টুকু অরুকে ফিরিয়ে দিতে যাচ্ছে।
যাচ্ছে বাসে। অরু বসার জায়গা পেয়েছে টুকু তার পাশেই হ্যান্ডেল ধরে দাঁড়িয়ে। অরু বলল, টুকু তুই আমার কোলে বোস।
টুকু খুব লজ্জা পেল। কারো কোলে বসে যাবার বয়স কী আছে? তার বয়স বাড়ছে এই কথাটা কারোরই মনে থাকে না। টুকুর প্যান্টে স্টার সিগারেটের প্যাকেটে তিনটা সিগারেট পর্যন্ত আছে। এই খবর জানতে পারলে আপার নিশ্চয়ই খুব মন খারাপ হবে।
দাউদকান্দিতে পৌঁছবার পর টুকু বসার জায়গা পেল। অরুর পাশের বৃদ্ধ নেমে গেছেন। অরু বলল, তুই জানালার পাশে বসবি টুকু?
না।
আয় না বোস, সুন্দর দেখতে দেখতে যাবি।
তুমি দেখতে দেখতে যাও।
আপার দিকে তাকাতে টুকুর বড় ভাল লাগছে। ফিরে যাবার আনন্দে। আপার চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে আছে, কেমন ছটফট করছে। আনন্দে ধরে রাখতে পারছে না।
অরু নিচু গলায় বলল, টুকু তোর কী মনে হয়, আমাদের দেখলে তোর দুলাভাই রাগারগি করবে?
জানি না আপা।
কিছু তো করবেই। পুরুষ মানুষের এমনিতেই রাগ বেশি থাকে। তোকে হয়ত কিছু বকাঝকা দিবে, তুমি কিছুই মনে করিস না।
আমি কিছু মনে করি না।
মনে না করাই ভাল। এত কিছু মনে পুষে রাখলে সংসার চলে না।
কথা বলো না আপা। সবাই শুনছে।
অরু চুপ করে গেল, কিন্তু বেশিক্ষণ চুপ থাকতে পারল না। ফিসফিস করে বলল–সুসান আমাকে দেখলে কী করবে। আন্দাজ কর তো টুকু?
টুকু জবাব দিল না। অরু বলল, প্রথম এরকম ভান করবে। যে আমাকে চিনতে পারছে না। ওর এই স্বভাব। তার বাবা একবার তিন দিনের জন্যে বাইরে গিয়েছিল, ফিরে আসার পর সুমন এমন ভাব করেছে যেন বাবাকে চেনে না। অথচ ঠিকই চিনেছে। রিমন আবার ঠিক তার উল্টো। শব্দ পেলেই ঝাপ দিয়ে কোলে পড়বে।
আপা চুপচাপ বস তো।
রিমনের শার্টটা ছোটই হয়। কিনা কে জানে। সুমনের জন্যে একটা পাঞ্জাবি কিনেছি। আর রিমনের জন্যে শার্ট। একটু বড় কেনার দরকার ছিল। ওদের কাপড়গুলি তুই দেখেছিস?
না।
দেখবি?
এখন দেখব না আপা। আর তুমি এত কথা বলছ কেন?
কেউ তো আর শুনতে পারছে না, ফিসফিস করে বলছি।
চুপচাপ বসে থাক আপা, ঘুমুবার চেষ্টা কর।
দূর বোকা, বাসে কেউ ঘুমায়?
তারা বাড়িতে পৌঁছল। সন্ধ্যার ঠিক আগে আগে! আব্দুল মতিনের সঙ্গে দেখা হল বাংলাঘরের সামনে। সে মাগরেবের নামাজের জন্যে অজু করছিল। মতিন কড়া গলায় বলল, কে?
টুকু বলল, দুলাভাই আমরা।
আমরা! আমরাটা আবার কে?
আপাকে নিয়ে এসেছি দুলাভাই।
কে আনতে বলেছে?
অরু নিচু গলায় বলল, রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বকবকি করছ, কেন? ঘরে যাই তারপর…
এ দেখি ফড়ফড় করে কথাও বলে।
টুকু বিস্মিত গলায় বলল, এই সব কী বলছেন দুলাভাই?
আব্দুল মতিন খেকিয়ে উঠল, চামচিকা দেখি আমাকে ধমক দেয়। দূর হা হারামজাদা।
টুকু হতভম্ব হয়ে গেল। হৈচৈ শুনে লোকজন জড়ো হয়েছে। ভেতর থেকে অরুর এক মামাশ্বশুর বের হয়েছেন। তিনি কোনো কথা বললেন না। সুমন তার গলা জড়িয়ে ধরে আছে এবং ভীত চোখে তাকাচ্ছে তার বাবার দিকে। অরু, অসহায় ভঙ্গিতে ছেলের দিকে এগিয়ে গেল! আব্দুল মতিন চেঁচিয়ে উঠল, এই কোথায় যাস তুই, খবরদার।
অরুর চোখে পানি এসে গেছে, সে গুছিয়ে কিছু চিন্তা করতে পারছে না। কী করবে সে? ছুটে গিয়ে তার স্বামীর পায়ে উপুড় হয়ে পড়বে। কিন্তু এত লোকজন চারদিকে জড়ো হচ্ছে–আহা, যদি কেউ না থাকত। অরু ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, তুমি এ রকম করছ কেন?
চুপ। চুপ।
বয়স্ক অপরিচিত এক ভদ্রলোক বললেন, ভিতরে নিয়া যান। যা হওনের হইছে। আব্দুল মতিন কঠিন গলায় বলল, যেটা জানেন না সেটা নিয়ে কথা বলবেন না। এর ছোট বোন বেশ্যাবৃত্তি করে এটা জানেন?
অরু জলভরা চোখে টুকুর দিকে তাকিয়ে বলল, চল, চলে যাই।
টুকু বলল, চল।
অরু তার ছেলের দিকে তাকাল। সুমনের চোখে অপরিচিতের দৃষ্টি। যেন মাকে সে চিনতে পারছে না।
টুকু বোনের হাত ধরল। কোমল গলায় বলল, চল আপা; এতগুলি মানুষ তাদের চারপাশে। কেউ কিছুই বলল না।
রাত দু’টায় ঢাকা যাওয়ার একটা ট্রেন আছে। তারা স্টেশনে বসে রইল। টুকু ভেবেছিল আপা পুরোপুরি ভেঙে পড়বে। দেখা গেল অরু বেশ শক্তই আছে। টুকু বলল, কিছু খাবে আপা?
অরু বলল, টাকা আছে?
আছে কিছু।
টিকিট কাটার তো টাকা লাগবে। ঐ টাকা আছে?
আমার টিকিট লাগবে না। তোমার টিকিটা কাটিব।
তাহলে যা কিছু কিনে আন। খুব ক্ষিধে লেগেছে।
পরোটা ভাজি আনব আপা?
আন।
টুকু পরোটা, আলুভাজি আর কলা নিয়ে এল। অরুণ বেশ আগ্রহ করেই খেল। তার সত্যি সত্যিই খুব ক্ষিধে পেয়েছিল।
আপা।
কী রে?
আমার কী মনে হচ্ছে জানো? আমার মনে হচ্ছে–ওরা আমাদের খোঁজে স্টেশনে আসবে। বাড়িতে মুরুব্বি আছে, তারা যখন শুনবে তখন…
অরু সহজ গলায় বলল, কেউ আসবে না। টুকু, আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। কী করি বল তো? কয়েক রাত ঘুম হয়নি এখন ঘুমে একেবারে চোখ জড়িয়ে আসছে।
মেয়েদের ওয়েটিং রুমে বেঞ্চিতে শুয়ে ঘুমাও। চল যাই।
চল।
লম্বা কাঠের বেঞ্চিতে অরু কুণ্ডুলী পাকিয়ে শুয়ে পড়ল। মাথার নিচে হ্যান্ড ব্যাগ। শোবার সঙ্গে সঙ্গেই সে ঘুমিয়ে পড়ল। টুকু সারাক্ষণই বোনের পাশে বসে রইল। এক সময় দেখল ঘুমের মধ্যেই অরু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত টুকুর প্রথম গল্পে এই দৃশ্যটি ছিল। চমৎকার একটি গল্প, যদিও বেশির ভাগ মানুষই এই গল্প পড়ল না। পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক কী মনে করে জানি টুকুকে একটি চিঠি লিখলেন। সেই চিঠিতে অনেক খানি উচ্ছ্বাস ছিল। সাহিত্য সম্পাদকরা কখনো এই জাতীয় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন না।
বাড়ি ফিরেও অরু, তেমন কোনো আবেগ বা উচ্ছ্বাস দেখাল না। মনে হল জীবনের কঠিন বাস্তবকে সে সহজভাবেই গ্রহণ করেছে। একবারও নিজের বাচ্চা দু’টির কথা বলল না। তিথিকে বলল, তুই কী আমার জন্যে কোনো চাকরি-টাকরি জোগাড় করে দিতে পারবি?
তিথি বলল, আমি চাকরি কোথায় পাব আপা?
অরুণ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, তাও তো ঠিক। যে কোনো ধরনের চাকরি হলেই হয়। আয়ার কাজও করতে পারি। আজকাল তো শুনেছি বড়লোকদের বাড়িতে বেতন দিয়ে আয়া রাখে।
আমি এইসব খোঁজ রাখি না আপা।
পত্রিকায় একটা বিজ্ঞাপন দিলে লাভ হবে?
জানি না আপা।
তোর তো অনেকের সঙ্গে জানাশোনা সবাইকে যদি বলে-টলে রাখিস…
আমার সঙ্গে কারোর কোনো জানাশোনা নেই, এইসব নিয়ে আমাকে বিরক্ত করো না তো আপা।
আচ্ছা আর বিরক্ত করব না।
দিন পনের পরে আব্দুল মতিনের পক্ষ থেকে উকিলের চিঠি এসে উপস্থিত হল। সেই চিঠির বক্তব্য হচ্ছে আব্দুল মতিন তার স্ত্রীর সঙ্গে মানিয়ে নিতে সক্ষম হচ্ছে না। কারণ তার স্ত্রী নষ্ট চরিত্রের অধিকারী। আব্দুল মতিন স্ত্রীর চরিত্র সংশোধনের অনেক চেষ্টা করেও সফলকাম হয়নি। স্ত্রীর কারণে সে সামাজিকভাবে অপদস্ত হয়েছে। মানুষের সামনে মুখ দেখাতে পারছে না। কাজেই সে ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের এবং দু’জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সাক্ষী রেখে তার স্ত্রী শাহানা বেগম ওরফে অরুকে ইসলামী বিধি মোতাবেক তালাক দিচ্ছে।
এই চিঠিতেও অরুর কোনো ভাবান্তর হল না। মনে হল সে আগে থেকেই জানত এ ধরনের একটি চিঠি আসবে। মিনু খুব কান্নাকাটি করতে লাগলেন।
জালালুদ্দিন গম্ভীর হয়ে বললেন, কান্নাকাটি করে লাভ নেই, সবই কপালের লিখন। শুধু বংশের ওপর একটা দাগ পড়ে গেল–এটাই আফসোসের কথা। এত বড় বংশ।
হীরু খুব চোঁচামেচি করতে লাগল, হারামজাদা ভেবেছে কী, হারামজাদাকে আমি হাইকোর্টে নিয়ে তুলব। জেলের ভাত খাওয়াব। জেলের মোটা ভাত পেটে পড়লে বুঝবে লাইফ কাকে বলে। এমনি এমনি ছাড়ব আমি সেই পাত্রই না। কাস্টডি মামলা করব। সুমন, রিমন থাকবে তার মা’র সাথে।
অরু বলল, চেঁচাস না তো–চুপ কর।
চুপ করব কেন? কাস্টডি মামলা করলে বাপ বাপ করে সুমন, রিমনকে দিয়ে যাবে।
ওদের এখানে দিয়ে গেলে লাভ কী হবে? খাওয়াব কী? যেখানে আছে, ভালই আছে। তুই খামোখা চিৎকার করিস না।
তোমার নিজের বাচ্চাদের জন্য তোমার হার্টে কোনো ‘লাভ’ নেই?
না।
বল কী?
এত গাধা তুই কী করে হলি, বল তো হীরু?
গাধা?
হ্যাঁ গাধা। যত দিন যাচ্ছে তুই ততই গাধা হচ্ছিস।
হীরু মন খারাপ করে বেরিয়ে গেল। মেয়েছেলের মতিগতি বোঝা খুব মুশকিল। ভাল বললে মন্দ বুঝে। কী অদ্ভুত একটা জাত আল্লাহতালা সৃষ্টি করেছেন। এই জাতের মুখের দিকে তাকানও উচিত না। নিমক হারাম জাত।
নারী জাতির ওপর হীরুর ভক্তি-শ্রদ্ধা কোনো কালেই বেশি ছিল না। ইদানীং নারী জাতিকে সে সহ্যই করতে পারছে না। কারণ এ্যানার বিয়ে ঠিকঠাক হয়ে গেছে। এ্যানার মা হাসপাতাল থেকে ফিরে এসে মেয়ে বিয়ের জন্যে উঠে পড়ে লেগেছেন। শেষপর্যন্ত যে ছেলেটির সঙ্গে বিয়ে ঠিকঠাক হয়েছে সে ডাক্তার। প্রাইভেট ক্লিনিকে চাকরি করে। চেহারাও ভাল। অপছন্দ করার মত কিছু তার মধ্যে নেই। হীরু খোঁজ নিয়ে জেনেছে। ইতিমধ্যে এ্যানা দু’দিন সেই ডাক্তারের সঙ্গে চাইনিজ খেতে গিয়েছে।
হীরু পীর সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল, লজ্জার মাথা খেয়ে পীর সাহেবকে ব্যাপারটা বলেছে। পীর সাহেব হাসিমুখে বলেছেন–চিন্তার কিছু নাই রে ব্যাটা। চিন্তার কিছু নাই। সবই আল্লাহর হুকুম।
হীরু বিনীতভাবে বলেছে, আল্লাহর হুকুমটা কী সেটা যদি একটু জেনে দেন। বড় অশান্তিতে আছি।
পীর সাহেব অভয় দেয়া স্বরে বললেন, তোর চিন্তার কিছু নাই।
হীরু এই প্রথম পীর সাহেবের কথায় বিশেষ ভরসা পেল না। ডাক্তার ছেলে, চেহারা ভাল, বয়স অল্প, নারায়ণগঞ্জে বাড়ি আছে–এই ছেলেকে ফেলে এ্যানা আসবে তার কাছে। গাধা টাইপ মেয়ে হলেও একটা কথা ছিল। এ্যানার মত বুদ্ধিমতী একটা মেয়ে কী কখনো এই কাজ করবে?
ডাক্তার ছেলেটিকে একটা উড়ো চিঠি পাঠানোর চিন্তা হীরুর মাথায় এসেছিল। সেই উদ্দেশ্যে অনেক ঝামেলা করে নারায়ণগঞ্জের ঠিকানাও জোগাড় করেছিল। অনেক চিন্তা-ভাবনা করে চিঠির একটা খসড়াও দাঁড় করিয়েছিল।
ডাক্তার সাহেব,
সালাম পর সমাচার এই যে, পরম্পরায় শুনিতে পাইলাম এ্যানা নামী জনৈকার সহিত আপনার বিবাহ। এক্ষণে আপনাকে জানাইতেছি যে, এই মেয়েটির চরিত্র উত্তম নয়। পাড়ার যে কোনো ছেলেকে জিজ্ঞাসা করিলেই ইহা জানিতে পরিবেন। চরিত্র দোষ ছাড়াও এই মেয়েটির মেজাজ অত্যন্ত উগ্র। বিবাহ করিবার আগে অগ্র-পশ্চাৎ বিবেচনা করিবেন। তাহা যদি না করেন তা হইলে আপনার বাকি জীবন ছারখার হইয়া যাইবে।
ইতি–
আপনার জনৈক বন্ধু।
শেষপর্যন্ত চিঠিটা হীরু পাঠাতে পারল না। এ্যানা সম্পর্কে আজেবাজে কথা লিখতে ইচ্ছা করল না। একটা ভাল মেয়ের নামে বদনাম দেয়াটা ঠিক না। তারচে বরং ছেলেটার নামে কিছু বদনাম এ্যানার কানে উঠিয়ে দিয়ে দেখা যেতে পারে। অনেক চেষ্টায় সেই সুযোগ পাওয়া গেল। বাস স্টপে এ্যানাকে একা পাওয়া গেল। হীরু হাসি মুখে এগিয়ে গেল।
কী খবর এ্যানা?
এ্যানা সহজ ভঙ্গিতে বলল, কোন খবরটা জানতে চান?
বিয়ে হচ্ছে শুনলাম।
ঠিকই শুনেছেন।
ডেট হয়ে গেছে না-কী?
এখনো হয়নি। তবে শিগগিরই হবে।
ব্যাপারটা নিয়ে একটা সেকেন্ড থট দাও। বিয়ে দু’একদিনের ব্যাপার না। সারা জীবনের ব্যাপার। শেষে আফসোসের সীমা থাকবে না।
এ্যানা হাসি হাসি মুখে বলল, ছেলের চরিত্র খুব খারাপ তাই না?
হীরু খানিকটা হকচাকিয়ে গেল। যে কথা তার নিজের বলার কথা সেই কথা এ্যানা বলে ফেলায় গুছিয়ে রাখা কথাবার্তা সব এলোমেলো হয়ে গেল।
এ্যানা বলল, আপনি কী ভেবেছেন ছেলেটার চরিত্র খারাপ শোনামাত্র আমি বিয়ে ভেঙে দেব?
কবে নাগাদ হবে বিয়েটা?
বললাম তো এখনো ডেট হয়নি। ডেট হলে আপনাকে জানাব।
তোমার রেজাল্ট কবে হবে?
রেজাল্ট তো গত সপ্তাহেই হল। আপনার পীর সাহেবের খবর ছাড়া আপনি দেখি আর কোনো খবরই রাখেন না।
পাস করেছ?
হ্যাঁ। ফাস্ট ডিভিশন, চারটা লেটার।
ঠাট্টা করছ?
ঠাট্টা করব কেন? আপনি কী আমার দুলাভাই?
হীরু এর উত্তরে কী বলবে ভেবে পেল না। কথাবার্তা না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকাও ভাল দেখায় না। অথচ কোনো কথাই মনে আসছে না।
কোন কলেজে ভর্তি হবে?
জানি না। ও যেখানে ভর্তি করায়।
কী পড়বে?
আইএসসি পাস করে ডাক্তারি পড়ব। স্বামী-স্ত্রী দু’জন ডাক্তার হলে খুব ভাল হয়।
হীরু মনে মনে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। মনটা ক্রমেই বেশি খারাপ হয়ে, যাচ্ছে। এই মেয়ে জাতটা বড় অদ্ভুত। কী বললে পুরুষ মানুষের মন ভাল হয় সেটা যেমন জানে আবার কী বললে পুরুষ মানুষের মাথা খারাপ হয়ে যায় সেটাও জানে।
বাস এসে গেল। এ্যানা বাসের দিকে এগুতে এগুতে অবলীলায় বলল, বিয়েতে আসবেন কিন্তু। রাগ করে বাসায় বসে থাকবেন না।
এ্যানা বাসে উঠে গেল।
হীরু হতভম্ব হয়ে লক্ষ্য করল তার চোখে পানি এসে গেছে। কী লজ্জার কথা! সে একজন পুরুষ মানুষ আর তার চোখে কি-না পানি? সম্ভবত এটা কেয়ামতের নিশানা। পীর সাহেব একবার বলেছিলেন–কেয়ামত যত কাছে আসবে উল্টাপাল্টা ব্যাপার ততই বেশি হতে থাকবে। মেয়েছেলে হবে পুরুষের মত তাদের দাড়ি-গোঁফ গজাবে, হায়েজ-নেফাস হবে বন্ধ। আর পুরুষ হবে মেয়েদের মত। পুরুষদের দাড়ি উঠবে না। প্রতি মাসে কয়েক দিন তাদের লিঙ্গ দিয়ে দুষিত রক্ত বের হবে। ওহ আল্লাহতালার কী কুদরত! বলেন–ইয়া নবী সালাম আলায় কা…