3 of 3

১৬ অক্টোবর, রবিবার ১৯৭১

১৬ অক্টোবর, রবিবার ১৯৭১

আজ ঝিনুদের বাসায় মিলাদ। নতুন বাসায় আসার মিলাদ। মিলাদ শেষে রাঙামা বললেন, মাগো, একটু বসে যাও। কথা আছে।

ঝিনুর মাকে আমি রাঙামা বলে ডাকি। এই প্রৌঢ় বয়সেও এমন কাচা সোনার মত রং, এমন দেবী প্রতিমার মত রূপ, এমন মধুর স্নেহমাখা ব্যবহার–রাঙামা ছাড়া অন্য কোন ডাক মুখেই আসে না।

লোকজন একে একে চলে গেলে রাঙামা ভেতরের একটা ছোট ঘরে আমাকে নিয়ে গেলেন, সেখানে একটা চৌকিতে দুটো ছেলে বসে ছিল। আমি ঢুকতেই একটি ছেলে উঠে এগিয়ে আমার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করল। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে উঠলাম, ইকু।

মান্নানের বড় ভাই বাকি সাহেবের ছেলে ইকু-২৮ আগস্ট শাহাদত আলমের সঙ্গে মেলাঘর চলে গিয়েছিল।

তুমি কবে এসেছ ইকু?

এসেছি এ মাসের প্রথমেই।

ইকুর মুখে শুনলাম ষাটজন গেরিলার বিরাট একটা দলের সঙ্গে ও এসেছে। ক্যাপ্টেন হায়দার অনেক অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে এই দলকে ঢাকায় পাঠিয়েছেন গেরিলা অপারেশন করার জন্য। ওরা গোপীবাগের পেছন দিক দিয়ে ঢাকায় ঢুকেছে। ঢাকার বাইরে ওইদিকে বাইগদা বলে একটা গ্রামে ওদের বেস্ ক্যাম্প সেখান থেকে অল্পে অল্পে অস্ত্রশস্ত্র ঢাকার ভেতর নিয়ে আসছে।

তাদের অস্ত্র আনার পদ্ধতি শুনলাম। ভোরবেলা গ্রাম থেকে লোকেরা ঝুড়িভর্তি শাকসবজি নিয়ে ঢাকায় আসে। তাদের সঙ্গে মিশে সবজিওয়ালা সেজে ঝুড়িতে সবজির তলায় ছোট অস্ত্র লুকিয়ে আনে। বড় অস্ত্রগুলো সাধারণত বস্তার ভেতরে অন্য জিনিসের সঙ্গে ভরে রাত্রিবেলা নিয়ে আসে।