১৬. টিনা বিরক্ত হয়ে বলল

টিনা বিরক্ত হয়ে বলল দুঘণ্টা আগে আসবার জন্যে খবর পাঠালাম না?

কাজ ছিল ভাবী।

টিনা রহস্যময় ভঙ্গিতে বলল, অল্পের জন্যে মিস কবলি, তোর ডাক্তার এসেছিল। বকুল বড় লজ্জা পেল। ইদানীং টিনা ভাবী কথায় কথায় বলছে তোর ডাক্তার। কি লজ্জার ব্যাপার, কারো কানে গেলে কি হবে কে জানে।

বাচ্চাদের গা গরম, ডাক্তার ডাকতে হয়। কোন ডাক্তারকে আর ডাকি, তোর ভাইকে বললাম বকুলের ডাক্তারকেই ডাক।

বকুল লাল হয়ে বলল কি যে তুমি কর ভাবী।

টিনা বকুলের কোলে একটা বাচ্চা তুলে দিল। গা সত্যি গরম, মুখে লাল লাল কি দেখা যাচ্ছে।

ওর কি হয়েছে ভাবী?

কিছু না, মাসি-পিসি। সব বাচ্চাদের হয়। তোকে একটা বিশেষ কাজে ডেকেছি। বকুল। একটা না দু’টা বিশেষ কাজ। প্রথমটা হচ্ছে নাম ঠিক করেছিস?

উঁহু।

আজকেই নাম চাই। খুব জরুরি।

কেন এত জরুরি কেন?

টিনা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলিল বাচ্চাদের দাদা চিঠি দিয়েছে। নাতীদের নাম যেন ফজলুর সঙ্গে মিল রেখে বজলু আর মজনু রাখা হয়। তোর ভাই বলছে, বাবা যা চান তাই রাখ। আমি মরে গেলেও ছেলেদের নাম বজলু মজনু রাখব না। এখন ছেলেদে বা কত সুন্দর সুন্দর নাম হয়, আর আমার দুটোর নাম হবে বজলু আর মজনু?

বকুল হেসে ফেলল।

টিনা বিরক্ত হয়ে বলল, হাসির কি হল? সুন্দর সুন্দর নাম দশ মিনিটের ভেতর বের কবি;

ঠিক আছে করব, এখন দ্বিতীয় জরুরি কথাটি বল?

তোর ডাক্তারকে আজ বললাম তোর কথ।

তার মানে।

খোলাখুলি বললাম। প্রথমে চা-টা খাইয়ে ভাই সম্পর্ক পাতালাম, তাপ প<ং পল পাম তুমি বয়সে আমার ছোট হবারই কথা, কাজেই তুমি বলছি।

বকুল বলল, থাক ভাবী আমি আর শুনতে চাই না।

শুনতে না চাইলে উঠে চলে যা, আমার যেটা বলার সেটা বলে যাচ্ছি। তারপর আমি বললাম তুমি কি ভাই বকুল নামের কোনো মেয়েকে চোন? সে দেখি লজ্জায টমেটোর মত হয়ে গেল। আমি বললাম। ওকে আমি ছোটবেলা থেকে চিলি। এ রকম মেয়ে পৃথিবীতে খুব কম জন্মায়। তুমি যদি চাও এই মেয়েটির সঙ্গে তোমার বিয়েব ব্যবস্থা করি।

বকুল ভেবেছিল সে কোনো জবাব দেবে না, কিন্তু নিজের অজান্তেই সে বলল, উনি কি বললেন?

কি বললেন সেটা শোনাল দরকার নেই। শুনলে পায়া ভাবী হয়ে যাবে। তোর মুনা। আপা বাসায়। আছে? তার সঙ্গে আমার কথা আছে। আছে বাসায়?

না।

কোথায় গেছে?

জানি না। মামুন ভাইয়ের কাছে বোধ হয়।

কখন আসবে?

সন্ধ্যার পর চলে আসবে।

ঠিক আছে সন্ধ্যার পর আমি যাব তোদের বাসায়।

বকুল জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল। তার চোখে পানি চলে এসেছে। সে টিনা ভাবীর কাছে তা গোপন করতে চায়।

টিনা হেসে বলল, কেঁদে গাল ভাসাচ্ছিস কেন বোকা মেয়ে? যা, বাসায় চলে যা। তোর আপাকে বলিস মনে করে আমি আসব। জরুরি কথা আছে তার সাথে।

টিনা এসে তাকে জড়িয়ে ধরল। বকুল দীর্ঘ সময় বসে বসে কাঁদল। দুজনের কেউই কোনো কথা বলল না।

মামুন তাকিয়ে আছে। রাগী চোখে।

এমন রাগী চোখে তাকিয়ে থাকার মত তো কিছু হয়নি। মুনার মাথায় সূক্ষ্ম যন্ত্রণা হচ্ছিল। সে বলল–চল যাই, কথা তো শেষ হল।

না শেষ হয়নি, আরো কথা আছে।

মামুন একটা সিগারেট ধরাল। মুনা ঘড়ি দেখল আটটা প্রায় বাজে বাজে। কল্যাণপুরের হাজি সাহেবের বাসায় আসতে অনেকখানি সময় লেগেছে। এখানে না এলেও চলত। এমন কোনো জরুরি কথা মামুনের ছিল না। যা শোনার জন্যে তাকে কল্যাণপুরের এই বাসায় আসতে হবে।

মুনার নিজের হাতের কেনা জিনিসপত্র চারদিকে ছড়ান। থালা বাটি চায়ের কাপ। কাটা চামচ। বসার মোড়া। দেখতে এমন মায়া লাগে। মুনা ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস গোপন করল। দিনের অবস্থা ভাল না। আকাশে মেঘ করেছে। বাড়ি ফেরা দরকার। মামুন হাতে সিগারেট ছুড়ে ফেলে বলল। তুমি তাহলে আমাকে বিয়ে করবে না?

করব না এমন কথা তো বলিনি। বলেছি এখন না।

একই কথা। এখন না মানে কখনো না।

মুনা চুপ করে রইল। মামুন ধমকে উঠল–কথা বলছ না কেন?

কি বলব?

তোমার মনে কি আছে সেটা বল?

তোমাকে বলার মত তেমন কিছু আমার নেই। তুমি একজন স্বার্থপর মানুষ। আমার ভাল লাগে না।

মুনা ক্লান্ত স্বরে বলল আমার মাথা ধরেছে। বাসায় যাব। মামুন হঠাৎ উঠে দরজার ছিটিকিনি তুলে দিল। মুনা বলল কি করছ?

তেমন কিছু না।

মামুন বেশ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বাতি নিভিয়ে জড়িয়ে ধরল। মুনাকে। মুনা একবার ভাবল আকাশ ফাটিয়ে চিৎকার করে। কিন্তু সে চিৎকার করল না; অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। সত্যি সত্যি কি তার জীবনে এটা ঘটছে?

শওকত সাহেব বললেন, তোর কি হয়েছে মুনা? মুনা বলল, আমার কিছুই হয়নি মামা। আমি বেশ ভাল আছি।

এ রকম লাগছে কেন তোকে?

মাথা ধরেছে।

একা এসেছিস? মামুন আসেনি?

না। একাই এসেছি।

শওকত সাহেব ইতস্তত করে বললেন, একটা খবর আছে মুনা। আজ অফিসে গিয়েছিলাম। বড় সাহেব যেতে বলেছিলেন। অফিসে গিয়ে শুনলাম ওরা কেইস উইথড্র করেছে। চাকরিও ফেরত পাওয়া যাবে।

ভাল।

তোর কি হয়েছে মুনা?

কিছু হয়নি মামা। আমি ভাল আছি।

মুনা ঘর অন্ধকাব করে একা একা তার নিজের বিছানায় বসে রইল। পাশের বিছানায় বাবু শুয়ে আছে। বোধ হয় তার মাথা ধরেছে। শওকত সাহেব একবার এসে বিরক্ত স্বরে বললেন পড়াশোনা কিছু হচ্ছে না। সন্ধ্যা না হতেই ঘুম! মুনা তুই তো কিছু দেখিস না, ডেকে তোল।

মুনা কিছু বলল না। শওকত সাহেব বললেন বকুল দেখি শাড়ি পরে সেজেণ্ডজে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

মুনা সে কথারও জবাব দিল না।

তুই ভাল আছিস তো মা?

ভালই আছি মামা।

রাত দশটার দিকে আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামল। শীতকালের বৃষ্টি। নামলেই ঠাণ্ডা লাগবে। তবু বকুল ফিসফিস করে বলল, বৃষ্টিতে একটু ভিজবে আপ?

বকুলের পরনে একটা নীল রঙের শাড়ি। আবার কপালে নীল টিপও দিয়েছে। তার খুব ইচ্ছে হচ্ছে বৃষ্টিতে নামার। সে আবারও বলল, আপা এস না। পায়ে পড়ি তোমার।

আহ কি সুন্দর লাগছে বকুলকে!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *