১৫. ধর্ম এবং নীতিশাস্ত্র
(১৯৫২ সালে লিখিত)
অনেক মানুষ আমাদের বলে থাকেন যে ঈশ্বর বিশ্বাস ছাড়া একটি মানুষ কখনও যেমন সুখীও হতে পারে না তেমনি নৈতিকভাবে উত্তৰ্ষসম্পন্নও হতে পারে না। আমি বলতে পারি নৈতিক উৎকর্ষতা কেবলমাত্র পর্যবেক্ষণ থেকেই আসতে পারে, কখনই তা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আসে না। সুখের কথা বলতে গেলে অভিজ্ঞতা বা পর্যবেক্ষণ কোনটাই আমাকে এই চিন্তা করায়নি যে গড় হিসেবে বিশ্বাসীদের থেকে অবিশ্বাসীরা সুখী অথবা অসুখী হয়ে থাকে। এটি অ-সুখী হবার সব থেকে বড় কারণটিকে খুঁজে বার করবার একটি প্রচলিত রীতি, কারণ দুর্দশাকে যকৃতের গোলযোগের কারণ হিসেবে না দেখে তাকে বিশ্বাসের অভাব হিসেবে দেখে গর্বিত হওয়া অনেক সোজা। নৈতিকতার বিষয়ে বলতে গেলে বলতে হয় যে তা নির্ভর করে কিভাবে একজন ওই পদটিকে বোঝে তার উপর। আমার ক্ষেত্রে আমি মনে করি গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক উৎকর্ষতা হল দয়া এবং বিদ্যাবুদ্ধি। বিদ্যাবুদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় যে-কোন শাস্ত্রের দ্বারা, সেই শাস্ত্র যাই হ’ক না কেন। দয়া অনুভবটি বাধাপ্রাপ্ত হয়ে থাকে পাপ ও শাস্তির উপর বিশ্বাসের দ্বারা (কথা প্রসঙ্গে বলতে হয় যে সোভিয়েত সরকার এই একটিমাত্র বিশ্বাসকে গোড়া খ্রীষ্টধর্ম থেকে গ্রহণ করেছে)।
বহু বিচিত্র বাস্তব পথ আছে যেখানে ঐতিহ্যময় নৈতিকতা হস্তক্ষেপ করে থাকে সেই সব বিষয়ে যেগুলো সামাজিকভাবে আকাক্ষিত। এর মধ্যে একটি হল যৌনরোগের প্রতিরোধ। জনসংখ্যার সীমাটাই হল সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। ওষুধের উন্নতির এই বিষয়টিকে আগের চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ করে তুলল। যদি কোন জাতি (Ation) এবং কুল একশ বছর আগের ব্রিটিশদের মতো এখনো উর্বর থাকে এবং যারা এই বিষয়ে তাদের অভ্যাস বদলাতে চায় না, তাদের যুদ্ধ ও দারিদ্র্য ছাড়া আর কোন পরিণাম থাকে না। যে-কোন বুদ্ধিমান ছাত্রের কাছেই এই বিষয়টি পরিচিত হলেও ধর্মতত্ত্বের ধ্বজাধারীদের কাছে এটা খুব পরিচিত নয়।
আমি বিশ্বাস করি না যে ধর্মতাত্ত্বিক বিশ্বাসের ক্ষয় মঙ্গল ছাড়া আর কিছু করতে পারে। আমি এক মুহূর্তে স্বীকার করতে রাজি আছি যে নাৎসি ও সাম্যবাদীদের মতাদর্শের নতুন ব্যবস্থা পুরোনো ব্যবস্থাগুলোর চাইতেও খারাপ, কিন্তু যুবকদের মনের মধ্যে গোঁড়া মতাদর্শগত অভ্যাস যদি ধীরে ধীরে তার জায়গা গ্রহণ করা বন্ধ না করত তবে ওই নতুন ব্যবস্থা কখনই মানুষের মনে স্থান অর্জন করতে পারত না। স্ট্যালিনের ভাষা সেই ধর্মতাত্ত্বিক শিক্ষাস্থল সম্পর্কে স্মৃতিপূর্ণ যেখানে তিনি তার শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। জগতে আজ যা চাই তা কোন উপদেশ-বাক্য নয়, চাই বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানমূলক আচরণ যা এই বিশ্বাসের সঙ্গে মিলিত হবে যে লক্ষ লক্ষ মানুষের উপর অত্যাচার আকাঙ্ক্ষিত নয়– সে স্ট্যালিনের দ্বারাই আরোপিত হ’ক অথবা বিশ্বাসীদের কল্পিত পরমেশ্বরের দ্বারাই হক।