১৫. নভেম্বরের চার তারিখ

নভেম্বরের চার তারিখ।

সকাল সাতটা।

চায়ের কাপ হাতে বঙ্গভবনে নিজের ঘর থেকে বারান্দায় এসেছেন প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি কোনো রাজনৈতিক সমাবেশে বক্তৃতা দিতে যাচ্ছেন। মাথায় নেহেরু টুপি, কাঁধে চাদর, এক হাতে পাইপ। (তিনি বঙ্গবন্ধুর মতো পাইপ টানতেন। একই তামাক এরিন মোর ব্যবহার করতেন।)

বারান্দায় তার সেক্রেটারি কুমিল্লা বার্ড-খ্যাত মাহবুবুল আলম চাষী চিন্তিত মুখে হাঁটাহাঁটি করছিলেন। মোশতাক তাঁর দিকে তাকিয়ে বললেন, সুপ্রভাত।

মাহবুবুল আলম চাষী বললেন, জি স্যার। সুপ্রভাত।

মোশতাক চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে হৃষ্ট গলায় বললেন, তুমি কি জানো একমাত্র আমিই শেখ মুজিবুর রহমানকে তুমি করে বলতাম?

জানতাম না স্যার। হঠাৎ এই প্রসঙ্গ কেন?

তোমাকে এতদিন আপনি করে বলেছি। আজ থেকে তুমি করে বলব।

অবশ্যই বলবেন। আপনাকে আনন্দিত মনে হচ্ছে। কারণটা কী বলবেন?

কারণ হচ্ছে আমি নিজ বাড়িতে ফিরে যাব। শান্তিমতো ঘুমাব। গা টেপার জন্যে লোক রাখব? সে আমাকে ঘোড়ার মতো দলাই-মলাই করবে। খালেদ মোশাররফকে বলব, বাবারে, আমি বৃদ্ধ লোক, এক পা কবরে দিয়ে রেখেছি। আমাকে ছেড়ে দাও। তোমরা দেশ চালাও। আমার দোয়া থাকল।

চাষী বললেন, আপনার নিজের ইচ্ছায় কিছু হবে এ রকম মনে হচ্ছে না। তারপরেও চেষ্টা করে দেখতে পারেন।

আমি খালেদ ছোকড়ার কাছে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট হিসাবে একটা জিনিস চাইব। দিবে কি না কে জানে!

স্যার, কী চাইবেন?

একটা ট্যাংক চাইব। ট্যাংকে করে মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করতে যাব। মাঝে মাঝে নিউমার্কেট কাঁচাবাজারে যাব পাবদা মাছ কিনতে।

চাষী বললেন, চরম দুঃসময়েও আপনার রসবোধ দেখে ভালো লাগল। খন্দকার মোশতাক বললেন, এখন চরম দুঃসময়?

চাষী বললেন, অবশ্যই। কখন কী ঘটবে কিছুই বলা যাচ্ছে না। Winter of Discontent.

Winter of Discontent আবার কী?

একটা উপন্যাসের নাম স্যার।

ও আচ্ছা, তুমি তো আবার অতিরিক্ত জ্ঞানী। মেজরদের মতো ইন্টারমিডিয়েট পাশ না। ভালো কথা, তোমাকে একটা উপদেশ দিয়ে যাই। কাজে লাগবে। উপদেশটা হলো, মূর্খদের সঙ্গে কখনো তর্ক করতে যাবে না।

চাষী বললেন, কেন তর্কে যাব না?

খন্দকার মোশতাক বললেন, কারণ হলো মূখরা তোমাকে তাদের পর্যায়ে নামিয়ে নিয়ে এসে তর্কে হারিয়ে দিবে। এখন বুঝেছ?

চাষী বললেন, ভেরি ইন্টারেস্টিং।

 

সকাল এগারটা।

খন্দকার মোশতাক নিজের অফিসে বসে আছেন। সঙ্গে আছেন ওসমানী। এই সময় ঝড়ের মতো ঘরে ঢুকলেন খালেদ মোশাররফ, কর্নেল শাফায়েত জামিল এবং চারজন সশস্ত্র সৈন্য। খালেদের হাতে কোনো অস্ত্র নেই, তবে কর্নেল শাফায়েত জামিলের হাতে ভোলা সাব-মেশিনগান।

শাফায়েত জামিল প্রেসিডেন্টের দিকে অস্ত্র তাক করে বললেন, আপনি খুনি। আপনার সারা শরীর রক্তে মাখা। চার নেতাকে আপনি ঠান্ডা মাথায় খুন করেছেন। আমিও আপনাকে ঠান্ডা মাথায় খুন করব। You old rat!

ওসমানী প্রেসিডেন্টকে আড়াল করে খালেদ মোশাররফকে বললেন, খালেদ, তুমি ব্যবস্থা নাও। আর রক্তপাত না। প্লিজ।

খালেদ বললেন, আমি নিজেও রক্তপাত চাচ্ছি না।

খালেদের ইশারায় শাফায়েত জামিল অস্ত্র নামিয়ে বললেন, আপনারা খবর পেয়েছেন কি না আমি জানি না। সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়া মেজর রউফের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে পেনশন চেয়েছেন। কাগজপত্র আমার সঙ্গে আছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে আপনি পদত্যাগপত্র গ্রহণ করুন এবং খালেদ মোশাররফ বীর উত্তমকে সেনাপ্রধান করার ব্যবস্থা করুন।

এতক্ষণ প্রেসিডেন্টের মুখ রক্তশূন্য ছিল, এখন কিছুটা রক্ত ফিরে এল। তিনি বললেন, হুট করে কাউকে সেনাপ্রধান ঘোষণা করা যায় না। মন্ত্রিসভায় ২৬ জন মন্ত্রি আছে। তাদের অনুমোদন লাগবে।

শাফায়েত জামিল আবার অস্ত্র তাক করতেই খন্দকার মোশতাক বিড়বিড় করে বললেন, মন্ত্রিসভার অনুমোদন একটা ফর্মালিটি ছাড়া কিছু না। খালেদ মমাশাররফের সেনাপ্রধান হতে আমি কোনো বাধা দেখি না। মুক্তিযুদ্ধের একজন মহাবীর বাংলাদেশের সেনাপ্রধান—ভাবতেই ভালো লাগছে।

মন্ত্রী পরিষদের সভায় ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফকে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত করা হলো এবং তাঁকে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হলো। তার কাধে জেনারেলের ব্যাজ পরিয়ে দিলেন এয়ার মার্শাল তোয়ব এবং এডমিরাল এম এইচ খান।

এই দিনে দু’টি বিশেষ ঘটনাও ঘটে। ইন্ডিয়ান অ্যাম্বাসির মিলিটারি অ্যাটাচি ব্রিগেডিয়ার ভোরা খালেদ মোশাররফের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে আসেন। তিনি গিফট র্যাপে মোড়া উপহারের একটি প্যাকেটও নিয়ে আসেন। ব্রিগেডিয়ার ভোরার শুভেচ্ছা উপহারের ব্যাখ্যা করা হলো অন্যভাবে খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থান একটি ভারতীয় পরিকল্পনা। খালেদ মোশাররফের হাত ধরে ভারতীয় সেনাবাহিনী ঢুকল বলে।

ব্রিগেডিয়ার ভোরার সৌজন্য সাক্ষাতের চেয়ে বড় ঘটনা হলো, ওইদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি মিছিল বের হয়। মিছিল শেষ হয় ধানমণ্ডি বত্রিশ নম্বর বাড়িতে। মিছিলের নেতৃত্ব দেন খালেদ মোশাররফের মা।

 

খালেদ মোশাররফের এক বোন আমার মা’র (বেগম আয়েশা ফয়েজ) পরিচিত। তিনি প্রায়ই আমাদের বাবর রোডের বাসায় আসতেন। ওই মহিলার কারণেই হয়তোবা আমার মা মুজিব দিবস পালনের বিষয়টা জানতেন। তিনি তাঁর ছেলেদের কিছু না জানিয়ে মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। হয়তোবা তিনি ধারণা করেছিলেন ছেলেরা বিষয়টা পছন্দ করবে না। একটা বয়সের পর বাবা-মা নিজ সন্তানদের ভয় পেতে শুরু করে। সম্ভবত মা’র তখন সেই বয়স চলছিল।

ওইদিনের মিছিলটি ছিল খালেদ মোশাররফের মৃত্যুর ঘণ্টা। মিছিল দেখে লোকজন আঁতকে উঠল। তারা ধারণা করল, খালেদ মোশাররফ ভারতের চর। (দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, দেশে তখন ভারতবিদ্বেষ সর্বোচ্চ পর্যায়ে। কারও মনেই নেই মনে রাখার চেষ্টা নেই যে, আমাদের স্বাধীনতার পেছনে হাজার হাজার ভারতীয় সৈনিকের জীবনদানের মতো ঘটনা ঘটেছে।)।

দেশে ব্যাপক প্রচারণা চলতে লাগল, লিফলেট বিলি হতে লাগল—খালেদ মোশাররফের হাত ধরে বাকশাল ফিরে আসছে, ভারতীয় সেনাবাহিনী ফিরে আসছে। বাংলাদেশ হতে যাচ্ছে ভারতের এক করদ রাজ্য।

 

রাত এগারটা। সেনাপ্রধানের ফ্ল্যাগ কার অবন্তিদের বাড়ির সামনে দাঁড়ানো। গাড়ির আগে ও পেছনে সেনাপ্রধানের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সশস্ত্র সৈন্যদের দুটি মিলিটারি পিকআপ।

দরজা খুলল অবন্তি। অবাক হয়ে বলল, চাচা! আপনি?

খালেদ মোশাররফ বললেন, আমার রাজকন্যা মা, কেমন আছ?

আমি ভালো আছি চাচা। দাদাজান আপনাকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তা করছিলেন। আপনি ভালো আছেন তো?

হ্যাঁ। আমি যে এখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান, এই খবর কি জানো?

না তো!

রেডিওতে এখনো খবর যায় নাই। কাল ভোরে চলে যাবে। খুব ঝামেলায় ছিলাম বলে তোমার মাছের দাওয়াতে আসতে পারি নি। মাছ কি ফ্রিজে কিছু তোলা আছে?

আছে।

তাহলে মাছ গরম করতে বলে। আমি দুপুর থেকে কিছু খাই নি। তোমার দাদাজান কি ঘুমাচ্ছেন?

হ্যাঁ। তার শরীর খারাপ। জ্বর এসেছে। ঘুম ভাঙাব? ডেকে তুলি?

না। উনার বয়েসী মানুষের কাঁচা ঘুম ভাঙলে সমস্যা। বাকি রাত আর ঘুম হবে না। আমি নিজে প্রচণ্ড ঝামেলায় আছি। তারপরেও তোমার কাছে ছুটে এসেছি কেন, কারণটা শোনো। তোমাকে নিয়ে একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছি। ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন।

অবন্তি বলল, আমি মারা গেছি, এরকম?

না। কারোর মৃত্যু দেখা তো ভালো স্বপ্ন। দিনের বেলা একসময় এসে স্বপ্ন বলে যাব। তুমি সেইভাবে ব্যবস্থা নিয়ো। আমি যা স্বপ্নে দেখি তা-ই হয়।

 

খালেদ মোশাররফ আরাম করে মাছ খাচ্ছেন। তিনি আনন্দিত গলায় বললেন, আজকের খাওয়াটা আমার কাছে কেমন লাগছে জানতে চাও?

চাই।

মুক্তিযুদ্ধের সময় একবার সাতাশ ঘণ্টা পর প্রথম খাবার খাই। দরিদ্র এক কৃষক, নাম মিজান মিয়া। আমরা সাতজন ক্ষুধার্ত মানুষ। মিজান মিয়া খাবার দিল—গরম ধোয়াওঠা ভাত, মাষকালাইয়ের ডাল, পিয়াজ আর কাঁচামরিচ। অমৃতও এত স্বাদ হবে বলে আমি মনে করি না। খাবারটা খেয়েছিলাম মে মাসের ৯ তারিখে। ওই দিনটা আমি ঘোষণা করেছি মাষকালাই দিবস’ হিসাবে। ওই দিন রাতে তোমার চাচি আমার জন্যে মাষকালাইয়ের ডাল রান্না করে। মোটা চালের ভাত রান্না হয়। আমি তৃপ্তি করে মাটির সানকিতে খাই। তোমার আজকের রান্না ওই দিনের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। নভেম্বরের চার তারিখকে আমি পাঙ্গাস দিবস’ ঘোষণা করলাম। প্রতি বছর এই দিনে আমি পাঙ্গাস মাছ দিয়ে ভাত খাব।

অবন্তি বলল, চাচা, আমি কি আপনাকে একটি অন্যায় অনুরোধ করতে পারি?

পারো।

আমার স্যার শফিক সাহেব জেলহাজত থেকে একটা চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিটা পড়ে দেখুন। চিঠি পড়লেই হবে। আমি আলাদা করে কিছু বলব না।

খালেদ মোশাররফ বললেন, তোমার স্যার খুবই সাহসী মানুষ। পনেরই আগস্টে একা মিছিল বের করে স্লোগান দিচ্ছিল–মুজিব হত্যার বিচার চাই।

অবন্তি বিস্মিত হয়ে বলল, এই ঘটনা আমি জানতাম না তো!

খালেদ মোশাররফ বললেন, সাহসী মানুষ আমি খুব পছন্দ করি। কেন জানো?

আপনি নিজে সাহসী, এইজন্যে।

না। কারণ সাহসী মানুষেরা একবারই মারা যায়। ভীতুরা মৃত্যুর আগেই বহুবার মারা যায়। ‘Cowards die many times before their death.’ বলো দেখি কার লাইন?

শেকসপীয়ার।

খালেদ মোশাররফ শফিকের লেখা চিঠিটা ভুরু কুঁচকে পড়লেন। চিন্তিত গলায় বললেন, খুনের আসামিকে হুট করে জেলহাজত থেকে ছাড়িয়ে আনা যায় না। মা, তোমাকে বুঝতে হবে যে, দেশে আইনকানুন আছে।

অবন্তি বলল, আইনকানুন থাকলে জেলখানার ভেতর চার নেতাকে খুন করা হয় কীভাবে? খালেদ মোশাররফ বললেন, তাও তো ঠিক। দেশে আইনকানুন ছিল না। তবে এখন হবে।

 

প্রেসিডেন্ট মোশতাক তার কাঙ্ক্ষিত দেশত্যাগ করেছেন। বিচারপতি সায়েমের কাছে দায়িত্ব দিয়ে আগামসি লেনের বাড়ির দিকে রওনা হয়েছেন। শেষ হয়েছে তার আশি দিনের শাসন। তিনি ক্ষমতায় বসেছিলেন ভোরবেলায়, ক্ষমতা থেকে বিদায় নিলেন পাঁচ তারিখ মধ্যরাতে।

 

জেলহাজতে শফিক কম্বলের ওপর কুকুরকুণ্ডলি অবস্থায় ঘুমাচ্ছিল।

হঠাৎ তার ঘুম ভেঙে গেল। সে আতংকে অস্থির হয়ে চেঁচাতে লাগল—আবার পাগলাঘণ্টি বাজে। আবার পাগলাঘণ্টি!

সবাই তাকে বোঝনোর চেষ্টা করল, পাগলাঘণ্টি বাজছে না। হয়তো কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছে।

শফিক বলল, ঘণ্টা বাজছে। আমি পরিষ্কার শুনেছি। এখনো ঘণ্টা বাজছে। ঢং ঢং ঢং।

শফিক হাঁপাচ্ছে। তার কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে। শফিক তখনো জানে না খালেদ মোশাররফ তার মুক্তির ব্যবস্থা করেছেন। তিনি রমনা থানাকে কঠিন নির্দেশ দিয়েছেন—শফিক নামের মানুষটা যদি নির্দোষ হয় তাকে যেন অতি দ্রুত মুক্ত করার ব্যবস্থা করা হয়।

খালেদ মোশাররফ তখনো জানেন না তার নিজের সময় ফুরিয়ে এসেছে। ক্ষমতার দাবাখেলায় তিনি হেরে গেছেন। উঠে এসেছেন জিয়াউর রহমান। নিয়তি তার ওপর প্রসন্ন ছিল, নাকি তিনি নিয়তি নিয়ন্ত্রণ করেছেন তা পরিষ্কার না।

জিয়াউর রহমান খবর পাঠালেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহযোদ্ধা কর্নেল তাহেরকে। তিনি ব্যাকুল হয়ে জানালেন, বন্ধু, আমাকে উদ্ধার করো।

কর্নেল তাহের বন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিলেন। জিয়ার মুক্তির বিষয় ত্বরান্বিত হলো, কারণ সাধারণ সৈনিকেরা ছিলেন তার পক্ষে। তারা শুরু করলেন সিপাহি বিপ্লব। তারা ক্যান্টনমেন্ট কাঁপিয়ে তুললেন স্লোগানে।

‘সিপাহি সিপাহি ভাই ভাই
হাবিলদারের উপর অফিসার নাই।’

অফিসাররা সিপাহিদের হাতে মারা পড়তে লাগলেন। সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা সম্পূর্ণ ভেঙে গেল। সিপাহিদের হাত থেকে বাঁচার জন্যে অফিসাররা পালিয়ে বেড়াতে লাগলেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *