১৫. মালিশা গিলবার্ট

মালিশা গিলবার্ট তার মায়ের টাকা পেয়েছে। টাকার পরিমাণ মালিশার ধারণাকেও ছাড়িয়ে গেছে। সলিসিটর যখন টেলিফোন করে বলল, তোমার জন্যে দুটি খবর আছে, একটি ভালো একটি মন্দ। কোনটি আগে শুনতে চাও?

তখনো মালিশা কিছু বুঝতে পারে নি। সে বলেছে, ভালোটি আগে শুনতে চাই।

তোমার হার্টের অবস্থা ভালো তো? খবর শুনে ফেইন্ট হতে পার।

খবর শুনে তার অবশ্যি তেমন কোনো ভাবান্তর হয় নি। বাড়িওয়ালীকে গিয়ে বলেছে, আমার মা মারা গেছেন, আমি ফ্লোরিডা যাচ্ছি। তোমার রেন্ট আমি ফিরে এসে দেব।

প্লেনে যাওয়ার মতো টাকা নেই, গ্রে হাউণ্ডের টিকিট কাটতে হল। পৌঁছতে লাগবে তেত্রিশ ঘণ্টা। গ্রে হাউণ্ডের বাস ছাড়বে রাত চারটায়। এমন লম্বা সময় কাটানও এক সমস্যা। মালিশার বারবার মনে হচ্ছিল এ্যাটর্নি ভদ্রলোক হয়তো ভুল করেছে। মা হয়তো নাম কামাবার জন্যে টাকা-পয়সা সব দিয়ে গেছে ক্যানসার ইন্সটিটিউটে কিংবা কোনো এতিমখানায়। সেইসব কাগজপত্র হয়তো এ্যাটর্নি ব্যাটা এখনো দেখে নি। না দেখেই টেলিফোন করেছে।

ফার্গো ফোরামেইতে এক বার এ-রকম একটি খবর উঠল। কোটিপতি বাবা মারা গেছে। খবর পেয়ে ছেলেরা মহানন্দে বাড়িঘর দখল করে বসেছে। কারখানায় গিয়ে কর্মচারীদের ছাঁটাই করা শুরু করেছে–এমন সময় এ্যাটর্নি-অফিস থেকে চিঠি এসে হাজির–এতদ্বারা জানান যাইতেছে যে জনাব সোরেনসেন জুনিয়ার তাঁর যাবতীয় সম্পত্তি ইথিওপিয়ার ক্ষুধার্ত শিশুদের ক্ষুধা নিবারণের জন্য দান করিয়াছেন। অতএব…

মালিশার মার ব্যাপারেও সে-রকম কিছু হয়েছে কিনা কে জানে? যদি সেরকম হয়, তাহলে ফার্গো ফিরে আসার ভাড়াটাও থাকবে না। অবশ্যি ফিরে আসা এমন কিছু জরুরী নয়। তার জন্যে সব শহরই সমান।

বাসে বসতে গিয়ে মালিশা দেখল তার সীট নাম্বার তের। এটি একটি অলক্ষণ। আগে জানলে টিকিট বদলে নিত। নিশ্চয়ই মা তার জন্যে কিছুই রেখে যায় নি। আর কেনই-বা রাখবে, এক বারও কি মালিশ তার মায়ের কথা ভেবেছে? মৃত্যুর খবর পেয়ে তার তো সামান্য মন খারাপও হয় নি। ঈশ্বর এ জন্যে তাকে ঠিক শাস্তিই দেবেন। ফ্লোরিডা পৌঁছানমাত্র এ্যাটর্নি বলবে, মিস, আমাদের একটি বড়ো ভুল হয়ে গেছে। আপনার মা তার যাবতীয় সম্পত্তি আমেরিকান বন্য পশু সংস্থাকে দিয়ে গেছেন।

সে রকম কিছু হল না।

ডিরোথি গিলবাটের হাতে লেখা উইল পাওয়া গেল। এ্যাটর্নি ভদ্রলোক মিষ্টি হেসে বলল, মিস মালিশা, তুমি নিশ্চয়ই এখনো আন্দাজ করতে পারছ না যে তুমি কত টাকার মালিক?

মালিশা বলল, না, আমি পারছি না।

সব হিসাব আমাদের হাতে আসে নি। তবে যা এসেছে, তাতেই আমাদের মাথা ঘুরছে।

এ্যাটর্নিটির বয়স খুব অল্প। সে মালিশাকে দুপুরে লাঞ্চ খাওয়াতে নিয়ে গেল। হাসতে-হাসতেই বলল, তুমি আবার মনে করে বসবে না যে তোমার সঙ্গে প্রেম করবার চেষ্টা করছি। আমি বিবাহিত, এবং স্ত্রীকে দারুণ ভালবাসি। একা-একা যাতে তোমাকে লাঞ্চ খেতে না হয়, সে জন্যেই আমি সঙ্গে এলাম।

তোমাকে ধন্যবাদ।

কী করবে তুমি এত টাকা দিয়ে?

এখনো ভেবে ঠিক করি নি। তবে এক জনকে আমি একটি বুইক স্কাইলার্ক গাড়ি উপহার দিতে চাই।

কী রঙ?

নীল, আসমানী নীল।

কাকে দিতে চাও, জানতে পারি?

এক জন ইণ্ডিয়ানকে। তাঁর নামটি অদ্ভুত, অন্ধকারের দেবতা। সে আমার চোখের খুব প্রশংসা করেছিল।

সে ছাড়াও নিশ্চয়ই অনে্কেই তোমার রূপের প্রশংসা করেছে। সবাইকেই কি তুমি বুইক স্কাইলার্ক গাড়ি দিতে চাও?

কেউ সত্যিকারভাবে আমার রূপের প্রশংসা করে নি–ঐ ভদ্রলোক করেছিল।

মিস মালিশা, এখন অনেকেই তোমার রূপের প্রশংসা করবে।

হ্যাঁ, তা করবে।

মালিশার থাকবার জায়গা করা হয়েছে হিলটনে। কাগজপত্রের ঝামেলা মিটলেই স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা করা হবে। রাতে বিদায় নেবার আগে অল্পবয়েসী এ্যাটর্নিটি হাসিমুখে বলেছে, তোমার টাকা পয়সার বিলি ব্যবস্থা করবার জন্যে এক জন দক্ষ আইনজ্ঞ দরকার।

তুমি কি এক জন দক্ষ আইনজ্ঞ?

না। তবে বিশ্বাসী।

তুমি আমার হয়ে কাজ করলে আমি খুশিই হব।

ধন্যবাদ। প্রথমেই আমি তোমার জন্যে দু জন সিকিউরিটি গার্ড রাখতে চাই। আমি কাল সকালেই ব্যবস্থা করব।

তার প্রয়োজন আছে কি?

আছে। ধনী মহিলার জন্যে অনেক কিছুর প্রয়োজন হয়। আমেরিকা বাস করবার জন্যে ভালো জায়গা নয় মিস মালিশ।

সারা রাত মলিশার ঘুম হল না। অনেক বার মনে হল সমস্ত ব্যাপারটাই একটা স্বপ্ন নয় তো? একটি নিখুঁত সুখের স্বপ্ন? এক্ষুণি হয়তো ঘুম ভাঙবে। বাড়িওয়ালী এসে বলবে,  এ মাসের হাউস রেন্ট এক শ ডলার তুমি এখনো দাও নি। আজকে কি তুমি একটি চেক লিখতে পারবে? কিন্তু স্বপ্নটা আর ভালো লাগছে না। বড়ো খারাপ লাগছে। যেন সামনে দীর্ঘ একটা অন্ধকার পথ। হোটেল হিলটনের আরামদায়ক উষ্ণতায়ও মালিশার ভীষণ শীত করতে লাগল। সে বেল টিপে বেয়ারাকে ঠাণ্ডা গলায় বলল, আমার ঘুম আসছে না। বড়ো খারাপ লাগছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *