাকী (রঃ) বলেন, আম্বিয়ায়ে কেরামের রূহ কবজ করার পরে পুনরায় তা ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে, তাই তারা আল্লাহ পাকের দরবারে শহীদদের মতই জীবিত।

হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলে পাক (ছঃ) বলেন; নবী রাসূলরা জীবিত, নিজ নিজ কবরে তাঁরা নামায পড়েন।-(আবু ইয়ালা)

এ নামায শরীয়ত নির্ধারিত নামায নয়; বরং স্বাদ উপভোগ করার জন্যই তারা এ নামায পড়ে থাকেন।

হযরত আবুদ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলে পাক (ছঃ) বলেন; জুম’আর দিন তোমরা আমার প্রতি অধিক পরিমাণে দুরূদ পাঠাও। কেননা, এ দিনটি হল মাশহুদ’। মাশহুদ এ জন্য বলা হয় যে, এ দিন ফেরেশতারা বেশি পরিমাণে আগমন করেন। (অতঃপর তিনি আরো বলেন, ) নিঃসন্দেহে তোমাদের যে কেউই আমার প্রতি দুরূদ পাঠাবে তা আমার নিকট পেশ করা হতে থাকে, যতক্ষণ সে দুরূদ পাঠাবার কাজে মশগুল থাকে। রাসূলে পাক (ছঃ)-এর নিকট প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহ পাকের রাসূল! মৃত্যুর পরে কি হবে? তিনি (ছঃ) বললেন, মৃত্যুর পরেও আমার নিকট দুরূদ শরীফ পেশ করা হতে থাকবে। কেননা, ঐ জগতে যাওয়ার পরেও আল্লাহর রাসূলরা জীবিত থাকেন। আর সে জীবন শুধু রূহানী (আধ্যাত্মিক) জীবন নয়, বরং তা দৈহিক জীবনই। কেননা, আল্লাহ পাক আম্বিয়ায়ে কেরামের দেহ জমিনের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। সুতরাং আল্লাহর নবীরা জীবিত অবস্থায়ই থাকেন এবং তাঁদেরকে রিযিকও দেয়া হয়।–(ইবনে মাজা)

এ হাদীস দ্বারা জানা যায়, আম্বিয়ায়ে কেরাম এ দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার পর দৈহিক জীবন নিয়েই কবরে জীবিত থাকেন এবং রিযিকও লাভ করতে থাকেন। এ রিযিকও হবে এমন রিযিক যা এ জগতের সাথে সামঞ্জস্যশীল। শহীদদের সম্পর্কেও এরূপ রিযিক লাভের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু আম্বিয়ায়ে কেরামের জীবন ও রিযিকের ব্যবস্থা শহীদদের চেয়ে পূর্ণাংগ ও উন্নত পর্যায়ের। হযরত শাহ আবদুল হক মোহাদ্দেসে দেহলভী (রঃ) মেশকাত শরীফের ভাষ্য পুস্তক আশে’আতুল’ লামেঅ্যাত’ গ্রন্থে এ বিষয়ে যা বলেছেন তার মর্মার্থ হচ্ছে

আম্বিয়ায়ে কেরামের হায়াত এমন একটি মাসআলা, যে সম্পর্কে সবাই একমত; এ বিষয়ে কারোর কোন মতভেদ নেই। আর এ হায়াত দুনিয়ার মত একেবারেই দৈহিক। তাকে রূহানী বা আধ্যাত্মিক হায়াত মনে করার কোন কারণ নেই।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এক বর্ণনায় বলেন, একবার আমরা রাসূলে পাক (ছঃ)-এর সাথে মক্কা ও মদীনার মাঝে সফর করছিলাম। তিনি একটি উপত্যকা সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন, এটি কোন্ উপত্যকা? উপস্থিত ছাহাবীরা জবাব দিলেন, এটি হল আরজাক উপত্যকা। তিনি বললেন; আমি যেন হযরত মূসা (আঃ)-এর প্রতি দেখছিলাম–এ কথা বলে তিনি তাঁর দেহের ও চুলের অবস্থা বর্ণনা করলেন। তার পর বললেন, তাঁকে এ অবস্থায় দেখা যাচ্ছে, তিনি দুটি আংগুল দু’ কানে প্রবেশ করাচ্ছেন ও সজোরে স্বীয় প্রভুর নামে তালবিয়া পাঠ করছেন এবং এ উপত্যকা অতিক্রম করে যাচ্ছেন।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, এর পর আমরা আরো সম্মুখে অগ্রসর হয়ে অন্য একটি উপত্যকায় উপনীত হলাম। এ উপত্যকা সম্পর্কে রাসূলে পাক (ছঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, এ উপত্যকার নাম কি? উপস্থিত ছাহাবীরা উত্তর দিলেন, এটা হল হারশা। অথবা (বললেন, এ উপত্যকার নাম লাফাত। রাসূলে পাক (ছঃ) তখন বললেন, আমি যেন এখানে হযরত ইউনুস (আঃ)-কে দেখতে পাচ্ছি। তিনি লাল উটনীর উপর সওয়ার হয়ে চলেছেন। তাঁর গায়ে রয়েছে পশমী জুব্বা। তার উটনীর লাগাম তৈরি করা হয়েছে গাছের ছাল দিয়ে। তিনিও তালবিয়া পাঠ করতে করতে এ উপত্যকা অতিক্রম করছেন।–(মুসলিম শরীফ)

এ পবিত্র হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়, রাসূলে পাক (ছঃ) হযরত মূসা (আঃ) এবং হযরত ইউনুস (আঃ)-কে জাগ্রত অবস্থায় স্বচক্ষে তালবিয়া পাঠ করা অবস্থায় দেখেছেন। এতে করে জানা যায়, আম্বিয়ায়ে কেরামের কবর বা বরজখী জীবন এমন পূর্ণাংগ ও উচ্চ ধরনের যে, তাঁরা এ দুনিয়াতে চলে আসতে পারেন, হজ্জের অনুষ্ঠানগুলো সম্পন্ন করতে পারেন এবং মানুষের চর্মচক্ষেও তাদেরকে দেখা যেতে পারে। কোন কোন বুযুর্গ থেকে একথা বর্ণিত আছে, তাঁরা রাসূলে পাক (ছঃ)-কে জাগ্রত অবস্থায়ই দেখেছেন, তাদের একথায় মিথ্যার কোন অবকাশ নেই। মে’রাজ শরীফের যে ঘটনা বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে বর্ণনা করা হয়েছে, তাতে এ কথাও আছে, রাসূলে পাক (ছঃ) বলেছেন, আমি হযরত মূসা (আঃ), হযরত ঈসা (আঃ) এবং হযরত ইবরাহীম (আঃ)-কে দাঁড়ানো অবস্থায় নামায পড়তে দেখেছি। এমন সময় নামাযের ওয়াক্ত হয়ে গেল। তখন আমি তাঁদের ইমাম হলাম।–(মুসলিম শরীফ)

ঐ সময় রাসূলে পাক (ছঃ) দুনিয়ার জীবনে এবং যে সকল নবীর তিনি ইমামত করলেন তারা বরজখী জীবনে ছিলেন। হযরত ঈসা (আঃ) যদিও এ দুনিয়াতে নেই, কিন্তু বরজখী জীবনেও নেই; বরং এখনও তার এ দুনিয়ার জীবনই চলছে; তিনি পুনরায় দুনিয়াতে এসে মৃতুবরণ করবেন।

বহু বছর পরেও ওহুদের শহীদের দেহ অক্ষত পাওয়া গেছেঃ

মুয়াত্তায়ে মালেকে বর্ণিত আছে, হযরত আমর বিন জামূহ এবং আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ)-এর কবরের কিছু অংশ পানির স্রোতে ভেংগে যায়। তাঁরা উভয়ই আনসারী এবং ওহুদের যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। তাদের উভয়কে একই কবরে দাফন করা হয়েছিল। পানির স্রোত যখন কবরটিকে গর্ত করে ফেলে তখন অন্য কোন জায়গায় দাফন করার জন্য তাঁদের কবর খোঁড়া হল। তখন তাদেরকে এমন অবস্থায় পাওয়া গেল যে, তাদের দেহের বিন্দুমাত্রও পরিবর্তন হয়নি এবং মনে হচ্ছিল, গতকালই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনা ওহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার ৪৬ বছর পরের।

হযরত মু’আবিয়া (রাঃ) যখন মুসলমানদের আমীর (শাসক) ছিলেন, তখন তিনি মদীনা মোনাওয়ারায় নহর খোদাইয়ের ইচ্ছা করেন, এ নহরের পথে ওহুদের কবরস্থান পড়ে যায়। হযরত মুআবিয়া (রাঃ) তখন ঘোষণা করে দিলেন, জনগণ যেন তাদের আত্মীয় স্বজনদের লাশগুলো উঠিয়ে অন্যত্র দাফন করে দেয়। এ উদ্দেশে লাশগুলো যখন বের করা হল তখন দেখা গেল, এগুলি যে অবস্থায় দাফন করা হয়েছিল ঠিক সে অবস্থায়ই রয়েছে। কবরগু৷ে খোঁড়ার সময় হযরত হামজা (রাঃ)-এর পবিত্র কদমে কোদালের আঘাত লেগে যায় এবং সংগে সংগেই। তাজা রক্ত বের হতে থাকে। এটা হল ওহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার ৫০ বছর পরের ঘটনা। -(সংক্ষেপিত–তাযকেরায়ে কুরতুবী)

শুধু ওহুদ যুদ্ধের শহীদানের ব্যাপারেই নয়, এ উম্মতের বহু মহাপুরুষ সম্পর্কে সীরাত ও ইতিহাস গ্রন্থে প্রমাণ রয়েছে যে, তাদেরকে দাফন করার বহু বছর পরেও দেখা গেছে, তাদের শরীরে বিন্দুমাত্রও কোন পরিবর্তন দেখা দেয়নি। আম্বিয়ায়ে কেরাম সম্পর্কে পবিত্র হাদীস দ্বারা অকাট্যরূপে প্রমাণিত হয়েছে, মাটি তাঁদের পবিত্র দেহসমূহকে তিলমাত্রও গলাতে পারে না। কিন্তু যে ব্যক্তি নবী নয় তাঁকেও আল্লাহ রব্বুল আলামীন যদি (অক্ষত দেহে থাকার) মর্যাদা দান করেন তা হলে তিনি তা অবশ্যই পারেন। কেননা, তাঁর করুণা ও ক্ষমতার কাছে সব কিছুই সম্ভবপর।

.

জান্নাতের বিবরণ

জান্নাত কিসের তৈরি?

سابقوا إلى مغفرة من ربكم وجتم عرضها كعرض الماء

والأرض–

উচ্চারণ : সা-বিকূ ইলা–মাগফিরাতিম মির রব্বিকুম ওয়া জান্না-তিন আরদুহা কাআরদিস সামা-য়ি ওয়াল আরদ্ব।

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর বর্ণনা, তিনি বলেন, আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! জান্নাত কিসের তৈরি?

জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বললেন, (জান্নাতের) একটি ইট স্বর্ণের, একটি-ইট রৌপ্যের, আর এর মসলা হচ্ছে সুতীব্র সুগন্ধময় মেশক। এর পাথরগুলো হচ্ছে মতি ও ইয়াকুতের। এর মাটিগুলো হচ্ছে জাফরানের। যে কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে, চিরকাল সে নেয়ামত ভোগ করবে। কখনো সে কিছুর মুখাপেক্ষী হবে না, অনন্তকাল ধরে জীবিত থাকবে। মৃত্যু হবে না। জান্নাতীদের কাপড়-চোপড় কখনো ময়লাযুক্ত ও দুর্গন্ধময় হবে না। তাদের যৌবন শেষ হবে না।–(আহমদ ও তিরমিযী শরীফ)

জান্নাতের প্রশস্ততাঃ

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরা হাদীদে এরশাদ করেন :

ابقوا إلى مغفرة مر تبكم وجنة عرضها كعرض الشماء والأرض

له ورسله

اعدت للذين آمنا

উচ্চারণ : সা-বিকূ ইলা–মাগফিরাতিম মির রব্বিকুম ওয়া জান্না-তিম আরদুহা কাআরদিস সামা-ই ওয়াল আরদ্বি উইদ্দাত লিল্লাযীনা আ-মানূ বিল্লা-হি ওয়া রুসুলিহী।

অর্থ : তোমরা অগ্রে ধাবিত হও তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে, যা আকাশ ও পৃথিবীর মত প্রশস্ত, এটা প্রস্তুত করা হয়েছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারীদের জন্য।

জান্নাত খুবই বিশাল এক ঠিকানা। এর প্রশস্ততা কি পরিমাণ তা কিছু আন্দাজ করা যায় সবচেয়ে নিম্নমানের জান্নাতী ব্যক্তির ভাগ্যে যা জুটবে তার প্রতি লক্ষ্য করলে।

কোন কোন বর্ণনায় পাওয়া যায়, সবচেয়ে নিম্নমানের জান্নাতী যে হবে, সে এক হাজার বছরের পথ পরিমাণ দূর পর্যন্ত নিজের নেয়ামতরাজি দেখবে।

বর্ণনান্তরে উল্লিখিত রয়েছে, সবচেয়ে নিম্নস্তরের জান্নাতী যে হবে, তার ভাগ্যে যা হবে, তা এ দুনিয়া ও এ ধরনের আরো দশটি দুনিয়ার সমান। এখানে উল্লেখ করতে হয়, এসব কিছু বলা হয়েছে একমাত্র সম্বোধিত ব্যক্তিদেরকে বুঝানোর জন্য।

সূরা হাদীদেই রয়েছে, সাধারণ মানুষের বোধগম্য করে তোলার জন্য জান্নাতের প্রশস্ততাকে আসমান জমিনের প্রশস্থতার সাথে তুলনা করা হয়েছে।

সূরা আলে ইমরানে বলা হয়েছে : ৬১। ৩। L4 1 উচ্চারণ : আরদুহাস সামাওয়া-তু ওয়াল আরদু।

অর্থ : এর প্রশস্ততা হচ্ছে আসমানসমূহ ও জমিনের ন্যায়।

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, উক্ত আয়াতে সামাউন’ একবচনের স্থলে আস-সামাওয়াতু’ বহুবচন বলা হয়েছে। অর্থাৎ, জান্নাতের প্রশস্ততা সমগ্র আসমান জমিনের বরাবর।

 জান্নাতের দুয়ার :

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেন, জান্নাতে শ’ পরিমাণ দুয়ার হবে। সমগ্র সৃষ্টি জগতে এর যে কোন একটি দুয়ার দিয়েই আসা-যাওয়া করতে পারবে।–(তিরমিযী শরীফ)।

হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেন তোমাদের মধ্যে যে কোন মুসলমান ওজু করবে, ভালভাবে পানি ব্যবহার করবে এবং ওজুর পর এ দোয়া পাঠ করবে।

أشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له وأشهد أن محمدا عبده

رد ه وه ورسوله

উচ্চারণ : আশহাদু আল্লা–ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা–শারীকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।

অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনি একক, তার কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, হযরত মুহাম্মদ (ছঃ) তাঁর বান্দা ও প্রেরিত রাসূল।

তা হলে তার জন্যে জান্নাতের আটটি দুয়ারই খুলে দেয়া হবে। যে কোন দুয়ার দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।–(মুসলিম শরীফ)।

উপরোক্ত হাদীস থেকে জান্নাতের আটটি দুয়ারের কথা জানা যায়।

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেন–যে কেউ আল্লাহ রব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি লাভের আশায় আল্লাহর রাস্তায় একই ধরনের দুটি জিনিস  (যেমন, দুটি দেরহাম, দু’টি দীনার, দু’টি টাকা, দু’টি কাপড়) দান করবে, তাকে জান্নাতে এই বলে ডাকা হবে, হে আল্লাহর বান্দা! এটাই উত্তম। যে ব্যক্তি নামাযী ছিল তাকে নামাযের দুয়ার দিয়ে, যে মুজাহিদ ছিল তাকে জেহাদের দুয়ার দিয়ে ডাকা হবে।

সদকার দুয়ার দিয়ে ডাকা হবে তাকে, যে ছিল সদকা-খয়রাতকারী, বাবুর রাইয়ান থেকে ডাকা হবে তাকে, যে ব্যক্তি রোযাদার।

রাসূল (ছঃ)-এর পবিত্র কণ্ঠনিঃসৃত এ বাণী শুনে হযরত আবূ বকর (রাঃ) আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ছঃ)! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কোরবান হোক। এমন সৌভাগ্যবান। কি কেউ হবে, যাকে (সম্মান প্রদর্শনপূর্বক) সকল দুয়ার থেকে ডাকা হবে, যদিও তার প্রয়োজন নেই (কারণ মূল উদ্দেশ্য তো হলো জান্নাতে প্রবেশ করা। আর তা এক দুয়ার দিয়ে প্রবেশ করলেই অর্জিত হয়ে যায়, কিন্তু এর পরও জিজ্ঞেস করছি)।

জবাবে রাসূল (ছঃ) বললেন : হাঁ (অবশ্যই এ ধরনের সৌভাগ্যবান মানুষ হবে)। এমনকি আমি আশা করি তাদের মধ্যে তুমিও হবে একজন।–(তিরমিযী শরীফ)

ফতহুল বারীর রচয়িতা আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রঃ) লেখেন, উপরোক্ত হাদীস থেকে জান্নাতের চারটি দুয়ারের সন্ধান পাওয়া যায়

(১) বাবুস সালাত বা নামাযের দুয়ার।

 (২) বাবুল জেহাদ বা জেহাদের দুয়ার।

(৩) বাবুস সাদাকাহ বা দান-খয়রাতের দুয়ার।

 (৪) বাবুর রাইয়ান বা রোযার দুয়ার।

অতঃপর তিনি আরো লেখেন,

(৫) এটা নিশ্চিত–একটি বাবুল হজ্জ বা হজ্জের দুয়ারও হবে।

(৬) আরেকটি দুয়ার হবে তাদের, যারা নিজেদের গোসসা কমিয়ে রেখেছে। এ বিষয়ে মুসনাদে আহমদে একখানা হাদীসও বর্ণিত হয়েছে।

(৭) আরেকটি দুয়ার হবে, যার নাম বাবুল আইমান–এ দুয়ার দিয়ে হিসাব-নিকাশ ও আযাব ছাড়া তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে, যারা মুতাকওয়াক্কিলীন বা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতি ভরসাশীল হবে।

(৮) বাবুয যিকির বা যিকির আযকারেরও একটি দুয়ার হবে। এ সম্পর্কে তিরমিযী শরীফে একখানা হাদীসে ঈঙ্গিতও করা হয়েছে।

তা ছাড়া এও হতে পারে, অষ্টম দুয়ার বাবুয যিকির না হয়ে বরং বাবুল ইলম বা জ্ঞানের দুয়ার হবে।

তিনি আরো লেখেন, এ-ও হতে পারে, হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর ফাযায়েল (শ্রেষ্ঠত্ব ও বৈশিষ্ট্য) বর্ণনা করতে গিয়ে যেসব দুয়ারের কথা আলোচনা করা হয়েছে, তা জান্নাতের মূল দুয়ারগুলো নয়; বরং এর আভ্যন্তরীণ দুয়ার হবে। কারণ, আমলে সালেহ তথা নেক কর্মের ধরন আটের চেয়ে আরো বেশি। প্রত্যেক নেক আমলের প্রতিদান হিসাবে যদি একটা দুয়ার হয়, তা হলে অনেকগুলো দুয়ার হতে পারে। তাই হতে পারে, আমলে সালেহ বা নেক আমলের দুয়ার দ্বারা আভ্যন্তরীণ দুয়ারগুলো বুঝানো উদ্দেশ্য।

একবার বসরার গভর্নর হযরত ওতবা বিন গাযওয়ান (রাঃ) খুতবা দিতে গিয়ে বললেন তোমরা এমন এক নিশ্চিত জগতের প্রতি অগ্রসর হচ্ছ, যেখান থেকে আর কোথাও যেতে হবে তাই তোমরা এখান থেকেই উত্তম আমল করে নাও। নেক আমলের পুঁজি নিয়ে সেখানে যাও। তার পর বললেন–আমাদেরকে বলা হয়েছে, জান্নাতের দুয়ারগুলোর মধ্যে দুইটি দুয়ারের মাঝে চল্লিশ বছরের দুরত্ব হবে। আর একথা চিরন্তন সত্য যে, এক দিন এমন আসবে, যেদিন জান্নাতে প্রবেশকারীদের ভিড়ের কারণে এত সুবিশাল দুয়ারও সংকীর্ণ হয়ে পড়বে।–(মুসলিম শরীফ)

সহীহ বোখারী ও মুসলিম শরীফের বর্ণনা থেকে জানা যায়, রাসূল (ছঃ) বলেন–ঐ সত্তার কসম, যাঁর ক্বদরতী হাতে আমার প্রাণ, জান্নাতের দুয়ারগুলোর মধ্য থেকে দুটি দুয়ারের মাঝে এত ব্যবধান ও দূরত্ব হবে, যতটুকু দূরত্ব রয়েছে মক্কা ও হেজর শহরদ্বয়ের মাঝে। -(আততারগীব ওয়াততারহীব)

মাজমাউল বিহার’ গ্রন্থকার লেখেন, হেজর’ হচ্ছে বাহরাইনের রাজধানী।

উপরে বর্ণিত উভয় হাদীস থেকেই জান্নাতের দুয়ারগুলোর প্রশস্ততার কথা জানা যায়। প্রথম হাদীসে দু’টি দুয়ারের মাঝে চল্লিশ বছরের ব্যবধানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর দ্বিতীয় হাদীসে মক্কা ও হেজরের মাঝের দূরত্বের সাথে তুলনা করা হয়েছে। উপস্থিত শ্ৰোতৃমণ্ডলীর বোধশক্তি ও তাদের পরিভাষা অনুযায়ী একে সময় একেকভাবে বলা হয়েছে। তাই

একথাই চির সত্য, জান্নাতের দুয়ারগুলোর প্রশস্ততা বিশাল। যেমন স্থান, তেমনি তার দুয়ার।

হযরত সাহল বিন সা’দ (রাঃ)-এর বর্ণনা, রাসূলে করীম (ছঃ) বলেন, অবশ্যই এমন হবে যে, আমার উম্মতের সত্তর হাজার বা (বলেছেন) সাত লাখ সদস্য একে অপরের (হাত) ধরে প্রবেশ করবে। ঐ দলের বা সারির প্রথম ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না এর সর্বশেষ ব্যক্তি তাতে প্রবেশ করবে এখানে একথা বুঝানো উদ্দেশ্য, ঐ দলের সকল সদস্যই এক সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করবে)। তার পর বলেছেন ও তাদের চেহারা এমনভাবে ঝলমল করবে, যেমন আলোয় ঝলমল করে পূর্ণিমার চাঁদ। -(বোখারী ও মুসলিমের উদ্ধৃতি দিয়ে আততারগীব ওয়াততারহীব গ্রন্থে হাদীসখানা বর্ণিত হয়েছে।)

জান্নাতে প্রবেশকারীদের দু’টি দল :

সূরা ওয়াকেআয় জান্নাতে প্রবেশকারীদের তিন দলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কেয়ামতের দিন মানুষ তিন দলে বিভক্ত হবে। যেমন–এরশাদ হয়েছে–

أصحب اليمين يا أختي الميمنة

উচ্চারণ : আসহাবুল ইয়ামীনি ইয়া–আসহা-বুল মাইমানাহ।

(১) অর্থাৎ, ডান হাতওয়ালারা। যাদের আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে।

 ৬৩ () মুকাররাবীন।

(২) অর্থাৎ, আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের বিশেষ নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা, যেমন–নবী রাসূল, ওলী-আওলিয়া ও শহীদরা।

(۳) أحب المال یا آشح المشئمة

উচ্চারণ : আসহা-বুশ-শিমাল ইয়া–আসহাবুল মাশআমাহ।

(৩) বাম হাতওয়ালারা–যাদের আমলনামা বাম হাতে দেয়া হবে।

প্রথমে উল্লিখিত দু’ গ্রুপের মানুষ হবে জান্নাতের অধিবাসী, কিন্তু তাদের মর্যাদায় ব্যবধান হবে। মুকাররাবীন’ যারা, তারা বিশেষ মর্যাদা ও আসনের মালিক হবে। আর যারা আসহাবুল ইয়ামীন’ অর্থাৎ, সাধারণ মুসলমান, তারা মুকাররাবীনের চেয়ে নিম্নস্তরের অধিকারী হবে। আর তৃতীয় গ্রুপ অর্থাৎ, আসহাবুশ-শিমাল’ হচ্ছে দোযখীদের গ্রুপ।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রথমে মুকাররাবীনের প্রতিদানের কথা উল্লেখ করেছেন এবং বলে দিয়েছেন, তাদের মধ্যে একটি বড় গ্রুপ হবে পূর্ববর্তীদের এবং একটি ছোট গ্রুপ হবে পরবর্তীদের মধ্য থেকে। এখানে পূর্ববতী মানুষ’ আর পরবর্তী মানুষ’ কারা–এ সম্পর্কে বয়ানুল কোরআন প্রণেতা হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত হযরত মাওলানা শাহ আশরাফ আলী থানভী (রঃ) লেখেন, পূর্ববর্তী লোকদের দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে মুতাকাদ্দেমীন। অর্থাৎ, হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে রাসূল (ছঃ) পর্যন্ত আগত মানুষগণ। আর পরবর্তী। মানুষ’ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, রাসূল (ছঃ)-এর উম্মত। অর্থাৎ রাসূল (ছঃ)-এর যুগ থেকে নিয়ে কেয়ামত পর্যন্ত আগত অনাগত মুসলমানরা। তার পর তিনি লেখেন, মুতাকাদ্দেমীনের মধ্যে সাবেকীনের সংখ্যা অধিক হওয়া আর মুতাআখখেরীনের মাঝে কম হওয়ার কারণ, বিশেষ নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের সংখ্যা প্রতি যুগেই স্বল্প হয়ে থাকে। বলার অপেক্ষা রাখে না, মুতাকাদ্দেমীনের সময়কাল নিঃসন্দেহে উম্মতে মুহাম্মদী (ছঃ)-এর তুলনায় অনেক দীর্ঘ। আর সেই সুদীর্ঘ সময়ে যারা বিশেষ নৈকট্য লাভ করেছেন তাদের মধ্যে নবী-রাসূলদের সংখ্যাই এক বা দুই লক্ষ অথবা কিছু কমবেশী হবে। তো এ সুদীর্ঘ সময়ের দাবী অনুযায়ী মূলতঃ তাদের সংখ্যা কমই।

বিশিষ্ট মোফাসসেরে কোরআন আল্লামা ইবনে কাসীর (রঃ) আউওয়ালীন’ ও, আখেরীন’-এর উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে ভিন্ন কথা বলেছেন।

মুকাররাবীন (আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নৈকট্যপ্রাপ্ত বিশেষ) বান্দাদের প্রতিদান কি হবে, তা পবিত্র কোরআনের বর্ণনা থেকেই জেনে নেই। আল্লাহ পাক এরশাদ করেন :

لئك المقربون–في جنت النعيم–ثلة

السابقون–اول

من–على سررموضونة متكئين عليها

و–وقليل من الاخره

، واباريق–وكأس من

متقبلين–يطوف عليهم ولدان مخلدون

ايتخيرونولحم

معين لا يصدعون عنها ولاينزفون

طيرما يشتهون–وحوري كامثال الؤلوء المتوني–جزاء ما كانوا

يمون–لايشمعون فيها كثوا ولا تايما إلا قيد لاما سلاما–

উচ্চারণ : ওয়াস সাবিকূনাস সা-বিকুনা, উলা-ইকাল মুকারবাবুনা, ফী জান্না-তিন নাঈ’মি, ছুল্লাতুম মিনাল আউওয়ালীনা ওয়া কালীলুম মিনাল আ-খিরীন, আলা–সুরুরিম মাওদূনাতিম মুত্তাকিঈনা আলাইহা–মুতাক্বা-বিলীনা। ইয়াতুফু আলাইহিম–ওয়িলদা-নুম মুখাল্লাদূনা বিআকওয়াবিওঁ ওয়া আ-বা-রীকা ওয়া কাসিম মিম মাঈ’নিল লা–ইউছদ্দাউ’না আনহা–ওয়ালা–ইউনযিফূনা ওয়া ফাকিহাতিম মিম্মা ইয়াতাখাইয়ারূনা, ওয়া লাহমি ত্বইরিম মিম্মা—ইয়াশতাহুনা, ওয়া হুরুন ঈনুন কাআমছা-লিল লু’লূইল মাকনূন, জাযা-আম বিমা–কা-নূ ইয়ামালূনা, লা–ইয়াসমাউনা ফীহা–লাগওয়াওঁ ওয়ালা–তাছীমান ইল্লা–কীলান সালা-মান সালা-মান-।

অর্থ : অগ্রবর্তীরা তো অগ্রবর্তীই। তারাই নৈকট্যশীল, আরামের উদ্যানসমূহে, তারা একদল পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে এবং অল্প সংখ্যক পরবর্তীদের মধ্য থেকে, স্বর্ণখচিত সিংহাসনে। তারা তাতে হেলান দিয়ে বসবে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে। তাদের কাছে ঘোরাফেরা করবে চির কিশোেররা, পানপাত্র কুঁজা ও খাঁটি সূরাপূর্ণ পেয়ালা হাতে নিয়ে, যা পান করলে তাদের শিরঃপীড়া হবে না এবং বিকারগ্রস্তও হবে না। আর তাদের পছন্দমত ফলমূল নিয়ে এবং রুচিমত পাখীর মাংস নিয়ে। তথায় থাকবে আনতনয়না হুরগণ, আবরণে রক্ষিত মোতির ন্যায়, তারা যা কিছু করত তার পুরস্কার স্বরূপ। তারা তথায় কোন অবান্তর ও খারাপ কথা শুনবে না। কিন্তু শুনবে সালাম আর সালাম।

এর পর আসহাবুল ইয়ামীন’ বা ডান হাতে যাদের আমলনামা দেয়া হবে তাদের আলোচনা করতে গিয়ে পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে

واضح اليمين ط ما أحب اليمين د في في ستر څوړه وطلح منضوي وظل ممدوير وماء مشك فاكهة كثيرة مقطوعة ولا ممنوعة فرش مرفوعة داثا أنشأنه إنشاء فجعلئهن أبكارا عربا اترابا لأصحب اليمين ط ثلة من الأولين وثلة من الأخرين

উচ্চারণ : ওয়া আসহাবুল ইয়ামীনি মা–আসহাবুল ইয়ামীনি, ফী সিদরিম মাখদূদিওঁ ওয়া ত্বলহিম মানদুদিওঁ ওয়া যিল্লিম মামদূদিওঁ ওয়া মা-ইম মাসককূবিওঁ ওয়া ফাকিহাতিন কাসীরাতিল লা–মাক্বতু আতিওঁ ওয়ালা–মামনূআতিওঁ ওয়া ফুরুশিম মারফুআতিন, ইন্না আনশা’না-হুন্না ইনশা-আন ফাজাআলনা হুন্না আবকা-রান উরুবান আতরা-বাল লিআছ্হা-বিল ইয়ামীনি ছুল্লাতুম মিনাল আউওয়ালীনা ওয়া ছল্লাতুম মিনাল আ-খিরীনা।

অর্থ : যারা ডান দিকে থাকবে তারা কত ভাগ্যবান। তারা থাকবে কাঁটাবিহীন বদরিকা বাগানে এবং কাঁদি কাঁদি কলায়, এবং দীর্ঘ ছায়ায় এবং প্রবাহিত পানিতে ও প্রচুর ফলমূলে, যা শেষ হবার নয় এবং নিষিদ্ধও নয়, আর থাকবে সমুন্নত শয্যায়। আমি জান্নাতী রমণীদেরকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদেরকে করেছি চিরকুমারী, কামিনী, সমবয়স্কা, ডান দিকের লোকদের জন্য। তাদের একদল হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য থেকে এবং একদল হবে পরবর্তীদের মধ্য থেকে।

এর পর পবিত্র কোরআনুল করীমে আসহাবুশ শিমাল বা দোযখবাসী ও তাদের শাস্তির আলোচনা করা হয়েছে।

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা একথা বুঝানো উদ্দেশ্য নয় যে, মুকাররাবীনকে প্রতিদান হিসাবে যেসব নেয়ামত দেয়া হবে তা থেকেআসহাবুল ইয়ামীন’কে বঞ্চিত করা হবে, আর আসহাবুল ইয়ামীনের প্রতিদান হিসাবে যেসব নেয়ামতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তা মুকাররাবীনের ভাগ্যে জুটবে না; বরং এর বিপরীত হবে। অর্থাৎ, নেয়ামতরাজির মধ্যে এসবই অন্তর্ভুক্ত হবে। চির কিশোর, চির কুমারী, জাম ও শরাব এবং ফলমূল ইত্যাদি সবই সকলের ভাগ্যে জুটবে।

তবে একথা চিরন্তন সত্য যে, মুকাররাবীন ও আসহাবুল ইয়ামীনের মাঝে মর্যাদার দিক থেকে বিভিন্ন ধরনের পার্থক্য থাকবে। আর এদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে পবিত্র কোরআনের এ বিশেষ উপস্থাপন রীতি অবলম্বন করে।

নামাযের হিসাব এবং নফলের উপকারিতাঃ

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন : আমি রাসূলুল্লাহ (ছঃ)-কে বলতে শুনেছি ও নিঃসন্দেহে কেয়ামতের দিন বান্দার আমলের মধ্যে নামাযের হিসাবই সর্বপ্রথম গ্রহণ করা হবে। এ হিসাব সঠিকভাবে দিতে পারলেই সে হবে সফলকাম। নতুবা ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে তার ফরজে কোন ঘাটতি থাকলে রাহমানুর রহীম আল্লাহ তখন বলবেন : দেখ, আমার বান্দার কোন নফল আছে কিনা? কোন নফল থাকলে তা দ্বারা তার ফরজের ঘাটতি পূরণ করা হবে। অনন্তর নামাযের মতই অন্যান্য আমলের হিসাব গ্রহণ করা হবে। এক বর্ণনায় আছে, নামাযের পর যাকাতের হিসাব, তার পর অন্যান্য আমলের হিসাব নেয়া হবে।-(মেশকাত শরীফ)

যারা বিনা হিসাবে বেহেশতে যাবেনঃ

হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ থেকে বর্ণিত, রাসূলে করীম (ছঃ) বলেন, রোজ কেয়ামতে সমস্ত মানুষকে একই ময়দানে একত্র করা হবে। তখন একজন আহ্বানকারী উচ্চৈঃস্বরে আহবান করে বলবে? সে সকল লোক কোথায় যাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে পৃথক থাকত? (তারা রাতে নামাযে মশগুল থাকত।) এ আহ্বান শুনে এ গুণের অধিকারী লোকেরা সমবেত লোকদের ভেতর থেকে দাঁড়িয়ে যাবে। এদের সংখ্যা হবে অত্যন্ত কম। এ সমস্ত লোক বিনা হিসাবে বেহেশতে প্রবেশ করবে। অতঃপর অন্য লোকদের হিসাব শুরু করার হুকুম দেয়া হবে। -(বায়হাকী)

হযরত আবু উমামা (রাঃ) বলেন : নবী করীম (ছঃ) বলেছেনঃ আমার রব ওয়াদা করেছেন, তোমার উম্মতের ভেতর থেকে সত্তর হাজার ব্যক্তিকে বেহেশতে প্রবেশ করান হবে। তাদেরকে কোন আযাব দেয়া হবে না। এদের প্রতি হাজারের সাথে আরো সত্তর হাজার এমন ব্যক্তিকেও বেহেশত দেয়া হবে যারা একইরূপ মর্যাদার অধিকারী হবে। এছাড়া আমার প্রভু নিজ অঞ্জলি ভরে তিন অঞ্জলি পরিমাণ লোককে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন।

শাফা’আত সংক্রান্ত এক হাদীসে আছে, নবী করীম (ছঃ) বলেন : আমি আরশের নীচে আল্লাহ্ পাকের সামনে সেজদায় পড়ে থাকব। তার পর আল্লাহ পাক তার এমন হামদ তারীফের কথা আমাকে বলে দেবেন যা তিনি ইতঃপূর্বে কখনো আমাকে বলেননি। এর পর আমাকে লক্ষ্য করে এরশাদ করবেন : ওগো মুহাম্মদ! তুমি মাথা তোেল এবং তোমার যা কিছু চাওয়ার আমার কাছে চাও; আমি তোমাকে দেব। তুমি শাফাআত (সুপারিশ) কর, আমি তোমার শাফাআত কবুল করব। আমি তখন মাথা তুলব এবং আল্লাহর নিকট আরজ করব : প্রভু হে! আমার উম্মতদেরকে ক্ষমা করে দিন। তখন আমাকে বলা হবে : ওগো মুহাম্মদ! তোমার সে সকল উম্মত, যাদের কোন হিসাব কিতাব হবে না–তাদেরকে বেহেশতের ডান দিকের দরজাগুলো দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করাও। অতঃপর নবী করীম (ছঃ) বলেন : যার হাতে আমার প্রাণ সেই পবিত্র সত্তার নামে কসম করে বলছি; বেহেশতের দরজাগুলো এতদূর প্রশস্ত যে, তার দুই প্রান্তের মধ্যবর্তী দূরত্ব মক্কা ও হেজরের মধ্যবর্তী দূরত্বের সমান (হেজর মক্কা শরীফ থেকে অনেক দূরে অবস্থিত একটি শহরের নাম)।

সহজ হিসাব :

হযরত আয়েশা (রাঃ) এক বর্ণনায় বলেন : আমি একবার এক নামাযে নবী করীম (ছঃ)-কে এরূপ দোয়া করতে শুনেছি–

اللهم حاسبني جابا يسيرا

ده

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা হাসিবনী হিসা-বাই ইয়াসীরা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমার সহজ হিসাব নিও। আমি আরজ করলাম : হে আল্লাহর নবী! সহজ হিসাব’-এর অর্থ কি? তিনি বললেন : সহজ হিসাব’ হল, আমলনামার প্রতি শুধু একটি বার তাকিয়ে ক্ষমা করে দেয়া হবে (সামান্য মাত্রও পড়ে দেখা বা পর্যালোচনা করা হবে না)। এ কথা অনস্বীকার্য, দেখে শুনে পর্যালোচনা করে যার হিসাব নেয়া হবে সে নিশ্চিতরূপেই ধ্বংস হয়ে যাবে।-(আহমদ)।

কঠিন হিসাবঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) এক বর্ণনায় একথাও বলেন, নবী আকরাম (ছঃ) বলেছেন : কেয়ামতের দিন যার নিকট থেকে সত্যিকার অর্থে হিসাব গ্রহণ করা হবে, সে নিশ্চিতরূপেই ধ্বংস হয়ে যাবে। নবী করীম (ছঃ)-এর এ কথা শুনে আমি আরজ করলাম : হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ্ পাক ত ঘোষণা করেছেন :

فسوف يحاسب حسابا يسيرا

উচ্চারণ : ফাসাওফা ইউহা-সাবু হিসা-বাই ইয়াসীরা।

অর্থ : (যার ডান হাতে আমলনামা দেয়া হবে) তার নিকট থেকে সহজ হিসাব গ্রহণ করা হবে।

এ আয়াত দ্বারা জানা যায়, কতক হিসাব প্রদানকারী এমনও হবেন যারা নাজাত লাভ করবেন। তখন নবী করীম (ছঃ) এ প্রশ্নের উত্তরে বললেন : সহজ হিসাবের’ অর্থ কখনো সে হিসাব নয় যার পর্যালোচনা ও চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হবে; বরং সহজ হিসাবের’ অর্থ–বান্দার সামনে তার আমলনামা একবার মাত্র পেশ করা হবে, কিন্তু যার হিসাব পর্যালোচনা করা হবে, ধ্বংসই হবে তার অনিবার্য পরিণতি।

ঈমানদারদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ :

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেন : নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক রোজ কেয়ামতে ঈমানদারদেরকে কাছে টেনে নেবেন এবং (হাশরের ময়দানে উপস্থিত লোকদের দৃষ্টি থেকে আড়ালে রেখে) প্রশ্ন করবেন? তোমার অমুক গোনাহ্র কথা মনে পড়ে কি? অমুক পাপের কথা স্মরণ করতে পার কি? সে আরজ করবে ও হাঁ, মনে পড়ে, হে আমার প্রভু! এমনি করে আল্লাহ পাক তার গোনাহ্র কথা তাকে দিয়ে স্বীকার করিয়ে নেবেন। তখন তার এরূপ নিশ্চিত বিশ্বাস জন্মাবে, হায় রে! আমি ত ধ্বংস হয়ে গেলাম। তখন আল্লাহ পাক বলবেন : ওগো বান্দা! আমি দুনিয়াতে তোমার পাপগুলো ঢেকে রেখেছিলাম, প্রকাশ হতে দেইনি। শুনে রাখ, আমি তোমার ঐ গোনাহগুলো মাফ করে দিলাম। অতঃপর নেক কাজের আমলনামা তার হাতে প্রদান করা হবে। কিন্তু কাফের ও মোনাফেকদেরকে সেদিন অনাবৃত করে দেয়া হবে। সমস্ত মাখলুকের সামনে তাদের সম্বন্ধে উচ্চ স্বরে ডেকে বলা হবে : এরা হল ঐ সমস্ত লোক যারা রাব্বুল আলামীন সম্পর্কে শুধু মিথ্যা কথাই বলেছে। সাবধান হয়ে যাও; সীমালংঘনকারী পাপীদের উপর আল্লাহর লানত।–(বোখারী, মুসলিম)

কোন মাধ্যম ব্যতিরেকেই আল্লাহকে উত্তর দিতে হবেঃ

হযরত আদী ইবনে হাতেম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলে করীম (ছঃ) বলেন : তোমাদের মধ্যে এমন কেউই হবে না, আল্লাহ্ পাক হিসাব গ্রহণের সময় যার সাথে কোন কথাবার্তা বলবেন না। এ কথাবার্তার সময় বান্দা এবং তার রবের মাঝে কোন মাধ্যম, কোনরূপ আড়াল বা পর্দার ব্যবস্থা থাকবে না। এ সময় বান্দা যখন ডান দিকে তাকাবে তখন তার আমলনামা ব্যতীত অন্য কিছুই দেখতে পাবে না। যখন বাম দিকে তাকাবে তখন প্রথম থেকে সে যা কিছু প্রেরণ করেছে কেবল তা ছাড়া অন্য কিছুই দেখবে না। আর যখন সে সামনের দিকে তাকাবে তখন শুধু দোজখই দেখতে পাবে। অতঃপর নবী করীম (ছঃ) বলেন : অতএব তোমরা দোজখ থেকে বাঁচ–যদিও (আল্লাহর রাস্তায়) এক টুকরা খেজুর দান করে হোক।-(বোখারী, মুসলিম)

কারো প্রতি জুলুম করা হবে নাঃ

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে :

کنتم تعملون

تظلم نفس شيئا ولا تجزون

فاليوم لا تا

উচ্চারণ : ফালইয়াওমা লা–তুলামু নাফসুন শাইয়াওঁ ওয়ালা–তুজযাওনা ইল্লা–মা কুনতুম তামালূন।

অর্থ : সেদিন কোন প্রাণীর উপর জুলুম করা হবে না, তোমাদের শুধু সেসব কাজেরই প্রতিফল দেয়া হবে যা তোমরা (দুনিয়ায়) করতে।

আল্লাহ পাক আরো বলেন :

مثقال ذرة شرا يره

و ذرة خيرا يره ومن يعمل

فمن يعه

উচ্চারণ : ফামাই ইয়া’মাল মিছক্কা-লা যাররাতিন খাইরাই ইয়ারাহু ওয়া মাই ইয়ামাল মিছক্কা-লা যাররাতিন শাররাই ইয়ারাহ।

অর্থ : যে ব্যক্তি (দুনিয়ায়) অণু পরিমাণ ভালো কাজ করবে (আখেরাতে) সে তা দেখতে পাবে এবং যে ব্যক্তি (দুনিয়ায়) অণু পরিমাণ মন্দ কাজ করবে (আখেরাতে) সে তা দেখতে পাবে।

আল্লাহ্ পাক আরো এরশাদ করেনঃ

اليوم تجزى كل نفس بما كسبت مد ظلم اليوم إن الله سريع

الحساب–

উচ্চারণ : আল-ইয়াওমা তুজযা–কুলু নাফসিম বিমা–কাসাবাত; লা–যুলমা লইয়াওমা ইন্নাল্লা-হা সারী’উল হিসাব।

অর্থ : আজ প্রত্যেককেই তার আমলের প্রতিফল দেয়া হবে। আজ কারো প্রতি জুলুম করা হবে না, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।

 বেহেশতে সর্বপ্রথম প্রবেশ করবে উম্মতে মুহাম্মদীঃ

মুসলিম শরীফে আছে, রাসূলে করীম (ছঃ) বলেন, আমরা দুনিয়ায় এসেছি পরে, কিন্তু রোজ কেয়ামতে সকল সৃষ্টির আগে আমাদের বিচার করা হবে। তিনি আরো বলেছেন : আমরা দুনিয়ায় এসেছি সবার পরে, কিন্তু রোজ কেয়ামতে আমরা হব প্রথম এবং সবার আগে আমরাই বেহেশতে প্রবেশ করব।-(মেশকাত শরীফ)

অন্য এক হাদীসে নবী পাক (ছঃ) বলেছেন : বেহেশতীদের কাতার হবে একশ’ বিশটি। তার মধ্যে আশিটি কাতারই আমার উম্মতের; আর বাকী চল্লিশটি কাতার হবে অন্যান্য উম্মতের।-(মেশকাত)

বেহেশতে যেতে ধনীদেরকে হিসাবের জন্য আটক করা হবেঃ

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন : গরীব লোকেরা ধনীদের চেয়ে পাঁচশ’ বছর আগে জান্নাতে গমন করবে।–(তিরমিযী)

রাসূলুল্লাহ (ছঃ) আরও বলেছেন : আমি বেহেশতের দুয়ারে দাঁড়িয়ে দেখতে পেলাম, বেহেশতে যারা প্রবেশ করছে তাদের মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে গরীব লোক। আর ধনীরা তাদের ধন-দৌলতের হিসাব দেয়ার জন্য আটকে রয়েছে। কিন্তু জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার হুকুম দেয়া হয়ে গেছে। আমি জাহান্নামের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখলাম, জাহান্নামের অধিকাংশই হচ্ছে মহিলা।–(বোখারী ও মুসলিম)

উপরোক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, ধনী ব্যক্তিরা বেহেশতে প্রবেশ করবে দেরীতে। অথচ গরীবরা তাদের পাঁচশ’ বছর আগেই বেহেশতে পৌঁছে যাবে।

আজ দুনিয়াতে দরিদ্রতাকে যদিও কষ্টকর বলে মনে হয়, কিন্তু দরিদ্রতা যে কত মূল্যবান, রোজ কেয়ামতে তা উপলব্ধ হবে। তবে স্মরণীয়, শুধু দরিদ্রতাই বেহেশতে নিয়ে যাবে না; বরং (দরিদ্রতার সাথে) নেক আমলও করতে হবে। নেক আমল থাকলেই ধনীরা যে ক্ষেত্রে পরে যাবে, সে ক্ষেত্রে দরিদ্ররা তাদের চেয়ে আগে বেহেশতে যেতে সক্ষম হবে। কোন লোক আমল না করে শুধু দরিদ্র বলেই বেহেশতে চলে যাবে–এমন ধারণা কখনো ঠিক নয়। দরিদ্রদের জন্য সৌভাগ্য শুধু এটাই যে, তারা ধন-দৌলতের হিসাব দেয়ার জন্য আটকে থাকবে না। অন্যান্য আমল ঠিক থাকলে তারা বিনা বাধায় বেহেশতে চলে যাবে। কিন্তু যারা দুনিয়াতে দরিদ্র অবস্থায় জীবন যাপন করে কষ্ট ভোগ করল এবং আল্লাহর নাফরমানী করার দরুন পরকালেও জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে, তারা বড়ই হতভাগা। তারা উভয় জাহানেই ক্ষতিগ্রস্ত। রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেন : সবচাইতে দুর্ভাগা ঐ লোক, যে দুনিয়াতে দরিদ্রতার কষ্ট ভোগ করেছে আর পরকালে আযাব ভোগ করবে।–(তারগীব)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) এরশাদ বলেছেন : মানুষ যখন রোজ কেয়ামতে একত্র হবে তখন ঘোষণা করা হবে, এ উম্মতের গরীব-মিসকীনরা কোথায়? অতঃপর তাদেরকে প্রশ্ন করা হবে : তোমরা কি আমল করেছ? উত্তরে তারা বলবে, হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে দারিদ্রতা দিয়ে পরীক্ষা করেছেন; আমরা সবর করেছি। আপনার প্রতি খুশী থেকেছি। আর আপনি অন্যদেরকে ধন-দৌলত ও ক্ষমতা দিয়েছেন। তখন আল্লাহ পাক বলবেন, হাঁ, তোমরা ঠিকই বলেছ। অতঃপর তারা বেহেশতে চলে যাবে। আর ধনী ব্যক্তিরা ধন-দৌলতের হিসাব দেয়ার জন্য থেকে যাবে। সাহাবায়ে কেরাম প্রশ্ন করলেন? হে আল্লাহর রাসূল! মোমেনরা তখন কোথায় থাকবে? তিনি বললেন : তাদের জন্য নূরের কুরসী (চেয়ার) রাখা হবে। তাদের উপর মেঘরাশি ছায়া দান করবে। (তখন) বিরাট বড় দিন একটি দিনের সামান্য অংশের চেয়েও ছোট মনে হবে।

অধিকাংশ মহিলা ও ধনী জাহান্নামে প্রবেশ করবেঃ

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন ও রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেন, আমি বেহেশতের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম, সেখানকার অধিকাংশ লোকই গরীব ও অভাবগ্রস্ত এবং জাহান্নামের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, সেখানকার অধিকাংশই ধনী এবং মহিলা।-(তারগীব)।

এক বর্ণনায় রয়েছে, প্রিয়তম রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি জান্নাতে গিয়ে সেখানে মর্যাদার আসনে সমাসীন দেখলাম দরিদ্র মুহাজিরীন ও মু’মিনদের নাবালেগ শিশু কিশোরদেরকে। পক্ষান্তরে জান্নাতে সম্পদশালী ও নারীদের সংখ্যা ছিল খুবই নগণ্য। তখন আমাকে বলা হলো, গেটে সম্পদশালীদের হিসাব নেয়া হচ্ছে, পরিচ্ছন্ন পবিত্র করা হচ্ছে। আর মহিলাদেরকে (দুনিয়ার জীবনে) স্বর্ণ ও রেশম (আল্লাহ ও আল্লাহর দ্বীন থেকে) গাফেল রেখেছে। তাই এখানে তাদের সংখ্যা কম।–(তারগীব)।

সম্পদ অত্যন্ত বিপজ্জনক বস্তু। তা হালাল পন্থায় অর্জন করা, অতঃপর আল্লাহ রাব্দুল আ’লামীন ও তাঁর বান্দাদের অধিকার আদায় করা এবং অন্যায় পথে খরচ না করা খুবই কঠিন কাজ। এক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষই ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। তা ছাড়া সম্পদ হলে পরে নিজের চাহিদা, সন্তান সন্ততির আবদার, দুনিয়াবী রীতি নীতি ও চাল চলনের কাছে হার মেনে অন্যায় পথে তা ব্যয় করা হয়। সঠিক হিসাব নিকাশ করে অধিকাংশ মানুষই জাকাত দেয় না। হাজারো মানুষ এমন রয়েছে, যাদের উপর হজ্জ ফরজ হওয়া সত্ত্বেও তা সম্পাদন না করেই মৃত্যুবরণ করে। তা ছাড়া সম্পদশালীদের জন্য গুনাহের অনেক সুযোগ সৃষ্টি হয়, যাতে তারা অন্যায়ভাবে সম্পদ নষ্ট করে। জাহান্নামে সম্পদশালীর সংখ্যা বেশি হবে এবং হিসাব নিকাশের জন্য তারা আটকা পড়বে, এ কোন আশ্চর্যের বিষয় নয়।

জাহান্নামে মহিলাদের সংখ্যাও বেশি হবে। তারা কেন জাহান্নামে যাবে, এই মাত্র তা হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে। তা হলো, তারা দুনিয়ার জীবনে রেশম আর স্বর্ণের পেছনে পড়ে আল্লাহ রব্বুল আলামীন থেকে গাফেল ছিলো। একথা কে স্বীকার না করে যে, মহিলাদের মধ্যে অলংকার ও কাপড় চোপড়ের লোভ বেশি থাকে? কাপড় চোপড় ও অলংকারাদির জন্য এরা স্বামীকে হারাম উপার্জনের জন্য শুধু উৎসাহিতই নয়, কেউ কেউ বাধ্যও করে থাকে। অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরুষরা সুদ, ঘুষ বা এ জাতীয় পথে অর্থ উপার্জনের জন্য তাদের স্ত্রীরা মূল কারণ হয়ে থাকে। কোন এক অনুষ্ঠানে হয়তো তারা এক সেট কাপড় পরিধান করে গেছে। সে কাপড় পরিধান করে আবার নতুন কোন অনুষ্ঠানে যেতে লজ্জাবোধ করে। স্বামীর কাছ থেকে নতুন আরো এক সেট কাপড় আদায় করে নিতে চায়। অলংকারাদি ব্যবহার করে কখনো গরমের বাহানায় গলা খুলে রেখে অন্যদেরকে দেখায়, কখনো ডিজাইনের বিষয়ে আলোচনা হলে নিজের অলংকারগুলো সবচেয়ে উন্নত ও নতুন ডিজাইনের প্রমাণিত করার জোর চেষ্টা করে। নিজের অলংকারাদি ও পোশাক-আশাক নিয়ে বড়াই করে। এটা মহিলাদের অভ্যাস। এ দেখানোর প্রবণতা নিঃসন্দেহে অনেক বড় ধরনের এক গুনাহ।

প্রিয় রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে নারী অন্যকে দেখানোরর উদ্দেশে অলংকার ব্যবহার করবে, তার জন্য রয়েছে আযাব।-(মেশকাত শরীফ)

হারাম পথে উপার্জিত অর্থ দ্বারা যে অলংকারের ব্যবস্থা করা হয় তার জন্য আযাবের সম্মুখীন হতে হবে, একথা সুস্পষ্ট। কিন্তু হালাল টাকা দ্বারা যে অলংকারে ব্যবস্থা করা হয়, তার জাকাত যেমন স্ত্রী দেয় না, তেমনি স্বামীও আদায় করে না। তা আখেরাতে ধ্বংস ও আযাবের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

সহীহ বোখারী ও সহীহ মুসলিম শরীফে এ ধরনের একটি বর্ণনা রয়েছে। জনৈক মহিলা রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! জাহান্নামে মহিলারা বেশি যাবে কেন?

জবাবে তিনি বললেন, তোমরা বেশি বেশি অভিশাপ করে থাক এবং স্বামীর কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর না।–(মেশকাত শরীফ)

জান্নাতীদেরকে জাহান্নাম আর জাহান্নামীদেরকে জান্নাত দেখানো হবেঃ

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাকে জাহান্নামের সে ঠিকানা অবশ্যই দেখানো হবে। যা পাপ করলে তার জন্য নির্ধরিত হতো, যেন সে বেশি কৃতজ্ঞতা আদায় করে। অনুরূপ যে কেউ জাহান্নামে প্রবেশ করবে, তাকে তার জন্য নির্ধারণক্বত জান্নাতের ঠিকানা অবশ্যই দেখানো হবে, নেক কাজ করলে যে ঠিকানা তার ভাগ্যে জুটতো, যেন তার আফসোস আরো বৃদ্ধি পায়।–(বোখারী শরীফ)

জান্নাত জাহান্নাম উভয়ই ভরে দেয়া হবেঃ

পবিত্র কোরআনুল করীমের সূরা কাফ-এ আল্লাহ পাক এরশাদ করেন

يوم نقول لجهنم هل امتلئت وتقول هل من مزید۔

উচ্চারণ : ইয়াওমা নাকুলু লিজাহান্নামা হালি মতালাতি ওয়া তাকুলূ হাল মিম্মাযীদ।

অর্থাৎ (স্মরণ কর সে দিনের কথা) যেদিন আমি জাহান্নামকে জিজ্ঞেস করব, তুমি কি ভরপুর হয়েছ? তখন সে বলবে (হে প্রভু)! আরো আছে কি?

হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, জাহান্নামীদেরকে যখন জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, তখন জাহান্নাম বলতে থাকবে, আরো আছে কি? এমনকি শেষ পর্যন্ত আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজের কদম মোবারক তার উপর রাখবেন, তখন তা ভরপুর হয়ে যাবে এবং বলবে; ইয়া আল্লাহ! আপনার ইয্যত সম্মানের কসম, আর লাগবে না, বস! বস!!

জান্নাতে জায়গা খালি থাকবে। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নতুন মাখলূক সৃষ্টি করে জান্নাতের ঐ শূন্যস্থান পূরণ করবেন।–(বোখারী ও মুসলিম শরীফ)

অন্য এক হাদীসে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জান্নাত জাহান্নাম উভয়কে পরিপূর্ণ করে দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন।–(মেশকাত শরীফ)

জাহান্নামেও শূন্যস্থান থাকবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তা নতুন মাখলূক দ্বারা পূর্ণ করবেন। কারণ, এ নতুন মাখলূক তো হবে নির্দোষ। সুতরাং নির্দোষদেরকে দিয়ে জাহান্নাম ভর্তি করা হলে এটা হবে স্পষ্ট জুলুম। পক্ষান্তরে নতুন মাখলূক সৃষ্টি করার পর তাদের দ্বারা জান্নাতের শূন্যস্থান পূরণ করা হবে। জনৈক বুজুর্গকে বলা হয়েছিল, তা হলে তারাই তো খুব ভাল, যাদেরকে আল্লাহ পাক সৃষ্টি করেই জান্নাতে দিয়ে দেবেন।

জবাবে সেই বুজুর্গ বললেন, আরে সে কি আরাম পাবে, সে তো দুনিয়ায় আসেনি। দুনিয়াবী দুঃখ কষ্ট ও বিপদাপদের সম্মুখীন হয়নি। প্রকৃত আরাম ও সুখ তো সেই পুরোপুরি। অনুভব করে, দুঃখ কষ্টের পর যার তা ভাগ্যে জুটেছে।

জাহান্নামীদের পরিমাণঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হযরত আদম (আঃ)-কে সম্বোধন করে বলবেন, হে আদম! তখন তিনি আরজ করবেন

البيك وسعيديك والخير كله في يديك

উচ্চারণঃ লাব্বাইকা ওয়া সা’দাইকা ওয়াল খাইরু কুলুহু ফী ইয়াদাইকা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি হাজির, আপনার হুকুম পালনের জন্য আমি প্রস্তুত, সকল কল্যাণ একমাত্র আপনার হাতেই।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলবেন, (তোমার সন্তানদের মধ্যে) যারা জাহান্নামী তাদেরকে বের করে দাও।

হযরত আদম (আঃ) বলবেন, ইয়া আল্লাহ! জাহান্নামীদের সংখ্যা কত? আল্লাহ রাব্দুল আলামীন বলবেন, প্রতি হাজারে নয়শ’ নিরানব্বই জন। (একথা শুনে আদম সন্তানরা খুবই পেরেশান ও চিন্তিত হয়ে পড়বে, এমনকি তাদের এ অকল্পনীয় চিন্তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে) তখন শিশুরা ক্ষণিকের মধ্যেই বৃদ্ধ হয়ে পড়বে। গর্ভবতী নারীরা গর্ভপাত করবে। মানুষ বেহুঁশ হয়ে যাবে। প্রকৃতপক্ষে তারা বেহুঁশ হবে না। কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আযাব সুকঠিন।

উপরোক্ত আলোচনা শুনে সাহাবায়ে কেরাম ভীত হয়ে রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! হাজারের মধ্যে একজন–ঐ সৌভাগ্যবান জান্নাতী ব্যক্তিটি আমাদের মধ্যে কে হবে?

রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা পেরেশান হয়ো না, নিশ্চিন্ত থাক। কারণ, হাজারে নয়শ’ নিরানব্বই জন হবে ইয়াজুজ মাজুজ থেকে, আর একজন হবে তোমাদের মধ্য থেকে।–(মেশকাত শরীফ)।

এখানে একথা বুঝানো উদ্দেশ্য যে, ইয়াজুজ মাজুজের সংখ্যা এত বেশী, যদি তোমাদের আর তাদের মধ্যে গণনা করা হয়, তা হলে তোমাদের একজনের মোকাবিলায় তাদের সংখ্যা হবে এক হাজার। আর তারাও যেহেতু হযরত আদম (আঃ)-এর বংশধর, তাই তাদেরকে মিলিয়ে হাজারে নয়শ’ নিরানব্বই জন যাবে জাহান্নামে। উল্লেখ্য, এ ইয়াজুজ মাজুজের দল হচ্ছে পৃথিবীতে ফেতনা ফাসাদ সৃষ্টিকারী আল্লাহর নাফরমান সম্প্রদায়।

কেয়ামতের দিনের পরিমাণঃ

কেয়ামতের দিন খুবই লম্বা হবে। হাদীস শরীফে এর পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর বলা হয়েছে।–(মেশকাত শরীফ)

অর্থাৎ, প্রথম বার শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার পর থেকে জান্নাতবাসীরা জান্নাতে আর জাহান্নামবাসীরা জাহান্নামে যাওয়া পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময় হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের। এত বড় দিন মোশরেক, কাফের ও মোনাফেকদের জন্য খুবই কঠিন হবে। আর ঈমানদার বান্দাদের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তা সহজ করে দেবেন। তাই হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে, রাসূলে করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ঐদিন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছরের হবে, ঐ সুদীর্ঘ দিনটি কাটবে কি করে?

জবাবে তিনি এরশাদ করেন, ঐ সত্তার কসম, যার হাতে আমার জান, নিঃসন্দেহে ঐ দিনটি ঈমানদার বান্দাদের জন্য এতই সহজ হবে যে, দুনিয়ার জীবনের ফরজ নামায আদায় করার চেয়েও হাল্কা হবে।–(মেশকাত শরীফ)

মুহূর্তের মধ্যে তা অতিক্রান্ত হয়ে যাবে। ভয়াবহতা বিভীষিকা না থাকার কারণে পেরেশানীও হবে না।

মৃত্যুর মৃত্যু :

মোশরেক, কাফের ও মুনাফেকরা অনন্তকাল ধরে জাহান্নামে অবস্থান করবে। সেখানে তারা কখনো মরণের সম্মুখীন হবে না। তাদের শাস্তিও হাল্কা করা হবে না।

এ প্রসঙ্গে কোরআনের সূরা ফাতিরে বলা হয়েছে

او ر س م موتوا ولا يخفف

والذين كفرو

ار جهنم لا يقضى عليهم  

۸ و نه رم ۸ م

عنهم من عذابها ط كذالك نجزي كل كفوره

উচ্চারণ : ওয়াল্লাযীনা কাফারূ লাহুম না-রু জাহান্নামা লা–ইউক্বদ্বোয়া–আলাইহিম ফাইয়ামূত্ ওয়ালা–ইউখাফ্ফাফু আনহুম মিন আযা-বিহা; ক্বাযা-লিকা নাজয়ী কুল্লা কাফুর।

অর্থ : আর যারা কাফের তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে জাহান্নামের আগুন, তাদের কোন শেষ ফয়সালা হবে না, তারা মৃত্যুবরণ করবে না এবং তাদের থেকে জাহান্নামের আযাবও হাল্কা করা হবে না; কাফেরদেরকে আমি এভাবেই সাজা দিয়ে থাকি।

গুনাহগার মুসলমান যারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে, তাদেরকে শাস্তি প্রদানের পর জান্নাতে স্থান দেয়া হবে। তার পর তারা অনন্তকাল ধরে জান্নাতেই থাকবে। কখনো সেখান থেকে তাদেরকে বের করা হবে না। সেখানে তাদের কারো মুত্যু আসবে না। সেখান থেকে তাদেরকে বের করা হবে না, আর তারা নিজেরাও বের হতে চাইবে না।

خلدين فيها يبقون عنها حولا ۔

উচ্চারণ : খালিদীনা ফীহা–লা–ইয়াবগূনা আনহা হিওয়ালা।

অর্থ : তথায় (জান্নাতে) তারা চিরকাল থাকবে, তা ছেড়ে যেতে চাইবে না।

হযরত আবদুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন (সকল) জান্নাতী জান্নাতে আর (সকল) জাহান্নামী জাহান্নামে পৌঁছে যাবে, তখন তাদের সামনে মৃত্যুকে উপস্থিত করে জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে এনে যবেহ করা হবে। তখন একজন ঘোষক সুউচ্চ কণ্ঠে ঘোষণা করবে, হে জান্নাতবাসীরা! এখন থেকে আর কোন মৃত্যু নেই। হে জাহান্নামবাসীরা! এখন থেকে আর কারো মৃত্যু হবে না। এ ঘোষণা জান্নাতীদের আনন্দ আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে। বৃদ্ধি করবে দোযখীদের দুঃখ কষ্টের পরিধি (সহীহ বোখারী ও মুসলিমের উদ্ধৃতি দিয়ে মেশকাত শরীফে হাদীসখানা বর্ণিত হয়েছে)।

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূরা মারইয়ামের নিয়োক্ত আয়াত তেলাওয়াত করলেন

Assly উচ্চারণ : ওয়া আনযির হুম ইয়াওমাল হাসরাতি।

অর্থ : আর আপনি তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করুন আফসোস সম্পর্কে।

তার পর উক্ত আয়াতে উল্লিখিত হাসরত বা আফসোসের তাফসীর প্রসঙ্গে বললেন, (দেহ ও আক্বতি দিয়ে) মৃত্যুকে উপস্থাপন করা হবে। গঠনের দিক থেকে তার আক্বতি সাদা ব্যঙের মতো হবে। তাতে কালো দাগও থাকবে এবং জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী দেয়ালের উপর খাড়া করা হবে। তার পর জান্নাতবাসীদেরকে আওয়াজ দিয়ে বলা হবে, হে জান্নাতবাসীরা! আওয়াজ শুনে তারা আহবানকারীর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করবে। আবার আওয়াজ দেয়া হবে, হে জাহান্নামবাসীরা! এ ডাক শুনে তারাও আহ্বানকারীর প্রতি তাকাবে। তার পর জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীদের কাছে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমরা কি একে চিন? জবাবে সকলেই বলবে হাঁ, এ তো মৃত্যু। তার পর এখন থেকে আর কোন মৃত্যু থাকবে না–তাদেরকে একথা জানানোর জন্য (দেহধারী) মৃত্যুকে শুইয়ে যবেহ করা হবে। (তখন জান্নাতবাসীদের আনন্দ বহুগুণ আর জাহান্নামবাসীদের দুঃখ কষ্ট আরো বহুগুণ বেড়ে যাবে)। জান্নাতবাসীরা অমর। তারা আর কখনো মৃত্যুবরণ করবে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে যদি এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হতো, তা হলে সে সময় জান্নাতবাসীদের আনন্দের কারণে তারা নিশ্চিত মৃত্যুবরণ করতো।

অনুরূপ জাহান্নামবাসীদের জন্যও যদি অমরত্বের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হতো, তা হলে তারাও তাদের দুঃখ কষ্ট সীমাহীন বেড়ে যাওয়ায় নিশ্চিত মৃত্যুবরণ করতো।–(তিরমিযী শরীফ)

.

আরাফবাসীরা

জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীদের মাঝখানে একটি প্রাচীর রয়েছে। ঐ প্রাচীর অথবা এর উচ্চাংশের নাম হচ্ছে আ’রাফ। এখানে সেসব মুসলমানকে অস্থায়ীভাবে কিছু কালের জন্য রাখা হবে, যাদের নেকী ও বদী সমান সমান হবে। আরাফের উপর থেকে এসকল লোক জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীদেরকে দেখতে পাবে। তাদেরকে চিনবে এবং উভয় গ্রুপের মানুষের সাথেই এরা কথাবার্তা বলবে। যার বিস্তারিত আলোচনা পবিত্র কোরআন করীমের সূরা আ’রাফে এভাবে করা হয়েছে

بسيمهم وادوا

وبينهما جاب على الأعراف رجال يعرفون أضحت اللجنة أن سلام عليكم لم يدخلوا وهم يطمعون

উচ্চারণ : ওয়া বাইনাহুমা–হিজাবুন ওয়া আলাল আ’রাফি রিজালুই ইয়া’রিফুনা কুল্লাম বিসীমাহুম ওয়া না-দাও আসহাবাল জান্নাতি আন সালা-মুন আলাইকুম লাম ইয়াদখুলুহা ওয়া হুম ইয়াতমাউন।

অর্থ : উভয়ের (জান্নাত জাহান্নামের) মাঝখানে একটি প্রাচীর এবং আরাফের উপরে অনেক লোক থাকবে। তারা প্রত্যেককে তার চিহ্ন দ্বারা চিনে নিবে। তারা জান্নাতীদেরকে ডেকে বলবে তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, তারা তখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না, কিন্তু প্রবেশে আগ্রহী হবে।

এরা জান্নাতী ও জাহান্নামীদের সবাইকে তাদের চেহারা দেখে চিনবে এবং এ আরাফবাসীরা জান্নাতবাসীদেরকে ডেকে বলবে ২l Ji (আস্সালামু আলাইকুম)–তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।

উল্লেখ্য, তখনো তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তবে প্রবেশের জন্য খুবই আগ্রহী থাকবে। শেষ পর্যন্ত তাদের আশা আগ্রহ বাস্তবায়িত হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে।

তার পর পবিত্র কোরআনুল করীমে এরশাদ হয়েছে

وإذا صرفت أبصارهم تلقاء أصحب النار قالوا ربنا لا تجعلنا

উচ্চারণ : ওয়া ইযা–ছুরিফাত আবছোয়া-রুহুম তিলক্বা-আ আছহা-বিন না-রি কালূ রব্বানা–লা–তাজআলনা–মা’আল কাওমিয যোয়া-লিমীন।

অর্থ : যখন তাদের দৃষ্টি দোযখীদের উপর পড়বে তখন বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে জালেমদের সাথী করো না।

অতঃপর আরাফবাসীরা দোযখীদেরকে অভিসম্পাত করার আলোচনা করা হয়েছে এভাবে

ونادي أصحب الأعراف رجالا يعرفونهم بسيمهم قالوا ما أغنى

لؤلاء الذين اقسمتم لا

ستكبرون

عنكم جمعكم وما كنا

بلیمی

و و

ينالهم الله برحمة ط أدخلوا الجنة لا خوف عليكم و انتم تحزنون

উচ্চারণ : ওয়া না-দা আছহা-বুল আ’রা-ফি রিজা-লাই ইয়ারিফুনাহুম বিসীমাহুম কালূ মা–আগনা–আনকুম জামউকুম ওয়ামা–কুনতুম তাসতাকবিরূন। আহাউলা-য়ি লাযীনা আক্সামতুম লা–ইয়ানা-লুহুমুল্লা-হু বিরাহমাতিন; উদখুলুল জান্নাতা লা–খাওফুন আলাইকুম ওয়ালা–আনতুম তাহযানূন।

অর্থ : আরাফবাসীরা যাদেরকে তাদের চিহ্ন দ্বারা চিনবে তাদেরকে ডেকে বলবে, তোমাদের দলবল ও ঔদ্ধত্য তোমাদের কোন কাজে আসেনি। এরা কি তারাই, যাদের সম্পর্কে তোমরা কসম খেয়ে বলতে, আল্লাহ এদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন না। প্রবেশ কর জান্নাতে, তোমাদের কোন আশঙ্কা নেই এবং তোমরা দুঃখিত হবে না।

আরাফবাসীরা অবশেষে জান্নাতে প্রবেশ করবে। জান্নাত ও জাহান্নাম উভয় ঠিকানাই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমলের শেষ পরিণাম বা প্রতিদান হিসেবে নির্ধারণ করে রেখেছেন।

জান্নাতে প্রবেশ করাই হচ্ছে প্রকৃত সফলতা, আর ব্যর্থতার সর্বশেষ স্তর হচ্ছে জাহান্নামে প্রবেশ করা এবং তাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় ও প্রকৃত ক্ষতি। এর চেয়ে বড় আর কান ক্ষতি নেই। মানুষ ক্ষণস্থায়ী এ পৃথিবীতে সফল হওয়ার জন্য চেষ্টা করে। এজন্য শত বাধা বিপত্তির দুর্গম পথে আনন্দের সাথেই চলে। শত কষ্ট হাসি মুখে বরণ করে নেয়।

যুগে যুগে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নবী রাসূল ও কিতাব প্রেরণের মাধ্যমে হাশর নশর, হিসাব-কিতাব, মীযান, পুলসেরাত ও জান্নাত-জাহান্নামের অবস্থাদি জানিয়ে দিয়েছেন। বলে দিয়েছেন কোটা প্রকৃত লাভ আর কোনটা প্রকৃত ক্ষতি। পাশাপাশি বলে দিয়েছেন, নেক আমল আর বদ আমলের প্রতিদান এই। এ বর্ণনা যেমন সংক্ষেপে তেমনি বিস্তারিতভাবে করেছেন। অতঃপর নেক আমল করার জন্য খুবই উৎসাহ দিয়েছেন, তাগিদ করেছেন। যে কেউ-ই দুনিয়াতে আসে, অবশ্যই তাকে কষ্ট পরিশ্রম এবং চেষ্টা সাধনা করতে হয়। আমল করতে হয়। সে নেক কাজ করে বদ কাজও করে। জান মাল এবং সময় নষ্ট করে। অতঃপর তার চেয়ে বড় দুর্ভাগা ও ক্ষতিগ্রস্ত আর কেউ হতে পারে না, যে তার জীবনের উৎকৃষ্ট পুঁজি এবং জান মালের। ন্যায় আল্লাহ পাকের দেয়া নেয়ামত পাপাচারে ব্যয় করে নিজেকে জাহান্নামের অবর্ণনীয় আযাবে ছুঁড়ে মারে। মরণ তো সবার ভাগ্যেই অবশ্যম্ভাবী। তা কেউ উপেক্ষা করতে পারবে না। কিন্তু উত্তম ও গর্বের মৃত্যু হচ্ছে সে ব্যক্তির মৃত্যু, যে জান্নাতের জন্য মৃত্যুবরণ করে। যাকে মৃত্যুর পর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন খুশী হয়ে জান্নাত দান করেন।

পবিত্র কোরআন করীমের সূরা আলে ইমরানে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন

كل نفس ذائقة الموتر د وانما توقون أجوركم يوم القيمة فمن حزح عن النار وأدخل الجنة فقد فاز دوما الحيوة الدنيا والامتاع

الغرور

উচ্চারণ : কুল্লু নাফসিন যা-ইক্বাতুল মাওত; ওয়া ইন্নামা–তুওয়াফফাওনা উজুরাকুম ইয়াওমাল কিয়া-মাতি ফামান যুহযিহা আনিন না-রি ওয়া উদখিলাল জান্নাতা ফাকাদ ফা-যা, ওয়ামাল হায়া-তু দুনইয়া–ইল্লা–মাতাউল গুরূর।

অর্থ : প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যু আস্বাদন করতে হবে। আর তোমরা কেয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে, তার পর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কার্যসিদ্ধি ঘটবে; আর পার্থিব জীবন ধোকা ছাড়া অন্য কোন সম্পদ নয়।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যখন হযরত আদম ও হাওয়া (আঃ)-কে দুনিয়াতে পাঠান, তখন বলেছিলেন, যে আমার হেদায়াতের অনুসরণ করবে সে গোমরাহ দুর্ভাগা হবে না। পাশাপাশি এও বলে দিয়েলিছেন, যে ব্যক্তি আমার হেদায়াতের অনুসরণ করবে তার কোন শংকা চিন্তা নেই। পক্ষান্তরে যারা কুফরী করবে, আমার হুকুম আহকাম বিশ্বাস করবে না, তারা নিশ্চিত জাহান্নামে যাবে। সেখানে তারা অনন্তকাল ধরে অবস্থান করবে। সূরা তোয়া-হা ও সূরা বাকারায় এ কথাই বলা হয়েছে। যে কেউ দুনিয়ার জীবনে এ ঘোষণার প্রতি ঈমান আনবে, তারা সরল পথ থেকে বিচ্যুত হবে না। পরকালীন জীবনে তারা ব্যর্থ দুর্ভাগা হবে না। কিন্তু যারা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দেয়া হেদায়াত গ্রহণ করবে না, তাঁর প্রেরিত নবী রাসূলদেরকে মিথ্যাবাদী বলবে, তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ আসমানী কিতাবসমূহ অবিশ্বাস করবে, তাদের পরিণাম হবে নিশ্চিত জাহান্নাম। সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে।

الختالله الجنة دار التويم واعاذنا من عذاب الجحيم إنه هوالتواب الرحيم بن ربك رب العزة عما يصفون وسلام على المرسلين والحمد لله رب العلمين

উচ্চারণ : আদখালনাল্লা-হুল জান্নাতা দা-রান নাঈ’মি ওয়া আআযানা মিন আযা-বিল জাহীমি ইন্নাহু হুওয়াত তাউওয়াবুর রাহীম। সুবহা-না রব্বিকা রব্বিল ই’যযাতি আম্মা ইয়াসিফুন, ওয়া সালা-মুন আলাল মুরসালীনা ওয়াল হামদু লিল্লা-হি রব্বিল আলামীন।

অর্থ : আল্লাহু রব্বুল আলামীন আমাদেরকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করুন। জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন। নিশ্চয়ই তিনি তওবা কবূলকারী। অতিশয় দয়ালু।

হে প্রভু! আপনি অতি পূত পবিত্র, সব কথার ঊর্ধ্বে, যা তারা বলে বেড়ায়। শান্তি বর্ষিত হেক রাসূলদের উপর, সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্যই।

জান্নাতে প্রবেশকালে ফেরেশতাদের সালাম ও মোবারকবাদ জ্ঞাপন :

কোরআনুল করীমের সূরা হিজরে বলা হয়েছে

مهما بعد أمته

دهم.

–ان المتقين في جنت وعيون–ادخلوها

উচ্চারণ : ইন্নাল মুত্তাকীনা ফী জান্নাতিওঁ ওয়া উ’য়ূন। উদখুনূহা–বিসালা-মিন আমিনীন।

অর্থ : নিশ্চয়ই খোদাভীরুরা বাগান ও নিঝরণীসমূহে থাকবে। বলা হবে, এগুলোতে নিরাপত্তা ও শান্তি সহকারে প্রবেশ কর।

সূরা যুমারে বলা হয়েছে

حتى إذا جاعوها وفتحت أبوابها وقال لهم خزنتها سلام عليكم

طبتم فادخلوها خلدين۔

উচ্চারণ : হাত্তা–ইযা–জা-উ-হা–ওয়া ফুতিহাত আবওয়া-বুহা–ওয়া কা-লা লাহুম খাযানাতুহা–সালা-মুন আলাইকুম ত্বিবতুম ফাদখুলুহা–খালিদীনা।

অর্থ : যখন তারা উন্মুক্ত দরজা দিয়ে জান্নাতে পৌঁছবে এবং জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখে থাক, অতঃপর সদা-সর্বদা বসবাসের জন্যে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর।

অর্থাৎ, জান্নাতবাসীদেরকে জান্নাতে অবস্থান করার জন্য সম্মান মর্যাদা সহকারে প্রবেশ করানো হবে। তাদেরকে স্বাগত জানানোর জন্য পূর্ব থেকেই দুয়ার খুলে রাখা হবে। জান্নাতের দারোয়ান ফেরেশতা সালাম করবে এবং সুখময় জীবন যাপনের জন্য মোবারকবাদ জানাবে। একথা শুনিয়ে দেয়া হবে, আপনারা এমন এক স্থানে অবস্থান করুন, যেখানে শুধু শান্তি আর শান্তি এবং নিরাপত্তা আর নিরাপত্তাই বিরাজমান। এখানে আপনারা চিরকাল শান্তিতে অবস্থান করবেন। এখানে কোন ভয় বা শংকা নেই। কোন ধরনের দুঃখ কষ্টও নেই।

প্রবেশের পর মোবারকবাদঃ

পবিত্র কোরআনুল করীমের সূরা রা’দে এরশাদ হয়েছে

والذين صبروا ابتغاء وجه ربهم واقاموا القلوة وانفقوا مما رزقنهم سرا وعلانية ويدرسون پالحنة الشيتة أولئك لهم عقبى الدار ط جنت عدن يدخلونها ومن صلح من أبائهم وأزواجهم ورتهم والملك يدخلون عليهم من كل باپ–سلم عليكم بما صبرتم فنعم عقبى الدار

উচ্চারণঃ ওয়াল্লাযীনা ছবারু বতিগা-আ ওয়াজহি রব্বিহিম ওয়া আকামূস ছলা-তা ওয়া আনফাকু মিম্মা রাযাকনা-হুম সিররাওঁ ওয়া আলানিয়াতাওঁ ওয়া ইয়াদরাউনা বিলহাসানাতিস সাইয়্যেআতা উলা-ইকা লাহুম উক্ববাদ দা-র। জান্না-তু আদনিই ইয়াদখুলুনাহা ওয়া মান ছলাহা মিন আ-বা-ইহিম ওয়া আযওয়া-জিহিম ওয়া যুররিয়্যা-তিহিম ওয়ালমালাইকাতু ইয়াদখুলুনা আলাইহিম মিন কুল্লি বা-বিন। সালা-মুন আলাইকুম বিমা-ছবারতুম ফানি মা উ’ক্ববাদ দা-রি।

অর্থ : এবং যারা স্বীয় পালনকর্তার সন্তুষ্টির জন্য সবর করে, নামায প্রতিষ্ঠা করে আর আমি তাদেরকে যা দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং যারা মন্দের বিপরীতে ভাল করে, তাদের জন্য রয়েছে পরকালের গৃহ; তা হচ্ছে বসবাসের বাগান, তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের সৎকর্মশীল বাপ-দাদা, স্বামী-স্ত্রী সন্তানেরাও। ফেরেশতারা তাদের কাছে আসবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে। বলবে, সবরের কারণে তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, আর তোমাদের এ পরিণাম গৃহ কতই না চমৎকার।

মোফাসসের আল্লামা ইবনে কাসীর (রঃ) উপরোক্ত আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে লেখেন, জান্নাতবাসীদেরকে জান্নাতে প্রবেশের কারণে মোবারকবাদ জ্ঞাপনের জন্য সর্বদিক থেকে ফেরেশতাদের দল সালাম করতে করতে প্রবেশ করবে। তাদের আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের বিশেষ নৈকট্য, পুরস্কার ও শান্তির নীড়ে অনন্তকাল অবস্থানের এবং নবী-রাসূল ও সিদ্দীকদেরর প্রতিবেশী হিসাবে থাকার যে মহান মর্যাদা ও সৌভাগ্য লাভ হবে, তজ্জন্যে তাদেরকে মোবারকবাদ জানানো হবে।-(তাফসীরে ইবনে কাসীর, খণ্ড-২)

.

দোজখের বিবরণ

দোজখের গভীরতাঃ

হযরত আবু মূসা (রাঃ) রাসূলে পাক (ছঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি দোজখের গভীরতা সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে, যদি দোজখে একখানি পাথর ফেলে দেয়া হয় তা হলে তার তলদেশে পৌঁছতে পাথরখানির ৭০ সত্তর বছর লেগে যাবে।-(তারগীব)।

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমরা একবার রাসূলে পাক (ছঃ)-এর খেদমতে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন কোন বস্তু পতিত হওয়ার শব্দ শুনলাম। রাসূলে পাক (ছঃ) প্রশ্ন করলেন, তোমরা জান কি, এটা কিসের শব্দ? আমরা আরজ করলাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভালো জানেন। তিনি বললেন; ওটা হচ্ছে একখানা পাথর। আল্লাহ পাক তা জাহান্নামের মুখ থেকে তার তলদেশে নিক্ষেপ করেছিলেন। ঐ পাথরখানি দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে নীচে যেতে যেতে এ মাত্র জাহান্নামের তলদেশে গিয়ে পৌঁছেছে। এ শব্দ হচ্ছে উক্ত পাথরের পতিত হওয়ার শব্দ। -(মুসলিম)

 দোজখের দেয়াল :

রাসূলে পাক (ছঃ) বলেছেন, দোজখ চার দেয়াল দ্বারা পরিবেষ্টিত। প্রতিটি দেয়াল এরূপ পুরু যে, তার একপাশ থেকে অন্য পাশে ৪০ বছরের পথের দূরত্ব।–(তিরমিযী)

দোযখের দরওয়াজাঃ

পবিত্র কোরআনে দোজখের দরওয়াজা সম্পর্কে এরশাদ হয়েছে :

اب منهم

: وهم أجمعين لها سبعة أبواب الكل باب منهم

وان جهنم لموعدهم اجمعين لها سبعة

جزء مقسوم

উচ্চারণ : ওয়া ইন্না জাহান্নামা লামাও ই’দুহুম আজমাঈনা লাহা–সাবআতু আবওয়া-বিন; লিকুল্লি বা-বিম মিনহুম জুযউম মাকসূমুন।

অর্থ : আর ঐ সব লোকের জন্য রয়েছে জাহান্নামের ওয়াদা, যার দরওয়াজা হচ্ছে সাতটি। আর প্রতিটি দরওয়াজায় ঐ লোকদের জন্য পৃথক পৃথক অংশ রয়েছে।–(সূরা হিজর)।

রাসূলে পাক (ছঃ) বলেছেন, দোজখের সাতটি দরওয়াজা আছে। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে ঐ সকল লোকদের জন্য, যারা আমার উম্মতের বিরুদ্ধে তরবারি উঠাবে।-(মেশকাত শরীফ)

দোজখের আগুন এবং অন্ধকার :

রাসূলে আকরাম (ছঃ) বলেন; দোজখকে এক হাজার বছর পর্যন্ত জ্বালাবার পর তার আগুন। লাল বর্ণ ধারণ করেছে। তার পর এক হাজার বছর পর্যন্ত জ্বালাবার পর তা সাদা হয়েছে। তার পর আরো এক হাজার বছর জ্বালাবার পর তা কালো হয়ে গেছে। এ কারণে দোজখ এখন কালো অন্ধকার হয়ে আছে।–(তিরমিযী)

এক রেওয়ায়েতে আছে, জাহান্নামের অন্ধকার অবস্থা ঠিক অন্ধকার রাত্রির ন্যায়। অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, ভেতর থেকে সেখানে কোন আলো থাকবে না।-(তারগীব)

অর্থাৎ সেখানে সর্বদাই অন্ধকার অবস্থা বিরাজ করবে।

মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায় আছে, রাসূলে আকরাম (ছঃ) বলেছেন, তোমাদের এ আগুন (যা দুনিয়াতে জ্বালিয়ে থাক, ) দোযখের আগুনের ৭০ সত্তর ভাগের একভাগ মাত্র। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন; পোড়ার জন্য এ আগুনই অনেক বেশি। রাসূলে আকরাম (ছঃ) বলেন, দোজখের আগুনের তাপ দুনিয়ার আগুনের চেয়ে ঊনসত্তর গুণ বেশি। আরেক বর্ণনায় আছে, দোজখী ব্যক্তি যদি দুনিয়ার আগুনের মধ্যে প্রবেশ করে তা হলে সে ঘুমিয়ে পড়বে।–(তারগীব)

কেননা, দোজখের আগুনের তুলনায় দুনিয়ার আগুন যথেষ্ট ঠাণ্ডা। এ কারণে দোজখের আগুনের তুলনায় তা আরামদায়ক বলে মনে হবে।

দোজখের আযাবের পরিমাণঃ

রাসূলে আকরাম (ছঃ) বলেন, দোজখীদের মধ্যে সবচেয়ে কম আযাব হবে ঐ ব্যক্তির, যার জুতা এবং জুতার ফিতা হবে আগুনের। আর এ কারণে (উত্তপ্ত) হাঁড়ির (পানির) মত তার মাথার ঘিলু টগবগ করে ফুটতে থাকবে। সে মনে করতে থাকবে, আমাকেই সবচেয়ে বেশি আযাব দেয়া হচ্ছে। অথচ তাকেই দেয়া হবে সবচেয়ে কম আযাব।–(বোখারী ও মুসলিম শরীফ)

মুসলিম শরীফের অন্য এক বর্ণনায় আছে, রাসূলে আকরাম (ছঃ) বলেনে, কেয়ামতের দিন এমন এক দোজখীকে ধরে আনা হবে যে দুনিয়াতে সর্বাধিক আরাম আয়েশে কালাতিপাত করেছিল। তার পর তাকে দোজখে একবার ডুব দেয়ানো হবে এবং জিজ্ঞাসা করা হবে, ওহে আদম সন্তান! তুমি কি কখনো নেয়ামত দেখেছ? কখনো তুমি আরামে ছিলে কি? সে বলবে, আল্লাহ পাকের শপথ! হে পরোয়ারদেগার, আমি কখনো আরাম ভোগ করিনি। এর পর রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেন; অতঃপর কেয়ামতের দিন এমন এক জান্নাতী ব্যক্তিকে হাজির করা হবে যে দুনিয়াতে সব মানুষের চেয়ে অধিক বিপদগ্রস্ত ছিল। তাকে প্রথমে জান্নাতে ডুব দেয়াননা হবে। তার পর জিজ্ঞাসা করা হবে, হে আদম সন্তান, তুমি কখনো বিপদ দেখেছ কি? তোমার কোন কঠিন দিন অতিবাহিত হয়েছে কি? সে জবাব দেবে; আল্লাহ পাকের শপথ, হে পরোয়ারদেগার! আমার উপর কোন কঠিন সময় অতিবাহিত হয়নি। আমি কোন সময় বিপদগ্রস্তও হইনি।

দোজখের শ্বাসঃ

রাসূলে আকরাম (ছঃ) বলেছেন, যখন প্রচণ্ড গরম শুরু হয় তখন তোমরা জোহরের নামায বিলম্ব করে পড়। কেননা, গরমের প্রচণ্ডতা দোজখের উত্তাপের ফলে হয়ে থাকে। (এর পর বলেন, ) দোজখ তার প্রভুর দরবারে এরূপ নালিশ করে যে, আমার উত্তাপ অত্যধিক বেড়ে গেছে। এতে করে আমার কিছু অংশ অন্য কিছু অংশকে খেয়ে ফেলছে (অতএব আমাকে অনুমতি দেয়া হোক, কোন প্রকারে আমি এ উত্তাপ হাল্কা করে দেই)। তখন আল্লাহ রাব্দুল আলামীন তাকে দু’বার শ্বাস নেয়ার অনুমতি দান করেন। এক শ্বাস শীত মৌসুমে এবং দ্বিতীয় শ্বাস গ্রীষ্মকালে। সুতরাং তোমরা গ্রীষ্মকালে যে উত্তাপ অনুভব কর, সেটার মূলে হচ্ছে দোজখের লু হাওয়া (যা শ্বাসের সাথে সাথে বাইরে চলে আসে।) এবং শীতকালে যে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা অনুভব করছ তার মূলে হচ্ছে দোজখের ঠাণ্ডা অংশের প্রভাব।–(বোখারী শরীফ)

মুসলিম শরীফের এক রেওয়ায়েতে আছে, প্রত্যহ দুপুরে দোজখের আগুনকে একটু বাড়িয়ে দেয়া হয়।

দ্রষ্টব্যঃ দোজখের শ্বাস ফেলার কারণে উত্তাপ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি সহজেই বুঝা যায়, কিন্তু ঠাণ্ডা বেড়ে যাওয়ার বিষয় বুঝা মুশকিল। প্রকৃত পক্ষে গ্রীষ্মকালে দোজখ নিজের শ্বাস বাইরে নিক্ষেপ করে ফলে তাপ বেড়ে যায় আর শীতকালে শ্বাস গ্রহণ করে, তাই এ সময়ে তা দুনিয়ার সমস্ত তাপ নিজের ভিতর টেনে নেয় কারণে ঠাণ্ডা আরো বেড়ে যায়। কোন কোন আলেম এরূপ ব্যাখ্যা করেছেন যে, দোজখে শুধু পোড়াবার আযাবই দেয়া হয় না; বরং ঠাণ্ডা দিয়েও আযাব দেয়া হয়।

দোজখের ইন্ধনঃ

আল্লাহ পাক এরশাদ করেন।

ايها الزين أمنوا قوا أنفسهم واهيم نارا وقودها الناس

উচ্চারণ : ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আ-মানূ কূ আনফুসাকুম ওয়া আহলীকুম না-রাওঁ ওয়া কুদুহান্নাসু ওয়ালহিজা-রাহ।

অর্থ : হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার পরিজনদেরকে দোজখের আগুন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ এবং পাথর।

দ্রষ্টব্যঃ পাথর শব্দের অর্থ সম্পর্কে হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, দোজখের ইন্ধন হিসেবে এখানে যে পাথরের কথা বলা হয়েছে সেটি হল কিবৃীত’ (অর্থাৎ এমন গন্ধকের পাথর যা আল্লাহ পাক নিকটবর্তী আসমানে সেদিন পয়দা করেছেন যেদিন আসমান ও জমিন পয়দা করেছেন)। অতঃপর তিনি বলেন; আল্লাহ পাক এ পাথর কাফেরদের শাস্তির জন্য সৃষ্টি করেছেন।-(হাকেম)

এ পাথর ব্যতীত মোশরেকদের (তৈরীক্বত) সে সকল মূর্তিও দোজখে থাকবে, যেগুলোর তারা পূজা করত। সূরা আম্বিয়ায় এ প্রসংগে এরশাদ হয়েছে

إنكم وما تعبدون من دوني الله حصب جهنم دانتم لها واردون

উচ্চারণ : ইন্নাকুম ওয়ামা–তা’বুদূনা মিন দূনিল্লা-হি হাছোয়াবু জাহান্নামা আনতুম লাহা ওয়া-রিদূনা।

অর্থ : হে মোশরেক সম্প্রদায়! তোমরা এবং তোমাদের ঐ সকল মাবুদ, আল্লাহ পাককে পরিত্যাগ করে যাদের তোমরা পূজা করতে, সবাই দোজখের ইন্ধন, তোমরা সকলেই সেখানে প্রবেশ করবে।

দোজখের শ্রেণীবিভাগ :

প্রথমেই বলা হয়েছে, দোজখের দরওয়াজা থাকবে ৭টি। যেমন এরশাদ হয়েছে

لها سبعة أبواب ط لكل باپ نهم جزء مقسوم

উচ্চারণ : লাহা সাব’আতু আবওয়া-বিন; লিকুল্লি বা-বিম মিনহুম জুযউম মাকসূম।

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত আশরাফ আলী থানভী (রহঃ) তার বয়ানুল কোরআন নামক তাফসীর গ্রন্থে বলেন, কেউ কেউ বলেছেন, এখানে দার’ বা দরওয়াজা বলতে তবকা বা শ্রেণী বুঝানো হয়েছে। তার এক এক তবকায় এক এক প্রকার আযাব দেয়া হবে। যে যে ধরনের আযাবের উপযুক্ত হবে তাকে সে তবকার দোজখে প্রেরণ করা হবে। আর যেহেতু প্রতি তবকার দরওয়াজা ভিন্ন ভিন্ন, তাই সাত দরওয়াজার উল্লেখ করে এর তাফসীর করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেছেন; বাব’ বলতে দরওয়াজাই বুঝানো হয়েছে। তাদের মতে, দরওয়াজা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, দোজখে প্রবেশকারীদের সংখ্যা হবে অনেক। তাদের জন্য একটি দরওয়াজা যথেষ্ট হবে না বলেই ৭টি দরওয়াজা তৈরী করা হয়েছে।

আল্লামা ইবনে কাসীর (রঃ) হযরত আলী (রাঃ)-এর একটি বাণী উল্লেখ করেছেন। তাতে হযরত আলী (রাঃ) সাব’আতু আবওয়াব (সাত দরওয়াজা)-এর ব্যাপারে হাতের ইশারায় বলেন; এ দরওয়াজাগুলো একটির নীচে আর একটি হবে। এতে বুঝা যায়, জাহান্নামের সাতটি তবকা রয়েছে এবং এক তবকার নীচে আরেক তবকা রাখা হয়েছে। অন্য কথায়, উপর নীচ করে দোজখের মোট সাতটি স্তর রয়েছে এবং প্রতি স্তরের জন্যই পৃথক পৃথক দরওয়াজার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে

إن المنفقين في الدربي الأسفل من النار۔

উচ্চারণ : ইন্না লমুনাফিকীনা ফি দদারকিল আসফালি মিনান্না-রি।

অর্থ : নিশ্চয়ই মোনাফেকরা দোজখের সর্বনিম্নস্তরে থাকবে।–(সূরা নেসা)।

এ আয়াত দ্বারাও এ কথা সুস্পষ্ট হয়ে উঠে যে, অবশ্য অবশ্যই দোজখের বিভিন্ন তবকা বা স্তর রয়েছে। মহাজ্ঞানীগণ এ তবকাসমূহের নাম এবং উক্ত তবকাসমূহে যারা যাবে তাদের বিস্তৃত বিবরণ এভাবে দিয়েছেন যে, সবচাইতে নীচের তবকা মোনাফেকীনের জন্য। ফেরআউন এবং তাদের সাহায্যকারীদের জন্য নির্ধারিত তবকার নাম হাবিয়া। হাবিয়ার উপরের তবকা মোশরেকীনের জন্য। এর নাম জাহীম। এর উপরের তবকা হল সাকার’। যা ধর্মহীন ফেরকা ছাবে’ঈদের জন্য নির্ধারিত। সাকারের উপরস্থ তবকার নাম লাযা। এটি ইবলীস এবং তার অনুসারীদের জন্য। তার উপরে রয়েছে পঞ্চম তবকা। এটি ইহুদীদের জন্য নির্ধারিত, এর নাম হুতামা’। এর উপরস্থ ষষ্ঠ তবকার নাম সাঈর। এটি নাসারাদের জন্য নির্দিষ্ট। আর সর্বাপেক্ষা উপরে রয়েছে জাহান্নাম নামক তবকা। এটি গোনাহগার মুসলমানদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এ জাহান্নামের উপরে কায়েম করা হয়েছে পুলসেরাত। যদিও সম্মিলিতভাবে দোজখের সব তবকাকেই জাহান্নাম বলা হয়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সবচেয়ে উপরের তবকাই হল জাহান্নাম।

একথাও লিখিত আছে যে, দোজখের এক দরওয়াজা থেকে দ্বিতীয় দরওয়াজা পর্যন্ত সাত শত বছরের রাস্তা।

 দোজখের বিশেষ গর্দান :

রাসূলে আকরাম (ছঃ) বলেছেন, রোজ কেয়ামতে দোজখ থেকে এমন একটি গর্দান বের হবে যার থাকবে দুটি চক্ষু, দুটি কান। এ কান দ্বারা সে শুনবে। আর কথা বলার জন্য থাকবে একটি জিহ্বা। সে বলবে, তিন ব্যক্তির উপর আমার ক্ষমতা চলবে।

(১) অহংকারী জেদী ব্যক্তি।

(২) যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্যকে মাবুদ সাব্যস্ত করেছে এবং

(৩) যে ছবি তৈরী করে।–(তিরমিযী)

 দোজখীদেরকে আগুনের স্তম্ভসমূহের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখা হবেঃ

আল্লাহ পাক এরশাদ করেন

نار الله الموقدة التى تطلع على الأفئدۃ ط اها عليهم مؤصدة

في عمير ممددة–

উচ্চারণ : না-রুল্লা-হিল মুক্বাদাতুল্লাতী তাত্তোয়ালিউ’–আলাল আফইদাতি; ইন্নাহা আলাইহিম মুছদাতুন ফী আমাদিম মুমাদ্দাদাহ্।

অর্থ : তামা আল্লাহর জ্বালানো আগুন, যা দেল পর্যন্ত পৌঁছবে; এতে তাদেরকে বেঁধে দেয়া হবে লম্বা লম্বা স্তম্ভে।–(সূরা হুমাজাহ)

দুনিয়ায় কারো দেহে আগুন লাগলে তা দেল পর্যন্ত পৌঁছার পূর্বেই রূহ বের হয়ে যায়, কিন্তু যেহেতু দোজখে মৃত্যু নেই, সেহেতু সমগ্র দেহের সাথে সাথে দেলেও আগুন ধরে যাবে এবং তাকে মারাত্মকভাবে পোড়াবে। এর পর আগুন বন্ধ করে দেয়া হবে। অর্থাৎ দোজখীদেরকে দোজখে ভরে দিয়ে তার দরওয়াজা বন্ধ করে দেয়া হবে। কেননা সেখানে তাদের চিরকালই থাকতে হবে। বের হয়ে আসার সৌভাগ্য কোন দিন তাদের আর হবে না। লম্বা লম্বা স্তম্ভের অর্থ হল, উক্ত আগুনের শিখাসমূহ খুব দীর্ঘ হবে আর দোজখীদেরকে তার মধ্যে আটক করে রাখা হবে।

 দোজখে নিযুক্ত ফেরেশতাদের সংখ্যা :

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে

ie LaL 1. উচ্চারণ : আলাইহা তিসআতা আশারা।

 অর্থ : দোজখে ১৯ জন ফেরেশতা নিয়োগ করা হবে।–(সূরা মুদ্দাসসির)

দ্রষ্টব্যঃ এ উনিশ জনের একজন হচ্ছেন মালেক এবং অন্যরা হচ্ছেন খাজেন। দোজখীদেরকে শাস্তি দেয়ার জন্য একজন ফেরেশতা যথেষ্ট হলেও বিভিন্ন প্রকার আযাব দেয়া এবং ব্যবস্থাপনার জন্য ১৯ জন নিযুক্ত থাকবেন। এ সম্পর্কে সূরা তাহরীমে বলা হয়েছে

عليها ملكة غلاظ شداد لا يعصون الله ما أمرهم ويفعلون ما

يؤمرون

উচ্চারণ : আলাইহা–মালাইকাতুন গিলা-যুন শিদা-দুল লা–ইয়াছুনাল্লা-হা মা আমারাহুম ওয়া ইয়াফআলূনা মা-ইউ’মারূন।

অর্থ : তার উপর নিয়োজিত থাকবে কঠিন ও শক্তিমান ফেরেশতাবৃন্দ। তারা আল্লাহ পাকের আদেশের বিরোধিতা করবে না; তাদেরকে যে হুকুমই করা হবে তাই তারা কার্যে পরিণত করবে।

তাফসীর গ্রন্থ বয়ানুল কোরআনে দুররে মানসুর থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে, রাসূলে আকরাম (ছঃ) বলেছেন, দোজখীদের জন্য নিযুক্ত প্রত্যেক ফেরেশতার শক্তি হবে সমস্ত জিন ও মানুষের সম্মিলিত শক্তির সমান।

 দোজখের প্রচণ্ড ক্রোধ, গর্জনঃ

আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন :

والذين كفروا بربهم عذاب جهنم دوبث المير–إذا ألقوا

فيها سيعوا تها شهيقا وهى تفور تكاد تميبين الغيظ.

উচ্চারণ : ওয়া লিল্লাযীনা কাফারূ বিরব্বিহিম আযাবু জাহান্নামা; ওয়া বি’সাল মাছীর। ইযা–উলকূ ফীহা–সামিউ’ লাহা শাহীক্বাওঁ ওয়া হিয়া তাফুরু তাকাদু তামাইয়াযু মিনাল গাইয।

অর্থ : আর যারা তাদের প্রভুকে অস্বীকার করে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি। আর তা অতীব নিকৃষ্ট জায়গা। যখন তাদের সেখানে নিক্ষেপ করা হবে তখন তারা এক বিকট আওয়াজ শুনতে পাবে এবং তা এমন উত্তেজিত হবে যেন এখনই ক্রোধে ফেটে পড়বে। –(সূরা মুলক)

হাকীমুল উম্মত হযরত আশরাফ আলী থানভী (রঃ) বয়ানুল কোরআন’ গ্রন্থে বলেন, সম্ভবতঃ আল্লাহ পাক এতে বোধশক্তি ও ক্রোধ সৃষ্টি করে দিবেন। তা খোদাদ্রোহীদের উপর ক্রুদ্ধ হবে অথবা উপমার সাহায্যে বুঝানো হয়েছে, মনে হবে যেন দোজখ ক্রুদ্ধ হয়েছে।

إذا رأتهم من مكان بعيد سمعوا تها ت ظا وزفيرا ط وإذا ألقوا

منها مكانا ضيقا مقنين دعوا هنالك ثبورا–

উচ্চারণ : ইযা রা’আতহুম মিম মাকা-নিম বাঈ’দিন সামিউ’ লাহা–তাগাইয়ুযাওঁ ওয়া যাফীরা-; ওয়া ইযা–উলকূ মিনহা–মাকা-নান দ্বোয়ায্যিকান মুকাররানীনা দা’আও হুনা-লিকা সুদূরান

অর্থ : যখন দোজখ তাদেরকে দূর থেকে দেখবে তখন তারা দোজখের গর্জন ও হুংকার শুনতে পাবে। যখন শৃংখলে বাঁধা অবস্থায় তাদেরকে জাহান্নামের সংকীর্ণ জায়গায় নিক্ষেপ করা হবে তখন তারা সেখানে শুধু মৃত্যু! মৃত্যু!! বলে চিৎকার করতে থাকবে।–(সূরা ফুরকান)

দ্রষ্টব্যঃ জাহান্নাম জাহান্নামীদের থেকে শত বছরের দূরত্বে থাকা সত্ত্বেও তার দৃষ্টি তাদের উপর নিক্ষিপ্ত হবে এবং জাহান্নামীদের দৃষ্টিও তার উপর পড়বে। তা তাদেরকে দেখার সাথে সাথেই অস্থির হয়ে পড়বে এবং উত্তেজিত হয়ে বিকট শব্দ করে উঠবে। তারা এ শব্দ শুনতে পাবে। আর যখন তাদেরকে তাতে ঠেলে দেয়া হবে তখন তারা কেবল মৃত্যুকেই ডাকতে থাকবে। যেমন এ দুনিয়ায় বিপদের সময় বলতে থাকে, হায় মরে গেলাম! হায় মরে গেলাম!!

ইবনে আবী হাতেম (রঃ)-এর এক বর্ণনা আছে, হযরত রাসূলে পাক (ছঃ) 11, 13/ তেলাওয়াত করে দোজখের দুইটি চক্ষু আছে বলে প্রমাণ করেছেন।–(ইবনে কাসীর)।

যদিও দোজখ অনেক বড় স্থান, তবুও দোজখীদেরকে আযাব দেয়ার উদ্দেশে সংকীর্ণ স্থানে রাখা হবে। কোন কোন বর্ণনায় স্বয়ং রাসূলে খোদা (ছঃ) থেকে ব্যাখ্যা রয়েছে, দেয়ালে যেভাবে পেরেক বসানো হয়, ঠিক তেমনিভাবে দোজখীদেরকে দোজখের সংকীর্ণতম স্থানে ঢুকিয়ে দেয়া হবে।-(ইবনে কাসীর)।

পবিত্র কোরআনে আছেঃ

تدعوا مث آدبر وتوتي وجمع قالی۔

উচ্চারণ : তাদউ’ মান আদবারা ওয়া তাকওয়াল্লা–ওয়া জামাআ ফাআওআ-।

অর্থ : দোজখ নিজেই ঐ লোককে ডাকবে যে সত্যের প্রতি বিমুখ এবং আল্লাহ পাকের আনুগত্য অস্বীকার করেছিল। আর ধনৈশ্বর্য জমা করতঃ সংরক্ষণ করেছিল।–(সূরা মা’আরিজ)

তাফসীরে ইবনে কাসীরে আছে, যেভাবে প্রাণীরা খাদ্য খোঁজ করে ভক্ষণ করে, তেমনিভাবে দোজখ হাশরের ময়দান থেকে পাপীদের এক এক জনকে খুঁজে খুঁজে সংগ্রহ করবে। এ আয়াতে ধন-সম্পদ জমাকারীদের উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত কাতাদা (রাঃ)এর ব্যাখ্যায় বলতেন, যে ব্যক্তি ধন-সম্পদ অর্জনে হালাল হারামের বিচার করে না এবং আল্লাহ পাকের হুকুম অনুযায়ী খরচ করে না, সে ব্যক্তির কথাই এ আয়াতে বলা হয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হাকিম উক্ত আয়াতের (কথা স্মরণ করে) ভয়ে কখনো থলের মুখ বন্ধ করতেন না। হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলতেন, হে আদম সন্তান! তুমি আল্লাহ পাকের শাস্তির কথা শোন, অথচ ধন-সম্পদ জমা কর। রাসূলে পাক (ছঃ) বলেন, রোজ কেয়ামতে মানুষকে ছাগলের ন্যায় লাঞ্ছিত অবস্থায় আল্লাহ পাকের সম্মুখে দাঁড় করানো হবে। আল্লাহ তা’আলা তাকে বলবেন, আমি কি তোমাকে সম্পদ দান করি নেই? গবাদিপশু এবং চাকর নওকর কি দেইনি? তোমাকে কি অনুগ্রহ করিনি? এখন বল, এ সবের জন্য তুমি কি শুকরিয়া আদায় করেছ? সে উত্তর দেবে, হে প্রভু! আমি ধন-সম্পদ জমা করেছি এবং অনেক বৃদ্ধি করেছি। (প্রথমে) যা কিছু ছিল (আসার সময়ে) তার চেয়ে ঢের বেশি রেখে এসেছি। তাই এখন আমাকে অনুমতি দিন, যাতে করে আমি সবকিছু নিয়ে আসতে পারি। সারকথা, এ ব্যক্তি পরকালের উদ্দেশে কিছুই প্রেরণ করেনি। তাই তাকে দোজখে নিক্ষেপ করা হবে।–(তিরমিযী)

তিনি আরো বলেন, দুনিয়া ঐ ব্যক্তিরই থাকার জায়গা যার থাকার কোন জায়গা নেই। আর ঐ ব্যক্তির জন্যই সম্পদ যার জ্ঞান বুদ্ধি নেই।-(মেশকাত)

হযরত বায়হাকী কর্তৃক শো’আবুল ঈমান গ্রন্থে বর্ণিত আছে, যখন কোন ব্যক্তি মারা যায় তখন ফেরেশতারা বলে, সে পরকালের জন্য কী পাঠিয়েছে? আর লোকেরা বলে, সে দুনিয়ায় কী রেখে গেল?

দোজখের লাগাম ও তা টেনে নেয়ার ফেরেশতা :

হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলে করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সেদিন দোজখকে উপস্থিত করা হবে, যার লাগামের সংখ্যা হবে ৭০ হাজার এবং প্রত্যেক লাগামের জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতা নিয়োজিত থাকবে। ফেরেশতারা এ লাগাম টানবে।

হাফেজ আদুল আজিজ মুনযেরী (রঃ) বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, মনে কর, যদি ফেরেশতারা লাগাম ছেড়ে দেন তবে ভাল মন্দ সবাইকে গ্রাস করে ফেলবে।

 দোযখের সাপ-বিচ্ছুঃ

রাসূলে খোদা (ছঃ) বলেন, নিঃসন্দেহে দোজখে দীর্ঘ গদান বিশিষ্ট উটের সমান সাপ রয়েছে। সেগুলোর দংশন এত বিষাক্ত যে, একবার যখন এসব সাপে দংশন করবে, তখন দোযখী ব্যক্তি চল্লিশ বছর পর্যন্ত এর যন্ত্রণা অনুভব করতে থাকবে। তিনি আরও বলেন, নিশ্চয় দোযখে খচ্চরের ন্যায় বিচ্ছু রয়েছে, যার দংশন এত বিষাক্ত যে, এগুলোর একটি একবার দংশন করলে দোজখী ৪০ বছর পর্যন্ত যন্ত্রণা ভোগ করতে থাকবে।–(আহমদ)

কোরআন মজীদে আছে–ulai 3 Lis s;

উচ্চারণ : যিদনা-হুম আযা-বান ফাওকাল আযা-বি।

অর্থ : আমি তাদের জন্য আযাবের উপর আযাব বাড়িয়ে দেব।

হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসংগে বলেন, আগুনের সাধারণ আযাব ছাড়াও তাদের জন্য এ আযাবও বৃদ্ধি করা হবে যে, তাদের উপর বিচ্ছুকে পূর্ণ ক্ষমতা দেয়া হবে, সেগুলোর বিরাটকায় দাঁতগুলো দীর্ঘ খেজুর বৃক্ষের ন্যায় হবে।–(তারগীব)

দোযখে মৃত্যু আসবে না এবং আযাবও হালকা করা হবে নাঃ

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে

لايفتروا عنهم وهم فيه مبسون

উচ্চারণ : লা ইউফাত্তারূ আনহুম ওয়া হুম ফীহি মুবলিসূনা।

অর্থ : তাদের আযাব হাল্কা করা হবে না এবং তারা সেখানে নিরাশ হয়ে পড়ে থাকবে।–(সূরা যুখরুফ)

অন্যত্র এরশাদ হয়েছে

يقضي عليهم فيموتوا ولايقف عنهم من عذابها ۔

উচ্চারণ : লা–ইউক্বদা আলাইহিম ফাঁইয়ামূত্ ওয়ালা–ইউখাফফাফু আনহুম মিন, আযা-বিহা-।

অর্থ : তাদের আয়ু শেষ হবে না, তাই তারা মৃত্যুবরণ করবে না এবং তাদের দোজখের যাবও শিথিল করা হবে না।–(সূরা ফাতির)

অর্থাৎ দোযখে এটাও সম্ভব হবে না যে, শাস্তি ভোগ করতে করতে মৃত্যুবরণ করবে এবং আযাব থেকে রক্ষা পেয়ে যাবে; বরং অশেষ দুঃখ যন্ত্রণা সত্ত্বেও জীবিত থাকবে।

হাদীস শরীফে আছে, যখন জান্নাতবাসীরা জান্নাতে এবং দোজখীরা দোজখে পৌঁছে যাবে, দোজখ থেকে আর কেউ জান্নাতে গমনকারী অবশিষ্ট থাকবে না। তখন জান্নাত এবং দোজখের মাঝে মৃত্যুকে ভেড়ার আকারে উপস্থিত করা হবে। অতঃপর এক ঘোষক ঘোষণা করবে, হে জান্নাতবাসী! এখন আর মৃত্যু আসবে না। আর হে দোজখবাসী! এখন আর মৃত্যু আসবে না। এ ঘোষণা শুনে জান্নাতবাসীরা বেশি খুশী হবে আর দোজখীদের দুঃখ কষ্ট আরো বেড়ে যাবে। -(বোখারী, মুসলিম)

দোযখের আওয়াজঃ আরও কিছু আছে কি?

পবিত্র কোরআনে আছে

تقول هل من مزيد.

يوم نقول لجهنم هل ام

উচ্চারণ : ইয়াওমা নাকুলু লিজাহান্নামা হালি মতালাতি ওয়া তাকুলু হাল মিম মাজীদ।

অর্থ : সে দিনের কথা স্মরণ কর যেদিন আমি জাহান্নামকে বলব, তুই কি ভরে গিয়েছিস? তখন তা বলবে, আরো কিছু আছে কি?–(সূরা কাফ)

হাদীস শরীফে আছে, রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জাহান্নামে জাহান্নামীদেরকে নিক্ষেপ করা হতে থাকবে আর জাহান্নাম বলতে থাকবে, আরও কিছু আছে কি?

সমস্ত জাহান্নামীকে নিক্ষেপ করার পরও যখন জাহান্নাম পূর্ণ হবে না তখন আল্লাহ তা’আলা আপন কদম মোবারক তার উপর রাখবেন, ফলে জাহান্নাম সংকুচিত হয়ে বলতে থাকবে, বস্ ব, আপনার ইজ্জত ও দানশীলতার দোহাই।–(মেশকাত)

 ধৈর্য ধারণের পরেও আযাব থেকে নিষ্কৃতি হবে নাঃ

দুনিয়াতে সাধারণতঃ বিপদে ধৈর্য ধারণের পর সুখ শান্তি লাভ হয়, কিন্তু জাহান্নামের আযাব সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন

اصلوها فاصبروا أو لا تصبروا سواء عليكم انما تجزون ما

کنتم تعملون

উচ্চারণ : ইছলাওহা–ফাছবিরূ আওলা–তাছবিরূ, সাওয়াউন আলাইকুম ইন্নামা তুজযাওনা মা–কুনতুম তামালূনা।

অর্থ : দোজখীদেরকে বলা হবে, তোমরা দোজখে প্রবেশ কর, তার পর তোমরা ধৈর্য ধারণ কর কিংবা না কর, উভয়ই তোমাদের জন্য সমান। তোমরা যেমন কার্য করেছ তেমনি ফল ভোগ করবে।–(সূরা কুর)

.

দোজখীদের পানাহার

আগুনের কাঁটাঃ

আল্লাহ পাক এরশাদ করেন

من م

و لهم طعام

تسقي من

ولايغني من جو

উচ্চারণ : তুসক্কা–মিন আইনিন আনিয়াতিন লাইসা লাহুম ত্বো’আ-মুন ইল্লা–মিন দ্বারীই’ল লা–ইউসমিনু ওয়ালা–ইউগনী মিন জুইন।

অর্থ : দোজখীদেরকে উত্তপ্ত ঝরণার পানি পান করানো হবে। যারী বা আগুনের কাঁটা ছাড়া তাদের কোন আহার্য হবে না, তা মোটাও করবে না এবং ক্ষুধা নিবারণ করবে না। –(সূরা গাশিয়া)

মেরকাত গ্রন্থকার লেখেছেন, যারী হেজাযের এক প্রকার কাঁটাযুক্ত বৃক্ষ। এটা এত কষ্টদায়ক যে, পশু পর্যন্ত এর আশেপাশে যায় না। কোন প্রাণী যদি উক্ত গাছ খায় তা হলে সেটি মারা যায়। অতঃপর তিনি লেখেন, আয়াতে উল্লিখিতযারী অর্থ হচ্ছে অগ্নিকাটা, যা মোসাব্বরের চেয়েও তিক্ত, মরা লাশের চেয়েও অধিক দুর্গন্ধযুক্ত এবং আগুনের চেয়েও অধিক গরম। যা অত্যধিক পরিমাণে খাওয়ার পরও ক্ষুধা নিবৃত্ত হবে না।

 গিসলীন বা জখমের পুঁজঃ

কালামে পাকে এরশাদ করা হয়েছে

فليس له اليوم ههنا حميم ولاطعام الآمن غسلين لا يأكله الا

الخاطئون۔

উচ্চারণ : ফালাইসা লাহুল ইয়াওমা হাহুনা–হামীমুওঁ ওয়ালা–ত্বো-আ-মুন ইল্লা–মিন গিসলীনিল লা–ইয়াকুলুহু ইল্লাল খা-তিউ’না।

অর্থ : আজ আর কোন বন্ধু নেই এবং খাবারও কিছুই নেই, আছে শুধু জখমের পুঁজ, যা কেবল পাপী লোকেরাই আহার করে থাকে।–(সূরা হাক্কাহ) জাকুম :

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে

ان شجرة الزقوم طعام ايم كالمهل يغلى في البطوني كلي

الحميم

উচ্চারণঃ ইন্না শাজারাতাজ জাক্বকূমি ত্বো’আ-মুল আসীমি কালমুহলি ইয়াগলী ফিলবুতূনি কাগালয়িল হামীম।

অর্থ : নিশ্চয়ই জাকুম গাছ হলো পাপীদের আহার্য, যা গলিত তামা সদৃশ, তা পেটে উত্তপ্ত পানির ন্যায় ফুটতে থাকবে।–(সূরা দুখান)।

ثم إنكم ايها الضالون المكذبون لأكلون من شجرمن زقوم

فماليون يرثها البطون فشاربون عليه من الحميم فشاربون شرب

س . م

دهه

الهيم هذا نزلهم يوم الدين

উচ্চারণ : ছুম্মা ইন্নাকুম আইয়ুহাদ্দোয়া-লুনাল মুকাযযিবূনা লাআ-কিলূনা মিন শাজারিম মিন যাক্বকূমিন ফামা-লিউনা মিনহাল বুতুনা ফাশা-রিবূনা আলাইহি মিনাল হামীমি ফাশা-রিকূনা শুরবাল হীম, হা-যা–নুজুলুহুম ইয়াওমাদ্দীন।

অর্থ : অতঃপর হে বিভ্রান্ত অবিশ্বাসীরা! তোমরা জাক্কম গাছ খাবে এবং তা দিয়ে পেট ভরে ফেলবে। তার পর এর উপর গরম পানি পান করবে যেমন তৃষ্ণার্ত উটগুলো পান করে থাকে। রোজ কেয়ামতে এমনিভাবে তাদের আপ্যায়িত করা হবে।–(সূরা ওয়াকেয়া)

অন্যত্র এরশাদ হয়েছে

و طلعهاکانه روس

سجرة تخرج في

الشياطين

উচ্চারণ : ইন্নাহা–শাজারাতুন তাখরুজু ফী আছলিল জাহীমি ত্বলউ’হা–কাআন্নাহু রুউসুশ শাইয়া-ত্বীনি।

অর্থ : প্রকৃতপক্ষে তা একটি জাঙ্কুম গাছ, তা জাহান্নামের তলদেশ থেকে উত্থিত হয়, তার ফল যেন সাপের ফনা।–(সূরা ছাফফাত)

রাসূলে আকরাম (সঃ) এরশাদ করেন, জাকুমের এক ফোঁটা রসও যদি দুনিয়ায় ফেলে দেয়া হয়, তা হলে দুনিয়ার লোকের সব খাদ্যদ্রব্যই বিনষ্ট (তিক্ত) হয়ে যেত, সুতরাং তোমরা দেখ, যার পুরো খাদ্যই জাঙ্কুম তার অবস্থা কীরূপ (করুণ) হতে পারে!–(তিরমিযী, ইবনে হাব্বান প্রভৃতি)।

হাকেমের এক রেওয়ায়েতে আছে, আল্লাহ পাকের শপথ! জাকুমের একটি ফোঁটা যদি দুনিয়ার সমস্ত পানিরাশি (অর্থাৎ সাগর উপসাগর ও নদ-নদীতে) ফেলে দেয়া হয়, তা হলে নিঃসন্দেহে সমস্ত দুনিয়াবাসীর খাদ্য-সামগ্রী তিক্ত হয়ে যাবে। অতএব যার খোরাকই হবে জাকুম তার অবস্থা কি হবে।-(তারগীব),

গাসসাক  :

আল্লাহ পাক এরশাদ করেন

الايذوقون فيها بردا ولا شرابا الاحميما و غساقا۔

উচ্চারণ : লা–ইয়াযুকুনা ফীহা–বারদাওঁ ওয়ালা–শারাবান ইল্লা–হামীমাওঁ ওয়া গাস্সা-কান।

অর্থ : তারা সকলে (দোযখে) ফুটন্ত পানি ও গাস্সাক ব্যতীত কোন শীতল (সুখকর) পানীয়ের স্বাদ গ্রহণ করবে না।–(সূরা নাবা)।

হুজুরে পাক (সঃ) এরশাদ করেন, এক বালতি গাসাক ঢেলে দেয়া হলে দুনিয়ার সব কিছুই পঁচে গলে যাবে।–(তিরমিযী ও হাকেম)

গাসসাক কি?

এ সম্পর্কে মহাপুরুষগণ বিভিন্ন বর্ণনা প্রদান করেছেন। মেরকাত গ্রন্থ প্রণেতা এ ব্যাপারে চারটি ব্যাখ্যা উল্লেখ করেছেন।

(১) দোজখীদের পুঁজ।

(২) দোজখীদের চোখের পানি।

 (৩) জামহারীর অর্থাৎ শীতলতা আনয়নকারী শাস্তি।

(৪) পঁচা এবং ঠাণ্ডা পুঁজ–যা অতি ঠাণ্ডা হওয়ার দরুন পান করা দুরূহ ব্যাপার হবে, কিন্তু ক্ষুধার তাড়নায় তা পান করতে বাধ্য হবে।

ফলকথা, গাত্সক অত্যন্ত খারাপ জিনিস, আল্লাহ পাক আমাদেরকে এ থেকে পানাহ দিন।

 তলানি সদৃশ পানিঃ

আল্লাহ পাক এরশাদ করেন

فائوا بماء کا ثمهل يشوى الوجوه د بث الشراب وبنات

مرتفقا۔

উচ্চারণ : ইউগা-ছু বিমা-য়িন কালমুহলি ইয়াশওয়িল উজুহা বিসাশ শারা-বু ওয়া সা-আত মুরতাফাকা-।

অর্থ : আর যদি তারা (জাহান্নামীরা) পিপাসায় কাতর হয়ে অনুগ্রহ চায়, তা হলে তাদেরকে তলানি সদৃশ পানি দেয়া হবে, যা তাদের মুখমণ্ডলকে ভেজে ফেলবে; অত্যন্ত নিকৃষ্ট পানীয় সেটা, আর জাহান্নাম কতই না নিকৃষ্ট বাসস্থান।–(সূরা কাহফ)

পুঁজ জাতীয় পানিঃ

কালামে পাকে বলা হয়েছে–

ويشقى من ماء صديد يتجرعه ولا يكاد يسية و يأتيه الموت من

كل مكان وماهو يميت .

উচ্চারণ : ওয়া ইউসকা–মিম মা-ইন ছোয়াদীদিই ইয়াতাজাররাউ’হু ওয়ালা–ইয়াকা-দু ইউসীগুহু ওয়া ইয়াতীহিল মাউতু মিন কুল্লি মাকা-নিওঁ ওয়ামা–হুওয়া বিমায়্যিতিন।

অর্থ : আর তাকে (জাহান্নামীকে) পুঁজ জাতীয় পানি পান করান হবে, যা সে ঢক ঢক করে পান করবে আর অত্যন্ত কষ্ট করে গলাধঃকরণ করবে এবং সর্বদিক থেকে তার মৃত্যু দৃষ্টিগোচর হবে, অথচ সে মরবে না।–(সূরা ইবরাহীম)।

অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের আযাব দেখে মনে করবে, এখনই আমি মরে যাব, কিন্তু সেখানে তো মৃত্যু ঘটবে না। মরে গিয়ে জাহান্নামের কঠিন আযাব থেকে রেহাই পেয়ে যাবে এমন সুযোগ হবে না।

হামীম বা গরম পানিঃ

পবিত্র কোরআন পাকে এরশাদ হয়েছে

وقوا ماء حميما فقطع أمعاءهم

উচ্চারণ : ওয়া সুকূ মা’আন হামীমান ফাকাতত্বোয়া’আ আমআ-আহুম।

অর্থ : আর তাদেরকে (জাহান্নামীদেরকে) গরম পানি পান করানো হবে, যা তাদের অন্ত্রসমূহকে টুকরা টুকরা করেদেবে।–(সূরা মুহাম্মদ)

জাহান্নামীদের খাবার গলায় আটকে যাবেঃ

কোরআন পাকে বলা হয়েছে

ان لدينا انكالا و جحيما و طعاما ذا غصة وعذابا اليما۔

উচ্চারণ : ইন্না লাদাইনা–আনকা-লাওঁ ওয়া জাহীমাওঁ ওয়া ত্বোয়া’আ-মান যা গুচ্ছতিওঁ ওয়া আযা-বান আলীমা-।

অর্থ : নিশ্চয় (ঐসব কাফেরের জন্য) আমার নিকট বেড়িসমূহ, অগ্নিকুণ্ড, গলায় আটকে যাওয়ার মত খাবার এবং যন্ত্রণাদায়ক আযাব রয়েছে।–(সূরা মুযযাম্মিল)।

হযরত ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, যে খাবার জাহান্নামীদের গলায় আটকে যাবে সেটা মূলতঃ এক প্রকার কাঁটা, যা তাদের গলায় বিদ্ধ হয়ে যাবে। বেরও হবে না, নীচের দিকেও সরবে না।-(তারগীব) 

হযরত আবুদ দারদা (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী করীম (সঃ) বলেছেন, জাহান্নামীদের মধ্যে এত প্রচণ্ড ক্ষুধাভাব সৃষ্টি করা হবে যে, একমাত্র এ ক্ষুধার আযাবই অন্য সমস্ত আযাবের সমান। মনে হবে। তারা ক্ষুধার জ্বালায় যখন খাবার চাইবে তখন তাদেরকে এমন খাবার দেয়া হবে যা গলায় আটকে যাবে। এ খাবার যখন গলায় আটকে যাবে তখন মনে মনে ভাববে, দুনিয়ার রীতি অনুযায়ী পানি পান করলে হয়ত এটা ভিতরে ঢুকতে পারবে, তাই তারা পানীয়ের আবেদন করবে। অতএব গরম পানির লৌহ কড়াই যখন তাদের চেহারার কাছে পৌঁছবে তখন চেহারা বিদগ্ধ হয়ে যাবে। অনন্তর পানি যখন উদরে পৌঁছবে তখন উদরস্থ অন্ত্রসমূহ টুকরা টুকরা করে দেবে।-(মেশকাত)

হযরত আবু উমামা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম (ছঃ) L।–২০১৭; উচ্চারণ : ইউসকো মিম মায়িন ছোয়াদীদিই ইয়াতাজাররাউ’হু।

আয়াতটি তেলাওয়াত করে বললেন, পুঁজ জাতীয় পানি যখন জাহান্নামীদের মুখের কাছে নেয়া হবে তখন তাদের ঘৃণা আসবে। অতঃপর আরও নিকটবর্তী করা হবে, তখন তাদের চেহারা দগ্ধ করে ফেলবে এবং মাথার চুল ঝরে যাবে, অনন্তর যখন উক্ত পানি পান করবে তখন তা উদরস্থ অন্ত্রসমূহ কেটে টুকরা টুকরা করে দেবে। অতঃপর পায়খানার রাস্তা দিয়ে বের হয়ে যাবে।

.

জাহান্নামীদেরকে আযাব দানের বিভিন্ন প্রক্রিয়া

 জাহান্নামের অগ্নি ও কঠোর তাপ, সাপ বিচ্ছু, কষ্টদায়ক খাবার পানীয় ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের শাস্তির কথা কোরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়। সেগুলোর কিছু বিবরণ নিম্নে প্রদত্ত হলো।

গরম পানি মাথায় ঢালা হবেঃ

যেমন কোরআন করীমে বলা হয়েছে

و يصب من فوق رؤوسهم الحميم و يصهرما في بطونهم والجلود

উচ্চারণ : ইউছোয়াল্লু মিন ফাওকি রুঊসিহিমুল হামীমুইছহারু মা-ফী বুতুনিহিম ওয়াল জুলুদু।

অর্থ : তাদের মাথায় উত্তপ্ত পানি ঢালা হবে, ফলে তাদের উদরস্থ সব কিছু এবং চামড়াসমূহ গলে বের হয়ে যাবে। (সূরা হজ্জ)।

হুযুরে আকরাম (ছঃ) বলেছেন, জাহান্নামীদের মাথায় উত্তপ্ত পানি ঢালা হবে, যা তাদের পেটে গিয়ে পেটের যাবতীয় কিছু কেটে ফেলবে। অবশেষে তা পা দিয়ে বের হয়ে যাবে। অনন্তর জাহান্নামীদের পূর্ববৎ করে দেয়া হবে। অতঃপর নবী করীম (ছঃ) বলেন, আয়াতে উল্লিখিত ১৭ শব্দের অর্থ এটাই।–(তিরমিযী, বায়হাকী) লৌহ গুর্জ :

কালামে পাকে এরশাদ হয়েছে

ولهم مقام من حديد ما أرادوا أن يخرجوا يرثها من م

أعيدوا فيها ووقوا عذاب الحريق.

উচ্চারণ : ওয়া লাহুম মাক্কা-মিউ মিন হাদীদিন; কুল্লামা-আরাদূ আই ইয়াখরুজু মিনহা মিন গাম্মিন উঈ’দূ ফীহা ওয়া যুকূ আযা-বাল হারীক।

ا نضجت جلودهم بدلنهم جلودا غيرها ليذوقوا العذاب .

অর্থ : আর জাহান্নামীদের (শাস্তির) জন্য লোহার গুর্জসমূহ রয়েছে। যখনই তারা জাহান্নাম। থেকে বের হতে চাইবে তখনই তাদেরকে সেখানে পুনরায় ঠেলে দেয়া হবে আর বলা হবে, আগুনের শাস্তির স্বাদ গ্রহণ কর।–(সূরা হজ্জ)।

নবী করীম (ছঃ) বলেন, জাহান্নামের একটি গুর্জ যদি মাটিতে রাখা হয় তবে সমস্ত জ্বিন। ইনসান মিলেও তা উত্তোলন করতে সক্ষম হবে না।–(আহমদ, আবু ইয়ালা)

অপর এক হাদীসে আছে, জাহান্নামের গুর্জ দ্বারা যদি পাহাড়ে আঘাত করা হয় তবে তা চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে ছাইয়ে পরিণত হয়ে যাবে।–(তারগীব)

গাত্রচর্ম পরিবর্তন :

কোরআন পাকে বলা হয়েছে।

উচ্চারণ : কুল্লামা–নাদ্বিজাত জুসূদুহুম বাদ্দালনাহুম জুলুদান গাইরাহা লিয়ায়ূকুল আযা-বা।

অর্থ : যখন একবার তাদের গাত্রচ দগ্ধীভূত হয়ে শেষ হয়ে যাবে তখন তাদের গায়ে নতুন চামড়া সৃষ্টি করে দেয়া হবে, যাতে (ভালভাবে) আযাব ভোগ করতে পারে।–(সূরা নিসা)

হযরত হাসান বসরী (রঃ) হতে বর্ণিত, জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামের অগ্নি দৈনিক সত্তর হাজার বার জ্বালাবে। প্রত্যেকবার জ্বালানোর পর বলা হবে, যেমন ছিলে তেমন হয়ে যাও।

অতএব, তেমনই হয়ে যাবে।–(তারগীব ও তারহীব)।

ইলম গোপন করার শাস্তিঃ

রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেন, যার নিকট কোন ইলমী বিষয় জিজ্ঞাসা করা হল আর সে তা জানা সত্ত্বেও বলে দিল; বরং গোপন রাখল, কেয়ামতের দিন তার মুখে আগুনের লাগাম পরানো হবে।-(মেশকাত)

 মদখোর ও নেশাখোরদের শাস্তি :

রাসূলে পাক (ছঃ) বলেন, আল্লাহ তা’আলা কসম করে বলেছেন, আমার ইজ্জতের কসম, আমার যে কোন বান্দা এক ঢোক মদ পান করবে, আমি সে পরিমাণ পুঁজ তাকে পান করাব। আর যে বান্দা আমার ভয়ে মদ পান থেকে বিরত থাকবে, আমি তাকে পবিত্র ও নির্মল হাউজ থেকে পান করাব।-(আহমদ)।

মুসলিম শরীফের এক হাদীসে রয়েছে, রাসূলে পাক (ছঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা এ ওয়াদা করেছেন যে, যে নেশাযুক্ত জিনিস পান করবে কেয়ামতের দিন অবশ্যই তাকে ত্বীনাতুল খাবাল পান করাবেন। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, হে আল্লাহ পাকের হাবীব! ত্বীনাতুল খাবাল কি? তিনি (ছঃ) বললেন, জাহান্নামীদের ঘাম অথবা জাহান্নামীদের দেহ নির্গত রস। -(মেশকাত)।

হযরত আবু মূসা আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে পাক (ছঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি মদ্যপানে অভ্যস্ত ছিল আর ঐ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, আল্লাহ তা’আলা তাকে নাহরুল গোতা’ থেকে পান করাবেন। জিজ্ঞাসা করা হলো, নাহরুল গোতা’ কি জিনিস? তিনি (ছঃ) বললেন, এটা হচ্ছে এক নহর বা নদী, যা যেনাকারদের লজ্জাস্থান থেকে প্রবাহিত হবে। -(আহমদ, ইবনে হাব্বান)

বেআমল ওয়ায়েজদের শাস্তি :

রাসূলে পাক (ছঃ) বলেছেন, মেরাজের রাত্রে ভ্রমণকালে আমি এমন কতিপয় লোককে দেখতে পেলাম যাদের ঠোঁট আগুনের কাঁচি দ্বারা কাটা হচ্ছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ওহে জিবরাঈল! এরা কারা? তিনি বললেন, এরা আপনার উম্মতের ঐসব ওয়ায়েজ, যারা মানুষকে ভাল কাজের আদেশ করত, কিন্তু নিজের কথা ভুলে যেত, আর আল্লাহ পাকের কিতাব পড়ত কিন্তু তদনুযায়ী আমল করত না।–(মেশকাত)

বোখারী ও মুসলিমের হাদীসে রয়েছে, রাসূলে পাক (ছঃ) বলেছেন, কেয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হবে, অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তার অন্ত্রসমূহ অগ্নিদগ্ধ হয়ে সাথে সাথে বের হয়ে পড়বে। অনন্তর সে এ ভাবে ঘুরতে থাকবে যেভাবে গাধা চাকা নিয়ে ঘুরতে থাকে। এ অবস্থা দেখে সমস্ত জাহান্নামী তার কাছে এসে ভিড় করবে এবং তাকে জিজ্ঞাসা করবে, ওহে! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি না আমাদেরকে সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ করতে? সে বলবে হাঁ, আমি তোমাদেরকে সৎকাজের আদেশ করতাম কিন্তু নিজে সে অনুযায়ী কাজ করতাম না। আর তোমাদেরকে অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখতাম, কিন্তু নিজে তা করতাম।

 সোনা রূপার তৈজসপত্র ব্যবহারকারীদের শাস্তি :

রাসূলে পাক (ছঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সোনা রূপার তৈজসপত্রে কিংবা এমন কোন পাত্রে পানাহার করে, যাতে সোনা-রূপার অংশ রয়েছে, সে আপন উদরে জাহান্নামের আগুন ভরছে। -(দারে কুতনী)

 ছবি প্রস্তুতকারীদের শাস্তিঃ

রাসূলে পাক (ছঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা’আলার নিকট সবচেয়ে কঠিন আযাব হবে ছবি প্রস্তুতকারকদের।-(বোখারী ও মুসলিম)

রাসূলে পাক (ছঃ) বলেছেন, প্রত্যেক চিত্রকর দোযখে যাবে এবং তার তৈরীক্বত প্রত্যেক চিত্রের জন্য একেকটি প্রাণী সৃষ্টি করে দেয়া হবে। সেগুলো তাকে জাহান্নামে শাস্তি দিতে থাকবে।–(বোখারী ও মুসলিম)

উক্ত হাদীস বর্ণনা করার পর হযরত ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, তুমি যদি ছবি তৈরি করতেই চাও তা হলে গাছ এবং নিষ্প্রাণ জিনিসের ছবি তৈরি কর।

আত্মহত্যাকারীদের আযাব:

রাসূলে পাক (ছঃ) বলেন, যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে পড়ে আত্মহত্যা করেছে তাকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে এবং সেথায় অনন্তকাল (উঠানামা করতে থাকবে। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে তার হাতে বিষ দেয়া হবে এবং সে জাহান্নামে চিরকাল তা পান করতে থাকবে। আর যে লোহার সাহায্যে আত্মহত্যা করবে তার হাতে উক্ত লোহা দেয়া হবে। সে চিরকাল জাহান্নামের অগ্নিতে তা পেটে ঢুকাতে থাকবে।–(বোখারী)

অহংকারীর আযাব:

রাসূলে পাক (ছঃ) বলেছেন, অহংকারীদেরকে (কেয়ামতের দিন) পিপীলিকার ন্যায় ক্ষুদ্রাকার দেহ বিশিষ্ট করে মানবাক্বতিতে উঠানো হবে। চারদিক থেকে লাঞ্ছনা তাদেরকে ঘিরে ফেলবে। এমনিভাবে তাদেরকে জাহান্নামের জেলখানার দিকে তাড়িয়ে নেয়া হবে। উক্ত জেলখানার নাম বুলাস’। তাদের উপর দগ্ধকর অগ্নি ছেয়ে যাবে আর তাদেরকে ত্বীনাতুল খাবাল বা জাহান্নামীদের দেহনির্যাস পান করানো হবে।–(মেশকাত)

তিরমিযী শরীফের এক হাদীসে রয়েছে, জাহান্নামে একটি ওয়াদী বা গর্ত রয়েছে, যাকে হাবুবৃ বলা হয়। সেখানে অবাধ্য অহংকারীদের স্থান হবে।

 রিয়াকারদের আযাব:

রাসূলে পাক (ছঃ) একদা বলেন, তোমরা জুব্বল হুযন’ (চিন্তার কূপ) থেকে পানাহ চাও। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! জুবুল হুযন’ কি জিনিস:তিনি (ছঃ) বললেন, সেটা জাহান্নামের এক গর্ত, যা থেকে স্বয়ং জাহান্নাম দৈনিক চার শত বার আশ্রয় প্রার্থনা করে। জিজ্ঞাসা করা হলো, সেখানে কাঁদের স্থান হবে:তিনি (ছঃ) বললেন, ঐসব লোক যারা মানুষকে দেখানোর জন্য এবাদত করেছে।–(তিরমীযী)

ইবনে মাজা শরীফে আছে, রাসূলে পাক (ছঃ) বলেছেন, ঐ ব্যক্তিও আল্লাহ পাকের কাছে নিকৃষ্ট এবাদতকারীদের মধ্যে পরিগণিত হবে, যে তোষামোদের উদ্দেশ্যে জালেম শাসকদের নিকট আসা যাওয়া করে।-(মেশকাত)

অগ্নি পর্বত:

দোজখীদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন

Le 4 Law (সাউরহিকুহু ছউদান)

অর্থ : অবিলম্বেই আমি তাকে সাউদ’-এর উপর আরোহণ করাববা (সাউদ দোজখের একটি পাহাড়ের নাম)।–(সূরা মুদ্দাসসির)

রাসূলে পাক (ছঃ) বলেছেন, সাউদ একটি অগ্নি পর্বত। ৭০ বছর পর্যন্ত দোজখীকে এর উপরে চড়ানো হবে। অতঃপর ৭০ বছর পর্যন্ত তথায় রাখার পর নীচে ফেলে দেয়া হবে। চিরকাল তার সাথে এরূপ ব্যবহার করা হতে থাকবে।–(তিরমিযী)

সিলসিলা বা অতিলম্বা জিঞ্জির :

জাহান্নামীদেরকে যে জিঞ্জির বা শিকলে আবদ্ধ করা হবে সে সম্পর্কে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন

سلة ذرعهاسبعون

خذوه فغلوه ثم الجحيم صلوه تم

ذراعا فاشكوه

উচ্চারণ : খুযুহু ফাগুলুহু সুম্মাল জাহীমা ছাল্লুহু সুম্মা ফী সিলসিলাতিন যারউহা সাবউ’না যিরা-আন ফাসলুকূহু।

অর্থ : (ফেরেশতাদেরকে হুকুম করা হবে, ) তোমরা ওদেরকে ধর। অতঃপর তাওক’ (গলবন্ধ) পরাও। এর পর ওদেরকে দোজখে ফেলে দাও। আর তাদেরকে এমন শৃংখলে আবদ্ধ কর যার দৈর্ঘ ৭০ হাত।–(সূরা হাক্কাহ)

হাকীমূল উম্মত হযরত আশরাফ আলী থানভী (রঃ) বয়ানুল কোরআন নামক তাফসীর গ্রন্থে লিখেছেন, উক্ত হাতের সঠিক পরিমাণ একমাত্র আল্লাহ পাকই অবগত আছেন। কারণ এটা হচ্ছে পরকালীন জগতের হাত।

রাসূলে পাক (ছঃ) বলেছেন, একটি সীসাখণ্ড যদি আসমান থেকে জমিনের প্রতি ছেড়ে দেয়া হয়, তবে রাত হওয়ার পূর্বেই তা জমিনে পৌঁছে যাবে। অথচ এ দুয়ের মাঝখানের দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশ’ বছরের পথ। আর ঐ সীসাখণ্ডটি যদি জাহান্নামীদের শৃংখলের এক প্রান্ত থেকে ছেড়ে দেয়া হয় তবে তা অন্য প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছতে চল্লিশ বছর লেগে যাবে।–(তিরমিযী)

উপরোক্ত হাদীস দ্বারা বুঝা যায়, জাহান্নামীদের শিকলের র্দৈঘ আসমান জমিনের মধ্যবর্তী দূরত্বের চেয়ে অধিক।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, উক্ত শিকল জাহান্নামীর দেহে ঢুকিয়ে দেয়া হবে, পায়খানার রাস্তায় ঢেলে দেয়া হবে। অতঃপর তাকে আগুনে এভাবে পোড়ানো হবে যেভাবে লৌহদণ্ডে কা’বাব এবং তেলে টিডিড (এক জাতীয় বড় ফড়িং) ভাজা হয়।-(ইবনে কাসীর)

তওক বা গলবন্ধ :

আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে তওক’-এর আলোচনা করেছেন। যেমন

انا اعتدنا للكفرين سلس واغلظ وسعيرا

উচ্চারণ : ইন্না আ’তাদনা–লিলকাফিরীনা সালাসিলাওঁ ওয়া আগলালাওঁ ওয়া সাঈ’রান-।

অর্থ : নিশ্চয়ই আমি কাফেরদের জন্য শৃংখলসমূহ, তওকসমূহ এবং প্রজ্বলিত আগুন তৈরি করে রেখেছি।–(সূরা দাহর)

আল্লাহ পাক অন্যত্র এরশাদ করেন

فسوف يعلمون–إن الأغل في أعناقهم واللسل يسحبون في

الحميم ط ثم في النار يسجرون

উচ্চারণ : ফাসাওফা ইয়া’লামূনা ইযিল আগলালু ফী আ’নাক্বিহিম ওয়াসসালাসিলু ইউসহাবূনা ফিল হামীমি; সুম্মা ফিন্না-রি ইউসজারূনা।

তারা অচিরেই জানতে পারবে যখন তাদের গলায় তওকসমূহ হবে এবং (ঐ তওক) জিঞ্জিরসমূহ (এভাবে গেঁথে দেয়া হবে যে, ) তাদেরকে হেঁচড়ে উত্তপ্ত পানির দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। অতঃপর আগুনে ফেলা হবে।–(সূরা মোমেন)

ইবনে আবী হাতেম (রঃ)-এর এক হাদীসে আছে, জাহান্নামের একদিকে একটি কালো মেঘ দেখা দেবে, জাহান্নামীরা তা দেখতে পাবে। তাদেরকে প্রশ্ন করা হবে, তোমরা কী চাও:তারা দুনিয়ার উপর অনুমান করে বলবে, এ মেঘ বৃষ্টি বর্ষণ করুক, এটাই আমরা কামনা করি। তখন ঐ মেঘ দেখে তওক’ (জিঞ্জির এবং আগুনের (জ্বলন্ত) কয়লাসমূহ পতিত হতে থাকবে। অগ্নিস্ফুলিংগসমূহ তাদেরকে দগ্ধ করতে থাকবে এবং তওক বা জিঞ্জিরের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে। যে উত্তপ্ত পানিতে জাহান্নামীদেরকে নিক্ষেপ করা হবে সে সম্পর্কে কাতাদা বলেন, গোনাহগারদের চুল ধরে ঐ পানিতে ডুবানো হবে। এতে করে সমগ্র দেহের গোশত বিগলিত হয়ে খসে পড়তে থাকবে। শুধু হাড়গুলো এবং চোখ দুটি অবশিষ্ট থাকবে। আর কিছুই থাকবে না।

গন্ধকের পোশাক:

জাহান্নামীদেরকে শাস্তিস্বরূপ গন্ধকের লেবাস পরানো হবে। যেমন–আল্লাহ পাক এরশাদ কবেন

شرابيلهم من قطران وتغشى وجوههم النار

উচ্চারণ : সারা-বীলুহুম মিন কাত্বিরানিওঁ ওয়া তাগশা উজুহাহুমুন না-র।

অর্থ : তাদের জামা হবে গন্ধকের আর আগুন তাদের মুখমণ্ডল আচ্ছাদিত করে ফেলবে। –(সূরা ইবরাহীম)

হাকীমুল উম্মত হযরত আশরাফ আলী (রঃ) বলেছেন, আয়াতে উল্লিখিত কাতিরান’ এক প্রকার গাছের তেল। এর জামা পরানোর অর্থ, সমগ্র দেহে উক্ত তেলের প্রলেপ দেয়া হবে, যাতে করে অতি তাড়াতাড়ি দেহে আগুন লেগে যেতে পারে।–(বয়ানুল কোরআন)

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, কাতিরুন বলা হয় গলিত তামাকে। উক্ত তামা হবে জাহান্নামীদের পোশাক। তা অত্যন্ত উষ্ণ হয়ে আগুনের মত হয়ে যাবে।–(ইবনে কাসীর)

মুসলিম শরীফের এক হাদীসে রাসূলে পাক (ছঃ) বলেন, যে নারী মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করে উচ্চ স্বরে কাঁদে এবং তওবা না করে মৃত্যুবরণ করে, তাকে রোজ কেয়ামতে এমন অবস্থায় উঠানো হবে যে, তার একটি জামা হবে কাতিরানের (গন্ধক বা তামার) এবং আর একটি হবে খুজলির। অর্থাৎ সমগ্র দেহে খুজলি সৃষ্টি করে এর উপর কাতিরান মেখে দেয়া হবে।

পবিত্র কোরআনের অন্য এক আয়াতে বলা হয়েছে

فالذين كفروا قلعت هم ثياب بين اړ.

উচ্চারণ : ফাল্লাযীনা কাফারূ কুত্বত্বি’আত লাহুম সিয়াবুম মিন্ না-র।

অর্থ : অতএব, যারা কাফের ছিল তাদের পরার জন্য আগুনের কাপড় কাটা হবে। –(সূরা হজ্জ)

জাহান্নামের রক্ষীদের তিরস্কার:

বিভিন্ন প্রকার দৈহিক শাস্তি ভোগ ছাড়াও জাহান্নামীরা বিরাট মানসিক শাস্তি ও অস্থিরতা ভোগ করবে। সেটা হল, জাহান্নামরক্ষীরা তাদেরকে তিরস্কার করবে।

কোরআন করীমের বিভিন্ন আয়াতে এর উল্লেখ রয়েছে। যেমন

وقيل تهم توقوا عذاب الثار الزی گنم به تكبون–

উচ্চারণ : ওয়া কীলা লাহুম যূকু আযা-বান্না-রিল্লাযী কুনতুম বিহী তুকাযযিবূন।

অর্থ : আর তাদেরকে বলা হবে, এখন তোমরা ঐ আগুনের শাস্তি ভোগ কর যা তোমরা অস্বীকার করতে।–(সূরা সাজদা)

অন্যত্র এরশাদ হয়েছে

فاليوم

تكم الدنيا واستمتعت

أذهبتم طيم

تجزون عذاب الهون بما كنتم تستكبرون في الأرض بقيرالحق ويما كنتم تفقون ۔

উচ্চারণ : আযহাবতুম ত্বইয়িবাতিকুম ফী হাইওয়ায়াতিকুমু দুনইয়া—ওয়াসতামতা’তুম বিহা–ফালইয়াওমা তুজযাওনা আযাবাল হুনি বিমা কুনতুম তাসতাকবিরূনা ফি লআরদি বিগাইরিল হাক্কি ওয়া বিমা কুনতুম তাফসুকূনা।

অর্থ : তোমরা দুনিয়ার জীবনে নিজের স্বাদ পূর্ণ করেছ এবং তা হতে উপক্বত হয়েছ, এখন দুনিয়াতে যে অন্যায়ভাবে অহংকার এবং নাফরমানী করতে, তার দরুন তোমাদেরকে অপমানজনক শাস্তি দেয়া হবে।–(সূরা আহকাফ)।

হযরত যায়েদ ইবনে আসলাম (রাঃ) বলেন, একদা হযরত ওমর (রাঃ) পানি চাইলেন। তাঁর নিকট মধু মিশ্রিত পানি উপস্থিত করা হলো, কিন্তু তিনি তা পান না করে বললেন, এ পানি ভাল, কিন্তু তবুও আমি পান করবো না। কারণ আমি কোরআন পাকে পড়েছি, যে নিজ প্রবৃত্তি অনুসারে চলে, আল্লাহ তা’আলা তার নিন্দা করে বলেছেন : রোজ কেয়ামতে এসব লোককে বলা হবে, তোমরা দুনিয়াতে ভোগবিলাসে জীবন কাটিয়েছ। তাই আমার আশংকা হচ্ছে, হয়ত আমাদের নেক আমলের বিনিময়ে দুনিয়াতেই ইচ্ছা অনুযায়ী ভোগ সামগ্রী দিয়ে দেয়া হবে। -(মেশকাত)

.

জাহান্নামীদের অবস্থা

জাহান্নামীদের সংখ্যা :

রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা হযরত আদম (আঃ)-কে সম্বোধন করবেন, ওহে আদম! তিনি বলবেন, আমি আপনার দরবারে হাজির, আপনার আদেশানুগত, সমস্ত কল্যাণ আপনার হাতে। তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আপন সন্তান-সন্ততিদের থেকে জাহান্নামীদেরকে বের করুন। তিনি আরজ করবেন, জাহান্নামী কতজন:আল্লাহ বলবেন, প্রতি হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন। একথা শুনে হযরত আদম (আঃ) অত্যন্ত বিচলিত হবেন। তখনকার চিন্তায় শিশু বৃদ্ধ হয়ে যাবে, গর্ভবতী মহিলার গর্ভপাত হয়ে যাবে আর মানুষ বেহুঁশ (মাতাল) হয়ে যাবে। অথচ তারা বেহুঁশ (মাতাল) নয়। তবে আল্লাহর আযাব অত্যন্ত কঠিন (যা দেখে তারা বোধশূন্য হয়ে পড়বে)। একথা শুনে সাহাবায়ে কেরাম নিবেদন করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! (প্রতি সহস্রে) ঐ একজন জান্নাতী আমাদের মধ্যে হতে কে হবে:নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন (তোমরা চিন্তিত হয়ো না), আনন্দিত হও, ঐ সংখ্যা এভাবে হবে যে, তোমাদের মধ্য হতে হবে একজন আর এক হাজার হবে ইয়াজুজ-মাজুজের মধ্য হতে।-(মেশকাত)

অর্থাৎ ইয়াজুজ-মাজুজের সংখ্যা এত বেশী হবে যে, তোমাদের জনপ্রতি ওদের এক হাজার করে পড়বে। ওরাও যেহেতু আদম সন্তান, তাই ওদের প্রতি সহস্রে নয়শত নিরানব্বই জন জাহান্নামে যাবে।

জাহান্নামীদের অধিকাংশ হবে মহিলা :

রাসূল (ছঃ) বলেছেন, আমি জান্নাতের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, অধিকাংশ জান্নাতী হচ্ছে দরিদ্র লোক। আর জাহান্নামের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, অধিকাংশ জাহান্নামী মহিলা। -(মেশকাত)

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) একদিন ঈদুল ফিতর অথবা ঈদুল আযহা উপলক্ষে ঈদগাহের দিকে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে মহিলাদের নিকট দিয়ে অতিক্রম করলেন। তখন তাদেরকে বললেন, ওহে মহিলারা! তোমরা দান কর। কারণ আমি দেখেছি, জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসী মহিলা। তারা এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে নবী (ছঃ) বললেন, তোমরা অধিক লা’নত কর ও স্বামীদের না-শোকরী করে থাক।-(বোখারী ও মুসলিম)

দ্রষ্টব্যঃ লা’নত অর্থ আল্লাহর দয়া থেকে দূরবর্তী হওয়া। হুযুর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথার উদ্দেশ্য হচ্ছে–যেহেতু মহিলারা বহু ক্ষেত্রে অন্য মহিলাদের লানত করে ফলে তারা আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। আর এর অর্থই হচ্ছে জাহান্নামে প্রবেশ করা।

 জাহান্নামীদের কুৎসিত চেহারাঃ

কোরআন পাকের বিভিন্ন আয়াতে জাহান্নামীদের কুৎসিত বিশ্রী চেহারার বর্ণনা দেয়া হয়েছে।

যেমন :

و السيئت جزاء سيئة مثلها وترهقهم ذلة ط مالهم

من الله من عام كانما أغشيت وجوههم قطعا من الليل مظلا۔

উচ্চারণ : ওয়াল্লাযীনা কাসাকুস সাইয়্যিআতি জাযা-উ স্যায়্যিআতিম বিমিছলিহা–ওয়া তারহাতুহুম যিল্লাহ্, মা লাহুম মিনাল্লা-হি মিন আছিম, কাআন্নামা–উগশিয়াত উজুহুহুম কিতাআম মিনাল লাইলি মুযলিমা।

অর্থ : আর যারা মন্দ কাজ করেছে, মন্দের সাজা তার অনুরূপই হবে এবং তাদের মুখমণ্ডলের উপর লাঞ্ছনা ছেয়ে যাবে, আল্লাহর আযাব থেকে কেউ তাদেরকে বাঁচাতে পারবে না। তাদের কুৎসিত অবস্থা এরূপ হবে যেন তাদের চেহারা অন্ধকার রাতের ভাঁজের পর ভাঁজ থেকে দেয়া হয়েছে।–(সূরা ইউনুস)।

উপরোক্ত আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, জাহান্নামীদের চেহারা অত্যন্ত কালো হবে।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বর্ণনা করেন, কোন জাহান্নামীকে যদি দুনিয়াতে পাঠিয়ে দেয়া হত তা হলে তার কুৎসিত ও ভয়ানক চেহারা দেখে এবং তার শরীরের দুর্গন্ধের দরুন দুনিয়াবাসী সব মরে যেত। একথা বলে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) খুব কাঁদলেন। অপর আয়াতে বলা হয়েছে :

تلفح وجوههم النار وهم فيها كالون ط

উচ্চারণ : তালফাহু উজুহাহুমুন্না-রু ওয়া হুম ফীহা–কালিহুন।

 অর্থ : আগুন তাদের চেহারা ঝলসেদেবে, ফলে তাদের চেহারা বিকৃত হয়ে যাবে। -(মুমিনূন)

 রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম a s শব্দের তাফসীরে বলেছেন, জাহান্নামী জাহান্নামের অগ্নিতে দগ্ধীভূত হবে, তার উপরের ঠোঁট কুঞ্চিত হয়ে মস্তক পর্যন্ত আর নিচের ঠোঁট ঝুলে নাভি পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।–(তিরমিযী)

জাহান্নামীদের চোখের পানিঃ

হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন সাহাবায়ে কেরামকে সম্বোধন করে বললেন, তোমরা কাঁদ। কান্না না আসলে কান্নার ভান কর। কারণ জাহান্নামীরা এত কাঁদবে যে, ফলে তাদের চেহারায় নালার সৃষ্টি হয়ে যাবে। কাঁদতে কাঁদতে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছবে যে, চোখ থেকে আর পানি বের হবে না; বরং রক্ত বের হবে। ফলে চোখে ঘা হয়ে যাবে। চোখের পানি এবং রক্ত এত অধিক হবে যে, তাতে নৌকা ছেড়ে দিলে তা চলতে থাকবে।–(শরহুস সুন্নাহ)

 জাহান্নামীদের জিহ্বাঃ

রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কাফের তার জিহ্বা দু’ফরসখ (এক ফরসখ তিন মাইল) পর্যন্ত বাইরে বের করে দেবে, তার উপর দিয়ে মানুষ চলাচল করবে। –(তারগীব ওয়া তারহীব)

জাহান্নামীদের বিশাল দেহ :

রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জাহান্নামে কাফেরদের দু’ কাঁধের মধ্যবর্তী স্থান এত প্রশস্ত হবে যে, একজন দ্রুতগামী আরোহীর সে স্থান অতিক্রম করতে তিন দিন লেগে যাবে। তাদের চোয়াল হবে ওহুদ পাহাড়ের ন্যায় বড় এবং শরীরের চামড়া এত পুরু হবে যে, তা অতিক্রম করতে তিন দিন লাগবে।–(মুসলিম)।

তিরমিযী শরীফের এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কেয়ামতের দিন কাফেরদের চোয়াল ওহুদ পাহাড় আর উরু বায়যা’ পাহাড়ের মত বড় হবে। আর দোজখে তাদের বসার স্থান তিন দিনের পথ পরিমাণ প্রশস্ত হবে, যা মদীনা হতে রাবাযা পর্যন্ত বিস্তৃত জায়গার সমান।-(মেশকাত)

অপর এক হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মতের কোন কোন জাহান্নামীকে এত বড় করে দেয়া হবে যে, একাই সে জাহান্নামের কোণ পূর্ণ করে ফেলবে।–(তারগীব ওয়া তারহীব)

পুলসেরাত পার হয়ে জাহান্নামে পতন:

জাহান্নামের উপর পুলসেরাত স্থাপন করা হবে। নেক্কার বদকার সবাইকে পুলসেরাতের উপর দিয়ে যেতে হবে। আল্লাহ তা’আলা কোরআনে ঘোষণা করেছেন

وإن منكم إلا واردها كان على ربك حتما مقضيا ط

উচ্চারণ : ওয়া ইম মিনকুম ইল্লা–ওয়া-রিদুহা-, কা-না আলা–রব্বিকা হাতমাম মাকদিয়্যা।

অর্থ : তোমাদের প্রত্যেককেই কেয়ামতের দিন পুলসেরাত অতিক্রম করতে হবে। এটা তোমাদের পরওয়ারদেগারের সুনির্দিষ্ট বিধান।–(সূরা মারইয়াম)।

রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জাহান্নামের পৃষ্ঠদেশে পুলসেরাত স্থাপন করা হবে। নবীগণের মধ্যে সর্বপ্রথম আমি আপন উম্মতকে নিয়ে তা অতিক্রম করব।

ঐদিন কেবল নবী-রাসূলরাই কথা বলবেন। আর তাদের কথা হবে। La La ll হে আল্লাহ! রক্ষা কর।

অতঃপর বলেন, জাহান্নামে সাদান বৃক্ষের কাঁটার ন্যায় বাঁকা বহু আঁকড়া রয়েছে। সেগুলো যে কত বড় তা আল্লাহ পাকই অবগত আছেন। সেসব আঁকড়া উপর দিয়ে গমনকারীদেরকে টেনে জাহান্নামে ফেলার চেষ্টা করবে। ফলে কতেক জাহান্নামে পড়ে যাবে এবং কখনো মুক্তি পাবে না। এরা হচ্ছে কাফের। আর কতেক ক্ষত-বিক্ষত হয়ে জাহান্নামে পতিত হবে, তবে পরে মুক্তি পাবে (এরা হচ্ছে গোনাহগার মুসলমান)।

অপর এক হাদীসে রয়েছে, কোন কোন মু’মিন পলকের মধ্যে, কোন মু’মিন বিদ্যুৎ গতিতে, কেউ বাতাসের গতিতে, কেউ দ্রুতগামী ঘোড়ার গতিতে আবার কেউ উটের গতিতে পার হয়ে যাবে। কেউ ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় পার হয়ে যাবে। আর কতককে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।–(বোখারী, মুসলিম)।

হযরত কাব (রাঃ) বলেন, জাহান্নাম আপন পৃষ্ঠদেশে সমস্ত মানুষকে স্থির করে নেবে। যখন সমস্ত মানুষ একত্রে হয়ে যাবে তখন আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামকে বলবেন, তুই নিজের লোকদেরকে রেখে বেহশতীদেরকে ছেড়ে দে। অতএব, জাহান্নাম বদকারদেরকে লোকমা বানিয়ে নেবে। আর জাহান্নাম তাদেরকে এমনভাবে চিনতে পারবে যেমন তোমরা আপন সন্তানকে চিনে থাক; বরং এর চেয়েও ভালরূপে চিনবে।–(ইবনে কাসীর)

মোট কথা, জান্নাতীরা আল্লাহর অনুগ্রহে পুলসেরাত পার হয়ে জান্নাতে চলে যাবে আর জাহান্নামীরা জাহান্নামে পতিত হবে। এটাই আল্লাহ তা’আলা নিম্নের আয়াতে এরশাদ করেছেনঃ

ثم ننجي الذين اتقوا ونر الظلمين فيها جثيا ۔

উচ্চারণ : ছুম্মা নুনাজ্জীনা লাযীনা ত্তাকাওঁ ওয়া নাযারু জ্জোয়া-লিমীনা ফীহা–জিছিয়্যা-।

অর্থ : অতঃপর আমি সেসব লোককে মুক্তি দেব যারা ভয় করত আর জালেমদেরকে তাতে (জাহান্নামে) এভাবে ফেলে রাখব যে, তারা হাঁটুর উপর ভর করে থাকবে।–(সূরা মারইয়াম)

জাহান্নামীদের জাহান্নামে প্রবেশঃ

কোরআন পাকের বিভিন্ন স্থানে জাহান্নামীরা জাহান্নামে কিভাবে প্রবেশ করবে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

তন্মধ্যে একটি পদ্ধতি হলো, দোযখীদেরকে পিপাসার্ত অবস্থায় দোযখে ঢুকানো হবে। ঢুকানোর পূর্বে দরজায় দাঁড় করিয়ে তাদের সাথে ফেরেশতারা নানা প্রশ্ন করবে। যেমন বলা হয়েছে :

وفوق المجرمين الى جهنم وردا ط

উচ্চারণ : ওয়া নাসূকু লমুজরিমীনা ইলা–জাহান্নামা ওয়িরদা-।

 অর্থ : আমি পাপীদেরকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় দোযখের দিকে তাড়িয়ে নেব।–(সূরা মারইয়াম)

يوم يشبون في النار على وجوههم ذوقوا من سقوط

উচ্চারণ : ইয়াওমা ইউসহাবূনা ফিন্না-রি আলা–উজুহিহিম যুকূ মাসসা সাক্কার।

অর্থ : যেদিন তাদেরকে উপুড় করে জাহান্নামের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে, সেদিন তাদের বলা হবে, জাহান্নামের স্বাদ গ্রহণ কর।–(সূরা কামার)

ف يربوا فيها هم والغاون ط وجنود إبليس أجمعون

উচ্চারণ : ফাকুবকিবূ ফীহা–হুম ওয়াল গাউন; ওয়া জুনুদু ইবলীসা আজমাউন।

অর্থ : অতঃপর তাদেরকে (পথভ্রষ্টদেরকে) এবং ইবলীসের বাহিনীকে উপুড় করে জাহান্নামে ফেলা হবে।–(সূরা শুআরা)

اصي والاقدام

م ه ، و

م يعرف المجرمون بسيمهم فيؤم

উচ্চারণ : ইউ’রাফুল মুজরিমূনা বিসীমাহুম ফাইউ’খাযু বিন্নাওয়াছী ওয়াল আকদাম।

অর্থ : পাপীদেরকে চিহ্ন দেখে চেনা যাবে, অতঃপর তাদেরকে পা ও মাথার মুষ্টি ধরে পাকড়াও করা হবে।–(সূরা আররাহমান)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, অপরাধীদের হাত পা মুড়িয়ে একত্র করে ফেলা হবে। অতঃপর লাকড়ির ন্যায় ভেঙ্গে গুঁড়ো করে জাহান্নামে ফেলে দেয়া হবে।–(তারগীব ওয়া তারহীব)।

أحشروا الذين ظلموا وازواجهم وما كانوا يعبدون من دوني الله فاهدوهم–إلى اصراط الجيم–وقفوا هم أنهم مستولون ما لم تناصرون . بل هم اليوم مستسلمون 

উচ্চারণ : উহশুরু ল্লাযীনা যলাম্ ওয়া আযওয়া-জুহুম ওয়ামা–কা-নূ ইয়া’বুদূনা মিন দূনিল্লা-হি ফাহদূহুম ইলা–ছিরাত্বিল জাহীম। ওয়াকিফুহুম ইন্নাহুম মাসঊলূনা মা-লাকুম লা তানা-ছারুন, বাল হুমুল ইয়াওমা মুসতাসলিমূন।

অর্থ : ফেশেতাদেরকে বলা হবে, জালেম ও তাদের সহচরদেরকে এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের এবাদত করত তাদেরকে একত্রিত কর আর জাহান্নামের পথে পরিচালিত কর। অতঃপর তাদেরকে থামাও। কারণ তাদেরকে প্রশ্ন করা হবে, তোমাদের কি হলো, তোমরা একে অপরের সাহায্য করছ না কেন:বস্তুতঃ সেদিন তারা আত্মসমর্পণ করবে।–(সূরা সাফফাত)

يوم تقلب وجوههم في النار يقولون ليتنا أطعنا الله واطعنا

الرسولا

উচ্চারণ : ইয়াওমা তুকাল্লাবু উজুহুহুম ফিন্না-রি ইয়াকুলূনা ইয়া–লাইতানা–আতোয়ানা ল্লা-হা ওয়া আতোয়ানার রাসূলা-।

অর্থ : সেই দিন তাদের মুখমণ্ডলসমূহ আগুনে নিক্ষেপ করা হবে আর তারা বলবে : হায়! আমরা যদি আল্লাহকে এবং রাসূলকে অনুসরণ করতাম (তা হলে আজ এ দুর্দশা হত না)!

দোজখীদেরকে শয়তানের সম্বোধন :

একদিকে দোজখীরা শয়তানের অনুসরণের কারণে অনুতাপ করতে থাকবে এবং উপরোক্ত আয়াতে বর্ণিত রূপ ধমক দেয়া হতে থাকবে। অন্য দিকে শয়তান নিম্নরূপ ভাষণ দিয়ে তাদেরকে ধিক্কার দিতে থাকবে।

وقال الشيطن لما قضى الأمر إن الله وعدكم وعد الحق ووعدكم فالفتكم ط وما كان إلى عليگم من سلطن إلا أن دعوتكم فاستجبتم إلى ج فتومونی ولوموا انكم ما أنا بمفرگم وما أنتم

ب رخی د ابي كفرت بما أشركتمون من قبل د ان الظلمين لهم عذاب

اليم–

উচ্চারণ : ওয়া ত্বা-লা শশাইত্বায়া-নু লাম্মা–কুদ্বিয়াল আমরু ইন্নাল্লা-হা ওয়া’দাকুম ওয়া’দাল হাক্বকি ওয়া ওয়াআততুকুম ফাখলাফতুকুম ওয়ামা–কা-না লিয়া আলাইকুম মিন সুলতোয়া-নিন ইল্লা–আন দা’আওতুকুম ফাসতাজাবতুম লী ফালা–তালুমূনী ওয়া লূমূ আনফুসাকুম মা–আনা বিমুছরিখিকুম ওয়ামা–আনতুম বিমুছরিখিয়্যা; ইন্নী কাফারতু বিমা আশরাকতুমূনি মিন কাবলু; ইন্নায যোয়া-লিমীনা লাহুম আযা-বুন আলীম।

আর (কেয়ামতের দিন) যখন সব মোকদ্দমা সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে, তখন শয়তান বলবে (আমাকে ভাল মন্দ বলা অন্যায়, কেননা), নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের সাথে সত্য ওয়াদা করেছেন এবং আমি ত কিছু ওয়াদা করেছিলাম, অতঃপর আমি তোমাদের সাথে ক্বত ওয়াদা খেলাফ করেছি; আর তোমাদের উপর আমার এতদ্ব্যতীত অন্য কোন ক্ষমতাও চলছিল না যে, আমি তোমাদেরকে পথভ্রষ্টতার দাওয়াত দেই, অতঃপর তোমরা (নিশ্চয়ই) আমার সে দাওয়াত গ্রহণ করেছ, অতএব তোমরা আমাকে ভর্ৎসনা তিরস্কার করো না, নিজেদেরকেই ভর্ৎসনা তিরস্কার কর, না তোমরা আমার সাহায্যকারী আর না আমি তোমাদের সাহায্যকারী; এ কাজে আমি তোমাদের উপর অসন্তুষ্ট যে, এর পূর্বে (দুনিয়ায়) তোমরা আমাকে (আল্লাহর) শরীক সাব্যস্ত করতে, অবশ্যই জালেমদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।–(সূরা ইবরাহীম)।

শয়তান যখন নিজের নির্দোষ হওয়ার কথা ঘোষণা করবে এবং কোন প্রকার সাহায্য-সহানুভূতি করতে অস্বীকার করবে, তখন জাহান্নামীদের আফসোসের কোন সীমা থাকবে না। এ সময় দোজখীদের ক্রোধ যে কি পরিমাণ হবে তা না বললেই চলে।

বিভ্রান্তকারীদের প্রতি দোজখীদের গোসসা:

যারা দোজখীদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে তাদের উপর তারা ক্রুদ্ধ হয়ে বলবে:

إنا كنا لكم تبعا فهل أنتم مفنون عثا من عذاب الله من شئ۔

উচ্চারণ : ইন্না–কুন্না–লাকুম তাবাআন ফাহাল আনতুম মুগনূনা আন্না–মিন আযা-বি ল্লা-হি মিন শাইয়িন।

অর্থ : আমরা তো তোমাদেরই অনুসরণ করছিলাম। তাই তোমরা কি আল্লাহর আযাবের এতটুকুও আমাদের উপর থেকে কমাতে পার না?–(সূরা ইবরাহীম)

তারা এই প্রশ্নের জবাবে বলবে:

لو هدانا الله لهديم

ما سواء علينا أجزنا أم صبرنا مالنا من

উচ্চারণ : লাও হাদানাল্লা-হু লাহাদাইনাকুম; সাওয়া-উন আলাইনা আজাযিনা–আম ছবারনা–মা–লানা–মিম মাহীছ।

অর্থ : (তোমাদের কেমন করে রক্ষা করব:আমরা নিজেরাই ত রক্ষা পাচ্ছি না!) যদি আল্লাহ্ আমাদেরকে রক্ষা পাওয়ার কোন পথ বলে দিতেন তা হলে আমরাও তা তোমাদের বলে দিতাম। আমাদের সকলের ব্যাপারে উভয় পন্থাই সমান। তাই আমরা অস্থির হই কিংবা রাগান্বিত হই, আমাদের বাঁচার কোন পন্থা নেই।–(সূরা ইবরাহীম)

তারা অত্যধিক ক্রুদ্ধ হয়ে বিভ্রান্তকারীদের সম্পর্কে আল্লাহ পাকের দরবারে নিম্নরূপ নালিশ করবেঃ

ربنا أرنا البنين أضلنا من الجن والانس نجعلهما تحت اقدامنا

ليكونا من الأسفلين

উচ্চারণ : রাব্বানা–আরিনা–ল্লাযাইনি আদ্বোয়াল্লানা–মিনাল জিনি ওয়াল ইনসি নাজ’আলহুমা–তাহ্তা আক্বদা-মিনা–লিইয়াকূনা মিনাল আসফালীন।

অর্থ : হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে সেই শয়তান ও মানুষদেরকে দেখিয়ে দিন যারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে। আমরা ওদেরকে পা দিয়ে পিষে ফেলব, যাতে করে ওরা খুব লাঞ্ছিত হয়।–(সূরা হা-মীম সাজদাহ)

দোজখরক্ষী দারোগাদের নিকট দোজখীদের নিবেদন

দোজখী ব্যক্তিরা আল্লাহর আযাবে অস্থির হয়ে অবশেষে কাকুতি-মিনতি করতে থাকবে। দোজখরক্ষী মালেক দারোগাদের নিকট তারা আরজ করবেঃ

ادعوا ربكم يقف عنا يوما من العذاب

উচ্চারণ : উদ’উ রব্বাকুম ইউখাফফিফ আন্না–ইয়াওমাম মিনাল আযা-বি।

অর্থ : আপনারা নিজেদের প্রভুর নিকট একটু দোয়া করুন তিনি যেন একটি দিনের আযাব আমাদের উপর হালকা করে দেন।–(সূরা মো’মেন)

দোজখের রক্ষীরা তখন জবাব দেবেন।

تايكم وشكم بالبيت .

اولم ت

উচ্চারণ : আওয়া লাম তাকু তাতীকুম রুসুলুকুম বিলবাইয়্যিনা-ত।

অর্থ : তোমাদের নিকট কি তোমাদের পয়গম্বরগণ স্পষ্ট দলীল (মুজিযা) নিয়ে আগমন করেননি (দোযখ থেকে বাঁচার পন্থা বলে দেননি)?–(সূরা মু’মিন)

দোজখীরা উত্তরে বলবে হাঁ, তাঁরা ত অবশ্যই আগমন করেছেন, কিন্তু আমরা তাঁদের কথায় কান দেইনি। ফেরেশতারা তখন বলবেন : তা হলে তোমরাই এখন নিজেদের জন্য দোয়া কর; আমরা তোমাদের জন্য দোয়া করতে পারি না (তা কোন কাজে আসবে না)। কারণ কাফেরদের দোয়া (আখেরাতে) একেবারেই নিষ্ফল।

এর পর তারা দোজখের প্রধান কর্মকর্তা মালেকের নিকট এরূপ আরজ পেশ করবেঃ

يا مالك اليقض علينا ربك

উচ্চারণ : ইয়া–মালিকু লিয়াক্বদ্বি আলাইনা–রব্বুকা।

অর্থ : হে মালেক! (আপনি আমাদের জন্য দোয়া করুন) যেন আপনার প্রভু (মৃত্যু দিয়ে) আমাদেরকে শেষ করে দেন।

তিনি বলবেন :–

ণহন্নাকুম মা-কিছুন।

অর্থ : তোমরা একই অবস্থায় থাকবে (না মারবে, না এখান থেকে বের হবে)।

হযরত আ’মাশ (রঃ) বলতেন : আমার নিকট এররূপ রেওয়ায়েত পৌঁছেছে যে, হযরত মালেক (আঃ)-এর জবাব এবং দোজখীদের দরখাস্তের মধ্যে এক হাজার বছরের ব্যবধান থাকবে। এ অবস্থায় তিনি বলবেন : তোমরা আস, সরাসরি পরোয়ারদেগারের কাছে বল! কেননা তার চাইতে বড় আর কেউ নেই। তখন তারা সরাসরি পরোয়ারদেগারের নিকট আরজ করবেঃ

ربنا غلبت علينا شقتنا وكنا قوما ضالين ط ربنا أخرجناوثها فإن

عدنا فإنا ظلمون۔

উচ্চারণ : রব্বানা–গালাবাত আলাইনা শিক্ওয়াতুনা–ওয়া কুন্না–কাওমান দ্বোয়া-লীনা; রব্বানা–আখরিজনা–মিনহা–ফাইন উদনা–ফাইন্না–যোয়া-লিমূন।

অর্থ : হে আমাদের পরোয়ারদেগার! (বাস্তবিকই) আমাদের দুর্ভাগ্য আমাদেরকে ঘিরে ফেলেছিল এবং আমরা পথভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছিলাম। ওহে পরোয়ারদেগার! আপনি আমাদেরকে এখান থেকে বের করে দিন। অতঃপর পুনরায় যদি আমরা এরূপ করি তা হলে নিশ্চয়ই আমরা অপরাধী হব।–(সূরা মু’মিনূন)।

তখন আল্লাহ পাক উত্তরে বলবেন

I<; 4 5 us] উচ্চারণ : ইখসাউ ফীহা–ওয়ালা–তুকাল্লিমূনি।

 অর্থ : ওখানেই তোমরা অভিশপ্ত অবস্থায় পড়ে থাক। আমার সাথে কোন কথা বলবে না।

হযরত আবুদ দারদা (রাঃ) বলতেন : আল্লাহ্ পাকের এরূপ বলার পর দোজখী সর্বপ্রকার সহায়তা থেকে সম্পূর্ণ নিরাশ হয়ে পড়বে এবং গাধার ন্যায় চিৎকার করতে থাকবে আর অনুতাপ ও হা-হুতাশ করতে শুরু করবে।-(মেশকাত)

সুপ্রসিদ্ধ তাফসীর গ্রন্থ ইবনে কাসীরে বলা হয়েছে ও তাদের চেহারা বিকৃত হয়ে পড়বে। এমন কি এ করুণ অবস্থা দেখে কোন কোন ঈমানদার ব্যক্তি তাদের সুপারিশের জন্য অগ্রসর হবে, কিন্তু তারা তখন কোন দোজখীকেই আর চিনতে পারবে না। দোজখীরা তাদেরকে দেখে বলতে থাকবে, ওগো! আমি অমুক, কিন্তু তারা জবাবে বলতে থাকবে : তোমরা ভুল বলছ; আমরা তোমাদেরকে চিনিই না।

তোমার ওখানেই অভিশপ্ত অবস্থায় পড়ে থাক–আল্লাহ পাকের উপরোক্ত জবাবের পর দোজখের দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে এবং তারা সেখানে শাস্তি পেতেই থাকবে।

দোজখীদের করুণ চিৎকারঃ

আল্লাহ পাক এরশাদ করেন :

واما الذين شقوا ففي النار لهم فيها زفير وشهيق خاليين فيها

উচ্চারণ : ওয়া আম্মাল্লাযীনা শাকূ ফাফিন না-রি লাহুম ফীহা–জাফীরুওঁ ওয়া শাহীক্বন খা-লিদীনা ফীহা-।

অর্থ : যারা দুর্ভাগা বদকার তারা দোজখে এমন অবস্থায় থাকবে যে, তারা গাধার ন্যায় চিৎকার করতে থাকবে।

কামূস’-এ আছে, গাধার প্রথম ভাগের চিৎকারকে বলা হয় জাফীর’ এবং শেষ ভাগের চিৎকারকে বলা হয় শাহীক।–(সূরা হূদ)

আযাব থেকে নিষ্কৃতির জন্য সবকিছু ফিদিয়া দেয়ার আকাঙ্ক্ষা :

আল্লাহ পাক এরশাদ করেন :

الإفتدوا به ما

مثله مع

و جمیعا و

ولو أن للذين ظلموا

سوء العذاب يوم القيامة.

উচ্চারণ : ওয়া লাও আন্না লিল্লাযীনা যলামূ মা–ফিল আরদ্বি জামীআওঁ ওয়া মিছলাহু মাআহু লা-ফতাদাও বিহী মিন সূইল আযা-বি ইয়াওমাল কিয়া-মাহ্।

অর্থ : যদি সীমালংঘনকারীদের (শিরক ও কুফর অবলম্বনকারীদর) নিকট সমগ্র দুনিয়ার যাবতীয় সম্পদ এবং তার সাথে আরো সমপরিমাণ সম্পদ থাকত, তা হলে তারা রোজ কেয়ামতে কঠিন আযাব থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য তার সবকিছু ফিদিয়া বা মুক্তিপণ হিসেবে দান করে দিত।–(সূরা যুমার)

সূরা মা’আরেজে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন :

ঐদিন অপরাধীরা এরূপ আকাক্ষা করবে যে, আযাব থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য তারা তাদের ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী, ভ্রাতা এমনকি পরিবারের সবাইকে এবং তামাম দুনিয়ার সমস্ত ধন-সম্পদ তাদের (মুক্তির) বিনিময় স্বরূপ দিতে পারত (তা হলে কতই না ভালো হত)! কিন্তু (হায়!) না সেখানে কোন সম্পদ থাকবে আর না কেউ কারো বিনিময়ে কাজে লাগবে। আর যদি ধরে নেয়া হয় যে, এরূপ হবে, তা হলেও সে (বিনিময়) কখনো কবুল করা হবে না। যেমন সূরা মায়েদা’য় এরশাদ করা হয়েছে :

إن الذين كفروا لو ان لهم ما في الأرض حميعا ومثله معه إيفتوا

به من عذاب يوم القيمة ما تقبل منهم ولهم عذاب أليم

উচ্চারণ : ইন্নাল্লাযীনা কাফারূ লাও আন্না লাহুম মা–ফিল আরদ্বি জামী’আওঁ ওয়া মিছলাহু মা আহ্ লিয়াফতাদূ বিহী মিন আযা-বি ইয়াওমিল কিয়া-মাতি মা–তুকুব্বিলা মিনহুম ওয়া লাহুম আযা-বুন আলীমুন।

অর্থ : নিশ্চয়ই যারা কাফের তাদের নিকট যদি সমস্ত দুনিয়ার ধন-সম্পদ এবং তার সমপরিমাণ আরো সম্পদ থাকে এবং তার বিনিময়ে তারা রোজ কেয়ামতে আযাব থেকে মুক্তি লাভের ইচ্ছা করে, তা হলেও (কিছুই হবে না), তাদের নিকট হতে তা কখনো মঞ্জুর করা হবে না এবং দোজখে তাদের যন্ত্রণাদায়ক আযাব হতেই থাকবে।–(সূরা মায়েদা)

বেহেশতীরা হাসতে থাকবেঃ

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, বেহেশতবাসীরা দোজখীদের অবস্থা দেখে হাসতে থাকবে। সূরা মুতাফফিফীনে বলা হয়েছে :

فاليوم الذين من القار يضحكون على الأرائك ينظرون۔

উচ্চারণ : ফালইয়াওমাল্লাযীনা মিনাল কুফফা-রি ইয়াদ্বহানা আলাল আরা-ইকি ইয়ানযুরূন।

অর্থ : আজ ঈমানদারগণ কাফেরদেরকে দেখে হাসবে এবং সুন্দর আসনে বসে তাদের প্রতি তাকাতে থাকবে।

তাফসীরে দুররে মানসূরে হযরত কাতাদা (রাঃ)-এর এক রেওয়ায়েতে আছে, বেহেশতে এমন কিছু জানালা থাকবে যার ভেতর দিয়ে জান্নাতবাসীরা দোজখীদেরকে দেখতে পাবে এবং তাদের যন্ত্রণাদায়ক অবস্থা দেখে বিদ্রুপের হাসি হাসতে থাকবে। কেননা, ওরাও দুনিয়ায় ঈমানদারদেরকে দেখামাত্রই ঠাট্টা বিদ্রূপ করতে শুরু করত, তাদের প্রতি ভ্রুকুটি ও কটুক্তি করতে থাকত, এমন কি নিজ গৃহে বসে তাদের বিরূপ সমালোচনা করে আনন্দ পেত। আল্লাহ পাক তাই বলেন।

إن الذين أجرم

অর্থ : যারা অপরাধী পাপী তারা ঈমানদারদেরকে দেখে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত।

সূরা মো’মেনে আছে, দোজখীদেরকে আল্লাহ পাক বলবেন : আমার বান্দাদের মধ্যে (ঈমানদারগণের) এমন একটি দল ছিল, যারা (আমার নিকট) আরজ করত, হে আমাদের প্রভু! আমরা ঈমান এনেছি, তাই আমাদের মার্জনা করে দিন এবং আমাদের উপর সদয় হোন। অপনিই সমস্ত দয়াশীলের মধ্যে সবচেয়ে বড় দয়াশীল। কিন্তু তোমরা (কাফেররা) তাদের উপহাস করতে। তাদেরকে ঠাট্টা-বিদ্রুপে তোমরা এতদূর নিমগ্ন হয়ে পড়েছিলে যে, তা তোমাদেরকে আমাকে স্মরণ ভুলিয়ে দিয়েছিল। আজ আমি তাদেরকে ধৈর্য ধারণের পুরস্কার দিলাম, তারা আজ সফলকাম।

.

চিন্তা ও উপদেশ গ্রহণ

দোজখ এবং দোজখীদের সম্পর্কে যা কিছু এ পর্যন্ত বর্ণনা করা হল তা এ জন্য করা হয়নি যে, ভাসা ভাসা দৃষ্টিতে কোন রকমে পাঠ করেই কিতাবখানি আলমারির তাকে সাজিয়ে রাখা হবে এবং দোজখ ও দোজখবাসীদের অবস্থাসমূহ অন্যান্য কিচ্ছা-কাহিনী বা উপন্যাসের মত ভুলে যাওয়া হবে।

উপরোক্ত প্রসংগে যে সকল ঘটনা ও অবস্থাদির আলোচনা করা হয়েছে তার প্রতিটি অক্ষরই ছহীহ ও বাস্তব সত্য। তা যদি বার বার পাঠ করা হয়, নিজ নিজ বদ আমলের কথা চিন্তা করা হয়, তা হলে কঠিন থেকে কঠিনতর অন্তর বিশিষ্ট লোকেরাও নিজেদের জীবন অতি সহজেই বদলে নিতে এবং নিজের নফসকে দোজখীদের পরিণাম দেখিয়ে নেক আমল করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এবং তার রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সত্য বলে যারা বিশ্বাস করবে তারা দোজখ ও দোজখীদের সম্বন্ধে যা আলোচিত হয়েছে তা নিশ্চিত সত্য ও বাস্তব বলে স্বীকার করবে। যারা ঈমানদার বান্দা তারা সর্বদাই নিজ নিজ জীবনের হিসাব করতে এবং আল্লাহ্ পাকের দরবারে দোজখ থেকে বাঁচার জন্য দোয়া করতে থাকে।

আচ্ছা, এমন কি হতে পারে, যে ব্যক্তি দোজখের এ অবস্থাসমূহ সত্য বলে বিশ্বাস করে, সে কি তার দ্বীনী জীবন তথা দ্বীনদারীকে দুনিয়ার আরাম-আয়েশ এবং ক্ষণস্থায়ী মান-ইজ্জত ও ধন-দৌলত হাসিল করার জন্য বিসর্জন দিতে পারে:রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : দোজখকে আরাম ও ভোগবিলাসের মধ্যে এবং বেহেশতকে অপছন্দনীয় জিনিসের মধ্যে লুকিয়ে রাখা হয়েছে।–(বোখারী ও মুসলিম শরীফ)।

অর্থাৎ ভোগ-বিলাসে মত্ত হয়ে যারা জীবন অতিবাহিত করে তারা এমন কাজ করতে থাকে যার আড়ালে থাকে দোজখ; আর যারা প্রবৃত্তির অপছন্দনীয় পথে থেকে নেক আমল করতে থাকে তারা ঐ সকল কাজই করতে থাকে যার আড়ালে থাকে বেহেশত। হায়! তারা ত জাহান্নামের অবস্থা কিছুই জানে না–যারা এই ভেবে আত্মহত্যা করে বসে যে, মসিবত থেকে ত রেহাই পেয়ে যাব! তারাও জানে না যারা দুনিয়ায় ক্ষণস্থায়ী দুঃখ-কষ্টে ভীত হয়ে বলে ফেলে হায়রে, আল্লাহর দোজখেও কি আমার জন্য একটু ঠাই নেই?

একথা বাস্তব সত্য যে, যদি দোজখের আগুন, সেখানকার অজগর, বিচ্ছ, আগুনের পোশাক, আযাব দেয়ার বিভিন্ন এবং পন্থা দোজখের আহার্য সম্পর্কে একটু চিন্তা করা হয়, তা হলে মিউনিসিপ্যালিটি বা পার্লামেন্টের সদস্য পদের অধিকারী, অঢেল ধনৈশ্বর্য সঞ্চয়কারী এবং আকাশচুম্বী অট্টালিকা ও বিশাল সম্পদের মালিকরা কস্মিনকালেও ঐ সকল সম্মানের ধাঁধায় বড় বড় পাপে লিপ্ত হয়ে আখেরাত বিনষ্ট করতে পারত না।

বলুন ত, যে দোজখীদের ক্ষুধার অবস্থা জানে সে কি রোজা ছেড়ে দিতে পারে? যে ব্যক্তি দোজখের পেরেশানীর কথা জানে সে কি একটুও ঘুমাতে পারে এবং ক্ষণস্থায়ী আরামের জন্য নামাজ তরক করতে পারে? যে ব্যক্তি দোজখের সাপ-বিচ্ছুর দংশন ও তার বিষের যাতনার কথা শুনেছে, সে কি করে এ কথা বলতে পারে যে, দাড়ি রাখলে খুজলি হয়? যে লোক জুব্দুল হুযন’-এর সংবাদ জানে সে তোক দেখনোর উদ্দেশে কি করে এবাদত করতে পারে? যে (প্রাণীর) ছবি তৈরির পরিণাম জানে সে কি করে ছবি তৈরি করতে পারে?

যে এ বিশ্বাস করে যে, মদ্যপানের শাস্তি স্বরূপ দোজখীদের দেহের ঘাম বা নির্যাস পান করানো হবে, সে মদ্যপানের কাছেও যেতে পারে? কস্মিনকালেও যেতে পারে না।

এটা বাস্তব সত্য যে, বেহেশত এবং দোজখের অবস্থাসমূহ কেবল আমাদের আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে রয়েছে; একীনের স্তর পর্যন্ত পৌঁছেনি। কেননা উক্ত স্তরে পৌঁছলে বড় বড় গোনাহ ত দূরের কথা, ছোট ছোট গোনাহ্ করার কথাও কেউ কল্পনা করতে পারত না। হযরত আলী (রাঃ) বলতেন ও বেহেশত এবং দোজখকে আমার সামনে রেখে দেয়া হলেও আমার একীন বিন্দুমাত্রও বৃদ্ধি পাবে না। অর্থাৎ আমার ঈমান বিলগায়ব (অদৃশ্যে বিশ্বাস) এমন পরিপক্ক যে, তা স্বচক্ষে দেখার পর ততটুকুই হবে, যতটুকু না দেখা অবস্থায় আছে। যারা দোজখের অবস্থা জ্ঞাত হবে তাদের পক্ষে গোনাহে লিপ্ত হওয়া ত দূরের কথা, তারা এ দুনিয়ায় না হাসতে পারবে, না কোন আনন্দে শরীক হতে সক্ষম হবে। তারগীব ওয়া তারহীব’ গ্রন্থে এ মর্মে একটি বর্ণনা উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাসূলে পাক (ছঃ) হযরত জিবরাঈল (আঃ)-কে প্রশ্ন করলেনঃ আমি মিকাঈল (আঃ)-কে কখনো হাসতে দেখিনি। এর কারণ কি? তিনি উত্তরে বললেন : যখন দোজখ তৈরি করা হয়েছে তখন থেকে তিনি আর হাসেননি।-(আহমদ)

মুসলিম শরীফের এক রেওয়ায়াতে আছে, রাসূল (ছঃ) একবার এরশাদ করেন, সে মহান সত্তার কসম যার হাতে রয়েছে আমার প্রাণ, যে দৃশ্য আমি দেখেছি তা যদি তোমরা দেখতে, তা হলে নিশ্চয়ই তোমরা কম হাসতে এবং বেশি পরিমাণে কাঁদতে। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন : হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি দেখেছেন? উত্তরে তিনি বললেন : আমি বেহেশত ও দোজখ দেখেছি।-(তারগীব)।

হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন : কি আশ্চর্য, লোকেরা হাসে! অথচ তাদের দোজখ থেকে রক্ষা পাওয়ার কোন নিশ্চয়তা নেই! হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) বলেন : একবার রাসূলে পাক (ছঃ) বাইরে আগমন করেন এবং দেখতে পান, লোকেরা খিলখিল করে হাসছে। এ দেখে তিনি বললেন : যদি তোমরা যাবতীয় স্বাদ-আহ্লাদ হরণকারী মৃত্যুর কথা বেশি পরিমাণে স্মরণ করতে, তা হলে এখন যে অবস্থায় তোমাদেরকে দেখছি সে অবস্থায় কখনো উপনীত হতে পারতে না।–(মেশকাত)

মোট কথা, হুশিয়ার ও বিজ্ঞ একমাত্র ঐ ব্যক্তি, যে তার আখেরাতের জীবন সঠিক সুন্দরভাবে গঠন করে নেয় এবং ক্ষণস্থায়ী জীবনের ধন-দৌলত, ইজ্জত-আবরু, সম্মান প্রতিপত্তি এবং সরকারী পদমর্যাদার ফাঁদে পা দিয়ে নিজেকে দোযখে যাওয়ার উপযুক্ত করে তোলে না। কেননা, দোজখের আযাবে একবার পতিত হওয়ার পর ঐ সমস্ত আর কোন কাজেই আসবে না; তখন শুধু আফসোস অনুতাপই করতে হবে। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে :

ليتها كانت القاضية عما أغنى عى ماليه، هلك عني سلطانيه.

উচ্চারণ : ইয়ালাইতাহা–কা-নাতিল ক্বা-যিয়াহ্, মা–আগনা–আন্নী মালিয়াহ, হালাকা আন্নী সুলত্বোয়া-নিয়াহ।

অর্থ : হায় আফসোস! যদি মৃত্যু আমাকে খতম করে দিতে পারত! আমার ধন-সম্পদ আমার কোন কাজে এল না, আমার কর্তৃত্বও নিঃশেষ হয়ে গেল!-( আল-হাক্কাহ্)

বেহেশতের মত সুখের স্থান অনুসন্ধান এবং দোজখের ন্যায় অতুলনীয় শাস্তির জায়গা থেকে আত্মরক্ষার চিন্তা না করা একমাত্র নির্বোধের কাজ ছাড়া অন্য কিছুই হতে পারে না। রাসূলে পাক (ছঃ) বলেছেনঃ তোমাদের পক্ষে যত অধিক পরিমাণে সম্ভব বেহেশত অন্বেষণ কর–তার প্রতি অগ্রসর হও এবং যতদূর পার দোজখ থেকে দূরে সরে যাও। কেননা, জান্নাতের প্রতি ধাবমান এবং দোজখ থেকে পশ্চাদগামী ব্যক্তি কখনো নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে না। –(তারগীব ওয়া তারহীব)

হযরত ইয়াহইয়া ইবনে মু’আয (রঃ) বলতেন:অভাৰী ব্যক্তি হাতে পয়সা না থাকলে যতটা ভয় করে, ততটা ভয় যদি জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য করত, তা হলে সোজাসুজি বেহেশতে যেতে পারত।

হযরত মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদির (রঃ) যখন কাঁদতেন তখন চোখের পানি দাড়ি ও মোচে মলতেন। এর কারণ তিনি বলেছেন, যেখানে চোখের পানি পৌঁছবে সে স্থান জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। জনৈক আনসারী একদিন তাহাজ্জুদ নামায অন্তে কাঁদতে কাঁদতে একেবারে অস্থির হয়ে পড়লেন এবং বললেন : জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য তোমরা আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ কর। তাঁর অবস্থা দেখে নবী করীম (ছঃ) বললেন, তুমি আজ ফেরেশতাদেরকেও কাঁদিয়ে দিয়েছ।

হযরত জয়নুল আবেদীন একদিন নামায পড়ছিলেন। তখন হঠাৎ করে তার ঘরে আগুন লেগে যায়। কিন্তু তিনি তা আদৌ টের পেলেন না, নামাযেই মশগুল হয়ে রইলেন। নামায শেষে লোকেরা প্রশ্ন করল, আপনি কি টেরই পাননি যে, ঘরে আগুন লেগেছিল:তিনি উত্তরে বললেন : আখেরাতের আগুন আমাকে দুনিয়ার আগুন থেকে গাফেল করে রেখেছিল।

এক ব্যক্তির ঘটনা, তিনি রাতে ঘুমাতে যেতেন, কিন্তু ঘুম আসত না। তখন নামায পড়া শুরু করে দিতেন। আল্লাহ পাকের নিকট তিনি আরজ করতেন : হে আল্লাহ! আপনি অবগত আছেন, জাহান্নামের আগুনের ভয়ই আমার ঘুম বিনষ্ট করে দিয়েছে। অতঃপর তিনি সুবহে সাদেক পর্যন্তই নামাযে মশগুল থাকতেন।

হযরত আবু ইয়াজীদ (রঃ) সর্বক্ষণই কাঁদতেন। এর কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলতেন : যদি আল্লাহ্ পাক এতটুকু বলতেন, গোনাহ করলে গোসলখানায় বন্দী করে রাখা হবে, তা হলেও আমার কান্না কখনো বন্ধ হত না। সুতরাং গোনাহ করলে যখন এমন এক দোজখের ভয় দেখানো হয়েছে, যার আগুনকে তিন হাজার বছর পর্যন্ত তাপ দেয়া হয়েছে, তখন আমার কান্না কেমন করে বন্ধ হতে পারে?

দোজখ থেকে বাঁচার কিছু সংখ্যক দোয়াঃ

(১) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলে পাক (ছঃ) তাঁর সাহাবীদেরকে যেভাবে কোরআন পাকের সূরা শিখাতেন সেরূপ নিম্নোক্ত দোয়াও শিখাতেন ও

اللهم إني أعوذ بك من عذاب جهنم وأعوذ بك من عذاب القبر واعود

بك من فتنة المسيح الدجال وأعوذ بك من فتنة المحيا والممات

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আউযু বিকা মিন আযা-বি জাহান্নামা ওয়া আউযু বিকা মিন আযা-বিল কাবরি ওয়া আউযু বিকা মিন ফিতনাতি লমাসীহি দাজ্জা-লি ওয়া আউযু বিকা মিন ফিতনাতি লমাহইয়া–ওয়াল মামা-তি।–(তারগীব–মুসলিম)।

(২) হ্যর আনাস (রাঃ) বলেন : রাসূলুল্লাহ (ছঃ) অধিকাংশ সময় এ দোয়া পড়তেন:

ربنا اتنا في الدنيا حسنة وفي الآخرة حسنة وقنا عذاب النار–

উচ্চারণ : রব্বানা–আ-তিনা ফিদদুনইয়া–হাসানাতাওঁ ওয়া ফিল আ-খিরাতি হাসানাহ, ওয়া কিনা–আযা-বান না-র।–(বোখারী)।

(৩) রাসূলুল্লাহ (ছঃ) সাহাবী হযরত মুসলিম (রাঃ)-কে বললেন : তুমি যদি মাগরিবের নামাযের পর, iii (আল্লা-হুম্মা আজরিনী মিনান না-রি।) দোয়াটি ৭ বার পড় এবং ঐ রাতেই ইন্তেকাল কর, তা হলে তোমাকে দোজখ থেকে মুক্ত করে দেয়া হবে। অনুরূপভাবে ফজরের নামায সমাপ্ত করে কারো সাথে কথা বলার পূর্বে যদি এ দোয়া ৭ বার পাঠ কর এবং ঐ দিনেই মৃত্যুবরণ কর, তা হলে দোজখ থেকে তোমাকে রেহাই দেয়া হবে। –(আবূ দাউদ)

 (৪) হযরত রাসূলে আকরাম (ছঃ) বলেন : যে ব্যক্তি তিন বার আল্লাহ পাকের নিকট বেহেশত প্রার্থনা করে, তার জন্য বেহেশত আল্লাহর নিকট দোয়া করে:

ii. 41; all/ উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আদখিলহুল জান্নাতা।

অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাও।

যে তিন বার আল্লাহর নিকট দোজখ থেকে পানাহ্ চায়, তার জন্য দোজখ আল্লাহর নিকট দোয়া করে E i উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আজিরহু মিনা ননা-র।

–প্রভু হে! তাকে দোজখ থেকে বাঁচাও।–(তারগীব)।

.

হাশরের ময়দান

এ দুনিয়ায় যারাই একবার এসেছে তারা সবাই দুনিয়া ছেড়ে পরবর্তী জগতের পথে অগ্রসর হয়েছে। অর্থাৎ নিজ জীবন শেষ হওয়ার সাথে সাথেই মৃত্যুর কঠিন ঘাটি অতিক্রম করে বরজখ বা কবর জগতে পৌঁছেছে।

কবর জগতে বিভিন্ন আযাব ও দুঃখ কষ্ট এবং নানা প্রকার শান্তি ও সুখ উভয়ই রয়েছে। নিজ নিজ আমল অনুসারে প্রত্যেককেই বিভিন্ন অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়। মোট কথা, এ দুনিয়ায় যারাই আসে তারাই কবর জগতে চলে যেতে বাধ্য হয়। যেভাবে মানুষ ও জ্বিন জাতির বয়স নির্ধারিত হয়েছে, সেভাবে এ জগতের বয়সও সুনির্দিষ্ট করে দেয়া রয়েছে। যখন এ জগতের বয়স শেষ হয়ে যাবে তখন হঠাৎ করে সমগ্র জগদ্বাসীর মৃত্যু এসে উপস্থিত হবে। এক একজন মানুষের দুনিয়া থেকে চলে যাওয়াকে মৃত্যু এবং সমস্ত আমল নিঃশেষ হয়ে যাওয়াকে কেয়ামত বলা হয়। জীবন ও মৃত্যুর রহস্য সম্পর্কে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন :

الذي خلق الموت والحيوة ليبلوكم أيكم أحسن عملاط

উচ্চারণ : আল্লাযী খালাক্কাল মাওতা ওয়াল হাইয়া-তা লিয়াবলুওয়াকুম আইয়ুকুম আহসানু আমালা-।

অর্থ : যিনি মৃত্যু এবং জীবনকে সৃষ্টি করেছেন যাতে করে পরীক্ষা করা যায় যে, তোমাদের মধ্যে কে সকর্মশীল:

অর্থাৎ মৃত্যু ও জীবনধারার মূলে রয়েছে, আল্লাহ রব্বুল আলামীন তোমাদের আমলসমূহ যাচাই করে দেখবেন, কে ভালো কাজ করে আর কে মন্দ কাজে লিপ্ত হয় এবং সবচাইতে ভালো কাজই বা কে করে। প্রথম জীবনে আমল করার সুযোগ দিয়ে এবং উত্তম কাজ করার পন্থা নির্দেশ করে আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষার সম্মুখীন করেছেন, তার পর পরবর্তী জীবনের ব্যবস্থা করেছেন। পয়গম্বরদের মাধ্যমে ঘোষণা প্রদান করে বলেছেন : হে মানব সম্প্রদায়! তোমাদের অবশ্যই মৃত্যুবরণ করতে হবে, তার পর তোমাদেরকে পুনরায় জীবিত করা হবে এবং সৃষ্টিকর্তা প্রভুর দরবারে তোমাদের যাবতীয় কাজের বিস্তারিত কৈফিয়ত দিতে হবে। সূরা মু’মিনূনে মানুষের সৃষ্টি এবং তাদের যাবতীয় অবস্থা সম্পর্কে বিশদ আলোচনার পর আল্লাহ পাক এরশাদ করেন :

م ه م م

مه نت تتم

, ۸,

ق و ۸

م ه

ثم إنكم بعد ذلك ليتون ثم إنكم يوم القيمة تبعثون ط

উচ্চারণ : ছুম্মা ইন্নাকুম বা’দা যা-লিকা লামাইয়্যেনা সুম্মা ইন্নাকুম ইয়াওমাল কিয়া-মাতি তুব’আছুন।

অর্থ : অতঃপর তোমরা অবশ্যই মৃত্যুমুখে পতিত হবে, তার পর রোজ কেয়ামতে তোমাদেরকে পুনরায় উঠানো হবে।

অর্থাৎ, এ জীবন কোন জীবন নয়। এ জ্বলজ্যান্ত দেহ, এ আনন্দভরা চেহারা, এ কলকাকলি ও হাসিভরা প্রাণ–যা তোমাদেরকে প্রদান করা হয়েছে–কখনও চিরকাল থাকবে না। মৃত্যুবরণ করতেই হবে এবং মৃত্যুর ঘাটি অতিক্রম করার পর তোমাদেরকে আর এক জীবন লাভ করতে হবে। সেখানে তোমাদের এ প্রিয় জীবন নিয়ে জীবনদাতার দরবারে হাজির হতে হবে এবং সেখানে তোমরা যা কিছু করেছ তার কৈফিয়ত দিতে হবে। কর্মফল পেতেই হবে। সকল জ্ঞানী ব্যক্তি এ সম্পর্কে একমত–যেমন কর্ম তেমন ফল। এ প্রবাদ বাক্যটি ছোট বড় সবার মধ্যেই প্রচলিত। দুনিয়ায় মানুষ যে কাজ করছে তার চূড়ান্ত ফয়সালা রোজ কেয়ামতে অবশ্যই হবে। কোরআন মজীদে কেয়ামতের দিনকে ইয়াওমুদ্দীন (প্রতিদানের দিন), ইয়াওমুল ফছল (ফয়সালার দিন) এবং ইয়াওমুল হিসাব (হিসাবের দিন) বলা হয়েছে। ঐদিন কোন আত্মীয় কারও উপকার করতে পারবে না। কোন শক্তি প্রয়োগের সুযোগ থাকবে না। লোকজন ও সহায় সম্পদের কোন কল্পনাই করা চলবে না। যার যার আমল সেখানে তুলে ধরা হবে। ভালো মন্দ সবকিছুই একেবারে চোখের সামনে উপস্থিত করা হবে। সূরা জিলজালে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন :

يوميني تصدر الناس أشتائا يروا أعمالهم طقمن يعمل مثقال ترة

شرا يره

خيرا يره ومن يعم

উচ্চারণ : ইয়াওমাইযিই ইয়াছদুরু না-সু আশতা-তাল লিইউরাও আ’মা-লাহুম ফামাই ইয়ামাল মিছকা-লা জাররাতিন খাইরাই ইয়ারাহু ওয়া মাই ইয়ামাল মিছক্কা-লা জাররাতিন শাররাই ইয়ারাহ।

অর্থ : সে দিন লোকেরা বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে পড়বে, যাতে করে নিজ নিজ আমল দেখে নিতে পারে। যে বিন্দু পরিমাণ নেকী করেছে সে তা দেখতে পাবে এবং যে বিন্দু পরিমাণ অসৎ কাজ করেছে তাও সে দেখতে পাবে।

কেয়ামতের ময়দানে একেবারে সশরীরে একাকী হাজির হতে হবে। সর্বপ্রথম এবং সর্বশেষ মৃত্যুবরণকারী কেউ কোথাও লুকাতে পারবে না। আল্লাহ পাক এরশাদ করেন :

لقد أحصهم وعدهم عدا ط و كلهم اتيه يوم القيمة فردا

উচ্চারণ : লাক্কাদ আহছোয়াহুম ওয়া আদ্দাহুম আদ্দা-; ওয়া কুলুহুম আ-তীহি ইয়াওমাল কিয়া-মাতি ফারদা-।

অর্থ : তাঁর কাছে তাদের সংখ্যা রয়েছে। তিনি তা ভাললারূপেই গুনে রেখেছেন এবং রোজ কেয়ামতে তাদের প্রত্যেকেই তার সামনে একাকী উপস্থিত হবে।–(সূরা মারইয়াম)

আল্লাহ পাক এরশাদ করেন :

. م . م

ن م

، ۸, مے

م ۸

او ر س

۸ و

۸، و هم بلر ،

يوم يبعثهم الله جميعا فينبئهم بما عملوا ط احصه الله ونسوه

উচ্চারণ : ইয়াওমা ইয়াব আছুহুমু লা-হু জামী’আন ফাইউনাব্বিউঁহুম বিমা–আমিলূ; আহছোয়াহুল্লা-হু ওয়া নাসূহু।

অর্থ : যেদিন আল্লাহ তা’আলা তাদের সকলকে পুনরায় জীবিত করবেন সেদিন তাদের সকল ক্বতকর্ম সম্পর্কে তাদেরকে জানিয়ে দিবেন, আল্লাহ তাদের সমস্ত ক্বতকর্ম হেফাজত করে রেখেছেন, কিন্তু তারা তা ভুলে গেছে।

প্রশ্ন হতে পারে, মানুষের সকাজ বা অসৎ কাজের প্রতিফল (অন্য কথায় বেহেশত বা দোজখ প্রদান মৃত্যুর সংগে সংগেই না করে) কেয়ামত পর্যন্ত ঠেকিয়ে রাখা হচ্ছে কেন:এর উত্তর হল, আল্লাহ পাক হাকীম (হেকমতওয়ালা)’ এবং আলীম (মহাজ্ঞানী)। তাঁর হেকমতের দাবী হচ্ছে, বিচার ফয়সালার জন্য রোজ কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ পাকের এলেমে (আল্লাহ্ পাক ভালো জানেন–) কত কল্যাণকর দিক ও যৌক্তিকতা থাকতে পারে, তা একমাত্র তিনিই জানেন। তবে আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞানে যতটুকু বুঝি তা হচ্ছে, এ দুনিয়ায় মানুষের সম্পর্ক যেমন মানুষের সাথে রয়েছে, তেমনি অন্যান্য মাখলুকের সাথেও রয়েছে। আর আল্লাহ পাক মানুষকে এ মর্মে হুকুম দিয়েছেন, তোমরা সমস্ত মানুষ ও মাখলুকের সাথে ভালো ব্যবহার করবে। কারো জান মালের ক্ষতি করবে না, এজন্য সমস্ত মাখলুকের পারস্পরিক হক বা অধিকারসমূহও শরীয়াতের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রসংগতঃ এ কথাও স্মরণ রাখতে হবে, সৎকাজ এবং অসৎ কাজ উভয়েরই দুটি দিক রয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে, এমন আমল যা খোদ আমলকারী পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে–যার ভাল-মন্দ ফলাফল অন্য কোন মাখলূক পর্যন্ত পৌঁছে না। তার সওয়াব বা আযাব শুধু আমলকারী একাই ভোগ করবে। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে এমন আমল, যার ফলাফল শুধু আমলকারী একাই ভোগ করে না; বরং তার প্রভাব প্রক্রিয়া অন্য মাখলূক পর্যন্ত প্রসারিত হয়। ফল স্বরূপ উক্ত আমলের নেকী বা গোনাহ দিনের পর দিন চলতে থাকে। এমন কি আমলকারীর মৃত্যুর পরেও ঐ কাজ চলতে থাকার কারণে অন্যান্য মাখলূক যে নেকী বা গোনাহ করতে যাবে, তারও ভাগীদার সে হতে থাকে। যেমন : কোন ব্যক্তি বক্তৃতা, লেখনী (বই পুস্তক রচনা) বা তাবলীগ মারফত মাখলুকের যে উপকার করে, তাতে করে নেক কাজ ছড়িয়ে পড়ে। অথবা কেউ কূপ খনন করে, সরাইখানা স্থাপন করে কিংবা জনগণের উপকারের জন্য এমন কোন কাজ করে, যার সুফল দিনের পর দিন চলতে থাকে, আর এতে তার সওয়াবও চলতে থাকে। এরূপ নেক আমলকারী যদি মারাও যায়। তবুও তার সওয়াব সে পেতেই থাকবে। অন্য দিকে কেউ যদি কোন গোনাহর কাজ চালু করে, কোন লোককে পাপের পথ দেখিয়ে দেয় কিংবা এমন কোন বই পুস্তক লেখে যায়, যা মানুষকে। দিনের পর দিন অন্যায় কাজে উদ্বুদ্ধ করতে থাকে, অথবা সে এমন কোন পাপের কাজ করে যায় যে কারণে গোনাহ্র কাজ চালু হয়, এরূপ পাপী লোক যদি মারা যায়, তবুও তার আমলনামায় এ গোনাহগুলো লিপিবদ্ধ হতে থাকবে। মোট কথা, যে কাজের সুফল কুফলের সাথে অন্য মানুষ সংশ্লিষ্ট হয়ে যায়, আমলটি ঐ লোকেরা দুনিয়ায় যতদিন চালু রাখবে ততদিন ধরে তাদের যে নেকী বা গোনাহ হবে, তার সমপরিমাণ নেকী বা গোনাহ ঐ আমলকারীর আমলনামায়ও লেখা হবে যে এর প্রচলন করেছে এবং তার জন্য সে আযাব বা সওয়াব লাভ করবে। এ কথাও এখানে পরিষ্কার হয়ে গেল যে, দুনিয়ায় থাকা অবস্থায় যেমন মানুষের আমলনামা লেখা হয়, ঠিক তেমনি মৃত্যুর পরেও তাদের আমলনামা লেখা হয়। কেয়ামত পর্যন্ত মানুষের আমলনামায় তার নেকী বা বদী বৃদ্ধি পেতে থাকে।

মোট কথা, কবরবাসী হওয়ার পর মানুষ কোন আমল করতে পারে না বটে, কিন্তু তাদের যে পরিপূর্ণ আমলনামার ভিত্তিতে বেহেশত বা দোজখের ফয়সালা করা হবে, সে আমলনামা পূর্ণ করার কাজ এখনও চলছে (সে আমল নিজে করুক কিংবা তার মূল কারণ হোক)।

সুতরাং কেয়ামতের পূর্বে আমলনামা পরিপূর্ণ না হওয়ার কারণে কেমন করে শেষ করা যেতে পারে এবং কেমন করেই বেহেশত বা দোজখে পাঠানো সম্ভব?

দ্বিতীয়তঃ বান্দার হকের বিচার হওয়াও একান্ত জরুরী। আর এজন্য চূড়ান্ত বিচারের জন্য কেয়ামতের দিন ধার্য করা হয়েছে। কেননা কবর জগতে সকল হকদার পাওনাদার কিংবা যাদের হক নষ্ট করা হয়েছে তারা উপস্থিত হবে না। প্রত্যেক ব্যক্তিই পৃথক পৃথকভাবে মৃত্যুবরণ করবে। এক ব্যক্তি আজ মৃত্যুবরণ করে কবরবাসী হল, আর যে ব্যক্তি তার উপর জুলুম করেছে সে হয়ত দশ বছর পরে সেখানে উপস্থিত হল এবং ঐ ব্যক্তি যাদের উপর জুলম করেছে তারা হয়ত বিশ বছর পরে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে আলমে বরজখে উপনীত হল। অথচ ইনসাফ করতে গেলে বাদী বিবাদী উভয়কেই হাজির থাকতে হবে। যাতে অনুপস্থিত থাকা অবস্থায় কোন বিচার করলে বাদী এরূপ প্রশ্ন করতে না পারে যে, আমার হক আমাকে ঠিকমত দেয়া হয়নি; কিংবা বিবাদী এ কথা বলতে না পারে যে, বাদীর উপস্থিতিতে আমার বিরুদ্ধে ডিক্রী দেয়া হলেই সুন্দর হত; কমপক্ষে এ-ও ত হতে পারত যে, বাদী আমাকে ক্ষমা করে দিত।

তাই যৌক্তিকতার দাবী হচ্ছে, বিচার ও প্রতিফল দেয়ার জন্য এমন একটি তারিখ করা দরকার যখন সকলেই হাজির হতে পারে। যখন সকল প্রকার কাজের পুরো হিসাব দেয়া যেতে পারে (সে কাজ নিজে করুক কিংবা তার কারণে অন্য লোকেরা করুক এবং তারাও তাদের যাবতীয় নেকী বা গোনাহ তার আমলনামায় লেখা হয়েছে)। এতে করে সকলের সামনেই বিচার হতে পারে এবং আমলের সম্পূর্ণ প্রতিফলই দেয়া যেতে পারে। এ তারিখটিকেই বলা হয় কেয়ামতের দিন। কেয়ামতের দিন এ জগৎ থাকবে না, সকল প্রকার আমল এবং আমলের ধারাও শেষ হয়ে যাবে। তখন সর্বপ্রথম ও সর্বশেষ মৃত্যুবরণকারী সকল মানুষকেই জীবিত করে হাজির করা হবে, ঐদিনই সকলের বিচার করা হবে এবং প্রতিফল দেয়া হবে।

আরেকটি প্রশ্ন হতে পারে, এ দুনিয়ায় কেন বিচার হয় না এবং কেনই বা প্রতিফল দেয়া হয়? এর উত্তর হল, প্রথমেই মনে রাখতে হবে, এ দুনিয়া হচ্ছে শুধু আমলের জগত। এখানে মানুষকে পরীক্ষার জন্যই আনা হয়েছে। আমলের স্থানেই যদি আমলের প্রতিফল দেয়া হয়, তা হলে ঈমান বিলগায়েব অদৃশ্যে বিশ্বাস স্থাপন সম্পূর্ণরূপে অর্থহীন হয়ে পড়ে এবং পরীক্ষার উদ্দেশ্যও পণ্ড হয়ে যায়। আরেকটি কথা মনে রাখতে হবে, মানুষের আমল ত বরাবর চলতেই থাকে। ফলে তার নেক কাজে অনেক (সগীরা) গোনাহ মাফ হয়ে যায় এবং তওবার ফলে বহু কবীরা গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়। এ কারণে এটাই সমীচীন যে, এ জীবনের (কার্যকলাপের) ফয়সালা পরবর্তী জীবনে করা হোক এবং সব কাজের প্রতিফল সেখানেই দেয়া হোক। অতঃপর কেয়ামতের দিন যখন সকলের বিচার সম্পন্ন হবে, তখন প্রত্যেকেই নিজ আমলের ফলাফল অনুযায়ী দোজখে কিংবা বেহেশতে প্রবেশ করবে। যারা গোনাহগার ঈমানদার তারা নিজ নিজ গোনাহর কারণে প্রথমে দোযখে প্রবশ করবে এবং তার পর যখন আল্লাহ পাক ইচ্ছা করবেন তাদেরকে দোজখ থেকে বের করে বেহেশতে প্রবেশ করানো হবে; অন্য কোথাও পাঠানো হবে না।

বস্তুতঃ কেয়ামতের ফয়সালার পর জান্নাতের ফয়সালাই হল জীবনের প্রকৃত সাফল্য। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে :

كل نف

ط وإنما توفون اجوركم يوم القيامة فمن لجنة فقد فاز ط وما الحيواة الدنيا الامتاع

زحزح ع

উচ্চারণ : কুলু নাফসিন যা-ইক্বাতুল মাওত; ওয়া ইন্নামা–তুওয়াফফাওনা উজুরাকুম ইয়াওমাল কিয়া-মাতি ফামান জুহজিহা আনিন না-রি ওয়া উদখিলাল জান্নাতা ফাকাদ ফাজা; ওয়া মাল হায়াতুদ দুনয়া ইল্লা–মাতাউল গুরুর।

অর্থ : প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে, আর রোজ কেয়ামতে তোমাদেরকে পূর্ণ প্রতিফলই দেয়া হবে, সুতরাং যাকে দোজখ থেকে রক্ষা করা হবে এবং বেহেশতে প্রবেশ করান হবে, সে পরিপূর্ণ সফলকাম হয়ে যাবে, দুনিয়ার এ জীবন থোকা ছাড়া অন্য কিছুই নয়। –(সূরা আলে ইমরান)

মানুষের কার্যকলাপের যে প্রতিফল এবং তাদের আমলের যে ফয়সালা রোজ কেয়ামতে বেহেশত বা দোজখের আকারে দেয়া হবে, তার বিস্তারিত আলোচনা পবিত্র কোরআন ও হাদীস শরীফে করা হয়েছে। অমুসলমানদের মধ্যেও মৃত্যুর পর কর্মফল দেয়া সম্পর্কে কিছু ধ্যান ধারণা প্রচলিত রয়েছে, কিন্তু তাদের প্রতিফল সম্পর্কিত ধ্যান ধারণা কতগুলো কল্পনা বা খেয়ালের সমষ্টি মাত্র। তার কোন সঠিক ভিত্তি নেই, আর না থাকার মূল কারণ হচ্ছে, সেগুলো তারা নিজেরাই নিছক আন্দাজ অনুমানে সৃষ্টি করে নিয়েছে।

আল্লাহ পাক এবং তাঁর পয়গম্বরদের নির্ভুল তালীম ও সঠিক দিকনির্দেশনার সাথে সেসবের আদৌ কোন সম্পর্ক নেই। যেমন, অমুসলমানদের কোন কোন সম্প্রদায় পুনর্জন্মবাদে বিশ্বাসী। মৃত্যুর পর পুনরায় জন্মগহণের কথা তাদের অলীক কল্পনা মাত্র। তাদের ধারণা হল : মৃত্যুর পর মানুষের আত্মা অন্য কোন মানুষ বা প্রাণীর দেহ নিয়ে পুনরায় জন্ম গ্রহণ করে এবং এভাবে বার বার জন্ম গ্রহণের ধারা চলতেই থাকে। এর নাম তারা দিয়েছে পুনঃ পুনঃ গমন–হিন্দুদের ধর্মীয় বিশ্বাসানুযায়ী পুনর্জন্ম। এ আকীদার মূল কারণ এ নয় যে, পয়গম্বরদের কোন কথা মেনে নিয়ে তারা এমনটি করেছে; বরং এর মূলে এই ধারণা বর্তমান যে, তারা দুনিয়ায় লক্ষ্য করে দেখেছে, মানুষের অবস্থান ও মান-মর্যাদা সম্পূর্ণরূপেই বিভিন্ন। তাদের কেউ শাসক কেউ শাসিত; কেউ ধনী কেউ গরীব, কেউ মনিব কেউ চাকর; এরূপ উঁচু-নীচু, ছোট-বড় হওয়ার মূল কারণ কি:তারা এর কারণ ও প্রকৃত দর্শন বুঝতে সক্ষম হয়নি। এ ক্ষেত্রে যদি তারা উভয় জাহানের পথপ্রদর্শক হযরত মুহাম্মদ (ছঃ)-এর শরীয়তের প্রতি লক্ষ্য করত, তা হলে এ ব্যবধানের মূল রহস্য অবশ্যই বুঝতে পারত! তারা নিজেরাই বুঝতে চেয়েছে তাই বুঝতে সমর্থ হয়নি। পরিশেষে নিজেরাই এ দর্শন দাঁড় করে নিয়েছে যে, আগের জন্মে যে কাজ করেছিল, বর্তমান জন্মের ভালো বা মন্দ অবস্থা তারই ফল। এ বুদ্ধিহীন লোকেরা মনগড়াভাবে যে বিশ্বাস সৃষ্টি করেছে তা বিভিন্ন দিক থেকে পুরোপুরি ভ্রান্ত। এ বিশ্বাস সঠিক বলে মেনে নিতে চাইলে প্রথম বারেই যে বড় একটি প্রশ্ন জাগে তা হল, মানুষের আমলের প্রতিফল হিসেবে যখন শান্তি বা পুরস্কার দেয়া হবে, তখন ত তার এ জ্ঞান থাকতে হবে যে, আমাকে এ শাস্তি বা পুরস্কার আমার অমুক আমলের জন্য দেয়া হচ্ছে। কোন্ বদ আমলের কোন্ শাস্তি বা কোন্ নেক আমলের জন্য কোন্ সওয়াব দেয়া হচ্ছে, তা জানার কোন সুযোগ না থাকলে তাকে প্রতিফল বলা সম্পূর্ণরূপেই অর্থহীন হয়ে পড়ে। দুনিয়ায় এখন যত লোক রয়েছে, তারা যখন জানেই না যে, এ পুরস্কার বা দুঃখ অমুক স্থানের অমুক আমলের পরিণাম ফল তখন বর্তমান সুখ-দুঃখকে পূর্ব জন্মের ফল হিসেবে গ্রহণ কেমন করে সম্ভবপর? শাস্তি ভোগকারীরা কেবল তখনই অনুতাপ আফসোস করতে পারে, যখন তারা জানতে পারে যে, এ দুর্দশা অমুক বদ অমলের কারণেই হয়েছে এবং তারা কেবল তখনই বলতে পারে, হায়! ঐ কাজটি যদি না করতাম!

মোট কথা, সরোয়ারে কায়েনাত হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যা কিছু বলেছেন তার সবটুকই চির সত্য। তিনি যা কিছু নির্দেশ করেছেন তার সবটুকুই আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে বলেছেন। তাতে সন্দেহের লেশমাত্র নেই। যা কিছু দুনিয়ার মানুষের মনগড়া তা তিনি ভ্রান্ত ও অর্থহীন বলে ঘোষণা করেছেন।

.

কেয়ামতের বিবরণ

 কেয়ামত অবশ্যই হবে। কেউ মানুক অথবা না মানুক, আল্লাহর ওয়াদা সত্য। যখন পবিত্র কোরআন নাজিল হত তখনও অনেকে কেয়ামত অস্বীকার করত এবং আজও অনেকে অস্বীকার করছে। অহী নাজিল হওয়ার সময়ে যারা এ ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করত, পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে তাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে। যেমন আল্লাহ পাক এরশাদ করেন :

وضرب لنا مثلا ونسي

উচ্চারণ : ওয়া দ্বারাবা লানা–মাছালাওঁ ওয়া নাসিয়া খালাক্বাহু কালা মাই ইউহয়িল ইযামা ওয়া হিয়া রামীম।

অর্থ : আর মানুষ আমার জন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করে রেখেছে এবং নিজের সৃষ্টির কথা ভুলে গিয়ে বলছে : হাড়গুলো পচে গলে মাটি হওয়ার পরে তা আবার কে জেন্দা করবেঃ –(সূরা ইয়াসীন)

এ আয়াতে মানুষের অযৌক্তিক সাহসের নিন্দা করে বলা হয়েছে, দেখ, তারা আল্লাহর উপর দিয়ে কথা বলছে। তারা বলছে:হাঁ গো, গলিত পঁচা হাড়গুলো কেউ জিন্দা করতে পারে কি:এ ধরনের কথা কেউ বলে কি:বস্তুতঃ এরূপ প্রশ্ন করার সময় মানুষ তাদের জন্মের কথাই ভুলে যায়। তাদের সৃষ্টির ইতিহাস যদি তারা একবার স্মরণ করত এবং একথা ভুলে না যেত যে, একটি নিকৃষ্ট অপবিত্র ফোঁটা থেকেই তারা সৃষ্ট, তা হলে আল্লাহ পাক সম্পর্কে উপরোক্ত প্রশ্ন করতে তারা অবশ্যই লজ্জা অনুভব করত এবং একটু না একটু বুদ্ধির পরিচয় দিত আর এ প্রশ্নের জবাব তার সৃষ্টির মধ্যেই খুঁজে পেত। আল্লাহ্ পাক স্বয়ং এ প্রশ্নের জবাবে বলেন :

قل يحييها الذي انشاها أول مرة وهوبكل خلق عليم

উচ্চারণ : কুল ইউহয়ীহা ল্লাযী আনশা-আহা–আউওয়ালা মাররাতিওঁ ওয়া হুওয়া বিকুল্লি খালকিন আলীম।

অর্থ : আপনি বলে দিন, ঐ সকল হাড় তিনিই জীবিত করবেন যিনি ঐগুলো প্রথম বার সৃষ্টি করেছেন, আর তিনি প্রতিটি সৃষ্টির কথাই ভালোরূপে অবগত আছেন।

অর্থাৎ যিনি প্রথম বার সমস্ত হাড় পয়দা করেছেন এবং তার ভেতর প্রাণ দান করেছেন, দ্বিতীয় বারও তিনিই ঐগুলোকে জীবিত করে তুলবেন, তিনি সর্বশক্তিমান। তার জন্য সব কিছুই সহজ। মানুষের দেহের অংগ-প্রত্যংগ ও হাড়গুলোর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশগুলো যেখানেই ছড়িয়ে থাক না কেন, তার প্রতিটি অনুকণা সম্পর্কে আল্লাহ পাক জানেন। ঐগুলো সর্বতোভাবে এক করে দেয়ার মত শক্তি তিনি অবশ্যই রাখেন। তাই চিন্তা করা উচিত, যে আল্লাহ্ মানুষের বীর্যকে বিভিন্ন অবস্থা অতিক্রম করিয়ে শেষ পর্যন্ত জ্বলজ্যান্ত একটি দেহ তৈরী করে তার মধ্যে রূহ দান করেছেন, তার পক্ষে এটা কেমন করে বিশ্বাস করা যায় যে, তিনি মৃত ব্যক্তিকে কখনো জীবিত করতে পারবেন না?

মানুষের বিবেকই এ কথা বলবে, যিনি প্রথম বার অস্তিত্বহীন অবস্থা থেকে অস্তিত্ব দান করেছেন–অর্থাৎ যখন কিছুই ছিল না, সে অবস্থা থেকে একটা কিছু তৈরি করতে সক্ষম হলেন, তখন তার পক্ষে দ্বিতীয় বার তৈরি করা আরো সহজ। আল্লাহ পাক এরশাদ করেন।

هو الذي يبدؤ الخلق ثم يعيده وهو اهون عليه.

উচ্চারণ : ওয়া হুওয়াল্লাযী ইয়াবদাউ লখালাক্বা ছুম্মা ইউঈদুহু ওয়া হুওয়া আহ্ওয়ানু আলাইহি।

অর্থ : তিনিই প্রথম বার সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনিই দ্বিতীয় বার সৃষ্টি করবেন, আর তা তাঁর জন্য অধিকতর সহজ।–(সূরা রূম)

অর্থাৎ, তোমরা নিজেরা একবার ভেবে দেখ, যিনি প্রথম বার কোন নকশা নমুনা বা অবয়ব (শরীর) না দেখেই মানুষ বানাতে সমর্থ হলেন, তিনি দ্বিতীয় বার বানাতে অপারগ হয়ে পড়বেন কি কারণে:আল্লাহ পাকের জন্য প্রথম বার সৃষ্টি করা যেমন সহজ, তেমনিভাবে দ্বিতীয় বার সৃষ্টি করাও সহজ, কিন্তু মানুষের বুদ্ধির দিকে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে, প্রথম বার সৃষ্টিকারীর পক্ষে দ্বিতীয় বার সৃষ্টি করা ত আরো সহজ। আশ্চর্যজনক কথা, যিনি প্রথম বার মানুষকে অস্তিত্ব দিলেন, মৃত্যু দান করে সে মানুষকে তিনি পুনরায় জীবিত করতে পারবেন না! মানুষ কি চিন্তা করার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছে:

আল্লাহ্ পাক এরশাদ করেন :

أولم يروا أن الله الذي خلق السموات والارض ولم يعى بخلقهن بقدر

على أن يحى الموتی طبلی انه على كل شئ قدير

উচ্চারণ : আওয়া লাম ইয়ারাও আন্না লু-হাল্লাযী খালাকাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদোয়া–ওয়া লাম ইয়া’ইয়া বিখালক্বিহিন্না বিক্বাদিরিন আলা–আই ইউহইয়াল মাওতা-; বালা–ইন্নাহু আলা–কুল্লি শাইয়িন কাদীর।

অর্থ: তারা কি দেখে না যে, তিনি একমাত্র আল্লাহ্ই সমস্ত আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন এবং তা সৃষ্টি করতে তিনি ক্লান্ত হয়ে যাননি। তিনি কি শক্তি রাখেন না যে, মৃতকে জীবিত করবেন:হাঁ, নিশ্চয়ই তিনি সকল জিনিসের উপর শক্তিমান।–(সূরা আহযাব)।

অর্থাৎ যিনি সমস্ত আসমান এবং জমিনের ন্যায় বড় বড় জিনিস নিজ ক্ষমতায় সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন, তিনি কি এতটুকু ক্ষমতা রাখেন না যে, মৃতদেরকে জীবিত করে উঠাবেন:অবশ্যই তিনি সে ক্ষমতা রাখেন। আল্লাহ পাক এরশাদ করেন :

لك ترى الارض خاشعة فاذا انزلنا عليها الماء اهتزت

ومن اید

وربت د إن الذي أحياها لمحي الموتي ط إنه على كل شئ قدير

উচ্চারণ : ওয়া মিন আ-ইয়া-তিহী আন্নাকা তারাল আরদোয়া–খা-শি’আতান ফাইযা আনযালনা–আলাইহাল মা-আ হতাজ্জাত ওয়া রাবাত; ইন্নাল্লাযী আহইয়া-হা–লামুহইল মাওতা-; ইন্নাহু আলা–কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।

অর্থ : আর তার একটি নিদর্শন হল : তুমি জমিনকে দেখবে একেবারে শুষ্ক ও তৃণহীন, অতঃপর তার উপর যখন আমি পানি বর্ষণ করি তখন তা শস্য শ্যামল হয়ে যায়, নিশ্চয় যিনি (মৃত) জমিনকে জেন্দা করতে সক্ষম তিনি মৃত মানুষকেও জীবিত করতে পারবেন; তিনি সবকিছুর উপর শক্তিমান।

আর আল্লাহর নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি নিদর্শন হল, যে মহান আল্লাহ জমিনকে জীবিত করেছেন তিনিই মৃত ব্যক্তিদের দেহে পুনরায় জীবন দান করবেন। এতে সন্দেহের কিছু নেই।

একবার এক সাহাবী রাসূলুল্লাহ (ছঃ)-এর নিকট প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ্ পাক তার মাখলূককে দ্বিতীয় বার কিভাবে জীবিত করবেন:বর্তমান মাখলূকদের মধ্যে তার কোন নজির আছে কি:তখন রাসূলুল্লাহ (ছঃ) উত্তরে বললেন : বল ত, এমন কি হয়নি যে, তোমরা কোন মাঠ দিয়ে এমন সময় অতিক্রম করেছে যখন তা ছিল একেবারেই শুকনা শস্যহীন এবং দ্বিতীয় বার এমন সময়ে অতিক্রম করেছে যখন তা ছিল ফুলে ফলে ও শস্যে ভরপুর:তিনি বললেন : হাঁ, এমনটি ত অবশ্যই হয়েছে। তখন হযরত (ছঃ) বললেন : এটাই হচ্ছে আল্লাহ পাকের স্পষ্ট নিদর্শন। তাঁর মাখলূকদের মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করার এটি হচ্ছে একটি নজির। এভাবেই তিনি মৃত মানুষকে পুনরায় জীবিত করবেন।-(মেশকাত শরীফ)

পবিত্র কোরআনের কোন কোন স্থানে কেয়ামত অস্বীকারকারীদের প্রশ্ন উল্লেখ করে তার উত্তরে কোন দলীল প্রমাণ পেশ না করে কেয়ামত যে অবশ্যই অবশ্যই হবে সে সম্পর্কে নিশ্চিত ধারণা দেয়ার জন্য কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার দাবীই শুধু বার বার উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন

সূরা সাফফা’তে এরশাদ করা হয়েছে :

لمبعوثون أو آباءنا الأولون قل نعم

ترابا وعد

وانتم داخرون ط قائما هی زجره واحده فإذا هم يثون–وقالوا يولنا هذا يوم الدين . هذا يوم الفصل الذي كنتم به تكبون

উচ্চারণ : আইযা–মিতনা–ওয়া কুন্না–তুরা-বাওঁ ওয়া ই’যোয়া-মান আইন্না লামাবউ’ছুনা আওয়া আবা-উনা–লআউওয়ালুন। কুল নাআম ওয়া আনতুম দা-খিরূন ফাইন্নামা–হিয়া জাযরাতুওঁ ওয়াহিদাতুন ফাইযা–হুম ইয়ানজুরূন। ওয়া কা-লূ ইয়া ওয়াইলানা–হা-যা–ইয়াওমু দদ্বীন। হা-যা–ইয়াওমুল ফাসলু ল্লাযী কুন্তুম বিহী তুকাযযিবুন।।

অর্থ : আচ্ছা বল ত, আমরা যখন মরে যাব, মাটিতে মিশে যাব এবং কেবল হাড় হয়েই থাকব, তখনও কি আমাদেরকে উঠানো হবে:আমাদের বাপ-দাদাদেরকেও এভাবে উঠানো হবে:আপনি (হে নবী!) বলুন, হাঁ, অবশ্যই তোমাদেরকে উঠানো হবে)। তখন ত তোমরা অপমান লাঞ্ছনার মধ্যে থাকবে। তা হবে এক ভয়ঙ্কর আওয়াজ। তখন তারা এটি দেখবে এবং বলবে : হায় আমাদের সর্বনাশ! এটা হবে প্রতিফল পাওয়ার দিন (তারা উত্তর পাবে)। এটা হচ্ছে সেই ফয়সালার দিন, যাকে তোমরা মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিতে।

সূরা সাবায়’ এরশাদ করা হয়েছে :

ا و و و ب ا س ر هه ر ه س مه ۸ مه م, ل

, هبه, ۸, م م و

ی رجل ينبئكم إذا مزقتم كل ممزق

وقال الذين كفروا هل ندلكم على

طبل الزين

إنكم لفي خلق جديد–افترى على الله كذبا أم به چ يؤمنون بالآخرة في العذاب والمحلل البعيد

۱۸

و ۸ و,

উচ্চারণ : ওয়া কালা ল্লাযীনা কাফারূ হাল নাদুলুকুম আলা–রাজুলিই ইউনাব্বিউকুম ইযা মুযযিক্বতুম কুল্লা মুমাযযাকিন, ইন্নাকুম লাফী খালকিন জাদীদ। আফতারা আলা ল্লা-হি কা-যিবান আম বিহী জিন্নাহ; বালি ল্লাযীনা লা–ইউ’মিনূনা বিলআ-খিরাতি ফিল আযা-বি ওয়া দ্দোলালিল বাঈদ।

অর্থ : এবং কাফেররা বলতে থাকবে, আমরা কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যক্তির কথা বলে দিব যে তোমাদেরকে এরূপ সংবাদ দিচ্ছে যে, যখন তোমরা ফেটে ধূলিকণা হয়ে যাবে তখন তোমাদেরকে নতুন করে সৃষ্টি হতে হবে:সে তোক কি আল্লাহ্ সম্পর্কে মিথ্যা বলছে, না তাকে পাগলামিতে ধরেছে:(কোনটিই হয়নি।) যারা আখেরাতে বিশ্বাস করে না তারা বিভ্রান্তিতে বহু দূরে পতিত হয়েছে।–(সূরা সাবা)।

মোট কথা, কেয়ামত নিশ্চিত সত্য। আল্লাহ পাক যখন ইচ্ছা করবেন ঠিক তখনই শিংগায় ফুঁ দেয়া হবে এবং কেয়ামত সংঘটিত হবে। তখন কেউই তা মিথ্যা সাব্যস্ত করার সুযোগ পাবে না। কেয়ামত কখন হবে তা কেবল আল্লাহই নির্দিষ্টভাবে অবগত আছেন। মানুষ যতই আপত্তি করুক না কেন, আল্লাহ পাক নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে কখনো তা প্রকাশ করবেন না।

সূরা সাবায়’ আরও এরশাদ করা হয়েছে :

ويقولون متى هذا الوعد إن كن تستاخرون عنه ساعة ولا تستقدمون

উচ্চারণ : ওয়া ইয়াকূলুনা মাতা–হা-যাল ওয়া’দু ইন কুনতুম ছোয়া-দিক্কীনা, কুল লাকুম মী’আ-দু ইয়াওমিল লা–তাসতাখিরূনা আনহু সা’আতাওঁ ওয়ালা–তাসতাক্বদিয়ূন।

অর্থ : আর তারা বলছে! (কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার) এ ওয়াদা কখন পালন করা হবে–যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক:আপনি (তাদেরকে) বলে দিন, তোমাদের জন্য এমন এক দিনের ওয়াদা করা হয়েছে যা এক মুহূর্ত পরে বা এক মুহূর্ত আগেও হবে না।

কেয়ামতের নিদর্শনসমূহ একত্র করে আমি (মূল লেখক) রাসূলুল্লাহ (ছঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী নামক একখানি পুস্তিকা লেখেছি, তা প্রকাশিতও হয়েছে। পাঠ করার জন্য অনুরোধ রইল। এখন কেয়ামতের অবস্থা সম্পর্কে কিছু আলোচনা করছি।

.

কেয়ামত যাদের উপর সংঘটিত হবে

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেনঃ সৃষ্টির মধ্যে যারা সবচেয়ে নিকষ্ট তাদের উপর কেয়ামত সংঘটিত হবে। তিনি আরো বলেন।

যতদিন পর্যন্ত আল্লাহ! আল্লাহ!! বলার কোন লোক বেঁচে থাকবে, ততদিন কেয়ামত হবে না। তিনি এ-ও বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ! আল্লাহ বলবে তার উপর কেয়ামত হবে না। -(মুসলিম শরীফ)

দীর্ঘ এক হাদীসে আছে (যেহেতু কোন মুসলমান জীবিত থাকা পর্যন্ত কেয়ামত হবে না, তাই দুনিয়ার স্বাভাবিক দিন-রাত চলার সময়েই একবার) হঠাৎ করে আল্লাহ্ পাক এক প্রকার আরামদায়ক বাতাস প্রবাহিত করে দেবেন। ঐ বাতাস মুসলমানদের পার্শ্বদেশ (বগল) স্পর্শ। করার সাথে সাথেই তারা মৃত্যুমুখে পতিত হবেন এবং একমাত্র সবচেয়ে নিকৃষ্ট পাপী ব্যক্তিরাই বাকী থেকে যাবে। তারা এতদূর নির্লজ্জ হবে যে, খোলাখুলি মানুষের সামনেই গাধার ন্যায় নারীদের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হবে।–(মেশকাত শরীফ)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বর্ণনা করেন : রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেন : দাজ্জালকে হত্যা করার পর হযরত ঈসা (আঃ) দীর্ঘ সাত বছর ধরে মানুষের মাঝে অবস্থান করবেন। এ সময় মানুষের পারস্পরিক শত্রুতা বলতে কিছুই থাকবে না। অতঃপর আল্লাহ পাক মুলকে শাম (সিরিয়া)-এর দিক থেকে এক প্রকার ঠাণ্ডা হাওয়া প্রবাহিত করে দেবেন। তাতে সব ঈমানদার মৃত্যুবরণ করবে (এবং) জমিনের বুকে এমন কোন লোক অবশিষ্ট থাকবে না, যার অন্তরে ভালোর কিংবা বলেছেন, ঈমানের বিন্দু বিসর্গও অবশিষ্ট থাকবে। এমন কি তোমাদের (মুসলমানদের) কেউ পাহাড়ের মধ্যে আবদ্ধ থাকলেও উক্ত হাওয়া সেখানে প্রবেশ করে তার জান কবজ করে নেবে। এর পর সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোকেরাই শুধু থেকে যাবে। তারা (পাপ কার্যে এতদূর অগ্রসর হবে যে, ) চঞ্চল পাখীর ন্যায় ক্ষিপ্র গতিতে উড়ে চলবে এবং (হত্যা ও খুন খারাবির ক্ষেত্রে) হিংস্র জানোয়ারের মত হবে; কোটা ভালো তা তারা চিনতে পারবে না; মন্দটাকেও তারা মন্দ বলে মনে করবে না। তাদের এ অবস্থা দেখে শয়তান মানুষের আক্বতি ধরে তাদের নিকট এসে বলবে : হায়! তোমরা কেমন হয়ে গেছ! তোমাদের কি লজ্জা করে না যে, তোমরা বাপ-দাদার ধর্ম পরিত্যাগ করে বসেছ:তখন তারা বলবে : তুমিই বল আমরা এখন কি করব। তখন সে তাদেরকে মূর্তিপূজা শিক্ষা দেবে এবং তারা মূর্তিপূজায় মশগুল হয়ে যাবে। তখন তাদের অর্থনৈতিক অবস্থাও উন্নত হবে। এভাবে কাল যাপন করতে করতে শিংগায় কুঁক দেয়া হবে। শিংগার আওয়াজ সকলেই শুনবে এবং সে আওয়াজ এত ভীষণ হবে যে, প্রত্যেকেই হয়রান ও দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়বে এবং গর্দান এদিক-ওদিক ফিরাতে থাকবে। এর পর তিনি বলেন : সর্বপ্রথম যে এই আওয়াজ শুনবে সে হবে একজন উটের রাখাল। উটগুলো পানি পান করানোর সময় সে এই আওয়াজ শুনে বেহুঁশ হয়ে পড়বে। তার পর অন্যান্য লোকেরাও ঐ আওয়াজ শুনে বেহুঁশ হয়ে যাবে। অতঃপর আল্লাহ পাক কুয়াশার ন্যায় এক প্রকার বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। ফলে সমস্ত মানুষ গজিয়ে উঠবে (কবরে তারা দেহ বিশিষ্ট হবে)। অতঃপর শিংগায় দ্বিতীয় ফুঁক দেয়ার সংগে সংগে সমস্ত মানুষ উঠে দাঁড়াবে। এর পর ঘোষণা করা হবে, ওহে লোকসকল! তোমরা তোমাদের রবের দিকে চল। আর ফেরেশতাদেরকে বলা হবে, ওদেরকে থামাও। ওদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আবার ঘোষণা করা হবে, সমস্ত লোকের ভেতর থেকে দোজখীদেরকে পৃথক করে দাও। তখন আল্লাহ্ পাকের নিকট প্রশ্ন করা হবে, কত জনের ভেতর থেকে কতজন দোজখী বের করা হবে:উত্তরে বলা হবে, প্রতি এক হাজারের মধ্য থেকে নয়শ’ নিরানব্বই জন দোজখী বের কর। অতঃপর নবী করীম (ছঃ) বলেন : এটা হবে এমন এক দিন, যার বিভীষিকা ও ভয়ঙ্কর অবস্থার কারণে শিশুও বৃদ্ধে পরিণত হয়ে যাবে। এটা হবে মহাবিপদের দিন।–(মুসলিম শরীফ)।

উপরোক্ত হাদীসসমূহের মাধ্যমে জানা যায়, কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময় কোন মুসলমানই দুনিয়ায় জীবিত থাকবে না। যাদের অন্তরে বিন্দু বিসর্গ পরিমাণ ঈমান থাকবে, তাদেরকে আল্লাহ পাক এ মহাবিপদ থেকে হেফাজত করবেন।

কেয়ামতের তারিখ জানানো হয়নিঃ

কেয়ামত কখন হবে তা একমাত্র আল্লাহ পাকই জানেন। পবিত্র কোরআনে শুধু এতটুকু বলা হয়েছে যে, কেয়ামত হঠাৎ করে এসে যাবে। তার সুনির্ধারিত তারিখ ও সময় সম্পর্কে কিছুই জানানো হয়নি। একবার হযরত জিবরাঈল (আঃ) মানুষের বেশে আগমন করে মজলিসের সকলের সামনেই রাসূলুল্লাহ (ছঃ)-এর নিকট প্রশ্ন করলেন, কেয়ামত কবে সংঘটিত হবে:এ প্রশ্নের জবাবে তিনি এরশাদ করলেন :

ما المسئول عنها باعلم من السائل ۔

উচ্চারণ : মাল মাসউলু আনহা–বিআ’লামা মিনাস সা-ইল।

অর্থ : এ ব্যাপারে যার নিকট প্রশ্ন করা হয়েছে সে প্রশ্নকারীর চেয়ে অধিক অবগত নয়। -( বোখারী ও মুসলিম)

অর্থাৎ এক্ষেত্রে প্রশ্নকারী ও যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে উভয়ই সমান। তা কখন সংঘটিত হবে সে সম্পর্কে কোন জ্ঞান না প্রশ্নকারীর আছে, না যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে তার আছে। একবার যখন লোকেরা নবীয়ে আকরাম (ছঃ)-এর নিকট প্রশ্ন করলেন, কেয়ামত কবে হবে, তখন আল্লাহ পাকের নিকট থেকে ওহী এল:

قل انما علمها عند ربي ج يجيها وقتها إلا هوط تقلث في

في عثها طل

السموات والأرض لا تأيكم إلا بغتة ط يشتكون كان اثما علمها عث الله ولكن أكثر الناس لا يعلمون۔

উচ্চারণ : কুল ইন্নামা–ই’লমুহা–ইনদা রব্বী লা–ইউজাল্লীহা–লিওয়াক্বতিহা–ইল্লা–হু; ছাকুলাত ফি সসামা-ওয়াতি ওয়াল আরদ্বি লা–তা’তীকুম ইল্লা–বাগতাতান ইয়াসআলূনাকা কাআন্নাকা হাফিয়ুন আহা-; কূল ইন্নামা–ইলমুহা–ইন্দাল্লা-হি ওয়া লাকিন্না আকসারা না-সি লা–ইয়ালামুন।

অর্থ : (হে নবী!) আপনি বলে দিন ও তার কেয়ামতের জ্ঞান একমাত্র আমার রবের নিকটই আছে। আল্লাহ ব্যতীত কেউই তার সঠিক সময় প্রকাশ করতে পারবে না। আসমান ও জমিনে মহাপ্রলয় ঘটে যাবে আর তা হঠাৎ করেই তোমাদের উপর এসে পড়বে। তারা আপনাকে এমনভাবে প্রশ্ন করে যেন আপনি পূর্ব থেকেই সে সম্পর্কে জেনে শুনে রেখেছেন; আপনি বলে দিন, তা কেবল আল্লাহই জানেন, কিন্তু অধিকাংশ লোকই তা বুঝে না।–(সূরা আরাফ)

কেয়ামত হঠাৎ করে এসে যাবে:

কোরআন পাকের সূরা আম্বিয়ায় এরশাদ হয়েছে :

بل تأتيهم بغتة فبهتهم فلا يستطيعون ردها ولا هم ينظرون۔

উচ্চারণ : বাল তা’তীহিম বাগতাতান ফাতাবহাতুহুম ফালা–ইয়াসতাত্বীউ’না রাদ্দাহা ওয়ালা–হুম ইউনযোয়ারূন।

অর্থ : বরং তা তাদের উপর হঠাৎ করে সংঘটিত হয়ে যাবে, তাদেরকে হতবুদ্ধি করে দেবে–না তাদের সরিয়ে দেয়ার শক্তি থাকবে, না তাদেরকে কোন অবকাশ দেয়া হবে।

এ আয়াত এবং তার পূর্ববর্তী আয়াতের মাধ্যমে জানা গেল, কেয়ামত হঠাৎ করেই এসে পড়বে। রাসূলে করীম (ছঃ) বলেছেন, কেয়ামত এমন অবস্থায় সংঘটিত হবে যে, দুজন লোক তাদের সামনে বেচা-কেনার জন্য কাপড় দেখাদেখি করছে, তা সমাপ্ত করার সময়টুকুও তারা পাবে না। ঐ অবস্থায়ই কেয়ামত হয়ে যাবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেন : কেয়ামত এমন অবস্থায় কায়েম হবে যে, কেউ নিজের উটের দুধ দোহন করেছে, কিন্তু এখনো পান করতে পারেনি; কিংবা পানি পান করানোর জন্য পশুগুলো একত্র করেছে, কিন্তু এখনো পান করাতে পারেনি। সত্যি সত্যিই কেয়ামত এমন মুহূর্তে সংঘটিত হবে যে, মানুষ খাওয়ার জন্য লোকমা মুখের দিকে নেবে, কিন্তু তা মুখের ভেতরে প্রবেশ করাবার সময়টুকুও পাবে না। –(বোখারী ও মুসলিম)

অর্থাৎ আজকাল দুনিয়ায় মানুষ যেমন বিভিন্ন কাজ-কারবারে মশগুল থাকে, ঠিক তেমনিভাবে কেয়ামতের দিনও নানারূপ কাজকর্মে ব্যস্ত থাকবে আর হঠাৎ করে কেয়ামত শুরু হয়ে যাবে। তবে যেদিন কেয়ামত হবে সেদিন হবে শুক্রবার। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন, সকল দিনের মধ্যে জুম’আর দিনই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ। এদিন হযরত আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এদিনই তাঁকে জান্নাতে স্থান দেয়া হয়েছে। এদিনই তাকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে। আর কেয়ামতও এ দিনই কায়েম হবে।–(মুসলিম শরীফ)।

অন্য এক হাদীসে আছে, সাইয়েদুল মুরসালীন (ছঃ) বলেছেন : জুমু’আর দিন কেয়ামত সংঘটিত হবে। সকল নৈকট্যশীল ফেরেশতা, আসমান জমিন, পাহাড় পর্বত, সাগর-উপসাগর সব কিছুই জুমু’র দিনের ব্যাপারে খুবই শংকিত (বোধ হয় কেয়ামত হয়ে যাবে)। -(মেশকাত শরীফ)

শিংগা এবং শিংগার ফুঁকঃ

শিংগায় ফুঁক দেয়ার সংগে সংগেই কেয়ামত শুরু হবে। রাসূলে আকরাম (ছঃ) বলেন : শিংগা একটি শিং। এতে ফুঁক দেয়া হবে।–(মেশকাত শরীফ)

তিনি আরো বলেছেন : আমি কেমন করে আরাম আয়েশের জীবন যাপন করব?–অথচ যিনি শিংগায় ফুঁক দেবেন তিনি শিংগা মুখে নিয়ে আছেন। কান লাগিয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে অপেক্ষায় আছেন, কখন তাকে ফুঁক দেয়ার হুকুম প্রদান করা হবে।–(মেশকাত শরীফ)

সূরা মোদ্দাসসেরে’ শিংগাকে নাকুর’ বলা হয়েছে। যেমন এরশাদ হচ্ছে:

يوم عسير على الكفري مير

فإذا نور في الاقور فذلك يوم

 উচ্চারণ : ফাইযা–নুকিরা ফিন নাকূরি ফাযা-লিকা ইয়াওমাইযিই ইয়াওমুন আসীরুন আলাল কা-ফিরীনা গাইরু ইয়াসীর।

অর্থ : অতঃপর যখন নাকূরে’ (অর্থাৎ শিংগায়) ফুঁক দেয়া হবে, তখন তা কাফেরদের জন্য একটি কঠিন দিন হবে, একটুও সহজ হবে না।

সূরা জুমার’-এ এরশাদ হয়েছে :

ثف في الشور قصوق من في الموت ومن في الأرض إلا من شاء

الله ط ثم نفخ فيه أخرى فإذا هم قيام ينظرون

উচ্চারণ : ওয়া নুফিখা ফিছুরি ফাছোয়াই’কা মান ফি সসামা-ওয়াতি ওয়া মান ফিল আরদ্বি ইল্লা–মান শা-আল্লা-হ; ছুম্মা নুফিখা ফীহি উখরা–ফাইযা–হুম কিয়া-মুই ইয়ানযুরূন।

অর্থ : এবং শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে; তখন আসমান জমিনের সবাই বেহুঁশ হয়ে যাবে একমাত্র তারা ব্যতীত, যাদেরকে আল্লাহ্ ইচ্ছা করবেন; অতঃপর পুনরায় শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে আর সংগে সংগে সবাই চতুর্দিকে তাকাতে তাকাতে খাড়া হয়ে যাবে।

পবিত্র কোরআন ও হাদীসে শিংগায় দু’বার ফুঁক দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম। বার ফুঁক দিলে সবাই বেহুঁশ হয়ে পড়বে (আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছা করবেন তারা ব্যতীত) এবং জীবিতরা মারা যাবে। আর এর পূর্বে যারা মারা গিয়েছিল তাদের রূহসমূহের উপর বেহুঁশ হওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হবে। এর পর যখন দ্বিতীয় বার শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে তখন মৃতদের রূহ তাদের দেহে ফিরে আসবে। যারা বেহুঁশ ছিল তাদের হুঁশ হবে ও সুস্থ হয়ে যাবে। সে সময়ের আশ্চর্যজনক অবস্থা দেখে তারা চতুর্দিকে তাকাতে থাকবে এবং আল্লাহ পাকের দরবারে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে তাদের উপস্থিত করা হবে। সূরা ইয়াসীন’-এ এরশাদ করা হয়েছে।

ونفخ في الصور فاذا هم من الاجداث الى ربهم ينسلون قالوا يويلنا من هنا من مرقونا سكنة هذا ما وعد الرحمن صدق المرسلون–ان كانت الاصيحة واحدة فاذا هم جميع لدينا محضرون

উচ্চারণ : ওয়া নুফিখা ফি ছছুরি ফাইযা–হুম মিনাল আজদা-ছি ইলা–রব্বিহিম ইয়ানসিলুন। কা-লূ ইয়া-ওয়াইলানা–মাম বাআছানা–মিম মারকাদিনা–হা-যা–মা–ওয়াদার রাহমানু ওয়া ছদাকাল মুরছান। ইন কা-নাত ইল্লা–ছইহাতাওঁ ওয়াহিদাতান ফাইযা–হুম জামীউল লাদাইনা–মুহদ্বোয়া-রূন।

অর্থ : এবং শিংগায় ফুঁ দেয়া হবে, তখন অকস্মাৎ তারা নিজেদের কবর হতে দ্রুত গতিতে তাদে রবের দিকে দৌড়ে যাবে এবং বলতে থাকবে : হায় আমাদের সর্বনাশ! আমাদের শয্যা স্থল থেকে কে আমাদেরকে উঠিয়ে দিল? (এর উত্তরে তারা শুনতে পাবে-) এ হচ্ছে তাই যা। ওয়াদা করেছিল দয়াময় (আল্লাহ), আর যে সম্পর্কে সত্য বলেছিলেন পয়গম্বররা। একটি মাত্র মহাশব্দ উখিত হবে আর তখন তাদের সবাইকেই আমার সম্মুখে হাজির করা হবে।

অর্থাৎ কেউ চেহারা লুকাতে পারবে না এবং কেউ এগিয়েও যেতে পারবে না, সবাইকেই আল্লাহর দরবারে জমায়েত করা হবে।

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) প্রথম বার এবং দ্বিতীয় বার শিংগায় ফুঁক দেয়ার মধ্যবর্তী দূরত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে চল্লিশ সংখ্যার কথা বলেছেন। উপস্থিত সাহাবীরা হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর নিকট প্রশ্ন করেন : চল্লিশ কি? চল্লিশ দিন, না চল্লিশ মাস, না চল্লিশ বছর? রাসূলুল্লাহ (ছঃ) কি বলেছেন: এ প্রশ্নের উত্তরে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) তার অজ্ঞতার কথা প্রকাশ করে বলেন : আমি বলতে পারছি না। (অথবা আমার স্মরণ নেই), রাসূলুল্লাহ (ছঃ) শুধু চল্লিশ’ অথবা চল্লিশ বছর কিংবা চল্লিশ দিনের কথা বলেছিলেন। দ্বিতীয় বার শিংগায় ফুঁক দেয়ার পর আল্লাহ পাক পানি বর্ষণ করবেন, ফলে সমস্ত মানুষ (কবর থেকে) ফুটে উঠবে, যেমন করে (জমিন থেকে) সজি ফুটে উঠে। তিনি এও বলেছেন, মানুষের দেহের প্রত্যেক অংশই গলে মাটিতে মিশে যায়। কেবল একখানি হাড় মাত্র। অবশিষ্ট থাকে। রোজ কেয়ামতে এ হাড় থেকেই দেহ তৈরি করা হবে। এ হাড়খানা হল মেরুদণ্ডের হাড় (বোখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীসে আছে, সরিষার দানার ন্যায় অবশিষ্ট হাড় থেকেই পুনরায় মানব দেহ তৈরি করা হবে।)

সূরা জুমার’-এ উল্লেখ করা হয়েছে, শিংগায় ফুঁ দেয়ার সাথে সাথে সবাই বেহুঁশ হয়ে পড়বে একমাত্র তারা ব্যতীত, যাদেরকে আল্লাহ পাক ইচ্ছা করবেন। এর তাফসীর প্রসংগে কেউ কেউ বলেছেন : ব্যতিক্রম থাকবেন কেবল শহীদগণ। কেউ বলেছেন : জিবরাঈল, মিকাঈল, ইসরাফীল এবং আযরাঈল (আঃ)। কেউ আরশ বহনকারী ফেরেশতাদের কথা বলেছেন। এছাড়া অন্য কথাও রয়েছে (আল্লাহ ভালো জানেন)। ব্যতিক্রম হিসাবে যাদের কথা এখানে। বলা হয়েছে, সম্ভবতঃ পরবর্তী সময়ে তারাও ফানা হবেন। যেমন এরশাদ হয়েছেঃ

لمن الملك اليوم ظلله الواحد القهار ۔

উচ্চারণ : লিমানিল মুলকুল ইয়াওমা; লিল্লা-হি লাওয়া-হিদিল কাহ্হার।

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মা’আলিমুত তানযীল’ গ্রন্থ প্রণেতা বলেন : মাখলুকের ফানা হয়ে যাওয়ার পর যখন আল্লাহ পাক লিমানিল মুলকুল ইয়াওমা’ (আজ বাদশাহী কার?) বলবেন, তখন উত্তরদাতা বলতে কেউই থাকবে না। তাই আল্লাহ্ পাক নিজেই উত্তর দিবেন ও লিল্লাহিল ওয়াহিদিল কাহহার।

-(আজ বাদশাহী কেবল আল্লাহরই যিনি এক একক এবং কাহ্হার।)।

অর্থাৎ একচ্ছত্র নিরংকুশ রাজত্ব একমাত্র তাঁরই, যার সম্মুখে সমস্ত দম্ভ ও শক্তিই দুর্বল, সর্বপ্রকার রূপক ক্ষমতা, রাজত্ব ক্ষণস্থায়ী, ধ্বংসপ্রাপ্ত।

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) এক রেওয়ায়াতে বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) এরশাদ করেছেন। নিশ্চয়ই লোকেরা রোজ কেয়ামতে বেহুঁশ হয়ে পড়বে এবং অমিও বেহুঁশ হয়ে যাব। অতঃপর সর্বপ্রথম আমাকেই হুঁশ প্রদান করা হবে। তখন আমি হঠাৎ দেখতে পাব, হযরত মূসা (আঃ) আল্লাহর আরশের এক কোণা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি জানি না, তিনি কি বেহুঁশ হওয়ার পরে আমার আগে হুঁশ পেয়েছেন, না আদৌ বেহুঁশ হননি।

–অর্থাৎ তিনি তাদের অন্তর্ভুক্ত যাদের সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেছেন, ইল্লা–মান শা-আল্লা-হু’–অর্থাৎ তারা ব্যতীত যাদেরকে আল্লাহ (বেহুঁশ না করার) ইচ্ছা করেন] -(মেশকাত শরীফ)

.

সৃষ্টি জগতের প্রলয়

শিংগায় ফুঁ দেয়ার সাথে সাথে শুধু যে মানুষই মরে যাবে তাই নয়; বরং গোটা সৃষ্টি জগতকেই তছনছ করে দেয়া হবে। আসমান ফেটে যাবে। তারকাগুলো ঝরে যাবে। তাতে আলো বলতে কিছুই থাকবে না। চাঁদ-সুরুজের আলো খতম করে দেয়া হবে। সমগ্র পৃথিবীকে সমতল ভূমিতে পরিণত করা হবে এবং সমস্ত পাহাড়-পর্বত উড়তে থাকবে। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআন-হাদীসের বাণী নিচে উল্লেখ করা গেল।

পাহাড়-পর্বতের অবস্থাঃ

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে :

القارعة ما القارعة دوما أدرك ما القارعة طيوم يكون الثاس کا

الفراش المبثوث وتكون الجبال كالوهن المنفوش

উচ্চারণ : আলক্বারি আতু মা লক্বা-রিআহ্; ওয়ামা–আদরাকা মা লক্বারি আহ্; ইয়াওমা ইয়াকূনু ন্না-সু কালফারাশিল মাবছুছি ওয়া তাকূনুল জিবা-লু কালই’হনিল মানফূশ।

অর্থ : সেই খটখট শব্দকারী কি:খটখট শব্দকারীকে তুমি কি মনে করছ:খটখট শব্দকারী এমন একদিন–যেদিন মানুষ পতঙ্গের ন্যায় এবং পাহাড়-পর্বত ধুনা তুলার ন্যায় হয়ে যাবে।

e, (আলকারি’আতু–খটখট শব্দকারী) দ্বারা কেয়ামত বুঝানো হয়েছে। এর কারণ, ঐদিন মানুষের অন্তরকে দারুণ ভীতি এবং কানসমূহকে কঠিন আওয়াজ বিদীর্ণ করে দেবে। সে দিন মানুষ অত্যন্ত অস্থির ও হতবুদ্ধি হয়ে পতঙ্গের ন্যায় হাশরের ময়দানের দিকে চলতে থাকবে। তারা এতদূর বিশৃংখল অবস্থায় চলতে থাকবে যেমন উড়ন্ত পোকামাকড়গুলো অন্ধের মত আলোর উপর পড়তে থাকে। আর পাহাড়গুলোর অবস্থা এমন হবে যেমন ধুনা তুলার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশগুলো বাতাসে উড়ে। পাহাড়-পর্বতগুলো এমনিভাবেই কোটি কোটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়বে এবং উড়তে থাকবে। সূরা মুরসালাত’-এ এরশাদ করা হয়েছে :

a ai 13, উচ্চারণ : ওয়া ইযাল জিবালু নুসিফাত।

 অর্থ : এবং যখন পাহাড়গুলো উড়িয়ে দেয়া হবে।

সূরা নাবা’য় এরশাদ করা হয়েছে।

جبال فكانت سرابا

উচ্চারণ : ওয়া সুইয়্যিরাতিল জিবা-লু ফাকা-নাত সারা-বা-।

অর্থ : এবং পাহাড়গুলোকে চালিত করা হবে–তখন এগুলো উজ্জ্বল বালুকারাশিতে পরিণত হবে।

সূরা নাহল’-এ এরশাদ করা হয়েছে :

وترى الجبال تحسبها جامدة وهى تمر مر الشاب ط صنع الله

الذي اتقن كل شي

উচ্চারণ : ওয়া তারাল জিবা-লা তাহসাবুহা–জা-মিদাতাওঁ ওয়া হিয়া তামুররু মাররা সসাহা-বি; ছুনআল্লা-হি ল্লাযী আতকানা কুল্লা শাইয়িন।

অর্থ : তুমি পাহাড়গুলোকে দেখবে এবং মনে করবে, এগুলো স্থির এবং নিশ্চল, অথচ ঐগুলো চলতে থাকবে মেঘের ন্যায়, এ হল আল্লাহর কারিগরি–যা সবকিছুকেই ঠিক করে রেখেছে।

অর্থাৎ এই যে বড় বড় পাহাড় তোমরা এখন দেখছ এবং ভাবছ, এগুলো যেভাবে স্থির নিশ্চল হয়ে আছে, আর কখনো স্থান পরিবর্তন করতে পারবে না। অথচ এখন এক দিন আসবে যখন ঐগুলো (চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে) তুলার আঁশের ন্যায় উড়তে এবং বাতাসের ন্যায় দ্রুত গতিতে চলতে থাকবে। আল্লাহ পাক তাঁর হেকমত অনুযায়ী সকল জিনিসকেই একটা সঠিক অবস্থা দান করেছেন। তিনি আজ পাহাড়কে এমন ওজন বিশিষ্ট, ভারী ও নিশ্চল করে দিয়েছেন যে, গোটা দুনিয়াকেই তিনি তার মাধ্যমে কম্পন ও হেলে-দুলে যাওয়ার হাত থেকে হেফাজত করেছেন। বলা হয়েছে :

والقي في الأرض واسى أن تميد بگم۔

উচ্চারণ : ওয়া আলক্বা–ফি লআরদ্বি রাওয়া-সিয়া আন তামীদা বিকুম।

অর্থ : আর তিনি পুঁতে দিয়েছেন জমিনে অনেক পাহাড়, যাতে করে তা তোমাদেরকে নিয়ে স্থির থাকে।

সেই আল্লাহ্ পাকই কেয়ামতের দিন ঐ পাহাড়গুলোকে আঁশের মত উড়িয়ে দেবেন। বস্তুতঃ এটা সেই আসল স্রষ্টারই ইচ্ছা, যার কোন কাজই কল্যাণ ও হেকমত শূন্য নয়। সূরা ওয়াকে’আয়’ এরশাদ হয়েছে :

ويشت الجبال بشا فكانت هبا ثبا

উচ্চারণ : ওয়া বুস্সাতিল জিবা-লু বাসসান ফাকানাত হাবা-আম মুমবাছছা-।

অর্থ : আর আঁশের মত হয়ে যাবে পাহাড়-পর্বত, অতঃপর সেগুলো হবে উড়ন্ত ধূলিকণা। আসমান-জমিনের অবস্থা :

সূরা তোয়াহা’য় এরশাদ করা হয়েছে।

ويشتلونك عن الجبال فقل ينسفها ربي نسقا فيها قاعا

صفصفالا ترى فيها عوجا ولا أمتا۔

উচ্চারণ : ওয়া ইয়াসআলূনাকা আনিল জিবা-লি ফাকুল ইয়াসিফুহা–রব্বী নাসফা। ফাইয়াজারুহা–কা-’আন ছোয়াফছা-ফাল লা–তারা–ফীহা–ই’ওয়াজাওঁ ওয়ালা–আমতা-।

অর্থ : আর তারা আপনার নিকট পাহাড় সম্পর্কে প্রশ্ন করছে, আপনি বলে দিন, আমার প্রভু ঐগুলোকে ভালোভাবে উড়াবেন, তার পর তিনি সমস্ত জমিন সমতল ময়দানে পরিণত করবেন, তাতে কোন মোড় এবং টিলা দেখা যাবে না।

অর্থাৎ রোজ কেয়ামতে পাহাড়গুলোকে উড়ানো এবং জমিনকে সমতল ময়দান করে দেয়া হবে; কোন ছোট টিলাও তথায় অবশিষ্ট থাকবে না।

সূরা ইবরাহীম-এ এরশাদ করা হয়েছে।

يوم تبدل الأرض غير الأرض والسموت وبرزوا الله الواحد القهار

উচ্চারণ : ইয়াওমা তুবাদ্দালুল আরদু গাইরাল আরদ্বি ওয়া সসামা-ওয়া-তু ওয়া বারাজু লিল্লা-হিল ওয়াহিদিল কাহহার।

অর্থ : সেদিন এই জমিন পরিবর্তন করা হবে অন্য এক জমিন দিয়ে এবং সমস্ত আসমান পরিবর্তন করা হবে, আর সমস্ত মানুষ এক-একক কাহহার আল্লাহর সম্মুখে খাড়া হয়ে যাবে।

এ আয়াত দ্বারা জানা যায়, রোজ কেয়ামতে সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবর্তন করে দেয়া হবে এবং বর্তমানে এগুলোর যে আক্বতি রয়েছে তাও বলে রাখা হবে না। এ আয়াত সম্পর্কে হযরত আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছঃ)-কে প্রশ্ন করেন, যখন আসমান ও জমিন বদল করে দেয়া হবে তখন মানুষ কোথায় থাকবে:নবী করীম (ছঃ) বললেন : মানুষ তখন পুলসেরাতের উপর অবস্থান করবে।–(মুসলিম শরীফ)।

এ রেওয়ায়াত দ্বারা অবগত হওয়া যায়, আয়াতে যে আসমান-জমিনের পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে তা মানুষের হিসাব-কিতাবের পর ঐ সময় হবে, যখন মানুষকে বেহেশত বা দোজখে পাঠানোর জন্য পুলসেরাতের উপর পৌঁছানো হবে। প্রথম আয়াতে জমিনকে সমতল ময়দানে পরিণত করার যে কথা বলা হয়েছে তা হিসাব-কিতাব শুরুর পূর্বের কথা।

হযরত সাহল ইবনে সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেন : রোজ কেয়ামতে মানুষকে এমন এক ভূমিতে একত্র করা হবে যার রং হবে সাদা। তবে তাতে মেটে রংয়ের ভাব থাকবে। ঐ সময় জমিন ময়দার রুটির মত হবে; তাতে কারুর চিহ্ন থাকবে না। –(বোখারী শরীফ)

 কেয়ামতের সময় আসমানে এরূপ পরিবর্তন ঘটবে যে, সমস্ত তারকা ঝরে পড়বে; তাতে কোন আলোই থাকবে না। চাঁদ-সুরুজে কোন রশ্মি থাকবে না। আসমান ফেটে যাবে এবং তাতে বিভিন্ন দরজা হয়ে যাবে। সূরা নাবা’-য় এরশাদ হচ্ছে:

يوم ينفخ في الصور فتأتون أفواجا وفتحت الماء فكانت أبوابا–

উচ্চারণ : ইয়াওমা ইউনফাখু ফি ছছুরি ফাতা’তূনা আফওয়া-জাওঁ ওয়া ফুতিহাতিস সামা-উ ফাকা-নাত আবওয়া-বা-।

অর্থ : যেদিন শিংগায় ফুঁ দেয়া হবে সেদিন তোমরা দলে দলে চলে আসবে, আসমান খুলে দেয়া হবে এবং তাতে বহু দরজা হয়ে যাবে।

অর্থাৎ আসমান ফেটে গিয়ে এমন হয়ে যাবে যেন তা বহু দরজা হয়ে গেছে। সূরা মুরসালাত’-এ বলা হয়েছে :

৩, ৭, rL_dj sl; অর্থ : যখন আসমান বিদীর্ণ হয়ে যাবে। সূরা ফুরকান’-এ এরশাদ হয়েছে :

ويوم تشقق السماء بالغمام ونزل الملائكة تنزيلا.

উচ্চারণ : ওয়া ইয়াওমা তাশাক্বকাকুস সামা-উ বিলগামামি ওয়া নুযযিলাল মালাইকাতু তানযীলা–।

অর্থ : যেদিন আসমান ফেটে যাবে, মেঘমালা বের হবে এবং একের পর এক ফেরেশতাদেরকে অবতীর্ণ করা হবে।

সূরা হাক্কা’য় এরশাদ হচ্ছে।

نفخة واحدة وحملت الارض والجبال فدكتا دكة

فاذا نفخ في الصور

واهية

يومين وقعت الواقعة وانشقت السماء فهى يوم

واحدة  

والملك على ارجاعها ويحمل عرش ريك فوقهم يومئذ ثمنية.

উচ্চারণ : ফাইযা–নুফিখা ফি ছছুরি নাফখাতুওঁ ওয়াহিদাতুওঁ ওয়া হুমিলাতিল আরদু ওয়াল জিবা-লু ফাদুক্কাতা–দাক্কাতাওঁ ওয়াহিদাতান। ফাইয়াওমাইযিওঁ ওয়া-কা’আতিল ওয়াকি’আতু ওয়ানশাকাতিস সামা-উ ফাহিয়া ইয়াওমাইযিওঁ ওয়াহিয়াতুওঁ ওয়াল মালাকু আলা আরজা-য়িহা ওয়া ইয়াহমিলু আরশা রব্বিকা ফাওকাহুম ইয়াওমাইযিন ছামানিয়াহ।

অর্থ : অতঃপর শিংগায় যখন একটি ফুঁ দেয়া হবে আর জমিন ও পাহাড়গুলোকে উঠিয়ে অন্যত্র বয়ে নেয়া হবে এবং মাত্র একেবারেই রেণু রেণু করে দেয়া হবে, সেদিন মহা ঘটনা ঘটে যাবে (অর্থাৎ কেয়ামত এসে পড়বে), আসমান ফেটে যাবে; আর সেদিন ফেরেশতারা আসমানের কিনারায় উপনীত হবে, আপনার প্রভুর অরশ সেদিন আট জন ফেরেশতা বহন করবে।

অর্থাৎ আসমানের ভেতর ভাগ যখন ফেটে যেতে শুরু করবে তখন ফেরেশতারা প্রান্তের দিকে চলে যাবে।

সূরা আররাহমান’-এ এরশাদ হয়েছে :

فإذا أنشقت السماء فكانت وردة كالدهان–

উচ্চারণ : ফাইযা নশাকক্বাতিস সামা-উ ফাকা-নাত ওয়ারদাতান কাদদিহান।

অর্থ : আসমান যখন ফেটে যাবে তখন তা রঞ্জিত লাল চর্মের ন্যায় লাল হয়ে যাবে।

সূরা মা’আরেজ’-এ এরশাদ হয়েছে, আসমান সেদিন মুহল’ অর্থাৎ গলন্ত তামার ন্যায় হবে। ফাটার সাথে সাথে সেটার রং পরিবর্তিত হবে এবং লাল হয়ে যাবে। সূরা তুর’-এ বলা হয়েছে :

اممم قام ره

rul As ইয়াওমা তাম্রুস সামা-উ মাওরান-

অর্থ : আসমান সেদিন কেঁপে কেঁপে ফেটে যাবে। সূরা ইনশিকাক’-এ এরশাদ হয়েছে :

إذا السماء انشقت. وانت لربها وحقت–وإذا الأرض مدت–والقت

ما فيها وتخت–واذنت لربها وقت۔

উচ্চারণ : ইযা সসামাউ নশাক্বক্বাত্ব, ওয়া আযিনাত লিরব্বিহা ওয়া হুক্কাত। ওয়া ইযাল আরদু মুদ্দাত। ওয়া আলক্বাত মা–ফীহা ওয়া তাখাল্লাত। ওয়া আযিনাত লিরব্বিহা ওয়া হুক্কাত।

অর্থ যখন আসমান ফেটে যাবে এবং স্বীয় প্রভুর হুকুম পালন করবে। আর এটাই তার হক। এবং জমিন যখন টেনে বৃদ্ধি করা হবে এবং তা ভেতরকার সবকিছু বাইরে নিক্ষেপ করবে। এবং নিজে খালি হয়ে যাবে আর এভাবে তা প্রভুর হুকুম মেনে নিবে এবং এটাই তার হক।

আসমান ফেটে যাওয়া এবং জমিন টেনে বাড়িয়ে দেয়ার হুকুম আল্লাহর পক্ষ থেকে হবে। আসমান ও জমিন উভয়ই আল্লাহর মাখলূক। খালেকের (স্রষ্টার) যে কোন হুকুম পালন করা মাখলুকের জন্য এক অপরিহার্য বিষয়। এরা উভয়ই আল্লাহর হুকুম পালন করবে এবং তাদের পক্ষে তা শোভনীয় যে, নিজের খালেকের হুকুম মাথা পেতে নিবে এবং এ ফরমাবরদারীতে টুশব্দ পর্যন্ত করবে না।

জমিন টেনে রবারের ন্যায় বড় করে দেয়া হবে এবং দালান-কোঠা, পাহাড়-পর্বত ইত্যাদি ভেঙ্গেচুরে একেবারে সমতল করে দেয়া হবে। যাতে করে একটি মাত্র সমতল ময়দানে প্রথম দিকের ও শেষ দিকের সকল মানুষকে একই সময়ে হাজির করা সম্ভবপর হতে পারে এবং কারুর মাঝে কোন আড়াল থাকতে না পারে। জমিন তার ভেতরকার সবকিছু বাইরে উদগিরণ করে দেবে এবং তার ভেতরে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না; অর্থাৎ তার ভেতর থেকে সমস্ত সম্পদ (খনিজ ও অন্যান্য দ্রব্যাদি), সমস্ত মৃত ব্যক্তি ও মৃত ব্যক্তিদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বাইরে ফেলে দিবে। এছাড়া বান্দাদের প্রতিফল লাভের ক্ষেত্রে যা কিছুর সম্পর্ক আছে তাও তার ভেতর থেকে ফেলে দেবে।

চন্দ্র সূর্য ও তারকার অবস্থা:

যখন শিংগায় ফুঁ দেয়া হবে তখন চন্দ্র, সূর্য ও নক্ষত্রের অবস্থাও অন্যরূপ হয়ে যাবে। সূরা তাকভীর’-এ এরশাদ করা হয়েছে :

إذا الشمس کورت واذا النجوم الكدرت

উচ্চারণ : ইযা শশামসু কুওয়্যিরাত ওয়া ইযান নজুমু নকাদারাত।

অর্থ : যখন সূর্য আলোকহীন হয়ে পড়বে এবং তারকাগুলো যখন খসে পড়বে ………। সূরা ইনফিতার’-এ এরশাদ হয়েছে।

إذا الشماء انفطرت وإذا الكواكب انترت

উচ্চারণ : ইযা সসামা-উ নফাতারাত ওয়া ইযা লকাওয়া-কিবু নতাছারাত।

অর্থ : যখন আসমান ফেটে যাবে এবং তারাগুলো ঝরে পড়বে।

এ সকল আয়াত দ্বারা সুপ্রমাণিত হয় যে, আসমান ফেটে যাবে এবং তারাগুলো ঝরে পড়বে। সূরা মুরসালাত’-এ এরশাদ হয়েছে, সেদিন তারাগুলোর রোশনী নিঃশেষ করে দেয়া হবে। যেমন বলা হয়েছে।

৩ ৮৪:/3G (ফাইযা ননুজুমু তুমিসাত)।

অর্থ : যখন নক্ষত্রগুলো আলোকহীন হয়ে যাবে। সূরা কেয়ামা’য় আল্লাহ্ পাক এরশাদ করেন :

یسئل ايان يوم القيامة ط فاذا برق البصر وخسف القمر–وجمع

الشمش والقمر. يقول الإنسان يومين أين المفر. كلا كور الى ربك يومين المشتق۔

উচ্চারণ : ইয়াস্আলু আ ইয়া-না ইয়াওমুল কিয়া-মাহ, ফাইযা–বারিক্কাল বাছোয়ারু ওয়া খাছাফাল কামারু। ওয়া জুমিআশশামসু ওয়াল কমারু। ইয়াকুলুল ইনসা-নু ইয়াওমাইযিন আইনাল মাফাররু। কাল্লা–লা–ওয়াজারা ইলা–রব্বিকা ইয়াওমাইযিনিল মুসতাক্বাররুন।

অর্থ : (লোকেরা) প্রশ্ন করে : কেয়ামত কোন দিন হবে:যখন চন্দ্র হবে জ্যোতিহীন। একত্র করে দেয়া হবে চন্দ্র ও সূর্য। সেদিন লোকেরা বলবে : আজ কোথায় ভেগে যাব:কখনো (তা হবার) নয়। সেদিন তোমাদের প্রভুর দরবার ছাড়া অন্য কোথাও যাওয়ার স্থান থাকবে না।

এ আয়াতসমূহে এ কথা সুস্পষ্ট যে, চন্দ্ৰ আলোকহীন হয়ে যাবে। বলা হয়েছে–• a sweal (সূর্য ও চন্দ্রকে একত্র করা হবে।) অর্থাৎ শুধু চন্দ্রই আলোকহীন হবে না; বরং আলোকহীন হওয়ার ব্যাপারে চন্দ্র ও সূর্য উভয়ই শরীক হবে। চন্দ্রের আলোকহীন হওয়ার বিষয়টা বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ সম্ভবতঃ এই হতে পারে যে, আরবের লোকেরা চান্দ্রমাসের হিসাব রাখত এবং রাখত বলে তার অবস্থা জানার জন্য তাদের আগ্রহও বেশি ছিল।

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেন : কেয়ামতের দিন চন্দ্রসূর্য উভয়কেই আচ্ছাদিত করে দেয়া হবে। অর্থাৎ, এগুলোর রশ্মি আবৃত করে দেয়া হবে এবং তাতে করে না এগুলোর রশ্মি বের হতে পারবে, আর না কোন কিছুর উপর পতিত হতে পারবে।

আসমান জমিন, চন্দ্র সূর্য এবং গ্রহ-নক্ষত্র সম্পর্কে প্রাচীন দর্শন ও আধুনিক বিজ্ঞান শাস্ত্রে কিছু থিওরী, কিছু মতামত বা ধারণা বর্তমান। এর সবকিছুই মানুষের মনগড়া। আজ এক রকম ধারণা করা হচ্ছে, কাল অন্য এক ধারণা মেনে নেয়া হচ্ছে। (এ জন্যেই জনৈক বিজ্ঞানী বলেছেন : Probably all scientyfic Theories are wrong অর্থাৎ সম্ভবতঃ সমস্ত বৈজ্ঞানিক ধারণাই ভুল।–(অনুবাদক।) অথচ আশ্চর্যের বিষয় হল, পবিত্র কোরআন ও হাদীসে ঐগুলো সম্পর্কে অতীত বর্তমানের যে অবস্থাগুলোর কথা বলা হয়েছে, তা স্বীকার করে নিতে মানুষ এ জন্য দ্বিধাগ্রস্ত যে, এগুলো তাদের মনগড়া ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত বলে মনে হয়। অথচ তারা চিন্তা করে দেখে না, এগুলো যিনি সৃষ্টি করেছেন, যিনি অস্তিত্ব দিয়েছেন, তার চাইতে মাখলূক অর্থাৎ মানুষ কি ঐগুলোর কথা অধিক জানতে পারে:নিশ্চয়ই এ লোকেরা বড় অজ্ঞ ও নির্বোধ। যিনি সবকিছুর একমাত্র সৃষ্টিকারী, যিনি সকল বাদশাহর বাদশাহ্, তাঁর চিরন্তন বাণী নিজেদের কল্পিত ও মনগড়া ধারণার মাপকাঠিতে যাচাই করতে যাওয়া যে কত বড় বাতুলতা, তা না বললেই চলে। কেয়ামত প্রসংগে সৃষ্টিজগতের প্রলয় ও পরিবর্তনের যে আলোচনা পবিত্র কোরআন ও হাদীসে এসেছে, নিঃসন্দেহে তা চির সত্য। যারা নিজেদের মনগড়া ধারণার ভিত্তিতে কোরআন হাদীসের কথা অস্বীকার করছে, তারা চরম ভুলের মধ্যেই দিন যাপন করছে। -(বোখারী শরীফ)

কিতাবুল বাছি ওয়ান নুশূর’ গ্রন্থে হযরত বায়হাকী (রঃ) হযরত হাসান বসরী (রঃ) থেকে বর্ণনা করেন, হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন : রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেন : সূর্য ও চন্দ্রকে আলোকহীন করে দু’ভাগে বিভক্ত করে দোজখে ফেলে দেয়া হবে। এ কথা শুনে হযরত হাসান (রঃ) প্রশ্ন করেন : এর কারণ কি:হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বললেন : আমি হযরত (ছঃ)-এর বাণীই উদ্ধৃত করেছি (এর চেয়ে অধিক কিছু আমি জানি না)। হযরত হাসান (রঃ) তখন চুপ হয়ে যান।

.

মানুষের কবর থেকে বাইরে আসা

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেন ও জমিন ফেটে গিয়ে সর্বপ্রথম আমাকে হাজির করবে; তার পর আবূ বকর ও ওমর নিজ নিজ কবর থেকে হাজির হবে। তার পর আমি বাকী’ নামক কবরস্থানে পৌঁছব। তখন সেখানকার সবাইকে বের করে আমার সাথে একত্র করা হবে। তার পর আমি মক্কাবাসীদের জন্য অপেক্ষা করব (তারাও কবর থেক বের হয়ে আমার নিকট পৌঁছবে)। অতঃপর আমি হারামাইনবাসীদের মধ্যে (হাশরের ময়দানে) এক সাথে মিলিত হবে।–(তিরমিযী)

যে সকল লোককে কবরে দাফন করা হয়েছে (মুসলমান বা কাফের), তারা দ্বিতীয় বার শিংগার আওয়াজ শুনে কবর থেকে বের হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। আর যাদেরকে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে অথবা সাগরে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে, কিংবা হিংস্র প্রাণী খেয়ে ফেলেছে, তাদের রূহগুলোকে দেহ প্রদান করা হবে এবং অবশ্য অবশ্যই তারা হাশরের ময়দানে হাজির হবে।

মানুষ কবর থেকে উলঙ্গ ও খাতনাহীন অবস্থায় বের হবে:

হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন : নবী করীম (ছঃ)-এর নিকট থেকে তিনি শুনেছেন, রোজ কেয়ামতে মানুষকে খালি পায়ে উলঙ্গ শরীরে খাতনাহীন অবস্থায় একত্র করা হবে। আমি আরজ করলাম : হে আল্লাহর রাসূল! নারী-পুরুষ সবাই (উলঙ্গ অবস্থায়) একে অন্যকে দেখতে পাবে:(–এমনটি হলে ত বড় লজ্জার ব্যাপার হবে!) উত্তরে রাসূলুল্লাহ (ছঃ) এরশাদ করলেন :

ওগো আয়েশা! কেয়ামতের ভয়াবহতায় (সীমাহীন বিভীষিকা ও অস্থিরতার ফলে) মানুষের অবস্থা এমন করুণ হবে যে, কেউ কারো দিকে তাকা’বার কথা ভাবতেই পারবে না।–(বোখারী। ও মুসলিম)।

আরেক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেছেনঃ নিশ্চয়ই তোমরা রোজ কেয়ামতে খালি পায়ে, নগ্ন দেহে এবং খাতনাহীন অবস্থায় একত্রিত হবে। এ কথা বলে তিনি কোরআন পাকের নিমোক্ত আয়াত তেলাওয়াত করেন :

كما بدأنا اول خلق نعيده

উচ্চারণ : কামা–বাদা’না আউওয়ালা খালকিন নুঈদুহ।

অর্থ : আমি যেভাবে প্রথম বার তোমাদের সৃষ্টি শুরু করেছিলাম, সেভাবেই ফিরিয়ে আনব।

অতঃপর তিনি বললেন : সর্বপ্রথম কেয়ামতের দিন হযরত ইবরাহীম (আঃ)-কে কাপড় পরানো হবে।-(বোখারী ও মুসলিম)

ওলামায়ে কেরাম লেখেছেন হযরত ইবরাহীম (আঃ)-কে এ কারণে সর্বপ্রথম কাপড় পরানো হবে যে, তিনিই সর্বপ্রথম দরিদ্র ব্যক্তিদেরকে কাপড় পরিয়েছিলেন। কিংবা এ কারণে যে, আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়ার কারণে যখন কাফেররা তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ করেছিল, তখন সর্বপ্রথম তাঁকেই উলঙ্গ করা হয়েছিল।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বলেন : সর্বপ্রথম যাকে কাপড় পরান হবে তিনি হবেন হযরত ইবরাহীম (আঃ)। আল্লাহ্ পাক বলবেন?আমার বন্ধুকে কাপড় পরিধান করাও। তখন বেহেশতের কাপড় থেকে দু’খানি চিকন, কোমল ও সাদা কাপড় তাঁকে পরিধান করানোর জন্য আনা হবে। এর পর আমাকে কাপড় পরিধান করানো হবে।

কবর থেকে বের হয়ে হাশরের ময়দানে আগমন :

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : রোজ কেয়ামতে মানুষকে তিন ভাগে (হাশরের মাঠে) একত্র করা হবে : (১) এক দল যাবে পায়ে হেঁটে। (২) একদল যাবে সওয়ার হয়ে এবং (৩) আরেক দল যাবে অধোমুখী অবস্থায়, মুখের উপর ভর করে। প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! ঐ দলটি কিভাবে উপুড় হয়ে মুখের উপর ভর করে চলবে:উত্তরে আল্লাহর রাসূল (ছঃ) বললেন : নিশ্চয়ই যে পবিত্র সত্তা (আল্লাহ) ওদেরকে পায়ের উপর চালাতেন, তিনি তাদেরকে মুখমণ্ডলের উপর চালাতেও সক্ষম। তার পর বললেন : সাবধান! ওরা (চেহারার উপর এমনভাবে চলবে যে, ) জমিনের উঁচু ভাগ ও কণ্টক থেকে মুখমণ্ডল বাঁচিয়ে চলবে। (তিরমিযী)

এটা হবে কাফেরদের অবস্থা! কেননা ঐ সকল নিকৃষ্ট ব্যক্তি দুনিয়ায় নিজেদের চেহারাসমূহ আল্লাহর সম্মুখে পেশ করতে অস্বীকার করেছে এবং অহংকারের বশবর্তী হয়ে আল্লাহকে সেজদা করতে অগ্রসর হয়নি। এ কারণেই রোজ কেয়ামতে পায়ের স্থানে চেহারা ব্যবহার করতে তাদেরকে বাধ্য করা হবে, যাতে করে তারা অপমান ও লাঞ্ছনার চরম স্তরে পৌঁছে, যাতে করে ঐ চেহারাসমূহের খালেক মালেকের হুকুম অমান্য করার মজা ভালোরূপে বুঝতে পারে। আল্লাহ্ সর্বশক্তিমান। তিনি তার মাখলুকের দেহের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যেকোন কাজেই ব্যবহার করতে পারেন। দুনিয়াতেই দেখা যায়, কোন প্রাণী পায়ের উপর আবার কোন কোনটি দু’পায়ের উপর ভর দিয়ে চলছে। আবার কোনটি (পা ছাড়াই কেবল) পেটের উপর ভর করে চলছে। আরো দেখা যায়, যাদের এক হাত নেই তারা এক হাত দ্বারাই দু’হাতের কাজ চালায়। যারা অন্ধ। তাদের শ্রবণ ও ধারণ শক্তি এতদূর বেড়ে যায় যে, তা দ্বারাই তারা দৃষ্টিশক্তির কাজ অনেকটা চালিয়ে নেয়।

রোজ কেয়ামতে আল্লাহ্ পাক কাফেরদেরকে যে তাদের চেহারার উপর চালাতে সক্ষম তা কোন দিক থেকেই অযৌক্তিক নয়।

কাফেরদেরকে বোবা বধির ও অন্ধ করে উঠানো হবে:

সূরা বীন ইসরাঈল’-এ আল্লাহ পাক এরশাদ করেন :

ونحشرهم يوم القيمة على وجوههم عما و بما وهما۔

উচ্চারণ : ওয়া নাহশুরুহুম ইয়াওমাল কিয়া-মাতি আলা–উজুহিহিম উমইয়াওঁ ওয়া বুকমাওঁ ওয়া ছুম্মান।

অর্থ : এবং আমি তাদেরকে রোজ কেয়ামতে অন্ধ, মূক ও বধির করে তাদের চেহারার উপরে চালাব।

সূরা তোয়াহা’-য় এরশাদ হয়েছে :

ذكرى فان له معيشة ضنكا ونحشره يوم القيمة

ومن

أعمى ما قال رب لم حشرتني أعمى وكنت بصيرا ط قال كذلك تك

نجزی من اسرف ولم يؤمن

ایتنا فنسيته

بأيت ربه ولعاب الأخرة أشد وأبقى۔

উচ্চারণ : ওয়া মান আরাদ্বোয়া আন যিকরী ফাইন্না লাহু মাঈশাতান দোয়ানকাওঁ ওয়া নাহশুরুহু ইয়াওমাল কিয়া-মাত আ’মা-, কালা রব্বি লিমা হাশারতানী আ’মা–ওয়া কাদ কুনতু বাছীরান, কালা ক্বাযালিকা আতাতকা আ-ইয়া-তুনা ফানাসীতাহা–ওয়া ক্বাযালিকাল ইয়াওমা তুনসা–; ক্বাযা-লিকা নাজয়ী মান আসরাফা ওয়া লাম ইউ’মিম বিআ-ইয়া-তি রব্বিহী ওয়া লা’আযাবুল আ-খিরাতে আশাদু ওয়া আবক্কা-।

অর্থ : আর যে ব্যক্তি আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তার জন্য রয়েছে সংকীর্ণ জীবন এবং কেয়ামতে আমি তার হাশর এভাবে করব যে, সে অন্ধ হবে এবং সে বলবে : হে আমার প্রভু! তুমি আমাকে অন্ধ করে কেন উঠালে:অথচ আমি ত দেখতে পেতাম।

উত্তরে এরশাদ হবেঃ যেভাবে তোমার কাছে আমার আয়াতসমূহ এসেছিল আর তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে, ঠিক সেভাবেই তোমাকে আজ ভুলে যাওয়া হচ্ছে এবং ঐরূপই আমি তাকে প্রতিফল দেব যে সীমালংঘন করবে এবং নিজ পালনকর্তার আয়াতসমূহের উপর ঈমান আনবে না, নিশ্চয়ই আখেরাতের আযাব অত্যন্ত কঠিন ও স্থায়ী।

দুনিয়ায় যারা আল্লাহ্ পাকের দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং প্রকৃত মালিকের আয়াতসমূহ শোনার পর গ্রহণ করার পরিবর্তে না শোনার ভান করে চলতে থাকে, তাদের চোখ, কান ও কথা বলার শক্তি বিনষ্ট করে দেয়া হবে। তারা মূক ও বধির হয়ে উঠবে। এ হবে হাশরের প্রথম দিকের অবস্থা। এর পরবর্তী সময়ে তাদের চোখ, জিহ্বা এবং কান খুলে দেয়া হবে–যাতে করে তারা হাশরের ময়দানের অবস্থা এবং তার বিভীষিকা স্বচক্ষে দেখতে এবং হিসাব-কিতাবের সময়ে তাদের সওয়াল-জওয়াব হতে পারে।-(মা’আলিমুত তানযীল)

কাফেরদের চোখ নীল বর্ণের হবে:

আল্লাহ্ পাক সূরা তোয়াহা’-য় এরশাদ করেন :

خافتون بينهم ان لبثتم الا

المجرمين يومد

ونح

উচ্চারণ : ওয়া নাহশুরুল মুজরিমীনা ইয়াওমাইযিন যুরকাই ইয়াতাখা-ফাতুনা বাইনাহুম ইল লাবিহুতুম ইল্লা–আশরান-।

অর্থ : এবং আমি সেদিন পাপীদেরকে একত্র করব এ অবস্থায় যে, তাদের চোখ হবে নীল বর্ণের, তারা চুপে চুপে একে অপরকে বলতে থাকবে, দুনিয়াতে ত তোমরা দশ দিন অতিবাহিত করেছ।–(সূরা তোয়া-হা)

অর্থাৎ কুৎসিত কুশ্রী করে দেয়ার জন্য তাদের চোখ নীল বর্ণের করে দেয়া হবে। রোজ কেয়ামতে যখন তারা উঠে দাঁড়াবে তখন পরস্পর আস্তে আস্তে এ কথা বলবে যে, দুনিয়াতে আমরা কত দিন ছিলাম?–তার পর নিজেরাই উত্তর দিতে থাকবে–দুনিয়ায় আমরা দশ দিন ছিলাম।

আল্লাহ পাক এ আয়াতের পর অন্য এক আয়াতে এর প্রতি আলোকপাত করেছেন।

দুনিয়ায় কত দিন ছিল?

আল্লাহ পাক এরশাদ করেনঃ

ان لبثتم الا يوما ۔

يقولون ان يقول امثلهم طريق

উচ্চারণ : নাহনু আ’লামু বিমা–ইয়াকুলূনা ইয ইয়াকুলু আমসালুহুম তারীকাতান ইল লাবিহুতুম ইল্লা–ইয়াওমান।

অর্থ : তারা যা কিছু বলছে তা আমি ভালো করেই জানি, তাদের ভেতর থেকে চালু ব্যক্তি যখন বলে, তোমরা দুনিয়ায় এক দিনের বেশি ছিলে না।

আখেরাতের দীর্ঘতা এবং ভয়ঙ্কর দৃশ্যাবলী দেখে দুনিয়া বা কবরে অবস্থানের সময় এত কম মনে হবে যেন তা দিন দশেকের অধিক নয়। কেউ কেউ দিন দশেক বলে ধারণা করলেও তাদের মধ্যে যারা অধিক জ্ঞানী, চিন্তাশীল ও হুশিয়ার, তারা বলবে, দশ দিনই বা কোথায়?–কেবল একটা দিনই মনে করতে পার। এ ব্যক্তিকে জ্ঞানী ও চালু এ জন্য বলা হয়েছে যে, দুনিয়ার ধ্বংস এবং আখেরাতের স্থায়িত্ব ও ভয়াবহতা সে অন্য লোকদের চেয়ে অধিক মাত্রায় উপলব্ধি করতে পেরেছে।

সূরা নাজে’আত’-এ আল্লাহ পাক এরশাদ করেন :

كانهم يوم يرونها لم يلبثوا إلا عشية أو ضحها۔

উচ্চারণ : কাআন্নাহুম ইয়াওমা ইয়ারাও নাহা–লাম ইয়ালবাছু ইল্লা–আশিয়্যাতান আও দুহাহা-।

অর্থ : যখন তারা কেয়ামত দেখবে তখন এরূপ মনে হবে যে, তারা দুনিয়াতে মাত্র এক সন্ধ্যা অথবা এক প্রভাতকাল অতিবাহিত করেছে।

এখন তারা ব্যস্ত হয়ে বলছে :

متى هذا الوعد إن كنتم صدقين

উচ্চারণ : মাতা–হা-যাল ওয়া’দু ইন কুনতুম ছোয়া-দিক্বীন।

অর্থ : যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক তা হলে কবে সেই ওয়াদা পূরণ হবে:তারা বলছে ৪ La১৭ LI (আইয়া–না মুরসাহা–কেয়ামত কোন্ দিন হবে:কিন্তু কেয়ামত যখন হঠাৎ এসে পড়বে তখন মনে হবে, খুব শীঘ্রই এসে গেল। এতটুকুও দেরী হল না!

সূরা রাদ’-এ আল্লাহ পাক এরশাদ করেন :

ويوم تقوم الساعة قسم المجرمون ما لبثوا غير ساعة كديك

كانوا يؤفكون۔

উচ্চারণ : ওয়া ইয়াওমা তাকূমুস সা-’আতু ইউক্বসিমুল মুজরিমূনা মা–লাবিছু গায়ইরা সা-আতিন ক্বাযা-লিকা কা-নূ ইউ’ফাকুন।

অর্থ : এবং যেদিন কেয়ামত সংঘটিত হবে সেদিন অপরাধীরা শপথ করে বলবে ও দুনিয়ায় আমরা সামান্য একটুক্ষণের চেয়ে অধিক সময় থাকিনি, তারা এরূপেই উল্টা চলছিল।

কবর বা দুনিয়ায় থাকার সময়টুকু সামান্য একটু সময় বলেই মনে হবে। কেয়ামতের মহাবিপদ যখন মাথার উপর এসে পড়বে তখন তারা আফসোস করে বলবে? দুনিয়ার এবং বরজখের জীবন খুব শীঘ্রই শেষ হয়ে গেল। যদি উক্ত জীবনে অধিক সময় পাওয়া যেত তা হলে এ দিনের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা যেত। এখন মহাবিপদ শুরু হয়ে গেল। এ সময় তারা দুনিয়ার স্বাদ এবং যাবতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা ভুলে যাবে। গোটা জীবন বরবাদ করার এবং দুনিয়ায় ধনৈশ্বর্য, বড় বড় পদ এবং বিলাসব্যসন ও দাপটের ভেতর দিয়ে তারা যে যুগের পর যুগ অতিবাহিত করেছে, তাকে তারা সামান্য একটু সময় বলে আখ্যায়িত করবে। আল্লাহ পাক এরশাদ করেন :

<365K Li< উচ্চারণ : ক্বাযা-লিকা কা-নূ ইউ’ফাকূন। অর্থাৎ, দুনিয়ায় তারা এরূপই উল্টা কথা বলে বেড়াত এবং অযৌক্তিক ধারণা পোষণ করত। না সে দুনিয়ায় তারা সত্য অনুসরণ করেছে, আর না এ দুনিয়ায় তারা সত্য বলছে। আল্লাহ পাক এরশাদ করেন :

وقال الذين أوتوا العلم والايمان لقد لبثتم في كتب الله إلى يوم

البعي هذا يوم البعني وبينكم كنتم لا تعلمون۔

উচ্চারণ : ওয়া কা-লাল্লাযীনা উতু লই’লমা ওয়াল ঈমা-না লাকাদ লাবিছতুম ফী কিতাবিল্লা-হি ইলা–ইয়াওমিল বাছি ফাহা-যা–ইয়াওমুল বাছি ওয়া লাকিন্নাকুম কুনতুম লা তা’লামূনা।

অর্থ : আর ইলম ও ঈমানের অধিকারীরা বলবে:আল্লাহর কিতাবে তোমাদের অবস্থান ছিল তোমাদের জীবন্ত হয়ে উঠা পর্যন্ত, তাই এ হল জীবিত হয়ে উঠার দিন, কিন্তু তোমরা এটা জানতে না।

ইলম ও ঈমানের অধিকারীরা সে সময় তাদের প্রতিবাদ করবে এবং বলবে : তোমরা মিথ্যা বলছ। দুনিয়ায় সামান্য সময় অতিবাহিত করার যে কথা তোমরা বলছ তাও সম্পূর্ণরূপেই ভুল। তোমরা আল্লাহর ইলম এবং লওহে মাহফুযের লেখা অনুযায়ী কেয়ামতের দিন পর্যন্ত (দুনিয়ায়) অবস্থান করেছ। তাতে এক সেকেণ্ডও বেশ-কম হয়নি। তার পর হাশরের মাঠের দিকে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যে সময় ছিল তাতেও এক মুহূর্ত কম করা হয়নি। তার পর আজ ত সেদিন উপস্থিত হয়েছে যার আসা ছিল একেবারে অবধারিত। আজ সেদিনটি দেখে নাও, যেদিনের কথা তোমরা অবশ্যই জানতে, কিন্তু কখনো মানতে না। যদি তোমরা প্রথম থেকেই এ দিনটিকে একীনের সাথে বিশ্বাস করতে তা হলে এদিনের জন্য ঈমান সহকারে নেক আমল নিয়ে অবশ্যই আসতে।

1 Comment
Collapse Comments
মোঃমোখলেছুর রহমান February 15, 2022 at 1:50 pm

আআল্লাহ আপনাকে মঙ্গল করুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *