১৫. সোমা নতুন বই নিতে এসেছে

সোমা নতুন বই নিতে এসেছে। তিনি বই বেছে দিচ্ছেন। সোমা দেখল একটা কুচকুচে কালো বিড়াল তাঁর পায়ে গা ঘষছে।

সোমা বলল, এই বিড়ালটা কি আপনার?

না। বেড়াল আমার পছন্দের প্রাণী না। তবে আমার স্ত্রী পছন্দ করত। বেড়ালকে খেতেটেতে দিত। এই কালো বেড়ালটা হচ্ছে আমার স্ত্রীর পোষা বেড়ালগুলোর কোনো একটা বংশধর।

আপনি কি একে খেতেটেতে দেন?

হ্যাঁ দিই। আমার স্ত্রীর প্রতি মমতা থেকে দিই। এমনিতে কিন্তু কুকুর-বেড়াল কোনোটাই আমি পছন্দ করি না।

আমিও করি না।

তিনি হাসতে হাসতে বললেন, লোকে বলে যারা পাখি পছন্দ করে তারা পশু পছন্দ করে না। তুমি কি পাখি পছন্দ কর সোমা?

জানি না, করি বোধহয়।

আজ এই বইটা নিয়ে যাও, প্রথম এক শ পাতা কষ্ট করে পড়তে হবে তারপর দেখবে–হাত থেকে বই নামাতে পারছ না।

সোমা জবাব দিল না। সে কালো বিড়ালটার দিকে একদৃষ্টিতে কি যেন দেখছে। সোমা চাপা গলায় বলল, ও বিড়াল খুব পছন্দ করে। বলেই সে অসম্ভব লজ্জা পেয়ে গেল।

তিনি অবাক হয়ে দৃশ্যটি দেখলেন। নরম স্বরে বললেন, উনি বেড়াল পছন্দ করতেন?

জ্বি। এক বার রাস্তা থেকে একটা বিড়াল ধরে নিয়ে এসেছিল। পিঠে ঘা হয়েছিল, তাই রোজ ডেটল দিয়ে ঘা ধুয়ে দিত। পুঁজ পরিষ্কার করত। আমার গা ঘিন ঘিন করত। ভাত খেতে পারতাম না। বিড়ালটা অবশ্যি বাঁচে নি। সাত দিনের দিন মরে গেল।

উনি খুব কষ্ট পেয়েছিলেন মনে হয়।

হ্যাঁ, হাউমাউ করে কিছুক্ষণ কাঁদল। তার পরপরই অবশ্যি খুব স্বাভাবিক। ওর কষ্ট বেশিক্ষণ থাকে না।

সোমা?

জ্বি।

তুমি কিন্তু এখনো ঐ ভদ্রলোককে খুব পছন্দ কর।

সোমা চুপ করে রইল।

তিনি নরম স্বরে বললেন, এস আমরা বাইরে খানিকক্ষণ বসি।

তারা বারান্দায় এসে বসল। তিনি একটা সিগারেট ধরিয়ে সহজ গলায় বললেন, সোমা, আমার মনে হয় তোমার ঐ ভদ্রলোকের কাছে ফিরে যাওয়া উচিত। তাঁকে আরেকটা সুযোগ দেওয়া উচিত।

সে কেমন মানুষ আপনি কিছুই জানেন না বলে এটা বলতে পারলেন।

ধরে নিলাম খুবই খারাপ মানুষ। কিন্তু তুমি তাকে বদলাবার কোনো চেষ্টা কি করেছ? আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তুমি কর নি। করে দেখ না।

সোমা তাকিয়ে আছে কোনো কথা বলছে না।

তিনি বললেন, চা খাবে?

সোমা বলল, না।

তিনি ভারি গলায় বললেন, তোমাকে ওঁর কাছে ফিরে যেতে বলছি কেন জান, ঐ মানুষটার জন্যে তোমার তীব্র ভালবাসা আছে, কিন্তু তুমি সেটা বুঝতে পারছ না।

আমি যা বুঝতে পারি নি—আপনি কী করে তা বুঝে ফেললেন?

বেড়াল তুমি পছন্দ কর না, কিন্তু গভীর মমতায় তুমি কালো বেড়ালটার দিকে তাকিয়ে রইলে। কারণ, তোমার খুবই প্রিয় এক জন বেড়াল পছন্দ করে।

সোমার চোখে পানি এসে গেল।

তিনি বললেন, বড্ড চায়ের তৃষ্ণা হচ্ছে। তুমি কি আমাকে এক কাপ চা বানিয়ে খাওয়াবে? রান্নাঘরে সবই হাতের কাছে আছে।

সোমাচা বানানোর জন্যে উঠে দাঁড়াল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *