১৫. পেট্রোল পাম্পের মেয়েটা

পেট্রোল পাম্পের মেয়েটা অবাক হয়ে মানুষটাকে দেখছে। সুন্দর একজন মানুষ। লম্বা, ফর্সা। দৈয়ের হাড়ি হাতে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কি সুন্দর করেই না কথা বলছে। যেন সে রাস্তার কোন মেয়ে না। দ্রঘরের কোন মেয়ে। তাকে তুমি তুমি করেও বলছে না। আপনি করে বলছে।

অনেকদিন আগে আপনাকে দেখেছিলাম। তখন আমার হাতে এক হাড়ি দৈ ছিল। আমার ইচ্ছা ছিল আপনাকে দৈটা দেব। সেদিন দেয়া হয় নি। আজ নিয়ে এসেছি। আপনি যদি নেন তাহলে আমি খুব খুশি হব। আমার নাম ফরহাদ।

মেহেরুন্নিসা নামের নিশিকন্যা হাত বাড়িয়ে দৈ নিল। ক্ষীণ গলায় বলল, আমারে দৈ দেওনের ইচ্ছা ক্যান হইল?

ফরহাদ বলল, আপনি দেখতে আমার অতি প্রিয় একজনের মত। সে খুব অসুস্থ। দেশের বাইরে গেছে চিকিৎসার জন্যে। তার কথা খুব মনে পড়ছে বলেই আপনার কথা মনে পড়েছে।

আপনি তার কাছে যান না ক্যান?

টাকা ছিল না বলে যেতে পারি নি। পরে অবশ্যি আমার এক বন্ধু টাকা জোগাড় করেছিলেন। কিন্তু টাকাটা আমার ভাইকে দিতে হয়েছে। ও মহাবিপদে পড়েছিল–টাকাটা পাওয়ায় উদ্ধার পেয়েছে।

মেহেরুন্নিসা সহজ ভাবে বলল, আপনের ভালবাসার মানুষটার নাম কি?

ফরহাদ বলল, তার নাম আসমানী। নামটা সুন্দর না?

বলতে বলতে ফরহাদের গলা ধরে এল। মেহেরুন্নিসা বলল, বৃষ্টি আসতেছে ভাইজান। আপনে ঘরে যান। আমি খুবই খারাপ একটা মেয়ে। তারপরেও আমি আপনেরে বললাম, দেখবেন আপনার ভালবাসার মানুষ আপনার কাছে ফিরা আসব।

বৃষ্টি নেমেছে। বৃষ্টি নামলেই লোকজন আশ্রয়ের খুঁজে এদিক এদিক ছুটে যায়। ফরহাদ সে রকম কিছু করল না। বৃষ্টির ভেতর সে এগুচ্ছে। তার মধ্যে কোন ব্যস্ততা নেই।

আসমানী একবার বলেছিল, এই যে বাবু সাহেব শুনুন। একবার আমরা ঝুমঝুমা বৃষ্টিতে হাত ধরাধরি করে রাস্তায় হাঁটব। বৃষ্টি বিলাস করব। কেমন?

ফরহাদ বলল, আচ্ছা।

মনে থাকে যেন?

আমার মনে থাকবে।

ফরহাদের মনে আছে।

তার মনে থাকলেতো কিছু যায় আসে না। বিশ্বব্রহ্মান্ডের যিনি নিয়ন্ত্রক–তাঁর কি মনে আছে? তাঁর হয়তো মনে নেই। মানুষের মনে স্বপ্ন ঢুকিয়ে দিয়ে তিনি হয়ত দূরে সরে যান। কিংবা কে বলবে তিনি হয়ত দূরে যান না। খুব কাছেই থাকেন। স্বপ্ন ভঙ্গের যন্ত্রণায় মানুষ যখন ছটফট করে, তিনিও করেন। কারণ এইসব স্বপ্নতো তিনিই তৈরি করেছেন। স্বপ্ন ভঙ্গের কষ্ট অবশ্যই তাঁকেও সইতে হবে।

ফরহাদ পেছনে তাকালো মেয়েটা ঠিক আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে ভিজছে। একটুও নড়ে নি। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সেই দৃষ্টিতে গভীর মমতা। বৃষ্টি হচ্ছে। আসমানী একবার বলেছিল—বৃষ্টি হল মেঘের অশ্রু। মেঘ কাঁদছে, কারণ মেঘমালার জন্মই হয়েছে কাঁদার জন্যে।

1 Comment
Collapse Comments

Beautiful

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *