এক সপ্তাহের মধ্যেই দুই বিবাহের লগ্ন। সোমে গঙ্গানারায়ণের আর বৃহস্পতিতে সুহাসিনীর। বিধুশেখর অনেক ভাবনা চিন্তা করেই এমন দিন ফেলেছেন। দুটি বিবাহেরই সম্পূর্ণ তত্ত্বাবধান করতে হবে বিধুশেখরকেই, কেননা রামকমল সিংহ ইদানীং সংসার থেকে প্রায় পুরোপুরি বিযুক্ত হয়ে পড়েছেন, সান্ধ্যকালীন ভোগ আহ্লাদ ছাড়া আর কোনো দিকেই মন নেই। বিধুশেখর অনেক চেষ্টা করেও বন্ধুকে ফেরাতে পারলেন না। কঠিন ভর্ৎসনা করলেও রামকমল মৃদু মৃদু হেসে বলেন, তুই তো এ রসে মজলি না বিধু, তুই এর মর্ম বুঝবি কি? কখনো মাঝ নদীতে স্রোতের মুখে গা ছেড়ে দিয়ে দিখিচিস, কী আরাম?
ব্যয় সঙ্কোচের অবশ্য কোনো প্রশ্নই নেই। বিশিষ্ট নিমন্ত্রিতদের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে দুখানি করে শাল, দুটি সোনা বাঁধানো লোহা, একজোড়া ঢাকাই কাপড় ও দু শিশি গুলাবী আতর। সিংহ বাড়ি ও মুখুঁজে বাড়িতে সার বেঁধে বসে গেছে দর্জি ও খলিফাগণ। ভৃত্য ও দ্বারবানেরা পাবে দু প্ৰস্থ করে লাল বানাতের তকমা ও উর্দি। অধ্যক্ষ ভট্টাচাৰ্যরা একবার এ বাড়ি একবার ও বাড়িতে গিয়ে ঘোঁটি পাকাচ্ছে। নহবতের সানাই ও ঢুলী, বাজনাদাররা মাত করে দিয়েছে পাড়া। ভিয়েনের ধোঁয়ায় আকাশে মেঘ জমে যাচ্ছে, বার্তাস একেবারে ম ম। হাতে একটি সোনা বাঁধানো ছড়ি নিয়ে শক্ত ঋজু কুকুবধুশেখর পরিদর্শন করছেন সব কিছু। তিনি যে কোথায় কখন উপস্থিত হবেন, তার কোনো
নেই। রামকমল সিংহের ওপর কোনো দায়িত্ব না দিলেও তাঁকে বিধুশেখর অনুরোধ করেছেন যে উৎসবের কটি দিন তাঁকে থাকতে হবে বাড়িতে। কন্যাপক্ষের বাড়িতেও তাঁকে বেসামাল হলে চলবে না। গঙ্গানারায়ণকে বিবাহ বাসরে নিয়ে যাবার আগে কন্যাকত যখন অনুমতি চাইতে আসবেন, তখন সে অনুমতি তো বিধুশেখর দেবেন না, রামকমল সিংহকেই দিতে হবে। আর একটি শর্ত, বিবাহ উপলক্ষে বাড়িতে বাঈ নাচের ব্যবস্থা না হয় হোক, কারণ সেটাই বড় মানুষদের প্রথা, কিন্তু কমলাসুন্দরীকে বাড়িতে আনা চলবে না।
বাগবাজারের বসু বাড়ির কন্যা লীলাবতীকে বিবাহ করে নির্বিঘ্নে স্বগৃহে ফিরে এলো গঙ্গানারায়ণ। লীলাবতীর বয়েস এখন আট বৎসর পাঁচ মাস। লাল বেনারসী চেলী ও ফুলের মালার মধ্যে তাকে যেন আর দেখাই যায় না। মনে হয় একটি চলন্ত পুঁটুলি। দাস-দাসী, পাইক-বরকন্দাজদের বিরাট মিছিল নিয়ে গঙ্গানারায়ণ থামলো বাড়ির সিংহদ্বারের সামনে। সেখানে একটি বিশাল উনুনের ওপর এক কড়া দুধ ফুটচে।
গঙ্গানারায়ণের জননী বিম্ববতী আত্মীয় আশ্রিত মহিলাদের দ্বারা পরিবৃত হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সেখানে। গঙ্গানারায়ণ বিম্ববতীর চরণ ছুঁয়ে প্ৰণাম করলো। সেই দেখাদেখি লীলাবতীও টিপ করে মাথা ঠেকালো তাঁর পায়ের ওপর।
প্রথা অনুযায়ী বিম্ববতী পুত্ৰকে প্রশ্ন করলেন, এ কাকে এনিচিস রে গঙ্গা?
গঙ্গানারায়ণ লজ্জারুণ মুখখানি নীচু করে বললো, মা, তোমার জন্য দাসী এনেচি।
অমনি সমবেত মহিলারা উলু দিয়ে উঠলেন, ফচকে ছোঁড়ারা হাততালি দিল আর ঢাক ঢোলের শব্দে কৰ্ণপটহ ছিঁড়ে যাবার উপক্রম হলো।
এবার বিম্ববতী দুধের কড়াইয়ের দিকে ইঙ্গিত করে নববধূকে জিজ্ঞেস করলেন, মা, কী দেখচো?
পিত্ৰালয় থেকে সহস্রাবার শিখিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও এর উত্তর ভুলে গেছে লীলাবতী। অথবা লজ্জায় তার মুখ খুলছে না। চতুর্দিকের নানা শব্দে কান পাতা দায়।
বিম্ববতী আবার বললেন প্রশ্নটি। সাড়ে আট বৎসরের মেয়েটির মাথা নুইতে নুইতে যেন মাটির সঙ্গে ঠেবে যাবে। তখন একজন এয়ো স্ত্রী এগিয়ে এসে লীলাবতীর পাশে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে তার মুখটি তুলে ধরে বললেন, বল মা বল, আমার সংসার উতলে পড়চে দেকচি।
দু তিনবারের চেষ্টায় লীলাবতী কোনোক্রমে মুনিয়া পাখির মতন সরু গলায় কথাগুলি উচ্চারণ করতেই আবার উলু, উল্লাসধ্বনি ও বাদ্যরবে ছেয়ে গেল অঙ্গন। বিম্ববতী পুত্রবধূকে কোলে টেনে নিলেন।
গাঁটছড়া খুলে এতক্ষণ পরে মুক্ত হলো গঙ্গানারায়ণ। ভৃত্যরা জল ঢেলে দিতে এলো, নাগরা খুলে পা ধুয়ে বাড়ির মধ্যে চলে এসে সে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো। ওঃ, বিবাহ না যেন এক কঠিন পরীক্ষা। কয়েকদিন ধরে নানারকম আচার অনুষ্ঠানে সে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। বাগবাজারের শ্বশুরালয়ে তো সকলের কী চেষ্টা!
বাসরঘরে তো এক কাণ্ডই হয়েছিল। সেখানে গঙ্গানারায়ণের বন্ধুদের প্রবেশ অধিকার ছিল না, শুধু যত রাজ্যের অচেনা মহিলা সেখানে উপস্থিত। বন্ধুদের ছেড়ে আরও অসহায় বোধ করছিল গঙ্গানারায়ণ। একটি রত্নখচিত সিংহাসনে আসীন সে একমাত্র পুরুষ, নববধূ পাশে নেই, প্রায় দুশো জন নারী তাকিয়ে আছেন তার দিকে।
হঠাৎ একজন যুবতী তার সামনে এসে থুতনিতে হাত দিয়ে প্রশ্ন করেছিল, এই যে, আমাদের কলেজে পড়া বরমশাই, তোমার বউটি গেল কোথায়? আমাদের মধ্যে কোনটি তোমার বউ খুঁজে বার করো তো!
গঙ্গানারায়ণ ঘর্মাক্ত হয়ে উঠেছিল। এ যে বড় কঠিন প্রশ্ন। নানান বয়েসী স্ত্রীলোক সেখানে উপস্থিত, তাদের মধ্যে কোনটি তার পত্নী তা খুঁজে বার করা সত্যিই খুব দুষ্কর। শুভদৃষ্টির সময় একবার মাত্র সে লীলাবতীকে দেখেছে, তাও ভালো করে দেখার সুযোগ পায়নি কিংবা সে চেষ্টাও সে করেনি। এদের মধ্যে কোনজন সে? বিবাহ উৎসবে নারীরা জমকালো সাজ-পোশাক করে আসে, অনেককেই সে কারণে এক রকম দেখায়।
গঙ্গানারায়ণ উদভ্ৰান্তের মতন সকলের মুখের দিকে তাকাচ্ছিল। বাসর কক্ষে অন্যান্য নারীদের প্ৰগলভা। হতে কোনো বাধা নেই। কারুর দিকে চোখ পড়তেই সে হেসে ওঠে, কেউ বা ভূভঙ্গি করে, কেউ বা এগিয়ে এসে বলে, ও, আমায় বুঝি মনে ধরেচে? আহা, সে কথা আগে বলতে হয়!
গঙ্গানারায়ণকে ওরা কিছুতেই নিরুত্তর থাকতে দেবে না। সে যতই দিশাহারা হয়, ততই নারীরা অধিক কৌতুক পেয়ে কেউ তাকে ঠোনা মারে, কেউ কান মূলে দেয়। কেউ বলে, ওমা, বিয়ে কত্তে এসে বউ হারিয়ে ফেললে? কাল মায়ের কাছে মুখ দেখাবে কী করে? কেউ বলে, ভুল বাড়িতে এয়োচো নাকি গো? শেষকালে কী, গোঁসাই গাড়ার বর এলো গো কয়েৎ বাড়িতে, টোপর খুলে মুখ নুকোলো কালো হাঁড়িতে! আর অমনি শত শত কাচের বাসন ভাঙার মতন হাসির শব্দে ঘর ভরে যায়!
এক এক সময় অতি নিরীহ ব্যক্তিও যেমন হঠাৎ খুন করে বসে, সেই রকমই অত্যন্ত লাজুক গঙ্গানারায়ণও এক সময় মরীয়া হয়ে তুখোড় হয়ে উঠলো। নানা রত্নালঙ্কারে সজ্জিতা ষোলো সতেরো বৎসরের এক সুন্দরী বিবাহিতা যুবতী, যে মাঝে মাঝেই এসে গঙ্গানারায়ণের কান মুলে দিয়ে যাচ্ছিল, গঙ্গানারায়ণ হঠাৎ খপ করে তার হাত চেপে ধরে বললো, এই তো পেয়েছি! এই তো আমার বউ!
অমনি সারা কক্ষে আবার হাসির হুল্লোড়। সেই যুবতীটি ত্রস্তে হাত ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করতেই গঙ্গানারায়ণ বললো, আর হারাচ্চি না, একবার পেয়ে গেচি, আর ছাড়বো না!
কৌতুকের বন্যায় সেই যুবতীটিই শেষ পর্যন্ত কাঁদো কাঁদো হয়ে উঠলো। গঙ্গানারায়ণ জোর করে তার হাত চেপে ধরে আছে। দূর থেকে একজন বললো, ও গো, নতুন বর, আমাদের ঐ কনকলতার সোয়ামী কিন্তু কুস্তি করে, এখুনি এসে তোমায় ঠ্যাঙাবে! ওকে ছাড়ো!
গঙ্গানারায়ণ চোখ পাকিয়ে বলেছিল, না!
তখন আড়াল থেকে বার করে দেওয়া হয়েছিল। লীলাবতীকে। একজন তাকে সামনে এগিয়ে দিতে দিতে বলেছিল, দেকিস লো, সাবধান! তোর বর এখুনি তো সতীন আনতে চায়।
আজ বাড়ি ফেরার পর গঙ্গানারায়ণের ছুটি। আজ আর তার করণীয় কিছু নেই, এই রাতকে বলে কালরাত্রি, এখন সন্ধ্যে থেকে কাল প্ৰভাত পর্যন্ত নববধূর মুখ দেখা তার নিযেধ। এখন অন্দরমহলে মহিলারা নববধূকে নিয়ে মেতে থাকবে, ক্লান্তি অপনোদনের জন্য কতবাবুরা এখন সুরাপানের আসরে বসে বাঈ নোচ দেখবেন, ঢাকী-ঢুলী বাজনাদাররা ধেনো ওড়াবে, আর ভট্টাচার্যির দল আর চাকরবাকররা লুচি মণ্ডা নিয়ে কড়াকড়ি করবে। সেই এক কড়াই গরম দুধে মাটির ভাঁড় ড়ুবিয়ে ড়ুবিয়ে ইতিমধ্যেই কয়েকজন শেষ করে দিয়েছে।
বরবেশ ছেড়ে একটা সাদা কামিজের ওপর একখানা কাশ্মীরী শাল জড়িয়ে গঙ্গানারায়ণ আবার নেমে এলো নীচে। ফেব্রুয়ারি মাস শুরু হয়ে গেছে, তবু বেশ শীত শীত ভাব। গঙ্গানারায়ণ তার সহপাঠী বন্ধুদের এই সময় আসতে বলেছিল।
কর্তারা বাগানে বসেছেন, তাই বৈঠকখানা ঘরটি এখন খালি। গঙ্গানারায়ণ সেখানেই বন্ধুদের নিয়ে এলো। গৌরদাস, ভূদেব, রাজনারায়ণ, গিরীশ, বন্ধু, বেণী প্রভৃতি অনেকেই উপস্থিত। গতকালের বিবাহ বাসরের নানান ঘটনার উল্লেখ করে ওরা খুব আমোদ করতে লাগলো।
গঙ্গানারায়ণ সুরা পান করে না। সেইজন্য বন্ধুদের জন্য সে সুরার কোনো বন্দোবস্ত রাখেনি। কিন্তু রাজনারায়ণ ছটফট করছে। ইদানীং রাজনারায়ণ প্ৰায় মধুরই মত অতি সুরাপায়ী হয়ে উঠেছে। সে আগেই খানিকটা পান করে এসেছে, তাই বারবার বলছে, গেলাস কোতায়? ব্র্যাণ্ডি কোতায়? শুদু মুখে কি গপ্পো হয়? তোরাও যামন! এই গঙ্গা, তোর বাপের ভাঁড়ার থেকে দু পাঁচ বোতল ব্র্যাণ্ডি নিয়ে আয় না!
কথা ঘোরাবার জন্য গঙ্গানারায়ণ প্রশ্ন করলো, হাঁ রে, মধু কোথায় রে! সে এলো না? সে কালও আসেনি।
রাজনারায়ণ ঠোঁট উল্টে বললো, মধু গোল্লায় গেছে! কেন বাওয়া, মধু আসেনি বলে কি আমাদের ব্র্যাণ্ডি দেওয়া হবে না?
গঙ্গানারায়ণ অন্যদের দিকে ফিরে ঈষৎ দুঃখিত স্বরে বললো, মধুকে এত করে আমি বলে এইচিলাম, তবু সে এলো না?
বেণী বললো, মধুর কতা এখন আর নাই বা শুনলি! শুভ কাজের মধ্যে আবার অশুভ জিনিস টেনে আনা কেন?
গঙ্গানারায়ণ ক্ষুব্ধ হলো। নানা রকম বয়াটোপনা করলেও দুরন্ত স্বভাবের মধুকে সে ভালোবাসে। মধু যে কবি, সে বায়রন-মিল্টনের সমগোত্রীয়, সেইজন্য অনেক কিছুই তাকে মানায়। বেণী মধুকে পছন্দ করে না, সব সময় টক্কর লড়তে চায়, তা গঙ্গানারায়ণ জানে।
মধুর নাম উঠতেই অন্যরা যেন একটু গম্ভীর হয়ে গেছে মনে হলো। আবার নতুন কী কাণ্ড করেছে মধু? একমাত্র গৌরদাসকে প্রশ্ন করলেই ঠিক জানা যাবে, গৌরদাস মধুর প্রাণের দোসর এবং সে অযথা মিথ্যে ভাষণ করে না।
—গৌর, মধুর কী হয়েচে রে?
গৌরের ফর্সা মুখখানিতে স্নান ছায়া। সে অন্যমনস্ক। খুব আস্তে আস্তে থেমে থেমে সে বললো, তোকে কাল ইচ্ছে করেই খবরটা দিইনি, গঙ্গা! মধু বাড়ি থেকে পালিয়েচে। মধু খৃষ্টান হবার জন্য পাদ্রীদের কাচে গিয়ে লুকিয়েচে!
রাজনারায়ণ জড়িত কণ্ঠে বললো, যে সে পাদ্রী নয় বাবা! একেবারে লাট পাদ্রী। লর্ড বিশপ যাঁকে বলে। তিনি আবার মধুকে ফোর্ট উইলিয়ামের মধ্যে ঠাসে রেখেচোন। আর কেল্লার কত্তা ব্রিগেডিয়ার পৌনি নিজে পাহারা দিচ্চেন মধুকে! এবার মধু গেল, তাকে আর পাবি না কোনোদিন!
গঙ্গানারায়ণ বললো, কেল্লার মধ্যে? বলিস কী?
বঙ্কু বললো, মধুর বাবা লাঠিয়াল পাইক আনিয়েচেন যে,। পুলিসের হাত থেকে মধুকে তিনি কেড়ে নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কেল্লার গোরাদের সঙ্গে তো আর তিনি লড়াই দিতে পারবেন না। স্বয়ং সেনাপতির তীবে রয়েচে সে। মধু নিজেই এই ফন্দী এটে বাপের ওপর এক হাত নিয়েচে!
—মধুকে জোর করে সেখানে ধরে রাখেনি তো?
ভূদেব গম্ভীর স্বরে বললো, না, আমি আর গৌর দেখা করতে গোসলাম মধুর সঙ্গে।
–তারপর?
–আমার সঙ্গে অবশ্য সে দেখা করে নাই। সে নিজেই অনিচ্ছা প্ৰকাশ করেছিল, না পাদ্রীরাই আমাদের ভাগিয়ে দিল, তা জানি না। পরে গৌর একবার এক গেসলো, ওর সঙ্গে দেখা হয়েচে।
গঙ্গানারায়ণ গৌরের দিকে তাকালো। গৌর নিশ্চয় মধুর সমস্ত গোপন কথা জানে। মধু গৌরের সঙ্গে দেখা করবে না, এ কখনো হতেই পারে না। ভূদেব সঙ্গে গিয়েছিল বলেই বোধহয় মধু আগের দিন ইচ্ছে করে ওদের সঙ্গে দেখা করেনি। গোঁড়া নীতিবাগিশ, ভূদেবকে বন্ধুরা অনেকেই ডরায়।
গৌর বললো, আমার সঙ্গে দেখা হয়েচে বটে, কিন্তু আমাকে সে বিশেষ কথা বলতেই দেয়নি। নিজের উচ্ছ্বাসেই সে ডগোমগো। আমি একবার শুধু কইলাম, মধু, তুই বাপ মায়ের মনে এমন দুঃখও দিতে পারলি? তোর মা যে মূচ্ছিতা হয়ে রয়েচেন, অন্ন-জল ত্যাগ করেচেন, তাতে মধু আমার ওষ্ঠে আঙুল দিয়ে বললো, চুপ চুপ, ওসব কথা কোস না এখন! আমার মন অ্যাখুন। পরমপিতার পায়ে আশ্রয় নেবার জন্য ব্যাকুল হয়ে আচে। এই উপলক্ষে আমি একটা হিম রচেঁচি সেটা বরং তোকে শোনাই। তোর্কে না শোনানো পর্যন্ত আমার তৃপ্তি নেই! ভাই, তারপর মধু যে পদ্যটা পড়ে শোনালো, মধুর লেখা অত খারাপ। ইংরেজি পদ্য আমি কখনো পড়িনি বা শুনিনি! সে একেবারে ভক্তিতে জ্যাবজেবে আর আমাদের ধম্মো যে কত খারাপ, সেই কতা।
গঙ্গানারায়ণ বললো, কিন্তু মধুর মুখে এমন খৃষ্টভক্তির কথা তো আগে কখনো শুনিনি! বরং থিয়োডোর পাকারের বই পড়ার পর তার মধ্যে একটু নাস্তিক নাস্তিক ভোবই দেকোঁচলুম।
বেণী বললো, আরো মধু কেরেস্তান হচ্চে কি আর শুধু ভক্তিতে? এর মধ্যে অন্য কোনো মতলব আচে। ও তো এক পা বিলেতের দিকে বাড়িয়েই ছেল, এবার পাদ্রীরা ওকে বিলেতে পাঠাবে।
গঙ্গানারায়ণ বললো, মধুকে বাড়ি থেকে পালাবার এই বুদ্ধি দিল কে? কৃষ্ণমোহন বাড়ুজ্যেই নিশ্চয়ই ওর কানে মন্তোর দিয়েচেন।
বঙ্কু বললো, এই ক্যাটি কেষ্টর জ্বালায় আর পারা গেল না। নিজে তো জাত খুইয়েচেই, আবার কচি কচি ছেলেদের ধরে ধরে কেরেস্তান করাচ্চে! সাহেবদের পা-চাটা নচ্ছার কোথাকার!
ভূদেব বললো, শুধু শুধু কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের দোষ দিও না। তিনি নিজ বিশ্বাস লয়ে আছেন। মধুর বাবা তেনাকে চেপে ধরায় তিনি তো সাফ বলে দিয়েচেন, আপনার পুত্র তো দুধের বাছাটি নয়! রীতিমতন লেকাপড়া শিখে সাবালক হয়েচে, তার কি নিজের কোনো বুদ্ধি ভাষ্য নাই? আপনার ক্ষমতা থাকে তাকে ঠেকান!…আমার কী মনে হয় জানো, মধুদের পাড়ায় যে নবীন মিত্তির বলে একটা ছোঁড়া আছে না? সেই ছোঁড়াই মধুকে ফুসলেছে! ছোঁড়া তো অনেক আগেই খৃষ্টান হয়েছে। আমি অনেকবার শুনিছি, সেই ছোঁড়া মধুকে বলছে, খৃষ্টান হলেই বিলেত যেতে পারবে!
রাজনারায়ণ বললো, আরে না, ওসব কিচু না! মধু খেষ্টান হয়েচে হিন্দু বে করবে না বলে! হিন্দুর মেয়েগুলো লেকাপড়া শেখে না। তেমন মেয়েকে মধু কিচুতেই বউ করবে না। ওর বাপ জোর করে বে দিতে গেসলো, তাই মধু পাখি হয়ে ফুড়ৎ করে উড়ে গেল।
গঙ্গানারায়ণ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো! এইখানেই মধুর জয়। সে নিজে তো কিছুতেই পারলো না। এই বিবাহে তার তীব্ৰ অসম্মতি ছিল তবু তো মেনে নিতে হলো তাকে। বিবাহ অনুষ্ঠানে সে বিন্দুমাত্র পুলক বোধ করেনি, বরং মনের মধ্যে বিরক্তি স্তুপীকৃত হয়েছে। নববধূর দিকে তার পূর্ণ দৃষ্টি মেলে চাইতেও ইচ্ছে করে না।
বন্ধুরা চলে যাবার পর রাত্রে একা শুয়ে শুয়ে গঙ্গানারায়ণ অনেকক্ষণ মধুর কথা চিন্তা করলো। তাহলে কি আর কোনোদিন মধুর সঙ্গে দেখা হবে না? খৃষ্টান হবার পর কি মধু এ শহরে টিকতে পারবে? তার দোর্দণ্ডপ্ৰতাপ পিতা সহ্য করতে পারবেন। এই অপমান?
এক সময় গঙ্গানারায়ণ টের পেল, তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও সে অনেকক্ষণ ধরেই তার স্ত্রী লীলাবতীর কথাও ভাবছে। হঠাৎ গঙ্গানারায়ণ শয্যার উপরে উঠে বসলো। না, সে অন্যায় করছিল। মধুর সঙ্গে তার তুলনা হয় না। মধু মধুই, গঙ্গানারায়ণ কোনোদিন মধুর মতন হবে না। নিজ অভিলাষ সিদ্ধির জন্য গঙ্গানারায়ণ কখনো ধর্মত্যাগ করতে পারবে না, মা এবং পিতার মনে সে দুঃখও দিতে পারবে না। বিবাহ যখন করেছেই, তখন তার স্ত্রীর প্রতি বিরূপতা পোষণ করা অন্যায়। ধর্ম সাক্ষী করে সে একটি সরলা বালিকাকে নিজের জীবনসঙ্গিনী হিসেবে বরণ করেছে, এখন সর্বপ্রকারে এ বালিকাকে খুশী করার চেষ্টায় তার যত্নবান হওয়া উচিত। সে কোনোদিন লীলাবতীর প্রতি অনাগ্রহ বা অনাদর দেখাবে না।
বৃহস্পতিবার বিধুশেখরের গৃহে সুহাসিনীর বিবাহ অনুষ্ঠানে গঙ্গানারায়ণের ওপর অতিথিদের সাদর সম্ভাষণের ভার পড়েছে। নিজ বিবাহের দিনের অভ্যাগতদের সকলকে ঠিক মতন দেখার সুযোগ হয়নি
তার, আজ সে স্বয়ং দ্বারের কাছে দণ্ডায়মান। বিধুশেখরের পুত্র নেই, গঙ্গানারায়ণই তাঁর পুত্রবৎ।। একে একে উপস্থিত হতে লাগলেন শহরের অভিজাত ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। বহুরকম শকটের ভিড়ে পথ একেবারে পরিপূর্ণ। সরকারী সেপাইরা মহামান্য ব্যক্তিদের অশ্বব্যানের পথ পরিষ্কার করে দেবার চেষ্টায় হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে। বিধুশেখর এ শহরের বিশেষ প্রতিপত্তিশালী আইনজীবী, তাঁর সঙ্গে দেশের সকল বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচয় আছে।
এলেন বর্ধমান-অধিপতি তেজেশচন্দ্রের দত্তকপুত্ৰ মহাতাবোচাঁদ বাহাদুর। তারপরই এলেন রাজা নরসিংহচন্দ্র রায় বাহাদুর, ইনি পোস্তার সুবিখ্যাত রাজা সুখময় রায়ের কনিষ্ঠ পুত্র। সপরিষদ এসে উপস্থিত হলেন শোভাবাজারের রাজা, বর্তমান হিন্দু সমাজের শিরোমণি রাধাকান্ত দেব। একটু পরেই এলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তাঁর ভ্রাতাগণ। এত রাজা-রাজড়াদের মধ্যে দেবেন্দ্রনাথের পোশাকই সবচেয়ে অনাড়ম্বর, যদিও একটি সাদা শাল জড়ানো থাকায় তাঁর গৌরবর্ণ আরও বেশী গৌর দেখাচ্ছে। তাঁর ঠিক পরেই এলেন বেঙ্গল ব্যাঙ্কের দেওয়ান এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ রামকমল সেন। তিনি সঙ্গে তাঁর পাঁচ বছরের দৌহিত্র কেশবকে নিয়ে এসেছেন। পিতৃবন্ধু রামকমল সেনকে দেখে দেবেন্দ্রনাথ ক্ষণেক দাঁড়িয়ে দু চারটি কুশল প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন এবং শিশু কেশবের থুতনি ছুঁয়ে আদর জানালেন একটু। তখুনি ভূকৈলাশের রাজা সত্যশিরণ ঘোষাল এসে পড়ায় ওঁরা কথা বলতে বলতে চলে গেলেন ভিতরে।
একসঙ্গে দল বেঁধে এলেন রামগোপাল ঘোষ, রসিককৃষ্ণ মল্লিক, রামতনু লাহিড়ী, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, তারাচাঁদ চক্রবর্তী। এঁরা এক সময়ে ছিলেন ইয়ং বেঙ্গল নামে কথিত ডিরোজিও-শিষ্য বিদ্রোহী যুবাবৃন্দ, এখন পরিণত বয়েসে সংসারী হয়ে বিশিষ্ট ভদ্রব্যক্তি হয়েছেন।
বিধুশেধর তাঁর কনিষ্ঠা কন্যার জন্য জামাতাকে ধনী পরিবার থেকে আনেন নি। পাত্রটি দরিদ্র হলেও সংস্কৃত কলেজের উজ্জ্বল ছাত্র ছিল, এখন আইন অধ্যায়ন করে জজ পণ্ডিত হবার অপেক্ষায় আছে। বরের নাম দুর্গাপ্ৰসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়, তার সঙ্গে এসেছে তার সহপাঠী এবং আত্মীয়দের মধ্যে ঈশ্বরচন্দ্ৰ বিদ্যাসাগর, মদনমোহন তর্কালঙ্কার, মহেশচন্দ্ৰ শাস্ত্রী, রামনারায়ণ তর্করত্ন, দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ।
গঙ্গানারায়ণের নিজের বন্ধুরা এলো কিঞ্চিৎ দেরি করে। গণ্যমান্য অতিথিদের আপ্যায়ন করার কাজে ব্যাপৃত থাকলেও সে তার বন্ধুদের সাক্ষাৎ পাবার জন্য ব্যাকুল হয়ে ছিল।
ওরা এসে উপস্থিত হতেই গঙ্গানারায়ণ দ্বারের কাছ থেকে একটু সরে এসে ব্যগ্রভাবে প্রশ্ন করলো, খবর কী, বল! হয়ে গ্যাচে?
গৌর বিষণ্ণভাবে মাথা নেড়ে জানালো, হ্যাঁ।
—তুই গিইছিলিস?
—হাঁ, কিন্তু কথা কিছু হলো না। এক ঝলক শুধু চোখের দেকা দেকিচি।
ভূদেব বললো, কোনোক্রমে কাছে ঘেঁষবার তো উপায় রাখে নাই। মিশন রোর ওল্ড মিশন চার্চ তো সশস্ত্র সৈনিক দিয়ে একেবারে ঘিরে রেখেচিল। এত সেপাই শাস্ত্রী নিয়ে ধমন্তির গ্রহণের ব্যাপার আগে কেউ বাপের জন্মে দেকেচে! ইংরেজের যে-টুক চক্ষুলজ্জা ছিল, তাও আর নাই! এদেশে আর কেউ হিন্দু থাকবে না, দেশটা ম্লেচ্ছে ভরে যাবে!
—মধুকে কেমন দেকলি?
—দেকলুম আর কোথায়! কেল্লা থেকে ঢাকা গাড়ি করে বাঘা-বাঘা সাহেবরা মধুকে সঙ্গে করে নিয়ে এলো। যেন কোনো ডিউক বা লার্ডের বিবি, পাছে কেউ কেড়ে নেয়, তাই এত সাবধানতা। আর কোনো নেটিভকে ওরা আগে কখনো আদর দেখিয়ে কোলে বসিয়ে আনেনি। গাড়ি থেকে নেমে গীর্জায় ঢোকার সময় আমরা মধুকে দূর থেকে দেকলুম এক ঝলক। মধু অবশ্য একবারও ফিরেও তাকায়নি।
—সঙ্গে সঙ্গে দরজা বন্ধ হয়ে গ্যালো। সব সাহেব মেম গিজগিজ করছে, শুধু দুজন নেটিভ রইলো ভেতরে। এক মধু, আর আমাদের কালোমানিক কেষ্টমোহন। সেই তো রাজসাক্ষী হয়েচে গো! ঐ যে দেকচিস রামগোপাল ঘোষ, রামতনু লাহিড়ীরা দাঁড়িয়ে আচে, ওদেরই তো বন্ধু ঐ ক্যাটিকেষ্ট। ওরা বন্ধুকে সামলাতে পারে না? নইলে আমরাই ওকে একদিন দেবো দু ঘা!
ভিতর থেকে ডাক আসায় গঙ্গানারায়ণকে চলে যেতে হলো তখন। তারপর আর ঘণ্টা দুএক সে ফুরসৎ পেল না।
এক সময়, অতিথিরা যখন আহারে বসেছে, বিবাহবাসরে সম্প্রদানের মন্ত্র উচ্চারণ শুরু হয়ে গেছে, তখন হঠাৎ গঙ্গানারায়ণের একটা কথা মনে পড়লো। সারাদিনে সে এবাড়ির সমস্ত মহল চাষে বেড়িয়েছে বেশ কয়েকবার, কিন্তু একবারও তো সে বিন্দুবাসিনীকে দেখেনি। এত উৎসবের মধ্যে বিন্দুবাসিনী কোথায়?
কথাটা মনে পড়া মাত্র গঙ্গানারায়ণের হৃদয় কম্পিত হতে লাগলো। এ জগতে যেন সে এক চরম ঘূণ্য অপরাধী। শুধু আজ কেন, সপ্তাহব্যাপী দুই বাড়িতে যে এত সমারোহ, তার মধ্যে কোনো এক সময়েও তো বিন্দুবাসিনীর দেখা মেলেনি। এবং একথা একেবারের জন্যও গঙ্গানারায়ণের মনে আসেনি পর্যন্ত। গত কয়েক মাস ধরেই সে বিন্দুবাসিনীর কথা কখনো নিজ চিন্তায় স্থান দেয়নি। বিন্দুবাসিনী তার বাল্য সখী, তাকে সে বিস্মৃত হয়েছে।
নহবৎখানায় সানাইয়ের স্বরও গঙ্গানারায়ণের কাছে নিরানন্দ মনে হলো। চতুর্দিকে এত মানুষ, অথচ একজনের অভাবেই মনে হলো সব কিছু শূন্য।
সারা বাড়ি আর একবার তন্ন তন্ন করে খুঁজে গঙ্গানারায়ণ ত্রিতলে পূজার কক্ষের সামনে এসে দাঁড়ালো। আর সব জায়গায় এত আলো, এত রঙের বাহার। কিন্তু এখানে শুধু একটি রেড়ির তেলের বাতি জ্বলছে। সেই স্নান আলোয় চতুর্দিকে ছড়ানো অজস্র বাসি ফুলের মধ্যে বসে আসে সদা কৈশোর উত্তীৰ্ণ এক যুবতী। সে আজ প্রকৃতই একা, কেননা এ কক্ষে আজ জনাৰ্দনমূর্তিও নেই, পারিবারিক প্রথা অনুযায়ী সেই মূর্তিকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে বিবাহ বাসরে।
গঙ্গানারায়ণের মনে হলো, বিন্দুবাসিনী যেন এক তপঃকৃষ্টা ব্ৰতচারিণী। পিঠের ওপর খোলা চুল, তার শ্বেত বসনও যেন রেড়ির তেলের আলোয় গেরুয়ামতন দেখায়। বিন্দুবাসিনীর চক্ষু দুটি মুদিত, সেই অবস্থায় বসে থেকে সে যেন একটু একটু দুলছে।
-বিন্দু!
বিন্দুবাসিনী চমকালো না। ধীরে ধীরে মুখ ফিরিয়ে তাকালো। স্নিগ্ধ হাস্যের সঙ্গে বললো, কে? গঙ্গা? তুই কেমন বউ আনলি? একদিন তোর বউ দোকতে যাবো!
অভিমান মিশ্রিত গলায় গঙ্গানারায়ণ বললো, তুই কেন আমার বিবাহে যাসনি? আমি নিজে এসে তোকে নেমন্তন্ন করিনি বলে? সে না হয় বুঝলুম, কিন্তু আজ সুহাসিনীর বে, তুই সেজে গুঁজে আহ্লাদ না করে এখানে এমন করে বসে রয়িচিস কেন? তোর বড় দেমাক, তাই না?
সেইরকম হাস্যমুখেই ছদ্মার্ভৎসনা করে বিন্দুবাসিনী বললো, যাঃ! আমন কতা বলতে আচে? তুই এখনো ছেলেমানুষ রয়ে গেলি! আমি কাঁচা বয়েসের রাঢ়, কোনো শুভকাজের সময় আমার মুখ দেখাতে নেই, তুই জানিস না?
গঙ্গানারায়ণ কয়েক মুহূর্তের জন্য প্রস্তরমূর্তির মতন স্থির হয়ে রইলো। কী উত্তর দেবে সে জানে না।
পরীক্ষণেই যেন এক প্রবল জোয়ারে সে প্লাবিত হয়ে গেল সহসা। আর সব কিছুই মিথ্যা বলে বোধ হলো। চোখের সম্মুখে এ কাকে সে দেখছে? এ যে বিন্দু, তার শৈশব কৈশোরের সমস্ত স্বপ্নের সঙ্গী। একে ঘিরেই তো সে এক স্বৰ্গ রচনা করতে পারতো, তার বদলে কোন মহত্তর ভুলে সে জড়িয়ে পড়লো? বিন্দুকে বাদ দিয়ে তার জীবন শূন্য, ব্যর্থ হয়ে যাবে।
ব্ৰাহ্মণবাড়ির পূজার কক্ষে গঙ্গানারায়ণ প্রবেশ করে না। কিন্তু আজ এঘরে দেবতা নেই। গঙ্গানারায়ণ দ্রুত সেখানে ঢুকে সবলে বিন্দুকে আঁকড়ে ধরে আবেগমথিত কণ্ঠে বললো, বিন্দু, বিন্দু, তুই আমার! এতকাল বুঝিনি! তোকে ছেড়ে আমি কিছুতেই সুখ পাবো না।
বিন্দু গঙ্গানারায়ণকে মৃদু অথচ কঠিনভাবে ঠেলে দিয়ে বললো, ছিঃ গঙ্গা, এসব কথা উচ্চারণ কত্তে নেই! আমি তোর কেউ না। তুই সুখে থাক, তাহলেই আমি সুখী হবো।