2 of 3

১৬।১ ষোড়শ কাণ্ড : প্রথম অনুবাক

অথর্ববেদসংহিতা ষোড়শ কাণ্ড
প্রথম অনুবাক
প্রথম সূক্ত : দুঃখমোচনম
[ঋষি : অথর্বা দেবতা : জল, প্রজাপতি ছন্দ : বৃহতী, ত্রিষ্টুপ, গায়ত্রী, পংক্তি, অনুষ্টুপ, উষ্ণিক]

অতিসৃষ্টো অপাং বৃষভোহতিষ্টা অগ্নয়ো দিব্যাঃ ॥১॥ রুজ পরিরুজ মৃণম্ মৃণ৷৷ ২ . ম্রোকো মনোহা খনো নির্দাহ আত্মদূষিস্তদূষিঃ ॥ ৩৷৷ ইদং তমতি সৃজামি তং মাভ্যবনিক্ষি৷ ৪৷৷ তেন তমভ্যতিসৃজামো যোহস্মন্ দ্বেষ্টি যং বয়ং দ্বিম্মঃ ॥ ৫৷৷ অপামগ্রমসি সমুদ্রং বোহভ্যবসৃজামি ॥ ৬৷ যোহস্পদ্মিরতি তং সৃজামি ম্রোকং খনিং তদূষি। ৭। যোব আপোহগ্নিরাবিবেশ স এষ যদ বো ঘোরং তদেতৎ ॥ ৮৷৷ ইন্দ্রস্য ব ইন্দ্রিয়েণাভি ফিঞ্চেৎ ৯ ৷৷ অরিপ্রা আপো অপ রিপ্ৰমস্মৎ ১০প্রম্মদেনো বহন্তু প্ৰ দুম্বপ্ন্যং বহন্তু ॥ ১১. শিবেন মা চক্ষুষা পশ্যতাপঃ শিবয়া তৰাপ শত ত্বং মে। ১২। শিবানগীনম্মুষদো হবামহে ময়ি ক্ষত্রং বর্চ আ ধত্ত দেবীঃ ॥ ১৩

 বঙ্গানুবাদ –জলে বৃষভের ন্যায় যে জল আছে, তা অতিসৃষ্ট (ত্যক্ত) হয়েছিল এবং অগ্নি সমুদায়ও অতিসৃষ্ট হয়েছিল। ভঙ্গ করণশালী, নাশক, পলায়নশীল, মনকে দাবিত করণশালী, দাহোৎপাদক, খননের দ্বারা প্রাপ্ত, আত্মা ও দেহকে দূষিত-করণশীল যে জল আছে, তাকে আপন শত্রুদের সাথে সংযুক্ত করে আমি অতিমৰ্জন করছি। আমি তাকে স্পর্শ করবো না। আমি জলের শ্রেষ্ঠ ভাগকে সমুদ্রে প্রেরণ করছি, তার ভীষণ অগ্নিযুক্ত অংশকে ত্যাগ করছি, তার ঐশ্বর্যযুক্ত অংশকে ইন্দ্রিয়ের দ্বারা সিঞ্চন করছি। জল আমাদের পাপ-স্বপ্নকে দূর করে আপন কল্যাণকরী অংশের দ্বারা আমাদের স্পর্শ করুক, বলসঞ্চার করুক।

সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –কতিযুচিৎ কর্মস্য শান্ত্যদকং বিহিতং। তেন হি আচমনপ্ৰাক্ষণাব সেচনাসেচনাপ্লাবনামি কর্তব্যানি ভবন্তি।…ইত্যাদি ৷ (১৬কা, ১অ. ১সূ.)।

টীকা –এই মন্ত্রগুলির দ্বারা কোন কোন কর্মে শান্তিজল বিহিত। তাতে আচমন-প্রোক্ষণ-অবসেচন আসেচন-আপ্লাবন ইত্যাদি করণীয়। কাংস্য পাত্রে করণীয়। এই জল নিক্ষেপণের ফলে তার মধ্যগত ময়লা নির্গত হয়ে যায়। কৌশিক সূত্রে (১/৯) এর বিবরণ আছে।–এটি এই অনুবাকের প্রথম পর্যায়সূক্ত বলে উল্লেখিত ॥ (১৬কা, ১অ. ১সূ.)৷৷

.

দ্বিতীয় সূক্ত : দুঃখমোচনম

 [ঋষি : অথর্বা দেবতা : বাক্ ছন্দ : অনুষ্টুপ, উষ্ণিক, বৃহতী, গায়ত্রী]

নির্দুরমণ ঊর্জা মধুমতী বা ॥১॥ মধুমতী স্থ মধুমতীং বাচমুদেয়ম্ ॥ ২॥ উপহুতো মেগোপা উপহুতো গোপীথঃ ॥৩॥ সুশ্রুতৌ কণৌ ভদ্রতৌ কর্ণৌ ভদ্রং শ্লোকং শুয়াস। ৪। সুশ্রুতিশ্চ মোপশ্রুতিশ্চ মা হাসিষ্টাং সৌপর্ণং চক্ষুরজং জ্যোতিঃ ॥৫॥ ঋষীণাং প্রস্তয়োহসি নমোহস্তু দৈবায় প্রস্তরায় ॥৬৷৷

বঙ্গানুবাদ –আমি দূষিত চর্মরোগ হতে মুক্ত থাকবো, আমার বাক্ (বাণী) বলবতী ও মধুমতী থাকুক। ঔষধি সমূহ আমার বাণীকে মধুর করুক। আমি ইন্দ্রিয়পালক মনকে আহ্বান করছি। আমার কর্ণ কল্যাণকারী বাক্যসমূহ শ্রবণ করুক। আমার নেত্র গরুড়ের ন্যায় দর্শন-শক্তি লাভ করুক।

টীকা –কৌশিক সূত্র (৬/৩) অনুসারে এই সূক্তের অভিমর্শনে কোন কোন দোষবিশেষ দূর হয়। এই সূক্তের দ্বারা অভিচার কর্ম, উপনয়নে মাণবকের দীর্ঘায়ু কামনা ইত্যাদি সাধিত হয়। (কো, ৭/৯)। চক্ষু ইত্যাদি ইন্দ্রিয় সমূহের দৃঢ়তা-কামনায় অরণ্যে গমন পূর্বক এই সূক্তের দ্বারা সবৌষধি অভিমন্ত্রিত করে অনুক্রমে প্রলিপ্ত করার বিধি আছ। (কৌ. ৭/৯)। এর ফলে বাক্, মন, চক্ষু, দন্ত, নাসিকা এবং অন্য সকল বিকল ইন্দ্রিয় দৃঢ়তা লাভ করে।–এই সূক্তটির পরিচয় প্রসঙ্গে প্রথমেই উক্ত হয়েছে–মরণং ব্যসনং চৈব বন্ধনং চ বিশেষতঃ।/প্রণিপাতেন্মত্ততা বা দৈবোপহতিরেব চ। পুত্রাদিধননাশশ্চ গৃহে দোষান্ বনপি।–এটি এই অনুবাকের দ্বিতীয় পর্যায়সূক্ত ॥ (১৬কা, ১অ. ২সূ)।.

.

তৃতীয় সূক্ত : দুঃখমোচনম

 [ঋষি : অথর্বা দেবতা : ব্রহ্মা, আদিত্য ছন্দ : গায়ত্রী, অনুষ্টুপ, ত্রিষ্টুপ, উষ্ণিক]

মূর্ধাহং রয়ীণাং মূর্ধা সমানানাং ভূয়াসম্ ॥১৷ রুজশ্চ মা বেনশ্চ মা হাসিষ্টাং মূর্ধা চ মা বিধৰ্মা চ মা হাসিষ্টাম ॥ ২॥ উর্বশ্চ মা চমসশ্চ মা হাসিষ্টাং ধর্তা চ মা ধরুণশ্চ মা হাসিষ্টাম৷৩৷৷ বিমোক মাপবিশ্চ মা হাসিষ্টামার্টুর্দানুশ্চ মা মারিশ্যা চ মা হাসিষ্টাম ॥৪॥ বৃহস্পতির্ম আত্মা নৃমণা নাম হৃদ্যঃ ॥৫৷৷ অসন্তাপং মে হৃদয়মুবী গন্যূতিঃ সমুদ্ৰো অস্মি বিধর্মণা ॥ ৬৷৷

বঙ্গানুবাদ –আমি ধনরাশি ও আপন সমান ব্যক্তিগণের মধ্যে মস্তকের ন্যায় শ্রেষ্ঠ হবো। রজঃ, যজ্ঞ, মূর্ধা, বিধর্মা, আমাকে যেন ত্যাগ না করে। উর্ব, চমস, ধরুণ ও ধর্তা (যজ্ঞপাত্র) আমাকে যেন ত্যাগ না করে। বিমোক, আদ্রর্দানু ও মাতরিশ্বা আমা হতে যেন পৃথক না হয়। হর্ষদ, অনুগ্রহপ্রদ, মনকে নিযুক্ত করণশীল বৃহস্পতি আমার আত্মা। দুই ক্রোশব্যাপী (বহুবিস্তীর্ণ) ভূমি আমার অক্ষতিকারক হোক; আমার হৃদয় যেন অসন্তপ্ত থাকে এবং যেন সমুদ্রসম গম্ভীর হয়।

টীকা –উপনয়নে মূর্ধাহং নাভিরহং (পরবর্তী) সূক্তদ্বয়ের দ্বারা মাণবকের আয়ু বৃদ্ধির নিমিত্ত আদিত্যের উপাসনা বিহিত আছে। (কৌ. ৭/৯)। এই দুটি সূক্তও যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়সূক্ত। (১৬কা, ১অ. ৩সূ.)।

.

চতুর্থ সূক্ত : দুঃখমোচন

[ঋষি : অথর্বা দেবতা : ব্রহ্মা, আদিত্য ছন্দ : অনুষ্টুপ, উষ্ণিক, গায়ত্রী]

নাভিরহং রয়ীণাং নাভিঃ সমানানাং ভূয়াসম্ ॥১॥ স্বাসদসি সূষা অমৃতো মর্ত্যেম্বা। ২৷৷ মা মাং প্রাণো হাসীনন্মা অপানোহবহায় পরা গাৎ ৷৷ ৩৷৷ সূর্যো মাহ্নঃ পাত্বগ্নিঃ পৃথিব্যা বায়ুরন্তরিক্ষাদ যমো মনুষ্যেভ্যঃ সরস্বতী পার্থিবেভ্যঃ ॥৪॥ প্রাণাপানৌ মা মা হাসিষ্টং মা জনে প্র মেষি॥৫৷৷ স্বস্ত্যদ্যোষসো দোষসশ্চ সর্ব আপঃ সর্বগণণা অশীয় ৷৬৷৷ শক্করী স্থ পশবো মোপ ষুর্মিত্রাবরুণৌ মে প্রাণাপানাবগ্নির্মে দক্ষং দধাতু ॥৭॥

বঙ্গানুবাদ –আমি ধনের ও আপন সমান ব্যক্তিগণের মধ্যে নাভি সমান (প্রধান) হবো। অমৃতত্বশালিনী উষা মরণধর্মা মনুষ্যগণের মধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত হোন। প্রাণ ও অপান যেন আমাকে না ত্যাগ করে। সূর্য দিন হতে, অগ্নি পৃথিবী হতে, বায়ু অন্তরিক্ষ হতে, যম মনুষ্যগণ হতে এবং সরস্বতী পার্থিব পদার্থ সমূহ হতে আমাকে রক্ষা করুন। ঊষাকাল হতে রাত্রি পর্যন্ত আমার মঙ্গল হোক। আমি সর্ব গণ ও জলের উপভোক্তা হয়ে থাকবো। বরুণ আমার প্রাণাপান ও অগ্নি আমার বলকে দৃঢ় করুন।

টীকা –প্রথম অনুবাকের এই চতুর্থ পর্যায়সূক্তটির বিনিয়োগ পূর্ববর্তী সূক্তের সাথে বিনিযুক্ত হয়। (১৬কা, ১অ. ৪সূ.)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *